আনন্দ অশ্রু পর্ব-০৫

0
929

#আনন্দ_অশ্রু
#পর্ব_৫
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি

দেখতে দেখতে কেটে গেল দুই বছর সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মায়া আর রেহান। মায়া আর নাফিসা এসএসসি পরীক্ষা দিলো আর রেহান বুয়েট থেকে ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাশ করে বেরিয়েছে। গত দুই বছরে মায়া একটু একটু করে রেহানের প্রতি আলাদা এক অনুভূতি অনুভব করছে। রেহানও মায়ার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে কিন্তু সে চায় না মায়া এক্ষনি তার ওপর দূর্বল হয়ে পরুক এমন না যে রেহান মায়ার সঙ্গ চায় না। প্রত্যেক বিবাহিত পুরুষ তার ব্যাক্তিগত নারীর সঙ্গ চায় রেহানের দিকেও ব্যতিক্রম কিছু নয়। আজকাল রেহানের প্রতি মায়ার আচার আচরণ পাল্টে যাচ্ছে মায়ার মাঝে সেই আগের মতো বাচ্চা ভাব নেই, আগেতো রেহানকে দেখলে বন্ধু বন্ধু বলে মাথা নষ্ট করে দিতো এটা সেটার বায়না ধরতো কিন্তু এখন আর সেই কাজ গুলো করে না এখন রেহানকে দেখলে লজ্জা পায়, তার সাথে কথা বলতে জড়তা কাজ করে, রেহানের দিকে তাঁকিয়ে কথা বলে না, রেহান কিছুক্ষণ চোখের আড়াল হলে তার অস্বস্থি লাগে, রেহানকে দেখলে মুচকি হাসে, চুপি চুপি রেহানকে দেখে, রেহান যতক্ষন মায়ার সাথে সময় কাটায় ততক্ষন মায়ার চোঁখে মুখে এক অন্যরকম খুশি দেখা যায়।
রেহান খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মায়ার মনে রেহানের প্রতি আবেগ কে জন্ম দিচ্ছে আর এটাও বুঝতে পারছে মায়া এখন সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে রেহানের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাই সে মায়ার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাড়ীর সবাই বসার ঘরে গম্ভীর মুখে বসে আছে। সবাই রেহানের বিদেশে যাওয়া নিয়ে মন খারাপ করছে। কিন্তু মায়া মূর্তির ন্যায় দাড়িয়ে আছে চোখের কোণে অশ্রু জমাট বেঁধে আছে শুধু গড়িয়ে পরার অপেক্ষা। রেহান একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো তারপর আর তাকানোর সাহস হয়নি। মায়ার অশ্রু যে রেহানের কাছে অমূল্য মায়ার সুন্দর আগামীর জন্য সে নিজেকে বহু কষ্টে গুটিয়ে নিচ্ছে। তারও খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই তার আর মায়ার একটা সুস্থ সম্পর্কের জন্য সময় দরকার আর সেই সময়টুকুর জন্য নিজের একান্ত ব্যাক্তিগত ভালোবাসাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। সে নিজেও জানে না এই দূরে সরে যাওযার কারণ আদো কি মায়া বুঝবে কিনা নাকি ভুল বুঝে তাকে দূরে সরিয়ে দিবে।

রেহান সব কিছু ঠিকঠাক করে ফ্লাইটের ডেট ফিক্স করে সবাইকে জানাচ্ছে সবাই প্রথমে একটু রাগ করলেও পরে সবাই রাজি হয়ে যায়। চার দিন পর রেহান ইউএসএ এর উদ্দশ্যে রওনা দিবে। সবাই খুব ব্যস্ত হয়ে রেহানের যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সব কিছু গুছিয়ে ক্লান্ত হয়ে বিছনায় গা এলিয়ে দিল রেহান দরজায় নক করার শব্দে রেহান উঠে দরজা খুলে দিল।

সামনা সামনি বসে আছে রেহান আর তানজিল। রেহান নিরবতা পালন করছে। নিরবতা ভেঙ্গে তানজিল বলে,,

আমি যখন এই বাড়িতে তোর ভাইয়ার হাত ধরে এসেছিলাম তখন তুই অনেকটা ছোটো ছিলি তোকে দেখেলে নিজের ছোটো ভাইয়ের কথা মনে পরতো। তোকে আমি কখনোই দেবর ভাবিনি আর তুইও আমাকে সব সময় বড় বোনের সম্মান দিয়েছিস।

ভাবী, আমি বুঝতে পারছি তুমি কেনো এমন করে কথা গুলো বলছো।

বুঝতেই যখন পারছিস তাহলে বল কেনো মেয়েটাকে এতো কষ্ট দিয়ে চলে যাচ্ছিস?

আমি জানি আসু কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু আমি বাধ্য হচ্ছি ওকে কষ্ট দিতে। আমি চাই না আসুর গন্তব্য আমি পর্যন্তই শেষ হোক। যার জন্য এতো দিন অপেক্ষা করতে পেরেছি আজকাল তার চোঁখে মুখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখলে নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হয় যতই হোক আমিতো পুরুষ তাই না। আমি নিজের বাসনা পূরণ করতে গিয়ে একটা পুষ্প কলির বেরে উঠা নষ্ট করতে পারবো না।আসু আমার সব চেয়ে প্রিয় ওর ভালোর জন্য সব করতে রাজি তাই আবারও সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি।

সঠিক সময়ের অপেক্ষা তো এখানে থেকেও করা যায় তুই যথা সম্ভব মায়ার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখবি আর আমি তো আছি মায়াকে বুঝানোর জন্য।

ভাবী, নিষিদ্ধ জিনিসে আকর্ষণ বেশি থাকে জানো না। আসু আমার জন্য নিষিদ্ধ আর আমি ওর জন্য নিষিদ্ধ। আমি যতো ওর কাছে থেকে দূরত্ব সৃষ্টি করবো ঠিক সেই রকম ভাবে আসু আমায় কাছে টানবে। আসু পুস্প আর আমি কাটা। কাটা অন্যদের থেকে তার পুষ্পকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করে আমিও করছি।

মানে? কী বলতে চাইছিস তুই?

তোমার কী মনে হয় ভাবী আসু মনে এমনি এমনি আমার প্রতি অনুভূতি জন্ম নিয়েছে? আমিতো কখনোই আমার অনুভূতি গুলো আসুকে বুঝতে দেইনি বরং আমি সব সময় ওকে শাসন, নিজের কঠোর রুপ দেখিয়েছি। কখনোই আমার দুর্বলতা বুঝতে দেইনি।

সেটা তো আমিও জানি। কিছু দিন আগেও মায়া তোকে বন্ধু দৃষ্টিতে দেখতো তোকে ভয় পেতো মায়ার এই পরিবর্তন কয়েক দিন ধরে শুরু হয়েছে। বারন্ত বয়স এই বয়সে এমন অনুভুতি সব ছেলেমেয়ের মাঝে থাকে। কিন্তু কেউ যদি সেই অনুভূতির সাথে তাকে পরিচয় না করায় তাহলে বুঝতে একটু সময় লাগে। তোর কি মনে হয় কে এমনটা করেছে?

মেজো ভাবী। মেজো ভাবী আসুর মনে আমার জন্য অনুভূতি তৈরি করেছে। আসু প্রথম প্রথম মেজো ভাবীর সাথে তেমন মিশতো না কারণ আমি বারণ করেছি তাই কিন্তু কিছু দিন ধরে আসু মেজো ভাবীর সাথে খুব ভাব জমাচ্ছে আর আসুর মাঝেও খুব পরিবর্তন এসেছে এই গুলো দেখে আমার একটু খটকা লাগলো তাই চুপি চুপি আসু আর মেজো ভাবীর কথা শুনি ওদের কথা শুনে বুঝতে পারি আসুর পুরো ধ্যান ধারণা জুড়ে শুধু আমি মেজো ভাবী আসুর মাথায় আমার নাম এমন ভাবে ঢুকিয়েছে যে ওর পুরো মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু একটা সম্পর্ক ঘুরছে আর সেটা হলো আমি ওর স্বামী। বড় ভাবী আসু যখনই আমার সাথে একা থাকে তখন আমার খুব ভয় হয়। আমি মেজো ভাবীকে কিছু বলতে চাই না আর না আসুকে।

আমি ভাবতেও পারিনি তিশা এমনটা করবে। অবশ্য দোষটা আমারি আমি মায়াকে তিশার সাথে মিশতে বলেছি আমি কখনোই বুঝতে পারিনি তিশা মায়ার মনে মস্তিষ্কে এই সব কথা ঢুকানোর জন্য ওর সাথে মেশার এতো চেষ্টা করেছে। তুই কিছু ভাবিস না তুই যা আমি মায়ার খেয়াল রাখবো আমি তোকে কথা দিচ্ছি মায়া তোকে ভুল বুঝবে না। তুই শুধু ওকে কষ্ট দিয়ে কিছু বলিস না।

একটু কষ্ট দিয়ে কথা না বললে ও যে আমায় যেতে দিবে না তাই একটু কষ্ট দিতে হবে। আর আমি জানি তুমি আমার আসুকে সামলে নিবে।

রেহানের কথায় মলিন হাসলো তানজিল বসা থেকে উঠে রেহানের কাধে হাত রেখে চলে যায়। রেহান ঠায় ওখানে বসে আছে মনের ভিতর বয়ে যাচ্ছে এক অজানা ঝড়। চোঁখের কার্নিশ বেয়ে পরছে নোনা জল। মাত্র চারদিন পর থেকে সে আর তার প্রিয় মুখটা দেখতে পারবে না চঞ্চল সেই চালচলন দেখতে পারবে না আর না পারবে গভীর রাতে চুপি চুপি ওর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিতে এগুলো ভাবতেই তার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

নিজের ঘরে অন্ধকার করে বসে আছে মায়া, হটাৎ ঘরে আলো জ্বলাতে মায়া উৎসুক হয়ে বলে,, বন্ধু আপনি এসেছেন আমি জানতাম আপনি আমাকে কষ্ট দিয়ে দূরে যাবেন না।

স্বামীর জন্য এত কষ্ট পাচ্ছো তার জন্য কান্না করছো কিন্তু সেতো তোমার কষ্ট দেখছে না। তাহলে লাভ কি একা একা কষ্ট পাওয়ার শুনি।

তিশার মুখে কথা গুলো শুনে মায়া চোঁখের পানি মুছে নিলো ভাঙ্গা কণ্ঠে বলে,, মেজো ভাবী বন্ধু আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে আমাকে একা ফেলে চলে যাচ্ছে কী করবো আমি?

কী করবে আর শুনি, পুরুষ মানুষ ধরে রাখতে হয় নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে পুরুষে চাহিদা মিটিয়ে। বলি আজ অবধি রেহান তোমাকে ছুঁয়েছে নাকি তুমি রেহানকে তার অধিকার দিয়েছো। পুরুষ মানুষ কতই আর অপেক্ষা করবে চলে যাচ্ছে বিদেশে এমন সুদর্শন পুরুষের কী মেয়ের অভাব হবে নাকি ঠিকই আর একটা বিয়ে করে নিবে আর তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিবে। এখনও সময় আছে নিজের রুপের জালে স্বামীকে জব্দ করো। একবার তোমার মায়ায় পরে গেলে আর তোমাকে দূরে রাখবে না।

তিশার কথা গুলো মায়া তেমন না বুঝলেও এটা বুঝতে পারছে সে মায়াকে রেহানের কাছে যেতে বলছে। মায়া তিশার কথায় কোনো সারা দিলো না। তিশা মায়ার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে কিছুক্ষণ মায়ার দিকে তাঁকিয়ে থেকে চলে গেল।

আগামী কাল রেহানের ফ্লাইট।খুব কষ্টে রেহান নিজের মনকে মানিয়ে নিচ্ছে। বাড়ী সবাই একটু মন খারাপ করে আছে কিন্তু রেহানকে বুঝতে দিচ্ছে না। মায়াও দুই দিন ধরে রেহানের সামনের আসছে না।
রাত প্রায় দুইটা বাজে রেহান এখনও ঘুমায়নি বারান্দায় রাখা ইজি চেয়ারে বসে দূর আকাশে মিটি মিটি করে জ্বলে থাকা তারা গুলো দেখছে আর কিছুক্ষন পর পর দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।

বন্ধু আপনি কী এবার আমার ওপর রাগ করে এতো দূরে চলে যাচ্ছেন?

#চলবে……………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে