একগুচ্ছ রক্তজবা পর্ব-১৪

0
1395

#একগুচ্ছ রক্তজবা
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৪

“সাবিহা প্লিজ যেও না,আমার কথাটা একবার শোন।”

সাদাফ সাবিহার পিছনে ছুটতে ছুটতে কথাটা বলে উঠে আর সাবিহা সাদাফের কথায় পাত্তা না দিয়ে তাড়াহুড়ো করে হেঁটে চলেছে।
সাদাফ পিছন থেকে আবারও বলে উঠে,,,

“তুমি যদি আমার কথা না শোন তবে আমি কিন্তু চলন্ত গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে,,,

আর কিছু বলার আগেই কেউ সাদাফকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে।সাদাফ পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে দাঁড়ায়।কে ধাক্কা দিয়েছে তা দেখতেই সাদাফ পিছন ফিরে দেখে তুষার তার দিকেই রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

“যা মর,তোর মরার শখ না আমি তকে সাহায্য করছি যা মর।”

রেগে চিৎকার করে কথাটা বলেই তুষার সাদাফের দিকে এগিয়ে যায়,আর ধাক্কাতে ধাক্কাতে রাস্তার মাঝে এনে ফেলে।আশেপাশে অনেকে অবাক চোখে দেখছে,আর গাড়ি গুলো ওদের সাইড কেটে চলে যাচ্ছে।তুষারের সেদিকে কোন হেলদোল নেই।আর সাদাফ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।তুষার আবারও রেগে বলে উঠে,,,

“দাঁড়িয়ে আছিস কেন!যা ঝাপ দে চলন্ত গাড়ির উপর।”

সাদাফ কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।সাদাফ কিছু বলছে না বলে তুষার আবারও বলে উঠে।

“হাওয়া ফুস,এতক্ষণ ত আমার বোনের পিছন পিছন ঘুরে বলছিলি,যে না দাঁড়ালে চলন্ত গাড়ির নিচে পড়বি।তবে এখন কী হল তোর!
নাটক কমাইয়া করিস,তকে আবার আমার বোনের আগে বা পিছে দেখলে জানে মেরে দিব।”

কথাটা বলেই তুষার চলে আসতে নিলে সাদাফ নিচু স্বরে বলে উঠে।

“আমি সাবিহাকে ফিরিয়ে নিতে এসেছি ভাইয়া।”

সাদাফের মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনে তুষারের খুব রাগ হল।তবে এর চেয়ে বেশি রাগ হল সাবিহাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে।তুষার আবারও সাদাফের কাছে এসে সাদাফের কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।

“তোর মত শয়তানের মুখে আমি ভাইয়া ডাক শুনতে চাই না।ত একদম ভাইয়া বলবি না আমাকে,তোর মত ছেলের আমাকে ভাইয়া ডাকার কোন অধিকার নাই।
আর আমার বোনের সাথে গতকাল কী কম করেছিস যে আজ আবার চলে এসেছিস ফিরিয়ে নিতে!তকে এখানেই মেরে পুঁতে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার।তকে যদি আরেকবার আমার বোনের সামনে দেখেছি কিংবা যদি শুনেছি ফিরিয়ে নিতে চাস তবে সেদিনি তোর জীবনের শেষ দিন হবে,কথাটা মনে রাখিস।”

কথাটা বলেই তুষার সাদাফকে ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।আর সাদাফের চোখে পানি টলমল করছে,সে এমন আচরন কখনও কারো থেকে পায় নি।
সাদাফ চোখে পানি নিয়েই আশেপাশে একবার তাকিয়ে দেখে সবাই অর দিকে তাকিয়ে আছে।সাদাফ কয়েকবার চোখের পলক ফেলে চোখের জল আড়াল করার চেষ্টা চালায়।আর দ্রুত পায়ে সে স্থান ত্যাগ করে,আর বাইক নিয়ে চলে আসে।

অনেকক্ষণ পর সাদাফ একটা নিরিবিলি জায়গায় বাইক থামায়।সবুজ ঘাসের উপর বসে পড়ে আর পা দুটো মেলে দেয় সামনে আর দুই হাত পিছন দিকে ঘাসের উপর রেখে আকাশের দিকে তাকায়।সাদাফ এবার আকাশের দিকে তাকিয়েই বলে উঠে।

“আজ যা হচ্ছে আমার সাথে তার জন্য ত আমিই দায়ী।তারপরও আমার কেন এত কষ্ট হচ্ছে,আমি ত জানতাম আমার সাথে এমনটাই হবে তারপরও কেন এত কষ্ট লাগছে!
হে আল্লাহ তুমি আমাকে শক্তি দাও,আমি যেন এই খারাপ সময়টা কাটিয়ে উঠতে পারি।”

কথাগুলো বলার সময় সাদাফের চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।সাদাফ সেটা তাড়াতাড়ি মুছে ফেলে আর পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল লাগায়।

_____________________________________

নিজের রুমে বসে চোখের জল ফেলছি,আর কিছুক্ষণ আগের ঘটা ঘটনা ভেবে চলেছি।

🍁কিছুক্ষণ আগে

আমি তাকিয়ে যাকে দেখি সে আর কেউ না সাদাফ ছিল।আমি উনাকে দেখে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলে উনি আমার হাত ধরে ফেলে।আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে উনি নিচু স্বরে বলে উঠে।

“তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে সাবিহা।”

আমি কিছু না বলে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকি।উনার কোন কথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার।সাদাফ এবার আমার সামনে এসে আমার হাত তার মুঠোয় নিয়ে নরম স্বরে বলে উঠে।

“আমি খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি সাবিহা, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও প্লিজ।আমি বুঝতে পেরেছি আমি অন্যায় করেছি তোমার সাথে।আমাকে শেষ একটা সুযোগ দাও নিজের ভুল সুধরে নেয়ার জন্য।কথা দিচ্ছি ঠকাব না তোমাকে,শেষবার ক্ষমা করো আমাকে।”

উনার এমন কথায় আমি একটু অবাক হই,কারন উনি গতকাল আমার সাথে যে আচরন করেছেন তাতে যে উনি এত তাড়াতাড়ি নিজের ভুল বুঝতে পারবেন সেটা ভাবতে পারি নি।
পরক্ষণেই মনে হল উনার দ্বারা সব সম্ভব,কে জানে এখনও হয়ত অভিনয় করছেন আগের মত।এর পিছনে হয়ত উনার কোন স্বার্থ আছে,উনি ত নিজের স্বার্থ ছাড়া এক পা ও ফেলেন না।
কথাগুলো মনে হতেই নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে উনার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালাই।একটু পরেই আমি সফল হই,উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সেখান থেকে চলে আসি।উনি পিছন থেকে অনেক ডেকেছে আমি শুনি নি,কেন শুনব উনার কথা আমি!উনি যা করেছে তার জন্য কখনও উনাকে ক্ষমা করব না,ক্ষমা করা দূরের কথা উনাকে আর কখনও আমি বিশ্বাস করতে পারব না।

“তুই কাঁদছিস কেন?ঐ জানোয়ারের জন্য আমি তোর চোখে এক ফোঁটা জলও দেখতে চাই না।”

ভাইয়ার কথায় ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসি,আর তাড়াহুড়ো করে চোখের পানিটা মুছে ফেলি।ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার সামনে বসে হাঁটু গেড়ে,আর আমার গালে হাত রেখে বলে।

“একদম কাঁদবি না তুই,তুই বিয়েটা একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যা আর নতুন করে জীবন শুরু কর।আমার ছোট্ট পরীটাকে আমি আবারও আগের মত হাসি খুশি দেখতে চাই।”

ভাইয়ার কথায় আমি মুচকি হেঁসে হাতের ইশারায় বলে উঠি।

“হ্যাঁ ভাইয়া আমি অতীতের সবকিছু ভুলে যাব।আর নতুন করে জীবন শুরু করব,আবারও তোমার হাসি খুশি ছোট্ট পরী হব।তুমি এবার উঠে বসো ত,আমি নিচ থেকে খাবার নিয়ে আসছি তোমাকে আজ নিজ হাতে খাইয়ে দিব আমি।”

ভাইয়া আমার কথায় হাসল,আর আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল।

“যা আমি এখানেই আছি।”

আমিও মাথা নেড়ে সেখান থেকে চলে আসি।ভাইয়াকে যতই বলি ভুলে যাব কিন্তু সত্যিই কী এত সহজে অতীত ভুলতে পারব?অতীত কী এত তাড়াতাড়ি আমার পিছু ছাড়বে!আমি কী সত্যিই জীবনটা নতুন করে নিজের মত গুছিয়ে নিতে পারব?

____________________________________

সাদাফ তার বন্ধু রকিবুলের সাথে বসে আছে,তখন সাদাফ তার খুব কাছের বন্ধু রকিবুলকেই ফোন করে এখানে আসতে বলে।আর রকিবুলও চলে আসে এখানে,রকিবুল আসার পর সাদাফ তার সাথে ঘটা সবকিছু খুলে বলে।সবটা শুনে রকিবুল নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে,কিছু বলছে না।বেশ অনেকক্ষণ দুজনেই চুপ করে বসে রয়।হঠাৎ নিরবতা ভেঙ্গে রকিবুল বলে উঠে।

“আমি কী বলব ঠিক বুঝতে পারছি না।”

সাদাফ এবার রকিবুলের দিকে করুন চোখে তাকায় আর বলে।

“দোস্ত আমার মাথাতে কিছু ধরছে না,সাবিহা আমার কোন কথাই শুনতে চাইছে না।আর না সাবিহার ভাই অর কাছে যেতে দিচ্ছে।এখন আমি কী করব!”

“তুই যা করেছিস তাতে এমনটা হওয়াই কী স্বাভাবিক নয়!”

“আরে ইয়ার তুইও এখন এসব বলিস না।আমি জানি এসব হওয়াই স্বাভাবিক কিন্তু তারপরও বড্ড বেশি খারাপ লাগছে।এখন তুই এসব না বলে বল আমি কী করব?কী করে সাবিহার কাছে যাব আর ওকে মানিয়ে বাড়ি নিয়ে যাব!”

“তুই আগে নিজে শক্ত হ,আমি ভাবছি কী করা যায়।”

সাদাফ আর কিছু না বলে চোখ সরিয়ে নেয় রকিবুলের উপর থেকে।বেশ কিছুক্ষণ পর রকিবুল চিৎকার করে বলে উঠে।

“ইয়াহু,আইডিয়া পেয়ে গেছি।”

রকিবুলের এমন কথায় সাদাফের মুখে হাসি ফুটে উঠে।আর উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে।

“কী আইডিয়া পেয়েছিস!বল আমাকে।”

“তাহলে শোন,,,”

রকিবুল সাদাফের কাছে তার আইডিয়াটা বলার সাদাফের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে।সাদাফ ওভাবেই হেঁসে বলে উঠে।

“এখন শুধু কাল সকাল হওয়ার অপেক্ষা।”

#চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে