Monday, October 6, 2025







আমার তুমি পর্ব-২৮+২৯

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৮ [অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

সন্ধ্যা ছয় টার বেশি সময় বাজে। সাদনান আর রাহান বেড়িয়ে এলো একটা ভবন থেকে। সেখানে আজ একটা মিটিং ছিল কয়েকজন বড় বড় নেতা ছিল।
সাদনান রাহান দু’জনেই গাড়িতে উঠে বসে। রাহান আজ বাড়ি চলে যাবে। আজ চার দিন ধরে বাড়ি যাওয়া নেই রাহান এর মা আজ ফোন দিয়ে কান্না কাটি করেছে বাড়ি যেতে বলেছে।এক ছেলে তার ভীষণ আদরের আর এক মেয়ে তাকেও কাছে পায় না। সেই ইতালি পারি জমিয়েছে আজ বছর পাঁচ বছর হতে চলে। বলেছে এই বছর দে-শে ফিরে আসার কথা এখন বাকি টা আসলে বলা যাবে।
সাদনান নিজের বাড়ির সামনে নেমে গেলো আর ড্রাইভার কে বলল রাহান কে বাড়ি পৌঁছে দিতে।
সাদনান গেইট দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখা মিলে জাফর মির্জা ফোনে কথা বলছে বাগানে দাঁড়িয়ে।
সাদনান ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেলো দাদার দিকে।

-“হ্যাঁ, হ্যাঁ।
আপনি চিন্তা করবেন না আমি বাড়িতে আজ রাতেই এই বিষয়ে কথা বলবো।”

-“আচ্ছা আচ্ছা।
আপনি চিন্তা করবেন না।
আচ্ছা তাহলে রাখি।”

জাফর মির্জা কথা শেষ ফোন কেটে পেছন ফিরতেই দেখে সাদনান ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
তিনি কিছু বলবে তার আগেই সাদনান বলল

-“সরি দাদু।
কারোর কথা লুকিয়ে শোনা ঠিক না কিন্তু আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই না চাইতেও কথা গুলো আমার কানে গেলো।”

-“ইট’স ওকে দাদু ভাই।
এমনিতেও আমি তোমার সাথে এই ব্যাপারে আজ কথা বলতাম।ওয়াসিফ দেওয়ান ছিল কলে।”

জাফর মির্জা হেঁসে সাদনান এর কাঁধে হাত রেখে হাঁটতে হাঁটতে বলল।
সাদনান বাড়ির সদর দরজায় এসে থামলো।
ক্লান্ত ভরা কণ্ঠে জানালো

-“দাদু আমি ভীষণ ক্লান্ত।
ফ্রেশ হয়ে রাতে কথা বলি।”

-“হুম।
তবে তোমার সাক্ষাৎ কেমন ছিল নেতাদের সাথে?”

-“যেমন টা তুমি আশা করেছিলে।
ওরা ওদের মতো বুঝালো।আমার মতে অফার।”

-“বুঝতে পারছি।
কিন্তু তুমি তোমার মতো করে এগিয়ে যাও।
আর গাড়ির জিপি নেওয়ার ব্যাপার টা কি আগের ঘোষণা থাকবে?”

-“হ্যাঁ দাদু এটা তুমি জানিয়ে দিয়েও।”

সাদনান এর কথা জাফর মির্জা সম্মতি দিলো। আর সাদনান নিজের রুমের উদ্দেশ্য চলে গেলো।
নমিনেশন পাওয়ার পর সাদনান ভোট হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনো ড্রাইভার থেকে টাকা নিতে না করেছে। এতে ড্রাইভাররা ভীষণ খুশি। তার কারণ রোজ ইনকাম হয় কতো একজন ড্রাইভার এর?তার মধ্যে যদি চাঁদা দিতে হয় তো তাদের থাকে কি?
এটা নিয়ে আগের এমপির কাছে অনেক বার দরখাস্ত করেও কোনো লাভ হয় নি।আর সাদনান নমিনেশন পাওয়ার পর পর সেটা উঠিয়ে দিয়েছে। বলা যেতে পারে ড্রাইভার আর ফুটপাতে দোকানদার সাথে গরিব মানুষের জন্য আজ সাদনান এখানে।
সাদনান রুমে এসে ঘড়ি খোলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখে।
প্রিয়তা রুমে নেই নিশ্চয়ই রান্না ঘরে না কারণ রান্না ঘরে থাকলে দেখতে পেতো রান্না ঘরে কাজের লোক আর সুফিয়া বেগম ছিল।প্রিয়তা হয়তো দাদির ঘরে নয়তো সারা, মাইশার সাথে।
সাদনান গায়ের পাঞ্জাবি খোলে ফোন হাতে মাইশা কে মেসেজ দেয়।
অতঃপর টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুম চলে যায়।
প্রিয়তা মাইশার পাশে শুয়ে ছিল আর ওর ওপাশে সারা।
ওরা গল্প করেছিল এর মধ্যে হঠাৎ মাইশা প্রিয়তা কে বলল

-“ভাইয়া এসছে তুমি রুমে যাও।”

প্রিয়তা একটু লজ্জা পেলে তবে সেটা ধামাচাপা দিয়ে মাইশা কে বলল

-“তোমাকে কত বার বলেছি?
আমাকে আগের মতো তুই করে বলবে।”

-“আরে বাবা ঝগড়া পরে করিস।
এখন রুমে যা।”

মাইশা কথা টা বলতে বলতে প্রিয়তা কে শোয়া থেকে উঠিয়ে রুম থেকে বেড় করে দিলো সাথে সারাও সাহায্য করে।
প্রিয়তা রুমে এসে কাউ কে দেখতে পায় না। কিন্তু সোফায় সাদনান এর পাঞ্জাবি দেখে বুঝতে পারে সাদনান সত্যি এসছে।
প্রিয়তা এগিয়ে সেটা হাতে নিয়ে শ্বাস টেনে নেয়।
অতঃপর সেটা ভাজ করে রাখে।
সাদনান ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এসে প্রিয়তা কে দেখলো দরজা বুয়ার হাত থেকে কফির মগ নিচ্ছে।
সাদনান শুধু একটা টাওয়াল পড়ে আছে আর এক হাত কোমড়ে রেখে অন্য হাত দিয়ে মাথার চুল ঝাঁকিয়ে পানি সরানোর চেষ্টা করছে।
প্রিয়তা এগিয়ে এসে সাদনান এর হাতে কফির মগ টা দিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো ফিরে এলো হাতে আরেক টা টাওয়াল নিয়ে।
সাদনান ততক্ষণে সোফায় বসে আছে।
প্রিয়তা এগিয়ে এসে সাদনান এর পেছনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো মুছতে লাগলো।
সাদনান একবার আঁড়চোখে পেছনে তাকিয়ে আদেশের স্বরে বলল

-“সামনে দিয়ে এসো।”

প্রিয়তা শুনলো বাধ্য মেয়ের মতো সামনে দিয়ে এলো।
সাদনান প্রিয়তা কে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।
গলায় মুখ গুঁজে লম্বা শ্বাস টানে।
প্রিয়তা কেঁপে উঠল।
সাদনান বিরক্ত হলো।
ভ্রু কুঁচকে বলল

-“খাবার শেষ তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসবে।
মনে থাকবে?”

প্রিয়তা মাথা নাড়ে।আবারও চুল মুছতে শুরু করে। সাদনান কফি শেষ উঠিয়ে গিয়ে একটা ট্রাউজার আর সাদা টি-শার্ট নিয়ে পড়ে নিলো।
প্রিয়তা ততক্ষণে নিচে চলে গিয়েছে।
সাদনানও কাপড় পড়ে নিচে চলে আসে। লিভিং রুমে সবাই বসে আছে। রাহাত, মফিজুর মির্জাও আছে হয়তো তার আসার পর পরই ওনারাও এসছে।
সাদনান সহ এসে দাদার পাশে বসে পড়ে। সবাই টুকটাক সাদনান এর আজকের ঘটনা জিজ্ঞেস করছে কেমন কাটলো দিন সাথে খুব সাবধানের সহিত থাকতে হবে এটা সেটা বাপ, চাচা, দাদা সবাই উপদেশ দিচ্ছে।যদিও সাদনান এর জ্ঞান সম্পর্কে তারা অবগত তবুও বড় হিসেবে তাদেরও কিছু উপদেশ দিতে হয়।
তাদের কথার মাঝেই জাফর মির্জা ওয়াসিফ দেওয়ান এর বলা কথা জানায়।তিনি মাইশা কে ওনার ছেলের জন্য চান। মাইশা সারা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে আম্বিয়া মির্জার পেছনে কথা টা শোনা মাত্রই মাইশা সারা হাত চেপে ধরে।
সারা আশ্বাস দেয়।ইশারায় বোঝায় ভাইয়া আছে তো।কিন্তু সারা হয়তো জানেই না এই পরিস্থিতি টা ঘুরে-ফিরে ওর উপর আসবে।
এ-র মধ্যেই মফিজুর মির্জা সাদনান এর দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠলো

-“কিন্তু শফিক ভাই তো আয়ানের জন্য বলে ছিল।”

-“কথা দিয়ে ফেলেছো?”

-“তেমন না দাদু ওনি অনেক আগেই আবদার করেছে।
তাই আর কি।”

সাদনান ফোড়ন কেটে বলে উঠে।
জাফর মির্জা একবার সারার দিকে তাকালো।এর মধ্যে
খাবার এর জন্য ডাক পরে তাই সবাই চলে যায় শুধু সাদনান মফিজুর মির্জা আজ্জম মির্জা বসে আছে জাফর মির্জা কিছু বলবে সেই আশায়।

-“আমি ওয়াসিফ দেওয়ান এর সাথে কথা বলবো।”

সবাই সায় জানালো।অতঃপর তারাও ডাইনিং টেবিলে চলে গেলো। জাফর মির্জা ভাবছে সারার জন্য বলবে।যদি রাজি হয়।সমন্ধ টা ভালো হাত ছাড়া করা যাবে না। তবে তার মন বলছে রাজি হবে কারণ মাইশার থেকে সারার একটু লম্বা সাথে চেয়ার ভালো তবে মাইশার থেকে গায়ের রঙ টা সামান্য কালচে।

————

সাদনান ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। প্রিয়তা তখন রুমে এলো আজ কফি আনে নি মুলত সাদনান নিজেই না করেছে আনতে।
প্রিয়তা রুমে এসে সাদনান এর দিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো। সাদনান নিজেও তাকালো।
প্রিয়তা ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে আসতে সাদনান বলল

-“চলো।”

-“কোথায় যাব?”

-“আহ চলই না।”

সাদনান প্রিয়তার গায়ে একটা চাদরে জড়িয়ে দিয়ে হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
লিভিং রুম তখন একদম ফাঁকা। রাত দশ টা বাজতে চলে সবাই যার যার রুমে।
রান্না ঘরে একজন বুয়া ছিল। সাদনান ওনাকে ডেকে বলল ঘুমিয়ে পড়তে ওরা এক্সট্রা চাবি দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে।
অতঃপর ওরা বেড়িয়ে পড়ে।
সাদনান দারোয়ান এর হাতে গাড়ির চাবি দিলো এতে প্রিয়তার মন টা একটু খারাপ হলো।
সাদনান বউয়ের মন খারাপ এর কারণ বুঝতে পারে।কিন্তু পাত্তা দেয় না।
এখন সে আর আগের মতো সাধারণ নয়। সে না মানলে এটাই সত্যি সেখানে নিজের সিকিউরিটি ছাড়া বাইক নিয়ে বেরুনো টা মোটেও শোভনীয় নয়।

#চলবে…

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৯[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

-“আপনার বোঝার ভুল হয়েছে মির্জা সাহেব।
আমি প্রথমেই আপনার ছোট্ট নাতনির কথা বলেছি।”

জাফর মির্জা চায়ের কাপ টা মুখে সামনে ধরে ছিল সবেমাত্র। কিন্তু ওয়াসিফ দেওয়ান এর ফোনের ওপাশে হতে বলা কথা টা শোনা মাত্রই তিনি অবাক হয়ে গেলো।চা মুখে নেবার কথা ভুলে গেলো।
খাবার শেষ রুমে এসে ফোন করেছেন ওয়াসিফ দেওয়ান কে।আর মাইশা কে না সারার কথা বলাতে ওয়াসিফ দেওয়ান উপরোক্ত কথা গুলো বলে উঠে।

-“সারা’র কথা?”

জাফর মির্জা বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে। ওয়াসিফ দেওয়ান খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব বলে উঠে

-“হ্যাঁ।
আপনি বড় নাতনি কে না তো।”

জাফর মির্জা সহসা কিছু বলতে পারে না। তবে তিনি জানায়া বড় বোনের বিয়ে না দিয়ে তো আর ছোট বোন কে দেওয়া যাবে না।
তাছাড়া বাড়ির সদস্যদের সাথে তো কথা বলতে হবে। তাই তিনি আশ্বাস দিলেন মাইশার একটা ব্যবস্থা হয়ে গেলেই তিনি সারা’র বিষয়ে কথা বলবে।
জাফর মির্জা সাথে কথা শেষ তিনি তাদের রুমের পাশে বড় গেস্ট রুম টা থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমের দিকে পা বারাতেই দেখলো কাজের মহিলা টা সদর দরজা আটকাচ্ছে।তিনি চায়ের কাপ টা দেওয়ার জন্য বুয়া কে ডাকতেই মহিলা টা এগিয়ে এসে খালি চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে চলে যেতে নিলে তিনি আবারও ডেকে জিজ্ঞেস করলো

-“এতো রাতে দরজা বন্ধ করলে যে কেউ বাহিরে গিয়েছে?”

বুয়া একটু চমকালো।তবে সত্যি টা বললে জাফর মির্জা কিছু বলবে না। তাই তিনি মাথা নুইয়ে জানালো

-“ছোট সাহেব বউ মনিরে নিয়া বাইরে গিয়েছে।”

কাজের মহিলা কথা শেষ করে চলে গেলো।
জাফর মির্জা রুমে যাওয়ার জন্য পেছন ফিরে দেখলো আম্বিয়া মির্জা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি ভাবলেন হয়তো ওনার দেরী হয়েছে তাই এসেছে।
বউয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল

-“তুমি আসতে গেলে কেন পা ব্যাথা নিয়ে আমি তো যাচ্ছিলাম।”

আম্বিয়া মির্জা কিছু বললো না আগে আগে রুমে চলে গেলো পেছন পেছন জাফর মির্জাও যায়।

———–

সাদনান ড্রাইভিং করছে। প্রিয়তা পাশে বসে আছে এক হাত কোলের উপর আরকে হাত সাদনান তার হাতের উপর ধরে রেখেছে।
বউকে সময় দেওয়া হয় না তার অনেক দিন হয়।শুধু রাতে একটু কাছে পায়।এতো দিন দিতে পারে নি দৌড়াদৌড়ি কাজের চাপের জন্য। আর কাল হয়তো রাত দিন কোনোটাই দিতে পারবে না। তাই আজ সারা রাত বউ কে দেবো রাতের শহর ঘুরবে তারা।
সাদনান বাড়ি থেকে সোজা প্রিয়তাদের স্কুল এর পাশে দক্ষিণ দিকের চায়ের দোকানের সামনে থামায়।
সাদনান প্রিয়তা কে গাড়ি তে বসতে বলে নিজে গাড়ি থেকে বেড় হয়ে দোকানের কাছে গিয়ে দোকানদার কে দুই টা চা দিতে বলে।এখানে আরও দুই তিন টা কাপল +ভার্সিটির কিছু ছাত্র ছাত্রীও আছে। সাদনান গাড়ি তেকে নামার আগে একটা কলো মাস্ক পড়ে নিয়েছে।
তাই তাকে কেউ চিনতে পারে নি।কিন্তু এই দোকানে সাদনান, আয়ান, রাহান, রাহাত মাঝে মধ্যে চা খেতে আসে এটা তাদের সেই স্কুল লাইফ থেকে শুরু করে ভার্সিটি পর্যন্ত চলেছে নিয়ম করে।কিন্তু এখন আর তেমন আসা হয় না মাঝে মধ্যে আসা হয়। তাই সাদনান কে চিনতে দোকানদার এর ভুল হয় না।
তিনি অবাক হয়ে আস্তে করে জিজ্ঞেস করে উঠলো

-“ছোট মির্জা?”

সাদনান তৎক্ষনাৎ ফিসফিস করে বলল

-“হ্যাঁ চাচা।
আপনি,,,,

-“বুঝবার পারছি।
আপনার সমস্যা হইবো।আপনি দাঁড়ান আমি এক্ষুনি চা করে দিচ্ছি।”

তিনি কথা বলতে বলতে দুই টা চায়ের কাপ হাতে হঠাৎ থেমে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো

-“আপনি একা আইছেন আজ?
আবার চা দুই,,,,

-“আপনার বউ মা এসছে সাথে, গাড়িতে আছে।”

মধ্যবয়সী দোকানদার সামছুল মিয়া কে থামিয়ে বলে উঠে সাদনান।
সামছুল মিয়ার মুখের হাসি মূহুর্তে গায়েব হয়ে গেলো অবাক হয়ে জানতে চাইলো

-“আপনি বিয়া করছেন?

-“হ্যাঁ চাচা।
তবে এটা আপাতত কেউ জানে না।আমি আপনাকে খুব কাছের মানুষ মনি করি তাই বললাম। আশা করি আমার বিশ্বাস টা রাখবেন।”

-“এই চিনলেন এতো দিনে!
আচ্ছা বউ মা কি এনের?”

-“হ্যাঁ চাচা আয়ানের ছোট বোন।”

সাদনান এর কথায় তিনি হেঁসে ফেলে।তিনি হয়তো কিছু বুঝতে পারে।
অতঃপর চা বানিয়ে সাদনান এর হাতে দেয়।
সাদনান কাপ দু’টো টুলের উপর রেখে পকেট হাতরে ওয়ালেট বের করে একটা পাঁচশ টাকার নোট ওনার হাতে দিয়ে বলল

-“খুচরা নেই।
আরেক দিন এসে চা খেয়ে যাব।”

সাদনান এর কথায় তিনি হাসলো।প্রতি বার এমন করে খুচরো নেই বলে বড় নোট ধরিয়ে দেয়।
তাই তিনি কথা বাড়ায় না মুচকি হেঁসে বলল

-“আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুক।”

সাদনান বিনিময়ে হাসলো।অতঃপর সেখান থেকে চলে আসে। দোকান দারের কোনো ছেলে নেই শুধু দুই টা মেয়ে একজন কে বিয়ে দিয়েছে আর একজন এখনো পড়ালেখা করে এবার হয়তো অষ্টম শ্রেণি বা নবম শ্রেণির ছাত্রী হবে।
সাদনান জানালা দিয়ে প্রিয়তা কে বলল গাড়ি থেকে নামতে প্রিয়তা নেমে এলো।
সাদনান একটু এগিয়ে গেলো সামনে অন্ধকার দিক টায় কিন্তু সেখানে গিয়ে একজোড়া কাঁপল এর কথোপকথন কানে আসে।
প্রিয়তা খুব সহজে কণ্ঠ গুলো চিনে ফেলে।
আর মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো

-“কবির স্যার?”

কবির আর তিন্নি চায়ের কাপ হাতে পেছনে ফিরে আবছা আলোয় সাদনান আর প্রিয়তা কে দেখে তিন্নি বলে উঠলো

-“সাদনান ভাই, প্রিয়তা।”

-“ভালো হলো।
দেখা হয়ে গেলো।”

প্রিয়তা মুচকি হেঁসে এগিয়ে গিয়ে বলল।
সাদনান কবির এর সাথে কথা বলে আর তিন্নি প্রিয়তার সাথে।
ওদের সাথে কথা বলে জানতে পারলো কবির, তিন্নি সেই বিকেলে বেড়িয়েছে আর খাবার দাবার ঘুরাঘুরি শেষ তারা এখান থেকে চা খেয়ে বাড়ি চলে যাবে।কিন্তু এখন আর যাবে না তিন্নি আর প্রিয়তা বায়না ধরলো ওরা আইসক্রিম খাবে।
সাদনান আবার মাস্ক টা পড়ে নিয়ে প্রিয়তা কে নিয়ে গাড়িতে বসে।কবির আর তিন্নিও ওদের গাড়িতে যায়।
ওরা সেখান থেকে দশ মিনিট গাড়ি চালানোর পর একটা আইসক্রিম পার্লারে সামনে গাড়ি থামায়।
আর ওরা সেখানে গিয়ে আইসক্রিম অর্ডার দেয়। কিন্তু সাদনান প্রিয়তা কে বেশি খেতে দেয় নি।এখনো হাল্কা ঠান্ডা আছে আবার তার উপর রাত এতো প্রিয়তা অভিমান হয় নি।বরং ভালো লেগেছে কতো দিন পর সাদনান তাকে এমন ভাবে কেয়ার করলো।
ওরা ঘুরাঘুরি শেষ যে যার বাসায় চলে যায়।
তখন হয়তো রাত বারো টা ছুঁই ছুঁই করছে।
সাদনান চাবি দিয়ে সদর দরজা খোলে ভেতরে ঢুকে।অতঃপর আবার লক করে প্রিয়তা কে নিয়ে রুমে চলে আসে। কিন্তু এই পুরো ঘটনা টা আম্বিয়া মির্জা তার রুমের দরজার দাঁড়িয়ে দেখলো।

———

“আমি আপনার জন্য এখানে পড়ে আছি ওয়াজিদ।
আর সেই আপনি আমাকে না বলে দেশে চলে গেলেন?”

ফোনের স্কিন মেসেজ টা জ্বলজ্বল করছে। হোয়াটসঅ্যাপ এসছে এটা।
ওয়াজিদ মেসেজ টা পড়ে ফোন টা মুঠো করে ব্যালকনিতে এসে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস টানে।
ঠিক তক্ষুনি হাতে থাকা ফোন টা এবার সশব্দে বেজে উঠে। ফোনের স্কিনে তাকাতেই দেখলো কল টা হোয়াটসঅ্যাপ থেকে এসছে আর মাঝে গোল একটা পিকচার ভেসে উঠলো একজন স্কুল পড়া ষোড়শী কন্যা স্কুল ড্রেস পড়ে দুই দিকে দুটি বিনুনি হাতের মুঠো পুরো আগে আগে হাঁটছে তার ঠিক পেছনে কলেজ ড্রেস পড়ুয়া ওয়াজিদ মেয়েটার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।
ছবি টা কবের?এই তো সাত কি আট বছর আগের হবে।
ওয়াজিদ ফোন টা কেটে দিলো।কিন্তু ওপাশের রমণী টা হার মানলো না আবারও কল দিলো।
ওয়াজিদ এবার ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ হতে মিষ্টি একটা কণ্ঠে কান্না ভেজা গলায় বলে উঠলো

-“আর কি করলে আপনি আমার আমায় মেনে নিবেন ওয়াজিদ?”

ওয়াজিদ হাসলো এই মেয়ে টার চোখে তার জন্য ভয়ংকর ভালোবাসা দেখে।কিন্তু, কিন্তু তাহলে সে কেন তাকে কষ্ট দিবে? সেও তো ভালোবাসে কই সে তো এমন করে না।মায়ের পর এই নারী কে সে অন্য চোখে দেখে তার মনে এই নারীর জন্য ভালোবাসা অনুভব করে।
কিন্তু নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে না ওয়াজিদ। নির্বিকার কণ্ঠে শুধালো

-“প্রথম ভুল করেছো মেনে নিয়েছি।আবার একই ভুল তুমি দ্বিতীয় বার করেছো।সেটা কি করে মেনে নেবো? ভুল মানুষ একবার করে,আর সেই একই কাজ বার বার করলে সেটা অন্যায়।”

#চলবে……

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ