#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রথা
#পর্বঃ২৭
সিনথিয়া:তুমি আসলে আমায় কখনো ভালোই বাসোনি উজ্জ্বল।কারণ ভালোবাসলে বিশ্বাস করতে হয় আর তোমার আমার প্রতি কোনো বিশ্বাস ই ছিলোনা।হেরে গেলে উজ্জ্বল,হেরে গেলে।
কথাটা বলেই চোখের জল আটকে স্থান ত্যাগ করে।
আর উজ্জ্বল একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।মনের মাঝে খচখচ করছে তার,সে কি ভুল করছে?কিন্তু পরমুহূর্তেই পাচ বছর আগের কথা এবং ইশার বলা কথা ভাবতেই মাথায় রাগ চড়ে বসে।
পাচ বছর আগে–
উজ্জ্বল আর সিনথিয়ার পরিচয় হয় অনলাইন এ আর তারপর ধীরেধীরে তাদের বন্ধুত্ত গভীর হতে থাকে।এক সময় তারা একে অপরের সঙ্গে দেখা করে প্রথম দেখাতেই উজ্জ্বল নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলে সিনথিয়া কে।
প্রপোজ টাও উজ্জ্বল ই করে।সিমথিয়াও মনে মনে উজ্জ্বল কে পছন্দ করতো তাই আর না করেনি।
প্রায় এক বছর বেশ ভালোই কাটে।কিন্তু হঠাত করে সিনথিয়া উধাও হয়ে যায়।উজ্জ্বল অনেক চেষ্টা করেও ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
একপর্যায় ও সিনথিয়ার বাড়ির এলাকায় যায়।কিন্তু আসল বাড়ি খুজে পাচ্ছিলো না।
তাই সেই এলাকায় একজনের বাড়িতে নক করে। সেখান থেকে একজন মধ্যবয়সি মহিলা।(এটাই হলো প্রিয়াঙ্কা আন্টি😴)
উজ্জ্বল:আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
প্রিয়াঙ্কা:ওয়ালাইকুম আসসালাম।কাকে চাই?
উজ্জ্বল:আসলে আন্টি আমি একজনের বাড়ি খুজছিলাম।এইজে এই মেয়েটার বাড়ি কোনটা একটু বলতে পারবেন?
প্রিয়াঙ্কা:আরে এইটা তো সিনথিয়া।এই মাইয়াডার কথা আর বইলোনা বাবা।একেবারে নির্লজ্জ হয়ে গেছে।বোনের বাড়ি গিয়েই তো পড়ে থাকে। আবার ওর বোনের জামাই এর সঙ্গে ঘুড়ে বেড়ায়। ছিহঃ ছিহঃ…
উজ্জ্বল:আন্টি আপনার কিছু ভুল হচ্ছে ও এমন মেয়েই নয়।আমি চিনি ওকে।
প্রিয়াঙ্কা:তা তো বিশ্বাস করবাই না।খাড়াও তোমারে দেখাই। (কথাটা বলেই রুম থেকে নিজের ফোন নিয়ে এসে একটা ভিডিও দেখায় উজ্জ্বল কে যেখানে সিনথিয়া এবং নিরব একসাথে একটা হোটেল এ ঢুকছিলো)
প্রিয়াঙ্কা:এইবার বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার।আর ওদের বাড়ি ঐযে সোজা দেখছো ঐটা।আমি বরং যাই বাপু,অনেক কাজ আছে।
ঢং করে কথাটা বলে দড়জা আটকে দেয় প্রিয়াঙ্কা।উজ্জ্বল কিছুক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসে।আর ওদের বাড়িতে যায় নি।
বাড়িতে এসে সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশে চলে যাবে।কারণ এখানে থাকলে কখনোই তার প্রিথুরাণী কে ভুলতে পারবেনা।আর এমন একজন বিশ্বাসঘাতক এর সঙ্গে সে কোনো যোগাযোগ রাখবে না।
তার দু দিন পর সিনথিয়া উজ্জ্বল কে অনেকবার ফোন এ ট্রাই করে কিন্তু ও রিসিভ করে না বরং নাম্বার টা ব্লক লিস্ট এ রেখে দেয়।
তারপরের ঘটনা সবাই ই জানেন।সপরিবার এ বিদেশে চলে আসার সময় সে মনে মনে ভেবেছিলো প্রথা যখন সুখেই আছে তখন সে আর ওর রাস্তায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
কিন্তু সএই মুহূর্তে যে তার প্রিথুরাণী আই সি ইউ তে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলো তা আজ পর্যন্ত অজানা।
কিছুক্ষন আগে ইশার সঙ্গে হসপিটাল এ ঢোকার সময় হঠাত করেই সিনথিয়া সামনে চলে আসে।উজ্জ্বল কে দেখে সিনথিয়ার চোখ দুটো ভরে ওঠে। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই উজ্জ্বল বলে ওঠে,
উজ্জ্বল:ওহ মিস সিনথিয়া,মিট মাই ফিয়ন্সি ইশা।
ইশা:ত তুমি ওকে চেনো?
উজ্জ্বল:তেমন একটা না।হসপিটাল এই একদিন দেখেছিলাম।
ইশা ছলোছলো নয়নে তাকিয়ে থাকে উজ্জ্বল এর দিকে।ইশাকে একজন নার্স এসে ডেকে নিয়ে যায়
তারপর সিনথিয়া উজ্জ্বল কে নানান প্রশ্ন করায় উজ্জ্বল রেগে গিয়ে সেদিনের ঘটনা বলে।
সিনথিয়া আর কিছু বলতে পারেনা।উজ্জ্বল এর বিশ্বাস যে এতটা ঠুনকো হবে তা কখনো ভাবতেও পারেনি।
_______🌿
“আসতে পারি?”
নিরব ফাইল থেকে মুখ তুলে দড়জার দিকে তাকাতেই ফাহাদ খান দাঁড়িয়ে আছেন।
নিরব:আরে আঙ্কেল আপনি!আসুন না,বসুন।
ফাহাদ:(এসে চেয়ারে বসে) আর কতোদিন আঙ্কেল ডাকবে?বাবা বলেও তো ডাকতে পারো।
নিরব:যার সূত্রে বাবা বলে ডাকবো সএই তো আর আমার নেই (মনে মনে)
ফাহাদ:ঠিক আছে বলতে হবে না।এখন বলো, কেমন আছো?
নিরব:এইতো আছি আঙ্কেল।
ফাহাদ:জানো তো বাবা,জীবনে কখনো নিজের মেয়ের মুখে বাবা ডাকটা শোনার ভাগ্য আমার হয়নি।না পেরেছি একটা বারের জন্য মেয়েটাকে দুচোখ ভরে দেখতে।
আমি তোমায় নিজের ছেলে মনে করি,তুমি পারবেনা আমার ছেলে হতে?একবার বাবা বলে ডাকবে আমায়?
নিরব ছলোছলো নয়নে তাকায় ফাহাদ এর দিকে। তার চোখেও জল।নিরব এবার কাপা কাপা গলায় বলে ওঠে,
নিরব:বাবা
ফাহাদ এবার এসে জড়িয়ে ধরলো নিরব কে।
ফাহাদ:আজ আমার মেয়েটা থাকলে বড়ই খুশি হতো।আমি আর কদিন ই বা বাচবো।তুমি কেনো আমার জন্য এতকিছু করলে বাবা?
নিরব:জানেন তো বাবা,ছোটবেলা থেকে কখনো আব্বু,আম্মু কারোর ভালোবাসাই পাইনি আমি। আম্মু বেচে থাকতেও তাকে মৃত বলে ভেবে এসেছি।আর আব্বু?সে তো ভুলেই গেছে বাড়িতে ও একটা ছেলে অপেক্ষা করে বসে থাকে কখন তার বাবা আসবে।সে তো নিজের বিজনেস নিয়েই ব্যাস্ত।মাদার্স ডে কিংবা ফাদার্স ডে তে আমার সঙ্গে কেউ স্কুল এ যেতোনা।সবাই আড়ালে বলতো আমার মনে হয় বাবা মা কেউ ই নেই।অনাথ আমি,একবার ভেবে দেখুন তো এমন কথা শুনে আমার কেমন লাগতো?
বড়ো হওয়ার পর আর এসব বিষয়ে মন খারাপ করতাম না।তারপর যখন আমার জীবনে দিয়া এলো,মনে হলো আমি জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ পেয়ে গেছি।
আমি নাহয় বাবা থেকেও নেই।কিন্তু দিয়া?ও তো সেই ছোটবেলা থেকে কতোকিছু সজ্য করেছে। আর তাছাড়াও বাবার মূল্যটা আমি বুঝি,কি করে পারতাম নিজের বাবার সমতূল্য একজনকে ঐ অবস্থায় ছেড়ে দিতে?
আমি তো এমনটা চাইনি।আমি তো চেয়েছিলাম আমার দিয়াপাখির না পাওয়া সবকিছু ওকে ফিরিয়ে দেবো।কিন্তু তা আর পারলাম কোথায়!
_______🌿
বেশ খানিক্ষন ফাহাদ এর সঙ্গে কথা বলার পর চলে যায় সে।রাত ৮ টার দিকে নিরব ও কোয়াটার এ চলে আসে।খুব ইচ্ছে করছে তার দিয়াপাখি কে একনজর দেখার।কিন্তু সেই ইচ্ছেকে দমিয়ে রেখে আলমারির দিকে চলে গেলো সে।সেখান থেকে একটা পেপার বের করে চোখের সামনে ধরে বাকা হাসে।
এটা সেই ডিভোর্স পেপার।যেখানে নিরব এর সাইন টা এখনো আছে তবে প্রভার সাইন টা নেই।
আসলে এই ডিভোর্স পেপার টাই নকল। তার উপর নিরব নিজের সাইন টাও দেয়নি,এমনি ই একটা সাইন বসিয়েছে।
আর প্রভাকে যেই কলম দিয়ে সই করতে বলেছিলো সেটা সাধারণ কলম নয়। সেই কলমের কালি দু থেকে তিন ঘন্টার মাথায় আপনা আপনি মুছে যায়।
নিরব সবকিছু মনে করে আবারো হাসে।
নিরব:আজও কাগজে কলমে তুই শুধু আমার দিয়াপাখি।আজও তোর নামের পাশে আমার নামটাই যুক্ত আছে।কিন্তু সেটা আর তোকে বলবো না।কারণ আমি তো চাই তুই জীবনে সুখি থাক।আমি বেচে থাকতে তুই কিছুই জানতে পারবি না দিয়াপাখি।আমি জানতে দেবোনা।তবে পরে ঠিক জানতে পারবি।
কিন্তু সেদিন একটুও কাঁদবিনা দিয়াপাখি।তোর মিঃচঞ্চল এর আদেশ এটা।কারণ তোর চোখের জল যে আমায় ভেঙে চুরমার করে দেয়।
#চলবে।