Monday, October 6, 2025







আমার তুমি ২ পর্ব-২৮+২৯

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২৮
#জান্নাত_সুলতানা

-“আমি আমার বোন কে নিয়ে কোনো রকম ব্যবসা আমি করতে দেবো না।”

সাদনানের ধীরে আর গম্ভীর কণ্ঠে বলা কথা টায় আজ্জম মির্জা রেগে গেলেন।কিছু টা তেতে উঠে মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলো,

-“সাদনান!
মুখ সামলে কথা বলো।আমার মেয়ে কে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বলবে না।মেয়ে আমার।আর বিয়ের জন্য যোগ্য পাত্র পেয়েছি আমি।”

-“আমার মুখ নয়।আপনার চিন্তা ধারা পরিবর্তন করুন। তাহলে হয়তো এই ব্যবসার কথা টা আপনার কাছে ঠিক জঘন্য মনে হবে।কিন্তু জঘন্য হলেও আপনি এমনটাই করতে যাচ্ছেন।”

সাদনান আর দাঁড়াল না সেখানে। আজ্জম মির্জার রুম হতে বেরিয়ে এলো।সাদনান যখন রেগে থাকে তক্ষুনি আজ্জম মির্জা কে তুমি নয় আপনি সম্মোধন করে। আর এই মূহুর্তে সে আজ্জম মির্জার উপর শুধু রেগে নয়। ভয়ংকর রেগে আছে।মানুষ টা হয়তো সাময়িক লাভের জন্য কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা টের পাচ্ছে না। কিন্তু যখন বুঝতে পারবে সাদনান নিশ্চিত তখন আবার মিনমিন করে সাদনানের কাছে এসে বলবে,আসলে হয়েছে কি আমি বিষয় টা অতো গভীর করে ভেবে দেখি নি।”
কারণ প্রতিবারই তিনি কোনো না কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সেটা সাদনান ধরিয়ে দিলে এমনটাই হয়েছে।কিন্তু এখন ব্যাপার টা ভিন্ন। বোনের জীবনের প্রশ্ন।সেখানে সে কি করে বাবা-র এমন অবুঝ একটা আবদার মেনে নিবে!

——

মাইশার প্রেগন্যান্সির নয় মাসের বেশি সময় চলে।ফুলা ভারী পেট।গোলগাল মুখ। ঢিলাঢালা জামা।দারুণ মায়াবী দেখতে লাগে।আয়ানের বউ কে দেখলে আদর করতে ইচ্ছে করে তেমন পরক্ষণেই মনে ভয় এসে হানা দেয়।কি হবে ভবিষ্যতে? তার অনাগত সন্তান আর প্রেয়সীর কিছু হবে না তো?

-“কি ভাবছেন এতো?
কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি।”

মাইশার ডাকে আয়না ভাবনার ছেদ ঘটে।কিছু টা হকচকিয়ে জবাব দেয়,

-“হ্যাঁ বলো!”

-“আপনি হোটেল কেনো জান নি?একবার গিয়ে সুপারভাইজিং করে আসতেন অন্তত।”

-“বাবা আছে।
আমাকে যেতে হবে না।”

মাইশা ভ্রু কুঁচকায়।ইদানীং মানুষ টা বড্ড অন্যমনস্ক থাকছে। সাথে কিছু নিয়ে প্রায় কিছু বিড়বিড় করে বলছে আবার চিন্তায় কপালে ঘাম জমে।
মাইশা এবার আয়ানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।আয়ান সেটা দেখে বউ কে খুব সাবধানে নিজে হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিলো।মাইশা আয়ানের পেটে মুখ গুঁজে জিগ্যেস করলো,

-“আপনি কি কিছু নিয়ে টেনশন করছেন?”

আয়ান মাইশার চুল হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জবাব দিলো,

-“কি নিয়ে টেনশন করবো!
আচ্ছা তুমি একটু বসো আমি দুধ টা নিয়ে আসি।”

-“বাদাম বা খেজুর কোনো টা দিবেন না।
চকলেট দিয়েন,প্লিজ।”

আয়ান মাইশা কে বসতে সাহায্য করলো।মাইশার করুণ কণ্ঠে বলা কথায় বউয়ের মুখের দিকে তাকালো আয়ান।দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।এটা আজ নতুন নয়।দুধ খেতে এলেই তার সব সময় এমন আবদার। কিন্তু এতে যে কোনো পুষ্টি নেই সেটা কি এই মেয়ে বুঝে?সব সময় সুস্বাদু খাবার পুষ্টিকর হয় না।কিছু খাবার খেতে স্বাদ না হলেই সেটায় পুষ্টি থাকে।আয়ান কিছু না বলে রুম হতে বেরিয়ে গেলো।মাইশা বসে রইলো।সকাল থেকে শরীর টা ভালো যাচ্ছে না। কেমন অস্থির অস্থির করছে। সাথে পেটেও চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে। আয়ান কে বললে টেনশন করবে ডক্টর এর কাছে যাওয়ার জন্য জোর করবে সেই জন্য কিছু বলে নি।কিন্তু রাত বাড়ার সাথে সাথে চিনচিন ব্যাথা টা যেনো বাড়ছে বৈ কমছে না।
এখন তো দাঁতে দাঁত চেপেও ব্যাথা সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু হঠাৎ এমন কেনো হচ্ছে? ডক্টর এর দেওয়া ডেট অনুযায়ী তো এখনো আরো পনেরো দিন এর মতো সময় রয়েছে।তাহলে?

-“তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?
শরীর খারাপ লাগছে? পেটে ব্যাথা হচ্ছে?”

আয়ান দুধের গ্লাস পাশের টেবিলে রেখে দ্রুতে পায়ে এগিয়ে এসে মাইশা কে আগলে নিয়ে অস্থির কণ্ঠে জিগ্যেস করলো। মাইশা এক হাতে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে কিছু টা মূর্ছা যাওয়া কণ্ঠে জানালো,

-“পেটানো সামান্য পেইন হচ্ছে।”

আয়ান আর কিছু শুনলো না। মা কে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো।মিতা সওদাগর সহ একজন কাজের লোক ছুটে এলো।মিতা সওদাগর মাইশার কাছে এসে বসলো।মুখের বর্ণ পালটে গিয়েছে মেয়ে টার।মিতা সওদাগর কিছু আন্দাজ করে আয়ান কে বলল,

-“তোর বাবা কে গাড়ি নিয়ে আসতে বল।
ওকে হসপিটাল নিতে হবে।”

—–

-“বহুত তো রংঢং করলা স্বামী লইয়া। পড়ালেখার নাম কইরা বাড়ি থাইক্কা বাইরে যাও।নিজের মন মর্জি মতো চলো।বলি কি বিয়ের বয়স তো আর কম হইলো না দেখতে দেখতে বছর হয়ে এলো।তা এইবার কি বাচ্চাকাচ্চার মুখ দেখবো?”

হঠাৎই আম্বিয়া মির্জার এরূপ কথায় প্রিয়তা কিছু টা হকচকালো।আস্তে করে মাথা ঘুরিয়ে চোখ বুলিয়ে আশেপাশে দেখে নিলো।না তেমন কেউ নেই।হাতের চামটা টা নুডলস এর বাটিতে রেখে দিলো নিঃশব্দে।
এখন বিকেল এখানে আপাতত কেউ নেই। আম্বিয়া মির্জা তখন সেখানে এলো।প্রিয়তা কে একা পেয়ে কথা গুলো বলে দিলো। প্রিয়তা নড়েচড়ে বসলো। মিনমিন করে জানালো,

-“পরীক্ষা গতকাল শেষ হয়েছে দাদি।”

-“হ তা জানি।
পরীক্ষার লাইগা তো এতোদিন বাচ্চা লইছো না।এখন নিয়েও।”

কিছু টা বিদ্রূপ করে কথা গুলো বলল আম্বিয়া মির্জা। প্রিয়তার আঁখি পল্লব ছলছল করে।তার কি দোষ। সাদনান নিজেই তো এতো দ্রুত বাচ্চা নিতে রাজি নয়।সে তো অনেকবার বলেছিল।কিন্তু সাদনান নিজেই প্রতিবার সেটা এড়িয়ে যায়।আম্বিয়া মির্জা চলে গেলে প্রিয়তা পানি খেয়ে রুমে চলে আসার জন্য চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়াতে সালেহা বেগম কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো।
ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,

-“খাবার ফেলে কোথায় যাচ্ছিস?”

-“পেট ভরে গেছে।
সারা ডাকছে।যাই!”

সালেহা বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো প্রিয়তা কে।শাশুড়ী’র দেখা তিনি করিডরে পেয়েছে।খাবার ঘরে যে এসেছিল সেটা তক্ষুনি বুঝতে পেরেছে। আর প্রিয়তা ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে মনে পড়তে তড়িঘড়ি করে এসেছে। যা ঘটবার সে যে ঘটে গিয়েছে ভালোই ঠাহর করতে পারে সালেহা বেগম। তবে কোনো রূপ প্রশ্ন করলো না প্রিয়তা কে।শুধু প্রিয়তার টলমটল পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার দিকে তাকিয়ে রইলো।

—-

রাতে প্রিয়তা খাবার খেতে গেলো না।সালেহা বেগম বেশি জোর করলো না।ভাবলো ছেলে এলে ছেলে বউ কে খাইয়ে দিতে বলবে।রাত সাড়ে বারো টা নাগাদ সাদনান বাড়ি ফিরলো।
আসার সময় মাইশা কে দেখে এসছে।মাইশার পুত্র সন্তান হয়েছে। সাদনান ভাগ্নে কে একটা স্বর্ণের চেইন দিয়ে কোলে নিয়েছে। বেশ ভলোই লেগেছে। অনুভূতি দারুণ ভালো লেগেছে।কেমন মনের মধ্যে এখন বাবা হওয়ার আলাদা একটা অদ্ভুত ইচ্ছে জেগেছে। অবশ্যই অদ্ভুত নয়।এটাই তো একটা ছেলে বা মেয়ের মনের সবচেয়ে বড়ো স্বপ্ন সেও একদিন বাবা হবে মা হবে। তাদেরও কেউ আদোও আদোও কণ্ঠে ডাকবে, আবব্বা, মা।এই পাওয়া টা হয়তো পৃথিবীর অন্যতম পাওয়া গুলোর মধ্যে একটা পাওয়া।
সাদনান বাড়ি ফিরে লিভিং রুমে মায়ের সাথে আগে সাক্ষাৎ করলো।সালেহা বেগম কে সাদনান ঘুমিয়ে যেতে বললো।সালেহা বেগম কাজের লোক কে সব গুছিয়ে রাখতে বলে রুমে চলে গেলো। সাদনান খাবার হাতে এক্কেবারে রুমে এলো।খাবার সেন্টার টেবিলে রেখে ঘুমন্ত বউয়ের মুখের দিকে কিচ্ছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা টাওয়াল হাতে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। মিনিট পনেরো এর মাথায় বেরিয়ে এলো।বউ তখনো ঘুমিয়ে আছে। সাদনান চুল মুছে একটা গেঞ্জি আর ট্রাউজার পড়ে নিয়ে বউয়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলো। একটু নিচু হয়ে বউয়ের ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিতেই প্রিয়তা কেঁপে উঠল। সাদনান সরে এসে মৃদু কণ্ঠে ডাকলো,

-“জান উঠো।
খাবার খেতে হবে। চলে এসছি আমি।”

সাদনানের কণ্ঠ শোনে প্রিয়তা অল্পস্বল্প চোখ খুলে তাকালো সাদনানের দিকে।ক্লান্তিকর মুখের দিকে তাকালো।বিকেলে আম্বিয়া মির্জা কথা গুলো বলেছে পর থেকে সেগুলো মাথায় ঘুরছে।তাই সাদনানের ক্লান্তিকর মুখ দেখে আজ খারাপ লাগে না।বরং রাগ হয়।এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,

-“আপনি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।
খাব না আমি।”

সাদনান ভ্রু কুঁচকালো। বউয়ের মতিগতি বুঝতে পারে না সে।তবে আসার সময় মায়ের থেকে সব শুনে এসছে।
বউ রেগে আছে।সাদনান অনেক জোরাজুরি করে বউ কে শোয়া থেকে ওঠা বসালো।খাবার এনে কিছু টা জোর করে খাইয়ে দিলো প্রিয়তা কে।প্রিয়তা খাবার খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো। সাদনান এঁটো প্লেট রেখে হাত ধুয়ে এসে বউয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। বিছানায় শুয়ে পাশের দেওয়ালে সুইচ টিপে লাইট অফ করে বউ কে এক ঝটকায় নিজের উপরে নিয়ে এলো।প্রিয়তা আকস্মিক ঘটনায় চমকে ওঠে সাদনানের বুকের গেঞ্জি দু-হাতে শক্ত করে চেপে ধরলো। সাদনান ড্রীম লাইটের মৃদু আলোতে বউয়ের এলোমেলো চুল গুলো এক হাতে সরিয়ে দিয়ে বলল,

-“মিশানের জন্য বউ আনার মিশন তবে শুরু করি!”

-“বাবুর নাম রেখে দিয়েছে?”

প্রিয়তা সরে যেতে চাচ্ছিল।কিন্তু সাদনানের কথা সেটা আর করে না। অবাক হয়ে জানতে চাইলো

-“হ্যাঁ মাইশা রেখেছে।”

প্রিয়তা সাদনানের কথার বিপরীতে হয়তো আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল।কিন্তু কিছু বলার আগেই সাদনান বলে উঠলো,

-“আর কোন কথা নয়।
মিশন জলদি শুরু করতে হবে।”

#চলবে…..

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২৯
#জান্নাত_সুলতানা

-“শুনলাম তোমার ঠিক করা পাত্র বিদেশিনী বিয়ে করে দেশে ফিরেছে!ওয়াও।”

সাদনানের চোখে মুখে হাসির ঝলক নিয়ে কথা টা জানালো। আজ্জম মির্জা চোরা চোখে ছেলের দিকে একবার আঁড়চোখে তাকালো।বিচ্ছু একটা। এটা এভাবে ঘটা করে সবার সামনে বলার কি আছে? আর সবচেয়ে বড়ো কথা এই বিচ্ছু এই খবর টা পেলো কোথা থেকে? আজ্জম মির্জা খাবার নড়াচড়া করতে করতে কথা গুলো ভাবছিল। তক্ষুনি সাদনান আবার বলে উঠলো,

-“কি ভাবছো?নিশ্চয়ই ভাবছো ইনফরমেশন পেলাম কি করে?ওহ্ কামন বাবা।আমি একজন মন্ত্রী এই ইনফরমেশন টা কালেক্ট করতে জাস্ট আমার সাত মিনিট টাইম লেগেছে।”

আজ্জম মির্জা কথা ঘুরিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“তা তোমার পাত্র কোথায়?
আমার সাথে দেখা করাবে না?”

-“অবশ্যই।
কাল বিকেলে আমি তোমার সাথে মিট করাবো।
বি রেডি।”

সাদনান খাবার শেষ চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। বউয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো।

—–

সারা কেঁদেকুটে নাজেহাল অবস্থা করে ফেলেছে নিজের চোখ মুখের।বাবা আর ভাই মিলে কি শুরু করে দিয়েছে ভাবলেই বুক ফেটে কান্না আসছে সারা’র। সবাই পাত্র নিয়ে যুদ্ধ করছে। অথচ সারা কে একবারও কেউ কিছু জিগ্যেস করার প্রয়োজন মনে করলো না!এটা কেমন বিচার? যার জন্য পাত্র দেখছে তাকে একবার জিগ্যেস করলে না ওর পছন্দ আছে কি না?ও কি চায়?প্রিয়তা সারা’র কান্নার কারণ জানে।অনেকক্ষণ হয় সারা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। প্রিয়তা বুঝাচ্ছে।কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।এদিকে রাত বাড়ছে।সাদনান নিশ্চয়ই বসে আছে। প্রিয়তার রাগ হলো সাদনানের উপর। কি অদ্ভুত লোক সব সময় তো ভাব এমন যেনো বোনদের সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তবে এখন কেনো এরূপ আচরণ করছে?কোথায় আয়ান তো এমন করে নি।বরং প্রিয়তার বাবা একটু জোর করেছিল বিয়ের জন্য। কিন্তু আয়ান বোন কে কি সুন্দর করে বুঝিয়েছে তাই তো মনে সাহস পেয়েছিল।কিন্তু এখানে সাদনান তো উলটো করছে।প্রিয়তা সারা কে কোনো রকম বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা শুরু করলো।মনে মনে আসার সময় ঠিক করে নিলো রুমে এসে বজ্জাত লোক টার সাথে কোনো কথা বলবে না আজ।
সাদনান আয়েশ করে সোফায় বসে কুশন কোলে ফোনে স্ক্রল করছিল।রুমে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে ছোট ছোট চোখ করে সেদিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।প্রিয়তা ধুপধাপ পা ফেলে কাবাড থেকে রাতের পোষাক নিলো।
ওয়াশ রুমে গিয়ে ঠাশ করে দরজা লক করলো।সাদনান একটু নড়েচড়ে বসে। বউয়ের হঠাৎ হলো কি?পরক্ষণেই বুঝতে পারে।ভ্রু কুঁচকে ওয়াশ রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে।বউয়ের বেরুনোর অপেক্ষা করে।
প্রিয়তা মিনিট পাঁচ এর মধ্যে বেরিয়ে এলো।নাইটির ফিতা বেঁধে এসে কোনো দিকে না তাকিয়ে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে শুয়ে পড়লো। সাদনান কিছু টা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।বউ তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। ভাবা যায়?মন্ত্রী সাদনান শাহরিয়ার কে ইগনোর করছে তার বউ।এটা যদি জণগণ জানতে পারে নিশ্চিত তাকে নিয়ে সবাই হাসি-তামাশা করতে পিছ বা হবে না।নিউজ হবে আর সেখানে হেডলাইন হবে বড় বড় অক্ষর করে লেখা থাকবে, মন্ত্রী বউ মন্ত্রী কে পাত্তা দেয় না।” কি ভয়ানক!সাদনান আবছা আলোয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে বিছানার দিকে তাকিয়ে সেন্ডেল পায়ে দিয়ে এগিয়ে গেলো।ফোন রেখে চপ্পল খুলে বিছানায় বসতেই প্রিয়তা আরো কিছু টা গুটিশুটি মেরে গেলো।সাদনান এবার আশাহত। সত্যি সে আশাহত বউ তাকে ইগনোর করছে তাও আবার যেমন-তেমন ইগনোর নয়।যেনো তার ছায়া মারালেও ভয়ংকর কিছু ঘটে যাবে।
তবে সাদনান কি দমে যাওয়ার পাত্র? উঁহু। একদমই নয়।দানবীয় হাত এগিয়ে বউ কে খাবলে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো। প্রিয়তা বিরক্ত ভ্রু নাক কুঁচকে দৃষ্টিপাত করে সাদনানের দিকে। সাদনান গভীর দৃষ্টিতে বউ কে পর্যবেক্ষণ করলো।আস্তে করে বউয়ের কানের লতিতে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দিতেই প্রিয়তা সাদনান কে কিছু টা জোর খাঁটিয়ে নিজের উপর থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে উঠলো,

-“রাহান ভাইয়া সারা কে ভালোবাসে।
আপনি জানেন।তাহলে পাত্র কেনো দেখছেন?”

-“হোয়াট ইজ দিস!
এমন একটা রোমান্টিক মূহুর্তে তুমি আমার অনুভূতির দফারফা করে দিলে।
ভেরি বেড জান।”

প্রিয়তা অবাকই হলো।কি অদ্ভুত লোক।বোন কেঁদেকুটে নাজেহাল অবস্থা করে ফেলেছে নিজের। আর এই লোক?এতো সিরিয়াস একটা বিষয় কে কত টা হেলাফেলা করে নিচ্ছে। রাগ হলো প্রিয়তার কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই সাদনান বলে উঠলো,

-“বিশ্বাস রাখো।ধৈর্য্য ধরো।কখনো হতাশ করবো না জান।
সময় দাও সব ঠিক করে দেব।”

প্রিয়তা জানে সাদনানের কখনো এমন কিছু করবে না যাতে করে সারা কষ্ট পাবে।কিন্তু তাও কেনো জানি রাগ হচ্ছিল। তবে এখন সাদনানের কথা শুনে রাগ সব গলে আগুন থেকে পানি হয়ে গেলো।গলা জড়িয়ে ধরলো সাদনানের।গদগদ কণ্ঠে আহ্লাদী স্বরে আবদার জুড়ে দিলো,

-“প্লিজ এমন কিছু করবেন না যাতে করে ওরা দু’জন কষ্ট পায়।”

-“বাহ্,বাহ্।অন্যের জন্য কত দরদ।কষ্ট পাবে। আর আমি? আমি যে বউয়ের ভালোবাসার অভাবে কষ্ট পাচ্ছি? বুক চৌচির হয়ে যাচ্ছে।বউ কে এই মূহুর্তে আদর না করতে পারলে সেই কষ্ট সব বেরিয়ে এসে তোমার নামে আন্দোলন করবে।”

প্রিয়তা প্রথমে লজ্জা পেলেও পরক্ষণেই সাদনানের এমন আজগুবি সব কথাবার্তায় পেট মুচড়ে হাসি পেলো। শব্দ করে হাসতে লাগলো। সাদনান বউয়ের নাইটির ফিতা খুলে পেটে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরতেই প্রিয়তার হাসি গায়েব হয়ে গেলো।শক্ত করে সাদনানের চুল খামচে ধরলো। সাদনান বউয়ের পেট থেকে মুখ তুলে বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো,

-“বউ কি করে কন্ট্রোল করতে হয়।মির্জা সাদনান শাহরিয়ার ভালো করেই জানে।”

——

রাতের খাবার সব গুছিয়ে তিন্নি রুমে এলো।কবির ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে এসেছে মাত্র।
তিন্নি কবির কে বলল,

-“চলুন খাবেন।
বাবা বসে আছে।”

কবির মুচকি হাসলো। টাওয়াল তিন্নির হাতে দিয়ে বলল,

-“তুমিও এসো।”

কবির ভাবলো তিন্নি হয়তো টাওয়াল ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে তার পেছন পেছন আসবে।কিন্তু না।কবির খাবার টেবিলে গিয়েও কতক্ষণ বসে রইলো।কালাম খান কবির কে বকাঝকা করতে লাগলো।সে কেনো সাথে করে তিন্নি কে নিয়ে এলো না?
কবির বাবা-র দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফের রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরলো।রুমে এসে কবির অবাক হলো।তিন্নি বিছানায় মাথা চেপে ধরে বসে আছে।এই প্রথম তিন্নি রাতে খাবার দিয়ে রুমে চলে এসছে। আজ পাঁচ মাসে এর আগে কখনো এমন হয় নি।হঠাৎ হলো কি মেয়ে টার?
কবির এগিয়ে গেলো। তিন্নির কাঁধে আলগোছে হাত রেখে ভ্রু উঁচিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“কি ব্যাপার খাবার কেনো খেতে আসো নি?
চলো খাবে?”

-“খেতে ইচ্ছে করে না।
আপনি আর বাবা খেয়ে আসুন।আমি শুয়ে পড়ছি।ভালো লাগছে না।”

কণ্ঠ কেমন ক্লান্ত। কবির বেশ কিছু দিন হয় তিন্নির কে ডক্টর এর কাছে যাওয়ার জন্য ঘ্যানঘ্যান করছে।কারণ অনেক গুলো তিন্নি খাবার খেতে পারে না।চোখের নিচে কালশিটে দাগ বসেছে। মাঝে মধ্যে তো হঠাৎই রেগে যায়।
কবির ফিরে গেলো।কালাম খান কে খাবার খেতে বলে নিজেও খেলো।কালাম খান আর কোনো কিছু জিগ্যেস করলো না।কবির আসার সময় খাবার নিয়ে রুমে এলো।কাজের লোক কে সব গুছিয়ে রেখে আসার কথা বলে এলো।
বেশ জোর করেই কিছু টা খাবার খাইয়ে দিলো তিন্নিকে কবির।তিন্নি খাবার খেয়ে পানি খেয়ে শুয়ে পড়লো।কিছু সময় ব্যবধানে ঘুমিয়েও পড়লো।কবির ঘুমন্ত তিন্নির মুখের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-“আমার সুখ তুমি।
তুমি অসুস্থ মানে আমার সুখ নামক অস্তিত্ব দুঃখে পরিণত হয়।কালই ডক্টর এর কাছে যাব তোমায় নিয়ে সোনা।”

#চলবে….

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ