এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ পর্বঃ ০৪
– আবির খান
নেহাল ওর বাসার দরজার সামনে। বেল দিতেই কেউ একজন দরজা খুলে দিলো। নেহাল যাকে দেখলো তাতে ওর সব রাগ দরজা দিয়েই পালালো। আর নেহালের চোখ যেন সাত আসমানে উঠলো।
নেহাল দেখে, খুব সুন্দর করে সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে নিশি। নিশির থেকে চোখই সরাতে পারছে না নেহাল।
নীল শাড়ি, খোপা করা চুল। সে চুলে বেলি ফুলের মালা গাঁথা। কি সুন্দর সুবাস আসছে তা থেকে। নিশিকে আজ একদম তামিল মুভির নাইকাদের মতো লাগছে। নেহাল দরজায় দাঁড়িয়েই নিশিকে অপলক দৃষ্টিতে দেখছে।
নিশি আজ এতো সেজেছে শুধু নেহালকে একদম তার করে পেতে। নিশির সবটা দিতে চায় নেহালকে। স্বামী যে তার। স্বামীকে বস করার এই একটাই পন্থা জানা আছে নিশির মতো বাঙালি মেয়েদের। অবশ্য আমাদের বাঙালি স্বামীরা এতেই কাবু হয়ে যায়।
নিশিঃ উহুহুমম। কাশি দিয়ে।
নিশিঃ ভিতরে আসবেন না?? মজার স্বরে।
নেহালঃ হ্যাঁ কি??
নিশিঃ ভিতরে আসবেন না???
নেহালঃ ও হ্যাঁ হ্যাঁ। লজ্জা পেয়ে।
নিশি দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে নেহালের সাথে উপরে যাচ্ছে। নেহালের ঠিক পাশেই নিশি। নেহালের যায় যায় অবস্থা।
নেহাল ওর রুমে ঢুকে ফোনটা টেবিলে রাখে।
নিশিঃ আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি কফি নিয়ে আসছি।
নেহালঃ হুম।
নিশি নিমিষেই চলে যায় কফি আনতে। নেহাল একটু বিছানায় বসে। আর ভাবে, নাহ আমি কোনো ভাবেই নিশির প্রতি দূর্বল হতে পারি না। ওর জীবনটা আমি এভাবে নষ্ট করতে পারি না। কারণ আমার প্রথম আর শেষ ভালোবাসা শুধু নওশিন। হ্যাঁ ঠিক এটাই আমাকে মানতে হবে আর মনে রাখতে হবে। তাহলে আমি আর নিশির প্রতি দূর্বল হবো না। কিন্তু বউটা আমার এত্তো সুন্দরী আহ। ও সামনে আসলেই হারিয়ে যাই। নাহ যাই ফ্রেশ হয়ে আসি। কাল রাতটা তো ক্লান্ত বলে পাড় করেছি, আজ কি আছে কপালে আল্লাহই জানে। নাহ যাই।
নেহাল ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ১০ মিনিট পর ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখে কফি হাতে নিশি দাঁড়িয়ে আছে। নেহাল হাত-মুখটা মুছে বিছানায় বসে। আর নিশি নেহালের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর কফিটা এগিয়ে দেয়। নেহাল স্বাভাবিক ভাবে কফির মগটা নিশির কাছ থেকে নিয়ে একটা চুমুক দেয়। কিন্তু বিপত্তিটা ঠিক তখনই ঘটে।
নেহাল কফিতে চুমুকরত অবস্থায় যেই সামনের দিকে তাকায়, ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিশির দিকে চোখ যায়। নিশি আজ শাড়ি পরায় ওর খালি ফরসা কোমরটা একদম নেহালের চোখের সামনে। নেহাল চোখ বড় করে নিশির কোমরের দিকে তাকিয়ে আছে। কফির মগে কিন্তু চুমুক দিয়েই আছে। নেহাল যেনো এ দৃশ্য দেখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।
নিশি ব্যাপারটা বুজতে পেরে নেহালকে আরো জ্বালানের জন্য ইচ্ছা করে হাত দিয়ে শাড়িটা আরও একটু সরিয়ে দেয়। ব্যাস, নেহালের অবস্থা এখন আর কি বলবো। পাগল হয়ে যাচ্ছে।
নেহাল আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েকে এতো কাছাকাছি এতো গভীর ভাবে দেখেনি। নওশিন অবশ্য নেহালকে অনেক বার সে সুযোগ দিতে চেয়েছে। কিন্তু নেহালের এক কথা বিয়ের আগে নো এসব। কিন্তু নিশিতো তার বিবাহিত স্ত্রী। তাই তাকে দেখার ফুল অধিকার নেহালের আছে। কিন্তু বিবেগটাই বারবার বাধা দিচ্ছে। বারবার নওশিনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু নিশিকে বিয়ে করার পরই হঠাৎ কেমন এক টান অনুভব করে নেহাল নিশির প্রতি। এখন কেন জানি নওশিনকেও ভালোলাগে না বিরক্ত লাগে।
নেহাল কফির মগটা নিচে নামালো। নিশি সেই আগের অবস্থায় আছে। নেহালের খুব ইচ্ছে হচ্ছে একটু ছুয়ে দিতে। কিন্তু কিছু একটা ওকে বারবার আটকাচ্ছে। তাও আবার নিশির প্রতি কেমন এক অজানা অনুভূতিতে সব ভুলে যাচ্ছে।
নেহাল আর পারছেনা নিজেকে সামলাতে। একটু ছুতে চায় ওই কোমল নরম কোমরটা। হয়তো এতেই ওর শান্তি। নিশিটাও কেমন প্রদর্শনের ব্যাস্ত হয়ে আছে। নেহালের মনে হচ্ছে নিশি ইচ্ছা করেই এসব করছে। হয়তো কাল রাতের বদলা।
নেহালও কম না। বউ যখন তার, যেভাবে হোক একটু ছুয়ে দেখবে৷ তাই নেহালের মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি চাপলো৷ নেহাল কফির মগে একটা চুমুক দিয়েই নিশির নরম কোমরে হাত দেয়। নিশি সাথে সাথে চমকে এবং কেঁপে উঠে। নেহালের যা অনুভূতি হচ্ছে না। নেহাল হাত দিয়েই রেখেছে নিশির কোমরে।
এদিকে নিশি নেহালের স্পর্শ পেয়ে একটা জয়ের হাসি দিলো। আর নেহালকে লজ্জা দেওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলো,
নিশিঃ এই যে আমার কোমরে হাত দিয়েছেন কেন??হুম??
নেহালঃ হ্যাঁ?? না মানে হাত দেইনি, একটা মশা বসে ছিলোতো, তা মারার জন্য হাত দিয়েছি৷ আরে ডেঙ্গুর যে প্রকোপ বেড়েছে না। আবার ডেঙ্গু মশা যদি হয় তাই। মনে মনে হাসছে নেহাল।
নিশিঃ ও আচ্ছা তাই। তা এখনও কি মশা মারা হয়নি?? হাত দিয়ে আছেন যে?? মজা করে।
নেহালঃ হ্যাঁ হ্যাঁ হয়েছে। হাত সরিয়ে।
নিশিঃ আচ্ছা সবই তো বুঝলাম। কিন্তু আপনার বাসায় তো কোনো মশা নাই বা মশা ঢুকারও কোনো রাস্তা নেই। চারদিকে নেট দেওয়া। তাহলে আজ হঠাৎ?? মনে মনে জয়ের হাসি হাসছে নিশি। বেটাকে ফেলেছে লজ্জায়।
নেহালতো এখন বেশ চিন্তা আর লজ্জায় পরেছে। কারণ নিশি ঠিকই বলেছে, এ বাসায় মশা ঢুকার কোনো রাস্তা নেই। নেহাল ভাবে, যাহ আমার প্লানে আমিই ফেসে গেলাম?? এখন কি বলি?? ধুহ কেন যে হাত দিতে গেলাম?? দেখোনা এখনো কিভাবে কোমরটা দেখাচ্ছে। নাহ।
নেহাল কফি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। আর এভাবে বসে থাকলে আবার সে একই ভুল করবে নিশ্চিত। অন্য দিকে হাটতে হাটতে বলল,
নেহালঃ আরে আমি বাইরে ছিলাম না। হয়তো আমার সাথে এসেছে। বলেই শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে। যাক বাঁচা গেলো।
নিশিঃ ও আচ্ছা।
নেহালঃ হুম। আচ্ছা আমি রেস্ট নি তুমি মায়ের কাছে যাও।
বলেই নেহাল কফিটা তাড়াতাড়ি শেষ করে শুয়ে পরে।
নিশির খুব রাগ হচ্ছে। নিশি ভাবলো, কই একটু আদর করবে বউকে না সে ঘুমিয়ে পরলো। নিশি বুঝতে পারছে না কেন কাল রাতেও অর্থ্যাৎ বাসর রাতেও ওকে আপন করে নিলো না। নিশি ভাবছে, তাহলে কি আমাকে ওনার ভালো লাগে নি?? আমাকে পছন্দ হয়নি?? হয়তো আমি গরীব বলেই আমাকে মেনে নিতে চাচ্ছেন না। কিন্তু এখনতো আমরা বিবাহিত তাই বলে কি একটু স্বামীর ভালোবাসা পাবো না?? নিশির মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায়। নিশি নিঃশব্দে রুম থেমে বেরিয়ে যায় বিষন্ন মন নিয়ে।
রাত ৯.৩০ মিনিট,
নিশিঃ এই যে উঠুন… উঠুন না। রাতে খাবেন না?? মা ডাকছে তো। উঠুন না। নেহালকে ধাক্কা দিয়ে।
নেহাল আজ অনেক ক্লান্ত থাকায় একটু বেশি ঘুমিয়ে পরেছিলো। কিন্তু নিশির আদুরে গলায় ডাক পরায় ঘুমটা নিমিষেই চলে যায়।
নেহাল চোখ মিলে তাকায়। নিশি ওর সামনে বসা। ওদের মাঝে দূরত্ব খুবই কম। নিশির হাল্কা লিপিস্টিক দেওয়া ঠোঁটের নিচে থাকা তিলটা নেহালকে যা টানছে না। কিন্তু বিবেগের তারনায় নেহাল নিশির কাছে যেতে পারছে না।
নিশিঃ উঠুন। খাবেন না?? মা-বাবা নিচে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
নেহালঃ হ্যাঁ আসছি। তুমি যাও।
নিশিঃ আচ্ছা।
বলেই যেই নিশি উঠতে যাবে অমনি ওর শাড়িতে পা চাপা পরে হঠাৎই নেহালের বুকের উপর পরে যায়। নেহাল আশ্চর্য হয়ে যায় ঘটনার আকস্মিকতায়।
নিশি লজ্জাসিক্ত মুখ নিয়ে অসহায় ভাবে নেহালের দিকে তাকালো। তার তাকানোর ধরন বলছে, আমি ইচ্ছা করে পরিনি। নিশি নেহালের বুকে লজ্জায় মাথা লুকায়। মানে নেহালের বুকে মাথা রাখে। হয়তো এই আকস্মিক পরে যাওয়াই ওকে একটু স্বামীর বুকে মাথা রাখার সুযোগ করে দিয়েছে৷ তাই এই সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চায় না নিশি। তাই পরম আনন্দে স্বামীর বুকে মাথা রেখে পরে আছে।
এদিকে নেহালের যা অবস্থা। মাথায় শুধু নিশি আর নিশি। সব ভুলে গিয়েছে। এই নরম শরীরটা এখন সম্পূর্ণ তার বুকের উপর। কি নরম নিশি। একদম তুলোর মতো। নিশির চুল থেকে কি যে কড়া মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে না যা নেহালকে পাগল করে দিচ্ছে। এই ঘ্রাণ নেহালের অতীত বা ভবিষ্যৎ সব ভুলিয়ে দিয়েছে। শুধু বর্তমানকে করছে রঙিন।
নেহালের এক অজানা অনুভূতি হচ্ছে। কেমন এক ভালো লাগা কাজ করছে। নিশির এই স্পর্শ নেহালকে অনেক বেশি শান্তি দিচ্ছে৷ নেহাল মনের অজান্তেই নিশিকে তার বাহুডোরে আঁকড়ে ধরে। নিশি কিছুটা কেঁপে উঠে কিন্তু ও আঁকড়ে ধরে নেহালকে। দুজন মিশে যায় একে অপরের মাঝে। দুজনই চোখ বন্ধ করে আছে৷ এই স্পর্শের পরম শান্তি দুজনে অনুভব করছে। নিশির চোখ থেকে অজান্তেই কয়েক ফোটা অশ্রু ঝরছে। নিশি ভাবছে, হয়তো সে এখনি তার অধিকারটা পাবে৷ স্বামীর প্রতি স্ত্রীর যে অধিকার। তাই নিশি যেইনা একটু মাথা তুলে নেহালের দিকে এগিয়ে গেলো অমনি নেহাল,
নেহালঃ ক্ষুধা লেগেছে। নিচে বাবা-মা অপেক্ষা করছে। যাবে না??
নিশি নেহালের কথা শুনে যেমন ভয়ংকর লজ্জা পেয়েছে তেমনি একদম ভেবাচেকা খেয়ে গেছে। নিশি এক লাফে উঠে তাড়াতাড়ি নিজেকে ঠিক করে।
নিশিঃ আপনি তাড়াতাড়ি নিচে আসবেন। কড়া কণ্ঠে।
বলেই নিশি দ্রুত সেখান থেকে চলে গেলো। কিন্তু নিশির লজ্জায় গোলাপি হওয়া মুখের দৃশ্য কিন্তু নেহালের চোখ এড়ালো না৷
নেহাল বেশ বুঝতে পেরেছে যে, নিশি কি চায়। এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। এই চাওয়াটা ওর অধিকার। ওর অধিকার ও নিতে চাবেই। ও তো ওর স্ত্রী। কিন্তু নেহাল কিভাবে সেই অধিকার নিশিকে দিবে?? নেহালের মনে যে অন্য কেউ। কিভাবে নিশিকে সেখানে রাখবে?? কিন্তু নিশির চোখে নেহাল ওর জন্য অনেক ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে এই অল্প সময়ে। কারণ নিশি ওকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছে মনে প্রাণে। কিন্তু ও?? ও তো এখনো মেনে নিতে পারে নি। বউটা কতবার চেয়েছে নেহাল ওকে একটু ভালোবাসুক কিন্তু নেহাল বারবার ওকে সরিয়ে দিয়েছে৷
নেহালের কেন জানি নিজেকে অনেক অপরাধী অপরাধী লাগছে। সে অনেক বড় একটা অপরাধ করেছে এই দুই নৌকায় পা রেখে। নেহালকে এই দুই নৌকার যেকোনো এক নৌকা ছাড়তে হবে। নওশিন নাকি নিশি। নেহাল আর ভাবতে পারছে না। মাথার ভিতর ব্যাথা শুরু করে দেয় এসব ভাবলে। নেহাল ফ্রেশ হতে চলে যায়।
এদিকে নিশি লজ্জাসিক্ত চেহারা নিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছে। আর নেহালের বাবা-মা খাবার টেবিলে বসে নিশিকে দেখছে।
মাঃ দেখো, মেয়েটা মনে হয় আমাদের ছেলের লজ্জা ভাঙতে গিয়ে নিজেই চরম লজ্জায় পরেছে। কিভাবে লজ্জায় মুখটা গোলাপি হয়ে আছে।
বাবাঃ হুম তাইতো দেখছি। থাক কিছু বলোনা। তাহলে আরো লজ্জা পাবে। স্বাভাবিক থাকো।
মাঃ হ্যাঁ ঠিক বলেছো। আমারও এই একই অবস্থা হয়ে ছিলো তোমাকে পেতে গিয়ে। মজা করে।
বাবাঃ এখন কি তুমি আমাকে লজ্জা দিবে নাকি??
মাঃ হা হা।
নিশি নেহালের বাবা-মার সামনে এসে দাঁড়ালো।
মাঃ নিশি নেহাল কই??
নিশিঃ আসছে মা। ঘুমাচ্ছিলোতো তাই ফ্রেশ হয়ে আসছে।
মাঃ আচ্ছা।
নিশি বাবা-মাকে খাবার বেরে দিচ্ছে আর নেহাল চিন্তিত হয়ে আস্তে আস্তে করে নেমে আসছে। এসে চেয়ারে বসলো।
বাবাঃ কিরে এতো কি চিন্তা করছিস নেহাল??
নেহালঃ না বাবা তেমন কিছু না।
আসলে নেহাল নওশিন আর নিশিকে নিয়ে অনেক চিন্তায় পরেছে। কাকে রাখবে আর কাকেই বা কষ্ট দিবে ভেবে পাচ্ছে না। নেহালের ঠিক সামনেই নিশি বসেছে। কারণ নিশির অনেক লজ্জা লাগছে নেহালের পাশে বসতে। নিশি আড় চোখে একটু পর পর নেহালকে দেখছে আর লজ্জা পাচ্ছে। নেহাল একবার নিশির দিকে তাকাতেই নিশির চোখে চোখ পরে যায়। নিশির লজ্জাসিক্ত মুখটা নেহালের মনে অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি করছে। এভাবে চোখাচোখি হচ্ছে ওদের খাওয়া মাঝে।
মাঃ দেখেছো ওদের অবস্থা?? কিভাবে একে অপরকে আড় চোখে দেখাদেখি করছে?? কি প্রেম। হাহা।
বাবাঃ আরে আস্তে বলো। ওরা শুনে যাবে।
মাঃ চলো তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে পরি। ওরা একটু প্রেম করুক। হাহা
বাবাঃ আচ্ছা। হাহা।
কিছুক্ষন পর,
মাঃ নিশি মা আমাদের খাওয়া শেষ। আমরা উঠি।
নিশিঃ বাবা দাড়ান, আপনার ঔষধ খাবেন না?? এইযে ঔষধ।
ঔষধ খেয়ে,
বাবাঃ দেখেছো নেহালের মা, আমি ভুল করিনি। আমি আমার ছেলের জন্য সঠিক এবং উপযুক্ত বউমাকেই খুঁজে এনেছি। এরকম বউমা পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার। মা তুই আসলেই অনেক ভালো রে। আল্লাহ তোর সব মনোকামনা পূরণ করুক।
মাঃ আমিন।
নেহাল বাবামায়ের কথা শুনে আরো চিন্তায় পরে যায়। আসলেই তো নিশির মতো এতো সুন্দরী, এতো ভালো মনের মানুষ বা স্ত্রী পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যপার। নেহাল যে কি করবে বুঝতে পারছে না।
নেহালঃ আমারও খাওয়া শেষ আমিও উপরে যাই।
নিশিঃ আচ্ছা।
সবাই যে যার রুমে চলে গেলো। নিশি নিচে সার্ভেন্টদের নিয়ে খাবার টেবিলটা পরিষ্কার করে উপরে যায়।
নিশি ভিতরে ঢুকে দেখে নেহাল লেপটপে কি যেনো করছে। নিশি ফ্রেশ হতে চলে যায়। নিশি সুন্দর করে ফ্রেশ হয়ে এসে নেহালের সামনে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে যখন নেহালের কোনো পাত্তা পেলো না। তখন বিষন্ন মন নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। আজ আকাশটা পরিষ্কার সাথে চাঁদটাও আছে। কিন্তু আকাশের মতো নিশির মনটা আজ পরিষ্কার নেই। সেখানে জমেছে কালো মেঘ। একটু পরেই বৃষ্টি হবে অশ্রুর ন্যায়ে।
নিশি বারান্দার গ্রিলে মাথা রেখে অশ্রু ফেলছে আর একা চাঁদটাকে দেখছে।
এদিকে,
নেহালঃ কি ব্যাপার নিশি একা বারান্দায় এতোক্ষন কি করছে?? একটু যাবো নাকি?? নাহ আবার যদি কিছু মনে করে?? ধুর ও কেন কিছু মনে করবে?? ওতো উল্টো আমাকে চায়। কিন্তু আমিই না ওকে বারবার দূরে সরিয়ে দিয়ে কষ্ট দিচ্ছি। নাহ একটু দেখি কি করছে।
নেহাল ধীর পায়ে বারান্দার দিকে এগোতে থাকে। বারান্দার দরজার কাছে আসতেই দেখে নিশির চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে। কেন জানি নেহালের বুকে এই অশ্রু দেখে একটা ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। নেহাল তাড়াতাড়ি নিশির দিকে এগিয়ে যায়।
নেহালঃ নিশি তুমি কাঁদছো কেন??
নিশি চাঁদের দিকে তাকিয়েই বলতে লাগলো,
নিশিঃ আমি জানি, আপনি আমাকে পছন্দ করেন না। তাই হয়তো বারবার দূরে ঠেলে দিচ্ছেন। জানেন, আমার বাবা ছাড়া আর কেউ নেই। মাকে কোনো দিনই দেখেনি। আপনাদের পেয়ে সত্যিই আমি অনেক খুশি। কিন্তু আমি আপনার পছন্দের হতে পারলাম না। আমি গরীব বলেই আমাকে পছন্দ হয়নি তাইনা। আমাকে কি এভাবে সবসময় দূরে সরিয়ে দিবেন?? নিঃশব্দে কাঁদছে নিশি। চোখের অশ্রুর ধারা হঠাৎ আরো বেরে গেলো।
নেহালের বুকের ভিতরটা ফেটে একাকার হয়ে যাচ্ছে নিশির এভাবে কথা শুনে। নেহাল ভাবে,আসলেই তো নিশির তো কোনো দোষ নেই সব দোষ ওর। নিশিকে ওর নওশিনের চেয়েও অনেক বেশি ভালো লাগে৷ কিন্তু নওশিন ওর প্রথম ভালোবাসা। নওশিনকে ঠকাবেনা বলেই ও নিশিকে আপন করে নেয় না। কিন্তু নিশির এই দুঃখ মাখা কথা আর চেহারা দেখে ওর প্রচন্ড মায়া হচ্ছে। মন চাচ্ছে নিশিকে ওর বুকে একটু জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেই। নিশি আনমনে আবার বলে,
নিশিঃ আমাকে যদি ভালো নাই লাগে তাহলে কেনো আমাকে বিয়ে করলেন?? অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে নেহালের দিকে অসহায় ভাবে তাকালো।
নেহাল কি বলবে, কি করবে বুঝতে পারছে না। নেহালের অনেক খারাপ লাগছে। তাই নেহাল নিশির হাতটা ধরতে নিলেই নিশি হাত ছাড়িয়ে ভিতরে রুমে চলে যায়। নেহালও নিশির পিছনে পিছনে চলে যায়। নিশি অন্য দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে কাঁদছে নিঃশব্দে।
নেহাল আর না পেরে সব ভুলে নিশিকে মানে তার স্ত্রীকে তার সবচেয়ে সুন্দরী বউকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আবেগে। নিশি নেহালের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে সাথে আরো কান্না বাড়িয়ে দেয়। নিশি ঘুরে নেহালকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। নেহালের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে আর বলে,
নিশিঃ আমাকে দয়া করে দূরে সরিয়ে দিবেন না। আপনি ছাড়া আমি অসহায়। আমাকে একটু ভালোবাসা দেন না। বেশিনা শুধু একটু। কান্না জড়িত কণ্ঠে।
নিশির নেশাকাতর কথা শুনে নেহাল কেমন জানি হয়ে পরে। নিশিকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। নেহালের চোখ থেকেও অশ্রু ঝরছে। একটুপর নেহাল নিশির মুখ তুলে ওর দুচোখের পানি সব মুছে দেয়।
নিশির কান্নামাখা মুখটা খুব মায়াময় লাগছে নেহালের কাছে। ঠোঁটের নিচের তিলটা আরো গাঢ় হয়ে গিয়েছে চোখের পানিতে। সাথে গোলাপি ঠোঁটটা নিশির কাঁপছে। নেহাল ওই কাঁপা গোলাপি ঠোঁটটার দিকে তাকিয়ে আছে। নিশি তা দেখে ওর চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে লজ্জায়। নেহাল আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। নিজের বউকে তার ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দেয়। নিশি সেই পরশ পেয়ে পরম আনন্দে তা উপভোগ করে সমান তালে। জানালা আর বারান্দা থেকে বাতাস আসছে। বাইরে নেহালের বাগানে থাকা বিভিন্ন ফুলের সুবাস সেই বাতাসের সাথে ওদের রুমে প্রবেশ করেছে। আর রুমের মহলটা ধীরে ধীরে অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। আর সেই সাথে নেহাল আর নিশি হারিয়ে যাচ্ছে অন্যরকম অনুভূতিতে। সময় যেনো থমকে গিয়েছে ওদের জন্য। কিন্তু হঠাৎই….
চলবে….?
কোনো ভুল হলে মাফ করবেন।