এ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ পর্বঃ ০১
– আবির খান
জামিলঃ গুড মর্নিং স্যার। মে আই কামিন??
নেহালঃ ইয়েস।
জামিলঃ স্যার, নিলয় গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি আমাদের প্রেজেন্টেশনটা দেখতে চাচ্ছে। কি বলবো??
নেহালঃ আজ বিকেল ৪ টায় মিটিং ফিক্স করো।
জামিলঃ ওকে স্যার। তাহলে আমি চলি।
নেহালঃ দাঁড়াও জামিল, একটা কাজ করো।
জামিলঃ জ্বি স্যার বলুন।
নেহালঃ দেশের যা অবস্থা, ডেঙ্গু জ্বরের কারণে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই আমি চাচ্ছি, তুমি এমন ১০০ জন ব্যাক্তিকে খুঁজে বের করবে যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং চিকিৎসা করার সার্মথ নেই। আমি সেই ১০০ জনের সম্পূর্ণ চিকিৎসার খরচ দিতে চাই।
জামিলঃ স্যার সত্যিই আপনার মতো বস পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার। আপনি সত্যিই অনেক ভালো স্যার। আমি খুব তাড়াতাড়িই বের করবো। এই কাজে সাহায্য করা আমার ভাগ্যের ব্যপার।
নেহালঃ আরে তুমি বেশি বলছো। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সার্মথ দিয়েছেন কি শুধু নিজেদের বিলাসীতার জন্য। আমি এমন না। আমরা যেমন ধনী। তেমনি আমাদের এই অর্থের উপর গরীবদের একটা হক রয়েছে। তাই তাদের জন্য একটু সামান্য করছি। এই আর কি।
জামিলঃ স্যার আপনি আসলেই অনেক ভালো। আপনার পিএস হওয়াটা আমার সৌভাগ্য।
নেহালঃ হয়েছে আর পাম দিতে হবে। এখন যা বলছি তাই করো।
জামিলঃ ওকে স্যার।
জামিল চলে যায়।
এই হলো নেহাল চৌধুরী। বাবা-মা মায়ের আদুরে ছেলে। নেহালের একটা বড় বোন আছে। তবে বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। অবশ্য নেহালেরও এখন বিয়ের বয়স হয়েছে। কিন্তু সে এখন বিয়ে করতে চায় না। কারণ তার প্রেমিকা নওশিন বলেছে আরো কদিন পর বিয়ে করবে। নেহাল নওশিনকে অনেক ভালোবাসে। নেহাল যখন ভারসিটিতে পড়ে তখন থেকে নওশিনের সাথে ওর প্রেম শুরু। নেহালের মনে হয় নওশিনও ওকে অনেক ভালোবাসে। তাই নেহাল নওশিনকে বলেছে, চলো তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলি। কিন্তু নওশিন এখন করতে চাচ্ছে না। এ নিয়ে নেহাল বড় ঝামেলার মধ্যে আছে। কারণ বাসা থেকে প্রতিদিন নেহালকে বিয়ের জন্য ওর মাথা খাচ্ছে ওর বাবা মা। নেহাল বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বিয়েটা আটকে রাখছে। নেহাল এখন তার বাবার অফিস চালাচ্ছে। নেহালের বাবা অনেক বড় একজন শিল্পপতি। তাই অর্থের কোনো অভাব তার কাছে নেই। নেহাল ৬ মাস হয়েছে বাবার অফিস চালাচ্ছে। বেশ নাম কামিয়ে ফেলেছে এই অল্প সময়ে। কারণ নেহাল বেশ মেধাবী আর বুদ্ধিমান। এছাড়া অল্প সময়েই অফিসের সবার মন জয় করে ফেলেছে।
অবশ্য এর একটা বিশেষ কারণ হতে পারে নেহালের লুক। নেহাল দেখতে বেশ সুন্দর আর স্মার্ট। লম্বা, ফিটনেস বয়। গায়ের রঙ ফরসা। মুখে গোচা গোচা দাড়ি। চোখগুলো বড় বড়। চুল গুলো সিল্কি আর বড় বড়। সুন্দর করে সবসময় আঁচড়ানো থাকে। দেখতে একটা হিরো হিরো ভাব আছে।
দুপুর ২ টা,
নেহালের ফোন বেজে উঠলো,
নেহালঃ হ্যালো নওশিন কেমন আছো বাবু??
নওশিনঃ হ্যাঁ বাবু ভালো। তবে….
নেহালঃ তবে কি বাবু??
নওশিনঃ না মানে তোমাকে বলা কি ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না।
নেহালঃ আরে বলোতো কি হয়েছে??
নওশিনঃ না বাবু আমার না ১০০০০ টাকা লাগবে। একটা ড্রেস পছন্দ হয়েছে অনেক। কিন্তু এখন না হাতে টাকা নেই। বাবা টাকা দিলেই তোমাকে দিয়ে দিতাম।
নেহালঃ ছিহ নওশিন ছিহ। তুমি আমাকে এই ভাবো?? আমার যা কিছু আছে সবইতো তোমার। আমি ২০০০০ টাকা পাঠাচ্ছি তোমার একাউন্টে। তোমার যেটা পছন্দ সেটা কিনো। আরো লাগলে বলো। ওকে??
নওশিনঃ ওহ বাবু থ্যাঙ্কিউ সো মাচ। তুমি অনেক ভালো।
নেহালঃ হয়েছে, কিন্তু আর এভাবে বলবে না। তোমাকে কত টাকা দিয়েছি। একবারও চেয়েছি?? আর তুমি বলো ফেরত দিয়ে দিবে। আমার যা সবইতো তোমার। ফেরত লাগবে না। বরং আরো লাগলে বলো।
নওশিনঃ আচ্ছা বাবু। বাই এখন।
নেহালঃ ওকে বাবু টেক কেয়ার।
নওশিন ফোন রেখে দেয়।
নেহাল একাউন্টার কে ফোন দেয়,
নেহালঃ হ্যাঁ সুমন নওশিন এর একাউন্টে ২০০০০ টাকা পাঠাও। আর বাবা যেন না যানে।
সুমনঃ স্যার আজকেও??
নেহালঃ তোমাকে যা বলছি তাই করো। আর বাবা যেন না জানে।
সুমনঃ ওকে স্যার।
নেহাল ফোন রেখে দেয়।
সুমনঃ এই নওশিন স্যারকে একদিন ফকির বানাবে। একটা সপ্তাহে মোট ৭০০০০ হাজার টাকা নিলো। বাবাহ…ভাই একা আছি ভালো আছি। আল্লাহ তুমি বাচিঁয়েছো। হাহা।
বিকেল ৩ টা,
নেহালের ফোন বেজে উঠলো,
নেহালঃ হ্যালো মা বলো।
মাঃ নেহাল বাবা তাড়াতাড়ি বাসায় আয় তোর বাবা অনেক অসুস্থ হয়ে পরেছে…..টিট টিট টিট….ফোন রেখে দিয়েছে।
নেহালঃ মা…হ্যালো হ্যালো…কি হলো বাবার।
নেহাল পাগলের মতো গাড়ি নিয়ে বাসায় ছুটে গেলো।
বাসায় ঢুকে দৌড়ে উপরে বাবার রুমে গেলো। নেহালের বাবা বিছানায় শুয়ে আছে। সাথে ওদের ফ্যামিলি ডাক্তার বসে চেকআপ করছে।
নেহাল ওর বাবার কাছে গিয়ে বসে হাত ধরে ডক্টরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
নেহালঃ ডক্টর, বাবার কি হয়েছে??
ডাক্তারঃ আসলে বাবা, তোমার বাবা কি নিয়ে যেন অনেক চিন্তা করছে। তাই ব্লাড প্রেশারটা অনেক হাই হয়ে গিয়েছে। তাই শরীরটা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছে। সে যা বলে তাই তোমারা মেনে নেও এতেই তোমাদের লাভ আর তার ভালো।
মাঃ নেহালের বাবার সব চিন্তা এখন নেহালকে নিয়েই ডক্টর।
নেহালঃ বাবা আমাকে বলো তুমি কি নিয়ে এতো চিন্তা করছো?? বলো আমাকে?? চিন্তিত কণ্ঠে।
নেহালের বাবা অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে।
নেহালঃ কি হলো মা বাবা কথা বলছে না কেন আমার সাথে???
মাঃ কথা বলবে কিভাবে?? তুইকি তার কথা শুনিস??
নেহালঃ আমি আবার কবে বাবার কথা শুনিনি??
মাঃ কেন তোর বাবা আর আমি যে তোকে বিয়ে করতে বলছি কতদিন যাবত তুইকি তা শুনছিস?? তোর বাবা তোর জন্য চিন্তা করে করে এখন অসুস্থ হয়ে পরেছে।
ডাক্তারঃ বাবা নেহাল, তোমার বাবা কিন্তু অনেক অসুস্থ হয়ে পরেছে। তাই সে যা বলে তা মেনে নেও। নাহলে কিন্তু পস্তাতে হবে।
নেহাল কি বলবে কি করবে বুঝতে পারছে না। নওশিনটা এখন বিয়ে করতে চায় না। আবার নেহালের বাবা মার কাছে ওর কথাও বলতে না করেছে। তাই নেহাল এখন বলতেও পারছে না।
নেহালের মা নেহালের নিস্তব্ধতা দেখে বলে উঠে,
মাঃ তোর জন্য আমি আর তোর বাবা মিলে একটা পরীর মতো মেয়ে দেখেছি। তোর বাবা চাচ্ছে তুই তাকে বিয়ে কর। তাহলেই সে চিন্তা মুক্ত হবে আর সুস্থ হবে।
নেহালঃ….. চুপ হয়ে বসে আছে।
বাবাঃ নেহাল বাবা, মেয়েটা অনেক ভালো একটা মেয়ে। বাবা ছাড়া আর কেউ নেই। তুই না করিস না। বল ওকে বিয়ে করবি বল??? অসুস্থ কণ্ঠে।
নেহাল বাবার এরকম আবদার শুনে আর অসুস্থতা দেখে বলে,
নেহালঃ আচ্ছা বাবা তুমি যা বলবে আমি তাতেই রাজি।
বাবাঃ কি সত্যিই??? তাহলে কালই তোদের বিয়ে দিবো। তোকে বিশ্বাস নাই ভাই। পরে বলবি করবি না।
নেহালঃ কি বলো?? কালকে কিভাবে বিয়ে হয়!! একদিনে এতো কিছু।
বাবাঃ কোনো সমস্যা নেই। বিয়ের পর অনেক বড় একটা পার্টি থ্রো করবো। বল তুই করবি??
নেহালঃ…..
ডাক্তারঃ বাবা রাজি হয়ে যাও নাহলে কিন্তু…
নেহালঃ আচ্ছা আচ্ছা আমি রাজি। জোর করে বলল।
মাঃ যাক। প্লান কাজ করেছে। আস্তে করে বলল।
নেহালঃ কিছু বললে মা তুমি??
মাঃ না না।
বাবাঃ তুই তাহলে গিয়ে শপিং কর। আমরা এদিকটা দেখছি।
নেহালঃ হুম। আমার একটা মিটিং আছে ৪ টায়। তারপর দেখি। আমি যাই তাহলে তুমি রেস্ট নেও আর চিন্তা করোনা বাবা। হতাশ ভাবে বলল।
বাবাঃ আচ্ছা যাহ।
নেহাল চলে যায়।
কিছুক্ষন পর,
বাবাঃ দেখোতো নেহালের মা নেহাল গিয়েছে কিনা??
মাঃ দাড়াও দেখছি।….. হ্যাঁ গিয়েছে।
নেহালের বাবা একলাফে উঠে বসে।
বাবাঃ কি ডাক্তার বন্ধু অভিনয়টা কেমন হলো হুম??
ডাক্তারঃ একদম টপ ক্লাসের বন্ধু। নেহাল বুঝতেই পারেনি।
মাঃ আর বইলেন না ভাই। ছেলেটা কোনো ভাবেই বিয়ের জন্য রাজি হয়না। তাই ওর বাবা এই বুদ্ধি বের করেছে।
বাবাঃ হাহা। দেখলে না ছেলে আমার, আমায় কতটা ভালোবাসে। তাই বাবার অসুস্থতা দেখে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গিয়েছে। এখন তাড়াতাড়ি লোক লাগাও সময় অনেক কম। আর বন্ধু তুমি কিন্তু আমার চিপ গেস্ট। কাল সময় মতো চলে আসিস।
ডাক্তারঃ আচ্ছা বন্ধু। তাহলে আজ উঠি। তোদের ড্রামাতো শেষ। হা হা।
বাবাঃ হা হা। হ্যাঁ। যা তাহলে।
মাঃ কাল চলে এসেন ভাই।
ডাক্তারঃ আচ্ছা ভাবি।
ডাক্তার চলে যায়।
বিকেল ৫.৩৬,
নেহালের মিটিং শেষ। ওরা কাজটা পেয়েছে। তাই নেহালের অনেক খুশি হওয়ার কথা কিন্তু নেহাল বিষন্ন হয়ে আছে। এই বিষন্নতা এখন শুধু নওশিনই দূর করতে পারে। তাই নেহাল এই বিষয়টা নওশিনকে জানাতে চায়। তাই ওকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলে।
রেস্টুরেন্ট,
নওশিনঃ হুম বাবু বলো, হঠাৎ এতো জরুরি ভাবে ডাকলে।
নেহালঃ আচ্ছা বলছি। তার আগে বলো কি অর্ডার করবো??
নওশিনঃ উমমম, একটা কোল্ড কফি আর প্রেস্ট্রি।
নেহালঃ আচ্ছা।
ওয়েটার খাবার দিয়ে চলে গেলো।
নওশিনঃ হুম এখন বলো।
নেহালঃ আচ্ছা শুনো তাহলে।
এরপর নেহাল সব নওশিনকে খুলে বলল। নওশিন সব শুনে বেশ নরমালই আছে।
নেহালঃ তুমি কিছু বলছো না যে??
নওশিনঃ দেখো আমি এখন কোনো ভাবেই তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। তুমি এখন আপতত বিয়েটা করো তারপর ওই মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করো। ওকে??
নেহালঃ মেয়েটার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে না নওশিন??
নওশিনঃ হলে হবে। কিন্তু আমি এখন পারবো না। আমার সামনে ফাইনাল পরীক্ষা।
নেহালঃ আচ্ছা। তুমি যা বলবে তাই হবে।
নওশিনঃ কিন্তু আমার একটা কথা আছে।
নেহালঃ বলো।
নওশিনঃ তুমি ভুলেও ওই মেয়েকে ছুবে না।
নেহালঃ অবশ্যই না। কি বলো!! আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি আর কাউকে না।
নওশিনঃ এই না হলো আমার বাবুটা।
এরপর নওশিনকে ওর বাসায় দিয়ে নেহাল শপিং এ চলে যায়।
এরপরের দিন খুব নরমাল ভাবেই নেহালের বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো নেহালকে একটাবারও ওর বউকে দেখতে দেয়নি। অবশ্য ওর দেখারও ইচ্ছা নাই। কিন্তু নেহালের অনেক রাগ হচ্ছে। কেন যে বিয়েটা করতে হলো। কারণ আজ ওর বাসর রাত ওই অপরিচিত না-দেখা মেয়েটার সাথে। নেহালের ইচ্ছা ছিলো বাসরটা নওশিনের সাথে হবে কিন্তু ভাগ্যের খেলায় আজ অন্য মেয়ে তার বাসর ঘরে। নেহাল ভাবছে করতে চেয়ে ছিলাম লাভ ম্যারেজ আর করতে হলো এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। নেহাল ওর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ…..
চলবে….?
কোনো ভুল হলে জানাবেন।