#আমার_তুমি
#পর্ব_৩৪[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
গাড়ী চলছে আপন গতিতে। সাদনান ড্রাইভ করছে। প্রিয়তা পাশেই বসে একটু পর পর আঁড়চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সাদনান কে।
সফেদা পাঞ্জাবি গায়ে তার উপর কালো একটা কটি সাদনান কে দেখতে মারাত্মক সুন্দর লাগছে প্রিয়তার নিকট।
আচ্ছা সারা দিন বাহিরে বাহিরে থাকে।কতশত মিটিং,সমাবেশ, স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির অনুষ্ঠানে যায় সেখানে তো অনেক মেয়ে থাকে তারা কি সাদনান এর দিকে ঠিক এভাবে তাকায় না-কি সরাসরি তাকিয়ে থাকে?
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান হঠাৎ গাড়ী ব্রেক কষে। প্রিয়তা সামন্য ঝুঁকে পড়ে সামনের দিকে।
তবে সিট বেল্ট লাগানো ছিল বলে কোনো ক্ষতি হয় নি।
সাদনান ততক্ষণে নিজের সিট বেল্ট খোলে প্রিয়তার টাও খুলতে হাত লাগিয়েছে।
প্রিয়তা অবাক হয়ে তাকালো। কি হচ্ছে বুঝতে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগে ততক্ষণে সাদনান এর বলিষ্ঠ শরীরে এর উপর প্রিয়তার অর্ধেক শরীর।
আর প্রিয়তা কিছু বলার আগেই সাদনান প্রিয়তা কে নিজের উরুর উপর বসিয়ে দুই গালে হাত রেখে বলল
-“লুকিয়ে দেখার প্রয়োজন নেই।
পুরো মানুষ টা তোমার, জান।”
প্রিয়তা লজ্জা পেলো।
চোরা চোখে এদিক সেদিক এলোমেলো দৃষ্টি ঘুরালো। অবস্থা এমন যেনো চুরি করতে এসে ধরা পড়ে গিয়েছে। হ্যাঁ, চুরিই তো।না চুরি কেন হবে? ভালোবাসার মানুষ,স্বামী তার সেখানে এটা চুরি কেন হবে? ভালোবাসা হবে এটা হালাল ভালোবাসা।
প্রিয়তা অনেক কিছু ভাবলো।সাদনান এর দাঁড়ি ভর্তি দুই গালে নিজের ছোট নরম তুলতুলে হাত গুলো রাখে।মুখ টা এগিয়ে এনে সাদনান এর কপালে নিজের গোলাপি রঙের হাল্কা লিপস্টিক রাঙানো অধর জোড়া ছুঁয়ে দিলো।
সাদনান চোখ বন্ধ করে নিলো।
বউ তার ভীষণ আদুরে। একটু সময় এই কয় দিন কম দিয়েছে বলে কি অভিমান টাই না করে ছিল। সাথে রাগও ছিল। আর সাদনান এর একটু আদুরে কণ্ঠে সেটা গলে পানি আর অভিমান তো একটু ছোঁয়া পাওয়ার পর পরই ভেঙেছে। যখন গাড়ী তে সাদনান বসে ছিল আর প্রিয়তা শাল টা গায়ে দিয়ে ছোট ছোট কদম ফেলে গাড়িতে এসে বসার পর সাদনান জড়িয়ে ধরে বলেছি “দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের আজ ছয় মাস হলো।এতো টা সময় কখন শেষ হলো? বুঝতেই পারি নি।”প্রিয়তা নিজে তখন কিছু বলে নি।চুপচাপ অনুভব করে।
প্রিয়তা আর ভাবে না। অতঃপর মিনমিন করে জিজ্ঞেস করে
-“আমার কোথায় যাচ্ছি?”
-“একটা নতুন রিসোর্ট হয়েছে পাশে।
তুমি বলে ছিলে, মনে আছে?”
-“হুম।তার মানে
আমরা সেখানে যাচ্ছি?”
-“ইয়েস।”
প্রিয়তা অবাক সাথে খুশি হয়ে প্রশ্ন করে সাদনান মুচকি হেঁসে জবাবে বলে।
প্রিয়তা কে আগের স্থানে বসিয়ে দিয়ে সাদনান আবার গাড়ী স্টার্ট দেয়।
ওদের রিসোর্টে পৌঁছাতে আর পাঁচ সাত মিনিট এর মতো লাগবে।
——–
রিধি ওয়াজিদ কে একটা মেসেজ লিখে সেটা হোয়াটসঅ্যাপ পাঠিয়ে দিলো। রিধি ভাবছে ওয়াজিদ ফোন দিবে।আর দিলেও ওয়াজিদ ফোন তবে রিধি যা আশা করে ছিল ওয়াজিদ সেরকম কিছু বলে না খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-“বিয়ে ঠিক হয়েছে ভালো কথা।
আমাকে এভাবে বলার কি আছে?”
রিধি ওয়াজিদ এর কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো। ও মোটেও এমন টা আশা করি নি।
ও তো ভেবেছে ওয়াজিদ হয়তো আগের মতোই করে ভালোবাসার কথা বলবে।
বহু কষ্টে রিধি নিজে কে সামলে নিলো।
ধরে আসা গলায় ওয়াজিদ কে প্রশ্ন করে
-“আপনি কিছু বলবেন না?”
-“কি বলবো?”
রিধি জবাব দেয় না ফট করে ফোন টা কেটে দেয়।
অতঃপর মেঝেতে বসে কান্না করতে লাগলো। আর বিরবির করে বলতে লাগলো
-“এটাই আমার প্রাপ্য।
আমি আগে ভুল করে ছি বলেই তো ওয়াজিদ এখন আমাকে আর বিশ্বাস করে না।”
বয়স টা তখন রঙিন। যা দেখে তাই ভালো লাগতো রিধির। অবশ্য শুধু রিধির না ষোল, সতেরো বছর বয়স টাই এমন।ভুল ঠিক, ভালো খারাপ যাচাই করে না।
রিধি তখন সবে সতেরো বছরে পা দিয়েছে। কলেজে ভর্তি হয় তখন নতুন বন্ধু বান্ধবী আর ঠিক সেই সময় মস্ত বড় এক ভুল করে বসে।
রিধি যেই কলেজে পড়তো সেখানের ভার্সিটির এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে ওর কথা হতো।
মূলত ছেলে টা রিধি কে প্রথম প্রথম ডিসটার্ব করতো।এতে রিধির ভালোই লাগতো আর এক সময় তাদের মাঝে সাময়িক একটা প্রেম হয়ে যায়।
ওয়াজিদ তখন মেডিকেলের দ্বিতীয় বৎসর ছাত্র।
তাই রিধি কে বেশি সময় দিতে পারতো না।আর রিধি তখন ওয়াজিদ কে লুকিয়ে ওই ছেলে টার সাথে প্রেম করতো।কিন্তু প্রেম টা বেশি দিন ছিল না। তার কারণ সিনিয়র ভাই টা ভালো ছিল না আর এটা রিধি যেনে গিয়ে ছিল বারো দিন প্রেম করার পর।
কিন্তু ততদিনে ওয়াজিদ সব টা জানতে পেরে যায়।
আর রিধির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।আর তার এক বছর পর ওয়াজিদ ইতালি চলে যায়। এটা জানতে পেরে রিধিও ইন্টার পরীক্ষা দেওয়ার পর ইতালি চলে যায় কিন্তু সেখানে গিয়ে ওয়াজিদ কে খোঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আর যখন পেলো তখন ওয়াজিদ সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে সে রিধি কে কিছুতেই ক্ষমা করে রিধি কি আরেক টা সুযোগ দিতে রাজি ছিল না। কিন্তু রিধি অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে।
সে ভুল করেছে মেনে নিয়েছে।
এর পর ভালোই চলছিল। তবে হঠাৎ করেই সব আবার এলোমেলো হয়ে গেলো।
——-
সাদনান ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এলো। প্রিয়তা তখন ফুল দিয়ে আর মোম বাতি দিয়ে সাজানো রুম টা খুঁটি খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত।
সাদনান হাতে থাকা সফেদা রঙের টাওয়াল টা আস্তে করে ঝুরিতে ফেলে দিয়ে এগিয়ে এলো প্রিয়তা দিকে।
প্রিয়তা রুম টার ব্যালকনিতে যাওয়ার জন্য পেছন ফিরতেই সাদনান এর বুকের সাথে ধাক্কা খেলো।
প্রিয়তা একটু চমকে উঠে পিছিয়ে যাবার জন্য পা বারাতেই সাদনান শক্ত হাতে টেনে ধরে প্রিয়তার কোমড়।
প্রিয়তা সাদনান এর কাঁধের কাছে সাদা টি-শার্ট আঁকড়ে ধরে বলল
-“ধন্যবাদ।”
-“কেন?”
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে সাদনান।
প্রিয়তা মুচকি হেঁসে বলল
-“এতো সুন্দর সারপ্রাইজ।”
সাদনান হাসলো একটু ঝুঁকে এলো প্রিয়তার দিকে অতঃপর ফিসফিস করে বলে উঠে
-“ভালো লেগেছে?”
-“ভীষণ।”
প্রিয়তা উৎফুল্লতা নিয়ে জানায়।
সাদনান প্রিয়তা কে আরও একটু নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।
ডান হাতে প্রিয়তার উন্মুক্ত কোমড়ে রেখে শক্ত করে চেপে ধরে।
সেভাবে রেখেই সামন্য উঁচু করে নিলো প্রিয়তা কে।
প্রিয়তার পা তখন শুন্যে ঝুলে।
প্রিয়তা নিজেও শক্ত করে সাদনান এর গলা জড়িয়ে ধরে। সাদনান প্রিয়তার কাঁধে নিজের অধর ছুঁয়ে দিলো।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ কেঁপে উঠল চোখ গুলো খিঁচে বন্ধ করে
নিলো।
সাদনান গভীর ভাবে ওষ্ঠ জোড়া ছুঁয়ে বেশ অনেক্ক্ষণ থাকলো।
ততক্ষণে প্রিয়তা চোখ খোলে সাদনান এর মাথার পেছনে হাত রাখে।
সাদনান প্রিয়তা কে ছেড়ে দিলো।
ছেড়ে দিয়ে নিচে নামাল। তার পর প্রিয়তার চোখে চোখ রেখে বলল
-“তবে আমার উপহার?”
প্রিয়তা একটু লজ্জা পেলো ইশ এতো এতো অভিমান করে ছিল সাদনান এর উপর কিন্তু নিজেই তো কিছু করে নি।
এখন কি দেবে কিছুই তো নেই।
প্রিয়তার অবস্থা থেকে সাদনান বাঁকা হাসে বলল
-“আছে তো অনেক কিছু।”
-“কিছু নেই।”
প্রিয়তা অবাক হয়ে জানায়।সাদনান আবারও হাসে। প্রিয়তা সে দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।সাদনান সে সব পাত্তা না দিয়ে নেশাতুর কণ্ঠে জানালো
-“আমার যা চাই।
তা নাহয় আমি নিজেই নিয়ে নিলাম।”
প্রিয়তার বিষয় টা বুঝতে একটু সময় লাগে। বুঝতে পেরে এক ধাক্কা সাদনান কে সড়িয়ে দিয়ে নিজে পিছিয়ে যেতে চায়।
কিন্তু প্রিয়তা সাদনান কে একটুও নড়াতে পারে না।
উল্টো সাদনান এক ঝটকায় বউ কে কোলে তুলে নেয়। বিছানার দিকে যেতে যেতে বলল
-“বিয়ের এতো মাস হলো,আর এখনো এতো লজ্জা মোটেও কাম্য নয় মিসেস সাদনান।”
প্রিয়তা আরও দিগুণ লজ্জা পেলো সাদনান এর বুকে মুখ গুঁজে সেই লজ্জা আড়াল করতে চাইলো যা দেখে সাদনান আরও একদফা হেঁসে নিলো।
সাদনান এর হাসির দিকে তাকিয়ে প্রিয়তা আনমনেই বলে উঠে
-“আমার আপনার মতো আরও একটা সাদনান চাই।
দিবেন?”
#চলবে….
#আমার_তুমি
#পর্ব_৩৫[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
প্রিয়তার কথা টা শুনে সাদনান হঠাৎ করে প্রিয়তা কে ছেড়ে দিলো।
সরে এসে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।প্রিয়তা উঠে বসলো শাড়ীর আঁচল ঠিক করে সাদনান এর দিকে তাকালো সাদনান চোখ বন্ধ করে আছে।
-“আজকের পর আর আমাদের মাঝে কিছু হবে না।
তুমি সম্পূর্ণ প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত।”
প্রিয়তা সাদনান এর দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে ছিল।এর মধ্যে হঠাৎ সাদনান চোখ বন্ধরত অবস্থায় কথা গুলো বলে উঠে।
প্রিয়তা এবার চমকে উঠলো।
তড়িৎ গতিতে সাদনান কে জড়িয়ে ধরে।
ধরে আসা গলায় বলল
-“আপনি এমন কেন বলছেন?”
-“বাচ্চা হবে তবে আল্লাহ যখন চাইবে।
আর তুমি? আমি যখন বুঝতে পারবো তুমি এন্ড আমার বাচ্চা ক্যারি করার মতো উপযুক্ত তখনি আমি আবারও তোমার ইচ্ছে পূর্ণ করার চেষ্টা করবো।
এর আগে আমি তোমার কাছে যাব না।”
প্রিয়তা কথা গুলোর মানে বুঝতে বেশ অনেক টা সময় লাগলো।
-“আমার কথা টা শুনু,,,
-“কি শুনবো? হ্যাঁ, হ্যাঁ? বলো কি শুনবো?
তোমার বয়স?,,,
সাদনান আর কিছু বলতে পারে না। তার আগেই প্রিয়তা সাদনান কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।সাদনান একটু শান্ত হলো।
জোরে জোরে শ্বাস ফেলে কয়েক বার নিজে কে স্বাভাবিক করতে চাইলো।
বেশ অনেক টা সময় নিয়ে শান্ত হয়ে নিজেও প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরে বলল
-“তোমার কিছু হলে।
আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে জান।”
-“আচ্ছা।
আমি আর বলবো না।”
সাদনান প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়ে। প্রিয়তার কেন জানি খারাপ লাগলো।সে যদি এসব না বলতো তবে হয়তো আজকের এই রাত টাও তাদের ভালোবাসাময় হতো।
আর সাদনান? ঠিকই তো বলেছে সে নিজেও এখনো একটা বাচ্চার মতোই বিহেভিয়ার করে।আর বয়স সবে তো সতেরো শেষ এর দিকে।আঠারো হোক তার পর না হয় আবার সাদনান এর কাছে কথা টা পাড়বে।
প্রিয়তাও এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে সাদনান এর বুকের উপর ঘুমিয়ে পড়ে।
প্রিয়তার নিশ্বাস ভার শুনতে পেয়ে সাদনান চোখ খুলে।সে ঘুমায় নি অপেক্ষা করছিল বউ ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য।
সাদনান আস্তে করে প্রিয়তার মাথা টা কাঁধ করে নিজের একটা বাহুর উপর রেখে নিজের মুখ টা প্রিয়তার মুখের কাছে নিয়ে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয় প্রিয়তার এক গালে।
প্রিয়তা সামন্য কেঁপে উঠে তবে তন্দ্রা ছুটে না।যা দেখে সাদনান শব্দহীন হাসি হাসলো।
দ্বিতীয় বার এর মতো গালে আবারও ওষ্ঠ ছোঁয়া দিয়ে বিরবির করে বলে উঠলো
-“এই লম্বা চওড়া দেহটা শুধু আমি বয়ে বেড়াই তার প্রাণ টা তো তোমার মধ্যে।সেখানে তোমার কিছু হলে আমার নিজের মৃত্যু, আমার জান।”
——
সাদনান আর প্রিয়তা রিসোর্ট থেকে সোজা শপিংমলে এসছে।
বাড়ির সবাই আসে নি সব বাড়িতে নেওয়া হয়েছে কিন্তু মাইশার আর সারা’র জোর করাতেই আয়ান,রাহান,রিধি,সারা,মাইশা,কবির,তিন্নি, সাদনান, প্রিয়তা ওদের শপিংমলে এসছে। শুধু এখন ওদের কেনাকাটা বাকি।
সাদনান নিজের সিকিউরিটি আনে নি।নিজেও একদম নরমাল পোশাক পড়ে এসছে। সাদা শার্ট কালো প্যান্ট সাথে কালো মাস্ক এতেই দেখতে মারাত্মক সুন্দর লাগছে। সাথে বোঝার উপায় নেই এটাই পাঞ্জাবি পরিহিত এমপি সাদনান।
শপিং শেষ ওরা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার খেয়ে যার যার গন্তব্য রওনা দিলো।
রাহান রিধি কে কবির আর তিন্নির সাথে পাঠিয়ে দিলো আয়ান সারা,মাইশা,প্রিয়তা কে বাড়ি পৌঁছে দিলো আর রাহান সাদনান নিজেরা আবারও কোথাও মিটিং -এ গিয়েছে।
সাদনান গাড়িতেই বসে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো।রাহান পাশেই বসে আছে।
-“তুই জানতি না?”
হঠাৎই রাহান প্রশ্ন টা করে।সাদনান ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখেই জিজ্ঞেস করে
-“কি?”
-“আমার পছন্দ করা মেয়ে টা যে তোর বোন?”
-“তোর কি মনে হয়?”
রাহানের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সাদনান নিজেও প্রশ্ন করে।
রাহান একটু নড়েচড়ে বসে বলল
-“তবে সে দিন আমার কথা তুই বললি না কেন?”
-“ভালোবাসে কে?”
রাহানের কথা শুনে সাদনান প্রশ্ন করে।
রাহান কথার ভাঁজে আনমনেই জবাব দেয়
-“আমি।”
-“তাহলে আমি কেন বলবো?”
-“বন্ধু হই না।
একটু পক্ষ তো নিতেই পারতি।
তাছাড়া তুই চাইলে আগেই এটা আমাকে জানাতে পারতি।
তা না করে আমাকে অগ্নি পরীক্ষা দিতে আগুনের দিকে ঠেলে দিলি।”
-“ভালোবাসিস তুই সেটা আমায় কখনো বলেছিস?”
-“তুই জানতি।”
-“তুই তো বলিস নি।”
-“তুই আমার সব বুঝতে পারিস।
তাছাড়া আমি ভয় পেতাম সেটাও জানতি।”
সাদনান আর কিছু বলে না।
খানিক্ষন চুপ থাকে।
নিরবতা কাটিয়ে সাদনান বলে
-“ভালোবাসলে হয় না ভালোবেসে, ভালোবাসার জিনিস গুলো আগলে নিতে হয়।”
——–
-“তোমার বোন কে দেখেও তো কিছু শিখতে পারো ছোট বউ।”
প্রিয়তা সবে মাত্র খাবার টা মুখে তুলবে ঠিক তক্ষুনি পাশ হতে আম্বিয়া মির্জা কথা টা বলে উঠে।
প্রিয়তা আশেপাশে তাকালো। একটু পর হলুদ এর অনুষ্ঠান শুরু হবে।
এখন সাড়ে ছয় টার মতো বাজে।প্রিয়তা এতোক্ষণ শাশুড়ীর সাথে হাতে হাতে কাজ করছিল।আজ সারা দিন শুধু বারো টার দিকে একবার খাবার খেয়ে ছিল তার পর আর সময় পায় নি সাদনান বাসায় নেই সাথে এতো কাজ।বাড়ির কে কখন খাবার খাচ্ছে তার ঠিক নেই বাড়িতে মেহমান, পাড়াপ্রতিবেশি দিয়ে ভর্তি।
সবাই এখন উপর অনুষ্ঠানের ওখানে আর প্রিয়তা খাবার খেয়ে রেডি হয়ে উপর যাবে।
কিন্তু মনে হয়ে না আজ আর খেতে পারবে।এমনিতেই দাদি রেগে আছে আর আজ এতো বড় সুযোগ পেয়েছে ছাড়বে না-কি?
প্রিয়তা এসব ভেবেই কান্না পেলো।
তবে মুখে বলল
-“দাদি আপনার কিছু লাগবে? আপনি বলেন আমি দিচ্ছি।”
-“থাক, থাক।
আমাকে ভুলাতে এসো না।বউ তুমি সেটা ভুলে যেয়েও না যেনো আবার।
বাড়িতে বাহিরের অনেক মানুষ জন আছে।
শাশুড়ীর সাথে সাথে থেকো।”
কথা গুলো বলেই তিনি চলে গেলো।
প্রিয়তার খারাপ লাগলো।সত্যি কি সে বেশি আজেবাজে চলে ফেরা করে?
হয়তো। তা নাহলে দাদি তাকে এভাবে বলতো না।সত্যি তো বউ হয়ে রোজ স্কুল যেতো এখন কলেজ যায়। আর এটা একজন বউয়ের জন্য মোটেও শোভনীয় নয়। বউ তো বউই বউ কেন আবার বাড়ির বাহিরে এমন রংঢং করে ঘুরে বেড়াবে?
কিন্তু সে তো একা যায় না সাথে সারা যায় আর সাদনান নিজেও থাকে।
সাদনান নিজের পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে।
আর ডাইনিং টেবিলে চোখ যেতেই দেখলো প্রিয়তা খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে।
সাদনান ভ্রু কুঁচকে নিলো আর ঘটনা বুঝতে পেরে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।
এগিয়ে এসে শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে
-“এতো লেট করে খাবার?”
-“খেয়েছি।
আবার খাচ্ছি।”
প্রিয়তা হঠাৎ সাদনান কে দেখে চমকে উঠে। তাড়াহুড়ো সহিতে মুখে খাবার নিতে নিতে জানালো।
সাদনান এবার প্রিয়তার দিকে ঝুঁকে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল
-“মিথ্যা আমার একদম পছন্দ নয়।
তবে কেন বলো?”
প্রিয়তা এবার চুপ করে থাকে।
সাদনান সোজা হয়।রুমের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে
বলল
-“খাবার রুমে নিয়ে এসো।
আর হ্যাঁ,এই প্লেটে করেই।”
সাদনান কথা টা বলেই চলে গেলো প্রিয়তাও সাদনান এর কথা মতো কাজ করে।
———
হলুদের অনুষ্ঠান শেষে সাদনান এর কাছে সারা কিছু বললো।প্রিয়তা সে সব শুনে না রুমে চলে আসে।শরীর এই শাড়ী নিয়ে আর থাকা যাচ্ছে না তাই এসব চেঞ্জ করে হাল্কা কিছু পড়বে বলে রুমে চলে গেলো।
এদিকে মাইশা বসে আছে ফোনের সামনে। ফোনের স্কিনে আয়ানের হলুদ মাঝা মুখ জ্বলজ্বল করছে।
মাইশার নিজেরও একই অবস্থা ফ্রেশ হওয়া দরকার কিন্তু আয়ান যেতে দিচ্ছে না।
ছেলের বাড়ি থেকে কেউ আসে নি।মূলত আসার মতো কেউ নেই তাই আর এসব নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় নি।
আয়ান আসবে বলে ছিল।কিন্তু লুকিয়ে এতো সিকিউরিটি টপকে আসতে মাইশা না করেছে।আর সেই শাস্তিস্বরূপ আয়ান ওকে গত একঘন্টা সময় ধরে ফোনের সামনে বসিয়ে রেখেছে।
বেশ অনেক টা সময় পর আয়ান হুট করেই বলল
-“তোমার ভাই কি করতে এতো সিকিউরিটি রেখেছে?”
-“কি সব বোকা বোকা প্রশ্ন করছেন,আয়ান?
এসব ভাই ইচ্ছে করে রাখে নি বরং ওনার স্থান টাই এমন যে না চাইলেও এগুলো ওনার সাথেই থাকবে।”
#চলবে….