#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১৮
#জান্নাত_সুলতানা
-“শাড়ী পড়ব?”
কবির বিছানায় বসে ল্যাপটপ কিছু করছিল।হঠাৎ তিন্নির প্রশ্নে তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল,
-“নাহ।
তবে সাথে করে একটা নিয়ে নাও।”
তিন্নি তাই করলো।একটা শাড়ী ব্যাগে নিয়ে নিলো।আর একটা থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
আজ মির্জা বাড়ি যাবে ওরা।বিয়ে হয়েছে আজ পাঁচ দিন। এই পাঁচ দিনে মফিজুর মির্জা সহ মির্জা বাড়ির সবাই যাওয়ার জন্য রোজ ফোন করছে।কবির যেতে চায় নি।কিন্তু তিন্নি? মেয়ে টার পরিবার নেই।সেটা যখন মির্জা বাড়ির সবাই বুঝতে দিতে চায় না। তাহলে সে কেনো দিবে?একদিনেরই তো ব্যাপার।
—–
সকালে নাস্তা করেই সাদনান বউ আর বোন কে নিয়ে মির্জা বাড়ি চলে এসছে।আয়ান আসে নি।পরে আসবে।মাইশা কেও দিতে চায় নি।কিন্তু মেয়ে টা সেদিন এয়ারপোর্টেও যেতে দেয় নি।মন খারাপ হতে পারে স্বাভাবিক। তাই আর বারণ করে নি।
সাদনান ওদের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে নিজের সিকিউরিটি নিয়ে আবার বেরিয়ে যায়।প্রিয়তা আগে ফ্রেশ হয়ে অতঃপর সারা’র রুমে উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
-“রাহান ভাই আমার হাতে লাগছে ছাড়ুন।”
সারা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল।আর রাহান হঠাৎ কোথা থেকে এসে হুমড়ি খেয়ে বারান্দায় এসে সারা’র কে টেনে এনে ঠাশ করে বারান্দার দরজা সাথে চেপে ধরে একটা হাত শক্ত করে সারা’র হাত টেনে ধরে। সারা আকস্মিক আক্রমণে ভয়ে পেয়ে গেলো।চোখ বন্ধ করে ব্যথাতুর শব্দ করে।সামনে দাঁড়ানো মানুষ টা যে রাহান সেটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না।তাই তো চোখ বন্ধ রেখেই উপরোক্ত কথা টা বলল।
রাহান ফোঁস ফোঁস করে।
চোয়াল শক্ত করে জানাল,
-“লাগার জন্যই ধরেছি।
আদর করতে নয়।”
-“ছিঃ কি সব বলেন?
ভুলে যাচ্ছেন আমি আপনার বোন।”
-“এই তোর মুখ আমি ভেঙ্গে ফেলবো।
তুই আমার বোন না আর না আমি তোর ভাই।”
-“একদম বেশি বলবেন না।”
-“আমি বেশি বলছি?
আর তুই যা করছিস ঠিক করছিস?কি শুরু করেছিস আজ একমাস নাগাদ?বলেছি না আমায় একটু সময় দেয়?”
হঠাৎ সারা শব্দ করে কেঁদে দিলো। রাহান হকচকাল।ভড়কে গিয়ে তড়িঘড়ি করে সারা’র হাত ছেড়ে সারা কে জড়িয়ে ধরলো।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
-“আই নো আমি তোকে টাইম দিতে পারি না। ঠিকঠাক দেখা হয় না কথা হয় না।অভিমান হবে।কিন্তু অভিমান ভাঙ্গার জন্য তো আমাকে তোর কাছাকাছি আসতে দিতে হবে। কিন্তু তুই?আমাকে ইগনোর করিস।আমি করতাম টা কি?”
সারা কোনো জবাব দিলো না।কান্নাও করছে না।চুপচাপ রাহানের বুকে মাথা রেখে সেভাবেই পড়ে রইলো।
রাহান নিজেও চোখ বন্ধ করে সারা কে জড়িয়ে ধরে রইলো।
-“সারা!”
প্রিয়তার কণ্ঠ শুনে দু’জন দু’দিকে ছিটকে দূরে সরে গেলো। প্রিয়তা চোখের উপর হাত রেখে বলল,
-“আমি কিছু দেখি নি।”
সারা প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে রুমের বাহিরে আসার উদ্দেশ্য হাঁটতে হাঁটতে অনুরোধের স্বরে বলল,
-“কাউ কে বলিস না প্লিজ।
বিশেষ করে আপু কে আর ভাবি কে।জানতে পারলে ইচ্ছে মতো পচাবে।”
প্রিয়তা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সারা’র দিকে। সারা প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে নিচে লিভিং রুমে চলে এলো।সেখানে বাড়ির সবাই আছে মোটামুটি। রিধি বসে ছিল আম্বিয়া মির্জার পাশে সেখান থেকে ওঠে এসে প্রিয়তা কে আগলে নিলো। আদর করলো।কপালে চুমু খেয়ে বলল,
-“এতো কেনো আদুরে তুই?
আগেও দেখলে আদর করতে ইচ্ছে করতো।”
প্রিয়তা মুচকি হাসলো। সত্যি কে সে ভীষণ আদুরে দেখতে? সবাই কেনো এমন বলে?প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই রিধি প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে সোফায় বসলো।
——
দুপুরে তিন্নি আর কবির এলো।সবাই হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে দিয়ে খাবার শেষ করে আড্ডা দিতে বসে গেলো।কবির তিন্নির দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়ে টা মনে হয় প্রথম বারের ন্যায় কবির ওকে এতো টা হাসিখুশি দেখলো।নিজের কাছের আপন ভালোবাসার মানুষ গুলো ভালো থাকলে নিজেদেরও মন ভালো হয়ে যায়। সুখী মনে হয় নিজদের।
আড্ডা শেষ সবাই যে যার রুমে গেলো।সাদনান বাড়ি ফিরেছে।মির্জা বাড়ি পুরো টা সিকিউরিটি দিয়ে ঘেরাও করা।কাল সকাল অব্ধি সাদনান এখানে থাকবে।তারপর বউ কে সাথে নিয়ে শহরে চলে যাবে।
প্রিয়তার মন খারাপ হলো এই খবর শোনার পর। সবাই কে ফেলে যেতে ইচ্ছে করছে না।
ভাবলো রাতে এব্যাপারে সাদনান এর সাথে কথা বলবে।প্রিয়তা রুমে গিয়ে অদ্ভুত একটা ঘ্রাণ পেলো।চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে বারকয়েক। সাদনান তখন বিছানায় বসে বউ কে নিজের কাছে ডাকল।প্রিয়তা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে সাদনানের সামনে দাঁড়াল। বাইরে অন্ধকার। মেঘ জমেছে আকাশে। হয়তো কিছু সময় ব্যবধানে সেগুলো বৃষ্টি হয়ে জমিনে লুটিয়ে পড়বে।প্রিয়তা লাইট অন করতে গেলে সাদনান বাঁধা দিলো।
বউ কে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে বালিশের পাশ থেকে একটা বেলি ফুলের মালা বেড় করলো।সামন্য নেতিয়ে গিয়েছে।
হয়তো দুপুরে কড়া রোদে।
প্রিয়তার কৌতূহল জাগে। এই ভরদুপুরে এটা কোথা থেকে আনলো?
সহসাই মনে প্রশ্ন টা আসা মাত্র জিগ্যেস করলো,
-“কোথা থেকে আনলেন এটা?
দেখি নি আমি!”
-“পকেটে করে এনেছি।
তাই দেখো নি।”
সাদনান প্রিয়তার হাতে সেটা বেঁধে দিতে দিতে জানালো।
প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,
-“কিন্তু পাঞ্জাবি আমি খুলে নিজে হাতে বিছানায় রেখে ছিলাম।”
-“প্যান্ট চেক করে ছিলে?”
আস্তে করে প্রিয়তার হাতের উলটো পিঠে চুমু খেয়ে বিছানা ছেড়ে ওঠে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে জিগ্যেস করলো।
প্রিয়তা নাকের কাছে নিজের হাত টা এগিয়ে নিয়ে ঘ্রাণ শুঁকে।
লম্বা শ্বাস টেনে জবাব দিলো,
-“নাহ।”
দূর দূর বাড়ির চারদিকে কালো পোশাক পরিহিত সিকিউরিটি দাঁড়িয়ে আছে।
দৃষ্টি তাদের উলটো দিকে। বাড়ির দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আছে।
সবার হাতে বন্দুক সাথে একটা করে ছাতা।হয়তো বৃষ্টির জন্য নিয়েছে।ব্যালকনিতে যাওয়া মাত্র দক্ষিণা শীতল বাতাস এসে গা ছুঁয়ে গেলো।
প্রিয়তা শরীর সব গুলো লোমকূপ শিরশির করে উঠল।শিহরণ দিলো শরীর। সাদনান প্রিয়তা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ঘষে। প্রিয়তা এক হাত সাদনানের গালে রেখে আর এক হাত নিজের জামা খামচে ধরে।
সাদনান টুপটাপ বৃষ্টির ন্যায় চুমু খেলো বউয়ের গলায় ঘাড়ে। প্রিয়তা সাদনানের দিকে ফিরে সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরে পা জোরা সাদনানের পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে সাদনানের লম্বা উঁচু নাকের ডগায় চুমু খেলো।
সাদনান ভ্রু কুঁচকে তাকাল বউয়ের দিকে।আজ সেধে সেধে এতো আদর দেখাচ্ছে।সাদনান বুঝতে পারলো বউ কিছু আবদার নিশ্চয়ই করবে।
তাই আগে আগে জিগ্যেস করলো,
-“কি ব্যাপার?”
প্রিয়তা সাদনানের টি-শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে আদুরে কণ্ঠে ডাকল,
-“শুনুন?”
-“বলো।”
সাদনান বউয়ের চুল ঠিক করতে করতে বলল।
প্রিয়তা ইনিয়েবিনিয়ে মিনমিন করে বলল,
-“আমার ওখানে যেতে ইচ্ছে করছে না।
না যাই প্লিজ!”
সাদনান ঠিক জানতো বউ তার এই জন্যই এতো আদর দেখাচ্ছে।
সাদনান খানিকক্ষণ সময় নীরব থাকে।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়া শুরু করেছে।সাদনান নিজের হাত সহ বউয়ের হাত টা বাহিরে বৃষ্টির মধ্যে এগিয়ে দিলো।মূহুর্তের মধ্যে দু’টি হাত পানির স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠল।বৃষ্টির ঠান্ডা পানি শরীর শিহরণ বয়ে যায়।
সাদনান বউয়ের পেটে শক্ত করে চেপে ধরে বুকের মধ্যে পিষে নেওয়ার মতো করে। ঘাড়ে নাক ঘষে লম্বা শ্বাস টানে। চুলের ভাঁজে মুখ গুঁজে দিয়ে নেশাতুর কণ্ঠে সম্মতি দিয়ে জানাল,
-“আচ্ছা যাব না।”
প্রিয়তা চমকে উঠলো।সাদনান এতো সহজে রাজি হয়ে যাবে প্রিয়তার ধারণাতীত ছিল।
ভেবেছে গম্ভীর কণ্ঠে বলবে,”এটা সম্ভব নয় জান” কিন্তু এখন তো বিপরীত হলো।
প্রিয়তা এই মূহুর্তে কি বলা উচিৎ মাথায় আসছে না। খুশির জোয়ারে মুখের বুলি হারিয়েছে।
সাদনান বউয়ের কোনো প্রতিক্রিয়া আশাও করেনি। কারণ শব্দ গুলো সত্যি অপ্রত্যাশিত ছিল। প্রিয়তা কে ছেড়ে দিয়ে সাদনান ঝট করে কোলে তোলে নিলো।প্রিয়তা চোখ বড় বড় করে সাদনানের দিকে তাকিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে।
সাদনান রুমের উদ্দেশ্য হাঁটতে হাঁটতে বলল,
-“এমন একটা ওয়েদারে রোমাঞ্চ না করলে, নিজের সাথে ঘোর অন্যায় করা হবে আমার জান।”
#চলবে…..
#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১৯
#জান্নাত_সুলতানা
-“একদম না তিন্নি।
বাহিরে অনেক গার্ডস্ রয়েছে। ছাঁদে এই অবস্থা কিছুতেই না।”
বৃষ্টি নেমেছে পর থেকে তিন্নি ছাঁদে ভিজতে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। থ্রি-পিস চেঞ্জ করে শাড়ী পড়েছে। কবির তখন ব্যালকনিতে ছিল।রুমে এসে তিন্নির অবস্থা থেকে এক সেকেন্ড সময় লাগে না ব্যাপার টা বুঝতে।
এদিকে তিন্নি কবির কে দেখে হাসি হাসি মুখে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কবির বারণ কে করে সতর্ক সংকেত দিয়ে দিলো।তিন্নির হাসি হাসি মুখ টা ফাটা বেলুনের ন্যায় চুপসে গেলো। তবে দমে গেলো না তিন্নি। এগিয়ে গিয়ে আহ্লাদী স্বরে বলল,
-“আপনি আসুন না প্লিজ।
তাছাড়া বৃষ্টির সময় সবাই গেইট এর নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েছে।”
কবির কোনোরূপ জবাব দিলো না। ফোন বিছানায় রেখে তিন্নি কে টেনে নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
ঝর্ণা ছেড়ে তিন্নি কে নিয়ে সেটার নিচে দাঁড়িয়ে পড়ল।কিছু সময় ব্যবধানে উপর থেকে পানি পড়ে দু’জন কে ভিজিয়ে জুবুথুবু করে দিলো।
কবির তিন্নি কে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। তিন্নি কাঁপছে ভয়ে না-কি লজ্জায় বুঝতে পারে না।কবির তিন্নির মুখের উপর পড়ে থাকা এলোমেলো চুল গুলো এক হাতে ঠিক করে দিলো।দুই হাত তিন্নির কোমড়ে রেখে কিছু টা নিজের উপর তুলে নিলো।তিন্নি দুই হাতে কবিরের গলা জড়িয়ে ধরলো।
কবির তিন্নির গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে বলে উঠলো,
-“আমার সম্পত্তি তুমি। তোমার উপর সম্পূর্ণ অধিকার শুধু আমার।অন্য কেউ চুল পরিমাণও যদি তোমাকে দেখে আমার একদম সহ্য হবে না।”
——
রিধি সেদিন রাতের পর থেকে চিন্তায় ঘুম উড়ে গিয়েছে চোখের।মনে হয় এই বুঝি কিছু হয়ে গেলো।নানা জান এসে ঠাশ করে একটা চড় রিধির গালে বসিয়ে দিয়ে বাজখাঁই গলায় বলবে, এইজন্য স্বাধীনতা দিয়েছে?আমাদের আগে কেনো বলো নি এসব? তখন রিধি কি জবাব দিবে?আর সত্যি বললে কি বিশ্বাস করবে সবাই?
-“নানু ভাই?
আসব?”
রিধি তড়িৎ গতিতে দরজার দিকে তাকিয়ে জাফর মির্জা কে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হলো।বিছানা ছেড়ে ওঠে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
-“তুমি কেনো কষ্ট করতে গেলে নানা ভাই?
আমাকে ডাকলে হতো।”
জাফর মির্জা চেয়ারে বসলো।
রিধি দাঁড়িয়ে রইলো।তবে ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছে। চিন্তিত হলো।হঠাৎ নানা ভাই আসার কারণ কি?
রিধি কে চিন্তিত দেখে জাফর মির্জা কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে গম্ভীর কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
-“তুমি কি কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছো?”
-“হ্? না, না কি নিয়ে দুশ্চিন্তা করব!”
-“বেশ।
দেখো নানু ভাই আমরা সবাই তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। তোমার সব কিছুতেই আমরা সব সময় সায় দিয়েছি।তোমার মতামত কে বরাবরই আমরা প্রাধান্য দিয়েছি।আমার মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় ডিসিশন টাও তুমি নিবে।তোমার মতামত কে আমরা বেশি গুরুত্ব দেবো।”
-“হঠাৎ এসব কেনো বলছো?
হ্যাঁ তোমরা আমার মতামত আমার ইচ্ছে কে গুরুত্ব দাও তার মানে এই নয় যে আমি ভুল কিছু আবদার করলে তোমরা বিরুদ্ধতা করবে না।”
-“তাহলে আমরা কি তোমার বিয়েসাদীর ব্যাপারে আগাতে পারি?আর তোমার কোনো পছন্দ থাকলে বলতে পারো।”
কক্ষে প্রবেশ করতে করতে কথা গুলো বলল আম্বিয়া মির্জা।রিধি চুপ করে গেলো।কি বলবে ভেবে পেলো না।
তবে মন চাইল একবার বলতে মনের মধ্যে থাকা প্রিয় পুরুষের কথা। কিন্তু এটার তো কোনো শুরু নেই।সে করে নি শুরু তাহলে এসব বলার কোনো ভিত্তি নেই।না কোনো যুক্তিতে আসে।দু’জোড়া চোখের প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে রিধির দিকে। রিধি কোনো ভণিতা ছাড়াই স্পষ্ট জবাব দিলো,
-“না নানিজান।
তোমাদের যা ভালো মনে হয় তাই করো।”
——-
মাইশা একটা আচার হাতে নিয়ে বসে আছে। তিন মাসে চলে সবে মাত্র।এক্ষুনি মেয়েটার অবস্থা নাজেহাল। খাবার একদমই মুখে নিতে পারে না।
শরীর শুঁকিয়ে গিয়েছে চোখের নিচে কালশিটে দাগ বসেছে।
এসব দেখলে আয়ানের মায়া হয়।বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।রাতের খাবার টাও খেতে পারে নি।খাবার এক লোকমা মুখে নেওয়া মাত্র দৌড়ে বেসিনে গিয়ে ঘরঘর শব্দ করে পেটের ভেতর যা ছিল সব উগড়ে দিয়েছে। আয়ান খাবার ফেলে নিজেও পেছনে পেছনে ছুটে রান্না ঘরে। পানি দিয়ে ফ্রেশ করে নিজে ধরে রুমে নিয়ে এসছে।মাইশা অবশ্য অনেক জোর করেছে খাবার টা খেয়ে আসার জন্য। কিন্তু আয়ান যায় নি।বউ খেতে পারে না। ঘুমুতে পারে না আর সে একবেলা না খেয়ে থাকতে পারবে না কেনো?
আয়ানের ভাবনার মাঝেই মাইশা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,
-“এতো দূরে কেনো বসে আছেন?
কাছে আসুন।”
আয়না নড়েচড়ে বসলো। সামন্য এগিয়ে গিয়ে মাইশার গা ঘেঁষে বসে বলল,
-“কাছেই তো বসে আছি।
তোমার দূরে কেনো মনে হচ্ছে!”
মাইশা কোনো প্রতিত্তোর করে না। আচার পাশে রেখে আয়ানের গালে হাত রাখে।আয়ান চট করে সরে বসে।বউয়ের চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছে সে।যেটা এই মূহুর্তে করা একদম ঠিক নয়।
আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল,
-“মাইশা একদম না।
তুমি সহ্য করতে পারবে না। ডক্টর কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চার মাস পর্যন্ত এ,,,
মাইশা শুনে না।
আয়ানের ঠোঁটে নিজের তর্জনী আঙ্গুল রেখে চুপ করিয়ে দিলো আয়ান কে।
আয়ান ঘামছে।প্রেয়সীর এই আহ্বান তাকে ভেতর থেকে উত্তেজিত করে দিলো।অনেক দিন প্রেয়সী কে ভালোবাসে না।লোভ হলো।হেঁচকা টানে বউ কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের শরীর বিছানায় রেখে মাইশার গলায় মুখ গুঁজে দিলো।
মাইশা শক্ত করে আয়ান কে জড়িয়ে ধরলো।
—–
প্রিয়তা ইনিয়া কে নিয়ে বসে আছে।
আয়নার শরীরে জ্বর এসছে।রাহাত বাড়ি নেই।ডক্টর চেক-আপ করে ঔষধ দিয়ে গিয়েছে।এখন ঘুমিয়ে আছে আয়না।রাতের খাবার সুফিয়া বেগম খাইয়ে দিয়েছে। ওষুধ দেওয়া হয়েছে। জ্বর এখন বেশি নেই।ইনিয়া ঘুমে ঢুলঢুল করছে।প্রিয়তা বিছানা ছেড়ে ইনিয়া কে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো।
কাজের লোক কে ডেকে ইনিয়ার খাবার চাইলো।খাবার এলে ইনিয়া কে খাইয়ে দিলো।ইনিয়া খাবার খেয়ে প্রিয়তার কোলে ঘুমিয়ে গেলো।প্রিয়তা আয়নার পাশে মেয়ে কে শুইয়ে দিয়ে রুমে এলো। রাত সাড়ে নয় টা বাজতে চলে।সাদনান কোন রাত বাড়ি আসে ঠিক নেই। প্রিয়তা কাবাড থেকে সাদনানের ড্রেস নামিয়ে রাখে।
ঠিক তক্ষুনি বিছানায় থাকা ফোন টা সশব্দে বেজে উঠল।
প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে ফোন হাতে নিলো।সাদনান কল করেছে।
প্রিয়তা একটু না অনেকটাই অবাক হলো। বিস্ময় কাটিয়ে ফোন রিসিভ করতেই সাদনানের গুরুগম্ভীর কণ্ঠ স্বর ভেসে এলো,
-“নিচে এসো।
আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।”
-“এতো রাতে?
কোথায় যাব?”
-“আগে এসো।
আর হ্যাঁ যেভাবে আছো সেভাবেই।”
সাদনান কথা শেষ করে কল কেটে দিলো। প্রিয়তা আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না।
ফোন হাতে বেরিয়ে পড়ে।
সাদনান গাড়িতে বসে ছিল।
প্রিয়তা যাওয়া মাত্র হাত বাড়িয়ে দরজা খুলে দিয়ে প্রিয়তা কে ওঠে আসার জন্য ইশারা করে।প্রিয়তা চুপচাপ ওঠে বসে।সাদনান গাড়ি স্টার্ট করল।
-“কোথায় যাব আমরা?”
প্রিয়তা কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলো। কিন্তু সাদনান উত্তর করলো না।শুধু বলল,
-“আগে যাই।”
আধঘন্টা পর সাদনান আর প্রিয়তা উপজেলায় এসে পৌঁছাল।
সাদনান নিজে একটা কালো মাস্ক পড়ে প্রিয়তা কেও একটা পড়িয়ে দিলো।
একটা রেস্টুরেন্টে গেলো দু’জন।সাদনান বউয়ের হাত ধরে একদম কর্নারে একটা টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো।
সেখানে একজন সুদর্শন যুবক বসে আছে। সেও মাস্ক পড়ে আছে। কিন্তু তাও ব্যক্তি টাকে চিনতে প্রিয়তার অসুবিধা হয় না। অবাক আর বিস্ময় ভ্রু জোড়া টানটান করে বলে উঠলো,
-“ওয়াজিদ ভাই!”
#চলবে…..