Monday, October 6, 2025







আমার তুমি ২ পর্ব-৩২+৩৩

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৩২
#জান্নাত_সুলতানা

প্রিয়তা রেডি হয়ে নিচে এলো।সাদনান অনেক আগেই রেডি হয়ে নিচে চলে এসছে।বর কনে একই বাড়ি থেকে বিয়ে হচ্ছে বিধায় হুলুস্থুল আয়োজন চলছে।যদিও সাদনান চেয়েছিল বোনের বিয়ে সে তাদের শহরের বাড়ি থেকে হোক।কিন্তু আম্বিয়া মির্জা আর জাফর মির্জা কোনো মতেই রাজি নয়।বাড়ি ভর্তি মানুষ গিজগিজ করছে। তবে এতো মানুষের ভীড়ে রাহানের বোন রিধি আসতে পারে নি। ওয়াজিদ কে সেখানের হসপিটাল থেকে কিছুতেই ছাড়াতে রাজি নয়।ওয়াজিদ বাধ্য হয়ে থাকতে রাজি হয়েছে।এখন সেখানে সেটেল্ড হওয়া ব্যতিত আর কোনো রাস্তা নেই।যদিও ওয়াজিদ এর মত আছে বলেই হসপিটাল কর্তৃপক্ষ রাখতে পেরেছে।তবে ব্যাপার টা ওয়াজিদ সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়েছে সে চাই ওখানে নিজের ছেলেমেয়ে লেখা পড়া করবে ভবিষ্যতে। বাংলাদেশে পড়াশোনার যা অবস্থা তাই ওখানে পড়াশোনা করার ব্যাপার টা বেশি গুরত্ব দিলো ওয়াজিদ। রিধি আর কিছু বলে নি।এটার অবশ্য একটা কারণ রয়েছে রিধি কনসিভ করেছে তিন মাস চলে।তাই এই অবস্থা ট্রাভেলিং করার টা ভালো হবে না।
রোজিনা বেগম কিছু টা মন খারাপ বড় মেয়ে রিধি।তারউপর মা হচ্ছে এখন তো মেয়ে ওনার কাছে থাকতো।সেখানে ছেলের বিয়েতেও মেয়ে আসতে পারছে না। তাই মনমরা হয়ে থাকছে। কোনো কাজেই যেনো হাত লাগছে না।

-“মনি!”

রোজিনা বেগম লিভিং রুমের পাশেই বারান্দায় বসে আছে। প্রিয়তা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ডেকে ওঠে।
রোজিনা বেগম কিছু টা হকচকিয়ে প্রিয়তার হাত টেনে সামনে আনলো।প্রিয়তা মুচকি হেঁসে ওনার পাশে বসে শাড়ীর আঁচল আঙ্গুলে পেঁচাতে পেঁচাত ঠোঁট উল্টে বলল,

-“আমি এখনো কিছু খাই নি।”

-“সে কি?
সাদনান কে যে খাবার দিয়ে বলেছিলাম তোকে খাইয়ে দিতে?”

-“ওনার না-কি কাজ আছে।
আমায় খেতে বলে চলে এসছে।”

-“আচ্ছা।
তুই বস।
আমি খাবার টা নিয়ে আসি।সারা টাও খায় নি।একটু পরেই হলুদ তারপর মেহেদী ওকেও খাইয়ে দিতে হবে। নয়তো মেয়ে টার আর খাওয়া হবে না। ”

রোজিনা বেগম কথা শেষ চলে গেলো। প্রিয়তা আয়েশ করে বসে বাহিরে তাকালো।সেখানে হলুদের জায়গায় সহ বিশাল বড় স্টেজ করা হয়েছে।সাদনান সেখানে পাশে বসে আছে। তার আশেপাশে কিছু গার্ড রয়েছে।মানুষ টা কোনো অনুষ্ঠান হলেই শুভ্র পাঞ্জাবি ছেড়ে কালো পাঞ্জাবি পড়ে।এতে আরো ভয়ংকর সুন্দর লাগে।প্রিয়তার পাশে এসেই রোজিনা বেগম সহ সারা বসতেই প্রিয়তা দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
রোজিনা বেগম দু’জন কে খাইয়ে দিলো টুকটাক কথা বলতে বলতে। খাওয়া শেষ এঁটো প্লেট হাতে ছুটলো রান্না ঘরে।

—–

তিন্নি একটা আরামদায়ক চেয়ারে বসে আছে।কবির তিন্নির পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। তিন্নি কাঁচা হলুদ শাড়ী পড়ে অল্পস্বল্প তাজা ফুলের গহনা পড়েছে।মায়াবী দেখতে লাগছে। কবির বারংবারই বউয়ের দিকে তাকাচ্ছে। তবে তিন্নির অল্পস্বল্প মন খারাপ সবাই কত আনন্দ করছে অথচ সে বসে আছে। অবশ্য সবাই আনন্দ করছে বললে ভুল হবে।মাইশা ছেলে কে একটু পরপরই কোলে নিতে হচ্ছে। আর প্রিয়তা আম্বিয়া মির্জার সাথে বসে আছে এটা আম্বিয়া মির্জার আদেশ।

সারা আর রাহান কে পাশাপাশি বসিয়ে হলুদ দেওয়া হচ্ছে।হলুদ সাজে সারা কে চমৎকার দেখতে লাগছে। আস্ত একটা তাজা ফুল বসে আছে যেনো।রাহান সারা’র মুখ দর্শন একবার করেছে আর তাকায় নি।যদিও কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলে?
তারচেয়ে বরং প্রেয়সী কে সে পরে সায়েস্তা করবে।সাদনান দূর থেকে বউ কে পর্যবেক্ষণ করে।হলুদ অনুষ্ঠান এর মধ্যে সারা কে মেহেদী লাগালো দু’জন মেহদি আর্টিস্ট।একে একে সবাই লাগালো।শুধু প্রিয়তা আম্বিয়া মির্জার সাথে বাড়ির ভেতর চলে গেলো। সাদনান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দাদি সহ বউয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।

—-

সারা একটু আগেই রুমে এসছে।হাতের মতো মেহেদী শুঁকিয়েছে।সেগুলো তুলে শাড়ী চেঞ্জ করে নরমাল পোশাক পড়ে নিলো।ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে এসে।চুল গুলো আঁচড়ে নিলো।অবশ্য চুল গুলো আঁচড়াতে বেশ কসরত করে হলো।চুল আঁচড়ে লাইট অফ করে বিছানায় শোয়ার প্রস্তুতি নিতেই ব্যালকনিতে শব্দ হলো।মনে হলো ঠাশ করে কিছু পড়লো।সারা প্রথমে ভয়ে পেলো সেকেন্ড এর মতো সময় পর কিছু ভেবে চট করে বিছানা ছেড়ে এগিয়ে গেলো।দরজা খুলতেই রাহান সারা কে ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো।
সারা নিজেও পেছনে পেছনে আসতে আসতে কিছু টা চাপাস্বরে বলে উঠলো,

-“আল্লাহ!আপনি আবার আজ পাইপ বেয়ে উপর এসছেন?”

-“নাহ।
তোর বাপ আমায় বরণ করে তোর রুমে পাঠিয়েছে।
ইস্টুপিট।”

রাহান দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো। বিছানায় ততক্ষণে সটান হয়ে শুয়ে পড়েছে। সারা এসে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

-“হয়েছে।
আজ কেনো এতো উঁচু বেয়ে আসতে গেলেন?”

-“সেদিন ভালোবাসা দেখতে এসছি।আর আজ অধরসুধা প্রাণ করতে।”

বলে শোয়া থেকে ওঠে বসে রাহান।পরপরই সারা কে টেনে নিজের পাশে বসালো।সারা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাতেই রাহান নেশাময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে সারা’র দুই গালে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে নিলো।সারা ভয়ে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে এক হাত রাহানের মুখ আলগোছে রেখে বাঁধা প্রদান করলো।
রাহান ভ্রু কুঁচকালো।
থমথমে কণ্ঠে আদেশ করলো,

-“হাত টা সরা।”

-“এতো বছর অপেক্ষা করলেন।
আর কিছু ঘন্টা মাত্র।”

-“প্লিজ বাঁধা দিস না।
রাত একটা বাজে।নিজের সাথে অনেকটা যুদ্ধ করেই এখানে এসছি।ঘুম আসছে না।দিয়ে দে।জাস্ট টু মিনিটস্”

কি করুণ কণ্ঠে আবদার। সারা ফিরে দেয় কি করে? যেখানে ভালবাসার মানুষ সাথে রাত পোহালে মানুষ টাকে পবিত্র এক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ নিজের করে পাবে।
হাত টা এগিয়ে রাহানের গলা জড়িয়ে ধরে।
রাহান সম্মতি পেয়ে সময় ব্যায় করলো না।মূহুর্তে মধ্যে সারা অধর নিজের অধরের মাঝে সন্ধি ঘটালো।

—–

-“মেহেদী কেনো লাগাও নি?”

-“সময় পাই নি।
দাদির সাথে ছিলাম।”

সাদনান কিছু না বলে আবার রুম হতে বেরিয়ে গেলো।প্রিয়তা বেশি কিছু না ভেবে শাড়ী চেঞ্জ করে রাতের পোষাক পড়ে ওয়াশ রুমে হতে বেরিয়ে এলো।এসেই সাদনান কে সোফায় মেহেদীর কোণ হাতে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“আপনি এটা কেনো নিয়ে বসে আছেন?”

সাদনান কোনো জবাব দিলো না। প্রিয়তা বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই সাদনান পেছন থেকে গম্ভীর কণ্ঠে ডেকে বলল,

-“এদিকে এসো।
এসো!”

প্রিয়তা কিছু টা অবাক হয়ে এগিয়ে যেতেই সাদনান বউ কে টেনে পাশে বসিয়ে হাতে মেহেদী লাগাতে শুরু করে।
একদম আঁকাবাঁকা। তবে প্রিয়তার চোখে মনে হলো পৃথিবীতে এরচেয়ে সুন্দর করে কেউ আর মেহেদী আর্ট করতে পারবে না।হয়তো প্রিয় মানুষের এতোটুকু যত্ন অনেকটাই গভীর কোনো আঘাত কে ভুলিয়ে দিতে সক্ষম হবে।প্রিয়তা খুশিতে চোখ চিকচিক করে।সাদনান মেহেদী এমনভাবে দিয়েছে হাতের তালুতে ফাঁকা রয়েছে। সাদনান ইচ্ছে করে রেখেছে। সেখানে সুন্দর করে নিজের নাম টা।লিখে দিলো।অপর হাতেই সেম ডিজাইন তবে সেখানে প্রিয়তার নাম।
প্রিয়তা একটু নড়াচড়া করে না।চুপটি করে সাদনানের মুখের দিকে তাকায় একবার তো হাতের দিকে।সাদনান মেহেদী দিতে বেশ অনেকটাই সময় লাগে।পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার ফলে।প্রিয়তা সাদনান মেহেদী দেওয়া শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাদনানের গালে টুপ করে চুমু খায়।যদিও সাদনান সবসময়ই বউয়ের প্রতি ভীষণ কেয়ারিং। তবে প্রিয়তার কাছে এটা অন্যরকম লাগলো।
সাদনান বউয়ের কোমড় জড়িয়ে ধরতেই প্রিয়তার ধ্যান ভাঙ্গে। নিজে দুই হাত সাদনানের কাঁধের উপর সোজা করে রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই সাদনান চোখে হাসলো।অধর এগিয়ে বউয়ের অধর স্পর্শ করলো। প্রিয়তা ছটফট করে। দম বন্ধ হয়ে আসে।কিন্তু সাদনান ছাড়ার নাম-ই নেই।প্রিয়তা হাতে মেহেদী দেওয়ার ফলে কিছু করতেও পারছে না।প্রিয়তা কে এভাবে ছটফট করতে দেখে সাদনান মিনিট এর মাথায় বউয়ের অধর ছাড়ে।
কোমড় হতে হাত সরিয়ে প্রিয়তার মুখ নিজের দুই হাতের আঁজলে নিয়ে নেশাতুর কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“জাস্ট ফাইভ মিনিটস্ জান।
কষ্ট করে এটুকু সময় থাকো।”

পরপরই আবার বউয়ের অধরে হামলে পড়ে। প্রিয়তা না চাইতেও সঙ্গ দিলো।সাদনান যেনো উন্মাদ গাঢ় হতে প্রগাঢ় হচ্ছে হাতের আর অধর স্পর্শ। প্রিয়তা অনেক টাই জোর করে নিজে কিছু টা পেছনে সরে বসলো।
সাদনান প্রিয়তার দিকে আহত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।মন ভরে নি পুরুষ টার।বউ তো এমন নয়।তবে আজ কেনো এমন রিয়াকশন দিলো সাদনান বুঝতে পারলো না। তবে সময় অপচয় না করে বউ কে কোলে তুলে ওয়াশ রুমের দিকে ছুটলো।
প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছিল।হঠাৎ নিজে কে কারোর দখলে বুঝতে পেরে ঝটপট চোখ খুলে বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো,

-“কোলে কেনো নিয়েছেন?”

সাদনান জবাব দেয় না।বউ কে সোজা ওয়াশ রুম নিয়ে বেসিনের সামনে দাঁড় করিয়ে হাত দু’টো পানির নিচে দিয়ে ধুয়ে নিলো।আবার কোলে তুলে রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে লাইট অফ করে দিলো।প্রিয়তা পুরো টা সময় মুগ্ধ হয়ে দেখলো।তবে সাদনান কে কাছে আসতে দেখেই ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,

-“তাই তো বলি এতো কেনো কেয়ার!”

-“ইইউ মিন আমি নয়তো তোমার কেয়ার করি না?”

সাদনান থমথমে কণ্ঠে এরূপ প্রশ্নে প্রিয়তা ঠোঁট টিপে হেঁসে জবাব দিলো,

-“করেন তো।
খবরদারী।”

সাদনান দেখলো।আবছা আলোয়ে বউয়ের চোখে-মুখে হাসির ঝলক দেখতে পেয়ে বুঝতে পারলো প্রিয়তা মজা করছে। সাদনান প্রিয়তা কে এবার নিজের উপর থেকে নিচে ফেলে দিলো।
নিজে বউয়ের উপর চড়ে বসে আগের ন্যায় থমথমে কণ্ঠে জানালো,

-“তোমার যদি এটা মনে হয় তবে তাই।
আমার অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে যতদিন বিদ্যমান ঠিক ততদিন তোমার জীবনেও এসব বিরাজমান।”

#চলবে….

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৩৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“দিলি তো বুকের হাহাকার বাড়িয়ে!”

সারা রাহানের কথায় লাজুক হেঁসে মাথা নিচু করে নিলো।বিয়ের ভারী মেক-আপ এ রমণী সারা কে দারুণ দেখতে লাগছে।
রাহান ফোন ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে মাথায় পাগড়ি পড়তে পড়তে আবার বলল,

-“আসছি।
অপেক্ষা কর।

অতঃপর কল কেটে দিলো। আয়ান সহ আরো কিছু ছেলে তখন রুমে এলো।রাহান কে সাথে নিয়ে নিচে এলো।আসার সময় অবশ্যই রাহান কে সবাই খুঁচাতে ভুলে না।

—-

সারা কে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাহাত আয়ান সাদনান সবাই এলো।মহিলারা সবাই সরে জায়গায় দিলো পুরুষদের। প্রিয়তা তখন এক পাশে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। সাদনান বউয়ের দিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে অবাক হলো। শাড়ী সে যেভাবে পড়িয়ে দিয়েছে সেভাবেই রয়েছে। মুকে কোনো রকম সাজ নেই।লম্বা চুল গুলো হাত খোঁপা বাঁধা হয়তো। মাথায় ঘোমটা টানা তবে আশেপাশে দিয়ে কিছু চুল উঁকিঝুঁকি মারছে সেই কারণ সাদনান কিছু টা অনুমান করলো।যেখানে বিয়ের সাজে সবাই ভারী মেক-আপ দিয়ে একএকজন এর আসল চেহারা বুঝার উপায় নেই সেখানে তার বউ কে এম বিধস্ত কেনো দেখাচ্ছে?
কি হয়েছে মেয়েটার?সাদনান বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে প্রিয়তাও তাকালো সাদনানের দিকে। দু’জনের দৃষ্টি মিলন হলো।প্রিয়তা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে আশেপাশে তাকালো।ততক্ষণে রাহাত বোন কে আগলে নিয়ে বিছানা হতে এগিয়ে এসেছে। সাদনান বোন কে আরেক পাশে দিয়ে আগলো ধরলো।অতঃপর এগিয়ে গেলো তাঁরা। পেছনে পেছনে সব মানুষের সিরিয়াল করে তাদের অনুসরণ করে। সাদনান বারকয়েক পেছনেই তাকায়।তার পেছনে কতগুলো মেয়ে রয়েছে। কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকেই দেখছে। কিন্তু সাদনানের সেসবে নজর নেই। তাঁর নজর একদম পেছনে লম্বা হওয়ার দরুনে একদম রুম পর্যন্ত দেখতে পেলো।বউ কেমন দুর্বল পায়ে এগিয়ে আসছে। সাদনান হঠাৎ মনে হলো।সকালে মেয়ে টাকে খাবার খাইয়ে দিতে গেলো প্রিয়তা পরে খাবে বলে বারণ করে দেয়।সাদনান অনেক জোরাজুরি করেও বিশেষ কোনো লাভ হয় নি।এরপর তো সে আর রুমে যায় নি।আর এক্কেবারে যখন গিয়েছে তখন বারো টা বাজে।নিজে শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে প্রিয়তা কে রেডি করে হন্তদন্ত হয়ে আবার ছুটে নিচে চলে গিয়েছিল। কিছু সুনামধন্য ব্যক্তি এসেছিল তাদের রিসিভ করতে।এরমধ্যে এতো দৌড়া দৌড়েতে আর একবার খোঁজ নেওয়া হয় নি মেয়ে টা খেয়েছে কি-না?
সারা কে বসিয়ে এগিয়ে গেলো সাদনান চাচির কাছে।আস্তে করে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে জানতে চাইলো,

-“ছোট মা ও খাবার খেয়েছিল?
সকালে?”

-“নাহ আব্বা।
তুমি তো খাবার নিয়ে আবার ফিরে দিলে খালা কে দিয়ে।
এরপর আর ও আসে নি।
কেনো ও আর খায় নি?”

-“ইস্টুপিট।
আচ্ছা শোনো রুমে খাবার দাও।
আমি রুমে যাচ্ছি।”

প্রথমে বিড়বিড় করে বলে পরে সুফিয়া বেগম কে বলে রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরলো সাদনান।
প্রিয়তা নিচে আসার জন্য সবার পিছু পিছু আসছিল।কিন্তু হঠাৎ করে মাথা ঘুরে ওঠে।চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।নিচে আসার মতো শক্তি পায় না।একজন কাজের লোক ছিল সারা’র রুমে।তিনি করিডরে এসে প্রিয়তা কে দেখে বলে উঠলো,

-“ছোট গিন্নি?
আপনের কি শরীর ভালা না?”

-“তেমন কিছু না।
একটু দুর্বল লাগছে। আমায় রুমে দিয়ে আসুন একটু।”

প্রিয়তা মহিলার কাঁধে এক হাত রেখে আরেক হাতে শাড়ী সামলে রুমে এলো।বিছানায় বসে বলল,

-“দরজা টা চাপিয়ে যাবেন।
আর কাউ কে বলার দরকার নেই আমার শরীর খারাপ লাগছে।”

মহিলা টা মাথা নেড়ে জিগ্যেস করলো,

-“আমি কি ঠান্ডা পানি আনতাম?”

-“নাহ।
আপনি যান।”

মহিলা টা কিছু ভেবে রুম হতে বেরিয়ে গেলো।প্রিয়তা বারণ করেছে তাতে কি। তিনি তো এটা বলে দিবে কাউ কে সামনে পেলেই।মহিলা ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গিয়ে সিঁড়ি কাছে যেতেই সাদনান কে সিঁড়ি বেয়ে উপর আসতে দেখে হাত চাঁদ পাওয়ার মতো মুখে হাসি ফুটে উঠলো।এই বাড়িতে কাজ করছে অনেক দিন ধরে। বাড়ির প্রতিটা মানুষ ভীষণ ভালো।আর পুরোনো স্টাফ এর মধ্যে ওনি এখনো যুগ এর বেশি সময় ধরে কাজ করে।তাই আলাদা একটু দাম রয়েছে। সাদনান কে আসতে দেখে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে নমনীয় কণ্ঠে জানালো,

-“ছোট সাহেব ছোট গিন্নি রুমে আছে।
শরীর টা মনে হয় ভালা না।কেমন হাঁটতে পারছিল না। ধরে রুমে দিয়ে আইলাম।”

সাদনান বুঝি পুরো টা শুনে?সে তো অর্ধেক শুনেই দিশেহারা। কানে যেনো মহিলার বলা কথা গুলো বাজছে।ধুপধাপ পা ফেলে কিছু টা দৌড়ে রুমে এলো।দড়াম করে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে। প্রিয়তা চমকে ওঠে চোখ খুলে শোয়া থেকে ওঠে বসে।সাদনান অস্থির পায়ে ছুটে এলো।প্রিয়তার মুখ টা দুই হাতের আঁজলে নিয়ে বিচলিত কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“আগে কেনো বলো নি শরীর খারাপ লাগছে?”

-“কিচ্ছু হয় নি।
শরীর টা এমনি দুর্বল লাগছে। আপনি কেনো আসতে গেলেন?বিয়ে পড়ানো শুরু হবে তো এখন।”

-“সবাই আছে সেখানে।
তুমি খাবার কেনো খাও নি?”

-“আচ্ছা শুনুন।
এতো অস্থির হতে হবে না।”

প্রিয়তা বসা ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলো।ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে সেখান থেকে হাতে একটা কিছু নিলো।সাদনান বউয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে নিলো।প্রিয়তা হাতে কিট নিয়েছে।সাদনান সন্দিহান কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“এটা কেনো নিচ্ছো?
তোমার কি তাই মনে হচ্ছে?”

-“আগে টেস্ট করে আসি!”

বলে ওঠে দাঁড়াতে নিয়ে আবার মাথা ঘুরে গেলো।সাদনান তড়িৎ বউয়ের কোমড় পেঁচিয়ে ধরে। মেয়েটার এই এক সমস্যা। খাবার না খেলে মাথা ঘুরে। তারউপর শরীর বমির ভাব সেই সকাল থেকে হচ্ছে। কিন্তু ভেতর থেকে কিছুই আসে না।অবশ্যই পেটে কিছু থাকলে তো বমি হবে।
! সাদনান প্রিয়তা কে কোলে তুলে ওয়াশ রুম দিয়ে এলো।প্রিয়তা হাসলো।মানুষ টা সত্যি পাগল।প্রিয়তা ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে আসে প্রায় বিশ মিনিট এর মাথায় তাও সাদনানের ডাকাডাকিতে।সাদনান প্রিয়তা বেরিয়ে আসতে আগেই প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।প্রিয়তা টলমল পায়ে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো সাদনান কে।সাদনান কিছু জিগ্যেস করতে হলো না।প্রিয়তা ফুঁপিয়ে ওঠে ধরে আসা গলায় জানালো,

-“কংগ্রাচুলেশন।”

সাদনান প্রিয়তার কথায় চমকালো।বুকের ভেতর ধুকপুক ধুকপুক শব্দ হলো।অধর জোড়া তিরতির করে কাঁপতে লাগলো।কাঁপা কাঁপা অধর জোড়া সাদনান জিহ্বা ধারা ভিজিয়ে নিলো একবার।কাঁপতে থাকা অধর জোড়া নেড়ে অনেক্ক্ষণ পর বলে উঠলো,

-“আই কান্ট বিলিভ ইট, জান।
টাচ ওয়ান্স্?প্লিজ!”

সাদনান প্রিয়তা কে ছেড়ে দিয়ে হাঁটু মুড়ে নিচে বসে গেলো।প্রিয়তার পেট থেকে শাড়ী সরিয়ে উন্মুক্ত করলো মসৃণ পেট।ডান হাত টা একবার আলগোছে ছুঁয়ে দিতেই বা চোখ হতে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে সাথে সাথে মুছে নিয়ে মুখ এগিয়ে গভীর ভাবে অধর স্পর্শ করলো প্রিয়তার পেটে। প্রিয়তা সাদনানের মাথার চুল শক্ত করে ধরে বলে উঠলো,

-“সবে তো কিছু দিন।
এখনো,,

-“আমার অস্তিত্ব।
আমার তোমার ভালোবাসা এক প্রহর।”

সাদনানের আবেগি কথায় প্রিয়তার চক্ষু চড়কগাছ। মানুষ টা সুস্থ আছে? কি বলছে নিজে জানে?এই গম্ভীর মন্ত্রীর মুখে এসব যে অকল্পনীয়।প্রিয়তা বিস্ময় ভুলে অবাক হয়ে বলে উঠলো,

-“আরো কত প্রহর বাকি তবে?”

সাদনান প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
গভীর ভাবে আলিঙ্গন করে শুধালো,

-“অনেক অনেক।এক-এক একটা দিনের সূচনা মানে তোমার আমার ভালোবাসা সুন্দর একটা প্রহর এর সূচনা।”

#চলবে….

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ