Monday, October 6, 2025







আমার তুমি পর্ব-২৬+২৭

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৬[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

“দুই মিনিট এর মধ্যে ছাঁদে এসো”

মেসেজ টা পড়ে সারা আরও একদফা অবাক হলো।
মানে এটা কিভাবে সম্ভব?
এই আইডির কথা একমাত্র মাইশা জানে আর কেউ না কারণ আইডি টা মাইশা নিজে খুলে দিয়েছে।
সেখানে রাহানের এমন কথায় স্পষ্ট যে রাহান সারার আইডি এটা জানে।
তাহলে কি রাহান ভাই জেনে গিয়েছে?
কিন্তু কিভাবে? মাইশা আপু?

“কি হলো আসছো না কেন?”

সারার ভাবনার মাঝেই আবারও টুং করে মেসেজ এর শব্দ হলো।
সারা শোয়া থেকে উঠে বসলো।
মাইশা পাশেই সোফায় বসে আয়ানের সাথে কথা বলছে।
সারা পা টিপে টিপে রুম হতে বেড়িয়ে যেতে নিলেই মাইশা পেছন থেকে জিজ্ঞেস করে

-“এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিস?”

সারা হাল্কা চমকালো।তবে নিজে কে সামলে মনে মনে একটা মিথ্যা সাজিয়ে আমতা আমতা করে জানালো

-“আপু পানি খেতে যাচ্ছি।”

মাইশা পাশে সেন্টার টেবিলে তাকালো সত্যি জগে পানি নেই।

-“তাড়াতাড়ি আসবি যা।”

মাইশার অনুমতি পেয়ে তৎক্ষনাৎ সারা মাথা নাড়িয়ে তড়িঘড়ি করে রুম হতে বেড়িয়ে এলো।
রুম থেকে বেড়িয়ে লম্বা একটা শ্বাস টানে সারা।ভাগ্য ভালো জগে আজ পানি রাখে নি।
সারা চার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
ছাঁদে আসতেই দেখা মিলে উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা একটা অবয়ব এর।
রেলিং এর উপর এক পা ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সারা আলগোছে এগিয়ে এলো।
কেশে রাহানের দৃষ্টি আকর্ষণ এর চেষ্টা করে।
রাহান ফিরলো চাঁদের আবছা আলোয় চকচক করতে থাকা সারার দিকে।
হ্যাঁ চকচকই তো করছে। এই যে রাহান এর নিকট ভীষণ মায়াবী লাগছে।
রাহান এগিয়ে এলো সারা ছোট হাত টা নিজের দানবীয় হাত টার মাঝে মুঠোয় পুরো নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো।
চাঁদটার থালার মতো আকার। রাহান চাঁদ টা দিকে তাকিয়ে বলল

-“আমার জীবনেও একটা ব্যক্তিগত চাঁদ আছে।”

সারা’র বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। কে আছে রাহান ভাইয়ের জীবনে?
তবে কি আমি আসার আগে ওনার জীবনে অন্য কেউ এসে পড়েছে?
কথা টা ভাবতেই সারা’র চোখ চিকচিক করে উঠলো।বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো।
বুকে টিপটিপ শব্দ হচ্ছে।
আচ্ছা এটা জানাতেই কি আজ রাহান ভাই তাকে এখানে ডেকেছে?

-“কিছু বলবেন?”

মিনমিন করে জিজ্ঞেস করে সারা।
অর অকারণেই কেন জানি কান্না পাচ্ছে।রাহান সারা দিকে তাকালো।
সম্পূর্ণ সারা দিকে ফিরে ওর মুখ টা রাহান ওর নিজের দুই হাতের আঁজলে নিলো।
সারা তৎক্ষনাৎ কেঁপে উঠল। চোখে টলমল পানি স্পষ্ট। রাহান সহসা হাসলো। এই মেয়ে নিশ্চয়ই অন্য কিছু ভাবছে।
রাহান সারা’র চোখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে শুধালো

-“আমার চাঁদের চোখে পানি?
একদম শোভনীয় নয়।”

-“মানে?”

সারা ঝটফট রাহান এর হাত গালের উপর থেকে হতে সরানোর চেষ্টা করতে করতে থমথমে কণ্ঠে প্রশ্ন করে।
রাহান ছেড়ে দিলো সারা কে।সারা সামান্য পিছিয়ে গেলো।
রাহান নিজের পরিহিত প্যান্ট এর পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।

-“রাত অনেক হয়েছে রুমে যাও।
আরও একটা কথা আমার মনে শুধু দুই জন নারী আছে।
একজন আমার মা দ্বিতীয় জন না হয় নাই বললাম।
তবে এটুকু জেনে রেখে আমরা চোখ সেই নারী ছাড়া অন্য কোনো নারী এই চোখ দেখে না।”

সারা স্তব্ধ। কি বলবে বুঝতে পারছে না। ঠোঁট জোড়া অনবরত কাঁপছে।

-“আর হ্যাঁ কাল রুম থেকে বেশি বেরোবে না।”

-“কেন?”

রাহানের কথা শুনে সারা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে।
রাহান চরম বিরক্ত হলো।
এই মেয়ে সাইজে ছোট হলে কি হবে মনে কৌতুহলে ভরা।শুধু প্রশ্ন করবে পেঁচাবে। বলেছে যখন নিশ্চয়ই কারণ তো আছেই।
তবে বিরক্তি প্রকাশ না করে বলল

-“আগে এটা চেয়ারম্যান বাড়ি ছিল।
বাট এখন এটা এমপি বাড়ি।”

-“তাতে কি হয়েছে?”

সারা আগের মতো আর নার্ভাস না।
কি সুন্দর অবলীলায় প্রশ্ন করেই যাচ্ছে এককের পর এক।
রাহান হাসলো আবারও।বাচ্চা একটা মেয়ে কিন্তু কি সুন্দর নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রেখেছে।

-“সেটা না হয় কাল সকালে দেখে নিবে।”

সারা বুঝতে পারে না।
আরও কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই রাহান গম্ভীর কণ্ঠে হুকুম এর স্বরে বলল

-“আমি যেতে বলেছি।”

ব্যাস এটাই যথেষ্ট সারার জন্য। মুখ আধার দেখা মিলে।
এই লোক টা এমন কেন?
একটু ভালো করে কথা বলে না তার সাথে। সব সময় ত্যাড়া কথা বলে।
সারা অভিমান হলো নিজে ডেকে আনলো আর এখন কেমন করছে।
কথা বলবে না লোকটার সাথে।
সারা ছাঁদের দরজা দিকে পা বাড়াতেই রাহান পেছনে থেকে ওর হাত টেনে ধরে।
সারা অবাক হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই রাহান মিহি কণ্ঠে বলে উঠলো

-“অভিমান করো না মেয়ে। বুকে তীব্র যন্ত্রণা হবে।
তবে হয়তো সারা রাত ছটফট করতে করতে কেটে যাবে।”

সারা অবুঝ চোখে তাকিয়ে রইলো রাহানের দিকে।
রাহান হাত ছেড়ে দিলো।

দুই পা এগিয়ে এলো।ঠিক সারা’র বরাবর দাঁড়াল। চোখে চোখ রেখে বলল

-“আমার রোজ ঘুমের ঔষধ এর প্রয়োজন হয়।
যখন বাড়িতে থাকি তখন ভীষণ কষ্ট হয়। তাই ভাবছি পুরো ফার্মেসি টা আমার বাসায় নিয়ে যাব।”

সারা এবার হাসলো।
সারা কিছু আন্দাজ করতে পারছে হয়তো।
তাই তো নিজেও রাহানের মতো ফিসফিস করে বলল

-“আপনি ব্যবস্থা করুন ফার্মেসী আপনার বাড়ি যেতে আগ্রহী।”

কথা টা শেষ করে সারা আর এক মূহুর্ত দাঁড়ায় না।
চট জলদি পা চালিয়ে নিচে চলে গেলো।
রাহান সে দিকে তাকিয়ে নিজের পাম হাত দ্বারা মাথার পেছনে চুল খামচে ধরে মুচকি হেসে বিরবির করে বলল

-“ভালোবাসার প্রথম প্রণয় হলো তবে।”

———

সাদনান সকালে ঘুম থেকে উঠে বউ কে পাশে পায় না। চোখ তার ভীষণ জ্বলছে। কয় টা বাজে তখন সকাল আটটার বেশি। কতক্ষণ ঘুমালো? এই তো হবে হয়তো ঘন্টা দুই।ঘুমিয়েছে তো একদম শেষ রাতে ভালোবাসার মূহুর্ত শেষ করে সাওয়ার নিয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত তো প্রায় শেষ হলো।
ঘুমিয়ে ছিল তো বউ কে বুকে নিয়ে। তবে উঠে গেলো কখন আর সে টেরও পেলো না।
সাদনান উঠে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে মিনিট দশ এক পর বেরিয়ে এলো।কিন্তু বউ তার রুমে আসে নি।সাদনান টাওয়াল টা সোফায় ছুঁড়ে ফেলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে নিলো আর ঠিক তক্ষুনি দরজায় কড়া নাড়ে কেউ।সাদনান বুঝতে পারে বউ তার আসে নি বউ আসলে দরজায় নক করতো না তাই গম্ভীর কণ্ঠে অনুমতি দেয় আসার জন্য।
একজন বুয়া এসছে হাতে ধুঁয়া উঠা কফির মগ।সে টা সেন্টার টেবিলে রেখে জানালো নিচে অনেক মানুষ এসছে তাকে ডাকছে সেখানে। তিনি কথা শেষ
আবার চলে গেলো সাদনান কফি টা হাতে নিলো।সেটায় একবার চুমুক দিয়ে নাক মুখ কুঁচকে নিলো।
সাদনানের কাছে মনে হলো এটা কফি কম শরবত বেশি। তাই আর খেলো না রেখে দিলো সেখানে। অতঃপর নিজেকে পরিপাটি করে ফোন টা হাতে নিয়ে রুম হতে বেরোতেই দেখা মিলে রাহানের। রাহান সাদনান কে ডাকতেই আসছিল। রাহান সহ সাদনান দুইজনে টুকটাক কথা বলতে বলতে নিচে চলে আসে। সাদনান নিচে আসতেই ওর চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। গেস্ট দের নিচে একটা রুম আছে সেখানে শুধু রাজনীতির বিষয়ে কোনো সমালোচনা হলে সেখানে হয়। আর তার ঠিক পাশের রুম টায় আম্বিয়া মির্জা থাকে প্রিয়তা সেই রুম হতে বেড়িয়ে আসছে আর একটা ছেলে করিডরে দাঁড়িয়ে ফোন কথা বলছিল প্রিয়তা কে দেখে ছেলে টা ফোন কানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ছেলে টা মোটামুটি মির্জা বাড়ির সদস্য নিয়ে অবগত। কিন্তু এটা কে হতে পারে বুঝতে পারছে না।
ছেলে টার ভাবনার মাঝেই প্রিয়তা চলে গেলো। ও না দেখেছে পেছন দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে কে আর না দেখেছে করিডরের ওপাশে থাকা সাদনান রাহান কে। ছেলে টা সাদনান কে দেখতে পেয়ে ফোন টা কেটে এগিয়ে আসে রাহান বুঝতে পারে সাদনান রেগে গিয়েছে।
তাই ছেলে টা ওদের সামনে আসার আগে ফিসফিস করে বলল

-“ঝামেলা করিস না।
এমনিতেই হাওয়া বেশ গরম আর বিয়ের খবর টা পাঁচকান হলে সমস্যা হবে।”

সাদনান রাহানের কথা শুনে বাঁকা হাসলো।রাহান বুঝতে পারে এই হাসির মানে।
নিশ্চয়ই ভয়ংকর কিছু তার বন্ধুর মাথায় চলছে।
ওদের কথার মাঝেই ছেলে টা এগিয়ে এলো মুচকি হেসে হাত টা এগিয়ে দিয়ে বলল

-“আমি ওয়াসিফ দেওয়ান এর ছেলে ওয়াজিদ দেওয়ান।
আমি দেশের বাহিরে ছিলাম। কাল রাতে ফিরেছি।”

সাদনান মুচকি হেসে নিজের হাত এগিয়ে হাত মিলায়।
সামনে দাঁড়ানো সুদর্শন পুরুষ টা আবারও বলে উঠে

-“এনিওয়ে।
Congratulations new এমপি মির্জা সাদনান শাহরিয়া।”

#চলবে…….

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৭[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

সকাল থেকে বাড়িতে এককের পর এক বড় বড় নেতা থেকে শুরু করে দলের সব ছেলেপেলেরা সবাই শুভেচ্ছা জানাতে আসছে।
সাদনান সবার সাথে কম বেশ কথা বলে বাকি দায়িত্ব দাদার আর বাবার উপর দিয়ে রাহান আর আর সিকিউরিটি নিয়ে বেড়িয়ে পড়বে মিটিং এর উদ্দেশে।আজকে দিন টা শুধু হাতে আছে।কাল আবার অনেক কাজ। শপথ বাক্য পাঠ করতে যেতে হবে।
অনেক কিছু করা বাকি এখনো এমপি হওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়।জায়গায় না আসলে জায়গার কদর বোঝা যায় না। এটা হচ্ছে ঠিক তেমন আগে আসতে পারার জন্য কষ্ট করতে হয়েছে জণগণ তাকে ভরসা করে এই স্থানে বসিয়েছে এখন সেই বিশ্বাস ভরসার ভালোবাসার দাম রাখার জন্য কষ্ট করতে হবে। শুনেছে বিপরীত দলের প্রাক্তন এমপি নাকি কাল রাতেই দেশ ছেড়েছে।না ছেড়ে উপায় আছে। জণগণ যা ক্ষেপে আছে হয়তো আগে থেকে আন্দাজ করতে পেড়ে ছিল হেরে যাবে তাই তো আগে থেকে পথ মেপে রেখে ছিল। সাদনান এসব ভাবতে ভাবতে রেডি হয়ে নিলো।
গায়ে সফেদা পাঞ্জাবি জড়িয়ে আয়নায় দেখে নিলো। চুল গুলো সুন্দর করে আঁচড়ে নিয়ে দামী ঘড়ি টা হাতে বাঁধতে বাঁধতে দেখে নিলো ক’টা বাজে।
বেলা এখন সাড়ে নয় টার বেশি বাজে।সে নিচ থেকে নাস্তা করে আসার সময় বলে এসছে প্রিয়তা যেনো রুমে আসে।কিন্তু এই মেয়ের তো কোনো খবর নেই। অবশ্য একটু আগে যা জারিজুরি দিয়েছে না আসাটাই গ্রহনযোগ্য। সাদনান বিছানা হতে নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে সেটা পাঞ্জাবির পকেটে পুরে নিলো।সাদনান এর ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে ঠিক তক্ষুনি দরজা ঠেলে কেউ ভেতরে এলো।
সাদনান বুঝতে পারে বউ তার রুমে এসছে।
প্রিয়তা সোজা এসে সাদনান এর সোফায় ফেলে রাখা ভেজা টাওয়াল টা নিয়ে ব্যালকনিতে দিয়ে এলো।ফিরে রুমে আসার সাথে সাথে সাদনান প্রিয়তা কে নিজের কাছে টেনে নিলো।আদুরে স্পর্শে করে মাথায় গলায় মুখে। প্রিয়তা তখন দেখছে সাদনান কে।
এই লোক টা আধঘন্টা আগেও কত টা রাশভারী কণ্ঠে তাকে শাঁসালো। একটু তো শুনতে পারতো তার কথা।না শুনেই তো নিজের মতো করে মন্তব্য করে গিয়েছে।
সে কি ইচ্ছে করে নিচে গিয়েছে।
দাদি তো তাকে ডেকে ছিল ওনার নাকি সকাল সকাল পায়ে ব্যাথা করছিল।কাজের লোক সবাই কাজে ছিল বলে তাকে দিয়ে পা মালিশ করাতে।

-“সাবধানে থাকবে।”

সাদনান প্রিয়তার ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে বলে উঠলো। প্রিয়তা অভিমান হলেও তা প্রকাশ করে না। মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলো

-“কখন ফিরবেন?”

-“তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবো।
তবে কখন ফিরতে পারবো সময় বলতে পারছি না।”

সাদনান প্রিয়তার পেট হতে কুর্তি সরিয়ে নিজের হাত দু’টো চেপে ধরে শক্ত করে সেখানে।
প্রিয়তার সারা শরীর শিরশির করে উঠলো।নিজে কে সামলাতে সাদনান এর পাঞ্জাবি বুকের কাছের অংশ খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়।
সাদনান সহসা হাসলো।
সেই হাসি ঠোঁটে রেখেই বলল

-“সময় থাকলে অবশ্যই সুযোগ টা কাজে লাগাতাম।
এখন বেঁচে গেলে।”

সাদনান ছেড়ে দিলো প্রিয়তা কে। প্রিয়তাও সড়ে দাঁড়ায়।
সাদনান প্রিয়তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবার নিজের দিকে তাকিয়ে আলগোছে কুঁচকানো পাঞ্জাবি টা ঠিক ঠাক করে গম্ভীর মুখ করে বেড়িয়ে গেলো।

———–

তিন্নি মির্জা বাড়ি থেকে এসেই রান্না ঘরে চলে গেলো। আর কবির ফ্রেশ হতে। সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ এই নির্বাচন এর জন্য অবশ্য কাল থেকে আবার খোলা। কালাম খাঁন অফিস চলে গিয়েছে মির্জা বাড়ি থেকে। নিজের কোম্পানি সেখানে এসব নির্বাচন নিয়ে থাকলে তো আর হবে না।এখন বাড়িতে দুই জন কাজের বুয়া আছে যারা এখন তিন্নি কে রান্নার কাজে সাহায্য করছে। তিন্নি এই বাড়িতে এসছে পরে রান্না টা নিজেই করে।অবশ্য এটা কবিরের আবদার তার সাতাইশ বছর বয়স ধরে কাজের লোকের রান্না খেতে খেতে সে অতিষ্ঠ। যদিও মাঝে মধ্যে দুই বাপ ছেলে মিলে ছুটির দিনে নিজেরা রান্না করতো তবুও কেমন একটা খালি খালি লাগতো তৃপ্তি হতো না।
তিন্নি তরকারি গুলো রান্না করে ভাত বসিয়ে কাজের লোক কে বলে শাওয়ার নিতে চলে গেলো।গা টা কেমন মেজমেজ করছে কাল সকালে এই বাড়ি থেকে শাওয়ার নিয়ে ওবাড়ি গিয়েছে আর এখন দুপুর হতে চলল।তবুও কাজ
এক্কেবারে সব কমপ্লিট করে যেতে কিন্তু এর মধ্যে কবির চার বার এসে এই একটু সময়ের মধ্যে নিচে ঘুরঘুর করে গিয়েছে। তিন্নি দেখেও না দেখার মতো থেকেছে। কবির নিজের লজ্জা সড়িয়ে তিন্নি কে ডাকতে পারে নি। কিন্তু তিন্নি খুব করে চাইছিল কবির তাকে ডাকুক অধিকার নিয়ে বলুক “তিন্নি এখুনি রুমে এসো” কিন্তু কবির তো এসব কিছু বলে নি তাই তিন্নি ইচ্ছে করে রুমে যায় নি।
তিন্নি রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে রয়।
বুঝতে পারছে না ভেতরে যাবে কি না।যদি কবির ধমক দেয়?
ইশ কেন যে তখন এতো সব অধিকার খুঁজতে গেলো ও তো জানে কবির ওর জন্যই নিচে আসছিল।

-“দুই সেকেন্ড এর মধ্যে ভেতরে এসো।”

হঠাৎ কবির রুম থেকে বলে উঠলো।
তিন্নি চট করে রুমে ঢুকে গেলো।কবির সোফায় বসে ফোনে স্ক্রল করছে।
তিন্নি ভ্রু কুঁচকে নিলো।ওনি তো ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহলে বোঝলেন কি করে আমি এসছে?

-“তুমি যেমন করে বুঝতে পারো।”

তিন্নির ভাবনার মাঝেই কবির কথা টা শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এলো তিন্নির নিকট।
অতঃপর নাক মুখ কুঁচকে বলল

-“তাড়াতাড়ি শাওয়ার নিতে যাও।”

তিন্নি নিজেও ঘামের গন্ধ পাচ্ছে তবে কবির এভাবে বলাতে একটু লজ্জা পেলো।
তাই কিছু না বলে তড়িঘড়ি করে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
কবির হাসলো।
এই মেয়ে তো কিছু না নিয়েই চলে গিয়েছে সেটা কি খেয়াল করেছে?
অবশ্য ভালোই হলো এই ফাঁকে একটু মজা করা যাবে।

কবির আয়েশ করে আবারও আগের স্থানে বসে গেলো।
নিশ্চিন্তে ফোনে স্ক্রল করতে লাগলো তার ঠিক সাত আট মিনিট এর মাথায় তিন্নির কণ্ঠ ভেসে এলো

-“আপনি একটু বাহিরে যান।”

-“কেন?”

কবির সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
তিন্নির ভেজা চুল আর গলার কিছু টা অংশ দৃশ্যমান। এতেই কবির এর হার্ট টিপটিপ শব্দ করতে লাগলো।
কয়েক সেকেন্ড এর জন্য থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।
অতঃপর আলগোছে এগিয়ে গেলো।ওয়ারড্রব এর দিকে।সেখান থেকে একটা শাড়ী আর তার সাথে সব প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে এগিয়ে এলো তিন্নির নিকট।
তিন্নি নিজের হাত টা কনুই পর্যন্ত বেড় করে কাপড় হাতেই নিয়ে ভ্রুকুঁচকে নিলো।

-“কুর্তি দিন না।
শাড়ী কেন?”

-“যা দিছি পড়ো নয়তো যেভাবে আছো সেভাবেই এসে নিজের পছন্দ মতো ড্রেস নাও।
তবে হ্যাঁ আমি রুম থেকে কোথাও যাচ্ছি না।”

তিন্নি অসহায় মুখ করে ওয়াশ রুমের দরজা টা বন্ধ করে দিলো।কবির মুচকি হেঁসে বিছানায় আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলো।
কয় দিন পর পরীক্ষা অনেক কাজ।
কবির কাজ করছে এক মনে। এদিকে তিন্নি কোনো রকম শাড়ী টা গায়ে পেঁচিয়ে বেড়িয়ে এলো। ওয়াশ রুম কি শাড়ী পড়া সম্ভব? মোটেও না এমনিতেই হঠাৎ হঠাৎ পড়ে তার মধ্যে বারো হাত একটা শাড়ী চিকনা এই শরীর টায় সামলাতে বেশ কসরত করে হয়।
তিন্নি শাড়ী টা কোনো রকম ধরে মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে কবির এক সামনে দাঁড়াল। মিনমিন করে অনুরোধের স্বরে বলল

-“প্লিজ এখন তো যান।”

কবির শুনলো তবে আমলে নিয়েছে বলে মনে হলো না। সে ল্যাপটপ কোলে হতে নামিয়ে সাইডে রেখে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো তিন্নির কাছে অতঃপর তিন্নির শরীরের রেখেই শাড়ীর আঁচল টা ঠিক করে দিলো আলগোছে।
তিন্নি তৎক্ষনাৎ চোখ বন্ধ করে নিয়ে। সারা শরীর যেনো তার অবস হয়ে গেলো। যদিও কবিরের হাতের স্পর্শ ওর শরীর পড়ে নি তবুও কেমন একটা লাগছে ওর।কবির ধীরস্থিরে শাড়ী কুঁচি গুলো নিজের হাতের মাঝে নিয়ে সে গুলো তিন্নির হাতে দিয়ে ইশারায় গুঁজে নিতে বলে।
তিন্নি আলতো হাতে কুঁচি গুলো গুঁজে নিলো।কবির এর মধ্যে গিয়ে আবার নিজের স্থানে বসে পড়ে।
তিন্নি শাড়ী টা ঠিক ঠাক করে মাথা থেকে টাওয়াল টা খুলে ব্যালকনিতে চলে এলো।

আর ঠিক তক্ষুনি রুম থেকে কবির বলল

-“শুনো।
আজ বিকেলে আমরা বেরবো।”

-“কোথায়?”

তিন্নি রুমে আসতে আসতে জিগ্যেস করে।
কবির ল্যাপটপ এর ডিসপ্লের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে উঠলো।

-“গেলই দেখতে পাবে।”

————-

-“শুনলাম মাইশার বিয়ে কথা চলছে।”

-“হ্যাঁ,ঠিক শুনেছেন।

ওয়াসিফ দেওয়ান এর কথায় জাফর মির্জা চওড়া হেঁসে জানালো।
ওয়াসিফ দেওয়ান নিজেও হাসলো জাফর মির্জা সাথে তাল মিলিয়ে বলল

-“আমার ছেলে কে তো দেখেছেন?”
কাল রাতেই ইতালি থেকে ফিরেছে।”

-“হুম। আগের চায় দেখতে কিন্তু অনেক টা বদলে গেছে।
আমি তো প্রথমে চিনতে পারছিলাম না।”

-“আমার একটা আবদার আছে।”

-“কি যে বলেন আপনি।
একবার শুধু বলে দেখুন আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে সেই আবদার পূরণ করার চেষ্টা করবো।”

-“আমি আপনার ছোট নাতনি কে আমার ছেলের জন্য চাইছি।”

জাফর মির্জা কথা টা বুঝতে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগলো। কিন্তু বুঝতে পেরে মুখের হাসি আরও কয়েক গুণ বাড়লো।

#চলবে….

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ