আমার তুমি ২ পর্ব-১০

0
165

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১০
#জান্নাত_সুলতানা

সারা পরপর কয়েকবার হাঁচি দিতেই রাহান ফুঁসে ওঠে।
চায়ের কাপ ঠাশ করে টেবিলের উপর রেখে ধমকের স্বরে বলে উঠলো,

-“কে বলেছিল বৃষ্টিতে ভেজবার?
থাপ্পড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে।”

সারা শুধু চুপ করে শুনল।কিছু বলল না।
রয়েসয়ে চায়ের কাপে চুমুক বসায়। রাত সাড়ে এগারো টা। রাহান সাদনানের সাথে বাড়ি ফিরেছে। খাবার খেয়ে রুমে আসার পরপরই সারা’র আগমন হয়েছিল।
রাহান অবাক হয়েছে। সাথে এতো রাতে একটা ছেলের রুমে আসার জন্য কিছু কড়া কথা শোনাবে চিন্তা করে। বড্ড ছেলেমানুষী করে সারা বড় হয়েছে বুঝতে হবে।কিন্তু রাহান কিছু বলার আগেই সারা মিনমিন করে আবদার স্বরে বলেছিল,-“আমার চা খেতে ইচ্ছে করছে।
চলুন না দু’জন মিলে চা খেয়ে আসি।”
রাহান কিছু বলতে গিয়েও পারে নি।হয়তো ভালোবাসার মানুষ টার একটু সঙ্গ পাবে সেই লোভে।
তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে। গেইট দিয়ে নয় দেওয়াল টপকে।ইশ সারা কে দেওয়ালের ওপারে আনতে কতটা না কষ্ট হয়েছে।
রাস্তার পাশে ঘাসের উপর পরেছিল বিধায় রাহান ব্যথা পায় নি।নয়তো কি অবশ্য টাই না হতো।ভাবতে গায়ে কাটা দেয়।
সারা কে দুই হাত আগলে নিতেই সারা লাফ দেওয়ার পর রাহান কে নিয়ে ধপাস করে পড়ে ছিল।

-“রাহান ভাই!”

হঠাৎ সারা’র ডাকে রাহানের ভাবনার সুতো ছিঁড়ে।
আকস্মিক এভাবে ডাকায় নিজেও তড়িঘড়ি করে জবাব দিলো,

-“হ হ্যাঁ বল?”

-“বাড়ি যাব না?”

সারা জিজ্ঞেস করলো।
রাহান হাতের চায়ের কাপে শেষবার চুমুক দিয়ে সেটা পাশে ফেলে দিয়ে বলল

-“হ্যাঁ চল।”

দু’জনে পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো।
জায়গায় টা গ্রাম হলেও সবকিছু কেমন আধুনিকতার ছোঁয়া। রাস্তা পিচঢালা। আবার মাঝেমধ্যে একটু পথ হাঁটার পর আবার লাইট দেওয়া।
পাশের জমি গুলো বেশ কিছু ভরে নিয়েছে হয়তো খুব দ্রুত এগুলোতে বড় বড় দালান হবে।
গ্রামের সাড়ে এগারো টা মানে অনেক রাত।
তবে চায়ের দোকান গুলোতে মাঝবয়সী কয়েকজন মিলে মিলে চায়ের সাথে টিভি দেখতে দেখতে আড্ডা জমিয়েছে।। এমনি একটা দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন ফিসফিস করে বলাবলি করতে লাগলো, -“একই বাড়িতে থাকে।প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে। নিশ্চয়ই কিছু আছে এদের মধ্যে। নয়তো এতো রাতে এভাবে একা একটা মেয়ে নিয়ে কোনো ছেলে বেরিয়ে আসে?
শুধু চেয়ারম্যান এর নাতিনাতনি বলে।নয়তো এদের গ্রাম ছাড়া করতাম।”

কয়েকজন আবার সাথে তাল মিলাল।সারা’র সারা শরীর ঘিনঘিন করতে লাগলো।
রাহান রাগে চোয়াল শক্ত করে সারা’র হাত ধরে সেখান থেকে দ্রুত চলে এলো।
সারা’র চোখে পানি টলমল করছে। হয়তো আঁখি পল্লব ঝাপটালে সেগুলো গাল বেয়ে জমিনে লুটিয়ে পড়বে।
রাহান প্রেয়সীর মুখের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতর ভয়ংকর যন্ত্রণা অনুভব করে।
এক হাতে আগলে নিলো এক বাহুতে। সারা কান্না ভুলে শিউরে ওঠে।
শক্ত হাতে নিজের পরিহিত জামা খামচে ধরে বলল,

-“সরি রাহান ভাই।
আমার জন্য আপনাকে এতোগুলা কথা শুনতে হলো।আমি বায়না না ধরলে এমন টা হতো না।”

-“চাপকে সব দাঁত ফেলে দেব।
এদের কথা কানে তুলতে নেই।আমি এদের কথার জবাব নিরবে দিয়ে দেব।”

শেষের কথা টা বিড়বিড় করে বলল।
সারা শুনতে পেলো না। তাই ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,

-“কিছু বললেন?”

-“নাহ।
বাড়ি চলে এসছি।চল আগে তুই যা আমি পরে উঠছি।”

-“আচ্ছা।”

সারা কে রাহান উপরে উঠতে সাহায্য করে। সারা প্রাচীর টপকে ওপারে চলে গেলো।
সাথে সাথে রাহান নামল।মই বেয়ে আগে সারা নিজের রুমে গেলো।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে সারা রাহান মই একটা গাছের সাথে রেখে নিজে পাইপ বেয়ে ওয়াশরুম দিয়ে নিজের রুমে গেলো।
সারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজেও রুমে চলে গেলো।
আর সবটা বিষয় কেউ অন্ধকারের আবছা আলোয়ের মাঝে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলো।

কবির ব্যালকনি থেকে রুমে এলো।আজ অনেক দিন নিজের মন আর মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করে মনের কথা শুনে ম্যাসেজ দিয়েই ফেলল।মেয়ে টা বড্ড জ্বালাচ্ছে বেশ কিছু দিন হলো।একটা বিহিত করা প্রয়োজন। নিজের মনের সাথে রোজ যুদ্ধ করা তো সম্ভব নয়।যেখানে এই রমণী মনের মধ্যে গাপটি মেরে বসে রয়েছে।
এখন দেখা যাক কাল কি হয়ে!

তিন্নি ফেসবুক স্ক্রল করছিল।
খুব বেশি একটা সে ফেসবুক আসে না। শুধু নামেই একটা একাউন্ট রয়েছে। ব্যস্ততার মধ্যে সেটায় খুব বেশি আসার সময় হয় না।
মাঝেমধ্যে রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে একটু আসে।
হঠাৎ মেসেঞ্জারে টুং করে শব্দ করে একটা ম্যাসেজ এলো।তিন্নি চমকাল।অনাঙ্ক্ষিত আইডি থেকে ম্যাসেজ দেখে হাত কাঁপল। তবে ম্যাসেজ টা ওপেন করল।
আর সাথে সাথে তিন্নি আরো কয়েক দফা অবাক হলো।
কবির খাঁন ম্যাসেজ করেছে,-“কাল বিকেলে ভার্সিটির পাশের রেস্টুরেন্টে আসবা।”
তিন্নি তব্দা খেয়ে বসে রইলো।বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো এটা কবির স্যার। তাই তো বারকয়েক আইডি চক্কর কাটলো।সত্যি এটা কবির স্যার এর আইডি না-কি ফেইক!না এটাই কবির খাঁন এর আইডি।তিন্নি ম্যাসেজ সিন করে নেট বন্ধ করে শুয়ে পড়ল।আর সারা রাত ভাবতে লাগল কালে যাবে? না যাবে না?

——

ওয়াশ রুমে এসেই সাদনান আগে বউ কে ফ্রেশ হতে সাহায্য করল।প্রিয়তা একদম নেতিয়ে গিয়েছে। মেয়ে টা প্রথমবারের বলিষ্ঠ সুপুরুষ সাদনানের গভীর থেকে গভীর স্পর্শে মূর্ছা যাচ্ছে।
বউয়ের এমন অবস্থায় সাদনানের মায়া হলো।কতবার না করল সাদনান।
কিন্তু বউ তার বেহায়া হয়ে সাদনানের কথা পাত্তা দিলো না। উন্মাদ সাদনান বউয়ের ডাকে সারা না দিয়ে থাকতে পারলো না। এখন মনে হচ্ছে একদম ঠিক হয় নি।সময় দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু আর কত দিন?একই ঘরে একই বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে ভালোবাসার মানুষ টার কাছ থেকে আরো দূরে থাকা যে সম্ভব হচ্ছে না। আর সেটা অসম্ভব করে দিয়েছে বউ নিজে।সাদনান প্রিয়তার গায়ে টাওয়াল পেঁচিয়ে দিয়ে ওয়াশ রুম থেকে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে ফ্রেশ হতে গেলো।
প্রিয়তা সাদনান যাওয়ার পর নিজে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ পড়ে নিলো।সাদনানের জন্যও কাপড় নামিয়ে রাখে।অতঃপর জায়নামাজ বিছিয়ে সাদনান ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আসার অপেক্ষা করতে লাগলো।
সাদনান খুব দ্রুত বেরিয়ে এলো।প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বিছানায় প্রিয়তার পাশ থেকে নিজের ড্রেস হাতে নিলো।
প্রিয়তা লজ্জায় মাথা নিচু করে ওঠে ওয়াশ রুম যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই সাদনান এগিয়ে এসেছি ধরলো।
প্রিয়তা মিহি কণ্ঠে বলল,

-“আমি পারব।
আপনিও আসুন ওজু করে নিবেন।”

সাদনান মাথা দুলাল। প্রিয়তা ওজু শেষ সাদনান ওজু করে এলো।
সাদনান আগে দাঁড়াল প্রিয়তা সাদনানের থেকে সামন্য পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ শেষ করল।
প্রিয়তা বারবার লজ্জায় মাথা নুইয়ে রাখছে। সাদনান বিষয় টা বুঝতে পারে।
প্রিয়তা কে টেনে নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

-“লজ্জা নারীর ভূষণ।
আমার ব্যাক্তিগত নারী আমার সামনে লজ্জা পাবে স্বাভাবিক। কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মাঝে এসব হবেই।”

-“ভালোবাসা না থাকলেও এসব হয়?”

প্রশ্ন টা খুব সহজ। কিন্তু সাদনানের নিকট ছোট বউয়ের এই ছোট একটা প্রশ্ন বড্ড ভারী আর জবাব টা খুব কঠিন মনে হলো।সাদনান সময় নিয়ে বউয়ের মাথার তালুতে চুলের ভাঁজে নিজের অধর স্পর্শ করে জবাব দিলো,

-“অবশ্যই হয়।”

-“আপনি আমায় ভালোবাসেন?”

কৌতুক মনে হলো সাদনানের কাছে প্রিয়তার এই প্রশ্ন টা।
হাসল বোধহয় সাদনান। প্রিয়তা সাদনানের হাতের বাঁধন হতে মুক্তি পেতে ছুটাছুটি করল।
সাদনান সেটা সম্ভব হতে দিলো না। আবার টেনে জড়িয়ে ধরে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে নিজেও প্রশ্ন করলো,

-“আমার স্পর্শে বুঝি ভালোবাসা ছিল না?”

প্রিয়তা কেঁপে উঠল।
প্রিয়তার জবাব দিতে ইচ্ছে করল।স্বর্গ সুখ পেয়েছি। ভালোবাসা না থাকলে বুঝি এটা সম্ভব হতো?
কিন্তু কোনো জবাব প্রিয়তা দিলো না। সাদনান নিজেও আর কথা বাড়াল না।বউকে আরো সময় দিলো।সময় তো আর চলে যাচ্ছে না।

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে