#ইরাবতী
#পর্ব-২
লিখাঃঅরণ্য
বারান্দায় বসে একের পর এক সিগারেট পুড়াচ্ছে বিভোর।পেছনে রুমের ভেতর এলোমেলো শরীরে শুয়ে আছে ইরা।নিজ কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত সে।তাও ইরাকে প্রথম ছোঁয়ার মুহূর্তগুলো নাড়া দিচ্ছে তাকে।সেসব অপচিন্তা মাথায় গিজগিজ করছে।আচ্ছা ইরা ক্ষমা করবেতো তাকে!
সকাল হতেই ঘুমন্ত প্রেয়সীর এলেমেলো দেহের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো বিভোর।সারাটা রাত দেখেও মন ভরেনি।হয়তো এ জনমে ভরবে না।মন খারাপ করে আয়নায় নিজেকে ঠিক করে নিলো বিভোর।ব্যাগটা ধরে সবাইকে বিদায় দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।ওদিকে ঘুমন্ত ইরা জানতেই পারলো তার প্রতি কারো অভিমানের পাহাড় জমেছে।
সকালে উঠে গাধী ইরা এ অবস্থাতেই বের হলো।তাকে দেখে কাজের লোক ফাতেমা খালার মুখ হা হয়ে আছে।এসবের তোয়াক্কা না করে পাকঘরে গিয়ে মুড়ির ডিব্বাতে হাত দিতেই পেছন থেকে ঝাটার আওয়াজ শোনা গেলো!
-নানু একি!তোমার হাতে ঝাটা কেনো।
-গোসল করেছিস?
-কি বলো!এই ঠান্ডায় গোসল?কেনো আমি কি বালুতে গড়াগড়ি করেছি নাকি?
-হারামজাদী।এক্ষুনি গোসল করে কাপড়চোপর ধুয়ে আয়।নাপাক অবস্থায় বের হবিনা।খাচ্চর কোথাকার।
-কিহ!আমি নাপাক।আমি কি গু মেখে আসছি!এসব বললে আমি কিন্তু চলে যাবো।
-যেখানে খুশি গিয়ে মর।আজ থেকে যতোদিন বিভোর আসবে আর তোর সাথে থাকবে।পরদিন সকালে গোসল দিবি।
-এহ!আমার বয়েই গেছে।
পাশ থেকে ফাতেমা খালা,,
-এমন করেনা মামনি।স্বামীর লগে রাইতে থাকলে গোসল ফরজ।এখন থেকে করন লাগবো।বুঝলা?
ইরা মাথা নাড়ায়।মিথ্যামিথ্যি বিয়েতে আবার ফরজ গোসল কিসের?কই ষ্টার জলসার কোনো নাটকে তো দেখেনি এমন।ওখানে তো মিথ্যামিথ্যি বিয়ে হলেও পরদিন নায়িকা এক কাপড়েই থাকে।এটা ভেবে আবার প্রশ্ন করতে যাবে এমন সময় নানী ঝাটা নিয়ে তেড়ে এলো।ইরা কোনোরকম টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দিলো।
এখন বর্তমানে আসা যাক।
ইরার বিচারে কারো কোনো পরিবর্তন হয়নি।আরো বিপত্তি বেধেছে।তাদের নিয়ে টিশকারি মারতে এক ইঞ্চিও ছাড় দেয়নি কেউ।সবার একই কথা “এই কি কি করেছে একটু বল,আমাদেরকেও দেখা”।লজ্জায় রাগে ইরার মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে।ওদিকে দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে বিভোরের খোজ নেই।ফোন সুইচড ষ্টপ করা।সবাই ভেবেছে পরীক্ষার টেনশনে হয়তো।বিভোর ভাবছে ইরার সামনে কীভাবে দাঁড়াবে তা নিয়ে।
আরো চারদিন কেটে গেলো স্বাভাবিকভাবে।বাড়িতে খুশির নিউজ।বিভোরের পরীক্ষা সেশন জটের জন্য পিছিয়ে গেছে।সকলে খুশি হলেও একজনের ঘুম আপাদত হারাম।সেটা ইরা।সে ভালো করেই বুঝে নিয়েছে বিভোর ভাই আসলেও সরাসরি নানুবাড়ি আসবে।আদতে তাই হলো।
সকালে উঠতেই ইরার রূপচর্চার কাজ নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে উঠলেন নানী।পাশ থেকে পত্রিকা থেকে মুখ উঠিয়ে নানা বলে উঠলো,,
-সারছে।এবার থামো তো।আমার নাতিন এমনেই সুন্দর।হুদাই এগুলা দিতাছো জোর করে।
-তুমি মুখখান বন্ধ করো।পুলাডা আইতাছে বউরে দেখবো।বিয়ার পরে কি আর আসছে এখানে?এখন যদি একটু চেহারার যত্ন না করে কবে করবো?চার পাচটা বাচ্চা হইলে?
পাশ থেকে ইরা চিল্লান দিয়ে উঠলো,,”কিইইহ?বাচ্চা!অসম্ভব।”
দুপুরের দিকে বিভোর এলো।খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।ইরা শুধু একবার সালাম দিয়েই লুকিয়ে লুকিয়ে আছে।আর সামনে আসেনি।বিভোরও যথেষ্ট এড়িয়ে চলছে।
রাতে খাবার টেবিলে আসতেই ইরাকে পড়ানোর দ্বায়িত্ব দেয়া হলো বিভোরের কাধে।সে ভেবেছিলো আর কথাই যেনো না হয়।কিন্তু এখন কই যাবে!
ইরা না চাইতেও কলেজ থেকে তিনদিনের ছুটি নেয়া হলো।কিন্তু বিভোর থাকতে চাইলো না।বাবা মার সাথে দেখা করতে হবে।এরপর নাহয় আসবে।কিন্তু নানী চেপে ধরে আছে।যাচ্ছিস যখন ইরাটারেও নিয়ে যা।আর হ্যা এতোদিন কোনো একটা উসিলা ধরে বিভোর আর ইরা আলাদা রুমে থেকেছে।তাদের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে নানী সেটা বুঝেছে।তাই তার এই চাল।
অগত্যা বিভোর রাজী হলো।দুপুরে গোসল করতে গিয়ে দেখে বাইরের ওয়াশরুমে আরেকজন ঢুকে বসে আছে।অগত্যা ইরার রুমের ওয়াশরুম ইউজ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।টাওয়াল নিয়ে গোসল করে গোসল শেষ করে বের হবে এমন সময় বিভোরের মনে হলো।আয়হায়!গোসল করে পড়ার মতোই কিছুই আনিনি!টাওয়ালটা পড়ে খালি গায়ে বাইরে বের হবে এমন সময় ইরার সাথে ধাক্কা।বিভোরকে এমন অবস্থা দেখে ইরার চোখ কপালে।ভেজা সুঠাম শরীর,সিল্কি চুলগুলো সামনে এসে আছে,বুকের পানিগুলো চিকচিক করছে।ব্যাস হা করে তাকিয়েই আছে সে।কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে আশে পাশে নিজের রুমে দৌড় দিলো বিভোর।ইরার মুখ তখনো খোলা।একটা শব্দই বের হলো,,”মালটা কি জোস মাইরি!খালি কথা আর কাজগুলাই তিতা”
সিএনজিতে বসে আছে দুজন।কারো মুখে কোনো কথা নেই।দুইপাশে চেপে আছে তারা।বিভোর নিজেকে শক্ত করলো।না এভাবে থাকলে তো চলবে না।
-ইরা।শুনছিস?আম রিয়েলি সরি।আমার মাথা ঠিক ছিলোনা সেই রাতে।
ইরা কথা বলছেনা অন্য দিকে ফিরে আছে।ইরার হাত দুইটা টেনে নিলো বিভোর।
-এই ইরাবতী।মাফ করে দে।আর এমন হবেনা ঠিক আছে?
-আপনি খুব খারাপ বিভোর ভাই।আমাকে নির্যাতন করেছেন।আমি ভেবেছি আপনি বদলে যাবেন।মিথ্যামিথ্যি বিয়ে হলেও তো বউকে কতো ভালোবাসে সিরিয়ালের হিরোগুলা।অথচ আপনি!
বিভোর মুচকি হেসে পকেট থেকে কিটক্যাট বের করলো।সে জানে ইরাকে বশ করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার এটা।কিটক্যাট পেলে গাধিটা সব ভুলে যায়।বাড়িতে দেয়নি কারণ এখন যদি ভুলিয়ে আবার কিছু করে ফেলে লজ্জায় পরবে সে।
ইরার চিকন চিকন ঠোঁটের কোনে চকলেট লেপ্টে আছে।শাড়ির কোন দিয়ে মুছতে যাবে।এমন সময় বিভোর বললো “আমি মুছে দিচ্ছি।”
কিন্তু এটা কি করে ফেললো বিভোর।চিকন চিকন ঠোঁট স্পর্শ করার নেশায় সে আবারো অন্যায় করে ফেললো!
চলবে….