আমার তুমি পর্ব-২৪

0
442

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৪[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নত_সুলতানা

তিন্নি শাড়ী টা পড়ে বসে আছে বিছানায়। আর একটু পর পর নিজের শরীরের দিকে তাকাচ্ছে। আর লজ্জা পাচ্ছে।
শাড়ী পড়েছে ঠিক তবে শরীরে প্রতি টা ভাঁজ স্পষ্ট। সাথে ব্লাউজ এর হাতা গুলো স্লিভলেস।
এখন এটা পড়ে কবির এর সামনে কি করে যাবে তিন্নি বুঝতে পারছে না।
তিন্নির ভাবনার মাঝেই কবির হাতে ঘড়ির ফিতা বাঁধতে বাঁধতে রুমে প্রবেশ করে বলে উঠে

-“আর কতক্ষণ হ,,,,,

কবির আর কিছু বলতে পারে না।
তিন্নির দিকে তাকিয়ে কবিরের চোখ আটকে যায়।তিন্নি বেশি সাজে নি খোলা চুল চোখে হাল্কা কাজল আর ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি রঙের লিপস্টিক। কানে এক জোড়া ইয়ার রিং গলায় ছোট একটা লকেট যে গুলো কবির বিয়ের দিন দুপুরে তিন্নি নিজে হাতে পড়িয়ে দিয়ে ছিল।
এই রূপ কবির কে জ্বালিয়ে দিতে সক্ষম এটা কি সামনে বসা রমণী জানে?
উঁহু জানবে কি করে কখনো বলা হয় নি যে।
আচ্ছা মেয়ে টা এতো টা মায়াবী আগে তো কখনো চোখে পরে নি।নাকি ভালোবাসার মানুষ টা যেমনই হোক ভালোবাসার মানুষটার কাছে সবচাইতে বেশি সুন্দর?
এদিকে তিন্নি লজ্জায় গুটিয়ে আছে।
সে চুপ করে মাথায় নুইয়ে দৃষ্টি মেঝেতে ফেলে রেখেছে।
কবির হাসলো।
একটু এগিয়ে গিয়ে তিন্নির ডান হাত টা ধরতেই তিন্নি কেঁপে উঠল।
মাথা তুলে কবিরের দিকে একবার তাকিয়ে আবারও মাথা নুইয়ে নিলো।

-“মিসেস খাঁন আমাকে মারার প্ল্যান করেছে বুঝি?”

তিন্নি কবির এর কথার মানে বুঝতে পারে ছোট নয় ও।
তাই তো আরও কিছু টা গুটিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু কবির কি গুটিয়ে থাকতে দেয়।
সে তো টেনে দাঁড় করালো তিন্নি কে। অতঃপর ড্রেসিং আয়নার সামনে দাঁড়াল।
তিন্নির চাইতে কবির একটু লম্বা হওয়ার দরুনে ঘাড় নুইয়ে কবির নিজের থুতনি ঠেকিয়ে তিন্নির কাঁধে। দুই হাত রাখে তিন্নির পেটের উপর।
তিন্নি তখনো চোখ বন্ধ সাথে কাঁপা কাঁপি তো আছেই।
কবির তিন্নির অবস্থা বুঝতে পারে।
তাই তিন্নি কে স্বাভাবিক করতে ঠোঁট টিপে হেসে বলল

-“এখুনি কিছু করছি না।
তাই এতো কাঁপা কাঁপির কিছু নেই।”

কথা শেষ কবির তিন্নি কে ছেড়ে দিয়ে হো হা করে হেঁসে দিলো।
অতঃপর ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে এক জোড়া চুড়ি তিন্নির হাতে পড়িয়ে দেয়।
তিন্নি একটু স্বাভাবিক হয়।চুড়ি গুলো কবির দিয়েছে কিন্তু তিন্নি পড়ে না ওগুলো। সব সময় নরমাল চুড়ি পড়ে থাকে কারণ কবির যে গুলো দিয়েছে সে গুলো গোল্ড।
আর তিন্নি খুব সাধারণ ভাবে চলাফেরা করতে পছন্দ করে। আর তাই এগুলো ওর কাছে বিলাসিতা লাগে।
কবির চুড়ি পড়িয়ে দিয়ে আলমারি খোলে সেখান থেকে একটা চাদর বেড় করে তিন্নির গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলল

-“আমি চাই না এই রূপ আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ দেখে।”

তিন্নি অবাক হল তবে মনে মনে বেশ খুশি হলো।
কারণ ওর ভীষণ অস্বস্তি লাগছিল।

-“চলো যাওয়া যাক।”

তিন্নি সম্মতি দেয়।
কবির তিন্নির হাত ধরে বেড়িয়ে আসে বাড়ি থেকে।
কবির ড্রাইভার নিয়েছে।
ওরা পেছনে বসেছে। তিন্নি জানে না ওরা কোথায় যাচ্ছে একবার অবশ্য কবির কে জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু কবির বলে নি শুধু জানিয়েছে গেলেই দেখতে পাবে।
গাড়ি চলছে নিজ গন্তব্যে তবে তিন্নির রাস্তা টা ভীষণ চেনা লাগছে।
লাগছে না এটাই তো সেই রাস্তা যেটা দিয়ে এতিম খানায় যায় আগে তিন্নি যেখানে থাকতো সেখানে।
তবে কি ওরা সেখানে যাচ্ছে? না যাচ্ছে না গাড়ী টা এসে এতিম খানার গেইট এ থামে দারোয়ান গেইট খুলে দেয় গাড়ী ভেতরে প্রবেশ করে।
তিন্নি কবির গাড়ী থেকে নামে।
আর অমনি ভেতর হতে অনেক গুলো বাচ্চা সহ পাঁচ জন মহিলা বেড়িয়ে আসে সেখান থেকে।
সবাই এসে এক সাথে তিন্নি কে জন্ম দিন এর শুভেচ্ছা জানায়। তিন্নি স্তব্ধ কবির ড্রাইভার কে কিছু ইশারা করতেই ড্রাইভার গাড়ি থেকে বেড়িয়ে পেছনে গিয়ে গাড়ির ডিঁকি খুলে সেখান থেকে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ এনে তিন্নি আর মহিলা গুলোর হাতে দেয়।
কবির তিন্নির দুই বাহুতে হাত রেখে মুচকি হেঁসে বলে উঠে

-“happy birthday..

তিন্নির চোখে পানি চিকচিক করছে।
কবির বুঝতে পারে মেয়ে টা অতি খুশিতে চোখে পানি চলে এসছে।

-“এগুলো সবাই কে দাও।”

তিন্নির হাতের শপিং ব্যাগ গুলোর দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বলে।

তিন্নি সব গুলো বাচ্চা কে দিলো এগুলোর ভেতর সবার জন্য এক সেট করে কাপড় আছে।
সবাই ভীষণ খুশি বাচ্চা গুলোর খুশি থেকে তিন্নি কবির কে ধন্যবাদ দিলো।
কবির মুচকি হেসে বলল

-“আর আমার পক্ষ হতে আল্লাহ কে ধন্যবাদ এতো সুন্দর মনের একজন মানুষ কে আমার জীবনে দেওয়ার জন্য।
তাও আবার আমার জীবন সঙ্গী করে অর্ধাঙ্গিনী রূপে।”

তিন্নি উত্তর করে না।
সে সবাই কে দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
মুগ্ধ হয়ে দেখছে সব বাচ্চা গুলো কে। সে-ও এক সময় এরকম ছিল এদের মতো এতিম। তিন্নি কে না-কি এখানের একজন মহিলা রাস্তায় পেয়ে ছিল কেউ ফেলে দিয়ে ছিল হয়তো তিন্নির বয়স তখন কত হয়তো দুই বা তিন দিন ছিল।
তবে ওনারা তিন্নি কে যে দিন পেয়েছে সে দিন থেকে এই দিনে তিন্নির জন্ম দিন পালন করে সাথে সার্টিফিকেট সব জায়গা এই তারিখ ব্যবহার করে।
রাত একটা নাগাদ ওরা খাবার দাবার শেষ বাড়ি ফিরে আসে।
এর মধ্যে তিন্নি গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়ে কবির তাই তিন্নি কে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে রাখে।
বাড়িতে এসে গাড়ি থেকে নেমে কবির তিন্নি কে নিজে কোলে করে এনে নিজের রুমে শুয়ে দেয়।
আর নিজেও ফ্রেশ হয়ে এসে তিন্নি কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

—————-

সকাল থেকে মির্জা বাড়ি শুনশান নীরবতা। কেমন থমথমে পুরো পরিবেশ আজ নির্বাচন। কবির তিন্নি আজ মির্জা বাড়ি এসছে।
মূলত কবির আর কালাম খাঁন ভোট কেন্দ্রে চলে যাবে তাই কবির তিন্নি কে এখানে রেখে যাবে।
সাদনান সেই সকালে বেড়িয়ে গেছে বাড়িতে কোনো পুরুষ লোক নেই।
কবিরও তিন্নি কে দিয়ে তড়িঘড়ি করে চলে গেলো।
কেন্দ্রে কিছু ঝামেলা হয়েছে বিপক্ষ দল না-কি ভুয়া ভোট দিতে এসে ধরা পড়ে গিয়েছে।
এটা নিয়ে ছেলে রা ক্ষেপেছে গিয়েছে।
এখন পরিস্থিতি স্থিতিশীল আর জয় সাদনান এর হবে বলে সবার ধারণা।
এখন বাকিটা ভোট গণনার পর বোঝা যাবে।

মির্জা বাড়ির সারা, প্রিয়তা,মাইশা বাদে সবাই গিয়েছে ভোট দিতে।
সবাই বারো টার দিকে দিয়ে চলে এসছে এখন বিকেল হয়ে গিয়েছে।
সালেহা বেগম এর শরীর খারাপ আম্বিয়া মির্জা চিন্তায় চিন্তায় সারা দিন কিছু খায় নি তাই ওনাকে এখন সুফিয়া বেগম জোর করে খাবার খাইয়ে ঘুমের ঔষধ দিয়েছে।
প্রিয়তা সারা দিন কেমন মন মরা হয়ে থেকেছে। তাই সারা, মাইশা, তিন্নি, আয়না ওর সাথে সাথে সারা দিন রয়েছে।
মাইশা ফোন হাতে এই মাত্র রুম হতে বেড়িয়ে ছাঁদে চলে আসে।
আয়ান কে মেসেজ দিয়েছে।
আয়ান বলে বলেছে মেসেজ করার মতো পরিস্থিতি নেই তবে ফোনে সর্ট কার্ট কথা বলতে পারবে।
মাইশা ছাঁদে আসার সাথে সাথে আয়ান এর ফোন আসে।
রিসিভ করতেই ওপাশ হতে আয়ান জিজ্ঞেস করে

-“প্রিয়তা খাবার খেয়েছে?”

-“নাহ সকালে মা অনেক জোর করে একটু খাইয়েছে আর খায় নি।”

-“কিছু বলছে?”

-“হ্যাঁ আপনি কি করে বোঝলেন?”

-“আমার বোন আমার জানা আছে।
তাড়াতাড়ি বলো বায়না কি ধরেছে?”

-“ভাইয়ার সাথে কথা বলতে চায়।
কিন্তু এটা কি সম্ভব?”

-“আমি দেখছি।”

আয়ান ফোন কাটে। মাইশা ফোন হাতে নিচে চলে আসে।
নিচে আসতেই হাতের ফোন টা আবারও সশব্দে বেজে উঠে।
এটাও আয়ান এর ফোন।
মাইশা ভাবে হয়তো কিছু বলবে তাই রুমে না এসে কল টা রিসিভ করে।
কিছু বলবে তার আগেই সাদনান এর গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো

-“ফোন টা ওর কাছে দে।”

মাইশা তৎক্ষনাৎ দৌড়ে রুমে এসে ফোন প্রিয়তার হাতে দেয়।
প্রিয়তা প্রশ্নবোধক চাহনি দেয় মাইশার দিকে মাইশা ইশারায় ব্যালকনিতে যেতে বলে।
প্রিয়তা কি ভেবে কিছু না বলে উঠে চলে যায়।
ফোন কানে নিতেই সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে

-“খাবার কেন খাও নি?”

-“আপনার ফোন কেন বন্ধ?
কখন বাড়ি আসবেন?”

প্রিয়তা সাদনান এর করা প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো অস্থির হয়ে নিজে জিজ্ঞেস করে।
সাদনান হয়তো হাসলো।
অতঃপর মৃদু কণ্ঠে জানায়

-“আসবো অপেক্ষা করো খুব শীগগির সুখবর নিয়ে।
জানো তো অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়?”

-“হুম।
অপেক্ষা করবো খুব তাড়াতাড়ি চলে আসুন।”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে