#আমার_তুমি
#পর্ব_২১
#জান্নাত_সুলতানা
পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন প্রাকটিক্যালও আজ শেষ। সারা প্রিয়তা দুইজনের পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছে সব গুলো। এখন বাকি টা রেজাল্ট আউট হলে বোঝা যাবে।
আজ রাহাত ওদের নিতে আসবে কারণ কাল নমিনেশন দিবে সাদনান সহ জাফর,আজ্জম মির্জা তাই আজ ওয়াসিফ দেওয়ান এর বাসায় গিয়েছে এটা নিয়ে আজ মিটিং হবে।
প্রিয়তা সারা
ওরা দুজন স্কুল এর ভেতর হতে বেড়িয়ে এসে দেখলো রাহাত গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।
প্রিয়তা আর সারা কে এগিয়ে আসতে দেখে ফোন কেটে পকেটে নিয়ে নেয়।
এ-র পর টুকটাক কথা বলে ওরা গাড়িতে উঠে বসে।
রাহাতও গাড়ী স্টার্ট দিয়ে বাড়ির দিকে চলে আসে।
————–
মাইশা, আয়ান, তিন্নি অপেক্ষা করছে কবির খাঁন এর জন্য।
ওরা আজ চার জন এই বিকেল টা সারা এলাকা ঘুরে বেড়াবে।
তার কারণ তিন্নি। ওর ভীষণ মন খারাপ কলেজে কয়েক টা মেয়ে জেনে গিয়েছে ইলেকশন এর পর তিন্নি আর কবির এর বিয়ে হবে।
কিন্তু এটা জানে না তিন্নি আর কবির এর বিয়ে টা অলরেডি ঘরোয়া ভাবে হয়ে গিয়েছে।
তিন্নি ভাবে বিয়ে ঠিক হয়েছে জেনে মেয়ে গুলো ওকে ওই দিন এতো কথা শোনাল আর যদি জানতে পারে বিয়ে হয়ে গিয়েছে তখন কি করতো?
তিন্নি কে কয়েক টা মেয়ে মিলে ভীষণ ভাবে বাজে কথা বলেছে।
সে কেন স্যার এর সাথে কলেজ আসে স্যার এর বাড়িতে থাকে।
মাইশা তখন বলতে চেয়ে ছিল বিয়ের কথা বলে দিতে কিন্তু তিন্নি বলতে না করেছে।
তিন্নি এদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেয় নি।
শুধু বলেছে এটা যেনো স্যার কে জিজ্ঞেস করে।
তখন মেয়ে গুলো একটু ভয় পেয়ে যায়।
আর এই ফাঁকে মাইশা বলতে চাই বিয়ে হয়েছে কিন্তু তিন্নি কথা ঘুরিয়ে বলছে বিয়ে ঠিক হয়েছে।
বিয়ে টা এখুনি ধুমধাম করার কথা ছিল। কিন্তু মির্জা বাড়ির কোনো পুরুষ এখন সময় দিতে পারবে না বিধায় বিয়ে টা সে দিন তিন্নি কে হোস্টেল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর দিন দিয়ে দিয়েছেন।
এতে অবশ্য মির্জা বাড়ির সবাই উপস্থিত ছিল।
তিন্নি গাড়িতে জানার উপর থুতনি ঠেকিয়ে এসব ভাবছিল।
ঠিক তক্ষুনি কবির এর ডাকে ধ্যান ফিরে।
কবির এসে পেছনের সিটে ওর পাশে বসে গিয়েছে অথচ ও টেরই পায় নি।
আয়ান মাইশা সামনে বসা।
কবির বেশ দূরত্ব রেখেই বসে আছে।
বিয়ে হয়েছে কিন্তু তিন্নি কবির এর মাঝে এখনো স্বামী স্ত্রী এর মতো কোনো সম্পর্ক এখন গড়ে ওঠে নি।
সামনে তিন্নির পরীক্ষা আর তাছাড়া কবির নিজের মাঝে এখন কি এক জড়তা কাজ করে।
তিন্নি নিজেও দূরে দূরে থাকে।
ভালোবাসার মানুষ টার আশে পাশে তো থাকতে পারে আর কি চাই।
এতেই ভীষণ খুশি তিন্নি।
কবির এর বাবাও তিন্নি কে ভালোবাসে নিজের মেয়ের মতো আগলে আগলে রাখে।
কবির এর চাইতেও বেশি খেয়াল রাখে কালাম তিন্নির একজন বাবা হিসেবে যা করা দরকার সব করে কালাম খাঁন।
তিন্নি ওনাকে অল্প কয়েক দিন এর মাঝে অনেক আপন করে নিয়েছে।
তিন্নির ভাবনার মাঝেই তিন্নি একটা হাত কবির নিজের হাতের মুঠো পুরে নিয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেই ধীরে কণ্ঠে বলে উঠে
-“মন খারাপ করার প্রয়োজন নেই।”
তিন্নি কিছু বলে না চুপ চাপ তাকিয়ে থাকে পাশে বসা শশী কালার সার্ট পড়া সুদর্শন পুরুষ টার দিকে।
বেশ লাগছে দেখতে তিন্নির নিকট কবির কে।
যদিও কবির এর গায়ের রঙ তিন্নির চেয়ে বেশ ফর্সা। আর গাল ভর্তি চাপ দাঁড়ি গোলগাল মুখ চোখে কালো চিকন ফ্রেমের চশমা। সার্ট এর হাতা গুটিয়ে কনুই পর্যন্ত রাখা নিঃসন্দেহে কোনো মেয়ে এক দেখায় এই পুরুষের প্রেমে পড়বে।
যেমন টা তিন্নি পড়ে ছিল।
যেটা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রূপ নিলো আর এখন পরিণয়।
কবির সামনে তাকিয়ে এক দৃষ্টিতে।
তার এই মেয়ে আশে পাশে থাকলে অন্য রকম অনুভূতি হয়।
খুব করে নিজের বাহুডোর আবদ্ধ করে রাখতে মন চায়।কিন্তু সেই সময় তো আর এখনো আসে নি এক্কেবারে নিজের করে পেতে যে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
ওদের ভাবনার মাঝেই আয়ান গাড়ি টা একটা রেস্টুরেন্টে এর সামনে থামায় তার পর সবাই রেস্টুরেন্টে এর ভেতর চলে যায়।
আজ সারা বিকেলে ঘুরবে ওরা।
মাইশা কেও সাথে রাখার পারমিশন আছে আর সেই জন্যই তো কবির কে বলে তিন্নি আয়ান কেও নিজেদের সাথে নিয়েছে।
——–
আজ রাতে রান্না প্রিয়তা কে করতে হবে।
আম্বিয়া মির্জা হুকুম।
ওনার কথা হলো বহুত তো হলো নাচানাচি বউ হয়ে বাহিরে। এখন তো পরীক্ষাও শেষ তাই এখন থেকে রান্না বান্না সব করতে হবে বউ বউয়ের মতো মন দিয়ে সংসার করবে ব্যাস।
প্রিয়তা রান্না মোটামুটি পাড়ে তবে অতটা পারদর্শী নয়।
ওর মনি ওকে দিয়ে এই কয় বছর কাজ করিয়েছে ঠিক তবে রান্না করে নি কক্ষণো প্রিয়তা।
হাতে হাতে এটা সেটা এগিয়ে দিয়েছে শুধু।
কিন্তু আজ এতো মানুষের রান্না একটু নার্ভাস প্রিয়তা।
সালেহা বেগম এর প্রেশার বেড়ে আছে তাই তিনি রুমে আছে এসব তিনি জানে না।
আর সুফিয়া বেগম আর আয়না আসতে পারবে না এটা আম্বিয়া মির্জার বারণ আর কাজের লোক গুলো যে যার মতো কাজ করছে তারা কেউ যেনো প্রিয়তা কে সাহায্য না করে এটাও ব’লেছে।
প্রিয়তা হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে চুলা হতে চিংড়ির তরকারি টা নামিয়ে রাখে।
ভাতের জন্য পানি বসিয়ে কেবিনেট খুলে সেখান থেকে চায়ের পাতা নামিয়ে পেছন ফিরতেই কাজের মেয়ে এসে বলে গেলো সাদনান এসছে আর প্রিয়তা কে রুমে যেতে বলেছে।
প্রিয়তা শুনলো না। ও ভাবছে রান্না টা করেই এক্কেবারে রুমে যাব।
তাই কফি করে কাজের মেয়ের হাতে দিয়ে পাঠিয়ে দিলো।
আম্বিয়া মির্জা তখনো সোফায় বসে।
প্রিয়তা কফি করে দিয়ে আবারও নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।
কিন্তু সে টা আর স্থায়ী হয় না।
লিভিং রুমে ঝনঝন শব্দ তুলে কিছু ভাঙার আওয়াজ হলো।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ হাতের কাজ ফেলে তড়িঘড়ি করে রান্না ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসতেই সাদনান কে দেখতে পেলো আর একটু আগে সাদা রঙের কফি করে দেওয়া মগ টা টুকরো টুকরো হয়ে চার দিকে ছড়ি ছিটিয়ে নিচে পড়ে আছে।
প্রিয়তার বুঝতে সময় লাগলো না সাদনান রেগে গিয়েছে।
আয়না,সালেহা বেগম সারা সহ সবাই উপস্থিত এখানে।
আম্বিয়া মির্জা তখন প্রিয়তার দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা ভয়ে ভয়ে সাদনানের দিকে তাকাতেই সাদনান ঝড়ের বেগে এসে প্রিয়তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে টেনে দাদির সামনে দাঁড়ালো।
গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো
-“বউ হয় আমার।
কাজের মেয়ে নয়।দ্বিতীয় বার ওকে দিয়ে কাজ করাবে না। এতো কাজের লোক দিয়ে কি হবে যদি আমার বউ কে সবার জন্য রান্না করতে হয়?”
কথা শেষ সাদনান অপেক্ষা করে না বউ কে টেনে নিয়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
প্রিয়তা স্তব্ধ।
সাদনান মিটিং শেষ পার্টি অফিস গিয়ে ছিল।
কাল নমিনেশন দিবে সেটা নিয়ে দলের ছেলেদের সাথে কথা বলতে গিয়ে ছিল।
কিন্তু বাড়ি থেকে আয়নার ফোন হতে কল পেয়ে একটু ভ্রু কুঁচকে আসে।
কোনো সমস্যা হয়েছে ভেবেই ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ হতে সারা ফোন কানে বলেছিল দাদি প্রিয়তা কে আজ সবার রান্না করতে দিয়েছে।
ব্যাস এটুকুই।
সাদনান তড়িৎ গতিতে ফোন কেটে দিয়ে রাহান কে ওদিক টা সামলাতে বলে তড়িঘড়ি করে বাড়ি চলে এসছে।
#চলবে…..