#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৯
,,,,,,
,,,,,
সকালের শুভ্রতা চারদিকে ছড়িয়ে পরেছে সূর্যের রোদে আলোকিত চারপাশ পাখিরা নিজের সুরে গান গাইছে।
মানুষ ব্যস্ত হয়ে গেছে নিজ নিজ কাজে।ছোট ছোট পাখি গুলো নীড় ছেড়ে এই খোলা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। সকালের এই সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় এই মিষ্টি রোদ গায়ে পরলেই আলাদা শিহরণ জেগে উঠে।
সকালের আলো জানালাভেদ করে ঘরে ডুকেই অধরার চোখে মুখে পরে আর মোবাইলের এর্লাম টাও বেজে উঠে।অধরা চোখ বন্ধ রেখেই মোবাইল বেড সাইড থেকে নিয়ে এর্লাম বন্ধ করলো।অধরা চোখ পিট পিট করে খুলে দেখলো রক্তিমের মাথা তার বুকে অধরা আসতে আসতে বুঝতে পারলো তার শরীর ওপর চাউলের বস্তার মতো ভারি কিছু আছে।সে ভালো মতো চোখ কচলে দেখলো রক্তিম তার উপর শুয়ে এরকম অবস্থা দেখে সে প্রথমে একটু অবাক হলেও গতকাল রাতের কথা মনে করতেই তার গাল লাল হয়ে গেছে।অধরা রক্তিমকে আসতে আসতে করে নিজের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু ফলাফল রক্তিম তাকে আরো শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলছে।
আমার ঘুম ভাঙ্গতেই কাল রাতের কথা মনে পরে গেলো।গতকাল রাতটা কতো না সুন্দর ছিল রক্তিমকে আমার মনের কথা বলে দিয়েছি। রক্তিমও আমাকে নিজের করে নিয়েছে এসব ভাবতেই আমার লজ্জা লাগছে হঠাৎ ঘড়ির দিকে খেয়াল করে দেখলাম সকাল ১০টা আমি রক্তিমকে নিজের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করতেই রক্তিম আমাকে আরো নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে।অনেক চেষ্টার পর আমি সফল হলাম রক্তিমকে খাটের অন্যপাশে শুইয়ে দিলাম ঠিকঠাক ভাবে রক্তিম আবারো উল্টো হয়ে শুয়ে পরলো।চুলগুলো হাত খোঁপা করে বিছানা ছেড়ে উঠে পরলাম তারপর একটা শাড়ি নিয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুম। শাওয়ার নিয়ে শাড়ি পরে বের হয়ে আসলাম বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি রক্তিম এখনো উপুর হয়ে শুয়ে আছে।রক্তিমকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে সস্বতির নিশ্বাস ছাড়লাম আজ সারাদিনেও আমি তার পাশে ঘুরবো না।আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছে সুন্দর করে খোঁপা করে রুম থেকে বের হয়ে সোজা চললাম রান্নাঘরে। নাস্তা তৈরি করতে করতে একবার রান্নাঘরের বাহিরেও চোখ বুলিয়ে নিলাম নাহ বাসার কেউ এখন পর্যন্ত উঠেনি।নাস্তার জন্য আলু ভাজি তৈরি করে আমি পরোটা বেলতে শুরু করলাম সার্ভেন্টরা যে যার কাজ করছে।নাস্তা টেবিলে সাজিয়ে আমি চলে গেলাম দাদীমার রুমে সে ঘুমিয়ে আছে নিশ্চন্তে তার দিকে তাকাতেই ভাবতে লাগলাম একসময় আমরা এমন বুড়ো হয়ে যাবো তখন না থাকবে সৌন্দর্যের অহংকার না থাকবে কোনো অধিকার।ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলাম বাগানে রক্তিমদের বাড়ির পিছনের সাইডে ছোট একটি বাগান।বাগানে হেঁটে হেঁটে ফুল গাছ গুলো ছুয়ে দিচ্ছি কিছুক্ষন আগেই হয়তো পানি দেওয়া হয়েছে তাই একটু ভিজা ভিজা লাগছে।সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে নয়নতারা গাছটা সূর্যের রশ্মিটা একদম সেই ফুলে গিয়েই পরেছে উজ্জ্বলতা আরো বেড়ে গেছে।কিছুক্ষন সেখানে কাটিয়ে আবার বাড়ির ভিতরে ডুকে পরলাম।
বাসায় ডুকেই দেখি সাহারা রায়জাদা নাস্তার টেবিলে একা বসে আছে।হয়তো সবার অপেক্ষা করছে আমি গিয়ে টেবিলের পাশে দাড়ালাম তার প্লেটে খাবার দিবো তখনই সে বলে উঠলো,
~আমি পরোটা খাইনা। এতে আমার গ্যাসট্রিকের প্রবলেম হয়।
আমি বললাম,
~তাহলে কী রুটি বানিয়ে দিবো?
সাহারা রায়জাদা কোনো জবাব দিলেন না আমি রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম সে পিছন থেকে বলে উঠলো,
~কোনো প্রয়োজন নেই তোমার বানানোর।আমি সার্ভেন্টকে বলে দিয়েছি সে বানিয়ে দিবে।তোমার সাথে কথা ছিল
আমি মনে মনে ভাবলাম,
~আমার সাথে ওনার আবার কীসের কথা?
মনের কথা মনে রেখেই আমি বললাম,
~কী কথা?
সাহারা রায়জাদা পানির গ্লাস থেকে একটু পানি পান করে বললেন,
~দেখো তোমার বিয়ে যেভাবেই হোক না কেন তুমি এ বাড়ির বউ তাই তোমার কিছু কর্তব্য আছে যা তোমার পালন করতে হবে।
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
~আমি অবশ্যই আমার কর্তব্য পালন করবো।
সাহারা রায়জাদা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন,
~রাত তোমার দেবর আর দেবরের শশুরবাড়িতে বড় ভাবির যাওয়াটা প্রয়োজন।সারার বাবা-মা চায় আমরা সবাই তাদের বাসায় আজ রাতের ডিনার করি তাই তোমার যাওয়াটা আমি আশা করছি।
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~আমি অবশ্যই যাবো।
সাহারা রায়জাদা বললো,
~রক্তিমকে বলে দিও আজ রাতে যেন কোনো প্রোগ্রাম না রাখে।
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালাম।
,,,,,,,
,,,,,,
রক্তিম ঘুম থেকে উঠে শোয়া থেকে উঠে বসে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে অধরাকে খুজছে।ওয়াশরুমের দরজা বাহির থেকে বন্ধ আর বারান্দার দরজাও রক্তিম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১১.৩০ আজ ছুটির দিন তাই তার কোনো প্যারা নেই।রক্তিম বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো কিছুক্ষন পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে অধরাকে দেখার জন্য সে মাথা মুছতে মুছতে সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে।অধরা দাদীমার রুমেই হবে তাই সে কোনো কিছু না ভেবে দাদীমার রুমে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখে দাদীমা বসে আছে বিছানায় পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে কোথাও অধরাকে পেলো না।দাদীমা মাথা তুলে দেখলেন রক্তিম তার ঘরে উঁকিঝুঁকি করছে।দাদীমা রক্তিমের এ অবস্থা দেখে বললেন,
~কীরে,ভাই কিছু বলবি?
রক্তিম দাদীমার ঘরে ডুকে বললো
~তোমার প্রিয় অধরাকে খুজে পাচ্ছিনা কই আছে জানো নাকি?
দাদীমা মিটমিট করে হেসে বললেন,
~তোর বউ শাশুড়ীর সাথে মার্কেটে গিয়েছে।
রক্তিম হা হয়ে দাদীমার দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষন পর সে বললো,
~এ আমি বিশ্বাস করি না দাদীমা তুমি কী বলছো?
দাদীমা খিলখিল করে হেসে বললেন,
~তোর ছায়াছবির ডায়লগ শেষ হলে নাস্তা করে ঘরে যা।
রক্তিম বললো,
~এটা কীভাবে হলো এটাতো বলো?
রক্তিমের কথায় দাদী বললো,
~সারাদের বাসায় রাতে দাওয়াত দিয়েছে তাই তোর মা আর তোর বউ তাদের জন্য মার্কেটে গিয়েছে গিফট কিনতে।
রক্তিম বললো,
~আচ্ছা সকাল সকাল এতো বড় সারপ্রাইজ দেওয়ার কোনো মানে আছে।
এতটুকু বলে রক্তিম দাদীমার রুম থেকে বিড়বিড় করতে করতে বের হয়ে গেলো।তার এখন অধরার উপর অনেক রাগ লাগছে তাকে বলে গেলে কী হতো?
কতক্ষন ধরে পাগলের মতো অধরাকে খুজে যাচ্ছি।এসব ভাবতে ভাবতে রক্তিম টেবিলে বসে পরলো আর পরোটা প্লেটে নিয়ে চিবুতে লাগলো। হঠাৎ রাত সেখানে এসে রক্তিমকে বললো,
~ভাইয়া আজকে সারাদের বাসায় যাবো আমরা সবাই তোমায় আর অধরাকেও যেতে হবে।সারা তোমাদের especially invite করতে বলেছে।
রাতের কথা শুনে রক্তিমের চোখ তার কোটর থেকে বের হওয়ার উপক্রম রক্তিমের এহেন অবস্থা দেখে রাত অবাক হয়ে বললো,
~কী হয়েছে?ভাইয়া তুমি ঠিক আছো।
রক্তিম বললো,
~সকাল থেকে তোরা যেমন করছিস কোন সময় আমার যেন হার্ট আট্যাক হয়ে যায়।
রাত ভ্রুকুচকে বললো,
~ভাইয়া এসব কেমন কথা?
রক্তিম বললো,
~অধরা যাবে কারণ মায়ের সাথে সে মার্কেট গিয়েছে সারাদের বাড়িট সবার জন্য কেনাকাটা করতে।আর অধরা যেখানে যাবে সেখানে আমি অবশ্যই যাবো।
রাত বললো,
~আমি তোমার কথা শুনে খুশি হলাম।
রক্তিম আর কিছু না বলে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
,,,,,,
,,,,,,
দুপুর ১.৩০মিনিট আমি আর সাহারা রায়জাদা শপিং থেকে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় আসতেই সোফার রুমে চোখ পরলো সাবিহা এসেছে।সাবিহা বসে বসে রক্তিম রাত আর দাদীমার সাথে কথা বলছে আমার দিকে ওর চোখ পরতেই চেচিয়ে বললো,
~ভাবি এসেছে।
বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো আমি তার পিঠে হাত বুলিয়ে বললাম,
~কখন এসেছপ আমার ননদীটা?
সাবিহা বললো,
~পাক্কা ১২টায় রাহাত চাচ্চুর সাথে এসেছি।
আমি বললাম,
~তোমাকে দেখে অনেক খুশি মনে হচ্ছে।কী খবর?
সাবিহা বললো,
~আমার এডমিশন তোমার ভার্সিটিতে হয়ে গেছে।তুমি এখন আমার সিনিয়র +ভাবি।
সাবিহার কথায় আমি অনেক খুশি হলাম তাকে বললাম,
~এতো অনেক খুশির খবর।সাবিহা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তুমি বসো।
কথা শেষ করেই আমি ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে যেই উপরে যেতে নিবো রক্তিমের দিকে চোখ পরলো সে কটমট করছে রেগে আর বিড়বিড় করে কিছু বলছে।
নির্ঘাত আমাকে শায়েস্তা করার প্ল্যান করছে।আমি এক হিসেবে দৌড়ে রুমের ভিতর চলে আসলাম যেই না রুমের দরজা লাগাতে যাবো তখনই রক্তিম দরজা ধরে ফেললো আমি তাকে দেখে শুকনো ঢোক গিললাম।রক্তিম আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিলো আর সে রুমে ঢুকে পরলো।রক্তিমকে দেখে আমার ভয় আরো বেড়ে গেলো সে দরজা বন্ধ করে হাতগুলো তার বুকে গুজে দরজার সাথে হেলান দিয়ে আছে।আমি একবার তার দিকে তাকিয়ে মাথা আবার নিচু করে ফেললাম রক্তিম শান্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,
~মিসেস অধরা,আপনার সাথে এখন কী করা যায়?
আমি তার কথার কোনো জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে আছি।রক্তিম আমার জবাব না পেয়ে বললেন,
~তোমার অবস্থা দেখে একটা গান মনে পরছে।
মার দিয়া যায় ইয়া ছোড় দিয়া যায় বোল তেরে সাথ ক্যা সুলুক কিয়া যায়।
রক্তিমের এহেন কথায় আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম।তবুও সাহস নিয়ে মাথা উঁচু করে বললাম,
~কী করেছি আমি?
রক্তিম কিছু না বলে আমার দিকে এক-পা দু-পা করে এগিয়ে আসতে থাকলো।তার এভাবে আগানো দেখে আমি পিছিয়ে যেতে থাকলাম একপর্যায়ে আমার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেলো রক্তিম আমার একদম কাছে এসে আমার দুপাশে হাত দিয়ে আটকিয়ে দিলো।তারপর বললো,
~এখন কী হবে?
আমি অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।রক্তিম আমাকে বললো,
~আমি সকাল থেকে পাগলের মতো আপনাকে খুঁজেছি ওইটার প্রতিদান দিতে হবে।
আমি কাপাকাপা কন্ঠে বললাম,
~আমি কী বলিছি আমাকে খুঁজতে?
রক্তিম রাগী কন্ঠে বললো,
~আমার মুখের উপরে কথা বলা পছন্দ নয়।আমাকে একটু বলে গেলে কী হতো?
আমি বললাম,
~বলে তো যেতেই চেয়েছিলাম আপনি তো মটকা মেরে ঘুমিয়ে ছিলেন।
রক্তিম আমার কথা শুনে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই ঘরের দরজায় কেউ টোকা দেয়।রক্তিম পিছে ঘুরে তাকাতেই আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম সাবিহা দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখে হাসি হাসি মুখ করে বললো,
~ভাবি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো খাবার টেবিলে দেওয়া হয়েছে।
আমি বললাম,
~আচ্ছা।
সাবিহা আরো কিছু বলবে তার আগেই শাড়ি নিয়ে ভো দৌড় ওয়াশরুমে।
,,,,,,
,,,,,,,,
দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করে সাবিহার সাথে আড্ডা দিতে দিতে বিকেল হয়ে গেলো।সাবিহারও চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেলো সে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাতের সাথে তাদের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে চলে গেলো।সাবিহাকে কিছুদিন থাকতে বলেছিলাম কিন্তু সে বললো পরে এসে থেকে যাবে মেয়েটা অনেকই মিশুক ভালো লাগে ওর সাথে সময় কাটাতে।
সন্ধ্যার সময় আমি রেডি হচ্ছি সারাদের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে হঠাৎ একটা নাম্বার থেকে ফোন আসলো।আমি ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে বলে উঠলে,
~আমি সারা,
আমি বললাম,
~সারা তুমি ফোন দিয়েছো কোন বিশেষ কাজ?
সারা বললো,
~আজকে বাসায় আসবে তো?
আমি বললাম,
~জ্বী।
সারা বললো,
~তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
বলেই সে ফোন কেটে দিলো আমি কিছুই বলতে পারলাম না।
চলবে।।।
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)