#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ২০
রোদেলা:সূর্য!কোথায় গেলি বাবা তাড়াতাড়ি আয়।ধুর কি যে করছে ছেলেটা,সূর্য এবার কিন্তু মার খাবি।কি ক..
(বলতে বলতে রুমে ঢুকে দেখলো ছয় বছর বয়সের সূর্য একটা এলবাম হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকে কিছু দেখছে)
রোদেলা:সূর্য?কি দেখছিস এভাবে?
সূর্য এবার মায়ের দিকে তাকিয়ে এলবাম এর একঅটা ছবি দেখিয়ে বললো।
সূর্য:আম্মু এটাই কি আমার প্রতিভা আন্টি?
মুহূর্তেই মুখটা মলিন হয়ে গেলো রোদেলার।ছবিটাতে রোদেলা,প্রভা,সিনথিয়া,দিপ্তি চারজন একসাথে আছে।
রোদেলা:ত তুই কি করে জানলি এটা প্রভা?
সূর্য:আমার নিরব আঙ্কেল বলেছে।
রোদেলা:কি বলেছে?
সূর্য:আমি যখন আঙ্কেল এর রুমে খেলছিলাম তখন আঙ্কেল আমাকে ওর আর প্রতিভা আন্টির ছবি দেখিয়ে বলে এটা নাকি আমার আন্টি। আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম আন্টি তোমার সাথে থাকেনা কেনো?তখন আঙ্কেল বললো আন্টু নাকি তার উপর অনেক রেগে আছে।তাই তার সাথে কথা বলেনা।জানোতো আম্মু,এই আন্টি টা খুব পচা।আন্টির জন্য আঙ্কেল অনেক কষ্ট পায়। আমি একবার আন্টিকে সামনে পাই,এত্তগুলো বকা দিয়ে দিবো।
রোদেলা:তোর আন্টি পচা না রে সোনা।তোর আন্টি খুব ভালো,খুব ভালো।
কথাটা বলেই মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে গেলো।সূর্য পিছন থেকে ডাকলেও কোনো উত্তর দিলো না।সূর্যের মন টা খারাপ হয়ে গেলো।সে এমন কি বললো যার জন্য তার মা কাঁদছে।
ঠিক তখনি রুমে ঢোকে রোদ্দুর।আব্বু কে দেখেই বিছানা থেকে ছুটে এসে তার কোলে ওঠে সূর্য।
সূর্য:আব্বু আম্মু কি আমার উপর রাগ করেছে?আম্মু ওভাবে কাদছিলো কেনো বলো না।
রোদ্দুর:আম্মু তোমার উপর রাগ করেনি সোনা। আসলে তোমার আম্মু আন্টি কে খুব মিস করছে তাই।
সূর্য:তাহলে আন্টি কেনো সবার থেকে দূড়ে থাকে, আমাদের কাছে আসে না কেনো?
রোদ্দুর:তোমার আন্টি যে চাইলেও আসতে পারবে না সোনা।
সূর্য:কেনো আসতে পারবে না?এই জন্যই তো আন্টি অনেক পচা।আন্টির জন্য আঙ্কেল এতো কষ্ট পায়,আম্মুও কষ্ট পায় তারপর ও আন্টির রাগ ভাঙেনা,পচা আন্টি। (মুখ ফুলিয়ে বললো)
রোদ্দুর:এমনভাবে বলতে নেই শোনা।তুমি তো ছোট তাই বুঝবেনা।আগে বড় হও তাহলে সব বুঝতে পারবে।এখন যাও তুমি গিয়ে খেলা করো।
সূর্য এবার রোদ্দুর এর কোল থেকে নেমে ছুটে খেলতে চলে যায়।রোদ্দুর খাটের পাশে গিয়ে এলবাম টা হাতে নেয়।সেই ছবিটার উপর হাত বুলিয়ে নেয়।
রোদ্দুর:সত্যি ই,সূর্যের মতো আমারো তোমার উপর খুব রাগ হচ্ছে প্রতিভা।তুমি নিজে তো চলেই গেলে কিন্তু তার সঙ্গে আরেকজন মানুষকে জীবিত অবস্থাতেয় মৃত বানিয়ে গেলে।
এলবাম টা বন্ধ করে রেখে দেয় রোদ্দুর।চশমা টা খুলে চোখের কার্নিশে জমে থাকা জল মুছে নেয়। পা বাড়ায় রুমের দিকে।সে জানে রোদেলা নিশ্চই এখন কাঁদছে।তাকেই এখন রোদেলা কে সামলাতে হবে।
_____”,,🌿,,”
মাথা ব্যাথা এখনো পুড়োপুড়ি কমেনি নিরব এর। তার উপর অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে থাকায় আরো বেশি বিরক্ত লাগছে তার।মাথা চেপে ধরে উঠে বসে সে।বেশিক্ষন শুয়ে থাকায় মাথা খানিকটা ভার হয়ে আছে।উঠে দাঁড়িয়ে যেই দু পা হাটতে যাবে তখন ই তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নেয়।যদিও এক হাত দিয়ে খাট ধরে ফেলে সে। ঠিক সেই মুহূর্তেই অপর হাতে কারোর স্পর্শ অনুভব করে।এই স্পর্শ সাধারণ স্পর্শ নয়,এ যেনো তার খুব চেনা স্পর্শ।শরীরের মধ্যে অদ্ভুত শিহরণ দিয়ে ওঠে তার।
অপরদিকে প্রভার(ইশা কে এখন থেকে তার আসল পরিচয় মানে প্রভা নামেই বলবো)ও একই
অবস্থা।শরীর কেপে ওঠে তার।পাচ বছর পর সেই চেনা স্পর্শ সে সজ্য করতে পারছে না।চোখ খিচে বন্ধ করে ঘনঘন নিশ্বাস নিতে থাকে।অনেক কষ্টে নিজেকে ঠিক রেখে নিরব এর দিকে তাকায়।
দেখে নিরব তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আবারো শ্বাস আটকে আসে প্রভার।চট করে চোখ নামিয়ে নেয় সে,আচ্ছা নিরব ওকে চিনতে পেরে গেলোনা তো?না না এ কি করে সম্ভব।কথাটা ভেবেই আবারো নিজেকে শান্ত করে নিরব বেড এ বসিয়ে দেয়।
প্রভা:আপনি জানেন আপনার শিরীর কতটা দূর্বল?এখনি তো পরে যাচ্ছিলেন।
নিরব:নিশ্চুপ..
জিসান:আরে ইশা,ভালোই হলো তুমি চলে এলে। নিরব মিট হার, ডঃ মাহমুদা তাসনিম ইশা। ওনার কথাই বলেছিলাম তোমায়,আর ডঃ উজ্জ্বল কে তো তুমি দেখেছোই। (দড়জা থেকে ঢুকে বলে)
নিরব:ও ওহ..
কথাটা বলেই প্রভার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো নিরব।কেমন অদ্ভুত লাগছে ওর।মনে হচ্ছে এই স্পর্শ তার খুব ভালো করে চেনা।এই চোখ ও যেনো তার খুব চেনা,একদম তার দিয়াপাখির মতো।ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে নিরব।এসব কি ভাবছে সে।
নিরব:নাইস টু মিট ইউ ডঃ ইশা (হ্যান্ডসেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে বলে)
ইশা:(কাপা কাপা হাতে হ্যান্ডসেক করে)
জিসান:ওকে ইশা তুমি নিরব এর সঙ্গে পরিচিত হও আমি আজ আসি। (বলেই বেড়িয়ে যায়)
ইশা:আপনি কিন্তু উত্তর টা দিলেন না ডক্টর। নিজে একজন ডক্টর হয়ে নিজের ভালো টাই বোঝেন না।
নিরব একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।এই হাসির মানে বুঝতে পারলো না প্রভা তবে এই হাসি তাকে ভিতরে ভিতরে দুমরে মুচরে শেষ করে দিচ্ছে।
ইশা:হ হাসছেন কেনো?
নিরব:নিজের ভালোটা বুঝলে হয়তো আজ অনেকটাই ভালো থাকতে পারতাম ডক্টর।নিজের ভালোটা বুঝিনি বলেই হয়তো আজ এতোটা একা। (অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো)
প্রভা এবারো নিরব এর কথার মানে বুঝতে পারলো না।অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিরব এর পানে।
নিরব:এনিওয়ে,আমি যেহেতু এখন আপনার আন্ডারে তাই আপনাকেই রিকুএস্ট করছি।ডিসচার্জ করে দিন আমায় প্লিজ।কালকেই দুজন পেশেন্ট এর ওটি করা খুব ইম্পরট্যান্ট।আর আমি তো এখন অনেকটা বেটার।শুধুশুধু এখানে থেকে কি করবো।
ইশা:আপনার নিজের এই অবস্থা আর আপনি অন্যের কথা ভাবছেন?
নিরব:যাদের দিকে তাকিয়ে নিজে বেচে আছি তাদের কথা ভাববোনা বলছেন?
ইশা:মানে?
নিরব:আমার পেশেন্ট দের নিয়ে ব্যাস্ত থাকি বলেই তো আজ বেচে আছি।আর তাদের নিয়ে না ভেবে থাকি কি করে বলুন তো?আমি তো আর এমন নয় যে হাটা চলা করতে পারছি না।আমি তো এখন ঠিক আছি,আম ফাইন।আর তাছাড়াও যে কটাদিন আছি তাতে যদি কারোর জীবন বাঁচাতে পারি তাহলে আমি ই খুশি হবো।
ইশা:এসব কি বলছেন আপনি?পাগল হয়ে গেছেন? ক কিচ্ছু হবে না আপনার। (বেশ জোড়ে বলে)
নিরব:(ইশার এমন কথায় খানিকটা অবাক হয় তবুও বেশি ভাবেনা)আচ্ছা সেসব বাদ দিলাম। এখন বলুন ডিসচার্জ দেবেন আমায়?
ইশা:আ আজ রাতটা থাকুন।কাল সকালে দিয়ে দিবো।আপনি ঘুমিয়ে পরুন আমি আসছি।
কথাটা বলেই কেবিন থেকে বেড়িয়ে পরে প্রভা। এতক্ষনে মন ভরে নিশ্বাস নিতে পারছে।এতক্ষন নিরব এর সামনে থেকে যেনো দম আটকে আসছিলো তার।
অনেক ভাবার পর সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিরব এর চিকিৎসা করবে।জীবনে অনেক যুদ্ধের সম্মুখিন হয়েছে।আর একটা যুদ্ধের সম্মুখিন ও নাহয় হবে। এ যুদ্ধে আদতেও জিততে পারবে কিনা জানে না। তবে সে তার সম্পূর্ন টা দিয়ে চেষ্টা করবে।কিন্তু এই সবটাই ইশার পরিচয়ে।সম্মুখে থেকেও কেউ তাকে চিনতে পারবে না।তার আসল পরিচয় সে কখনই সামনে আনবে না।
_______🌿
জানালার ধারে দাঁড়িয়ে সিগারেট এর ধোয়া ওড়াচ্ছে উজ্জ্বল।খুব মনে পরছে আজ সেই প্রিয় মানুষটির কথা।শত বার ভুলতে চেয়েও পারছে না ভুলতে, বারংবার আড়ালে অনুভবে উকি মারে সেই মানুষটি।যাকে ভুলে যাওয়ার জন্য দেশ ছাড়লো,তবুও তো ভুলতে পারলো না।
চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে উজ্জ্বল। আকাশের দিকে তাকিয়ে আপনমনেই গাইতে শুরু করে–
~~তুমি সাইকেল চালানো শিখবে তাই
আমি আজো সাইকেলে ঘুরে বেড়াই
শুধু ছলনায় তোমার ছোঁয়া মেলেনা
তুমি কবিতাগুলো পড়বে তাই আমি
আজো রাত জেগে ছন্দ সাজাই
রাত শেষে শুধু ভোর ফিরে আসে না
আমি তোমাকে বুঝিয়ে দেবোই তাই
ব্যাগে আজো রাখি পিজিক্স বই
শুধু তুমি নেই তাই বইটা খুলি না
তুমি ছুঁড়ে ফেলে দিবে এই ভয়ে
আমি সিগারেট আজো লুকিয়ে শুধু
এখনতো কেউ বারণ আর করে না______
_____তুমি চশমাটা খুলে রাখবে তাই
আমি আজো ভুল করে পেছনে তাকাই
শুধু কালো ওই চোখ দুটো দেখিনা
আমি আজো আনমনে হারিয়ে যাই
তাই ভুল করে এই হাতটা বাড়াই
শুধু তোমার কোমল ছোঁয়া মেলেনা
তুমি লিখবে আমায় এই ভেবে আমি
আজো করি অপেক্ষা তবে
অপেক্ষার শেষ কবে জানিনা
তুমি ভাবনা আজ আমায় নিয়ে আমি
স্মৃতিগুলকেই জড়িয়ে শুধু
নতুন করে স্বপ্ন দেখিনা
তুমি এতো সহজে ভুলতে পারো
অন্য কাউকে জড়িয়ে ধরো
আমি কেনো শুধু ভুলে যেতে পারিনা
আজ অবাক লাগে তোমায় দেখে
আমায় আজ তোমার অচেনা লাগে
এতো ভালো অভিনয় কেনো জানিনা?
তুমি এতো সহজে ভুলতে পারো
আমি কেনো শুধু ভুলে যেতে পারিনা~~
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে উজ্জ্বল।হাতে থাকা ছবিটি চোখের সামনে ধরে বলে,
উজ্জ্বল:সবাই নিজেদের জীবনে মুভ অন করতে পারে।তুমিও করেছো,তবে আমি কেনো পারবো না?ছেড়ে তো দিয়েছি তোমায়,আটকাইনি তো।নিজের মতোই তো আছো।তাহলে কেনো বারবার আমার আড়ালে অনুভবে তে চলে আসো?
তবে আর নয়।এবার আমিও মুভ অন করবো জীবনে।তবে তোমার মতো প্রতারকের সঙ্গে নয়। এমন একজনের সঙ্গে যে মানুষকে ঠকায় না,যে তোমার মতো নয় তার সাথে,হ্যা হ্যা তার সাথে..
#চলবে
[রিচেইক করা হয়নি।ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
ধন্যবাদ❤️]