#আনন্দ_অশ্রু
#পর্ব_৭
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি
সারাদিন তো হসপিটালে রোগীদের সাথে গল্পে মজে থাকিস পড়ার দিকে কোনো মনোযোগ নেই তোদের এইবার যদি সেমিষ্টার পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো না করিস তাহলে হাসপাতালে আয়ার চাকরি দিয়ে দিবো আর ডক্টরী পড়তে হবে না সারাক্ষণ মেঝে পরিষ্কার করবি আর রোগীদের সাথে গল্প করবি। তোদের নিয়ে ভাবতে ভাবতে অল্প বয়সে আমার অর্ধেক চুল পেকে গেছে। আমি আর তোদের নিয়ে পারবো না বাপু এইবার শেষ সুযোগ দিচ্ছি যদি ভালো রেজাল্ট করতে পারিস তাহলে তো বেঁচে গেলি আর না হলে বাসায় সকাল বিকাল ঝাড়ু দেওয়ার প্রেক্টিস করিস।
খুব রাগ নিয়ে কথা গুলো বললো তানজিল। মায়া আর নাফিসা আজকাল খুব জ্বালায় ওকে। বাসায় যতক্ষন থাকবে ততক্ষণ শুধু রহিমা বানুর সাথে গল্পে মজে থাকবে আর তানজিলের নামে নালিশ করবে। রহিমা বানুও কম কিসে ওদের সামনে বলবে যে সে তানজিলকে বকে দিবে আবার তানজিলের কাছে বলবে মেয়ে দুটোকে সারাক্ষণ ঝারির ওপর রাখতে। আর যতক্ষণ হসপিটালে থাকবে ততক্ষন বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের সাথে গল্প করবে ক্লাসের সময় দুজন মিলে রোগীদের সুখ দুঃখ নিয়ে আলাপ করবে। প্রফেসররা ওদের নিয়ে তানজিলের কাছে কয়েক বার নালিশ দিয়েছে এইবারও সেই নালিশের জন্য তানজিল তাদের শাসন করে হুমকী দিয়েছে। কিন্তু এইসবের কিছু তারা এখন ভয় পায় না তাদের কথা হলো পরীক্ষার রেজাল্ট তাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলবে। ওরা সারাদিন দুষ্টুমি করলেও পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবে এটা তানজিল জানে তাও একটু শাসনে রাখে।
ডক্টর তানজিল শিকদার যদি আপনার হুমকি দেওয়া শেষ হয় তাহলে কি আমরা দুজন এখান থেকে বের হতে পারি?(নাফিসা)
আমাদের জন্য প্রসূতি বিভাগের একজন অপেক্ষা করছে খুব জরুরী বিষয়ে আলাপ আছে তাই তুমি অনুমতি না দিলেও আমাদেরকে যেতে হবে।(মায়া)
এতো লম্বা একটা বয়ান দেওয়ার পরও ওরা কী করে রোগীদের সাথে গল্প করতে যেতে চায় সেটা ভেবে পায়না তানজিল তপ্ত শাস ফেলে তাকায় মেয়েদের দিকে, মায়া আর নাফিসা তানজিলের দিকে তাঁকিয়ে খুব সুন্দর করে একটা হাসি দেয় ওদের হাসি দেখে তানজিল কখনোই তার রাগ ধরে রাখতে পারে না সেও হেসে দেয়। তানজিলের হাসি দেখে মায়া আর নাফিসা তানজিলকে জড়িয়ে ধরে তারপর তানজিলকে ছেড়ে চেম্বারের বাইরে চলে যায় মায়া আবার ফিরে আসে তার ফোন নিতে ভুল করে তানজিলের চেম্বারে ফোনটা ফেলে চলে গিয়েছিল। চেম্বারে ঢুকেই বলতে শুরু করে,
তুমি শুধু শুধু আমাদের নিয়ে এতো ভাবো আমরা এমন কিছুই করবো না যেটাতে তোমার আর ওনার বিশ্বাস নষ্ট হয়। তুমি নিশ্চিন্তে বসে বসে রোগী দেখো আর ক্লাস নাও। দেখবে চুল পাকা কমে গেছে আর মিয়া ভাইও আগের থেকে বেশি ভালোবাসবে আমাদের জন্য তো তুমি মিয়া ভাইকে সময় দিতে পারো না যখনই মিয়া ভাই তোমাকে ভালবাসি বলে তখনই তুমি আমাদের কথা চিন্তা করে বলে ফেলো “আমার মনের ভালোবাসা তোদের জন্য মরে যাচ্ছে”বেচারা মিয়া ভাই আহত হৃদয় নিয়ে চুপ করে বসে থাকে আর মনে মনে দোয়া করে আমরা যেনো ভালো হয়ে যাই। এখন তুমি বলো আমরা কী পঁচা মেয়ে তোমার অধিক চিন্তার জন্য আমরা তোমার কোয়ালিটি টাইমের দুশমন হয়ে গেছি।
মায়ার কথা শুনে তানজিল কী বলবে কী করবে বুঝতে পারছে না হা হয়ে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে মনে মনে ভাবছে মেয়েটা বড় হয়ে গেছে তাইতো এখন এমন করে কথা বলছে তার সাথে। তানজিল নিজেকে প্রস্তুত করলো কিছু বলার জন্য।
মায়া নিজের ফোন ডক্টর এপ্রনের পকেটে রেখে তানজিলের সামনে দাঁড়ায়।
পরশু রেহান আসছে তোকে এয়ারপোর্টে যেতে বলেছে। তুই কি যাবি?
রেহানের নাম শুনে মায়ার হাসি মুখ চুপসে গেল দেরি না করে বলে ফেলো,
না।
বলেই চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলো মায়া। নাফিসা বাইরের দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো মায়ার জন্য কিন্তু মায়া নাফিসাকে কিছু না বলে দৌঁড়ে চলে যাচ্ছে মায়ার দৌঁড় দেওয়া দেখে সেও দৌড়াচ্ছে মায়ার পিছন পিছন। মায়া দৌঁড়ে গিয়ে দাঁড়ায় হসপিটালের বাইরে নাফিসা মায়ার কাছে ছুটে আসে খুব চিন্তিত হয়ে মায়াকে জিজ্ঞেস করে,,
মায়া কী হয়েছে তোর এমন দৌড়াচ্ছিস কেনো আম্মু কিছু বলেছে?
নাফু,বন্ধু আসছে।
কি ছোটো কাকা আসছে কবে কখন আর তুই কী করে জানলি ধুর আমিও কিসব বলছি অবশ্যই আম্মু তোকে জানিয়েছে।
মায়ার চোঁখে পানি টলমল করছে নাফিসা মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,, মায়া তুই কাদছিস কেনো? সরি আমার ভুল হয়ে গেছে আমার মনে ছিলো না ছোটো কাকার কথা শুনলে যে তুই কষ্ট পাশ। অনেক দিন পর কাকা ফিরছে তো তাই আমি একটু বেশি এক্সসাইটেড হয়ে গেছিলাম সরি দোস্ত তুই মন খারাপ করিস না।
নাফু আমি মন খারাপ করে কান্না করছি না আমি তো খুশিতে কান্না করছি, কত দিন পর বন্ধুকে দেখবো। এই খুশিতে আমার অশ্রু বাদ মানছে না। জানি সে আমাকে পছন্দ করে না আর আমি তার যোগ্য না কিন্তু বন্ধু আমাকে এয়ারপোর্ট যেতে বলেছে এটা ভেবে খুব ভালো লাগছে।
তাহলে তো হলোই সবাই এক সাথে যাবো ছোটো কাকাকে আনতে।
আমি যাবো না, বন্ধুর সামনে আমি যেতে পারবো না ওনার সামনে গেলে পুরনো কথা গুলো মনে পড়ে যাবে আরো কষ্ট হবে তাই আমি যাবো না।
নাফিসা মায়ার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে তাই সেও যাবে না জানিয়েছে মায়া জানতে চায় সে কেনো যাবে না নাফিসা জানায়,,
বাড়ির সবাই যাবে কাকাকে আনতে বাসায় শুধু দাদী আর তুই থাকবি।তুই যেই আবেগী আবেগের ঠেলায় যদি ছাদ থেকে পরে যাস তখন তোকে ধরবে কে শুনি তাই আমি বাসায় থাকবো তোকে আর তোর আবেগকে ধরতে বুঝলি দোস্ত।
নাফু তোর মনে আছে তো সেই ওয়াদা?
হুমম, মনে আছে তুই নিশ্চিন্তে থাক যতো দিন তুই না চাইবি ততো দিন আমি কাউকে কিছু বলবো না।
নাফিসার কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো মায়া তারপর দুজনেই আবার চলে গেল প্রসূতি বিভাগে রোগীর সাথে সুখ দুঃখের আলাপ করতে।
_____________
হোয়াইট টি-শার্ট, ব্লেক জিন্স, ব্লেক জেকেট, হোয়াইট সুজ, ব্লেক স্মার্ট ওয়াচ পরে শপিং মলে দাড়িয়ে আছে রেহান। অপেক্ষা করছে তার বন্ধুর ভাই শাফায়াতের জন্য। শাফায়াত হলো রেহানের বন্ধু শাহাদাতের ছোটো ভাই।রেহান ইউএসএ তে আসার পর শাহাদাতের সাথে পরিচয় হয় শাহাদাত রেহানের খুব ভালো বন্ধু আর ওর ছোটো ভাই জন্মের পর কখনই বাংলাদেশে যায়নি কিন্তু এতো সুন্দর করে বাংলা বলতে পারে কেউ তার সমন্ধে না জানলে ধরতেই পারবে না ওযে বাংলাদেশ কখনো দেখেই নি। রেহানও প্রথমে অবাক হয়েছিলো তার পর এক সাথে থাকতে থাকতে ওদের পরিবারের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায়। রেহান বাংলাদেশে ফিরে যাবে এই কথা শোনার পর শাফায়াত রেহানের সাথে আসবে বলে বায়না ধরে। তারা যেহেতু রেহানকে অনেক বছর ধরে চিনে তাই তারা শাফায়াতের বায়নায় রাজি হয়ে যায়। শাফায়াত রেহানের পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু উপহার কিনবে বলে রেহানের সঙ্গে শপিংয়ে এসেছে রেহান নিজের প্রয়োজনীয় সব জিনিস নিয়ে নিয়েছে এদিকে শাফায়াত এখনও গিফট কিনতে পারেনি তার কাছে কিছু কম মনে হয় তাই সে রেহানকে অপেক্ষা করতে বলে। রেহান এখন তার জন্য অপেক্ষা করছে।
রেহান স্যার চলেন আমার কিনাকাটা শেষ আর সরি আপনাকে অনেক্ষন আমার জন্য অপেক্ষা করতে হলো।
অপেক্ষা করতে করতেই আমার জীবন চলছে। সেটা কোনো সমস্যা না সমস্যা হলো তুই আমাকে রেহান ভাই না বলে স্যার ডাকিস কেনো?
সেটা এখন বলবো না, আগে বাংলাদেশে যাই তারপর বলবো। তার আগে বলেন আমার চাকরির কী খবর?
শাফায়াতের কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো রেহান উত্তরে জানায়,, সেটাও আমি নাহয় বাংলাদেশে পৌঁছে বলবো।
রেহানের উত্তরে তেমন খুশি হতে পারলো না শাফায়াত কিন্তু এটা বুঝতে পারছে সে রেগে যাচ্ছে তাই আর কোনো বেশি কথা না বারিয়ে হাটা ধরলো রেহানের পিছু পিছু।
_____________
কেমন আছো ভাবী?(রেহান)
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, তুই কেমন আছিস? তোর সকল প্যাকিং হয়ে গেছে?
আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। সব কিছু রেডি আছে এখন শুধু আল্লাহর নামে প্লেনে উঠবো। খুব উৎসুক হয়ে রেহান তানজিলকে জিজ্ঞেস করে,
ভাবী আসু কী আসবে?
রেহানের প্রশ্নের তানজিলের মুখটা মলিন হয়ে গেল। রেহান তার উত্তর পেয়ে গেছে।
এখনো রাগ করে আছে আমার ওপর?
রাগ কম অভিমান বেশি সাথে কিছু অভিযোগও আছে। সেদিন যদি ওই কথা গুলো না বলে ভালো করে বুঝিয়ে বলতি মেয়েটা বুঝতো।
সেদিন যদি ঐভাবে কথা গুলো না বলতাম তাহলে আজ আর মেডিকেল কলেজে পড়তে হতো না। বসে বসে ভিডিও কলে প্রবাসী স্বামীর সাথে কথা বলতো । আমি কী এটার জন্য এত কষ্ট করে নিজেকে সামলে ছিলাম বলো?
রেহানের কথায় হাসলো তানজিল।
আমি ফিরে ওর সকল রাগ, অভিমান আর যত অভিযোগ আছে সব শুনবো আর দূর করার ওষুধও সাথে করে নিয়ে আসবো। শুনলাম ওই দুইটার জ্বালায় নাকী তোমার আর মিয়া ভাইয়ের ভালোবাসা দিন দিন কমে যাচ্ছে ?
তোকে এই খবর কে বললো?
কে আবার যার কাছ থেকে আমি আমার বউয়ের সকল খবর নেই।
কে নাফিসা বলেছে তোকে?
হুমম, মিয়া ভাই নাকি আসু আর নাফিসাকে ঘুষ দিয়ে বলেছে তোমাকে যেনো ওরা একটু কম জ্বালায়।
এই লোকটাকে নিয়ে আর পারি না শেষে কিনা মেয়ে আর ভাইয়ে বউকে ঘুষ দেয় । আর ওদের কথা আর কি বলবো ওরা দুজন মেডিকেলে পড়তে যায় না রোগিদের সুখ দুঃখের কাহিনী শুনতে যায় ক্লাসের সময় দুজনে লেকচার শোনা বাদ দিয়ে কোন রোগীর দুঃখ কিভাবে দূর করবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে। সারা দিন রোগী দেখা বাদ দিয়ে ওদের নামে নালিশ শুনতে হয় আর ওদের শাসন করতে হয়। তুই তাড়াতাড়ি চলে আয় ভাই তুই এলে আমি একটু নিস্তার পাবো।
তানজিলের কথায় হাসতে হাসতে রেহান বলে,, আমি আসছি ভাবী আমি আসছি……………
#চলবে…………………