অফিস থেকে ফিরে এসে দেখি শ্রাবণী রান্না করছে। এই গরমের মাঝে রান্না করার ফলে শ্রাবণীর মুখটা একদম গোলাপি হয়ে গেছে।
আর ওর কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা গুলো দেখে ইচ্ছে হচ্ছে নতুন করে আবার ওর প্রেমে পড়ি। আমি চুপিচুপি ওর কাছে গিয়ে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
— ভাবছি সামনের মাসে বেতন পেলে রান্না ঘরে এসি বসাবো।
শ্রাবণী তখন ওর কুনুই দিয়ে আমার বুকে আঘাত করে বললো,
~ এই গরমের মাঝে তোমার এই ঢং আমার ভালো লাগে না। ফ্রেশ হয়ে এসো আমি টেবিলে খাবার দিতেছি..
অনেকদিন ধরে শ্রাবণীর সাথে ঝগড়া হয় না।সত্যি বলতে ওর সাথে ঝগড়া না হলে আমার ভালো লাগে না। আজ ইচ্ছে করছে ওর সাথে ঝগড়া করতে। তাই ওর চোখের আড়ালে ওর রান্না করা তরকারীতে অনেকটা লবণ মিশিয়ে দিলাম।
যখন খেতে বসি তখন খাবারটা মুখে নিয়েই আমি চিৎকার করে বলতে লাগলাম,
— এইসব কি রান্না করেছো? লবণে একদম তিতা বানিয়ে ফেলেছো। বড়লোকের মেয়েদের এজন্যই বিয়ে করতে নেই। ওরা রান্না বান্না কিছুই পারে না।
শ্রাবণী আমার কথা শুনে কিছুই বললো না।চুপচাপ রান্না ঘরে চলে গেলো। রান্নাঘর থেকে বড় বটি দা টা এনে টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বললো,
~চুপচাপ তারকারী দিয়ে ভাতগুলো খেয়ে নাও। তুমি যে তরকারীতে লবণ দিয়েছো সেটা আমি আড়চোখে দেখেছি। আমি এই গরমের মাঝে কষ্ট করে রান্না করবো আর তুমি তা নষ্ট করবে তা তো হবে না। চুপচাপ খেয়ে নাও তা না হলে আজ রাতে আমি বিধবা হয়ে যাবো..
শ্রাবণীর কথা শুনে ভয়ে আমার দম আটকে গেলো। এই মেয়েকে বিশ্বাস নেই। পরে দেখা যাবে সত্যি সত্যি দা দিয়ে আমাকে কেটে ফেলবে। আমি অনেক কষ্টে কোন রকম প্লেটের ভাতগুলো পেঠের ভিতর ঢুকালাম।
খাওয়া শেষে যখন চলে যাবো তখন শ্রাবণী বললো,
~এই তরকারীটা যতদিন শেষ না হবে ততদিন এই তরকারী দিয়ে তোমার ভাত খেতে হবে। তরকারী রান্না করতে যে একটা মেয়ের কতটা কষ্ট হয় সেটা তুমি বুঝবে না। তাই এটা তোমার শাস্তি…
মাঝ রাতে মনে হলো কে যেন আমায় ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিয়েছে। আমি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আমি ফ্লোরে পড়ে আছি আর শ্রাবণী বিছানার উপর বসে আছে।
আমি অবাক হয়ে শ্রাবণীকে বললাম,
— কি হলো তোমার? আমাকে এইভাবে বিছানা থেকে ফেলে দিলে কেন?
শ্রাবণী রাগে দাঁতের সাথে দাঁত চেপে বললো,
~নীলা মেয়েটা কে? ওর সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
— কোন নীলা?
~ ঘুমের মধ্যে বারবার যাকে বলছিলে, নীলা মন দাও সেই নীলা..
আমি শ্রাবণীর কথা শুনে হাসতে হাসতে বললাম,
— আরে নীলা হলো আমার অফিসের কলিগ। আমরা একসাথে কাজ করি। মেয়েটার অফিসের কাজে একদম মন নেই। তাই আমি ওকে বারবার বলি, নীলা মন দাও কাজে মন দাও। এজন্যই হয়তো আজ ঘুমের মধ্যে এটা বলে ফেলেছি।
শ্রাবণী রাগে চিৎকার করে বলতে লাগলো,
— কাজে মন দিতে বলো, না কি ওর মন দিতে বলো সেটা আমি পরে দেখে নিবো। এখন আপাতত আমার রুম থেকে বের হয়ে যাও…
সকালে যখন অফিসে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছি তখন দেখি শ্রাবণী একটা রান্না করার পাতিল আমার সামনে রাখলো। আমি অবাক হয়ে বললাম,
— এই পাতিলে কি?
শ্রাবণী শাড়ির আঁচলটা কোমরে পেচিয়ে বললো,
~ ২ঘন্টা ধরে গ্যাসের চুলায় জ্বাল দিয়ে এই পানিটা গরম করেছি। তুমি যদি অফিসে যাওয়ার জন্য সামনে এক পা বাড়াও এই পানি আমি তোমার শরীরে ঢেলে দিবো..
শ্রাবণীর কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেলো। তাই চুপচাপ অফিসের কাপড় পাল্টে শুয়ে রইলাম আর কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানি না। ঘুম ভাঙলো আমার ফোনের শব্দে। ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে একজন বলতে লাগলো,
-আমি গুলশান থাকা থেকে ওসি আরিফ রহমান বলছি। আপন কি পিয়াস বলছেন?
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
— জ্বি আমি পিয়াস বলছি।
~ আপনি তাড়াতাড়ি থানায় আসুন। আপনার স্ত্রীকে আমরা আটক করেছি।
এই কথা শুনার পর আমার মাথা ঘুরে গেলো। শ্রাবণী কখন বাসা থেকে বের হয়ে গেল, আর কি এমন করলো যার জন্য পুলিশ তাকে আটক করেছে।।
থানায় এসে দেখি শ্রাবণী জেলে বসে আপন মনে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে৷ আমি ওসি সাহেবের সামনে বসতে বসতে বললাম,
— স্যার, আমার স্ত্রীকে আটক করে এনেছেন কেন?
ওসি সাহেব বললেন,
– আপনার স্ত্রী অফিসে ঢুকে আপনার কগিল নীলাকে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছে আর অর্ধেক চুল কেটে ফেলেছে। মেয়েটা এখন হাসপাতালে ভর্তি।
আমি ওসি সাহেবের কথাশুনে যা বুঝার বুঝে গিয়েছিলাম। তাই ওসি সাহেবের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কিছু কথা বললাম। ওসি সাহেব আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে বললেন,
– আপনি তো দেখছি আমার মত ধরা খাইছেন।
আমি শ্রাবণীকে নিয়ে যখন থানা থেকে বের হই তখন শ্রাবণী আমায় বললো,
~ তুমি ওসি সাহেবের কানের কাছে কি এমন বললে, যে ওসি সাহেব আমাকে হাসতে হাসতে ছেড়ে দিলেন।
আমি তখন শ্রাবণীর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললাম,
— আমি বলেছি, তুমি যাকে মেরেছো সে তোমার সতীন হয়। রাতে আমি তোমার সাথে না ঘুমিয়ে ওর সাথে ঘুমিয়েছিলাম দেখে তুমি ওকে মেরেছো..
শ্রাবণী আমার কথা শুনে রাগে আগুন হয়ে বললো,
~ আজ তোমার খবর আছে।
আমি ছুটছি আর শ্রাবণীও আমার পিছন পিছন ছুটছে। আমি মনে মনে আল্লাহ তালার কাছে বলছি, এই পাগলি মেয়েটা যেন সারাটা জীবন আমার পিছনে ঠিক এইভাবে ছুটে…