#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ৩১+৩২
নিরব:দিয়াপাখি,এবার তো থাম।দেখ আমি তো ঠিক আছি। (কাপা কাপা গলায় বলে নিরব)
প্রভা: আ আমি পেরেছি নিরব।তোমায় বলেছিলাম না!এই যুদ্ধে আমি জয়ী হবোই। আমার ভালোবাসার টানে হলেও তোমায় ফিরে আসতেই হবে।আমি আমার কথা রাখতে পেরেছি নিরব,আমি পেরেছি (কাদতে কাদতে নিরব এর বুকে মাথা রেখে বললো)
ফ্লাসব্যাক—–
উজ্জ্বল:ইশা!দেখো নিরবের জ্ঞান ফিরছে..
কথাটা শোনা মাত্রই ধরপরিয়ে উঠলো প্রভা।এতক্ষন ধিরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো নিরবের মুখের দিকে।উজ্জ্বল এর কথা অনুযায়ী নিরবের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো আঙুল সামান্য নড়ছে।ইশা উঠে দাঁড়ায় চেয়ার থেকে।এখন ওর মনে একটা ভয়।নিরব যদি ওকে চিনতে না পারে!না না সেটা ও সজ্য করতে পারবে না।
বাহিরে গিয়ে কয়েকজন কে ভিতরে যেতে বললো এবং নিজে কিছুটা দূড়ে দড়জায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।মনে মনে শুধু একটাই প্রার্থনা করছে নিরব যেনো তাকে ভুলে না যায়।
কিছুক্ষন এর মাঝেই নিরবের সম্পূর্ন জ্ঞান ফিরে যায়।উজ্জ্বল ওকে কিছুটা চেক করে এবং সস্তির নিশ্বাস ছাড়ে।অপারেশন সাকসেসফুল,যেহেতু ব্রেইন অপারেশন তাই সুস্থ হতে একটু টাইম লাগবে তবে এছাড়া কোনো সমস্যা নেই।
সবাই আল্লাহর কাছে ধন্যবাদ জানায়।কিন্তু এতোকিছুর মাঝে নিরব এর চোখ যে শুধু এক জনকেই খুজে চলেছে।ঘাড় সামান্য ঘুড়িয়ে পাশে তাকাতেই পেয়েও গেলো তাকে।
ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠলো তার। ধীরেধীরে ডাক দিলো,
নিরব:দিয়া….
ডাকটা খুব আস্তে হলেও প্রভার কানে ঠিক ই পৌছোলো।চোখ বন্ধ করে নেয় সে।চোখে জমে থাকা অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে এবার।
উজ্জ্বল এবং প্রথা এবার সবাইকে নিয়ে বাইড়ে চলে যায়।কিছুক্ষণ নিরবতা বজায় থাকে কেবিন এ।চোখ খুলে তাকায় এবার প্রভা।নিরব ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে প্রভাকে কাছে আসতে বলে।
প্রভা আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না।ওড়নার আচলে মুখ গুজে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।ছুটে চলে যায় নিরব এর কাছে।পাশে চেয়ার এ বসে পরে। নিরব আবারো হাত বাড়ায় ওর দিকে।
প্রভা এবার নিরবের বুকে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে আবারো কেদে ওঠে।
ফ্লাসব্যাক ওভার—–
নিরব:তুই পেরেছিস দিয়াপাখি।এবার আর আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবেনা।কেউ না..
কেটে যায় সাত টে দিন। নিরবকে এখন বাড়িতে আনা হয়েছে।ফাহাদ এর আদেশে সকলে এখন ওদের বাড়িতেই আছে।
নিরব এখন একা একা হাটতে পারে কিছুটা।তবে প্রভা সারাদিন ওর পিছনেই লেগে থাকে।এটা খাওয়া যাবে,ওটা খাওয়া যাবে না।এখন ঘুমোতে হবে,এখন এই করতে হবে ঐ করতে হবে এসব নিয়েই পড়ে থাকে…
সকাল হতেই প্রভা ব্রেকফাস্ট নিয়ে হাজির,
প্রভা:এইযে মিঃ চঞ্চল উঠুন এখন..
নিরব:আরেকটু ঘুমোতে দাও না দিয়াপাখি..
প্রভা:উম হু,আর এক মিনিট ও না।একদম অনিয়ম করলে চলবে না।উঠুন উঠুন..
নিরব এবার ধীরেধীরে উঠে বসে।
প্রভা:যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।
নিরব:এমনভাবে ওরডার করছো যেনো তুমি আমার বস..
প্রভা:অভিয়াসলি..বউ কে সম্মান করতে শেখো হুহ..
নিরব:আহহ..
প্রভা:এইইই,কি হলো?ব্যাথা করছে?
নিরব:(বাচ্চাদের মতো করে মাথা উপরনিচ করে ইশারা দিলো হ্যা)
প্রভা:কোথায় ব্যাথা করছে?মাথায়?দেখি দেখি.. (কথাটা বলেই ব্যাস্ত হয়ে পরে)
নিরব এবার এক ঝটকায় প্রভার মাথা নিজের বুকের সঙ্গে চেপে ধরে।
নিরব:এইযে এখানে।
প্রভা:মানে!
নিরব:কিছু শুনতে পাচ্ছো দিয়াপাখি?
প্রভা:(মাথা উপরনিচ করে হ্যা জানায়)
নিরব:এই প্রতিটি হৃদস্পন্দন যে চিৎকার করে বলছে, দিয়া শুধুই নিরবের।
প্রভা:(মুচকি হাসলো)
সিনথিয়া:সরি সরি।ভুল টাইম এ চলে এলাম..
নিরব এবার প্রভাকে ছেড়ে দেয়..
নিরব:এসেই যখন পরেছিস তখন বলেই দে কেনো এসেছিস?
সিনথিয়া:ইয়ে মানে বিয়ের নিমন্ত্রণ দিতে।
প্রভা:কার বিয়ে?
সিনথিয়া:প্রতিভা ওয়েডস নিরব..
প্রভা:হোয়াট!
নিরব:মানে কি!আমাদের তো বিয়ে হয়েই গেছে।
সিনথিয়া:হুম হয়েছে তবে তেমন ভাবে তো আর হয়নি।তাই চাচ্চু ঠিক করেছে এবার ধুমধাম করে বিয়ে দেবে তোদের।
প্রভা:সে যা খুশি করুক,কিন্তু দু মাস পর।
সিনথিয়া:ওকে মাই ডিয়ার বেহনা..
বলেই সিনথিয়া চলে গেলো রুম থেকে,
নিরব:মিসেস প্রতিভা,আবারো নিজের নামের সঙ্গে এই নিরবের নাম জোড়াতে প্রস্তুত থাকুন..
____🌿
কেটে গেছে আরো দুটো মাস।আজ মেহেন্দি এবং সাঙ্গিত।না চাইতেও সবাই প্রভাকে আধা কেজি ময়দা দিয়ে সাজিয়েছে,সঙ্গে বাসন্তি রঙের লেহেঙ্গা।
নিরব ও তার সাথে মিলিয়ে বাসন্তি রঙের পাঞ্জাবি পরেছে।মোটকথা দুজনকেই অপূর্ব লাগছে।
মেহেন্দি পড়ানোর মেয়েটি যেই হাতে এন লিখতে যাবে তখন ই নিরব আটকে দেয়।মেহেন্দি নিয়ে কাছে নিয়ে সেই জায়গায় এস লিখে দেয়।
প্রভা এবং নিরব একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।প্রভা এবার নিরবের দিকে তাকিয়ে গেয়ে ওঠে,
কিছু কথার পিঠে কথা
তুমি ছুঁয়ে দিলেই মুখরতা,
হাসি বিনিময় চোখে চোখে
মনে মনে রয় ব্যাকুলতা। (প্রভা)
আমায় ডেকো একা বিকেলে
কখনো কোনো ব্যথা পেলে, (নিরব)
আমায় রেখো প্রিয় প্রহরে
যখনই মন কেমন করে। (প্রভা)
কোনো এক রূপকথার জগতে
তুমি তো এসেছো আমারই হতে, (প্রভা)
কোনো এক রূপকথার জগতে
তুমি চিরসাথী আমার জীবনের
এই পথে।। (নিরব)
একইভাবে দুজনে গান শেষ করে।সবাই এবার হাততালি দিয়ে ওঠে।তারপর সবাই আরো কিছু পারফরমেন্স করে।
______🌿
অবশেষে চলেই এলো বিয়ের দিন।ঠিক সপ্নের মতোন লাল টুকটুকে বেনারসি পড়ে নিরবের অপেক্ষায় বসে আছে প্রভা।কিছুক্ষণের মাঝেই বাহিরে হৈ হুল্লোর শুনে বুঝতে পারলো নিরব চলে এসেছে।হার্টবিট বেড়ে গেলো তার।জানালার কাছে গিয়ে দেখলো নিরব ও সোনালি রঙের পাঞ্জাবী পরে এসেছে।
এখনো সবটা সপ্নের মতৈ লাগছে প্রভার কাছে।তবে সপ্নটা বাস্তবে পরিনত হয় যখন কাজি ওকে কবুল বলতে বলে।একবার নিরবের দিকে তাকিয়ে আরেকবার মা বাবার দিকে তাকিয়ে কবুল বলে দেয় সে।আজ নতুন করে দ্বিতীয় বারের মতো নিজের নামের সঙ্গে সেই মানুষটির নাম জুড়ে নিলো সে।
____,,,
ছাদে দোলনায় বসে আছে প্রভা আর তার কোলে মাথা রেখে কোমড় জড়িয়ে শুয়ে আছে নিরব।এটা সেই বিশাল বাড়ি নয়।এটা নিরবের নিজের বাড়ি।নিরব নিজে কিনেছে এই বাড়িটা,ছোট বললে ভুল হবে এটাও বিশাল একটি বাড়ি। আশেপাশের পরিবেশে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে। নিরব আগে এর ব্যাপারে কাউকে বলে নি। বিদায় এর পর প্রভা কে নিয়ে সোজা এখানে চলে আসে।সঙ্গে অবশ্য সিনথিয়া,সুপ্তি,অরিস,কিপ্তি আর অঙ্কিত ও এসেছে।উজ্জ্বল কিছু কাজে আসতে পারেনি।এখানে এসে ফ্রেশ হয়েই নিরব প্রভাকে নিয়ে ছাদে চলে আসে।
প্রভা:নিরব..
নিরব:হুম.
প্রভা:একটা রিকুএস্ট রাখবে আমার?
নিরব:বলেই দেখো..
প্রভা:একটিবার বলবে?ভালোবাসি..
নিরব এবার শোয়া থেকে উঠে বসে।দোলনা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে প্রভার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।প্রভাও হাত বাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়।নিরব এবার এক ঝটকায় প্রভার কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে আনে।চোখের সামনে সরে আসা চুল সরিয়ে দিয়ে গেয়ে ওঠে,
Shayad kabhi na kehe sakoon main tumko
Kahe bina samajh lo tum shayad
Shayad mere khayal mein tum ik din
Milo mujhe kahin pe ghum shayad
Jo tum na ho… rahenge hum nahin
Jo tum na ho… rahenge hum nahin
Na chahiye kuch tum se zyada tum se kam nahin
(~~fav song~~)
নিরব এবার প্রভার আরো কাছে গিয়ে ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে দেয়।নিশ্বাস ভারি হতে থাকে প্রভার।বেশ কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর নিরব বলে,
নিরব:উত্তর পেয়ে গেছো?
প্রভা:মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানায়।
নিরব এবার কিছু না বলে কোলে তুলে নেয় প্রভা যে।হঠাত করে এমনটা হওয়ায় প্রভা টাল সামলাতে না পেরে নিরবের গলা জড়িয়ে ধরে।
প্রভা:কি করছো কি!নামাও আমায়
নিরব:নামানোর জন্য তো আর কোলে তুলিনি।
নিরব এবার কিছু না বলে রুমে নিয়ে যায় প্রভা কে।রুমে এসে কোল থেকে নামিয়ে দেয় সে।
নিরব প্রভার দিকে কিছুটা এগোতেই প্রভা ওকে ধাক্কা দিয়ে অন্যদিকে চলে যায়।ঠিক তখনি পিছন থেকে হাত ধরে ফেলে নিরব।
ধীরে ধীরে প্রভার কাছে এসে পিছন থেকে কাধে মুখ ডুবিয়ে দেয় নিরব।
নিরব:পালিয়ে যাচ্ছিস?পারবিনা,শত চেষ্টা করলেও আজ পালাতে পারবিনা। এই পাচ বছর প্রতিটা মুহূর্তে আমি যেই আগুনে পুড়েছি এখন থেকে তুইও পুড়বি।আমার ভালোবাসার আগুণে।জ্বলে,পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাবি তবুও বেড়োতে পারবিনা সেখান থেকে।
প্রভা:সেই আগুণে পুড়ে যদি আমার মৃত্যুও হয় তবে তাও আমার কাছে সুখের।আর পালাবো?কোথায় পালাবো, এখানেই তো আমার স্থান।চাইলেও আমি পালাতে পারবোনা,আর চাই ও না।আমি তো চাই সারাজীবন নিরবের দিয়াপাখি হয়ে থাকতে।
নিরব:আমি বড্ড ক্লান্ত দিয়াপাখি।এই পাচ বছর ধরে অপেক্ষার আগুনে পুরে আমি ক্লান্ত।আজ আমি বেড়োতে চাই এই আগুন থেকে।বর্ষন এ ভিজতে চাই আমি।যেই বর্ষন এর প্রতিটা বিন্দুতে থাকবে তোর নাম।যেই বর্ষন নিভিয়ে দেবে আমার ভিতর জলতে থাকা সমস্ত আগুণ।অনুমতি দিবি আমায়?ভিজতে দিবি,তোর নামের বর্ষনে?
প্রভা এবার পিছন ফিরে মুখ লোকায় নিরবের বুকে।শক্ত করে জড়িয়ে ধিরে তাকে।
নিরবের উত্তর পেয়ে গেছে সে।সেও তার প্রেয়সি কে জড়িয়ে ধরে এবার।
ঠিক সেই সময় ই আকাশে মেঘেরা এসে ভীর জমালো।ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নেমে এলো।
নিরব এবার কোলে তুলে নেয় প্রভা কে।কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
নিরব:আজকের এই বর্ষন ই নাহয় নিরব আর তার দিয়াপাখির পরিপূর্ণ ভালোবাসার সাক্ষি হয়ে থাক..
________🌿
দড়জা ধাক্কানোর আওয়াজে ঘুম টা ভেঙে গেলো প্রভার।চোখ খুলতেই নিজেকে নিরবের উন্মুক্ত বুকে আবিষ্কার করলো সে।কাল রাতের কথা ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সে।পরমুহূর্তেই আবারো দড়জার শব্দে ধ্যান ভাঙলো তার। কোনোরকম নিজেকে নিরব এর থেকে ছাড়িয়ে জামাকাপড় ঠিক করে নেয়।গায়ে ওড়না জড়িয়ে চুল খোপা করতে করতে গিয়ে দড়জা খোলে সে। অমনি দেখে সুপ্তি দাঁড়িয়ে আছে।
সুপ্তি প্রভার এমন লেপ্টে থাকা সাজগোজ দেখে মুচকি হাসে।
সুপ্তি:না মানে অনেক বেলা হয়ে গেছে তো।তাই ডাকতে আসলাম আরকি।ডিসটার্ব করলাম বুঝি!
প্রভা:ড ডিসটার্ব হবে কেনো!
সুপ্তি:তা তো বুঝতেই পারছি।(পরক্ষনেই চোখ পরলো প্রভার হাতের আঙটির দিকে) প্রভা? এই আংটিটা বুঝি ভাইয়া দিয়েছে কাল?
প্রভা:কোন আংটি।(বলেই হাত উঁচু করে) এ এটা তো..
সুপ্তি:হুম বুঝেছি।এবার জলদি রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে আয়।ভাইয়াকেও ডেকে দে।আর কালকের কাহিনি নাহয় পরেই শুনবো।
প্রভা:বেয়াদপ যাহ তুই..আসছি আমি।
সুপ্তি এবার ভেংচি কেটে চলে যায়।প্রভা দড়জা লাগিয়ে এসে দেখে নিরব এখনো বাচ্চাদের মতো ঘুমোচ্ছে।কিছু কিছু চুল বারবার কপালে এসে পরছে।
প্রভার আর নিরবকে ঘুম থেকে তুলতে ইচ্ছে করলো না।নিজেই একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুম এ চলে যায়।
প্রায় ২০ মিনিট পর বেড়িয়ে দেখে নিরব উঠে পরেছে।ওরদিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
প্রভা একটু মজা করার জন্য নিরব এর সামনে গিয়ে নিজের ভেজা চুল ওর মুখের উপর ঝাড়া দেয়।
নিরব:দিয়াপাখিইই,কি হলো এটা?
প্রভা:হি হি হি..
নিরব এবার যেই প্রভার হাত ধরে টান দিতে যাবে তখনি প্রভা আরেকহাতে টাওয়াল নিয়ে নিরব এর মুখের সামনে ধরে।
নিরব:এটা কি
প্রভা:এইযে টাওয়াল।আর এখন সোজা ওয়াশরুম এ যাও।হসপিটাল যাবে না নাকি!কতো বেলা হয়েছে তার খেয়াল আছে?
নিরব:যেতে তো ইচ্ছে করছে না তবে যেতেই হবে।
প্রভা:হুম তো এখন যাও…
________🌿
ছোটখাটো খুনসুটির মাঝে কেটে যেতে থাকে দিন। কেটে গেছে আট মাস।এখন নিরব আর প্রভা একারাই থাকে এই বাড়িতে।তাছাড়া সার্ভেন্ট রা তো আছেই।
বর্তমানে অরিস বায়না ধরেছে তার বউ এনে দিতে হবে।এইটুকু ছেলের এমন বায়না শুনে সবাই তপ হাসতে হাসতে শেষ।সে এখক্ন ফুফির কাছে বায়না ধরেছে তার বউ চাই মানে চাই।
আজ প্রভা নিরবের আগেই চলে এসেছে বাড়িতে। নিজের রুমে বসে আচার খেয়ে চলেছে সে।নিরব এসে প্রভাকে রুমে দেখে বলে,
নিরব:কি হয়েছে দিয়াপাখি?আজ তারাতারি চলে এলে যে?শরীর ঠিক আছে তো?
প্রভা:(মাথা নাড়িয়ে না জানায়)
নিরব:মানে?কি হয়েছে তোমার?(অনেকটা ব্যাস্ত হয়ে প্রভার কাছে গিয়ে বলে)
প্রভা:আসলে,আমার না তোমাকে কিছু বলার ছিলো।
নিরব:হুম বলো।
প্রভা:আমার না মাঝে মাঝে খুব দুর্বল লাগে।
নিরব:ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া না করলে তো এমন ই হবে।
প্রভা:আরে সেটা না।আসলে আমার না মাঝেমাঝে মাথা ঘোড়ে।
নিরব:নিশ্চিত লো প্রেশার।এতোবার বলি তবুও তোমার অনিয়ম করা আর বন্ধ হবে না।
প্রভা:আরেএএ,সেটা না।মানে আমার মাঝে মাঝে কেমন যেনো বমি বমি পায়।
নিরব:এতো পরিমানে আচার খেলে তো এমন হবেই।
প্রভা:আরে ধুর..থাকো তুমি,কে।যে তোমাকে ডাক্তারির সার্টিফিকেট দিছে আল্লাহ মাবুদ জানে। (কথাটা বলেই নিরবের হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বারান্দায় চলে যায়)
নিরব বেশ অবাক হয়ে যায়।কিছু বুঝতে না পেরে কাগজ টা খোলে।আর সেটা দেখতেই বাকরুদ্ধ হয়ে যায় সে।কারণ এটা প্রেগনেন্সি রিপোর্ট,আর সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা পজিটিভ।
নিরব কিছুক্ষন ওভাবেই বসে থাকে।তারপর ছুটে গিয়ে প্রভার নিজের দিকে ঘোড়ায়।
নিরব:এ এটা সত্যি দিয়াপাখি?
প্রভা:না না আমিতো মিথ্যে কথা বলছি। (অভিমান করে বলে)
নিরব এবার কিছু না বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্রভা কে।প্রভাও আর অভিমান করে থাকতে পারেনা এবার।
নিরব:ত তুমি সত্যি বলছো?আ আমি বাবা হতে চলেছি দিয়াপাখি?ছোট্ট ছোট্ট পা নিয়ে কেউ সারা বাড়ি জুড়ে ঘুড়ে বেরাবে!আমাকে বাবা বলে ডাকবে!
প্রভা:হ্যা নিরব আমি সত্যি বলছি।তোমার সন্তান, আমার সন্তান,আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন।আমাদের সন্তান আসছে।
নিরব এবার খুশিতে কি করবে নিজেই বুঝতে পারছে না।প্রভার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
নিরব:আচ্ছা দিয়াপাখি,আমাদের মেয়ে হলে নাম রাখবো নদি আর ছেলে হলে সাগর। সুন্দর না?
প্রভা:হুম সুন্দর তবে দুটোই তোমার সঙ্গে মেলে। কেনো হ্যা?ন মাস পেটে ধরবো আমি,এতো কষ্ট করে পৃথিবীতে আনবো আমি আর ক্রেডিট হবে তোমার!মোটেই না।
নিরব:মেইন ক্রেডিট তো আমার ই তাই না!
প্রভা:মিঃ চঞ্চল থেকে তোমাকে মিঃ অভদ্র নাম দেওয়া উচিৎ।
দুজনেই এবার হেসে ওঠে।
সময় তার গতিতেই চলছে।দেখতে দেখতে কেটে গেছে আট টি মাস।প্রভাকে এখন আর হসপিটাল এ যেতে দেয়না নিরব।ভারি পেট নিয়ে চলাচলেও কিছুটা সমস্যা হয় ওর।তাই সারাদিন ওর সঙ্গে নিশি নামের একটি মেয়ে থাকে।বাড়ির সব কাজ ও ই করে।তবে আজ ওর মা অসুস্থ হয়ে পরায় আসতে পারেনি।প্রভাও আর কিছু বলেনি ওকে। একটাদিন কোনোভাবে কেটেই যাবে।
নিরব যেতে চায়নি তবে জরুরি এক সার্জারি থাকায় বাধ্য হয়ে যেতে হয়েছে।
প্রায় দুপুর ১২ টা বাজে।প্রভা বসে বসে বই পড়ছিলো।তখন ই ওর ফোন টা বেজে ওঠে।
প্রভা:হ্যালো।
মেয়েটি:হ্যালো ম্যাম।আমি হসপিটাল থেকে বলছি। নিরব স্যার এর হঠাত করে অসুস্থ হয়ে পরেছে।আপনি কি একটু আসতে পারবেন?
প্রভা:হ হোয়াট!কি হয়েছে নিরব এর।
মেয়েটি:ম্যাম আপনি একটু আসুন প্লিজ।
প্রভা:আমি!আ আচক্সহা আসছি আমি।
ফোন টা কেটে যায় তখনি।প্রভা এবার ধীরেধীরে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়।সকালে তো সব ঠিক ই ছিলো।হঠাত করে কি ই বা হলো!
প্রভা আস্তে আস্তে সিড়ি থেকে নেমে বাহিরে চলে আসে।ঠিক তখনি বাড়ির ভিতর থেকে কারোর চিৎকার এর শব্দ ভেসে আসে।
প্রভা দ্রুত ভিতরে যেতেই বুঝতে পারে শব্দটা পাশে ঘড় থেকে আসছে।প্রভা কাপা কাপা হাতে দড়জাটা খুলতেই বুক কেপে ওঠে ওর।
চিৎকার দিয়ে ওঠে,
প্রভা:নিরববব…..
প্রভা দ্রুত গিয়ে নিরব এর মাথা নিজের কোলের উপর তুলে নেয়।মাথা থেকে অনবরত রক্ত বেড়িয়ে যাচ্ছে।
প্রভা:ন নিরব!এই নিরব কি হলো তোমার।চোখ খোলো প্লিজ!তাকাও তোমার দিয়াপাখির দিকে।
নিরব এবার পিটপিট করে চোখ খোলে।নিজের রক্তাক্ত হাত দিয়ে প্রভার গাল স্পর্ষ করে।
নিরব:দিয়াপাখি তুই ঠিক আছিস!
প্রভা:আমি ঠিক আছি নিরব।তাকাও আমার দিকে!কিচ্ছু হবেনা তোমার।আমি আছি তো
নিরব:আমায় ক্ষমা ক করে দিস দিয়াপাখি। আমি পারলামনা।হেরে গেলাম আমি।পারলামনা বুড়ো বয়স পর্যন্ত তোর সঙ্গে থাকতে।পারলামনা আমার সন্তানকে নিজে হাতে বড় করতে।আমি ব্যার্থ দিয়াপাখি।ব্যার্থ আমি..ত তবে তুই কাদবিনা। একদম কাদবিনা। তোর চোখের জল আমি সজ্য করতে পারিনা।তুই বেচে থাকবি,আমাদের মেয়ে কে নিয়ে..আ আর..
প্রভা:নিরব তুমি চুপ করো প্লিজ।কিচ্ছু হবেনা তোমার আমি আছি তো..
নিরব:তুই শুনতে চেয়েছিলিস না দিয়াপাখি? আজ বলছি,ভালোবাসি,অনেক ভালোবাসি, বড্ড বেশি ভালোবাসি দিয়াপাখি।ভা ভালো বাসি..
শেষের কথাটা বলেই জ্ঞান হারালো নিরব।আর কিছু বলতে পারলো না।
প্রভা:ন নিরব।এই নিরব চোখ খোলো না,তোমার কিচ্ছু হবেনা।আমি হতে দেবোনা।
কাপা কাপা হাতে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে সুপ্তির নাম্বার এ ডায়েল করলো।
প্রভা:হ হ্যালো..
সুপ্তি:হ্যা প্রভা বল..
প্রভা:সুপ্তি নিরব..
সুপ্তি:নিরব!কি হয়েছে নিরব ভাইয়ার?
প্রভা:নিরব আহহহহহ..
আর কিছু বলতে পারলোনা প্রভা।তার আগেই কেউ ভারি কিছু দাড়া আঘাত করলো ওর কোমড় বরাবর।
ওদিকে সুপ্তি ফোনে হ্যালো হ্যালো বলে যাচ্ছে কিন্তু কোনো উত্তর পাচ্ছেনা।
প্রভা পেট চেপে ধরে লুটিয়ে পরে মাটিতে। অসহনীয় ব্যাথায় চিৎকার করতে থাকে কিন্তু কেউ নেই সেই চিৎকার শোনার।রক্তে ছড়িয়ে যায় সারাটা ঘর।শেষবারের মতো একহাত নিজের পেটে আরেক হাত নিরব এর শরীরে রেখে বলে ওঠে,
প্রভা:আমিও ভা ভালোবাসি নিরব..বড্ড বেশি ভালোবাসি..
আর কিছু বলতে পারলোনা।শরীর নিস্তেজ হয়ে যেতে লাগলো।
#চলবে।