#আমার_তুমি
#পর্ব_২৫[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
বেশ রাত করে ভোট গণনা করার পর জানা গেলো বিপরীত দলের চেয়ে দিগুণ ভোটে জয় লাভ করেছে মির্জা সাদনান শাহরিয়া।
ড্রয়িং রুমে টিভির সামনে মির্জা বাড়ির প্রতি টা মহিলা সদস্য তখন বসে আছে।
এই খবর পাওয়া মাত্র সবার খুশির শেষ নেই।
আম্বিয়া মির্জা তো খুশিতে প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরে ফেলে।
প্রিয়তা অবাক। বিস্ময় নিয়ে সালেহা বেগমর দিকে তাকালো। তিনি মুচকি হাসে।প্রিয়তা ওনার পাশেই বসে আছে সেই সুবাদে জড়িয়ে ধরা টা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
——————-
রাত একটা নাগাদ সাদনান সহ বাড়ির প্রতি টা পুরুষ সদস্য বাড়িতে এলো।
সাথে কবির আর কালাম খাঁনও আছে।
আজ রাত টা তারা এখানেই থাকবে।বাড়ির সবাই তখন ঘুমে জুবুথুবু হয়ে আছে।
লিভিং রুমে শুধু সালেহা বেগম আর সুফিয়া বেগম বসে আছে।সবাই কে ফ্রেশ হতে বলে দুই জা মিলে কাজের লোক এর সাহায্য নিয়ে খাবার এর ব্যবস্থা করতে চলে গেলো। এতোক্ষণ
প্রিয়তা, সারা,আয়না,মাইশাও তাদের সাথে ছিল কিন্তু ওদের ঠেলেঠুলে রুম পাঠিয়ে দিয়েছে ওনারা।
কিন্তু রুমে গিয়েও কি ওরা ঘুমিয়েছে?
উঁহু, এই তো সাদনান ক্লান্ত দেহ টা টেনে নিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই দেখা মিলে বউয়ের। গুটিশুটি মেরে বসে আছে সোফায়।
প্রিয়তা পিটপিট করে সামনে তাকিয়ে সাদনান কে দেখে চট করে উঠে এলো সোফা ছেড়ে। এগিয়ে এসে
এলোমেলো হাতে পাঞ্জাবির উপর তিন টা বোতাম খুলে লোমযুক্ত উন্মুক্ত বুক অধর ছুঁয়ে দিলো।
সাদনান ঠোঁট এলিয়ে হাসে।
এটা এখন প্রিয়তা সাদনান বাড়ি ফিরলে রোজ করে।
তবে সাদনানের আজ অন্য কিছু চাই।
-“এটুকু যথেষ্ট নয়।
আরও কিছু চাই।”
কথা শেষ করে সাদনান নিজের অধর দিয়ে বউয়ের অধর চেপে ধরে।
প্রিয়তা বুঝতে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগলো। তবে বুঝতে পরে নিজেও সঙ্গ দেয় স্বামীর।বেশ অনেক টা সময় নিয়ে সাদনান বউয়ের অধর ভালোবাসার পরশ দিয়ে ছেড়ে দেয়।
প্রিয়তা মাথা নুইয়ে দূরে সরে দাঁড়াতেই সাদনান এক টানে নিজের গায়ের সাদা পাঞ্জাবি টা খুলে সোফায় ছুঁড়ে ফেলে।
এখন গায়ে শুধু একটা চিকন ফিতার সাদা গেঞ্জি হাতের মোটা পেশিবহুল দৃশ্যমান।এই শক্ত পোক্ত পেটানো শরীর টা প্রিয়তা নিকট বেশ লাগে। প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে ব্যালকনি হতে টাওয়াল নিয়ে আসে সাদনান বউয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াশ রুম চলে যায়।
প্রিয়তাও গুটিগুটি পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
সে নিচে আসতেই সালেহা বেগম সাদনানের খাবার থালা টা প্রিয়তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
-“নিচে আসার প্রয়োজন নেই।
কম দখল যায় নি সারা দিন। ”
প্রিয়তা ভীষণ খুশি হলো তবে তা প্রকাশ করে না। ওর ইচ্ছে করছিল খাবার টা রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু এটা বললে কেমন দেখায় তাই বলে নি কিছু। কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার সালেহা বেগম এটা নিজ থেকে বলল।
প্রিয়তা খাবার টেবিলে বসা সবার দিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে উপরে রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
তিন্নি সে দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যি প্রিয়তার দেখতে অসম্ভব সুন্দর। গায়ের রঙ টা বেশি সাদা নয়। তবে যে কেউ এক দেখে পছন্দ করবে।
এই সতেরো বছর বয়সে যেই মেয়ে এতো টা সুন্দর সেই মেয়ে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী হলে কেমন লাগবে?
তিন্নি কবিরের দিকে তাকায়
কবির এক মনে খাবার খেয়ে যাচ্ছে কবির এর পাশেই তিন্নি দাঁড়িয়ে আছে।
কবির ওকে সব বলেছে। তিন্নির কষ্ট হয় নি বরং খুশি হয়েছে যে কবির তাকে সব সত্যি বলেছে। ঠকাতে চায় নি।
একটা সম্পর্কে বিশ্বাস থাকা জরুরি। আর কবির সেটাই রক্ষার্থেই তার সব অতীত বলে দিয়েছে যাতে করে পরবর্তীতে তিন্নি এসব জানলে ওর কক্ষণো খারাপ না লাগে মনে যেনো না হয় কবির তাকে ঠকিয়েছ। যে অন্য কাউ কে মনে রেখে ওকে ভালোবাসার অভিনয় করেছে মনের বিরুদ্ধে সংসার করেছে।যদিও এখন কবির এর মনে তেমন কিছু নেই
আর এমনিতেও ওই সব এর কোনো ভিত্তি নেই।
তবুও মন টা তো একবার না একবার সেই নিষিদ্ধ জিনিস টা বড্ড নিজের কেরে পাওয়ার জন্য উতলা ছিল।
এটা কবির কে এখন কেমন বুকের মাঝে যন্ত্রণা দেয়।
খাবার শেষ তিন্নি কবির কে নিয়ে সারা রুমে চলে আসে। সারা মাইশার সাথে থাকবে। গেস্ট রুমে কালাম খাঁন আর রাহান থাকবে।
তিন্নি রুমে এসেই বিছানা গুছিয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে থাকে।
কবির ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াল আয়নায় নিজে কে একবার দেখে নিলো।
তিন্নি সে দিকে তাকিয়ে রইলো।
কবির রাহাত এর একটা গাঢ় সবুজ রঙের গেঞ্জি পড়ে আছে।
আর পড়েন সেই সকালে বাড়ি থেকে পড়া আসা কালো প্যান্ট।
কবির চুল গুলো হাত দিয়ে আঁচড়ে নিতে নিতে জিজ্ঞেস করে
-“ঘুমাও নি কেন?”
-“আপনি বাহিরে ছিলেন।”
ঘুম আসছিল না।”
-“এখন আসবে? ”
-“একদম।
কোনো ভুল নেই।”
তিন্নি আনমনে বলে উঠে।
কবির আঁড়চোখে সে দিকে তাকিয়ে হাসলো।
বড্ড ভালোবাসে মেয়ে টা তাকে।কোনো সন্দেহ নেই এতে।
কবির নিজেও বাসে।
কিন্তু কত টা?
যত টা হলে প্রথম অনুভূতি ভুলে থাকা সম্ভব। পুরনো সব ভুলে নতুন করে ভালোবাসতে মন চায় সুন্দর একটা জীবন চায় ভালোবেসে সংসার করা যায়।
আচ্ছা সংসার টা কি হচ্ছে তাদের মাঝে?
নাকি শুধুই তার প্রথম অনুভূতি ভুলে থাকতে?
আচ্ছা এটা নিয়ে তিন্নির কি খারাপ লাগে?
অবশ্যই লাগে বিয়ের তিন মাসেও যদি স্বামী ভালোবাসা না পায় তবে শুধু খারাপ কেন মেয়ে নিশ্চয়ই কষ্ট পাচ্ছে।
আর দিবে না আর দুই মাসেই তো।তার পর অনেক ভালোবাসা দিবে গুছিয়ে সংসার করবে।
কবির এক দৃষ্টিতে তিন্নির দিকে তাকিয়ে আছে।
সে দিন সকালে যখন ঘুম থেকে উঠার পর কবির এর রুমে নিজেকে আবিষ্কার করে তখন ভীষণ অবাক হয়েছে তিন্নি সাথে ভেবেছে ঘুমের ঘোরে হয়তো এসে পড়েছে। কিন্তু কবির যখন বলেছিল সে নিজেই এনেছে আর আজ থেকে এই রুমে থাকবে। তখন তিন্নি আরও অবাক হয়েছে।
কারণ এর আগে কবির প্রিয়তা কে নিয়ে তার মনে ভেতর এক সময় তৈরি হওয়া অনুভূতি গুলো বলে ছিল।
তিন্নির ভাবনার মাঝেই কবির এসে তিন্নি কে ঝট করে কোলে তুলে নেয়।
তিন্নি আকস্মিক ঘটনায় চমকে উঠে।
তড়িঘড়ি করে কবির এর বুকের কাছে খামচে ধরে।
কবির ভ্রু কুঁচকে নেয়।
তিন্নির হাতের নখ ছোট কিন্তু যা আছে এতেই বেশ বিঁধে যায়।
কবির কুঁচকানো ভ্রু জোড়া সোজা করে চোখে দুষ্ট হেসে বলে উঠে
-“এখনি এই অবস্থা।
সম্পূর্ণ সব হলে আমাকে সামলাবে কি করে? ”
তিন্নি লজ্জায় আরও একদফা গুটিয়ে গেলো।
নিজের লজ্জা রাঙা মুখ লোকায় কবির এর বুকে।
কবির ততক্ষণে সারার রুমের সাথে লাগানো ছোট ব্যালকনি টায় এসে পড়ে।
মেঝেতে থাকা কার্পেট এর উপর নিজে বসে তিন্নি কেও নিজের কোলে বসায়।
তিন্নির জামার উপর দিয়ে নিজের দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে।
তিন্নি হাল্কা কেঁপে উঠল।
কবির তিন্নির কাঁধে নিজের থুতনি ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলল
-“রাত শেষ হয়ে যাবে।
আর এই শেষ রাতে আমরা চন্দ্র বিলাস করবো।”
কথা শেষ কবির তিন্নির কানে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।
অতঃপর দু’জনেই দূর আকাশে জ্বলজ্বল করতে থাকা চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে থাকে।
————
মাইশা ফোনে কথা বলছে আয়ান এর সঙ্গে।
সারা কেও পরীক্ষার পর ফোন দেওয়া হয়েছে। সে ফোনটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মূলত রাহান এর আইডিতে একটু আগেই নিজের আগের প্রোফাইল টা চেঞ্জ করেছে রাহান। সেখানে অনেক গুলো রিয়েক্ট আর শখানেক কমেন্ট। এর মধ্যে বেশির ভাগ মেয়ে।
সারার এসব দেখে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।ওনার ছবিতে কেন এতো মেয়ে কমেন্ট করবে?
সারাও একটা আইডি খুলেছে নিজের নাম না অন্য নাম দিয়ে। আর সেটা দিয়ে রাহান কে ফলো দিয়ে রেখেছে রাহান ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করে নি।
সারার এসব ভাবতে গিয়ে কখন যে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়েছে বুঝতেই পারে নি।
চোখের পানি টা মুছেই ফোনের ডাটা অফ করার জন্য ডাটা অপশন অফ করতে গিয়ে টুং করে একটা মেসেজ এলো।
সারা ডাটা অফ না করে মেসেজ টা চেক করে ওর চোখ কপালে।
রাহানের আইডি থেকে মেসেজ এসছে।
———–
খাবার শেষ প্রিয়তা এঁটো থালা টা সেন্টার টেবিলে রেখে দেয়।
এতো রাতে আর নিচে যাবে না। অতঃপর হাত ধুয়ে আসে।
সাদনান সোফায় বসে তখন ল্যাপটপ কোলে কিছু করছে।
প্রিয়তা ওড়না পাশে রাখে বিছানা গুছাতে লাগলো।
আর প্রিয়তার লম্বা মোটা চুলের বিনুনি টা তখন এদিক সে দিক কাজের সাথে সাথে দোল খেয়ে যাচ্ছে।
সাদনান কাজ ফেলে সে দিকে তাকিয়ে থাকে।
-“আসুন শুয়ে পড়ুন।
বাকি সব কাজ কাল করতে পারবেন।”
সাদনান এর ঘোর কাটে।
ল্যাপটপ সোফায় রেখে আলগোছে ওঠে আসে।
পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বউ কে। প্রিয়তা অনাকাঙ্খিত স্পর্শে কেঁপে উঠল।
তবে নিজে কে সামলে নিলো।
মিনমিন করে বলল
-“ক্লান্ত আপনি শুয়ে পড়ুন।”
সাদনান শুনে না। প্রিয়তার উন্মুক্ত পেটে নিজের হাত চেপে বুকের সাথে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
কাঁধে ঠোঁট ছুঁয়ে ফিসফিস করে বলল
-“আমার সব ক্লান্তি তোমার এই মুখ দেখলে দূর হয়ে যায়।
তোমার এই ছোট্ট ছোট্ট হাতের স্পর্শ আমাকে হাজার অশান্তির মাঝে শান্তি দেয়।আমার মনে হাজার উতালপাতাল শান্ত করে দিতে তোমার এই মিষ্টি কণ্ঠ যথেষ্ট আমার জান।”
#চলবে……