আড়ালে_ভালোবাসার_সংসার (পর্বঃ ৩ ও ৪)

0
2910

#আড়ালে_ভালোবাসার_সংসার #পর্বঃ৩
#Ipshita_Shikdar (samia)

ও বিথিকে জিগ্যেস করে,
এটা ভাঙলো কী করে ( রেগে চিৎকার করর)
বিথিঃ নিশ্চুপ।
বিধানঃ আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি। জাস্ট এন্সার মি রাইট নাউ ইউ ইডিয়াট।
বিথিঃ ভ-ভ-ভু-ভুলে। হ-হাত লেগে প-পরে গিয়েছিল। আ-আমি আমি ইচ্ছে করে করিনি। (ভয়ে আতঙ্কে তোতলিয়ে)
বিধানঃ ইউ ফুল তুমি জানো এটা কত এক্সপেন্সিভ এন্ড রেয়ার। আর তুমি কিনা এটা ভেঙে ফেললে? অবশ্য বুঝবে কি করে ছোট ফেমেলীর মেয়ে এগুলোর কোনো আইডিয়া আছে নাকি? ব্লাডি মিড্যাল ক্লাস।
বিথিঃ স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে। চোখ বেয়ে পানি পরছে। জীবনে এই প্রথম কেউ তার ফাইনানশিয়াল অবস্থার জন্য ছোট করেছে।
,
,
অন্যদিকে বিধান এসব বলে রাগের মাথায় স্লিপিং পিলস খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
আর বিথি সে ওয়াসরুমে যেয়ে অধর নয়নে কাঁদছে।
,
,
বিথিঃ মা বাবা এতটাই কি বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম যে এমন একজনের সাথে বিয়ে দিলে।
অনেক্ষণ কান্না করে একটা জরজেট শাড়ি পরে বাইরে আসে। খাটে তাকিয়ে দেখে বিধান ঘুমিয়ে আছে। আর বালিশ ও ব্লাঙ্কেট একটিই ছিল যাতে বিধান ঘুমিয়ে আছে তাই উপায় না পেয়ে শাড়ি ভালোভাবে জড়িয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লো। সারাদিনের ক্লান্তি আর কান্নার ফলে ঘুমিয়ে গেল সাথে সাথেই।
,
,
,
সকালে,
,
,
,
ফযরের আজানের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় বিধানের। পাশে হাত দিয়ে বিথিকে না পেয়ে ভাবে ওযুর জন্য উঠেছে মনে হয়। হঠাৎ ফ্লোরে চোখ যেতেই বিধানের চোখ কপালে। এই হাড় কাপানো শীতে মেয়েটা ফ্লোরে তাও কাথা ব্লাংকেট ছাড়া। শীতে কাপছে শরীর তা বিধান দেখে বুঝতে পারছে। আগেই বলে রাখি বিথির ঘুম ভালোনা। জামা ঠিক থাকে না। আর আজতো শাড়ি। হাটুর নিচ পযর্ন্ত উঠে আছে। আচল সরে ভাজ হয়ে সম্পূর্ণ পেট দেখা যাচ্ছে।
,
,
,
বিধান খেয়াল করলো মেয়েটার ফেসটা শ্যামা হলেও শরীরটা হলদে। এই হলদে রঙে পায়ের আর পেটের টকটকে লাল খয়েরি তিলগুলো অনেক সুন্দর লাগছে। ওর ঘোর কেটে যায় বিথির নড়াচড়ায় তখন ওর ধ্যান আসে বিথির শরীরটা অস্বাভাবিক লাল হয়ে আছে। ও তারাতারি উঠে বিথির মাথায় হাত দিয়ে দেখ বিথির জ্বর এসে পড়েছে। তাই বিথিকে বিছানায় রেখে তাড়াতাড়ি ওর বান্ধবী ডঃমিমকে ফোন দেয়। সে এসে চেকআপ করে।
,
,
,
মিমঃ টেনশন নিস না জ্বর খুব বেশি না পিলস নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
বিধানঃ তাহলে ওর শরীর যেয়ে লাল হয়ে রয়েছে।
মিমঃ ভাবির মেয়বি ঠাণ্ডার প্রবলেম আর ধুলোবালি থেকে প্রচন্ড এলারজি আছে তাই রিয়েকশন করছে। কিন্ত…..
বিধানঃ কিন্ত কি?
মিমঃ কালকে তো ভাবিকে ঠিক দেখলাম এর মধ্যে ঠাণ্ডা লাগলো কিভাবে? আর এতটা এলারজিক রিয়েকশন কিভাবে?
বিধানঃ আসলে। আসলে….
ঠিক তখনই মিমের ফোনে একটা টেক্সট আসে।
মিমঃ তা যাই হোক আমার দেয়া পিলগুলো টাইমওয়াইস খাওয়ায় দিস। আমি আসি।
বিধান রহমত চাচাকে দিয়ে মেডিসিন আনিয়ে বিথিকে ঘুমের মধ্যেই খায়িয়ে দিল। বিধানের বিথির উপর আর নিজের উপর ও প্রচন্ড রাগ হলো।
বিধানঃ বুঝলাম আমার এভাবে রিয়েক্ট করা ঠিক হয়নি তাই বলে ও নিচে ঘুমাবে। কতখানি অসুস্থ হয়ে পড়েছে হলদে শরীরটা লাল টুকটুকে হয়ে আছে আর মুখটা কেমন শুকিয়ে ফেকাশে হয়ে আছে। কাল রাতেও তো কিছু খায় নি। (মনে মনে )
,
,
,
বিধান এরপর রেডি হয়ে নিচে চলে গেলো। নিচে মিসেস চৌধুরী ও মিস্টার এণ্ড মিসেস ইফতেখার খান এবং তাদের মেয়ে ইফতিকা ব্রেকফাস্টের জন্য টেবিলে বসে আছেন।
(মিস্টার ইফতেখার খান হলো বিধানের মামা। এই লোকটার ও তার ফেমেলীর সব কাজে নাক গলানোর একটা জন্মগত অভ্যাস আছে যার জন্য বিধানের চোখের কাটা উনি তবে মায়ের দিকে তাকিয়ে কখনো কিছু বলে না)
বিধানকে নিচে নামতে দেখে ইফতিকা তার পাশের চেয়ারটা ঠিক করে দেয় বসার জন্য। তবে বিধান সেখানে না বসে ওর মায়ের সাথে বসে।
,
,
,
বিথিঃ গুড মরনিং এভরিওয়ান
মিসেস চৌধুরীঃ বিধান বিথি মামনি কোথায়? দেখছি না যে।
বিধান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কিন্তু বিধানের মামা এমন কিছু বলল যা শুনে বিধান রাগে ফেটে পড়ছে।

চলবে,,,

#আড়ালে_ভালোবাসার_সংসার
#পর্বঃ৪
#Ipshita_Shikdar (samia)
বিধান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কিন্তু বিধানের মামা এমন কিছু বলল যা শুনে বিধান রাগে ফেটে পড়ছে।
ইফতেখারঃ আরে থার্ড ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে এনেছো বুবু এমন হবে না! এসব থার্ড ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ের না থাকে টাইম সেন্স না থাকে স্মার্টনেস। (ব্রেড বাটার খেতে খেতে)
বিধানঃ আমার বউ থার্ড ক্লাস ফ্যামিলি থেকে আনি আর রাস্তা থেকেই আনি ইউ আর নোওয়ান টু টক এবাউট দিস। সামনে থেকে আমার ফ্যামিলির কারো উপর কমেন্ট করার পূর্বে ১০ বার ভাববেন আপনি মেহমান চৌধুরী পরিবারের সদস্য না।
ইফতেখারঃ দেখছিস বুবু আমাকে কি কি বলল তোর ছেলে! তোদের যদি আমাকে এতোই অপছন্দ হয়ে থাকে তাহলে আসতে বললি কেন?
ঠিক তখনই রূপ এসে পড়লো। রূপ বিধানের বন্ধুর বোন।
(বিধানের বন্ধু মারা যাওয়ার পর রূপকে এ বাড়িতে নিয়ে আসে নিজের বোনের পরিচয় দিয়ে কারণ মেয়েটার পুরো পরিবারই এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল। রূপের বয়স মাত্র ৬ বছর। বিধান ওকে আপন বোনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। আর মিসেস চৌধুরী তো রূপকে ছাড়া কিছুই বুঝে না। এজন্য বাসার কেউ রূপকে কিছু বলার সাহস পায় না কখনোই।)
রূপঃ কোথায় মামনি আপনাকে দাওয়াত দিয়েছিল আমি তো দেখিনি আপনিই তো বিনা দাওয়াতে এসে পড়ছেন! এখন আমার মামনির দোষ দিচ্ছেন। আমার মামনিকে শুধু শুধু দোষারোপ করছেন। তাই না মামনি? (মিসেস চৌধুরীর গলে জড়িয়ে ধরে)
মিসেস চৌধুরীঃ হ্যা সোনা। (রূপকে আদর করে) খাওয়ার টেবিলে এতো কথা আমার মোটেই পছন্দ না। আর বিথীর বিষয়ে কিছু বলার আগে ভেবে নিস সে এই বাড়ির বউ। (গম্ভীর কণ্ঠে)
ইফতেখারঃ আমি তো………
মিসেস চৌধুরীঃ ব্রেকফাস্ট টেবিলে কোনো কথা নয়! আর বিধান বিথী মামনি কোথায় বললি না?
বিধানঃ আসলে…. আসলে…….
মিসেস চৌধুরীঃ কি আসলে আসলে করছস বলবি তো?
বিধানঃ আসলে সকাল ফজরের ওয়াক্তে উঠে দেখি বিথীর প্রচন্ড জ্বর এসেছে।
মিসেস চৌধুরীঃ কিহ! বিধান তুই আমাকে এটা এখন বললি? ডাক্তার ডাক দে তাড়াতাড়ি!
বিধানঃ ডোন্ট ওয়ারি আম্মু আমি মিমকে এনেছিলাম এন্ড খাবার খায়িয়ে মেডিসিন খায়িয়ে দিয়েছি।
,
,
,
সবাই চুপচাপ নাস্তা করে চলে যায়।
বিধান বেডরুমে গিয়ে দেখলো বিথী ছোট্ট বাবুদের মতো ঘুমিয়ে আছে। বিধানের কাছে বিথীকে ঘুমন্ত রাজকন্যা থেকে কম লাগছে না। চুলগুলো সব মুখে এসে পড়েছিল। আর শাড়ির কথা নাই বা বললাম। বিধান যেনো কোনো এক ঘোরে চলে গেছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বিছানার দিকে।
বিধানঃ সত্যিই কি তুমি কি এতোই মায়াবী। আমি যে হারিয়ে যাচ্ছি এই মায়ায়। (বিথীর কপালের চুলগুলো সরিয়ে ঠোঁটের আলতো স্পর্শ দিয়ে।)
বিধান বিথীর মুখের মন্ত্রমুগ্ধ ভাবে তাকিয়ে আছা। যেনো কোনো তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি অনেকদিন পর পানির দেখা পাচ্ছে। বিধানের নজর বিথীর ঘুমন্ত মুখের হাসিতে ঠোঁটের কোণে পড়া টোলে। এগিয়ে যায় বিথীর মিষ্টির ঠোঁটের দিকে। কিন্তু ঠোঁটের স্পর্শ দেওয়ার আগ মুহূর্তে চোখ বন্ধ করতেই মনে পড়ে যায় বিথীর রিজেকশন। আবার জেগে উঠে ক্ষোভ তাই নিজের ব্লেজার নিয়ে চলে যায় অফিসে।
,
,
,
বিধান বিকালে বাসায় এসে দেখে বিথী রুমে নেই। প্রথমে ভাবে ওয়াসরুমে গিয়েছে কিন্তু ওয়াসরুমের দরজা খোলা থাকায় ভাবলো হয়তো নিচে গিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখলো এখনও আসেনি
বিধানঃ কি হলো মেয়েটা এখনো আসছে না। নতুন ও বাড়িতে রুমের বাহিরে তো বের হওয়ার কথা না। (চিন্তিত হয়ে রুমে পায়চারি করতে করতে)
বিধান আর থাকতে না পেরে মিসেস চৌধুরীর ঘরে চলে গেলো। যেয়ে দেখে তার আম্মু কুরআন তেলাওয়াত করছে আর তার আদরের পুচকি ড্রইং করছে।
,
,
বিধানঃ কিরে পুচকি কি আকিস? আমাকে?
রূপঃ তোমাকে কেন আঁকবো তুমি তো পচা! (ভেঙচি কেটে)
বিধানঃ কেন রে আমি কি করেছি?
রূপঃ তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো আর ভালোবাসা না আমাকে, তাই না? (মন খারাপ করে)
বিধানঃ তোর এমন কেন মনে হলো আমি তো আমার পুচকোকে অন্নেক ভালোবাসি! (রূপকে কোলে তুলে)
রূপঃ তাহলে গতকাল থেকে আমার কাছে একবার ও আসোনি কেনো?
বিধানঃ আরে সোনা আমি গতকাল তো ব্যস্ত আর ক্লান্ত ছিলাম তাই আসিনি।
রূপঃ ওহ তাই। তাহলে সরি।
,
,
বিধানের মা এতক্ষণ ভাই-বোনের এই ভালোবাসা অশ্রুসিক্ত নয়নে দেখছিল। মিসেস চৌধুরীর বিধানের পর আরেকটি মেয়ে হয়েছিল কিন্তু পাঁচ বছর বয়সে মেয়েটি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
,
,
মিসেস চৌধুরীঃ যাক বোনের রাগ মান ভেঙেছে।
বিধানঃ হুম আম্মু! আচ্ছা আম্মু বিথী কোথায় দেখলাম না ওকে?
মিসেস চৌধুরীঃ বিথী তো বলল ওর কি একটা কাজ পড়ে গেছে তাই বাহিরে গেলো। বললো বিকালের আগে এসে পড়বে।
বিধানঃ ওহ!
,
,
তারপর বিধান নিজের বেডরুমে চলে গেলো। বেডরুমে যেয়ে দেখে বিথী হিজাব খুলছে কিন্তু বিথীকে দেখে ও ততটা অবাক যতটা তার নিয়ে আসা বস্তুটাকে।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে