#আমার_তুমি[২]
#সূচনা_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা
-“মির্জা সাদনান শাহরিয়ার কে বিয়ে করতে না চাওয়ার কারণ কি?
বয়সের ডিফারেন্স?”
লম্বাটে বলিষ্ঠ সুপুরুষ সাদনান শাহরিয়ার প্রশ্নে অষ্টাদশী কন্যা প্রিয়তার মুখের বুলি ফুঁড়িয়ে এলো। এই প্রশ্নের উত্তর কি দিবে কোনো জবাব খোঁজে পেলো না।
এমনিতেই এই সুদর্শন পুরুষ সাদনান ভাই কে যমের মতো ভয় পায় অষ্টাদশী কন্যা প্রিয়তা।সেখানে আজ এই পুরুষ কে বিয়ে করতে হবে। ভাবতেই প্রিয়তার গলা শুকিয়ে এলো।
সাদনান প্রিয়তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জবাবের আশায়। কিন্তু মেয়ে টা কোনো কথা বলছে না। সাদনান বিরক্ত হলো।মেয়ে টা তাকে বিয়ে করতে রাজি নয়।এমন একটা গুঞ্জ কানে এসছে। আর তাই তাঁর দাদা জাফর মির্জা একান্তই মেয়ে টার সাথে তাকে কথা বলতে পাঠিয়েছে।
সাদনানের বিরক্তি মাত্রা ছাড়াল এবার।
নিজের গম্ভীরতা বজায় রেখে রাশভারি কণ্ঠে জানালো,
-“দাদা জান তোমার সাথে একান্তই আমাকে তোমার মতামত জানতে পাঠিয়েছে। আমি যাচ্ছি। হয়তো কিছু সময় ব্যবধানে বিয়ের কাজ শুরু হবে।”
সাদনান এক সেকেন্ড দেরী করে না নিজের গায়ের সফেদা রঙের পাঞ্জাবির হাত টা ভাঁজ করে কনুইয়ের উপর রাখতে রাখতে রুম হতে বেরিয়ে গেলো।
সাদনান বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে শফিক সওদাগর, আয়না, আয়ান সহ পেছনে পেছনে রুমে প্রবেশ করে।
প্রিয়তা তাদের দেখে এগিয়ে এলো।
শফিক সওদাগর কিছু বলার আগেই প্রিয়তা মিনমিন করে বলল,
-“আমি সাদনান ভাই কে বিয়ে করবো না বাবা।”
বিয়ের বঁধু সাজে সজ্জিত প্রিয়তার কাতর কণ্ঠে বলা কথায় শফিক সওদাগর পাত্তা দিলো না।যদিও ভুল টা ওনার নিজরই।কিন্তু এখন সেটা ভেবে মেয়ের জীবন তো আর অভিশপ্ত করতে পারেন না।একটা মেয়ের বিয়ের দিন বর না আসার মতো জঘন্য এই ঘটনা টা যে তার মেয়ের জীবন নরক করে দিতে দ্বিতীয় বার ভাববে না এই সমাজ।যদিও সমাজের ভয় তিনি করে না। তবুও সবদিক বিবেচনা করে এখন বিয়ে টা দিয়ে দেওয়া উত্তম মনে করেন। তাই নিজের কণ্ঠে গম্ভীর রেখে বলে উঠলো,
-“আমি তোমার মতামত জানতে আসি নি।
আমি আমার ডিসিশন আগেই জানিয়েছি।একটু পরই বিয়ে পড়ানো হবে।আর কোনো ঝামেলা চাই না আমি।”
কথা গুলো শেষ করেই শফিক সওদাগর প্রিয়তার রুম হতে বেরিয়ে গেলো। আয়ান আয়না বোনের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
তাদেরও কিছু করার নেই।
আয়নাও বাবার পেছনে পেছনে চলে গেলো।
আয়ান বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে কণ্ঠ বলল,
-“রাজি হয়ে যা বোন আমার।
বাবা মা সন্তানের খারাপ চায় না।আর তুই একবার বাবার সম্মানের কথা ভাব।”
আয়ানের কথা গুলো প্রিয়তা মন দিয়ে শুনলো।সত্যি তো।পাত্র আসে নি বিয়ে করতে। এটা পুরো গ্রাম ছড়িয়ে গিয়েছে এখন যদি বিয়ে না হয় এই গ্রামের লোক তার জীবন ফুল থেকে কাটা’তে পরিণত করতে এক দন্ড ভাববে না।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই আয়ান চলে গেলো।আর দরজা খোলার সাথে সাথেই হুমড়ি খেয়ে রুমে প্রবেশ করলো সবাই।
অতঃপর শুরু হলো গ্রামের মানুষের জাতিগত স্বভাব কানাঘুঁষা করা।
-“এক বর পালিয়েছে।কিন্তু দেখো মেয়ের কি ভাগ্য চেয়ারম্যান নিজে তার নাতির জন্য প্রস্তাব রেখেছে। একেই বলে কপাল।”
এমন অনেক কথা প্রিয়তার কানে এলো।তবে প্রিয়তা কারোর কথায় কান দিলো না।
তার মনে তো অন্য প্রশ্ন ঘুরছে কবির খাঁন কেনো বিয়ে করতে এলো না?
——-
কালাম খাঁন শফিক সওদাগর এর কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলো ছেলের এমন কর্মে।
নিজের ছেলের প্রতি অঢেল রাগ হচ্ছে এমন একটা জঘন্য কাজ কি করে তাঁর ছেলে করতে পারে ভেবে পেলো না আগে যদি বলত তাহলে সে এমন কিছু করতো! নিশ্চয়ই এতো দূর অব্দি এগুতো না।স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আর বিয়ে করে নি। ছেলের অবহেলা হবে ভেবে নিজের যৌবন শেষ করে দিলো আর আজ সেই ছেলেই তাকে কি একটা লজ্জাজনক অধ্যায় ফেলে দিয়ে চলে গেলো। এই জীবনে কি আর শফিক সওদাগর এর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে তিনি!
শফিক সওদাগর কালাম খাঁন কে নরম স্বরে বোঝাল অনেক টা সময় নিয়ে।যে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে।
কালাম খাঁন তবুও বারবার ক্ষমা চান।বিয়ে পড়ানো হলে বউ নিয়ে যাওয়ার জন্য জাফর মির্জা তাগাদা দিলো।সন্ধ্যা গড়িয়ে অনেকটা রাত হয়ে এলো যে।
—–
সাদনানের কাকা মফিজুর মির্জার বন্ধু কালাম খাঁন।স্ত্রী নেই।এক সন্তান কবির খান। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে বর্তমানে শহরের বেশ নামকরা একটা ভার্সিটির লেকচারার হিসেবে রয়েছে।ছেলের জন্য গ্রামের সহজ সরল মেয়ে চাইছিল পুত্রবধূ রূপে।ব্যাপার টা মফিজুর মির্জা কে জানালে তিনি প্রিয়তার কথা জানায়।শফিক সওদাগরের সাথে কথা বললে দেখা সাক্ষাৎ করে কালাম খাঁন প্রিয়তা কে পছন্দ করে রাজি হয়।কিন্তু ছেলের পছন্দের কথা না ভেবেই কথা দিয়ে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে নেয়।বিয়ের সাপ্তাহ আগে অবশ্য কবির কে তিনি প্রিয়তার সাথে দেখা করতে বলেছে তবে কবির না করে দিয়েছে। জানিয়েছে বাবার পছন্দই তাঁর পছন্দ। কিন্তু বিয়ের দিন সকাল সাড়ে দশ-টার দিকে কবির খাঁন হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এদিকে ব্যাপার খুব দ্রুতেই গ্রামে ছড়িয়ে পরে বর আসবে না।শফিক সওদাগরের বড় মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকেরা ব্যাপার টা জানাজানি হওয়ার পর জাফর মির্জা নিজের ছোট নাতি সাদনান শাহরিয়ার জন্য প্রস্তাব রাখে।
শফিক সওদাগর যেনো অন্ধকারের মাঝে একটু আলোর দেখা পেলেন।
তিনি অবাক হয়ে ছিল।
বিস্ময় নিয়ে কিছু বলতে পারছিল না। বড় মেয়ে কে মির্জা বাড়ি বিয়ে দিলেও ছোট মেয়ে কে নিয়ে এসব কখনো ভাবেননি অবশ্য ভাবার কথাও নয়।সাদনানের বয়স যেমন তেমনি নিজের নামধাম।শুনেছেন এবার এমপি নির্বাচনেও সাদনান দাঁড়াবে। জয় তো নিশ্চিত হবে। ছেলেটার মাঝে বিশেষ গুন রয়েছে।
তাই তো বিনাবাক্যে রাজি হয়েছে।
——-
বরাবরই প্রিয়তা রাজনীতি পছন্দ করে না।অথচ ভাগ্য আজ তাকে এক নেতার বউ বানিয়ে দিলো।
এই তো একটু আগেই বিয়ে হয়েছে তাদের। প্রিয়তা বসে আছে সোফায় সাদনান এর পাশে। সাদনান গুরুগম্ভীর। কোনো প্রতিক্রিয়া তাঁর মাঝে নেই।আপাতত কিছু মানুষ তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
বিদায় এতো কেন বিষাদ?এতো কষ্ট কেন?বুকের মাঝে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে প্রিয়তার। প্রিয়তার মা মিতা সওদাগর কেঁদেকুটে নাজেহাল অবস্থা। ছোট মেয়ে তাঁর ভীষণ আদুরে।
বিদায় দিতে দিতে রাত হয়ে এলো।যেহেতু বিয়ে টা হঠাৎ করেই হয়েছে তাই কোনো আত্মীয় সাদনানদের নেই।যা আছে সব পরিবারের।রাহাত আয়না,আজ্জম মির্জা,আম্বিয়া মির্জা,মাইশা,সুফিয়া বেগম আর সাদনানের ফুপি তাঁরা সবাই একটা গাড়িতে গেলো।আর সাদনান নিজের গাড়ি নিয়ে সাথে রয়েছে তাঁর ছেলেপুলে বাইক নিয়ে।
সারা সাদনান এর গাড়ীতে যাবে। কিন্তু মেয়ে টার মন অন্য কিছু চাচ্ছে। গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকতাম দেখে সাদনান সারার দিকে ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“ওঠে বস।”
-“তুই যা।
আমি নাহয় সার,,,,
মাঝে রাহান কোথা থেকে এসে ফোঁড়ন কেটে আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাচ্ছিল।
তবে সাদনান এর তীক্ষ্ণ দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলতে পারলো না।
সাদনান বোনের দিকে এক পলক তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল,
-“আমার বোন আমি ঠিক সময় বাড়ি দেখতে চাই।”
চোখের পলকে সাদনান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে শাঁই শাঁই করে চলে গেলো।
তাঁর পেছনে পেছনে বাইক গুলো গেলো।রাহান সারার দিকে তাকিয়ে একবার শুকনো একটা ঢোক গিলে নিলো।এই মেয়ে আস্ত একটা মায়ার সাগর যে সাগর অতল গভীরে রাহান ডুবে আছে। যা থেকে হয়তো কখনো মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।
-“আপনি?”
-“ফাস্ট কোনো কমেন্ট নয়।
তাড়াতাড়ি ওঠে বস।”
সারাও তাই করলো।
রাহান বাইক স্টার্ট দেওয়ার আগে হুশিয়ারি দিয়ে বলল,
-“ধরে বস।
রাস্তা ভালো নয়।কিছু হলে তোর ভাইয়েরা আর বাপ আমাকে শেষ করতে দ্বিতীয় বার ভাববে না।”
সারা রাহান এর কথা শুনে ফিক করে হেঁসে দিলো। রাহান বাইকের মিররে সেটা দেখে নিজের বুকের বা পাশে ডান হাত টা রেখে মনে মনে বলল,”এভাবে হাসে না প্লিজ। আমার বুকে ভয়ংকর যন্ত্রণা হয়।”
——-
বিয়ে টা হঠাৎ হওয়াতে বাড়িতেও তেমন লোকজন নেই।যা আছে নিজেদের লোক।
সাদনান এর মা সালেহা বেগম সব নিয়মকানুন শেষ একটা শাড়ী মাইশার হাতে দিয়ে প্রিয়তা কে বিয়ের ড্রেস চেঞ্জ করে এটা পড়িয়ে সাদনান এর রুমে দিয়ে যেতে বলল।
মাইশা শাড়ী নিয়ে রুমে এসে দেখলো প্রিয়তা আয়নাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।
মাইশা নিজেও এসে বসল।টুকটাক কথা বলে শাড়ী টা রেখে গেলো।আয়না কে অবশ্য বলে গিয়েছে শাড়ী টা পড়িয়ে দিতে।
কিন্তু আয়না কে রাহাত ডাকছে আয়নার আর রাহাতের দু’বছরের বাচ্চা ইনিয়া কান্না করছে তাই আয়না হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলো।শাড়ী সেভাবেই পরে রইলো।প্রিয়তার শাড়ীর দিকে তাকিয়ে আছে। গায়ে ভারী একটা শাড়ী মাথায় চমৎকার একখানা দোপাট্টা। মুখে রয়েছে কৃত্রিম সাজ।এতো সবে প্রিয়তার অবস্থা করুণ।
ফ্রেশ হতে পারলে হয়তো ভালো লাগত।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে প্রিয়তা বিছানার উপর রাখা শাড়ী টা নিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
ঝর্ণার ছেড়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে।এদিকে হাতের শাড়ীও রাখতে ভুলে বসে। যতক্ষণ কথা টা মাথাটা এসছে ততক্ষণে শাড়ী পুরোপুরি ভিজে গিয়েছে।
রুম হতে হঠাৎই পুরুষালী কণ্ঠে স্বর ভেসে এলো। প্রিয়তার
বুঝতে এক সেকেন্ড সময় লাগল না সাদনান ভাই রুমে এসছে।
#চলবে…..
[ভেবেছিলাম সিজন টু দেব না।কিন্তু সবার ইচ্ছে সিজন টু যেনো দেই।তাই সবার আবদার আর আমার কথা রেখে চলে এলাম সিজন টু নিয়ে। আর এতো দিন আপনাদের অপেক্ষা করানোর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]
আমার তুমি সিজন-০১ পড়তে লেখাটির উপর ক্লিক করুন