Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"এ্যারেঞ্জ ম্যারেজএ্যারেঞ্জ ম্যারেজ পর্বঃ ০৭(শেষ পর্ব)

এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ পর্বঃ ০৭(শেষ পর্ব)

এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ পর্বঃ ০৭(শেষ পর্ব)
– আবির খান

পরের দিন,

আজ নেহাল নিশির বিয়ের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান নেহালের বাসায়ই করা হচ্ছে। নিশির বাবা ছাড়া আর কেউ নেই। তাই মেহমান যারা আসছেন সবাই নেহালদের পরিচিত।

নেহালের বাবা-মা আজ অনেক খুশি। নেহালের বাবা জোর তদারকি করে বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজাচ্ছেন। একমাত্র ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান বলে কথা। কমপক্ষে ৩০০ জন লোক আসবে আজকে ওদের বাসায়।

নেহালের মা নিশিকে নিয়ে সকাল সকাল পার্লারে চলে গিয়েছেন ওকে সাজাতে। আজকে ওকে প্রিন্সেসের মতো সাজাবেন। ২.৫ লক্ষ টাকার ড্রেস অর্ডার করা হয়েছিল নিশির জন্য। আজ নিশি সেই ড্রেসটা পরবে। না জানি কেমন লাগে ভেবেই নিশির মন পুলকিত হচ্ছে।

এদিকে নেহালের মন বিষন্ন। নেই কোনো আনন্দ। মনে আছে শুধু নিশি আর নিশির গতকালকের শেষ কথা৷ নিশি নেহালের সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছে গতকাল থেকেই। রাতে বিন্দুমাত্র নেহালের কাছে পর্যন্ত আসে নি। নেহাল সবার আড়ালে ওর রুমে চুপটি মেরে বসে আছে। নওশিন অনেকবার কল দিয়েছে কিন্তু কথা বলার ইচ্ছে নেই নেহালের। আবারও নওশিন ফোন দিচ্ছে। এবার নেহাল বেশ বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করে।

নেহালঃ কি সমস্যা কি?? বারবার ফোন দিচ্ছো কেন?? রাগী কণ্ঠে।

নওশিনঃ বাবু তুমি আমার ফোন ধরছিলে না কেন?? আমার কত কষ্ট হচ্ছিলো জানো?? জানো তোমার জন্য আমি কত টেনশন করি?? কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে।

নেহালঃ আচ্ছা সরি। ভুল হয়েছে।

নওশিনঃ বাবু আজ নাকি তোমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান??

নেহালঃ হ্যাঁ।

নওশিনঃ আমি আসি??

নেহালঃ না না। ভুলেও এসো না। অনেক সমস্যা হবে।

নওশিনঃ কেন তিন মাস পরতো এমনিতেই আসবো। তাহলে এখন আসলে সমস্যা কি??

নেহালঃ আছে সমস্যা আছে। এসো না। তোমাকে বিয়ের আগে চিনলে সমস্যা।

নওশিনঃ আচ্ছা। আসবো না। বাবু…

নেহালঃ হুম…

নওশিনঃ ভালোবাসি।

নেহালঃ আচ্ছা রাখি।

বলেই নেহাল ফোন রেখে দেয়। নওশিনকে কিছু বলার সুযোগ মাত্রও দেয়না। ভালো লাগছে না কিছু নেহালের। নিশিকে সে এই অল্প কদিনেই অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছে। এমনকি নওশিনকেও ছাড়তে রাজি। তাও নিশি মানছে না। ওর কথা একটাই, নওশিন আপনার প্রথম ভালোবাসা ওকে ছাড়তে পারবেন না। নেহাল বুক ভরা কষ্ট নিয়ে আর একরাশ হতাশা নিয়ে নিচে চলে যায়।

বিকেল ৪.২৫ মিনিট,

সব মেহমানরা ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছে। নেহালের বাবা আর নেহাল সবাইকে স্বাগতম করছে। কিন্তু নেহালের মন শুধু অপেক্ষায় আছে নিশির জন্য।

বিকেল ৫.১০ মিনিট,

নেহাল ওর অফিসে কলিগদের সাথে কথা বলছিলো। হঠাৎ সবাই বলে উঠলো, ” এই বউ আসছে, বউ আসছে”। নেহালের মুখে যেন বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে উঠলো। এতো অপেক্ষার পর এখন নিশির দেখা মিলবে। নেহাল সবাইকে সরিয়ে সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নেহাল দেখে,

নিশি হোয়াইট কালারের কাজ করা লেহেঙ্গা পরা আর মাথায় ওড়না দেওয়া। আর কি সুন্দর করে ওকে সাজানো হয়েছে তা বলার বাইরে। একদম নতুন বউ লাগছে আবার। উপস্থিত সবাই হা করে তাকিয়ে আছে নিশিকে দেখে। নেহাল নিশিকে দেখে পাথর হয়ে গিয়েছে। এত্তো সুন্দর লাগছে নিশিকে। যেন পরী আকাশ থেকে নেমে এসেছে মাটিতে। নেহালের দিকে শুধু একবার আড় চোখে তাকিয়ে নিশি চলে যায়। নেহালের মা নিশিকে বসিয়ে নেহালকে ডাক দেয়। নেহাল দৌড়ে চলে যায়। নেহালের কান্ড দেখে সবাই হাসছে। নেহালের মা নেহালকে নিশির পাশে বসিয়ে দেয়। ওদের দুজনকে আজ যা লাগছে না। প্রিন্স আর প্রিন্সেস। নেহাল শুধু মুগ্ধ হয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে। নিশির ভালোও লাগছে আবার খারাপও লাগছে।

নিশি যখন আজকে বাসায় প্রবেশ করে তখনই দূর থেকে নেহালকে দেখে। কি যে হ্যান্ডসাম লাগছে না আজ নেহালকে। নিশির মন চাচ্ছিলো যদি এই হ্যান্ডসাম জামাইটা তার সবসময়ের জন্য হতো। কিন্তু হবেনা ভেবেই মন খারাপ হয়ে যায়।

নেহাল আজ ক্রিম কালারের কূর্তা টাইপ পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরেছে। নেহালের পাঞ্জাবিটা বেশ দামি। কারণ অনেক দামি কাজ করা এই পাঞ্জাবিতে। খুব সুন্দর করে চুলটা সেট করা। ফরসা মুখটা আজ অন্যরকম লাগছে। নিশিও সবার আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে নেহালকে দেখছে মাঝে মাঝে। অবশ্য নেহালের চোখ কিন্তু তা দেখেছে।

নেহালঃ নিশি আজ তোমাকে অনেক বেশি,মানে সবার থেকে বেশি, না এই পুরো পৃথিবীর থেকে বেশি, না এই সৌরজগৎ থেকেও বেশি আজ তোমাকে সুন্দরী লাগছে। তুমি যে এতো সুন্দরী আমি কল্পনাও করতে পারি নি।

নিশি নেহালের পাগলামি কথা শুনে নেহালের দিকে তাকায়।

নেহালঃ আহ। কি তার চাহনি। বউ এভাবে তাকিও না মরে যাবো।

নিশিঃ…..

নেহালঃ কিচ্ছুটি একবার বলো। তোমার মধুর কন্ঠ শোনার জন্য আমার কান বেকুল হয়ে আছে।

নিশিঃ…..

নেহালঃ প্লিজ নিশি আজ চুপ থেকো না। কিছু একটা আমাকে বলো। না হয় বলো আমাকে ঘৃনা করো। তাও শুনবো। কিন্তু প্লিজ বলো কিছু।

নিশি নেহালের কথা শুনে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে।

নিশিঃ আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। আর কোনো কথাই নাই ওনার সাথে। মনে মনে।

নিশিঃ……

নেহালঃ প্লিজ কিছু বলো।

হঠাৎই এক সুন্দরী মেয়ের আগমন।

মেয়েঃ হায় নেহাল??

নেহালঃ আরে সায়মা তুই!!কেমন আছিস??

সায়মাঃ এইতো রে ভালো। আমাকে বিয়া না কতে শেষমেশ ওকেই করলি?? মজা করে।

নেহালঃ হ্যাঁ রে। হাহা।

এদিকে নিশি জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে ওদের কথা শুনে। নেহাল দেখে নিশি অনেক রাগী ভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। নেহাল নিশিকে আরো রাগানের জন্য সায়মার সাথে জমিয়ে আড্ডা শুরু করে। আর নিশিতো রেগেমেগে আগুন।

নিশিঃ সায়মা আপু আপনাকে মনে হয় ডাকছে এই যে।

সায়মাঃ কই কই??

বলে সায়মা চলে যায়।

নিশিঃ আপনার প্রেমিকা আসলে কয়টা বলেন তো??

নেহালঃ তুমি সহ মোট উমমমম… ২ টা হাহা। মজা করে।

নিশিঃ আপনি আর কারো সাথে কথা বলবেন না।

নেহালঃ কেনো??

নিশিঃ জানি না।

নেহালঃ কারণ না বললে সব সুন্দরী মেয়েদের সাথে কথা বললবো। বলো কেন??

নিশিঃ কারণ আমার ভালো লাগে না।

নেহালঃ কেন ভালো লাগে না?? তুমিতো আমাকে অন্যজনের কাছে তুলে দিচ্ছ। তখন কি করবে??

নেহালের কথায় নিশি অনেক কষ্ট পায়। চোখ ফেটে কান্না আসছে। খুব অসহায় ভাবে নেহালের দিকে তাকালো নিশি।

নেহাল ওই চাহনিতে স্পষ্ট দেখতে পেলো অনেক কষ্ট, দুঃখ আর বেদনা। অশ্রুর বিশাল বড় ঢেউ অপেক্ষা করছে আছড়ে পরার জন্য। কিন্তু তার সামনে বিশাল বড় বাঁধ দেওয়া। নেহালও কষ্টে মাথা নিচু করে ফেলে।

এভাবে অনেকটা সময় পাড় হয়ে যায়। নেহালের সব বন্ধুরা মিলে বায়না ধরে নেহালকে একটা গান শুনানের জন্য। কিন্তু নেহাল কোনো ভাবেই রাজি হচ্ছে না। কিন্তু সবাই যখন নিশিকে বলতে বলে আর নিশিও অনিচ্ছায় যখন নেহালকে গাইতে বলে নেহাল রাজি হয়।

চারদিকের সব লাইট অফ। শুধু নেহালের দিকে একটা পাওয়াফুল স্পট লাইট দেওয়া। নেহাল গিটার হাতে বসে আছে একটা চেয়ারে নিশির দিকে মুখ করে। নেহাল নিশির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। নিশিও নেহালের দিকে তাকিয়ে আছে। নেহাল গান ধরলো। সবাই একদম চুপ হয়ে গেলো। নেহাল গান গাচ্ছে,

ওরে মন বোবা মন বোকা মন
জানে না শুনে না সে বারণ
খালি যায় ছোটে যায় দিকে তোর
থেকে যায় চিন্তায় অকারণ

তাই পারব না, আমি পারব না
আমি পারব না, আমি পারব না
ও পারব না আমি ছাড়তে তোকে
কোনো মতে আর হারতে তকে
সরে যেতে আর আমি পারবনা

ও পারব না আমি ছাড়তে তোকে
কোনো মতে আর হারতে তকে
সরে যেতে আর আমি পারবনা

তোর বায়না সব রেখে দেব সাজিয়ে
তুই চাইলে বল হয়ে আছি রাজি রে
পালাতে আমি পারবনা…

ছায়া তর হয়ে আছি দেখ
পথে তোর চেয়ে আছি দেখ
হুম তোকে বল কি করে বুঝায়
দুজনেই হয়ে আছি এক
হুম পারবনা আমি রাখতে তোকে
পারবনা আমি ডাকতে তোকে
ছেরে যেতে আর আমি পারবনা

তোর বায়না সব রেখে দেব সাজিয়ে
তুই চাইলে বল হয়ে আছি রাজি রে
পালাতে আমি পারবনা…

ওরে মন বোবা মন বোকা মন
জানে না শুনে না সে বারণ
খালি যায় ছুটে যায় দিকে তোর
থেকে যায় চিন্তায় অকারণ

তাই পারবনা, আমি পারবনা
আমি পারবনা, আমি পারবনা
ওওও হহহ ওওও হহহ…

উপস্থিত সবাই হাত তালি দিলেও নিশি স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। আর সবার আড়ালে চোখ থেকে অঝোরে অশ্রু ফেলছে। নেহাল তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। ও কাঁদছে না এমন না। ও কাঁদছে তবে ভিতরে। এতো মানুষের সামনে কাঁদতে পারে না।

এরপর খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আস্তে আস্তে সবাই চলে যায়। আর সেই সাথে নেহাল আর নিশির বিয়ের অনুষ্ঠানও শেষ হয়ে যায়।

রাতে,

নিশি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক সেদিনের মতো আজও চাঁদকে দেখছে। আজও মনটা বড় বিষন্ন। বড় একা। নিশি ভাবছে, এসব আর কদিন পর হারিয়ে যাবে। ও একদম একা হয়ে যাবে। থাকবে না কিছু। শুধু রবে কিছু মধুর স্মৃতি। যা হয়তো একসময় বিষাক্ত হয়ে উঠবে। থাকবেনা আর এই মানুষটা চোখের সামনে। আর পারবে তাকে দেখতে। হারাবে সেও অজানায়। নিশির নয়নজোড়া ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে। নিঃশব্দে কাঁদছে নিশি চাঁদের দিকে তাকিয়ে।

হঠাৎই নিশি ওর কাধে কারো হাতের স্পর্শ পায়। নিশি তাকিয়ে দেখে নেহাল। নিশি হাতটা সরিয়ে দেয়।

নেহালঃ সেদিন বাসর রাতে যদি তোমাকে আপন করে নিতাম আজ তুমি এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারতে না। পারতে না আমায় ছাড়তে। নিশি আমি পারবো না তোমায় ছাড়তে। আমার বোবা মন, বোকা মন পারবেনা তোমায় ছাড়তে। প্লিজ আমাকে দূরে সরিয়ে দিও না। অনুনয়ের স্বরে।

নিশিঃ শুধু আমার কথা ভাবছেন?? আর যে মেয়েটা আপনাকে সেই প্রথম থেকে ভালোবাসে?? তার কি হবে?? সে তো আপনাকে ভালোবাসে। তার কি হবে??? বলুন?? তার কি হবে?? আর আপনি এতোটা সার্থপর কিভাবে হলেন?? নিজের সার্থটাই দেখছেন শুধু?? ও এবার বুঝতে পারছি। আমাকে ভোগ করতে চান না??

নেহালঃ নিশি থামো।

নিশিঃ নিন করুন না। ওড়না সরিয়ে।

নেহালঃ নিশি…

নিশিঃ না করুন আমাকে ভোগ। পূরণ করুন আপনার কামনা।

নেহালঃ নিশি….ঠাসসস।

নেহাল নিশিকে থাপ্পড় দিয়ে ভিতরে চলে যায়। আর নিশি অঝোরে কাঁদতে থাকে। সে পেরেছে নেহালের মনে তার জন্য ঘৃনা সৃষ্টি করতে। সে পেরেছে।

নেহালের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। খুব খারাপ লাগছে। তবে নিশির প্রতি না নিজের উপর। মেয়েটার জীবনটাতো ওই নষ্ট করলো। আবার সেই অসহায় মেয়েটার গায় আজ হাতও তুললো। নেহাল আর পারছে না। কষ্টে আর রাগে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। সেদিন পুরো রাতটা নেহাল বাইরেই কাটিয়ে দিয়েছিলো।

এভাবে দুমাস কেঁটে যায়। নিশি নেহালের কাছ থেকে নিজেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। মানে শরীর না মনটাকে। নেহাল হাজার চেষ্টা করেও নিশির কাছে আর যেতে পারেনি। নিশি এখন আর একদমই কথা বলে না। বাবা-মাও কেমন জানি নিশিকে এখন অপছন্দ করতে শুরু করেছে। কারণ নিশি এখন আর তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে না।

নিশি আর নিশি নেই। নেহাল এই নিশিকে চিন্তে পারেনা। নেহাল শুধু রাতের শেষ প্রহরে নিশির একটু কাছে বসে ওকে দেখে। কারণ ঘুমালে আসল নিশিকে খুঁজে পাওয়া যায়। নেহাল সেই নিশিকে দেখে অশ্রু ঝরায়। নেহালও আর আগের মতো নেই। কেমন মন মরা আর বিষন্ন থাকে সবসময়। নিশি কোনো কেয়ারই করে না নেহালের। এটা সবাই ভাবলেও নেহাল কিন্তু ভাবতে পারেনা।

কারণ রাতে যখন নেহাল কাঁথা ছাড়া ঘুমায় সকালে ঠিকই গায়ের উপর কাঁথা থাকে নেহালের। অফিসে জাওয়ার সময় যা যা লাগে সবই ঠিক মতো গুছানো অবস্থায় থাকে। অথচ ও এসে একেকটা একেক জায়গায় রাখে। সকালের কফিটা ঠিক ঘুম থেকে উঠেই টেবিলে পায় নেহাল। নেহাল ওর প্রয়োজনীয় সবই পায় পায়না শুধু নিশিকে।

সবাই ভাবে নিশি হয়তো নেহালকে এখন আর ভালোবাসে না। কিন্তু একদিন নেহাল যখন অনেক অসুস্থ হয়ে পরে ভাইরাস জ্বরে। তখন নিশি একা টানা এক সপ্তাহ দিন রাত এক করে নেহালকে সুস্থ করে তুলে। কতটা ভালোবাসা ছিলো সে সেবায় তা শুধু নেহাল জানে। কিন্তু নিশি তা মানতে রাজি না।

তাই নেহাল নিশিকে দেখিয়ে দেখিয়ে প্রতি রাতে নওশিনের সাথে কথা বলে। কিন্তু নিশির মধ্যে এখন আর নেই বেকুলতা দেখে যায়না। মনে হয় ও সব মেনে নিয়েছে। নেহাল ব্যার্থ হয়ে যায়। আর কিছুই করতে পারে না। কারো মনের উপর দিয়ে তাকে পাওয়া যায়না। যদিনা সে চায়। নিশি চায়ই না নেহালের কাছে থাকতে।

এভাবে আরো একটা মাস চলে গেলো। কাল ওদের ডিভোর্স।

আগের রাতে,

নিশি চুপ করে ওদের রুমের এককোনায় বসে আছে। মুখটা একদম মলিন। নাই কোনো রঙ, নাই কোনো ভাব। একদম ফ্যাকাসে হয়ে আছে। চোখজোড়ায় আর মায়া নাই। আছে শুধু হারানোর কষ্ট।

নেহালকে আজ শান্ত লাগছে। খুব নরমাল। নেহাল আশা ছেড়ে দিয়েছে। আর পারবেনা নিশিকে বুঝাতে আর পারবেনা মানাতে। নেহাল আস্তে আস্তে নিশির কাছে গিয়ে ওর সামনে বসে। আর বলে,

নেহালঃ নিশি…

নিশি নেহালের দিকে করুনভাবে তাকায়।

নেহালঃ নিশি এখনও সময় আছে একবার বলো আমার কাছে তুমি থাকতে চাও। শুধু একবার বলো, নওশিন নামে কোনো মেয়ে যে আমার জীবনে ছিলো আমি তা ভুলে যাবো।

নিশি কিছুক্ষন মলিন দৃষ্টিতে নেহালের দিকে তাকিয়ে থেকে অসহায় ভাবে মাথা নাড়িয়ে না বলে। মানে ও থাকতে চায়না।

নেহালঃ ঠিক আছে। তাহলে আর কি, কাল তোমায় ডিভোর্স দিবো। তুমি মুক্ত হয়ে যেও। আমিও না হয় নওশিনকে নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করবো। তখন যদি তুমি আবার আসো, তাহলে তোমার খবর আছে। রেডি থাকো কাল তোমায় ছেড়ে দিচ্ছি।

নেহাল এসব বলে উঠে রুমের বাইরে চলে গেলো।

নিশি আস্তে করে উঠে দেখলো নেহাল আছে কি না। না নেই। নিশি আস্তে আস্তে বিছানার কাছে আসে। বিছানার উপর গা টা এলিয়ে দেয়। ডান হাত দিয়ে একটা বালিশ নেয়। আর মুখটা চেপে ধরে। আর সাথে সাথে অঝোর ধারায় কান্নায় ভেঙে পরে। আজ অনেক জোরে জোরে কাঁদছে নিশি। কিন্তু কেউ শুনছে না। সেই কান্নার আওয়াজ যদি কেউ শুনতো, তাহলে হয়তো এই দেয়াল গুলোও ফেটে যেতো। কিন্তু বালিশ চাপা দিয়ে কান্না করায় কেউ শোনেনা ওর কান্না। কাঁদতে কাঁদতে একসময় নিশি হারিয়ে যায় ঘুমের দেশে।

সকালে,

নিশির ঘুম ভেঙে যায়। চোখগুলো অনেক ফুলে আছে। পাশে তাকিয়ে দেখে নেহাল নেই। নিশি উঠে বসে। নেহাল ফ্রেশ হয়ে বের হচ্ছে।

নেহালঃ ফ্রেশ হয়ে এসে একদম রেডি হয়ে নিচে আসো। আমরা এখনই বের হবো।

নিশিঃ কই??

নেহালঃ কেন তোমাকে ডিভোর্স দিতে।

নিশিঃ….

নেহালঃ দেরি হয়না যেনো। আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।

নেহাল রেডি হয়ে চলে যায়। নিশি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। বাইরে এসে কোনো রকম রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। মা-বাবা ওকে দেখেও না দেখের ভান করে বসে থাকে। নিশি একরাশ হতাশা নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। জামাকাপড় নেওয়ার মতো কিছুই নেই নিশির। তাই খালি হাতেই বেড়িয়ে যাচ্ছে। গাড়িতে গিয়ে বসে নিশি। নেহালকে অনেকটা রাগী লাগছে।

নিশি বসতেই নেহাল গাড়ি চালু করে চলতে শুরু করে কোনো কথা ছাড়াই। নিশি হতাশা নিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। আধা ঘণ্টা পর,

নেহালঃ নামো চলে এসেছি।

নিশি নেমে দেখে কোর্টের সামনে। হ্যাঁ আজ ওদের সত্যিই ডিভোর্স হচ্ছে। ওদের মাঝে সব সম্পর্ক আজ শেষ হয়ে যাচ্ছে। নিশি সবটা আগেই মেনে নিয়েছে৷

নেহালের পিছনে পিছনে হাঁটছে নিশি। একটা রুমের সামনে এসে নেহাল থেমে যায়।

নেহালঃ আসো ভিতরে।

নিশির বুক কাঁপছে। হাত পা কেমন অসর হয়ে আসছে। নিশি অনেক কষ্টে সাহস জুগিয়ে ভিতরে ঢুকে।

উকিলঃ এসেছেন??

নেহালঃ জ্বি স্যার। সব রেডি??

উকিলঃ হ্যাঁ নেহাল সাহেব। শুধু সাইনটা করে দিলেই হবে। আপনি পরিচিত বলে কোনো রুলস ছাড়াই আপনাদের ডিভোর্সটা তাড়াতাড়ি করিয়ে দিচ্ছি। নিন এখানে সাইন করুন।

নেহালঃ নিশি এখানো সময় আছে সাইন কি করবো??

নিশিঃ…..

নেহালঃ নিশি???

নিশিঃ…..

নেহালঃ ঠিক আছে। দিন স্যার।

নেহাল সাইন করে দিলো।

উকিলঃ আপনিও করুন ম্যাম।

নিশি কাগজ সামনে নিয়ে কলমটা হাতে তুলে নেয়। নিশির হাত থরথর করে কাঁপছে।

উকিলঃ ম্যাম সাইন করুন।

নিশি কাঁপা হাতে কোনোভাবে সাইনটা করে দিলো আর সেই সাথে ওদের ডিভোর্স হয়ে গেলো।

উকিলঃ আপনাদের ডিভোর্স কম্পলিট। আপনারা এখন ফ্রী।

নিশি স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। কারণ সে আর নেহালের বিবাহিত স্ত্রী নয়।

– সমাপ্ত।

কোনো ভুল হলে মাফ করবেন।

সিজন ২ তে আপনাদের জন্য আছে এমন এক বড় সারপ্রাইজ যা হয়তো আপনাকে স্তব্ধ করে দিবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ