Sunday, October 5, 2025







একটি চিঠি অতপরঃ

নতুন ফ্ল্যাটে উঠার পর গোছাতে আর নতুন সব জিনিস দিয়ে সাজাতে সাজাতেই দুই মাস চলে গেল। আত্মীয়-স্বজন সবাই ফ্ল্যাটে উঠার পর থেকেই কবে দাওয়াত দিবে তাগাদা দিচ্ছিল। রিনি সবকিছু মনের মতো না গুছিয়ে কাউকে আনতে চাইছিল না। এই ফ্ল্যাট তার অনেক বছরের স্বপ্ন। গত কয়েক বছর গেছে এই ফ্ল্যাট কবে তৈরি হবে, কবে উঠবে সেই স্বপ্ন দেখে। বত্রিশ শ স্কয়ার ফিটের এই ফ্ল্যাট তার চব্বিশ বছরের বিবাহিত জীবনের তিল তিল করে গড়ে উঠা স্বপ্ন ।
বিয়ের পর একান্নবর্তী পরিবারে ছিল এক যুগ । তখন শ্বশুর শাশুড়ি ছিল, দেবর রা ছিল।
শ্বাশুড়ির সংসারেই নিজের সংসার গুছিয়ে নিয়েছিল বিয়ের পর।
শ্বশুর শ্বাশুড়ি মারা গেছেন। দেবররা কেউ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। কেউ নিজের আলাদা সংসার সাজিয়েছে।
শ্বশুরের সেই বাড়ি সব ভাইয়েরা ডেভোলাপার কে দিয়ে ফ্ল্যাট বানাতে দিচ্ছে।
তার আগেই ওর এই ফ্ল্যাট তৈরি হয়ে গেছে। আজ দুপুরে সব আত্মীয় স্বজন রা এসেছিল দাওয়াতে। সবাই যখন ওর ফ্ল্যাটের প্রশংসা করছিল ওর মনটা আনন্দে ভরে যাচ্ছিল।
ছোট দেবরের শ্বাশুড়ি তো বলেই ফেলল রিনি তুমি হলে সুখী মানুষের জীবন্ত উদাহরণ। মুহিতের মত শান্তশিষ্ট স্বামী, ছেলে আমেরিকায় যাচ্ছে পড়াশোনা করতে, মেয়ে ডাক্তারি পড়ছে এত সুন্দর সাজানো গোছানো ঘর সব কিছু যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা । তোমার জীবনটা সেরকম।
খালাম্মা সব আল্লাহর রহমত আর আপনাদের দোয়া , রিনি বলল।
ওর জীবনটা সত্যি যেন শিল্পীর আঁকা কোন সুখ ছবি। মুহিতের ভালোবাসা, বিশ্বাস সেই ছবির শক্তি আর ওর দুই ছেলে মেয়ে সেই ছবির প্রাণ।
মেহমান রা যাওয়ার পর সবকিছু গোছাতে গোছাতে রিনি ভাবছিল সেই কথা।
ক্রোকারিজ গুলো ধুয়ে মুছে টেবিলের উপর মেলে রাখছে যখন হঠাৎ ছেলে এসে পাশে দাঁড়ালো ।
এসব তোমার করতে হবে কেন মা সারাদিন অনেক পরিশ্রম গেছে তোমার?
ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল এত শখের এই ক্রোকারিজ বুয়াকে মুছতে দিলে নির্ঘাত দুই একটা ভাঙবে।
এসব তোমার খুব প্রিয় তাইনা মা ?
এই সংসারের সব কিছু আমার প্রিয় বুঝলে।
হুম বুঝলাম।
আচ্ছা মা বুয়া কোথায় ?
কেন চা খেতে ইচ্ছে করছে ?
হুম খুব ।
আমি বানিয়ে আনছি ।
না বুয়ার হাতের চা হলেই হবে মা।
সারাদিন পরিশ্রম করেছে আমিই ওকে বিশ্রাম নিতে পাঠিয়েছি।
তাহলে থাক মা তুমি তো কাল থেকে কষ্ট করে এত আয়োজন করছো থাক লাগবে না চা।
আহ্ দুই কাপ চা বানাতে এমন কোন কষ্ট হবে না অহন ।
শুধু দুই কাপ আমি কি দোষ করলাম ভাই ? মুহিত নিজের ঘর থেকে বের হয়ে বলল।
তুমি চা খাবে ?
রিনু তুমি যখন বানাবে তখন তো অবশ্যই খাব হাসতে হাসতে বলল মুহিত।
ঠিক আছে আনছি।
মা আমি বাদ ? মেয়ে কোমড়ে দুই হাত ভাঁজ করে সামনে দাঁড়িয়ে বলল।
ঠিক আছে ঠিক আছে আনছি সবার জন্য, বলে রিনি চা বানাতে রান্নাঘরে চলে গেল।

চা নিয়ে রিনি এসে দেখে সবাই টিভির সামনে বসে গল্প করছে।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে অহন বলল, আমি ইউএসতে সবচেয়ে বেশি মিস করব মা তোমার হাতের চা।
রিনি ছেলের দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ভাইয়া তুই শুধু চা মিস করবি মায়ের হাতের খিচুড়ি, গরুর মাংস ভুনা, ইলিশ পোলাও মিস করবি না ?
হ্যাঁ রে রুহী আমি থাকব কিভাবে সেটাই চিন্তা করছি !
এখনও সময় আছে চিন্তা করে দেখ ভাইয়া !
কি হচ্ছে এসব রুহি এখন‌ই তোর মা কেঁদে দিবে ছেলের কষ্টে বলেই মুহিত হাসা শুরু করলো।
রিনির চোখ সত্যিই ছলছল করছে ।
হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ হতেই অহন উঠে দাঁড়ালো ।
দরজা খুলতেই দেখে দারোয়ানের ছোট ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু বলবে?
আপনাদের চিঠি আসছে আব্বা দিয়া যাইতে বলছে।
দাও বলে খামটা হাতে নিলো অহন ।
কার চিঠি ? মুহিত বলল।
মায়ের চিঠি বলে অহন রিনির সামনে এসে দাড়ালো।
চিঠি আমার নামে ! আবাক হলো রিনি। আজকাল চিঠি লিখে নাকি কেউ !
অনেক ভারি চিঠি মা !
খামের উপর রিনির নাম রিনু লেখা। এই নামটা শুধু মুহিত আর রিনির বাবা মা আর দাদী ডাকতো আর কেউ ডাকে না।
খুব অবাক হয়ে খামটার দিকে তাকিয়ে আছে রিনি।
মুহিত বলল, খোলো চিঠিটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছো কেন ?
রিনি খামটা খুব সাবধানে খুলল। ওকে আরো অবাক করে দিয়ে খামের ভেতর থেকে একটা দলিল বের হলো ।
মুহিত চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে হাত বাড়িয়ে দলিলটা নিলো।
একটা বাড়ির দলিল। সঙ্গে একটা চিঠি।
অহন আর রুহী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে!
মুহিতের হাতে চিঠি টা ।
রিনু,
অনেক অবাক হচ্ছো আমার চিঠি আর দলিল দেখে আমি জানি। আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারেনি যখন তুমি আমার কাছে ভালোবাসা চেয়েছো, সুখ চেয়েছো, সংসার চেয়েছো। আজ এত বছর পর তোমাকে সামান্য একটা জিনিস পাঠালাম তুমি প্লিজ গ্রহণ করো।
আমাদের ছয় মাসের সংসারে তুমি আমার মৃত্যু পথযাত্রী মায়ের যে সেবা যত্ন করেছো তার প্রাণপ্রিয় বাড়িটি আমার নয় তোমার‌ই প্রাপ্য । আমি তোমাকে বিয়ের রাতেই বলেছিলাম আমি তোমাকে স্ত্রীর অধিকার দিতে পারব না । আমি লায়লাকে ভালোবাসি সেই রাতে তোমাকে এত বড় আঘাতের পরেও তুমি মায়ের যে যত্ন করেছো আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার তো করিই নাই উল্টো মায়ের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিলাম। আমি খুব স্বার্থপর একজন মানুষ। ফ্রাঙ্কফুর্টের এক রেল স্টেশনে তোমার বান্ধবী সুধার সঙ্গে দেখা। এত বছর পরেও সে আমাকে চিনতে পেরেছে। আমি অবাক হয়েছিলাম! অবশ্য মানুষ যাকে ভালোবাসে আর যাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে তাকে সব সময়ই মনে রাখে। প্রিয় বান্ধবী র জীবন যে নষ্ট করেছে তাকে ঘৃণা ভরে মনে রাখা‌ই কথা।
সুধাকে পেয়ে ভালোই হয়েছে ওর কাছেই তোমার খবর জানলাম । জেনে খুশি হলাম তুমি আজ সুখী। রিনু আমি তোমাকে মায়ের বাড়িটা দিতে চাইছি তুমি ফিরিয়ে দিও না । আমি হয়তো বেশি দিন বাঁচবো না দূরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছি। আমাকে ক্ষমা না করলেও চলবে শুধু দলিল টা গ্রহণ করো।
ইতি
একজন আরমান
মুহিতের হাত থেকে চিঠিটা পড়ে গেল। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রিনির দিকে ! কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বলার শক্তি টুকুও নেই।
রিনি চিঠিটা তুলে নিয়ে নিজে পড়া শুরু করলো। সে বুঝতে পারছে না কিছু ই।
মুহিত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রিনি কে প্রশ্ন করলো, কে এই আরমান রিনি?
আমি কিভাবে বলব কে এই আরমান ? আমিও তো কোন মাথা মুন্ডু বুঝতে পারছি না !
অহন আর রুহী ও মায়ের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
চিঠিতে কেউ একজন তার সাবেক স্ত্রী কে দশকাঠা জায়গার উপর একটা দোতলা বাড়ি লিখে দলিল পাঠিয়েছে এমনি এমনি নিশ্চয়ই নয় রিনি ?
কি বলতে চাইছো তুমি ? মুহিতের দিকে তিব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল রিনি।
আমি কিছুই বলছি না রিনু , বলছে এই চিঠি আর দলিল। যেখানে স্পষ্ট লিখা আছে একজন স্বামী তার সাবেক স্ত্রী কে ঢাকার অভিজাত এলাকার একটি দামী জায়গা আর বাড়ি লিখে পাঠিয়েছে।
সেটা আমিও পড়েছি মুহিত , তারপর কি সেটা বলো ?
তারপর কিছু না অনেক দিন আগে মানে আজ থেকে প্রায় চব্বিশ বছর আগে তুমি আর তোমার পরিবার আমাকে আমার পরিবার কে মিথ্যে কথা বলেছো আমাদের সঙ্গে চিট করেছো মুহিতের গলাটা ধরে গেল।
রিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার !
তোমার কি ধারনা এই চিঠির মানুষটা আমি ?
মা চিঠিটা তোমার নামে এসেছে , অহন বলল।
রুহী দলিলটা হাতে নিয়ে বলল, এত টাকার প্রোপার্টি কেউ কাউকে এমনি এমনি লিখে দেয় না মা !
বুঝলাম তোমাদের কারো প্রশ্নের কোন উত্তর আমার কাছে নেই আর দেয়ার ও ইচ্ছে নেই। বলেই রিনি নিজের ঘরে চলে এলো।

নিজের ঘরের বারান্দা টা তার খুব প্রিয় । বিভিন্ন নার্সারি ঘুরে ঘুরে সে আর রুহী অনেক গাছ কিনে বারান্দা টা সাজিয়েছে।
অনেক রাত হয়েছে সে বসে আছে একা বারান্দায় । মুহিত তার ঘরে শুয়ে আছে, হয়তো ঘুমিয়ে গেছে কিংবা ঘুমায়নি।
ওর ভেতরে আজ অনেক রাগ, অভিমান, অভিযোগ। তার সঙ্গে চব্বিশ বছর আগে চিট করা হয়েছে। কুমারী বলে এক তালাকপ্রাপ্ত মেয়েকে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
চব্বিশ বছর তাই না ! চব্বিশ বছর হলো এই সংসারে রিনির।
বারান্দার ইজি চেয়ারে আধশোয়া হয়ে রিনি ভাবছে চব্বিশ বছর আগে যখন বিয়ে হয় মুহিতকে সে চিনতো না। মুহিতের খালার বাসা ছিল তাদের বাসার পাশে।
একদিন বিকেলে ছাদে যখন হাঁটছিল মুহিতের নানু তাকে দেখে। তিনি নাকি সেদিন বিকেলে ছাদে হেঁটে বেড়ানো রিনিকে বড় নাতির ব‌উ হিসেবে পছন্দ করে ফেলেন।
মুহিতের খালার মাধ্যমেই রিনিদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ইন্জিনিয়ার পাত্র যার বাবা একজন সাবেক আমলা । রিনির ফ্যামিলি যেন আকাশের চাদ পেয়েছে ভেবেই অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার আগেই মুহিতের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয় রিনির।
ওর উচ্চ শিক্ষিত শ্বশুর শাশুড়ি তাঁর পড়াশোনা শেষ করতে দেয় কিন্তু অহন হয়ে গেল বিয়ের দুই বছরের মধ্যে তাই সংসারের বাহিরে আর কিছু ভাবার কথা চিন্তাও করেনি রিনি।
শ্বশুর শাশুড়ি র সেবা যত্ন বাচ্চাদের দেখা শোনা করতে করতে ওর জীবন এগিয়ে যায়।
মুহিত দেখতে যেমন শান্ত, স্বভাব ও তাই। রিনিকে আদরে ভালোবাসায় ভরিয়ে রেখেছে সে সব সময়।
বড় সংসার সামলে মুহিতকে সময় কম দিলেও কোন দিন অভিযোগ করেনি । শুধু বলতো দিন শেষে আমাকে জড়িয়ে ধরো রিনি, আমার তাতেই হবে তোমার গায়ের ঘ্রাণ টা আমার জীবনীশক্তি।
শ্বাশুড়ি র সংসার শ্বাশুড়ি বেঁচে থাকতেই রিনির নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
এক বছরের ব্যবধানে প্রথমে শ্বাশুড়ি তারপর শ্বশুর মারা যায়।
দুই বাচ্চা তাদের পড়াশোনা, রান্না, বাজার, আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক সব এত বছর একা সে সামলেছে। মুহিত ছায়া হয়ে থেকেছে শুধু পাশে । নিজের কাজে সে ব্যস্ত। ছেলে ভার্সিটিতে কিভাবে চান্স পেয়েছে মেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে কিছুই টের পেতে দেয়নি রিনি মুহিতকে।
আজ ছেলে ইউএসএ তে পড়তে যাচ্ছে সেটাও রিনির স্বপ্ন।
এত সব কিছু একটা চিঠি এসে তছনছ করে দিলো! যারা চোখ বন্ধ করে ওর উপর নিজেদের জীবনটা ছেড়ে রেখেছে তাদের চোখে আজ তার অতীত নিয়ে প্রশ্ন !
বুকের ভেতরে কেউ পাথর ভাঙছে মনে হচ্ছে ওর।
হঠাৎ মুহিত এসে পাশে দাঁড়ালো । রিনি ওড়নার কোনা দিয়ে চোখের পানি মুছলো।
রিনু আমি শান্তি পাচ্ছি না তুমি সত্যি করে বলো কি ঘটেছিল তোমার জীবনে ? প্লিজ বলো?
মুহিত রিনির হাতটা টান দিয়ে ধরে বলল।
মুহিতের চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে রিনি বলল, আমার বলার কিছু নেই মুহিত।
মুহিতের হাতটা ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে ঘরে ঢুকে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লো রিনি।
আজ এ বাড়ির কেউ হয়তো ঘুমাতে পারবে না।

প্রতিদিন খুব সকালে উঠে রিনি। মুহিত হাঁটতে বের হয়। কোন কোন দিন সেও সঙ্গে যায়। কিন্তু আজ কেউই নিজেদের ঘর থেকে বের হয়নি। মুহিত কখন বারান্দা থেকে বিছানায় এসেছে জানেনা রিনি। শেষ রাতের দিকে ওর ঘুম চলে আসে।
অহনের কাছে তার মা ই সব । কিন্তু হঠাৎ এ কেমন একটা চিঠি ওর বাইশ বছরের জীবনের মধ্যে ভূমিকম্পে র মত ঝাঁকুনী দিচ্ছে।
মা কিছু বলছে না কেন ? মা চিৎকার করে বলে দিক এসব মিথ্যে কথা। কেউ নেই কোথাও।
এত বাজে একটা সকাল রুহীর আঠারো বছরের ‌জীবনে কখনো আসেনি।
প্রতিদিন মা এসে ওর ঘুম ভাঙ্গায়। শেষ কবে মায়ের মুখ না দেখে বিছানা থেকে উঠেছে সে মনে করতে পারছে না।
কালকে রাতে একটা চিঠি এসে তাদের প্রতিদিনের জীবনটা পাল্টে দিলো !
রুহীর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

মুহিত খাবার টেবিলে এসে বসতেই বুয়া চায়ের কাপটা সামনে ধরলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে রিনি কোথাও নেই। প্রতিদিন সকালে রিনি আর সে এক সঙ্গে বসে চা খায়। আজ রিনি কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। অহন আর রুহী ও এসে চেয়ার টেনে বসলো। কারো মুখেই কোন কথা নেই। আসলে কি বলবে বুঝতে পারছে না কেউ।
রুহী ভেবেছিল আজ আর কলেজে যাবে না কিন্তু বাসার এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখার চেয়ে কলেজে যাওয়াই ঠিক।
কলিং বেলের শব্দ হচ্ছে ।
অহনের উঠতে ইচ্ছে করছে না।
বুয়াকে বলল রুহী , ড্রাইভার এসেছে বোধহয় গাড়ির চাবিটা দিয়ে বলো আমি আসছি অপেক্ষা করতে বলো।
বুয়া দরজা খুলে দেখে দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে।
কি বলবেন?
ভাইয়া ক‌ই ?
অহন খাবার টেবিল থেকেই জিজ্ঞেস করল কিছু বলবে ?
দারোয়ান সোহরাব দুই পা এগিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকলো, ভাইয়া কালকে রাইতে আমার ছোট ছেলে একটা চিঠির খাম আপনারে দিসে ?
হুম, অহন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। মুহিত, রুহীও তাকিয়ে আছে ।
ভাইয়া ছোট মানুষ তো ভুলে ফ্ল্যাট নাম্বার ডি – ১০ এর চিঠি বি – ১০ এ দিয়া গেছে ঐ বাসার লোকজন বিদেশ গেছে আমার মনে ছিল না পাঠায়া দিসিলাম খাম টা ওরে দিয়া ।
দোরোয়ানের কথা গুলো যেন মুহিতের পায়ের নিচের মাটি কেড়ে নিলো।
ওরা তিনজন কিছু বলার আগেই খেয়াল করলো রিনি কোথা থেকে এসে খামটা দারোয়ানের হাতে তুলে দিল।
দারোয়ান সালাম দিয়ে চলে গেল। আর সবাই নিজেকে সামলে নেয়ার আগেই দেখতে পেলো রিনি ঘর থেকে বের হয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ পর রুহী বলল, বাবা মা কোথায়?
মুহিত তাকিয়ে দেখে দরজা খোলা কিন্তু রিনি ঘরে নেই।
মুহিত ছুটে দরজার সামনে এসে দাড়ালো। কিন্তু রিনিকে দেখতে পেলো না।
অহন পিছনে দাঁড়িয়ে বলল, আমরা মা কে কাল থেকে ভুল বুঝেছি বাবা।
মুহিত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে ছাদে উঠে এলো। ওর মন বলছে রিনি ছাদে।
সত্যি রিনি ছাদের একটা কোণায় দাঁড়িয়ে আছে।
মুহিত ছুটে এসে পাশে দাঁড়ালো।
রিনু আমাকে ক্ষমা করবে না? আমি জানি আমি ক্ষমা পাওয়ার মতো ভুল করিনি , নামের এত বড় কনফিউশন টা দেখে ,আমি বোকার মত কিছু না ভেবেই তোমাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছি।
চব্বিশ টা বছর যে মানুষ টার সঙ্গে আছি যার হাসি, আনন্দ, দীর্ঘ শ্বাস আমার চেনা তাকে কিভাবে এত বড় ভুল বুঝলাম রিনি !
চব্বিশ বছর মুহিত, চব্বিশ বছর পর এসে আমি জানলাম পায়ের নিচে আসলে চরের মতো বালু । যেকোনো সময় সেই বালু ধুয়ে মুছে চলে যেতে পারে। রিনি অন্য দিকে তাকিয়েই কথাটা বলল।
রিনু এভাবে বলো না ! প্লিজ ক্ষমা করো আমাকে । মুহিত পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো রিনিকে।
ছাড়ো আমাকে আমি তো অন্যের তালাকদেয়া ব‌উ ।
মুহিত রিনির মুখ চেপে ধরলো , আর বলো না রিনু তাহলে লজ্জায় এই বারো তলার ছাদ থেকে আমাকে লাফিয়ে পড়তে হবে।
ছিঃ কি বলো এসব!
তুমি আমাকে ক্ষমা করো আমি তোমার পায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ক্ষমা চাইছি রিনু।
থাক আর এসব অভিনয় করতে হবে না।
অভিনয় না দেখো সত্যি সত্যি ক্ষমা চাইছি ,বলেই মুহিত দুই হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে হাত জোড় করে রিনির সামনে বসে গেল।
কি হচ্ছে এসব আশেপাশের বিল্ডিং থেকে দেখছে লোকজন। রিনি হাত ধরে টেনে উঠানোর চেষ্টা করলো মুহিত কে।
দেখুক লোকজন, তুমি আগে বলো আমাকে ক্ষমা করেছো কিনা?
ঠিক আছে ঠিক আছে উঠো।
আগে বলো রিনু।
যাও ক্ষমা করেছি। এরপর কখনো যদি এরকম ভুল বুঝো দেখবে সত্যি সত্যি কোথাও হারিয়ে গেছি।
মুহিত নিজের কান ধরলো কোন দিন না।
রিনি মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে।
চলো বাচ্চা রাও খুব কষ্ট পাচ্ছে। আমি ওদের সামনে ক্ষমা চাইব তোমার কাছে কালকে আমি ওদের সামনে অপমান করেছি তোমাকে।
কিছু করতে হবে না চলো নিচে।
নিচে এসে দেখে ছেলে আর মেয়ে আতংকিত চেহারা নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ঘরে ঢুকতেই অহন মা কে জড়িয়ে ধরলো কোথায় ছিলে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!
রুহীর চোখ দিয়েও পানি পড়ছে।
হয়েছে হয়েছে অনেক কান্নাকাটি হয়েছে এখন যাও নাস্তা খেয়ে যার যার কাজে যাও।
আমাদের ক্ষমা করো মা প্লিজ।
রিনু আমি ওদের সামনে আবার ক্ষমা চাইছি, মুহিত রিনির হাত ধরে বলল।
রিনি তাকিয়ে হাসলো , সে বুঝতে পারছে কতটা অনুতপ্ত, লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চাইছে মুহিত, নিজের কষ্টটাকে উপেক্ষা করে আজ ক্ষমা করতে না পারলে নিজের কাছে নিজেই দূর্বল প্রমাণিত হবে। কারণ সে জানে শক্তিশালী মানুষ রাই ক্ষমা করতে পারে দূর্বল রা পারে না।
রিনি মুহিতের হাতটা শক্ত করে ধরলো।

~ সমাপ্ত~

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ