আরশিকথা পর্ব-০৪

0
772

আরশিকথা-৪

আরো কয়েকদিন পরের কথা , সুপ্রভা বন্ধুদের সাথে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ পিয়া বলল, দেখ দেখ সুপ্রভা!

সুপ্রভা দেখল, তিন রাস্তার মোড়ে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে সাইকেল থামিয়ে শুভ্র একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে!

সুপ্রভার কেমন যেন লাগল! আশ্চর্য বিষয়! কেমন লাগবে কেন! না হয় দুষ্টুমি করে বার দুয়েক দীপ্রর সাথে ওনাকে দেখতেই বাসায় গিয়েছে, তাই বলে এমন লাগবে! তাও তো ছেলেটা ফিরেও তাকায় নি! জানবে কিভাবে সুপ্রভা কি ভাবছে!

-আরেএএ, সুপ্রভা, তোর হিরো তো আরেক হিরোইন জোগাড় করে ফেলল! তুই তো ভিলেন হয়ে গেলি!

সুপ্রভা আরেকবার তাকিয়ে দেখল শুধু৷ চৈতির কথার উত্তর দিতে ইচ্ছে করল না। ভীষণ দম বন্ধ করা একটা অনুভূতি, অথচ এমন তো হবার কথা নয়! এই ছেলেটাকে আগে কখনো দেখেই নি! এতদিনে এবারই বাসায় এলো। তার জন্য মনে হচ্ছে, বুকের ভেতর তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে!

তন্বী আরো কিছু বলার চেষ্টা করল, তবে সুপ্রভা থামিয়ে দিলো।
– বাদ দে তো, ভালো লাগছে না।

সুপ্রভা আরো একবার তাকাল। কোনোভাবে এবারে শুভ্রও তাকিয়ে ফেলল। দৃষ্টি বিনিময়ে কোনো ভাষা না থাকলেও হয়তো অন্য কিছু নিশ্চয়ই ছিল!

শুভ্র একটু মুচকি হাসল। সুপ্রভাকে ডেকে কথা বলবে ভাবতেই ভাবতেই সৌজন্য না করেই সুপ্রভা দ্রুত হেঁটে চলে গেল।

পরের দিন সকাল সকাল বাংলা মিসের ব্যাচ। সকাল ছয়টায় মেয়েরা পড়ে, তারপর ছেলেরা। সুপ্রভা বের হয়েছে কেবলি৷ এত ভোরে রিক্সা ভ্যান কিছুই থাকে না। হেঁটেই যাচ্ছিল, পেছনে টুংটাং আওয়াজে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল, সাইকেলে শুভ্র!

-হ্যালো সুপ্রভা!

-হাই! আপনি? এখানে?

-কেন, কোনো সমস্যা?

-না, সমস্যা কেন হবে! এত সকাল সকাল, তাই! কোথাও কাজে যাচ্ছেন?

– না, তোমার কাছেই এসেছি। তোমাকে একটা কথা জানাতে এলাম!

-আমাকে?

-হ্যা তোমাকে। কালই বলতাম, কিন্তু তুমি কেমন রেগে গিয়ে হন হন করে হেঁটে গেলে!

সুপ্রভা বিব্রত হয়ে বলল, রেগে যাব কেন, এমনিই, কাজ ছিল বলে দাঁড়াতে পারিনি।

-তাই, কাজ ছিল? তা কি এমন কাজ ছিল, যে একটু কথাও বললে না!

– আরে আশ্চর্য তো, আমি কি আপনার সাথে আগে কথা বলেছি, তাছাড়া চোখ পড়ে গিয়েছিল, আপনি বুঝতে পারিনি।

– আমি কিন্তু বুঝেছি, তুমি রেগে আমার দিকে দেখছিলে, যেন পারলে ঝাঁপিয়ে পরে আমাকে মাইর দিবে!

-আশ্চর্য, মোটেও এমন কিছু না। আপনি কেন এসব বলছেন!
-বলছি যখন তখন নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।

– কারণ আছে?

-হুম, কষ্ট করে অহেতুক নোট টোকার নাম করে আর আমাদের বাসায় যেও না, আমি আজ চলে যাচ্ছি। তোমার জন্য বেচারা দীপ্র কেস খেয়ে যাচ্ছে মায়ের কাছে!

সুপ্রভা বলল, মানে?

শুভ্র হেসে বলল, আমি আবার সামনের মাসে পুজোর ছুটিতে আসব। কী কী নোট নিতে হবে লিস্ট করে রেখো। আর মানেটা তুমি যেমন জানো, দেয়ালের আয়নাটা আমাকেও জানিয়ে দিয়েছে!

সুপ্রভা কিছু বলার আগেই শুভ্র চলে গেল সাইকেল নিয়ে।

সুপ্রভা ইতস্তত করল, মানে কি, আয়নায় কি দেখেছে শুভ্র, সুপ্রভা যে ওকে দেখেছে সেটা! কেমন কথা এটা!
সুপ্রভার মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। কেমন যেন উদাসীন লাগে, ফাঁকা ফাঁকা লাগে সব কিছু, পথঘাটে ভীষণ ভীড়েও মনে হয় কেউ নেই!

★★★

-এই প্রভা, কি ভাবছিস বসে বসে? মায়ের ডাকে প্রভা উঠে বসল।

-কিছু না মা, পিয়াদের বাসায় যাব।

-কখন?

-এই তো!

দীপ্র ফোন করছে, সুপ্রভা রিসিভ করল।

পিয়াদের বাসায় কখন যাবি?

দেখি, শাওয়ার নিয়ে রেডি হবো।

আমি নিতে আসব, রেডি হয়ে ফোন করিস।

-কোনো দরকার নাই দীপ্র। আমি চলে যাব অটো ডেকে। তুই তোর মত চলে যা।

সে দেখা যাবে৷ ঘন্টাখানেক পরে দীপ্র আবার ফোন করল, তোর বাসার সামনে আমি, বের হ এখন! আর কত সাজবি!

সুপ্রভা ভেজা চুল গুলো ড্রাই করে নিচ্ছিল। আজ আর শাড়ি পরতে ইচ্ছে করে নি। টি শার্টের সাথে জিন্স পরে নিয়েছে।

বের হয়ে দেখল শুভ্র ড্রাইভিং সিটে বসা। দীপ্র বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।

শুভ্র তাকালো না প্রভার দিকে।

দীপ্র হেসে বলল, আমি ভাবছিলাম, আজ কি শাড়ি পরবি!

প্রভা হেসে বলল, রোজ রোজ শাড়ি আমার পোষায় না। ওইদিন তো তোর বার্থডে ছিল।

শুভ্র এবার তাকালো। এরকম পোষাকে সুপ্রভাকে আগে কখনো দেখে নি। আগে পরতও না। তাছাড়া এই মফস্বল এলাকায় এটা কোনো মানানসই পোশাক নয়!

দীপ্র, গাড়িতে ওয়াটার বটল তুলি নি। একটা পানি কিনে আন তো সামনের শপটা থেকে।

শুভ্র ভেতরে বসেই বলল।

সুপ্রভার একবার মনে হলো৷ বলে আমি নিয়ে আসতেছি। পরে মনে হলো, শুভ্রর সাথে একটাও বাড়তি কথা নয়!

দীপ্র চলে যেতেই শুভ্র বের হয়ে এলো।

সুপ্রভাকে বলল, এটা কী কোনো ফ্যামিলি গ্যাদারিংয়ে যাওয়ার মত পোশাক?

-মানে?

-মানে বলছি, এই পোশাকটা এই বাসার জন্য উপযুক্ত নয়!

সুপ্রভা ভীষণ রেগে গিয়ে বলল, কারো পোশাক নিয়ে কথা বলা কুরুচির পরিচয়!

-তর্ক না করে ভেতরে যাও, চট করে পোশাক পাল্টে এসো।

-শুভ্র, আপনি আপনার অধিকারের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। আপনার সাথে আমার যা ই ছিল, সেটা অতীত, সেখানে কোনো কথা বাকি নেই আমাদের। আর আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।

শুভ্র একটা সিগারেট ধরালো৷ দীপ্র চলে এসেছে।
-ভাইয়া, তুমি না অনেক বেশি স্মোকিং করছ!

শুভ্র বলল, হুম, অভ্যাস হয়ে গেছে। তোরা উঠে বস।

দীপ্র সুপ্রভাকে দরজাটা খুলে দিলো, সুপ্রভার কিছু করার ছিল না।এই মুহুর্তে না বলা যায় না।
ও উঠে বসল কারে। দীপ্র পাশে বসল সুপ্রভার, বসে বকবক করতে শুরু করল।

সুপ্রভা আর কোনো কথা বলল না।
পিয়াদের বাসায় গিয়ে শুভ্র সুপ্রভাকে ভালো করে দেখল, দেখল বলতে ওকে এত আকর্ষণীয় লাগছিল, বার বার দৃষ্টি চলে যাচ্ছিল প্রভার দিকে। এবারে কোনো নরম দৃষ্টিতে নয় দেখল না শুভ্র , পুরুষালী দৃষ্টিতে তাকালো । সুপ্রভার শরীরের প্রতিটি ভাঁজে দৃষ্টি বুলিয়ে ভাবল, আমি এভাবে দেখছি, অন্য ছেলেরা কীভাবে দেখবে! জিদ করার আর বিষয় পেল না!

চলবে

শানজানা আলম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে