আমার তুমি পর্ব-২০+২১

0
103

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২০
#জান্নাত_সুলতানা

তিন্নি আর কবির কে আজ যেতে দেয় নি। কবির ভার্সিটি থেকে যাওয়ার সময় তিন্নি কে নিয়ে যাওয়ার জন্য এলে কবির কেও আর যেতে দেয় নি সবাই।সবার এতো বার করে বলায় কবির আর বেশি জোর করে নি।থেকে গেলো।রাতে খাবার খেলো এক সাথে সবাই। সাদনান আর প্রিয়তা বাদে।
তিন্নি কাল রাতের পর থেকে লজ্জায় কবিরের দিকে ভালো করে তাকাচ্ছে না।কি কান্ড টাই না কাল করলো।তিন্নির তো সেই ঘটনা এখনো চোখের সামনে ভাসছে। আর হঠাৎ হঠাৎ সব মনে পড়লে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
বিছানায় পা গুটিয়ে বসে তিন্নি। কবির ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে তিন্নি কে এভাবে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো।
টাওয়াল নিয়ে সোফায় রেখে এগিয়ে এলো বউয়ের কাছে।
বসলো।তিন্নি কবিরের অস্তিত্ব টের পেয়ে নড়েচড়ে বসলো। কবির এক হাতে তিন্নি কে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জিগ্যেস করলো,

-“ঘুমলে না যে?”

-“দেখেছেন আকাশে কত তাঁরা?”

-“হ্যাঁ।”

-“চাঁদ নেই।
অন্ধকার। চলুন না ব্যালকনিতে যাই।”

-“তোমার এখানে এসে কেনো সব বায়না শুরু হলো তিন্নি?
আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমরা রাতের আকাশ দেখব।”

তিন্নি আর কিছু বলল না।
পেট টা আজানা কোনো কারণে ব্যথা করছে।তিন্নি কে চুপচাপ দেখে কবির চিন্তিত কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“কি হয়েছে?
শরীর খারাপ লাগছে?”

-“না।
এমনি।অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়ুন।”

-“হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।”

কবির তিন্নির গলায় মুখ গুঁজে বলল।
তিন্নি শিউরে ওঠে।
খামচে ধরে কবিরের হাত।
কবির তিন্নির চুল সরিয়ে গলায় ঘাড়ে আস্তে আস্তে অধর স্পর্শ দিয়ে মাতাল করতে থাকে বউ কে।
তিন্নি হাত ছেড়ে আচমকাই কবির কে জড়িয়ে ধরে।
কবির মুচকি হেঁসে বউ কে বিছানায় শুইয়ে দিলো।

—–

বাড়িতে হুলুস্থুল আয়োজন চলছে। সেই সকাল থেকে।সবার মুখে খুশিখুশি ভাব।
শুধু রিধি চিন্তিত। কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছে না।
বারকয়েক সারা কে জিগ্যেস করেছে।কিন্তু সারা টাও আজ এমন ভাব করছে মনে হচ্ছে কিচ্ছু জানে না।কিন্তু রিধি জানে এই বাঁদর মেয়ে সব জানে।নিশ্চয়ই কারোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেইজন্য কিছু বলছে না।বারো টা বাজতে না বাজতে সবাই রিধির গোসল করা নিয়ে উঠেপড়ে লাগলো।রিধি যেনো অবাকের অষ্টম পর্যায়ে। কি সব হচ্ছে কিচ্ছু মাথায় ঢুলক না।সবাই কোনো রিধির গোসল নিয়ে পড়লো রিধির বোধগম্য হচ্ছে না।
গোসল শেষ বেরিয়ে আসার পরপরই রিধির মা খাবার হাতে এলো।
মেয়ে কে খাইয়ে দিয়ে শাড়ী পড়িয়ে দিলো।
রিধি কিছু আন্দাজ করতে পারে।
শাড়ী কুঁচি ঠিক করতে ব্যস্ত মায়ের মুখপানে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠ জিগ্যেস করলো,

-“আমাকে কেনো কেউ কিছু বললে না মা?”

-“তোর নানু তো কাল বললই সব!”

-“তুমি কি করে জানলে?
নানিজান কি বলেছে?”

-“আব,আমি ছিলাম সবাই ছিল। তুই দেখিস নি।”

রিধি কথা বাড়ায় না।লিভিং রুমে শোরগোল শুনে রিধির মা হন্তদন্ত পায়ে ছুটে গেলো।তবে যাওয়ার আগে রিধি কে কড়া নির্দেশ দিয়েছে রুম থেকে এক পা না নড়তে।

—-

-“জ্বি মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে।”

পরিচিত কণ্ঠ তড়িৎ একবার ঘাড় তুলে সামনে তাকাল রিধি।অনাকাঙ্খিত মানুষ কে নিজের সামনে উপস্থিতি দেখে একটু না বেশ অনেক টাই অবাক বিস্ময় নিয়ে মাথা ফের নিচু করতেই কানে এলো নানা জাফর মির্জা বলছে,

-“তবে কি বলেন!
ছেলেমেয়ে কথা বলে নিক?”

-“একদম কোনো ভুল নেই।”

ওয়াসিফ দেওয়ান সায় দিয়ে বলল।
সারা কে ডেকে ওয়াজিদ আর রিধি কে ছাঁদে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে জাফর মির্জা।
সারা আগে আগে ওয়াজিদ কে নিয়ে উপর সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।রাহান এসে বোন কে জড়িয়ে ধরে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,

-“তোমার কি খারাপ লাগছে?”

রিধি ভাইয়ের পিঞ্চ মেরে কথায় চোখ কটমট করে তাকাল রাহানের দিকে। রিধি ভালো করেই বুঝতে পারছে। রাহান যে রিধির হঠাৎ করে এমন ঘটনার সম্মুখীন হওয়া নিয়ে এই প্রশ্ন টা জিগ্যেস করছে।

-“ইসটুপিড।
কোথায় যাচ্ছিস তুই?এখানে দাঁড়া।”

সারা সত্যি দাঁড়িয়ে গেলো।রাহান এগিয়ে গিয়ে সারা কে টেনে ধরে বোন কে ছাঁদের দরজার দিকে ঠেলে দিলো।
রিধি হুমড়ি খেয়ে গিয়ে শাড়ী পা বেঁধে পড়তে পড়তে নিজে কে সামলে সোজা হওয়ায়র আগেই শক্ত এক জোড়া হাত রিধির কোমড় টেনে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
রিধি আকস্মিক ঘটনায় ভড়কাল।শরীরে কোনো পুরুষালী ছোঁয়া অনুভব করতেই ছিটকে দূরে সরে যেতে চাইল।কিন্তু এটা সম্ভব হলো না।ওয়াজিদ ঠোঁটের কোণায় অদ্ভুত হাসি ঝুলিয়ে বলল,

-“শুধু শুধু নিজের এনার্জি অপচয় করছো।
কোনো লাভ হবে না।”

রিধি ওয়াজিদ এর কথায় ড্যাবড্যাব করে চোখ তুলে কালো শার্ট গায়ে শার্ট এর উপর কালো স্যুট খুঁচা খুঁচা চাপদাড়ির ভর্তি মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।

-“এই চোখের নিচে কালশিটে দাগ কি আমাকে ছেড়ে আসার বিরহে, নির্ঘুম রাত কি সেটার সাক্ষী!”

হঠাৎ ওয়াজিদ এর এরূপ বক্তব্যে রিধি ভড়কাল।হকচকিয়ে গেলো।
চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো।কি বলে এই পুরুষ? হার্ট সার্জনের সাথে সাথে মনোবিজ্ঞানী হয়ে গেলো না-কি?
নয়তো তাকে ছেড়ে আসার অনলে পুড়ছি সে তা কি করে জানল এই পুরুষ?

-“মাই কুইন।
এতো কিসের ভাবা ভাবি?ইউ নো না আমি সব জানি। ইভেন তোমার মাথায় মনে এখন কি ঘুরছে সেটাও জানি।”

রিধির ভাবনার মাঝেই ওয়াজিদ নিজের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে রিধির এলোমেলো চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলে।
রিধির সত্যি সত্যি এবার বিস্ময় খেলো।
নিজে কে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল,

-“ছাড়ুন।”

ওয়াজিদ হালকা করে রিধি কে নিজের সাথে চেপে ধরে হঠাৎ।রিধি কেঁপে কেঁপে উঠল।
ওয়াজিদ পরপরই ছেড়ে দিলো।নিজের গায়ের উপর কালো ব্লেজার ঠিক করে নিয়ে রিধির দিকে পিঠ করে ঘুরে দাঁড়ায় চুল হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলল,

-“বি রেডি।
খুব শীগ্রই তোমার মনের ঘরে আমার রাজত্ব চলবে।”

কথা শেষ চোখ টিপে ছাঁদ হতে নেমে গেলো ওয়াজিদ। রিধি ড্যাবড্যাব করে ওয়াজিদ এর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকে।রাজত্ব চলবে কি?অলরেডি চলছে।সেটা কি বোঝে না এই পুরুষ?
রাহান মাত্রই সারা’র হাত টা ধরে ছিল। আর তক্ষুনি সেখানে উপস্থিত হয় ওয়াজিদ।
দু’জনেই চমকে ওঠে। সারা হয়তো ভেবেছিল ওয়াজিদ কিছু জিগ্যেস করবে।হয়তো দু-এক টা ধমকও দিবে।
কিন্তু না সারা কে অবাক করে দিয়ে ওয়াজিদ মুচকি হেঁসে বলল,

-“চালিয়ে যাও।
সম্পর্কে দু’জনের সম্মতি আর ভালোবাসা থাকা টা জরুরি।”

——

বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। হাতে মাত্র দু’দিন সময়। গোছগাছ শুরু করে দিয়েছে সবাই। বাড়ি ঘর ঝাড়পোঁছ থেকে শুরু করে শপিং।
আজও বাড়িতে দোকানের লোকজন দিয়ে গহনা থেকে শুরু করে শাড়ী আনিয়েছিলেন আম্বিয়া মির্জা।
সাদনান বাড়িতে নেই।প্রিয়তা কি নিবে বুঝতে পারে না। সবাই মোটামুটি নেওয়া শেষ। প্রিয়তা তখন একটা ছাই রঙের শাড়ী হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
আম্বিয়া মির্জা একটা জাম কালার শাড়ী হাতে নিয়ে প্রিয়তা কে কাছে ডাকলো।প্রিয়তা একটু চিন্তিত হলো।হঠাৎ ডাকার কারণ বুঝতে পারে না।চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। সবাই প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে।আয়না ইশারা করে বোন কে আম্বিয়া মির্জার কাছে যাওয়ার জন্য।
প্রিয়তা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে আম্বিয়া মির্জার সামনে দাঁড়াতেই তিনি নিজের হাতে থাকা শাড়ী টা প্রিয়তার গায়ে মেলে ধরে বলে উঠলো,

-“বেশ মানিয়েছে।
কি বলো বড় বউ!এটা বিয়েতে পড়বে তুমি।”

সালেহা বেগম ক উদ্দেশ্য করে কথা টা বলেই শাড়ী টা প্রিয়তার হাতে দিয়ে কিছু টা হুকুমজারি করলেন যেনো।
প্রিয়তা বিনাবাক্যে মাথা দুলাল।
মানুষ টা ভালো শুধু একটু কড়া আর গম্ভীর।

—-

-“আপনি কেনো এতোগুলা ড্রেস এনেছেন?
দাদিজান আজ নিজে পছন্দ করে আমায় সব দিয়েছে।”

সাদনান রুমে এসে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ বিছানায় রাখতেই প্রিয়তা সোফায় থেকে ওঠে এগিয়ে এসে সেগুলোর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে সাদনানের পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে খুলতে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে উপরোক্ত কথা গুলো বলল।
সাদনান অবাক হয়।দাদি এমন করেছে বিশ্বাস করতে একটু সময় লাগে। তবে পরক্ষণেই মাথায় আসে দাদি তার ভীষণ ভালো শুধু আগেকার দিনের মানুষ তাই এখনকার মানুষের কাজকর্ম পছন্দ করে না। খুঁতখুঁতে টাইপের মানুষ। নিয়মকানুন বেশ মেনে চলে।

-“দাদি জান এর দেওয়া গুলো অবশ্যই অনুষ্ঠানে পড়বে।
আর আমার গুলো শুধু আমার সামনে।বেডরুমে।”

থমথমে কণ্ঠে কথা গুলো বলেই সাদনান ওয়াশ রুমে চলে গেলো।এদিকে প্রিয়তা ভাবুক হলো।
সাদনানের কথার আগাগোড়া কিছুই বোধগম্য হয় না।
তটস্থ ভঙ্গিতে এগিয়ে গিয়ে শপিং ব্যাগ হাতরে কাপড় বেড় করতেই চক্ষুচড়ক গাছ।এক ঝটকায় সেটা ছুঁড়ে ফেলে বিছানার একপাশে। পরপর সব গুলো চেক করে। কিন্তু সব গুলো একইরকম দেখে প্রিয়তার কান গরম হয়ে এলো।মুখে লজ্জায় রক্তিম হয়।দুই হাত কচলাতে কচলাতে বিড়বিড় করে বলে উঠে,

-“অসভ্য পুরুষ।
কি অশ্লীল চয়েস!”

#চলবে….

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২১
#জান্নাত_সুলতানা

[রোমান্টিক পর্ব,পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

-“হাসবেন্ড আমি তোমার।
তোমাকে নিয়ে অশ্লীল চিন্তা আমার জন্য হালাল।”

হঠাৎ সাদনানের কণ্ঠে প্রিয়তা চোখ বড়ো বড়ো করে পেছনে তাকিয়ে সাদনান কে দেখে অপ্রস্তুত হলো।নড়েচড়ে বসলো।সাদনান একটা হালকা আকাশী রঙের টাওয়াল কোমড় পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল। কাবাড থেকে সাদনানের ড্রেস এনে সাদনানের হাতে দিয়ে মিনমিন করে বলল,

-“ওগুলো বেশি পাতলা।
আপনি জানেন আমি এমন শাড়ী পড়ি না।”

-“তাতে কি!আগে পড়তে না এখন পড়বে।তাছাড়া আমি তো বাইরে পড়ার জন্য আনিনি।শুধু আমার সামনে আমি যতক্ষণ থাকব।তখন পড়বে।”

সাদনান কথা বলতে বলতে নিজের কাপড় পড়ে নিলো।প্রিয়তা ততক্ষণে সব শপিং ব্যাগ কাবাডে তুলে রাখতে নিয়েছে।সব গুলো রাখা শেষ লাস্ট একটা ব্যাগ রাখার জন্য উদ্যত হতেই সাদনান এগিয়ে গিয়ে প্রিয়তার হাত টেনে ধরলো।প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে সাদনানের দিকে তাকালো।
সাদনান ব্যাগ টা নিজের হাতে নিয়ে প্রিয়তা কে টেনে বিছানায় বসিয়ে একটা সাদা পাতলা শাড়ী প্রিয়তার হাতে দিলো।প্রিয়তা কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই সাদনান আদেশের স্বরে বলে উঠলো,

-“এটা পড়ে এসো। ফাস্ট।”

প্রিয়তা লজ্জা পাচ্ছে। তবে লজ্জা ছাপিয়ে বলল,

-“একটু পর বাহিরে যেতে হবে!”

-“যেতে হবে না।
আমি আছি। তুমি পড়ে এসো।”

সাদনান প্রিয়তা কে ওয়াশ রুমে যাওয়ার জন্য ইশারা করে নিজে রুম হতে বেরিয়ে গেলো।প্রিয়তা শাড়ী হাতে বসে রইলো।মন চাচ্ছে পড়ে আসার জন্য। কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে ছিঃ এমন শাড়ী পড়া যায় না-কি? শরীরের ভাঁজ সব অনায়েসে নজরে পড়বে।
দোনোমোনো করে প্রিয়তা শাড়ী আলমারিতে তুলে রাখে।নিচে গিয়ে দেখলো সাদনান সোফায় বসে ফোনে স্ক্রল করছে আর কাজের লোক ডাইনিং টেবিলে খাবার দিচ্ছে। প্রিয়তা কে নিচে নামতে দেখে সালেহা বেগম বলে উঠলো,

-“তুই মাথা ব্যথা নিয়ে নিচে আসার কি দরকার ছিল?
আমি সাদনান এর কাছে খাবার দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিতাম।”

সাদনান মায়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ভূত দেখার মতো করে চমকে উঠলো। কারণ সাদনান নিচে এসে জানিয়েছে প্রিয়তার মাথা ব্যথা তাই খাবার রুমে নিয়ে যাবে।তবে ভাবভঙ্গি এমন করল যেনো কিচ্ছু করে নি।গম্ভীর হয়ে বসে কিছু ভাবতে থাকে।প্রিয়তা সাদনানের দিকে আঁড়চোখে একবার তাকিয়ে সালেহা বেগম এর সাথে কথা বলতে বলতে রান্না ঘরে চলে গেলো।

—-

খাবার শেষ সাদনান আগে রুমে চলে গিয়েছে। প্রিয়তা সবার সাথে আড্ডা দিয়ে রুমে এলো।বিয়ের সময় বেশি নেই।একদিন মাত্র। কাল বিকেলে হলুদ সেই সুবাদে সব মেয়েরা কি করবে কি পড়বে সব ঠিকঠাক করে নিলো।তিন্নি কবিরও কাল চলে যাওয়ার কথা থাকলেও সবাই যেতে দেয় নি।এই সাপ্তাহ পুরোটাই কবির তিন্নি এখানে থাকবে।এমনটাই সবার আবদার।আয়ান মাইশা সওদাগর বাড়ির সবাই কাল আসবে।প্রিয়তা ভীষণ খুশি খুশি লাগছে অনেক দিন হয় মা বাবা ভাই কে দেখে না।এ-তো সবের ভীড়ে ঘন্টাখানিক আগে রুমে হওয়া সব বেমালুম ভুলে গেলো প্রিয়তা।
রুমে এসে প্রিয়তার ভ্রু কুঁচকে এলো।পুরো রুম জুড়ে অন্ধকার বিরাজ করছে।
পা টিপে টিপে রুমে এসে প্রিয়তা লাইট অন করে।সাদনান চোখের উপর এক হাত ভাঁজ করে শুয়ে আছে। বোঝার উপায় নেই ঘুমিয়েছে না-কি সজাগ।
প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে ডাকলো সাদনান কে।কিন্তু না কোনো নড়চড় নেই মানুষ টার।

-“শুনছেন?”

বারকয়েক ডাকার পর সাদনান চোখ বন্ধরত অবস্থা বলে উঠলো,

-“অনেক রাত হয়েছে।
শুয়ে পড়ো।”

প্রিয়তা মনঃক্ষুণ্ন হলো। এগিয়ে গিয়ে কাবাড থেকে রাতের পোশাক নিতেই হঠাৎ শপিং ব্যাগ গুলোর দিকে দৃষ্টি পড়তেই থমথমে খেলো। সাদনানের অভিমানের কারণ টা ভালোই বুঝে এলো।আচ্ছা মানুষ টা অভিমান করেছে না-কি রেগে গেলো?
প্রিয়তার বুঝে এলো না।রাতের ড্রেস আগের স্থানে রেখে ব্যাগ হতে ফিনফিনে পাতলা সাদা একটা শাড়ী আর একটা ব্লাউজ নিলো।যার গলা টা অনেটাই বড় সাথে হাত গুলো ছোট। ফ্রেশ হয়ে সুন্দর করে শাড়ী টা পড়ে নিলো।শাড়ী পড়া টা বেশ আয়ত্তে এসেছে এখন।প্রায়শই পড়তে হয়।অন্য কেউ ক’দিন পড়িয়ে দিবে!তাই অনেকটাই কষ্ট করে শাড়ী পড়া টা শিখে নিয়েছে। কিন্তু শাড়ী টা বেশ পাতলা হওয়ার ধরুণে শাড়ী পড়ার পরেও কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কুঁচি ঠিক করে হাতে এক জোড়া চুড়ি তুলে নিলো।হাতের দিকে তাকিয়ে চুড়ি পড়ায় মনোযোগী হতেই এক জোড়া দানবীয় হাত সেটায় বাঁধা হলো।প্রিয়তার হাত থেকে চুড়ি গুলো সাদনান নিজের হাতে নিলো।আলতো হাতে বউ কে চুড়ি গুলো পড়িয়ে দিলো প্রিয়তা চুপটি করে সাদনানের বুকের সঙ্গে লেপ্টে রইলো।সাদনান চুড়ি পড়া শেষ বউ কে কোলে তুলে নিলো। প্রিয়তা সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

-“আপনি রেগে ছিলেন?”

-“একদম না।
আমি জানতাম আমার জান আমার কথা রাখবে।”

সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে ব্যালকনিতে এলো।
নিচে বসে বউ কে কোলে বসাল।শক্ত খসখসে হাত প্রিয়তার শাড়ির ভাঁজ গলিয়ে পেটে রাখলো।প্রিয়তা শান্ত। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঝড় বইছে। যার সূত্রপাত এই সুদর্শন পুরুষের ছোঁয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে।
সাদনান এক দৃষ্টিতে প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আবছা আলোয়ে শরীরে ফিনফিনে শাড়ী।ব্লাউজের গলা বেশ বড়ো।যার ফলস্বরূপ আবেদনময়ী লাগছে। একবার গভীর হতে গভীর স্পর্শ দেওয়ার ইচ্ছে জাগে মনে।প্রিয়তার শরীর মূদু কম্পন অনুভব করে যা সাদনান কে বউয়ের দিকে আরো আকৃষ্ট করে।কোমড়ে রাখা একটা হাত আস্তে আস্তে পেট হতে গালে চলে আসে। প্রিয়তা সাদনানের ঘাড়ে নিজের হাত দিয়ে খামচে ধরে।
সাদনান বউয়ের অধর কোণে বৃদ্ধা আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিয়ে বলে উঠলো

-“আই ওয়ান্ট এ কিস!”

সম্মতির অপেক্ষা করে না সাদনান ।প্রিয়তার অধর আঁকড়ে ধরে।কোলে তুলে ফের রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বিশেষ মূহুর্তে প্রিয়তা অনাকাঙ্খিত এক আবদার জুড়ে বসলো,

-“আমিও মাতৃত্ব স্বাদ গ্রহণ করতে চাই।”

হঠাৎ এরূপ আবদার এমন মূহুর্তে সাদনান থমথমে খেলো। কানে যেনো কথা টা ঝংকার তুলল। সবে তো আঠারো বছর চলে।তারউপর শরীরের যা অবস্থা। কি করে সব সামলে উঠবে তার বউ?যদি কিছু হয়ে যায়?অধর স্পর্শ করে প্রিয়তার ললাটে। জড়িয়ে ধরে বউ কে।শান্ত কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল,

-“সেটা আল্লাহ চাইলে অবশ্যই।
কিন্তু আ’ম সো সরি জান।আমি তোমায় নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাই না।”

প্রিয়তা হয়তো কিছু বলতে যাচ্ছিল।কিন্তু সাদনান সেটার সুযোগ দিলো না। বউয়ের অধর আঁকড়ে ধরে পুরোপুরি নিজের আয়ত্তে নিয়ে হারিয়ে গেলো ভালোবাসার অতল সাগরে।

——

“দু’মিনিট টাইম।
ফাস্ট ব্যালকনিতে এসো।”

এমন একটা ম্যাসেজ রিধির ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে। রিধির ঘুম চোখ খুলতে পারছিল না।কিন্তু ম্যাসেজ দেখার পর ঘুম উড়ে গেলো।বিছানা ছেড়ে নেমে এগিয়ে গিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়াতেই রাস্তায় বড় একটা গাড়ি দেখা মিলল।গাড়ির ভেতর থেকে এক জোড়া চোখ রিধি কে দেখছে।কিন্তু রিধি কিচ্ছু দেখতে পেলো না। ফোন হাতে টাইপিং করলো,

“কোথায় আপনি?
দেখি না কেনো আমি?”

“তুমি দেখতে হবে না।আমি তোমায় দেখছি।”

রিধির ম্যাসেজ সেন্ট হওয়ার সাথে সাথে ওপাশ হতে রিপ্লাই এলো।এর পরপরই আরো একটা ম্যাসেজ এলো,

“বাই দ্য ওয়ে ওড়না কোথায় তোমার? ভাগ্য ভালো কেউ নেই এখন। নেক্সট এমন না হয় যেনো।যাও রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো”

গাড়ি টা স্টার্ট হওয়ার সাথে সাথে আবার ঘুমিয়ে পড়ার একটা বার্তা দিলো।রিধি মুচকি হেঁসে রুমে চলে এলো।অনুভূতিরা এখন মুক্ত যখন তখন ডানা ঝাপটায়। বাঁধা ছিল যে এতো বছর। এখন তারা মুক্তি পেয়ে আরো প্রখর হচ্ছে।

——

-“কিছু দেখলেন?”

তিন্নি কবির কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো। কবির দৃষ্টি রাস্তায় থাকা গাড়ির দিক হতে ফিরিয়ে তিন্নির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জবাব দিলো,

-“এটা সুন্দর ছিল।”

-“ইশ।
দেখলেন ওয়াজিদ ভাই কত ভালোবাসে রিধি আপুকে।রাত সাড়ে বারো টা বাজে আপু কে দেখতে কত টা পথ জার্নি করে চলে এসছে!আর আপনি আমায় সামন্য ব্যালকনিতে নিয়ে আসেন না।”

কথা গুলো তিন্নি অভিমানী স্বরে বলল।কবির বউয়ের অভিমানের কারণ জানে।তবে বউ কে এক হাতে আগলে নিয়ে জানাল,

-“আজও আনতাম না।
শুধু গার্ড আজ গার্ডেনে নেই সেইজন্য আসতে পেরেছো।আর এতে করে আমি যদি খারাপ হই আমার ভালোবাসা কম হয় তবে তাই হোক।”

তিন্নি কবিরের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।এই পুরুষ এমন কেনো?তিন্নির বুঝে আসে না। না-কি সব পুরুষই এমন নিজের ভালোবাসার মানুষ নিয়ে!একটু বেশি সেনসিটিভ!

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে