আমার_প্রতিশোধ
পার্ট: ০২
তাসিন: এই অন্নি কি করেছ এইটা
–কি
–তুমি বিয়ের সাঝ পাল্টে এই জামা পড়েছ কেন
–আমার অস্বস্তি লাগছিল তাই
–মানে কি এইটুকু কষ্ট আমার জন্য করতে পারলা না
–না
–তুমি জানতে আমি তোমাকে বাসর ঘরে বউ সাঝে দেখতে চাই তাও তুমি চেঞ্জ করে নিলে
–হ্যা নিলাম
–এই অন্নি তুমি ঠিক আছ তো
–একদম
–তুমি কি আমার অন্নি
–উহু তোমার কখনো ছিলামই না
–পাগল হয়ে গেছ নাকি কি বলছ এসব আবুল তাবুল
–ঘুমাবো এতো চেঁচামেচি করো না তো
–ঘুমাবা মানে কি প্লেন ছিল আমাদের ভুলে গেছ
–দূর এসব প্রেম ভালোবাসা আমার ভালো লাগে না আর এই বাসর টাসর তো একদমই না
–এই অন্নি কি বলছ এসব তুমি কি সেই অন্নি যে অন্নি আমার ভালোবাসা পাবার জন্য পাগল ছিলে
–আগে পাগল ছিলাম এখন আর নেই
–অন্নি লক্ষীটি প্লিজ এসব ফাজলামো বাধ দাও আমার ভালো লাগছে না
–তোমার ভালো লাগলেই কি আর না লাগলেই কি আর হ্যা আমি কোনো ফাজলামো করছি না
–তারমানে আগে যে ভালোবাসা ছিল তোমার আমার প্রতি সেটা বিয়ে হবার সাথে সাথে কমে গেছে
–হ্যা
–তাহলে বিয়ে করলে কেন
–হাহাহা
–পাগলের মতো হাসছ কেন
–আমি পাগল তাই
–অন্নি তোমার মাথা ঠিক নেই তুমি ঘুমাও সকালে মাথা ঠিক হয়ে যাবে
–আমার মাথা ঠিকি আছে তাসিন চৌধুরী
–এই রাতটি নিয়ে তুমি আমাকে কতো স্বপ্ন দেখিয়েছ আর আজ এমন করছ
–হ্যা করছি আর শুনো আমি খাটে থাকবো তুমি ফ্লোরে থাকবে এইটা নিয়ে কোনো জামেলা করবে না
–মানে কি তুমি আমাকে ছাড়া ঘুমাবে তুমি না সবসময় বলতে বিয়ের পর আমার বুক ছাড়া ঘুমাবে না
–(রাগি চোখে থাকালাম)
–ঠিক আছে ফ্লোরে না ঘুমিয়ে সোফায় ঘুমাই আমি তো কখনো ফ্লোরে ঘুমাইনি ঠান্ডা লেগে যাবে
–আমি বলেছি ফ্লোরেই ঘুমাবা আমার কথা মতো না চললে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবো
–চুপ কি বলছ এসব তুমি হ্যা পাগল হয়ে গিয়েছ নাকি
–উফফফফ ঘুমাতে দিবা নাকি আমি অন্য রুমে চলে যাবো
–না না অন্য রুমে যেতে হবে না আমি ফ্লোরেই ঘুমুচ্ছি তুমি খাটে ঘুমাও
–ওকে
একটি বালিশ আর একটি বিছানা চাদর ছুড়ে নিচে দিলাম তাসিন অভাক হয়ে শুধু আমার দিকে থাকিয়ে আছে, এখন শুধু ওর অভাক হবার পালা শুধু ওর না এই পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষ অভাক হবে প্রতিদিন আমার নতুন নতুন কাজে, ওরা চাইলেও আমাকে ডিভোর্স দিতে পারবে না কারন আমি উকিলের কাছ থেকে জেনেই এসেছি ছয়মাসের আগে ডিভোর্স দেওয়া সম্ভব না আর এই চৌধুরী পরিবারের একটি নিয়ম আছে বাড়ির বউ কে কখনো বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় না, সবকিছু জেনেই এই বাড়িতে আমি এসেছি ওদের সবার সুখ তছনছ করে দেওয়ার জন্য
একবার নিচে থাকালাম তাসিন গুটিসুটি মেরে ফ্লোরে শুয়ে আছে হয়তো ঠান্ডা লাগছে লাগুক আমার কি, আমি বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম, সারা দিনের ক্লান্ত শরীর বিছানায় শুতেই ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলাম
সকালে গোঙানির শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো উঠে চারদিকে থাকিয়ে বুঝতে পারলাম ফ্লোরে তাসিন গোঙাচ্ছে, বিছানা থেকে নেমে দেখি তাসিন খালি ফ্লোরে শুয়ে আছে বিছানারচাদর গায়ে দিয়ে কাঁপছে, কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে, পড়লাম মহা মুশকিলে এতোটা ঠান্ডা লাগুক আমি চাইনি লেগেছে যখন কি আর করার ওকে টেনে হিছরে খাটে শুয়ে দিলাম মাথায় একটু সময় জলপট্টি দিলাম
তাসিনের জ্বর একটু কমেছে ঘুমিয়ে আছে ও তাই উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম
গোসল করে রুমে ঢুকতেই শুনি দরজায় কে যেন টোকা দিচ্ছে, দরজা খুলে দেখি ভাবি দুষ্টু হাসি হাসছে
–কি রাতে আমার দেবর বুঝি ঘুমাতে দেয়নি
–(মৃদু হাসলাম)
–সাহেব বুঝি এখনো ঘুমে (বলেই রুমের ভিতরে থাকালো বিছানায় চোখ পরতেই চিৎকার দিয়ে উঠলো)
–এই তাসিনের কপালে জলপট্টি কেন কি হয়েছে ওর
–তেমন কিছু না ভাবি সামান্য জ্বর এসেছে
–জ্বরে তো শরীর পুরে যাচ্ছে আর তুমি বলছ সামান্য
–(মনে মনে ভাবছি সকালে যে জ্বর ছিল তা দেখলে তো উপায় ছিল না এখন তো কমেছে)
–চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছ কেন যাও মা কে ডাক দাও
দূর ভালো জ্বালায় পড়লাম তো, মা কে ডাকার জন্য দরজার কাছে যেতেই দেখি সিড়িতে লাইন লাগানো নিচ থেকে মা বাবা তিথি চাকর বাকর সহ আত্মীয়স্বজন সবাই আমাদের রুমের দিকে আসছে, আমি রুমে এসে খাটের এক কোনে গিয়ে চুপ করে বসে রইলাম, মনে মনে হাসছি তাসিনের কষ্টে ওর মা বাবা এখন কাঁদবে আমি তো চাই ওরা কাঁদুক
রুমের মধ্যে এতো মানুষ যে একটু নড়াচড়া করার জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই, জ্বর উঠেছে সামান্য অথচ শহরের বড় ডক্টর কে আনা হয়েছে আহ্লাদে আর বাঁচি না উফফফ অসহ্য লাগছে এসব
ডক্টর তাসিনের জ্বর মেপে পাশে বসে আছে সবাই তাসিনের চোখ খুলার জন্য অপেক্ষা করছে
অনেক্ষণ পর তাসিন আস্তে আস্তে চোখ খুলে থাকালো, প্রথমেই আমার দিকে থাকিয়ে মিষ্টি একটি হাসি দিলো, খুব অভাক হলাম আমার জন্য অসুস্থ হলো অথচ আমার উপর ওর কোনো রাগ নেই
মা: তাসিন বাবা তোর এতো জ্বর আসলো কিভাবে (কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করলেন)
বাবা: সেই ছোট বেলায় তোর এমন জ্বর উঠেছিল আর উঠেনি উঠবে কিভাবে তোকে যেভাবে আগলে রেখেছি জ্বর তোর কাছেই আসতে পারেনি কিন্তু আজ এতো জ্বর আসলো কিভাবে
তিথি: আচ্ছা ভাবি ভাইয়ার এতো জ্বর এসেছে তুমি আমাদের ডাকোনি কেন
তাসিন: মা তোমরা শান’ত হও তো আর অন্নির কোনো দোষ নেই এতো রাতে ওর কি করার ছিল ও যতোটুকু পেরেছে করেছে সারা রাত আমার পাশে বসে মাথায় জলপট্টি দিয়েছে মেয়েটা আর কি করবে (ওর কথা শুনে তো আমার চোখ কপালে উঠে গেছে কি বলছে এসব)
মা: তোর জ্বর আসলো কিভাবে
তাসিন: (আমার দিকে একবার থাকালো তারপর আমাকে অভাক করে দিয়ে বললো) গতকাল বন্ধুদের সাথে ধুলোবালিতে একটু ঘুরাঘুরি করেছিলাম তো আর সারা দিনের ক্লান্ত শরীর ছিল তাই হয়তো জ্বর এসেছে
অভাক হয়ে ওর দিকে থাকিয়ে আছি কি বলছে তাসিন এসব ও কি পাগল, আমার জন্য ওর এতো কষ্ট হচ্ছে আর ও কিনা আমাকে সবার সামনে ভালো সাঝিয়ে দিলো, তাহলে কি আমি ওকে কষ্ট দিয়ে অন্যায় করছি……
চলবে?