Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"এক মুঠো প্রেম রঙ্গনাএক মুঠো প্রেম রঙ্গনা পর্ব-০৫

এক মুঠো প্রেম রঙ্গনা পর্ব-০৫

#এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা
লাবিবা ওয়াহিদ
| পর্ব পাঁচ |

———————
ইরা’দের হাত কিছুটা ছিঁলে সেই ক্ষ!তস্থান হতে তা*জা রক্ত বের হচ্ছে। ইরা’দ কিছুটা চোখ-মুখ কুচকে ফেললেও তোয়াক্কা করলো না। নির্বাক ভঙ্গিতে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে পিছে ফিরে তাকালো। মুহূর্তে-ই দৃষ্টি আদান-প্রদান হলো নওরির সঙ্গে৷ ইরা’দের চোখে চোখ রেখে দিব্যি শান্ত হয়ে আছে নওরি। এরূপ চাহনিতে ইরা’দ চমকালোও বটে। নওরি যেন ইরা’দকে চিনতে চেষ্টা করছে। ইরা’দের সাথে সে কতটা সুরক্ষিত তা বুঝতে চাইছে। মেয়েদের নজর সবসময়ই তীক্ষ্ণ হয়। এরা পুরুষদের চোখের ভাষা বুঝতে পারে। সেই চোখ পরখ করেই বুঝতে পারে পুরুষটির উদ্দেশ্য ভালো নাকি খারাপ। নওরি এ বিষয়টি ক্ষীণ হলেও ধরতে পারলো যে ইরা’দ খা!রাপ পুরুষদের দলভুক্ত নয়। তাও মনের আশঙ্কা থেকেই যায়।

তার জীবনটা এখন নতুন অধ্যায়ের নতুন এক সুচনায় শুরু হয়েছে। এ শহরে বাঁচতে হলে এরকম কম-বেশি নানান জনের সাথে তাকে মিশতে হবে, তাদের পদক্ষেপ বুঝতে হবে। হঠাৎ ইরা’দের হাতে ত্যাছড়া করে একটি সরু ক্ষত এবং সেটিতে রক্ত দেখে নওরি আঁতকে উঠলো। চিন্তায় জর্জরিত নওরি পরপর দুই ধাপ এগিয়ে এলো ইরা’দের দিকে। হাতের দিকে করুণ নজরে তাকিয়ে রয় নওরি। অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে শুধায়,
–“স্যরি! অনেক অনেক স্যরি। আমার জন্যেই আপনাকে আঘাত করা হলো। কিন্তু আমার কাছে ব্যান্ডেজ নেই আর..”
–“ইট’স ওকে। বড়ো কিছু হয়নি। ব্যস্ত হবেন না।”
–“ব্যস্ত না হওয়ার কারণও আমি দেখছি না। আপনি আমার জন্যে এরকম বিপদে পরেছেন। দাঁড়ান, আমি ব্যবস্থা করছি।”

বলেই নওরি তাঁর ওড়নার একাংশ ছিঁড়তে নিলে ইরা’দ বাঁধা দেয়। নওরি বো!কা চাহনি নিক্ষেপ করে ইরা’দের পানে। ইরা’দ সেই চোখে তাকিয়ে বলে,
–“ফার্মেসী আছে পাশেই। ওড়না ছিঁড়ে কী হবে?”

নওরি এদিক ওদিক তাকালো। এরপর অস্ফুট স্বরে আওড়ায়,
–“হ্যাঁ, তাইতো।”

হঠাৎ নওরির হুঁশ ফিরে। এতক্ষণ কী কী করেছে তাও যেন বিদ্যুতের বেগে তরঙ্গিত হলো। সে কি না একজন অচেনা যুবকের সাথে.. গা গুলিয়ে আসলো নওরির। পরমুহূর্তে মাথায় এলো ইরা’দের অবস্থার কথা। যতই হোক, নওরির জন্যেই ইরা’দ এই পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে।
ইরা’দ ফার্মেসীর দিকে চলে গেলো। নওরিও তাঁর ব্যাগ টানতে টানতে ইরা’দের পিছু নিলো। অনুশোচনায় ক্রমাগত ঘামছে সে। নওরির পরিবারে কেউ যদি তাঁর জন্যে ভুল করেও ব্যথা পেতো তাহলে এতক্ষণে কয়েক যু!দ্ধ লেগে যেত। সেই যু!দ্ধের অ!স্ত্র সব নওরির উপর দিয়ে যেত। কিন্তু সেখানে ইরা’দ সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। কিচ্ছু বলেনি। অচেনা একজন হয়েও। এ বিষয়টি বড্ড বেশি ভাবাচ্ছে নওরিকে। সাথে ঘাবড়াচ্ছেও।

ইরা’দ ব্যান্ডেজ করাতে করাতে কোণা চোখে নওরিকে দেখছে। নওরি একমনে ইরা’দের হাতের দিকেই তাকিয়ে আছে। নওরির চোখে-মুখে ভীতি দেখেই ইরা’দ কিছু বলতে পারছে না। তাঁর জন্যে যে নওরির অনুশোচনা, অপরাধবোধ কাজ করছে এটাই ভালো লাগলো ইরা’দের। তবে মেয়েটাকে প্রথম দেখাতে বাঁচাল মনে হলেও মেয়েটা অতিরিক্ত শান্ত। কিছুটা বো!কাও বটে। নওরির একটা কথাই তাঁর মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে।
“স্যরি! আমি একচুয়ালি এত কথা বলি না। কিন্তু টেনশনে আমার মাথা ঠিক নেই।”
এতই চিন্তা তাঁর? কিসের চিন্তা ছিলো তাঁর? ব্যাগ হারানোর? হয়তো। ব্যান্ডেজ করা শেষ হতেই নওরি আগ বাড়িয়ে লোকটির উদ্দেশ্যে বলছে,
–“কত টাকা হয়েছে? বলুন, আমি দিচ্ছি।”

বলতে বলতেই সে চেয়ারের উপর রাখা ব্যাগের দিকে এগিয়ে গেলো। ইরা’দ নওরিকে কিছু বলেনি। সে টাকা দিতে চায়, দিক! ইরা’দের এতে কোনো দ্বিমত নেই। নওরি ব্যাগের চেইন খুলে কাপড় হাতড়ে একটি ছোট পার্স বের করলো। পার্সের একাংশের চামড়া ছিঁড়ে ঝুলছে। এটা ইরা’দ ভালোই লক্ষ্য করেছে। লোকটি এমাউন্ট বললে নওরি পার্স খুলে দেখলো একটা পাঁচ পয়সা এবং একটা দুই পয়সা। মুহূর্তে-ই নওরির মুখমন্ডলে অন্ধকার গ্রাস করলো। তাঁর টাকা কই গেলো? সে তো পার্সেই রেখেছিলো। তাহলে? এবার কান্না পেয়ে গেলো নওরির। তাঁর জমানো টাকা এবং মাহির দেয়া টাকায় মিনিমাম এক হাজারের মতো টাকা ছিলো তাঁর। কিন্তু এখন তো সব খুঁইয়েছে। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাবে কী করে? এই অচেনা শহরে চলাফেরা করবে কী করে?

নওরির এরূপ অভিব্যক্তি স্বাভাবিক লাগলো না ইরা’দের। চাহনি দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো কারণে নওরি ডিপ্রেসড। ইরা’দ উঠে দাঁড়িয়ে শার্ট টানতে টানতে নওরির দিকে এগিয়ে গেলো। নওরি ইরা’দের উপস্থিতি তাঁর কাছাকাছি আসতেই নওরি মিনমিন করে বললো,
–“ছিনতাইকারী আমার টাকাগুলো নিয়ে গেছে। একদম আগেভাগেই।”

ইরা’দ হতবাক নওরির কথা শুনে। ভ্রু-দ্বয় কুচকে কিছুক্ষণ নওরির দিকে তাকিয়ে রয়। নওরি তাঁর খালি ছোট পার্সটি দেখায়। ইরা’দ হালকা কেশে বলে,
–“ব্যাপার না, আমি-ই দিয়ে দিচ্ছি।”

ইরা’দের বলা কথার উত্তর খুঁজে পেলো না নওরি। অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে রাখলো। দৃষ্টি তাঁর সোজা পায়ের দিকে।

ফার্মেসী থেকে বের হওয়ার সময় ইরা’দ নওরির উদ্দেশ্যে বললো,
–“শহরে নতুন?”
নওরি মাথা নিচু করে ইতিবাচক মাথা নাড়ায়। ইরা’দ এদিকে সেদিক তাকিয়ে বলে,
–“আগে এসেছেন?”
–“না।” নওরির জড়ানো কন্ঠস্বর।
–“শহরে নতুন, পথ-ঘাট চিনেন না, টাকাও সব খুইয়ে ফেলেছেন! এখন নিজ গন্তব্যে পৌঁছাবেন কী করে শুনি?”

উত্তর নেই নওরির। কী উত্তর দিবে ঠাওর হলো না নওরির। ইরা’দ নিজের বাইকের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। নওরি ভীত নজরে চারপাশ একপলক দেখে নিলো। হঠাৎ ইরা’দের সেলফোন বেজে ওঠে। ফোনের রিংটোন শুনে নওরিরও তার বাবার ফোনের কথা মনে পরে যায়। দ্রুত ব্যাগ থেকে বাটন ফোনটি বের করে। ফোনটা নিজের সাথেই নিয়ে এসেছে সে। বাটন ফোনটা অন করতেই দেখলো সৎ মা এবং রাফিয়ার অনেকগুলো কল। নিশ্চয়ই বাবার ফোন পাচ্ছে না বলে কল দিয়েছে বারবার। নওরির মনগহ্বরে একটি প্রশ্ন উদয় হলো। আচ্ছা, এতক্ষণে কী সবাই জেনে গিয়েছে যে সে পালিয়েছে? তাদের কী চিন্তা হচ্ছে নওরির জন্যে? ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো সে। বেশি ভাবছে সে। এত ভাবলে এই জীবনে আগাবে কী করে?
—-
–“আরে তোরা সামলা। আমি ঝামেলায় আছি। আমার পৌঁছাতে দেরী হবে। রাখছি।”
ইরা’দের কন্ঠস্বর শুনে নওরির ধ্যান ভাঙ্গে। ইরা’দ কল কেটে ফোন পকেটে পুরে বলে,
–“কোথায় যাবেন বলুন, আমি দিয়ে আসব!”
–“কিন্তু… আপনার সময় নষ্ট হচ্ছে আমার জন্যে।”
–“সেরকম কিছু না। আপনাকে সাহায্য করতে পারলে আমি নিজেই খুশি হবো।”
নওরির কিছুক্ষণ চুপ করে ভেবে ফোনের বাটন টিপে একটি মেসেজ বের করলো। সেই মেসেজে একটি জায়গার এড্রেস দেয়া। নওরির সেই এড্রেসের পুরোপুরি ঠিকানা না দিয়ে কিছুটা বলে,
–“মোড়ে নামিয়ে দিলেই হবে।”
–“সত্যি তো?”
–“হু।”

ইরা’দ বাইকে উঠে বসলো। নওরি ইতস্তত পায়ে এগিয়ে গিয়ে ইরা’দের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। বেশ কিছুক্ষণ। ইরা’দ বিরক্তি প্রকাশ করে বলে,
–“আমার কাজ আছে। এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে আমার সময় নষ্ট করবেন না প্লিজ।”

নওরির খারাপ লাগলো। ভীষণ। আজ সে নিরুপায় বলেই তো ইরা’দকে বিরক্ত করছে। নয়তো নওরিরও বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই একজন অপরিচিত ছেলেকে বিরক্ত করার। নতুন শহরে পা দিয়েই কত ঘটনা ঘটে গেলো। নিজের টাকা চুরি হয়ে গেলো। এই শোক তো নওরির কাটছেই না। প্রথম ধাপেই যদি এত ধাক্কা খেতে হয় তাহলে বাকিটা পথ কী করে এগোবে? নওরি বেশ ভেবে-চিন্তে আলতো স্বরে বলে,
–“আমি এ শহরে নতুন। বাধ্য হয়ে আপনার সাহায্য নিচ্ছি। আশা রাখছি আপনি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিবেন না।”

ইরা’দের ডান ভ্রু অসম্ভব কুচকে গেলো নওরির ইনিয়ে বিনিয়ে বলা কথায়। বুঝতে একটু বিলম্ব হয়েছে বটে। ইরা’দ বুঝতে পারলো নওরির কথা কথার মূল সারমর্ম। ইরা’দ বেশ কাঠ কাঠ গলায় বলে,
–“আপনি আসবেন? আমি কিন্তু মহা ব্যস্ত মানুষ। এতদিকে দেখার সময় নেই আমার!”

নওরি সবটা আল্লাহ্’র হাতে ছেড়ে দিয়ে ইরা’দের পেছনে গিয়ে বসলো। আগেরবারের চেয়েও এবার বসতে বেশ কিছুটা সমস্যা হচ্ছে তাঁর। কখন পরে যায় সেই ভয়ে নওরির জুবুথুবু অবস্থা। ইরা’দ বাইক টান দিতেই নওরির এক হাত আচমকা ইরা’দের কাঁধে চলে গেলো। ইরা’দ লুকিং গ্লাসে নওরিকে একপলক দেখে নিলো। নওরি এক হাতে তাঁর ওড়না এবং ব্যাগটা সামলাচ্ছে।
–“আস্তে চালান প্লিজ।”

ইরা’দ শুনেছে কি না বোঝা গেলো না। তাঁর বাইকের গতিবেগ আগের মতোই। এদিকে নওরি বেশ কয়েকবার ভিঁমড়ি খেয়ে পরতে পরতে বেঁচেছে। ভয়ে নিঃশ্বাস যেন গলাতেই আটকে আছে তাঁর। মিনিট দশেকের মাঝে ইরা’দ মোড়ে নিয়ে বাইক থামালো। নওরি ভীতু নয়নে আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো, সে ঠিক কোথায়?
–“নামুন।”

নওরি ধীরে সুস্থে নেমে দাঁড়ায়। হাঁটু জোড়া অসম্ভব কাঁপছে তাঁর। এখনো ভয় কাটেনি। এজন্যই এই অবস্থা তাঁর। শেষে একটি দোকানের ব্যানারে ঠিকানা দেখতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। ইরা’দের দিকে ঘুরে বেশ জড়ানো কন্ঠে শুধালো,
–“আপনাকে ধন্যবাদ জানালেও কম হবে। তাও কৃতজ্ঞতা। আপনি না থাকলে..”
–“আচ্ছা, আসছি আমি।”

বলেই ইরা’দ হন্তদন্ত হয়ে বাইক নিয়ে ছুটলো। নওরি হতভম্বের মতোন তাকিয়ে রয় ইরা’দের যাওয়ার পানে। কী মনে হতেই নওরি দেরী না করে দ্রুত তাঁর বাবার ফোন বের করে একজনকে কল লাগালো। দুই-তিন বার রিং হতেই ওপাশের ব্যক্তিটি কল রিসিভ করলো,
–“হ্যালো সারিফা?”
–“বলো আপু।”
–“আমি মোড়ে চলে এসেছি। তুমি আমায় নিয়ে যাবে?”
–“আসলে আপু, আমি এখন কলেজে আছি। তুমি গলির ভেতরে একটু এগোও। বাড়ি নাম্বার ৩৮, আর বাড়ির নাম “খান ভিলা”।”

নওরি ভেতরের দিকে নজর বুলিয়ে বললো,
–“ঠিকাছে।”
–“আচ্ছা আপু। সো স্যরি তোমায় রিসিভ করতে পারিনি। আমি আম্মুকে বলে দিচ্ছি, সে গেটের বাইরে তোমার জন্যে অপেক্ষা করবে। আর হ্যাঁ, রিকশা নিয়ে নিও। দশ টাকা ভাড়া লাগবে।”

রিকশা ভাড়ার কথা শুনে নওরির মুখ কালো হয়ে গেলো। কোন রকমে বললো,
–“আচ্ছা ঠিকাছে।”

নওরি কল কেটে ফোন বন্ধ করে ফেললো। ধীরে ধীরে গলির ভেতরে এগোতে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে লক্ষ্য করলো একটি ময়লার ডোবা। নওরি তাঁর হাতের বাবার ফোনটা দেখে নিলো। এই ফোন সে নিজের সাথে নিয়ে যেতে চায় না। তাই ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডোবাতে সেই বাটন ফোনটি ছুঁড়ে মেরে সামনের দিকে হাঁটতে লাগে। আনমনে, অন্যমনস্ক হয়ে।
——
ইরা’দের বাইক চালাতে চালাতে মনে পরলো মেয়েটার কথা। আপনমনে ভাবলো,
–“মেয়েটি আমাদের এলাকাতে? ভালো তো। বাট… মেয়েটার নাম কী? সেটাই তো জানা হলো না। শিট!! ড্যাম ইট!”
——
জনমানব শূণ্য রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নওরির মাথায় এলো একই প্রশ্ন। আচ্ছা, অচেনা ছেলেটির নাম কী? জানাই তো হলো না। অন্যমনস্ক হয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একটি দেয়ালে নজর আটকালো। বেশ কিছু পোস্টার লাগানো। সেই পোস্টাগুলোর একটি পোস্টারে তাঁর চোখ আটকে গেলো। আরেহ! এ তো সেই ছেলেটা! এই ছেলেটাই তো নওরিকে হেল্প করেছে। নওরি কিছু না ভেবেই সেই পোস্টারের দিকে এগিয়ে গেলো। হ্যাঁ, ঠিকই দেখেছে নওরি। এটা সেই ছেলেটাই। কিন্তু তাঁর পোস্টার এখানে কেন? নওরি লেখাগুলো পড়তে নিতেই পেছন থেকে তাঁর ব্যাগটি বেশ জোরালো ভাবে নড়েচড়ে উঠলো। নওরি পোস্টার থেকে নজর সরিয়ে ফ্রিশাকে ব্যস্ত ভঙ্গিতে ডাকতে ডাকতে সামনের পথে হাঁটতে লাগলো। একসময় একসাথে দুই গলির মুখোমুখিতে পরলো নওরি। বুঝে উঠতে পারলো না নওরি কোন দিকে যাবে। আশেপাশে কাউকেই পাচ্ছে না। তবে একটি রিকশা পেলো। খালি রিকশা। নওরি যদি পথ হারিয়ে ফেলে, সেই রিকশাকে ডাক দিলো। রিকশাওয়ালাকে বাড়ির নাম বলে ভাড়া জিজ্ঞেস করলে দশ টাকাই বললো। নওরি ইতস্তত হয়ে বললো,
–“সাত টাকা আছে, হবে?”

রিকশা ওয়ালা সাথে সাথে নাকোচ করে দিলো। ঢাকা- শহরের রিকশা ওয়ালাদের চাহিদা এবং ভাব থাকে অন্যরকম-ই। এছাড়া হবে নাই বা কেন? নওরি আশেপাশে যতগুলো এপার্টমেন্ট দেখছে সবই বেশ ব্যয়বহুল। সবই আট – ন’তলা। ওই রিকশা চলে গেলে। এখন পুরো রাস্তা পুরো ফাঁকা। যাও রিকশা দু’একটা দেখা যাচ্ছে, সব গুলোতে যাত্রী’রা দখল করে আছে। এদিকে নওরি তৃষ্ণায় এবং খুদার জ্বালায় হাসফাস করছে। ফ্রিশারও খুদা পেয়েছে। সেই কখন খেয়েছে, এখনো কিছু খেতে পারেনি। মিনিট পাঁচেক পর আরেকটি রিকশা পেলো। দর-দাম না করে এবার উঠে পরলো নওরি। কাঁধের ব্যাগটা খুলে কোলে নিয়ে বলে,
–“আর মাত্র কিছুক্ষণ ফ্রিশা। একটু অপেক্ষা কর।”

————
বাড়ির সামনে হাসি মাখা চেহারার মধ্যবয়সী মহিলাকে নওরি অনায়াসেই চিনে ফেললো৷ মধ্যবয়সী মহিলাও যেন দূর থেকে নওরিকে চিনে ফেললো। নওরি রিকশা থেকে নামতেই নুরজাহান এগিয়ে এলেন এবং নওরির সাথে হালকা আলিঙ্গল করলেন।
–“কেমন আছো? কতগুলো দিন পর তোমায় দেখলাম মা। সেই তোমার মা থাকতে তোমায় দেখেছিলাম। আর দেখা পাইনি।”

মায়ের কথা শুনে নওরির মুখ ঘুচে গেলো।নুরজাহানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলে,
–“ভালো আছি আন্টি। আর… আসলে আমার কাছে মাত্র সাত টাকা আছে, তুমি কী রিকশা ভাড়া দিয়ে দিবে?”
হাসলো নুরজাহান।
–“ওম্মা। এইটুকুতে এত অস্বস্তির কী আছে? এখন তো আমি তোমার আপনই মানুষ। দারোয়ান ভাই, রিকশা ওয়ালাকে দশ টাকা দিয়ে দিন! আমি পরবর্তীতে আপনার পাওনা টাকা শোধ করে দিবো।”

দারোয়ান দাঁড়িয়ে ছিলো গেটের কাছাকাছি। বিরাট গাছের ছায়াতলে। দারোয়ান নুরজাহানের কথা শুনতেই ইতিবাচক মাথা নাড়ালো এবং এগিয়ে এলো। নুরজাহান নওরিকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো। আট তলা বিশিষ্ট ভবনের তিন তলায় নুরজাহানের ফ্ল্যাট।

নুরজাহানের দেয়া রুমে চোখ বুলিয়ে ফ্রিশাকে ব্যাগ থেকে বের করতেই আচমকা পেছন থেকে ছোট কন্ঠের উক্তি কানে এলো নওরির।
–“আমি দয়াবান মানুষ। তাই তোমায় আমার রুম ধার দিয়েছি। আমি তোমায় আমার রুম দিয়েছি বলে এই না যে তুমি আমার মাছ আর ফুল গাছে হাত দিবা! খবরদার!!”

[কপি সম্পূর্ণ নিষেধ]
————————

~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ