আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০১

0
6806

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০১

লেখিকা: সুলতানা তমা

আজ আমার বিয়ে বাসায় মেহমানরা গিজগিজ করছে চারদিকে বিয়ের আমেজ সবাই খুশি শুধু খুশিই না অনেক বেশি খুশি, তবে বিয়েটা আমার বাসায় বা কোনো সেন্টারে হচ্ছে না বিয়েটা হচ্ছে আমার হবু শশুড় বাড়িতে, শহরের অনেক বড় ব্যবসায়ী আফজাল চৌধুরী (হবু শশুড়) এর ছোট ছেলের সাথে বিয়েটা হচ্ছে তাই সবাই এতো খুশি কারন এ বাড়ির ছোট ছেলে যে সবার চোখের মণি

আমি অরনী অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছি, মা বাবা বেঁচে নেই আজ থেকে সাত বছর আগে আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন আম্মু আব্বু মারা যান, সেই থেকে চাচ্চুর কাছে বড় হয়েছি চাঁচিআম্মু আমাকে উনার নিজের মেয়ের মতো বড় করেছেন তাই আমি উনাকে ছোট মা বলে ডাকি, ভাবছেন চাচ্চু থাকতে আমার বিয়ে হবু শশুড় বাড়িতে হচ্ছে কেন আসলে তো আমার শশুড় বাড়ির সবাই জানে আমি একটি অনাথ মেয়ে এতিমখানায় বড় হয়েছি, আমার যে চাচ্চু আছে আমিও যে কোনো এক বড় ব্যবসায়ীর মেয়ে সেটা ওরা জানে না অবশ্য তারও একটি কারন আছে
–ভাবি ভাবি (হঠাৎ কারো ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো)
–হ্যা
–তুমি এখানে আর ভাইয়া তোমাকে সারা বাড়ি খুঁজছে
–তুমি যাও আমি আসছি
–ওকে

যার সাথে এখন কথা বললাম সে আমার একমাত্র ননদ+ছাত্রী তিথি, মাত্র কলেজে উঠেছে, আজ থেকে এক বছর আগে তিথি যখন ক্লাস টেনে পড়তো তখন খুব কষ্ট করে অনেক কাঠকড় পুরিয়ে ওর টিউশনির টিচার হয়ে এই বাসায় ঢুকেছিলাম, যে উদ্দেশ্যে এই বাসায় এসেছিলাম সে উদ্দেশ্যর তৃতীয় ধাপ আজ পূরন হতে যাচ্ছে

প্রথম দুটি ধাপ পূরন করতে মোটামুটি অনেক কষ্ট হয়েছে আমার, প্রথম তাসিন কে প্রপোজ, ওহ আপনাদের বলা হয়নি তাসিন আমার হবু বর, প্রেম করে বিয়ে করছি অবশ্য ওকে প্রেমে রাজি করাতে কিছুটা কষ্ট হয়েছে, প্রথম যখন প্রপোজ করেছিলাম ও আমাকে ইগনোর করেছিল যদিও আমি মোটামুটি সুন্দরীর খাতারে পরি তাও ইগনোর করেছিল কারন তাসিনও যে খুব সুন্দর+বড় লোকের ছেলে, তাসিনের সাথে প্রেম করার জন্য আমাকে একটি বছর এতিমখানায় থাকতে হয়েছে কারন ওকে বলেছিলাম আমি অনাথ, তাসিনের সামনে আমি গরীবদের সাহায্য করতাম যদিও এইটা আমার ছোট বেলার অভ্যাস তাও তাসিনের সামনে এইসব কাজ করতাম ওকে আমার প্রতি দূর্বল করার জন্য, বুদ্ধিটা কাজেও লেগেছিল তাসিন আস্তে আস্তে আমার প্রতি দূর্বল হয় তারপর আমাদের প্রেম হয় আর এখন তো তাসিন আমার জন্য এতোটাই পাগল যে আমার কথায় মরতেও রাজি, হাহাহাহা আমি তো এটাই চেয়েছিলাম কারন ওকে দিয়েই যে আমি আমার প্রতিশোধ নিবো

দ্বিতীয় ধাপ পূরন করতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, তাসিনের পরিবার কে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য অনেক কাঠকড় পুরাতে হয়েছে, প্রথমে কেউ রাজি ছিল না আমি অনাথ বলে না তাসিনের জন্য নাকি মেয়ে ঠিক করা ছিল ছোট বেলায়, মেয়েটি এখন হারিয়ে গিয়েছে তাই উনারা এখনো আশা করেন মেয়েটি ফিরে আসবে তাসিনের বউ হবে, সবার আশা নিরাশা করে আজ আমি তাসিনের বউ হতে যাচ্ছি, এর জন্য সুইসাইড করার মিথ্যে নাটক করতে হয়েছে তাসিনও অনেক কান্নাকাটি করেছে তাই বাধ্য হয়ে সবাইকে রাজি হতে হয়েছে, এখন সবাই খুশি ওই মেয়ের আশা ছেড়ে দিয়ে আমাকে এই বাড়ির ছোট বউ বানাতে সবাই ব্যাস্ত, এই বাড়ির বড় বউ আসিফ চৌধুরীর স্ত্রী শায়লা চৌধুরী, তাদের ছোট্ট একটি মেয়েও আছে নাম পরী, ভাবছেন সবার পরিচয় দিচ্ছি কেন
এই কারনে দিচ্ছি যেন পরে কাউকে চিনতে অসুবিধা না হয়
–অন্নি কোথায় তুমি (আবার ডাক পড়েছে বিয়ের স্টেজ ছেড়ে আমি ছাদে দাড়িয়ে আছি তো তাই, এখন এসেছে তাসিন ও আমাকে আদর করে অন্নি বলে ডাকে)
–এই ছাদে কি করছ
–কিছুনা
–ওমা আমার অন্নি কাঁদছে কেন
–আম্মু আব্বুর কথা ভাবছিলাম তো কখন চোখে পানি চলে এসেছে বুঝতে পারিনি
–ঠিক আছে নিচে চলো এই বউ সাঝে ছাদে দাড়িয়ে থাকলে নজর লেগে যাবে
–তাই বুঝি
–হ্যা আমার অন্নিটা একদম পরীর মতো তো তাই নজর লেগে যাবে, চলো সবাই স্টেজে অপেক্ষা করছে বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে ফেলি আমার আর তর সইছে না
–(মৃদু হাসলাম)
–কি হলো হাসছ যে
–তোমার পাগলামি দেখে চলো নিচে যাই
–চলো

তাসিনের হাত ধরে নিচে নেমে আসলাম সবাই আমাদের দিকে হা করে থাকিয়ে আছে
ভাবি: দুইটা কে খুব সুন্দর মানিয়েছে
মা: আমার তাসিনের জন্য এই মেয়েটাই পারফেক্ট, খুব সুন্দর লাগছে আমার বউমা কে
আমি:(মনে মনে ভাবছি কতটুকু পারফেক্ট তা তো বিয়ের পরই বুঝতে পারবেন সবাই হাহাহা)
তাসিন: এই হাসছ কেন
আমি: এমনি
বাবা: তোমরা সবাই এখানে কাজি সাহেব তো বসে আছেন চলো শুভ কাজটা সেরে ফেলি
মা: হ্যা সবাই চলো চলো

বিয়েটা হয়ে গেলো সবাই খুশি সবচেয়ে বেশি খুশি আমি আমার উদ্দেশ্যের তৃতীয় ধাপ পূরন হলো

সারা দিন বিয়ের ব্যাস্ততা শেষে এখন আমাকে তাসিনের রুমে নিয়ে আসা হলো, সব নিয়ম কানুন শেষে ভাবি আমাকে খাটের উপর বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো

আর আট-দশটা মেয়ের মতো আমি দশ হাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে খাটে বসে বসে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছি না, উঠে ফ্রেশ হয়ে লেহেঙ্গা পাল্টে জামা পরে নিলাম জানি তাসিন রাগ করবে কারন ও আমাকে বাসর ঘরে বউ সাঝে দেখতে চেয়েছিল, করুক রাগ কারো রাগে আমার কিছু যায় আসে না আমি আমার উদ্দেশ্য সফল করেই ছাড়বো

বারান্দায় আর রুমে পায়চারী করছি আর ভাবছি কিভাবে প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করবো, হঠাৎ দরজায় শব্দ হলো তাসিন এসেছে চট করে মাথায় বুদ্ধি চলে আসলো তাসিন কে দিয়েই প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করবো, ও এই বাড়ির সবার চোখের মণি ওকে কষ্ট দিতে পারলেই সবাই কষ্ট পাবে……

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে