আড়ালে অনুভবে পর্ব-২৩

0
1930

#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রথা
#পর্বঃ২৩

প্রভা:মিঃ চঞ্চল আপনি আমাকে মাঝে মাঝে তুই করে ডাকেন কেনো বলুন তো?

নদীর পারে বসে আছে নিরব এবং প্রভা।প্রভা নিচের সিড়িতে বসে পানিতে হালকা পা ডুবিয়ে রেখেছে আর নিরব তার এক সিড়ি উপরে বসে পিছন থেকে তার প্রেয়সি কে জড়িয়ে ধরে কাধে মুখ ডুবিয়ে রেখেছে।তখন ই নিরবতা ভেঙে প্রশ্ন করে বসলো প্রভা।

নিরব:আমি যাদের বেশি ভালোবাসি তাদের তুই করেই ডাকি।কিন্তু হবু বউ কে তুই ডাকলে কেমন একটা দেখায় না!তাই আরকি মাঝে মধ্যে ডাকি।কেনো তোমার খারাপ লাগে বুঝি?

প্রভা:মোটেই না।বরং আমার তো খুব ভালো লাগে।

নিরব:তা নাহয় বুঝলাম।এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।

প্রভা:কি প্রশ্ন মিঃ চঞ্চল ভাই?

নিরব:কে তোমার ভাই? (ভ্রু কুচকে বললো)

প্রভা:হি হি..

নিরব:দিস ইজ নট ফেয়ার দিয়াপাখি!তুমিও দেখছি ইদানিং আমায় ভাই বলে ডাকো।এসব কতোদিন চলবে শুনি!

প্রভা:যতদিন না আপনার ছেলে মেয়েরা আপনাকে মামা বলে ডাকবে।

নিরব:ওকে আপু নো প্রবলেম।তাহলে তোর ছেলে মেয়েও তোমায় ফুফি বলে ডাকবে।

প্রভা:ঐ কে তোর বোন?আমি বোন হলে বউ টা কে!

নিরব:যাক বাবা,নিজের বেলায় ষোলো আনা আর আমার বেলায় জিরো আনা।তবে হ্যা, ভাবছি নতুন করে বউ খুজতে হবে।

প্রভা:একেবানে মেরে ফেলবো। (নিরব এর দিকে ঘুড়ে ওর কলার চেপে ধরে বলে)

নিরব:এই হাতে মৃত্যু ও যে আমার কাছে সোভাগ্যের ব্যাপার।
(প্রভার হাত ধরে কথাটা বলে এবং ওর হাত টা বুকের মাঝে চেপে ধরে।প্রভাও মুচকি হেসে জাপটে ধরে নিরব কে।)

বর্তমান—-
দেওয়ালে থাকা ঘড়ির টুং টুং শব্দে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো নিরব।আনমনেই মুচকি হাসলো সে,অতঃপর তার দিয়াপাখির ছবি চোখের সামনে তুলে ধরে।

নিরব:হ্যাপি ফার্স্ট মিট এনিভারসারি দিয়াপাখি। তুমি ভুলে গেলেও আমি কিন্তু ভুলিনি।আজ থেকে সাত সাতটে বছর আগে এই দিনেই তো প্রথম সেই রুপসি কে দেখেছিলাম আমি।ভাগ্যেস সেদিন তুমি বেখেয়ালি করে তাড়াতাড়ি হাটছিলে নাহলে তো তোমার সঙ্গে অমন অদ্ভুতভাবে দেখাও হলো না।
আবারো মুচকি হাসলো নিরব।ছবিটি রেখে দিয়ে হাতে থাকা একটি নুপুড় তুলে ধরলো।এই নুপুড়টা সেদিন প্রভা সামান্য হোচট খাওয়ায় খুলে পড়ে গিয়েছিলো।নিরব এটা নিজের অজান্তেই যত্ন করে রেখে দিয়েছিল।

নিরব:বড্ড মিস করি দিয়াপাখি।আমার সেই ছোট্ট দিয়াপাখি কে।যেই দিয়া পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া আমার সঙ্গে ঝগড়া করতো সেই দিয়া কে,১০ টাকার জন্য শত লেকচার দিতো সেই দিয়াকে, মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার আবদার করতো সেই দিয়াকে,আমাকে হাজারো উদ্ভট নাম দিতো সেই দিয়া কে,রাতের আধারে বাহিরে ঘুড়তে যাওয়ার বায়না ধরতো সেই দিয়াকে। সেই দিয়াপাখি কে আমি বড্ড মিস করি,তার করা প্রতিটা কাজ কে মিস করি আমি।
তোর প্রতিটা আবদার পূরণেও যে এক অন্যরকম আনন্দ পেতাম আমি দিয়াপাখি।সেই সময়টা কি থেকে থাকতে পারতোনা?চাইলেই কি সেই সময়টাতে ফিরে যেতে পারি না?একটিবার কি যাওয়া যায় না সেই সময়টাতে?যদি যেতে পারতাম তাহলে তোকে হৃদমাঝারে শক্ত করে আকড়ে ধরে থাকতাম।কোথাও যেতে দিতাম না।
একবার ও তোর মিঃ চঞ্চল এর কথা ভাবলিনা তাই না?সে যে তার দিয়াপাখি ছাড়া অসম্পূর্ণ। তুই বুঝতে পারলিনা তাই না?
নুপুড় টা বুকে আকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো নিরব।চোখে জমে থাকা অশ্রু এবার গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে।আপনমনেই বলে উঠলো সে,

নিরব: ~~হাজার পূর্ণতা পেয়েও যে,
অসমাপ্ত রয়ে গেলো সপ্ন🥀
তবুও যে প্রতি মুহূর্তে,
দেখি শত নতুন সপ্ন
আজ পাশে নেই তুমি,
তবে তাতে কি?
তুমি নাহয় আমার~
আড়ালে অনুভবে ই থেকো🌼🥀

______🌼
উজ্জ্বল এর মুখে প্রথার নাম শুনে বিষ্মিত হলো ইশা।ভ্রুযুগল কুচকে বলে উঠিলো,

ইশা:তুমি কি করে জানলে।

উজ্জ্বল:নিশ্চুপ (এখনো নিচের দিকেই তাকিয়ে আছি)

ইশা:আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি উজ্জ্বল! তুমি কি করে সিনিথুর নাম জানলে?

উজ্জ্বল:হ্যা,ন না ত তুমি ই তো বললে।

ইশা:আমি কখন বললাম?

উজ্জ্বল:তুমি ই বলেছিলে একটু আগে।তোমার হয়তো বা মনে নেই।

ইশা:ওহ।

উজ্জ্বল:আশা করি তোমার অতীত সম্পর্কে আর কিছু বলার নেই?

ইশা:(মাথা নাড়িয়ে না জানালো)

উজ্জ্বল:আমি তোমার থেকে জানতে চাই নি তবুও তুমি বললে।কিন্তু তাতে আমার মনে সামান্যতম সংকোচ জাগেনি।বরং তোমার প্রতি শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেছে।যেই মেয়েটা ছোট বেলা থেকে এতো কিছু সজ্য করতে পারে এমনকি বিয়ের পর ও এতকিছু সজ্য করে তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তাকে নিয়ে কোনো সংকোচ থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

ইশা:নিশ্চুপ

উজ্জ্বল:আমি তোমায় বলেছি ইশা,তোর উপর আমি কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছিনা।আমি শুধু তোমার মতামত জানতে চাইছি।যদি তোমার মতামত না ও হয় তবুও আমাদের সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে।

ইশা:আমার এ একটু সময় চাই উজ্জ্বল।

উজ্জ্বল:ফাইন,তুমি যত ইচ্ছে সময় নেও এবং ভেবে চিনতে উত্তর দাও।

ইশা:আ আজকে ক কয় তারিখ?

উজ্জ্বল:২২ মেবি।(রাত ১২ টার পর)

ইশা:(আজকের দিনটা আমার জীবনের সমচেয়ে বিষাক্ত দিন।মনে রাখতে চাইনা তবুও কেনো মনে পরে যায়!কেনো ইচ্ছে করে আবারো সেই সাত বছর আগের সময়টাতে ফিরে যেতে?যদি আবারো ফিরে যেতে পারতাম তাহলে কখনো অমন একজন মানুষের সঙ্গে নিজের জীবন জড়ানোর মতো ভুল করতাম না।নাই তাকে ভালোবাসার মতো ভুল করতাম।)মনে মনে

দুজন মানুষ ই দুদিক থেকে দিনটিকে মনে রেখেছে।দুজনেই ভাবনায় আজ সেই প্রথম দেখার দৃশ্য রয়েছে।কিন্তু দুজনের চিন্তা আজ ভিন্ন।একজন চাইছে তার প্রেয়স্যার স্মৃতি আকড়ে ধরে রাখতে,জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।অন্যদিকে আরেকজন চাইছে সকল স্মৃতি মুছে ফেলতে!🥀
হয়তো বা দুজনের চিন্তা ভিন্ন ই রয়ে যাবে বাকি জীবন টাতে••

______🌼
কিছুক্ষণ আগেই বাড়ি ফিরলো উজ্জ্বল এবং ইশা।উজ্জ্বল রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে রোজকার মতো ব্যালকনি তে এসে দাড়িয়েছে।আজও তার হাতে একই ছবি।

উজ্জ্বল:এতো বছর তোমায় ভুলে যেতে চেয়েছি আমি কিন্তু পারিনি।সবকিছুর মাঝেই সামান্যতম সবকোচ থেকে যেতো,মনে হতো আমি ভুল করছি না তো?কিন্তু না আজ সেই সকল চিন্তা দূড় হয়ে গেছে।এতদিন তোমায় খারাপ ভাবতাম।কিন্তু আজ থেকে তোমায় আমি ঘৃণা করি,আই জাস্ট হেট ইউ।তোমার মতো মেয়েরা না কাউকে ভালোবাসতে যানে আর নাই কারোর ভালোবাসার দাম দিতে জানে।আমার নিজের উপর ঘৃণা লাগছে আমি কিনা তোমায় ভালোবেসেছিলাম!

কথাটা বলেই হাতে থাকা ছবিটি টুকরো টুকরো করে বাহিরে ফেলে দেয়।

উজ্জ্বল:আজ এই ছবির মতো তোমার প্রতি থাকা আমার সকল অনুভুতি ও ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে প্রথা।যা চাইলেও জোড়া লাগানো সম্ভব নয়।

_________🌿

“আপু দাড়া প্লিজ,আপু,আপু সরে যা ওখান থেকে।”
একটি মেয়ে পাগলের মতো দৌড়োচ্ছে এবং চিৎকার করে বলছে কথাগুলো কিন্তু অপর মেয়েটির কানে কিছুই যাচ্ছে না।হঠাত করেই মেয়েটি খেয়াল করো সামনে থেকে একটি বঅড় গাড়ি আসছে।দৌড়োতে থাকা মেয়েটি চিৎকার দিয়ে বললো,”আপুউউউউ” কথাটা বলেই আরো দ্রুত দৌড়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো অপর মেয়েটিকে।পরক্ষনে সামনে তাকাতেই চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো…

সিনথিয়া:নাহহহহহ… (চিৎকার করে ঘুম।থেকে উঠে বসলো)

সিনথিয়া:আপু সরে যা প্লিজ,আপুউউউ..

সিনথিয়া চিৎকার শুনে সুপ্তি ধরপরিয়ে উঠে বসলো।
সুপ্তি:কি হয়েছে সিনথু!শরীর খারাপ লাগছে!

সিনথিয়া:নাহহহ,আপু.. (কানে হাত দিয়ে কাদতে কাদতে একই কথা বলে যাচ্ছে)

সুপ্তি ব্যাপার টা বুঝতে পেরে নিজে মুখ চেপে ধরে কান্না নিয়ন্ত্রন করে।সিনথিয়া কে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগে।

সুপ্তি:চুপ কর বোন।তোর আপু নেই এখানে।

সিনথিয়া:আ আপু কে আটকাও ভাবি।ও আমার কথা শুনছে না কেনো!..
কাদতে কাদতে কথাগুলো বলতে বলতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।সুপ্তি সাবধানে ওকে শুইয়ে দেয় বিছানায়।

সুপ্তি:কেনো আল্লাহ?পৃথিবীতে ভালো মানুষদের ই কেনো তুমি এভাবে কষ্ট দেই?কেনো এদের দুই বোন কে তুমি এভাবে আলাদা করে দিলে!

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে