ইরাবতী পর্ব -০৪

0
1750

#ইরাবতী
#পর্ব-৪
লিখাঃঅরণ্য

ইরার মনে একটা কথাই ঘুরছে।বিভোর তার স্বামী।স্বামী নাকি সব আবদার পূরণ করে।কই!বিভোর ভাই তো খালি তাকে কষ্ট দেয়।কথা তো শুনেই না।উল্টো হুকুমদারি করে।

রাতে পড়তে বসলো।আজ থেকে বিভোর তার পড়ায় হেল্প করবে।পরীক্ষা খুব সামনে।ইরা ম্যাথে খুব কাঁচা।বিভোর একদম প্রথম থেকে আগামাথা সব বুঝিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু এর মধ্যে ইরার নজর বারবার যাচ্ছে বিভোরের ঠোঁটের দিকে।সিগারেটে খাওয়ার ফলে ঠোঁটদুটি লালচে খয়েরী রঙ ধরেছে।অংক না বুঝে ইরা ওইদিকে হা করে তাকিয়ে আছে।একসময় নিজের ধ্যান ভাংলো বিভোরের ডাকে।ইরার পুরনো দিনের কথা মনে পড়ছে।

সে ভাবতো সে একটু হাবলা দেখে বিভোর ভাই তাকে দেখতে পারে না।বিভোর ভাই যখন ফাইজা,মিরা,রিয়া,নাফিসাদের সাথে কথা বলতো হিংসায় তার বুক ফেটে যেতো।সব কাজিনদের সাথে হেসে কথা বলে অথচ তার দিকে ভালো করে একটু তাকায়ও না।সে যতোবার বিভোরের সামনে যেতো বিভোর তাকে একটা কাজ দিয়ে বসিয়ে রাখতো।তার ছোট্র মন হুহু করে উঠতো।একদিন হুহু করে কেঁদে উঠেছিলো।বিভোর দেখে চোখের পানি মুছা তো দূরে থাক উলটে এক ধমক মেরেছিলো যে ইরার প্রাণ ফেটে যাবার উপক্রম।আস্তে আস্তে সে লুকোনো ভালোবাসা ইরা চাপা দিয়েছে।যা মাঝে মাঝে উঁকি দেয়।কিন্তু বিভোর! সে তো নিজেকে জাহির করতেই ব্যাস্ত হয়ে যায়।যখনি একা পায় তখনি নির্যাতন করে।(ইরার ভাষায়)

পড়ানো শেষ করে খাবার খেয়ে দুজন দু রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।কেউ কিছু বলেনি।হয়তো তারা আরেকটু সময় নিয়ে প্লানিং করবে এটা ভেবে।রাতে বিভোর কমই ঘুমায়।ফেসবুক স্ক্রল করবে,হাটাহাটি করবে নাহয় সিগারেট টানবে।

রাতে হুট করে ইরার ঘুম ভেংগে গেলো।ডুপ্লেক্স বাড়ি।ইরার রুমের বারান্দা থেকে সব নিচতলার উঠানের সব দেখা যায়।দোলনার সাইডটায় কে যেনো বসে আছে।গাধী ইরার মনে হলো চোর।এমনিতেও ভুতের ভয় পাবার কথা।কিন্তু তার মাথায় চোর ছাড়া কিছুই এলো না।একটা লাঠি হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে এলো সে।গেটটা খোলা।ধীর পায়ে লাঠিটা শক্ত করে ধরে দোলনায় বসে থাকার লোকটার দিকে এগিয়ে গেলো,,দ্রিম করে মারতে যাবে এমন সময় বিভোর পেছনে ফিরলো,,”বিভোর ভাই!আপনি?”

-তুই?এতো রাতে এখানে কি করছিস?

-ইয়ে মানে কিছু না।আমি তো ভেবেছি চোর।আপনি ভূতের মতো এতো রাতে বাইরে কি করেন?

-বাইরে কি করি সেটা তোকে বলা লাগবে আমার?তুই কি করিস?আর তোর হাতে লাঠি কেনো?এই এই তোর উদ্দেশ্য কি?তুই খুন করতে এসেছিলি?

-না না।আমি তো ভেবেছি চোর।বিশ্বাস করুন না বুঝে লাঠি নিয়ে এসেছি।

-না না।আমার তো সন্দেহ হচ্ছে।আমি প্রথমেই বুঝেছি তুই আমাকে পছন্দ করিস না।তাই আজ তুই আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলি।কাল সকালে নানুকে এই কথাই বলবো।(শয়তানী হাসি দিয়ে)

-আমি কিন্তু কান্না করে দিবো বিভোর ভাই।এসব মিথ্যা কথা।

-কিসের মিথ্যা কথা।আমাকে মারতেই পারিস।অস্বাভাবিক কিছুনা।অপছন্দের ব্যক্তিকে মারাই যায়।

-কে বলেছে আপনাকে পছন্দ করিনা।আপনাকে ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করি।

ইরা বুঝতেও পারেনি সে সামান্য রাগের মাথায় সত্যি কথাটা বলে ফেলেছে।ভয়ে নাকের পানি চোখের পানি এক হয়ে যাচ্ছে।বিভোর যেনো শক খেলো ইরার কথা শুনে।সিগারেটটা ছুড়ে ফেলে আস্তে আস্তে ইরার দিকে এগিয়ে গেলো সে।হাত থেকে লাঠিটা নিয়ে নিচে রাখলো।দুহাত দিয়ে চোখের পানি মুছে কপালে কপাল ঠেকালো বিভোর।

-তোকে আমিও তো ভালোবাসি ইরা।সেই কবে থেকে।বলিনি কেনো জানিস?ভয় পেতাম।তোর তো মুখ পাতলা।কয়বার ওয়াশরুমে যাস সেটাও বলে দিস সবাইকে।আমার তোর প্রতি অনুভূতির কথা যদি সবাইকে বলে দিতিস তাহলে আমার আর এ বাড়িতে আসা হতো না।

ইরা চোখ বন্ধ করে আছে।তার হাত পা কাপঁছে।লোকটা কি জাদু জানে নাকি!তার কথাগুলো যেনো ইরার বুকে বিধছে।পুরনো অনুভূতি যেনো আবার জ্বলে উঠেছে।বিভোরও তাকে ভালোবাসতো!

বিভোর ইরার কাপাকাপি দেখে আস্তে করে ইরার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরলো।

-ইরা।এই ইরা?

-আপনি আমাকে ভালোবাসতেন।তাহলে কষ্ট দিতেন কেনো?আমাকে দিয়ে সারাদিন কাজ কেনো করাতেন?

-তোকে চোখের সামনে রাখার জন্য।নাহয় তুই তো বাড়িতেই থাকতি না।পুরো এলাকা টো টো করতিস!

ইরা আর কিছু বললোনা।বিভোরের শরীরে উষ্ণতা তার ভালো লাগছে।শরীর থেকে পারফিউমের তীব্র সুগন্ধ।

-আপনি আমার স্বামী তাইনা বিভোর ভাই?

বোকা মার্কা প্রশ্ন করে ইরা তাকিয়ে আছে বিভোরের মুখের দিকে।বিভোর টুপ করে ইরার গালে একটা চুমু খেয়ে নিলো।ইরা লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

-সেটা মনে হয় বুঝিয়ে দিতে হবে তোকে।

সেই প্রথম দিনের মতোই বিভোরের লাগামহীন হাত ইরার পেটে স্লাইড করছে।তবে আজ পুরো সম্মতি না থাকলেও অসম্মতির কোনো চিহ্ন নেই ইরার মুখে।শুধু চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।চোখ বুজে আসছে।খুলতেই মন চাচ্ছেনা তার।

আস্তে আস্তে বাড়াবাড়ির দিকে চলে গেলো বিভোর।কোলে তুলে নিলো ইরার তুলতুলে শরীরকে।গন্তব্য ইরার রুম।

সকালে বিভোরকে ইরার রুম থেকে বের হতে দেখে ফাতেমা বেগম মুচকি হাসছেন।থালাবাসন পরিষ্কার করতে করতে খালি বিভোরের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।শুধু উনি না।নানিও কেমন করে তাকাচ্ছে।বিভোর এতো নজর এড়িয়ে নিজের রুমে যেতে পারলো না।

-কি হচ্ছে এসব?তোমরা সবাই ভ্যাবলাকান্তের মতো আমাকে দেখছো কেনো?আমি কি জোকার?

-রাতে না নিজের রুমে শুয়েছিলি?

-তোহ?আমার বউয়ের রুমে আমি যেতে পারি না?বিয়ে যেহেতু করেছি।বউয়ের কাছে যেকোনো সময় যাবো।বলেই হনহন করে দোতলায় উঠে গেলো সে।

সবাই সবার দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।বিভোরটা কি লাজ লজ্জা হারিয়ে ফেলেছে!এমন হলে তো সর্বনাশ!

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে