আনন্দ অশ্রু পর্ব-০৪

1
997

#আনন্দ_অশ্রু
#পর্ব_৪
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি

স্কুল গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে রেহান মায়া আর নাফিসা। রেহান নাফিসাকে বলে,
শোন নাফু, ছোটো কাকীর সাথে সাথে থাকবি কেউ কিছু জানাতে চাইলে বলবি আসু তোর বান্ধুবী ভুল করেও বলবি না আসু তোর কাকী। ঠিক মতো টিফিন খেয়ে নিবি আর ছুটির পর আমার জন্য অপেক্ষা করবি আমি বা বাড়ির কোনো মানুষ ছাড়া অন্য কারো সাথে যাবি না। আর আসু তুমি ভুল করেও আমি ছাড়া কোনো ছেলে বন্ধু বানাবে না অপরিচিত কেউ কিছু দিলে খাবে না আর কেউ যদি জিজ্ঞেস করে তুমি নাফুর কী হও তাহলে বলবে তুমি ওর বান্ধুবী ওদের বাড়ির পাশে তোমার বাড়ী আর ভুল করেও বলবে না তোমার বিয়ে হয়েছে ঠিক আছে আমি কি কি বলেছি সব মনে থাকবে? আর যদি মনে না থাকে তাহলে সমস্যা নেই এই যে বড় বিল্ডিংটা দেখছো এর ছাদ থেকে তোমাদের দুজনকে এক সাথে বেধে নিচে ফেলে দিবো।(হুমকির সুরে)

আরে ছোটো কাকা তুমি এত চিন্তা করো না আমি আর ছোটো কাকী থুক্কু মায়া তোমার সব কথা শুনবো।

হ্যাঁ, বন্ধু আমি আর নাফু আপনার সব কথা শুনবো প্লীজ আপনি ছাদ থেকে ফেলে দিবেন না ওতো উচু থেকে পড়ে গেলে অনেক ব্যাথা পাবো।(কাদোকাদো হয়ে)

ঠিক আছে ভুল না করলে কিছু করবো না এখন সোজা ক্লাসে যাবি আর ছুটির পর আমার জন্য অপেক্ষা করবি।

ঠিক আছে যাচ্ছি। আপনিও বাসায় চলে যান আর দেরী করবেন না তাড়াতাড়ি নিতে আসবেন বাসায় যেয়ে কার্টুন দেখবো।

হ্যাঁ কাকা তুমি একটু তাড়াতাড়ি আমাদেরকে নিতে এসো।

দুজনের কথা শুনে রেহান হাসবে নাকী কাদবে বুঝতে পারছে না শুধু বোকার মতো মাথা নাড়ালো। নাফিসা আর মায়া স্কুলের ভিতরে চলে গেল রেহান সেখানে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে চলে গেলো বাড়িতে। দুপুর ২টা বাজে স্কুল ছুটি হবে আড়াইটায় রেহান আধা ঘণ্টা আগেই চলে এসেছে।
স্কুল ছুটি হয়ে গেছে নাফিসা আর মায়া খুব ক্লান্ত পায়ে হেঁটে আসছে এটা দেখে রেহান দোকান থেকে কিছু চিপস চকলেট আইসক্রিম আর পানি কিনে আনে আর এতক্ষনে আস্তে আস্তে হেঁটে মায়া আর নাফিসা গাড়ির পাশে এসে দাঁড়ায়। রেহান ব্যাস্ত পায়ে হেঁটে এসে গাড়ীর দড়জা খুলে দেয় আর মায়া নাফিসা গাড়িতে বসে পরে। রেহান পানির বোতল দুইটা দুইজনকে দিয়ে বলে,,

দুজনেই পানি খেয়ে এই গুলো খাওয়া শুরু কর। এমন ভাবে ক্লান্ত হয়েছিস দেখে মনে হচ্ছে কোনো যুদ্ধ শেষ করে বাড়ী ফিরছিস।

রাহানের কথা শুনে মায়া বিরবির করে বলে, পাগল লোক একটা ছোটো বাচ্চাদের কষ্ট বুঝে না এখনও গাড়ির চালাচ্ছে না কেনো বাসায় যাবো কার্টুন দেখবো।

রেহান মায়ার বিরবিরানি শুনতে পেয়ে মায়া আর নাফিসাকে রাগানোর জন্য বলে,তাড়াতাড়ি বাসায় যেয়ে লাভ নেই আমি টিভি ছাদ থেকে ফেলে দিছি। টিভির জন্য তোদের লেখা পড়ার দিকে কোনো মনোযোগ নেই তাই এই ক্ষতিকর জিনিসটাকে ছুড়ে ফেলে দিলাম।

রেহানের কথা শুনে মায়া আর নাফিসা একে অপরের দিকে অশ্রু ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে। কিছু বলতেও পারছে না কিছু করতেও পারছে না শুধু অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে রেহানের দিকে। রেহান ওদের চেহারা দেখে ভিতরে ভিতরে খুব হাসছে কিন্তু তার মুখ দেখে বুঝার উপায় নাই সে যে ওদের চেহারা দেখে খুব মজা পাচ্ছে।

আহত হৃদয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো মায়া আর নাফিসা তাদের চোঁখে মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট। ড্রয়িং রুমে সবাই বসে ছিল আজ মমিন বাড়ী ফিরেছে। ব্যাবসার কাজে কিছুদিনের জন্য দেশের বাইরে ছিলো। সেও সবার সাথে বসে কথা বলছিলো মায়া আর নাফিসা করো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা রুমে চলে গেল। ওদের ওমন চেহারা দেখে তানজিল রেহানের কাছে জানতে চায় কী হয়েছে, রেহান সোফায় বসতে বসতে ওদের কষ্টের কথা গুলো বলে রেহানের কথা শুনে সবাই হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তানজিল হাসি থামিয়ে বলে,,

তুই যাই বলিস মেয়ে দুটোর চেহারা দেখার মতো হয়েছে। কার্টুন দেখতে পারবে না বলে দুজনের কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
বলেই আবার হাসতে শুরু করে।

বড়ো ভাবী,,, আম্মু,,,,, বড়ো ভাবী,,, আম্মু,,,,,,
মায়া আর নাফিসার ডাকে ছুটে এলো তানজিল সাথে রহিমা বানু ,রেহান ,মমিন ,তিশা, হাইউল । ওদের দুজনের ডাকে রাগ স্পষ্ট।

কী হয়েছে এমন করে ডাকছিস কেনো?(তানজিল)

ডাকছি কেনো,,, খেতে দাও।(নাফিসা)

আমি পারবো না নিজে নিয়ে খা দুজনে।(তানজিল) মুখ টিপে হেসে

তানজিলের কথায় রাগে গজগজ করতে করতে দুজনে চলে গেলো রান্না ঘরে। রান্না ঘরে খাবার দেখতে পাচ্ছে কিন্তু প্লেট দেখতে পাচ্ছে না তাই মায়া নাফিসাকে বলে,,,

নাফু বেশি খাই খাই করি দেখে বড় ভাবী মনে হয় সব প্লেট ছাদ থেকে ফেলে দিছে যাতে আমরা আর না খেতে পারি ।

তুই ঠিক বলছিস মায়া আম্মুও আমাদের কষ্টটা বুঝলো না।

ওরা যে কথা গুলো বলছে সবাই বাইরে থেকে শুনছে আর হাসছে। তানজিল হাসতে হাসতে রান্নাঘরে যায় আর বলে,,,

রাজকন্যারা, আমি সব প্লেট ছাদ থেকে ফেলে দেইনি সব প্লেট ডিস ওয়াশারে একটু খুঁজলেই পেয়েযেতি আর আম্মু তোদের কষ্ট বুঝি তাই তোদের কষ্ট দূর করতে একটা খবর দেই তোদের টিভি তার নিজের জায়গায় অক্ষত অবস্থায় আছে। তোরা যা আমি খাবার দিচ্ছি।

তানজিলের কথা শুনে এক মুহুর্ত দেরি না করে এক দৌঁড়ে টিভির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় দুজন। টিভি টাকে এমন ভাবে চুমু খাচ্ছে দুজন দেখে মনে হচ্ছে মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাইকে খুঁজে পেয়েছে। ওদের কান্ড দেখে বাকিরা হাসছে। রেহান হাসতে হাসতে বলে,

আজ ফেলিনি বলে এটা ভেবোনা আর কখনো ফেলবো না যদি তোমরা তোমাদের মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাইকে সুরক্ষিত রাখতে চাও তাহলে ঠিক মতো লেখা পড়া করো নয়তো বুঝতেই তো পারছো আমি কি করবো।

মায়া আর নাফিসা রেহানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাগে গড়গড় করতে করতে বলে, পাগল লোক কথায় কথায় শুধু ভয় দেখায়। কেনো আমাদেরকে বুঝিয়ে বললে কী আমরা বুঝি না ।(মায়া)
সত্যি ছোটো কাকা মায়া ঠিকি বলে তুমি একটা পাগল লোক কথায় কথায় খালি ভয় দেখাও।(নাফিসা)

এই হয়েছে আর রাগ দেখাতে হবে না দুজনে খেয়ে এক ঘন্টা টিভি দেখবি তারপরও আছরের নামাজ পড়ে একটু খেলবি তারপর মাগরিবের নামাজ পড়ে তুই নাফিসা আর আর্শি পড়তে বসবি।(তানজিল)

এইতো কালকের দিনটাই আমাকে সহ্য কর তারপর আমি চলে যাবো আবার কবে না কবে ফিরি কে যানে।(রেহান)

কালকের দিন মানে?(তিশা)

হ্যাঁ মেজো ভাবী আগামী পরশু আমার হোস্টেলে ফিরতে হবে ছুটি তো শেষ।

তাই বলে পরশু চলে যাবে?(তানজিল)

হ্যাঁ, মন চাইলেও আর থাকতে পারবো না চলে যেতে হবে।

রেহানের কথা শুনে সবার হাসি মুখটা চুপসে গেল। মায়া আর নাফিসা এখনও দাড়িয়ে আছে তাই তানজিল আবার মেয়েদেরকে খেতে বসতে বলে।

তানজিলের কথা শুনে দুজনেই বাধ্য মেয়ের মতো খেতে বসে পরে। মায়া রেহানের যাওয়ার কথা শোনার পর থেকে বার বার রেহানের দিকে আর চোখে তাকাচ্ছে। রেহান মায়ার আর চোখে তাকানো দেখে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে খাটের ওপর বসে পরে রেহান নিজের সাথে নিজেই বলতে থাকে,,,
মেয়েটা এখনও অনেক ছোটো ওর প্রতি এতটা দুর্বল হওয়া যাবেনা আর না ওকে আমার প্রতি দুর্বল করানো যাবে তাই যতোটা সম্ভব ওর থেকে দূরে সরে থাকতে হবে। আমি দিন দিন তোমার প্রতি খুব দূর্বল হয়ে পরছি তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য না তোমার হাসি মাখা মুখের ওপর নিজেকে বিসর্জন করে দিচ্ছি।
তুমি কোমল পুষ্প কলি কাটার আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা তোমার নেই তাই তোমর আশপাশ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছি।

রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি মায়া আস্তে আস্তে করে রেহানের ঘরে ঢুকলো মায়া ভেবেছিল রেহান হয়তো ঘুমিয়ে আছে কিন্তু রুমে ঢুকে দেখে রেহান তার স্টাডি টেবিলে বসে ডায়েরীতে কিছু একটা লিখছে মায়ার পায়ের শব্দে রেহান তারাতারি তার ডায়েরী টা বন্ধ করে সাইডে রেখে দিল নিজেকে শান্ত করে মায়াকে জিজ্ঞেস করল,,

আসু এতো রাতে তুমি আমার ঘরে কী করছো? আর এখনও ঘুমাওনি কেনো?

মায়া কান্না জড়ানো কন্ঠে উত্তর দেয়,,
বন্ধু আপনি কি আমার কথায় রাগ করে চলে যাচ্ছেন? বন্ধু আমি কোনো ভুল করে থাকলে আপনি আমাকে শাস্তি দিতে পারেন আমি কান্না করবো না।

রেহান মায়ার হাত ধরে বিছনায় বসায় আর নিজে চেয়ার টেনে মায়ার সামনা সামনি বসে তারপর মায়ার হাত ধরে বলে,,,

আসু আমি তোমার বন্ধু আর বন্ধু কখনই তোমার ওপর রাগ করে থাকতে পারেনা। তুমি কান্না থামাও তুমি কান্না করলে আমার খারাপ লাগে, দেখো আমায় পরশু চলে যেতে হবে না গেলে আমার পড়ার ক্ষতি হবে। এখন তুমি কী চাও আমার লেখা পড়ার ক্ষতি হোক?

না, আমি আপনার কোনো ক্ষতি চাই না। আমি নামাজ পড়ে মোনাজাতে আপনার আর আম্মার জন্য আল্লাহর কাছে রহমত চাই আপনারা দুজন না থাকলে হয়তো আমি এতো সুন্দর একটা জীবন পেতাম না আর আপনার মতো বন্ধুও পেতাম না।

তাহলে তুমি কান্না করো না। আমি তোমার কোনো কথায় রাগ করিনি। আমি চাইলেও আর বেশি দিন থাকতে পারবো না আমায় ফিরে যেতে হবে। কিন্তু চার মাস পর আবার আসবো। আমি দূরে আছি বলে এটা ভেবো না আমি তোমার কোনো খবর রাখবো না এই বাড়িতে আমার দুইটা পরী বান্ধুবী আছে তারা আমাকে তোমার সব খবর দিবে আর যদি তুমি কোনো ভুল করো তাহলে তারা তোমাকে ভয় দেখাবে তাই তুমি সব সময় আমার কথা গুলো মেনে চলবে তাহলে আর পরীরা তোমাকে ভয় দেখাবে না।

বন্ধু আপনি আমার সব থেকে ভালো বন্ধু আমার প্রিয় বন্ধু। আপনি যদি আমাকে পরীদের কথা না বলতেন তবুও আমি আপনার সব কথা মেনে চলতাম। আপনি যাবেন আবার ফিরে আসবেন আমি আপনার জন্য অনেক গল্প ঝুড়ি ভরে রেখে দিবো আর যখন আপনি আসবেন তখন অনেক গুলা চকলেট নিয়ে আসবেন আমি আর নাফু চকলেট খাব আর আপনাকে গল্প গুলো শোনাবো।

মায়ার কথায় মুচকি হাসলো রেহান, মায়ার মাথায় হাত রেখে বলে,,, অনেক গুলো চকলেট নিয়ে আসবো। আমি আসার পর অনেক গল্প করবো আর আমি যত দিন এই বাড়িতে থাকবো না ততদিন তুমি নাফিসার সাথে ঘুমাবে কিছু প্রয়োজন হলে বড় ভাবীকে বলবে আর নয়তো আম্মাকে বলবে ঠিক আছে। লেখাপড়ায় কোনো ধরনের ফাঁকি বাজি করবে না। আর মেজো ভাবীর কাছ থেকে যতোটা সম্ভব দুরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করবে। বুঝতে পেরেছো আমার কথা?

হুমম, বুঝেছি। আপনি চিন্তা করবে না আপনিও আপনার লেখাপড়ায় কোনো ফাকি বাজি করবেন না তাহলে মিয়া ভাই অনেক বকবে।

হুমম মন দিয়ে পড়বো। এখন তুমি যাও কাল স্কুল আছে।

রেহানের কথায় সায় জানিয়ে মায়া চলে গেলো আর রেহান চোঁখ বন্ধ করে গা এলিয়ে দিল বিছনায়। খুব কম সময়ে মেয়েটাকে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছে সে। কিন্তু তার এখন নিজের কথা ভাবলে হবে না মায়াকেও সময় দিতে হবে কারণ মেয়েটা এখনও ভালোবাসা কী বুঝে না তাই খুব সময় নিয়ে মায়াকে ভালোবাসা আর ভালোবাসার মানুষ দুটোই বুঝাতে হবে তাড়াহুড়া করলেই সব শেষ হয়ে যাবে ।

#চলবে………………..

1 মন্তব্য

  1. গল্পটা ভালোই কিন্তু খুব বেশী ন্যাকা টাইপ লাগতাছে,,,,, তাই আর পরতাম না,,,,, লেখিকা আপু, আরেকটু ভালো মানের গল্প লিখতে চেষ্টা ক‌ইরেন,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে