আমার তুমি ২ পর্ব-৩৪+৩৫

0
156

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৩৪
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা একটু রোমান্টিক, পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

ভালোবাসা সত্যি অদ্ভুত।ভালো সবাই বাসলেও পূর্ণতা ক’জন দিতে পারে?একদম শেষ পর্যন্ত লড়াই করে নিজের ভালোবাসা কে ক’জন নিজের করার সবরকম চেষ্টা করতে পারে?হয়তো সবাই পারে না। আবার অনেকই পারে। তাদের মধ্যে রাহান একজন শতশত বাঁধা অতিক্রম করে জীবনের সাথে অনেক টা যুদ্ধ করে সে নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে আজ নিজের করে পেয়েছে।
আজ নিজে কে পূর্ণ মনে হচ্ছে। বুকের বা পাশের রমণী টা আজ তার ঘরে একই সাথে বসে আছে।এখন আর কোনো ভয় নেই।কেউ দেখা ফেলবে এমন কোনো আতংক নেই।সারা বিয়ের সাজ ছেড়েছে ফটো তোলার পরপরই।গায়ে এখন ফিনফিনে পাতলা সাদা মাঝে মিষ্টি কালার সংমিশ্রণে একটা শাড়ী। কোমড় সমান চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া অধরে লাল টকটকে লিপস্টিক মাখা।চোখে গুলো সুন্দর করে সাজানো।চুল থেকে মাতাল করা এক স্মেল আসছে। রাহান চোখ বন্ধ করে নাক ঘষে ঘাড়ে।চুলের ভাঁজে নাক নিয়ে লম্বা শ্বাস টেনে নেশাময় কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“কি করবো?
পাগল হয়ে যাচ্ছি।”

সারা’র নিজেও চোখ বন্ধ করে ছিল।হঠাৎ রাহানের কথা শুনে চোখ খুলে নিলো।শরীর জুড়ে প্রথম বারের ন্যায় কোনো পুরুষের এতো টা সন্নিকটে এসে অবস্থা নাজুক। সরে বসার চেষ্টা করে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টাও করে। তবে কোনো টাতেই সফল হয় না।রাহান চেপে ধরে নিজের সাথে বসে আছে। সারা কিছু টা মজার ছলে বলে উঠলো,

-“এখন বললেন পাগল হয়ে যাচ্ছেন! তো দূরে থাকুন।”

-“এই মেয়ে একদম হেয়ালি করবে না।
আই ওয়ান্ট ইউ ইমমেডিয়েটলি।অল বাই ইউর সেল্ফ।”

সারা কিছু বলার আগেই রাহান সারা কে ঝট করে কোলে তুলে নিলো।সারা দুই হাত এগিয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো রাহানের। রাহান বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে উঠলো,

-“অনেক সাধনার ফল তুমি সুন্দরী।
যা এতো দিন দেখার সাধ্য থাকলে ছুঁয়ে দেখার উপায় ছিল না।আজ থেকে রোজ ছুঁয়ে দেখা যাবে।”

সারা কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রাহান একটা রিং সারা’র হাতে পড়িয়ে দিলো।
সারা’র হাতের উলটো পিঠে চুমু খেয়ে বলে উঠলো,

-“আই ওয়ান্ট ইউ অল টু মাইসেল্ফ।
ক্যান আই?”

-“ইয়েস।”

ইশ রাহান বুঝি আর দেরী করে বউয়ের অধর চেপে ধরে ঝটপট।
অতঃপর দুই ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসা উজাড় করে একে-অপরকে ভালোবাসতে মত্ত হলো।রাত যত গভীর হলো দু’টো মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ ঠিক ততটাই ভারী হলো।

—-

কবির গাড়ি থেকে নামলো আগে। ঘুরে গিয়ে ওপাশের দরজা খুলে বউ কে গাড়ি থেকে ধরে নামালো।ড্রাইভার দৌড়ে এলো।কবির নিজের হাতের চাবি ড্রাইভার কে দিয়ে গাড়ি গ্যারেজে রাখতে বলে এগিয়ে এসে কলিং বেল চাপলো।কালাম খান সদর দরজা খুলে ছেলে বউ কে দেখে অবাক হলো।
বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো,

-“সন্ধ্যায় এলেমা আমি।
তখন তো বলো নি আসবে?”

-“ওর না-কি ভালো লাগছে না।
তোমার জন্য মন কেমন করছে।তাই এই রাতবিরেত চলে এসছি।”

-“সবাই আসতে দিলো?”

-“অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করিয়েছে তিন্নি।”

কালাম খান আর কিছু বলল না।তিন্নি কে ধরে নিয়ে বাড়ির ভেতর এলো।তিন্নি লম্বা শ্বাস নিলো।অনেক দিন পর নিজের ঠিকানায় এসে মনের মধ্যে আলাদা একটা শান্তি লাগছে।
ভাবতেই মন ভালো হয়ে যা নিজের একটা ঠিকানা হয়েছে।একটা বাড়ি আছে। পরিবার হয়েছে। দিনশেষে মানুষ গুলো তাকে ভালোবাসে।

—–

মির্জা বাড়ির যেনো আনন্দের শেষ নেই।প্রিয়তা কনসিভ করেছে কথা টা সবাই জানা মাত্র হইহই পরে গেলো।সওদাগর বাড়ির সবাই মির্জা রয়েছে। তারা সবাই বেশ খুশি।তাদের আদরের ছোট প্রাণ টা মা হবে। শফিক সওদাগর মেয়ের মুখপানে তাকিয়ে থাকে।মিতা সওদাগর স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে নিচু স্বরে বলল উঠলো,

-“আমার মেয়ে টা এভাবে যেনো সব সময় সুখী থাকে।”

প্রিয়তা আম্বিয়া মির্জার পাশে বসে আছে। সাদনান একটু দূরে সিঁড়ির কাছে রেলিঙে হেলান দিয়ে ট্রাউজার এর পকেটে দুই হাত রেখে লিভিং রুম পর্যবেক্ষণ করছে।রাত অনেক টাই হয়েছে। খাবার খাওয়া শেষ।কিন্তু আড্ডা যেনো আজ শেষ হওয়ার নাম-ই নিচ্ছে না।সাদনান মনে মনে সবার উপর বিরক্ত হলো।
প্রিয়তা রাতের খাবার টা ঠিকঠাক খেতে পারে নি। সুফিয়া বেগম দুধের গ্লাস হাতে প্রিয়তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। সাদনান মায়ের দিকে একপলক তাকলো।সুফিয়া বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে প্রিয়তা কে বলল,

-“এখন রুমে যা।
রেস্ট কর গিয়ে। আর হ্যাঁ এটা নিয়ে যা।শোয়ার আগে খেয়ে নিবি।”

প্রিয়তা চোখ পিটপিট করে তাকালো শাশুড়ীর দিকে। আয়ান বোনের দৃষ্টি বুঝতে পেরে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। আগে না খেলেও এখন থেকে খেতে হবে।”

সবার জোরাজুরিতে প্রিয়তা দুধের গ্লাস নিয়ে রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরলো।
সাদনান আগেই রুমে চলে এসছে। প্রিয়তা রুমে এসে দুধের গ্লাস সেন্টার টেবিলের উপর রেখে কাবাড থেকে রাতের পোষাক নিয়ে ওয়াশ রুম গেলো।সাদনান পুরো টা সময় সোফায় বসে বউয়ের সব কার্যকলাপ অবলোকন করে।অতঃপর বেরিয়ে আসে রুম হতে।লিভিং রুমের সবাই তখন যার যার রুমে চলে গিয়েছে। কিচেনে শুধু একজন কাজের লোক সব গুছিয়ে রাখছিল।সাদনান কে কিচেনে দেখা মাত্র তিনি বলে উঠলো,

-“ছোট সাহেব কিছু লাগবো?
আমারে কন।আম,,,

-“না খালা।
আপনি যান।আমি নিজে পারবো।”

সাদনানের আদেশ পেয়ে তিনি বিনাবাক্য রান্না ঘর ত্যাগ করে। সাদনান আগে একটা ক্যাবিনেট খুলে সেখান থেকে একটা স্যুপ এর প্যাকেট বের করে।
সেটা রান্না করে একটা বড়ো কাপে নিয়ে রুমে আসার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই নজরে পরে প্রিয়তা গায়ে একটা মোটা ওড়না পেঁচিয়ে রান্না ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে সাদনান এর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,

-“আমি জানি আপনি এসব আমাকে গিলানোর জন্য করেছেন।
কিন্তু এই মূহুর্তে কিচ্ছু খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

প্রিয়তার থমথমে কণ্ঠ শুনে সাদনান হেঁসে দিলো।অতঃপর এক হাতে প্রিয়তার বাহু টেনে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল,

-“কিন্তু খেতে হবে।
ইউ নো না!না আমার একদম পছন্দ নয়।”

প্রিয়তা কিছু বলতে পারে না।
সাদনান রুমে এনে বউ কে বিছানায় বসিয়ে নিজেও পাশে বসলো।প্রায় অর্ধেক টা স্যুপ খাইয়ে দিলো।প্রিয়তা নাকমুখ কোঁচকালো।তবে ভালো লাগলো আবার পেটেও ক্ষুধা তাই খেয়ে নিলো।সাদনান স্যুপরে বাটি রেখে দুধের গ্লাস সামনে ধরলো।প্রিয়তা মুখ ভোঁতা করে গ্লাস হাতে ঢকঢক করে অর্ধেক গ্লাস খালি করে দিলো।পরপরই মুখ হতে গ্লাস সরিয়ে ওয়াক করে সব সামনে দাঁড়ানো সাদনানের উপর ঢেলে দিলো।সাদনান চোখ ছোট ছোট করে বউয়ের দিকে তাকালো।
প্রিয়তার মুখ ভয়ে ফাটা বেলুনের ন্যায় চুপসে গিয়েছে। সাদনানের হাসি পেলো।তবে হাসলো না। এখন হাসলে বউ তার আহ্লাদে গদগদ হয়ে যাবে। আর খাবে না সে জানে।তাই হাসি টুপ করে গিলে নিলো। থমথমে কণ্ঠে কাবাড এর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে আদেশের স্বরে বলল,

-“পুরো টা শেষ করো।
আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেনো গ্লাস খালি দেখি।
আর খবরদার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করবে না।”

প্রিয়তা সাদনানের কথায় থমথমে খেলো।কি ভয়ংকর মানুষ।মনের কথা বুঝে যায়।
সাদনান ওয়াশ রুমে চলে গেলে প্রিয়তা অনেক টা কষ্ট করে দুধ টা খেয়ে নিলো।ফেলে দেওয়ারও উপায় নেই। ওয়ার্নিং দিয়ে গিয়েছে।বাধ্য হয়ে খেতে হলো।
সাদনান ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে এলো পাঁচ সাত মিনিট এর মধ্যে। এসেই দেখলো বউ তার শুয়ে পড়েছে। সাদনান লাইট অফ করে নিজেও এসে প্রিয়তার পাশে শুয়ে পড়লো। প্রিয়তা সাদনানের বুকে মাথা রেখে।গেঞ্জির বোতাম খুলতে নিলেই সাদনান বাঁধা দিলো। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
ড্রিম লাইট এর স্বল্প আলোয়ে বউয়ের ভ্রু কুঁচকানো দেখে সাদনান প্রিয়তার কপালে অধর স্পর্শ করে মূদু কণ্ঠে বলল,

-“কাল ডক্টর এর কাছে যাব।
টেস্ট করবো।এখন আর কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছি না জান।”

-“কিচ্ছু হবে না।
আপনি বেশি বুঝেন।”

প্রিয়তা নিজেই সাদনান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সাদনান বুঝি বউয়ের ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে!অগত্যা নিজেও বউয়ের পাগলামিতে সঙ্গ দিলো।

#চলবে…

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৩৫
#জান্নাত_সুলতানা

-“রাত আড়াই টা বাজে জান।
প্লিজ ঘুমিয়ে পড়ো।”

সাদনান বউয়ের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল।কিন্তু প্রিয়তা কাঠকাঠ কণ্ঠে জবাব দিলো,

-“একদম না।
আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন কি-না বলেন?”

সাদনান এবার এগিয়ে এলো। প্রিয়তার আট মাসের ভরা পেটে এক হাত রেখে আরেক হাত প্রিয়তার গালে রাখে।রাত বাজে আড়াই টা।আর এই মেয়ে?
এই রাতে ছাঁদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে যাওয়ার জন্য সেই কখন থেকে তর্ক করে যাচ্ছে। সাদনান জানে বউ কে সে অনুমতি না দিলে বউ এক পা ও নাড়াবে না।কিন্তু জেদ দেখাচ্ছে।সাদনানের হাত প্রিয়তা ঝট করে সরিয়ে দিলো।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“যাবেন না তাই তো?”

-“নো, নেভার।”

সাদনান থমথমে কণ্ঠে কথা টা বলেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। প্রিয়তা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। সাদনান মিনিট দশ মিনিট এর মধ্যে ফিরি এলো।হাতে পাস্তা একটা মিনি প্লেট।
প্রিয়তা তখন উলটো ঘুরে শুয়ে আছে। সাদনান এগিয়ে গেলো।বিছানায় ওঠে বসে বউ কে খুব সাবধানে টেনে তুলে।প্রিয়তা মোচড়ামুচড়ি করেও কোনো লাভ হয় না।বসে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো।সাদনান এক হাতে প্রিয়তার মুখ চেপে ধরে মুখের সামনে খাবার ধরতেই প্রিয়তা মুখ শক্ত করে রইলো।সাদনানের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।মেয়ে টা দিন কি দিন বেশি ঘাড়ত্যাড়া হচ্ছে। ইদানীং বেশি করে হয়তো প্রেগন্যান্সির জন্য। সাদনান রাগ গিলে নিলো।মুখ এগিয়ে বউয়ের কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে মৃদু স্বরে বলে উঠলো,

-“জান আমার।খেতে হবে। আমি জানি তোমার ক্ষুধা পেয়েছে।”

প্রিয়তা টলমল চোখে তাকালো সাদনানের দিকে। সত্যি ওর খিদে পেয়েছে। কিন্তু মন টা বলছে একবার বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে দেখার জন্য।
প্রিয়তার মাথায় চট করে একটা বুদ্ধি এলো।
গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“আপনি জানেন?বাবু পেটে এলে মায়ের মন যা চায় তাই করতে হয়!”

-“অবশ্যই করার মতো হলে।
এমন বেহুদা আবদার এর কোনো মানে নেই।”

সাদনান প্রিয়তা কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মুখে খাবার পুরে দিলো।প্রিয়তা মুখ ভোঁতা করে খাবার খেয়ে নিলো।এখন যত যাই করুক সাদনান যে খাবার পুরো টা শেষ না হওয়া পর্যন্ত দমে যাওয়ার পাত্র নেই।
খাবার শেষ সব গুছিয়ে রাখতে রাখতে তিনটার বেশি সময় বেজে গেলো।প্রিয়তা সহ সাদনান তাহাজ্জত পড়ে নিলো।সকালেও প্রিয়তা ঠিক আগে আগে ওঠে বসে থাকবে।সাথে সাদনান কেও নামাজ পড়তে টেনে তুলবে।
সাদনান ঝটপট জায়নামাজ গুছিয়ে কাবাডে তুলে রাখে।
বিছানায় এসে প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরে।প্রিয়তা নড়েচড়ে মিনমিন করে জানালো,

-“কাল তুরাগ আসবে।”

-“হয়েছে এখন চোখ বন্ধ করো।
আর হ্যাঁ মিশান এর সামনে তুরাগে কে জামাই ডেকো না।”

প্রিয়তা সাদনানের কথা শুনে শব্দ করে হাসতে লাগলো। সাদনান ভ্রু কুঁচকালো।
বউয়ের ঘাড়ে দাঁত চেপে ধরতেই প্রিয়তা ব্যথাতুর শব্দ করে বলে উঠলো,

-“আহ,ছাড়ুন।
আর হ্যাঁ তুরাগ কে তো রিধি আপু জামাই করবে বলেছে।
ওনার মেয়ের জামাই।তাই আমারও জামাই।”

বলেই আবার জোর করে হাসার চেষ্টা করলো।সাদনান হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
রিধির মেয়ে রুহির মাত্র তিন মাস চলে। আর তুরাগ এর এক বছর এর বেশি সময়। আর এই মহিলারা?এখুনি কি সব অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। হায়।
সাদনান কথা বাড়ালো না।বউ কে চুপ করে ঘুমোতে বলে নিজেও চোখ বন্ধ করে।

—-

সকালে মির্জা বাড়ির সব পুরুষরা সকালে ব্রেকফাস্ট করে যে যার মতো করে কাজে গেলো।শুধু সাদনান গেলো না।অবশ্য সাদনান এখনো নিচেই আসে নি।আজ অনেক দিন হয় সে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাহিরে পা রাখে না।এর কারণ সবাই জানে।বউয়ের জন্য এই পুরুষ সব করতে পারবে।সকালে প্রিয়তাও নিচে আসে নি। সাদনান এর মা সার্ভেন্ট দিয়ে রুমে ছেলে আর বউয়ের জন্য উপরে রুমে খাবার পাঠালো।
সাদনান তখন ফ্রেশ হয়ে মাত্র রুমে এসছে বউ তখনো ঘুমিয়ে আছে। সকালে নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়েছে। রাতে ঠিকঠাক ঘুমোতে পারে না।এপাশ-ওপাশ করে।সাদনানের তখন কি মায়া না হয় বউয়ের জন্য।
তবে কিছু করার নেই। কিন্তু সাদনান কিছু করার চেষ্টা করে। হাতের নিচে বালিশ দেয় পায়ের নিচে দিয়ে দেয়।একটু আরাম পেলে হাত পা ছড়িয়ে একটু ঘুমায়।যেমন এখন ঘুমোচ্ছে। কিন্তু খাবার খেতে হবে তাই ডেকে তুলে বউ কে।
প্রিয়তা ঢুলতে ঢুলতে ওঠে বসে। সাদনান মগে করে পানি আনে।মিনি টাওয়াল ভিজিয়ে বউয়ের হাত মুখ মুছিয়ে দেয়।সকালে অজু করার সময় ফ্রেশ হওয়ার ফলে এখন আর বেশি কিছু করতে হয় না।
প্রিয়তা কে খাইয়ে দিয়ে মাত্র সাদনান খেতে বসেছে তক্ষুণি দরজায় টোকা পড়ে। সাদনান ভ্রু কুঁচকালো। প্রিয়তা সেদিকে তাকিয়ে বলল,

-“আপনি বসুন আমি দেখ,,

-“একদম নড়বে না।
হাঁটার সময় তো পা ব্যথা করে কাজের সময় করে না?”

সাদনানের তীক্ষ্ণ কণ্ঠের বাক্য শুনে প্রিয়তা ঠাঁই বসে রয়।
সাদনান দরজা খুলতেই একজোড়া হাত সাদনান এর হাঁটু জড়িয়ে ধরলো।একটু হকচকিয়ে নিচে তাকিয়ে হাতের মালিক কে দেখে চমৎকার করে হাসলো।আগলে নিয়ে কোলে তুলে রুমে আসতে আসতে বলল,

-“বাহ।
সুপার আমার জামাই চলে এসছে।”

ছোট মিশান গোল গোল চোখে তাকিয়ে থাকে প্রিয়তার দিকে।তিন বছর মাত্র খুব বেশি বড়ো নয়।প্রিয়তা খুশি হলো মিশান কে দেখে।
হাত বাড়িয়ে ডেকে বলল,

-“সোনা আব্বা।
এসো মনির কাছে।”

সাদনান এগিয়ে গিয়ে মিশান কে কোলে নিয়ে বসলো প্রিয়তার পাশে। মিশান মোচড়ামুচড়ি করে সাদনান এর কোল হতে নেমে বসলো।প্রিয়তা এক হাতে জড়িয়ে ধরে মিশান কে।
মিশান নিজের ছোট হাত টা প্রিয়তার ঢিলাঢালা জামার উপর দিয়ে পেটে রাখলো।চোখ পিটপিট করে বলে উঠলো,

-“তোট বাবাই বলেতে আমার বউ আতে এতানে।”

সাদনান বিস্ময় খেলো।প্রিয়তা চোখ বড়ো বড়ো তাকালো সাদনানের দিকে।সাদনান সহসাই চোর ধরে পরে যাওয়ার অবস্থা হলো।তবে চট করে বলে উঠলো,

-“বিশ্বাস করো জান।আমি এমন কিছু বলি নি।”

মিশান দু’জনের দিকে বারকয়েক তাকালো বুঝতে পারলো না ওরা কি বলছে।মিশান নিজেই আবার জিজ্ঞেস করলো,

-“তবে আতবে আমার বউ?”

প্রিয়তা সাদনান কে কিছু বলে না। মিশান কে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেঁসে বলল,

-“ছোট মনির জন্য দো’আ করবে।
খুব দ্রুত যেনো তোমার বউ কে সুস্থ ভাবে নিয়ে আসতে পারি।”

মিশান হয়তো আরো কিছু জিগ্যেস করতো।কিন্তু সাদনান তড়িঘড়ি করে মিশান কে নিয়ে রুম হতে বেরিয়ে গেলো। বেচারা কখনো আবার কি বলে বউয়ের কাছে তারপর দেখা যাবে বউ বেলুনের ন্যায় ফুলে থাকবে।
নিচে এসে সাদনান সবার সাথে সাক্ষাৎ করলো।শুক্রবার আজ।কবির তিন্নি এসছে।মাইশাও এসছে। আয়ান আসে নি।তবে সন্ধ্যায় এসে বউ আর ছেলে কে নিয়ে ঠিক বাড়ি ফিরে যাবে।

——

প্রিয়তা গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে সাদনানের বুকে।সাদনান বউয়ের পেটের উপর নিজের একটা রেখে বসে আছে। অনেক সময় হয় এভাবে বসে আছে সাদনান।মূলত বউয়ের জন্য এভাবে বসে থাকা।দুদিনের এর জন্য একটা জরুরি প্রয়োজন বাহিরে যেতে হবে। সব মিলিয়ে চার দিন লাগবে।আর এই কথা প্রিয়তা যেই থেকে শুনেছে সেই থেকে এমন মুখ বন্ধ করে বসে আছে।
এই সাপ্তাহে এর মধ্যে প্রিয়তার ডেলিভারি ডেইট।সেইজন্য মেয়ে টা আরো ভয়ে আছে।কিন্তু বাহিরে যাওয়া টাও ভীষণ জরুরি।যদিও সাদনান এ কয়েকমাসে সব কিছু থেকে নিজে কে সরিয়ে রেখেছিল।কিন্তু এটা থেকে পারে নি।উপর মহল থেকে নোটিশ এসছে।সাদনান চেষ্টা করেও কিছু করতে পারে নি।সময় গড়ালো। সন্ধ্যায় সাদনান এয়ারপোর্টে এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে।এখন বিকেলে।সাদনান এবার মুখ খুলল,

-“টাইম এর আগে চলে আসবো জান।”

প্রিয়তা তবুও টুঁশব্দ করে না। সাদনান নিজেও আর কিছু বলে না। সাদনান জানে এখন কিছু বলেও লাভ হবে না। সাদনান প্রিয়তা কে সরিয়ে ওঠে বসার চেষ্টা করতেই প্রিয়তা সাদনান কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

-“একটু আদর করুন।
প্লিজ। যদি ফিরে এসে আর আমাকে না পান!”

সাদনান চমকে উঠলো।
বুকের ভেতর অজানা ভয় এসে হানা দিলো।শক্ত করে বউ কে জড়িয়ে ধরে অধর নেড়ে আওড়াল,

-“কিছু হবে না আমার জান।
ভয় কেনো পাচ্ছো তুমি আমি আছি তো।চলে আসবো দ্রুত। প্রমিস।”

সাদনান বউয়ের আবদার রাখলো।তবে মনে একটা খুঁতখুঁত থেকেই গেলো।কেনো জানি মন সায় দিচ্ছে না বউ কে ফেলে যেতে। কিন্তু যেতে হবে। পরিস্থিতি আমাদের মর্জি মতো চলে না আমাদের পরিস্থিতির মর্জি মতো চলতে হয়।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে