Sunday, October 5, 2025







আজল পর্ব-১৭

#আজল
#পর্ব-সতেরো

৩২.

গত পাঁচটা মাসে জীবনের মোড়টা পাল্টে গেছে অদ্ভুত ভাবে। যে জীবনটাকে আগে বোঝা মনে হতো, বাঁচার ইচ্ছে নষ্ট হয়ে গেছিলো, সেটাই হঠাৎ করে এতোটা সুখকর, রোমাঞ্চকর আর প্রিয় হয়ে উঠবে তা জানা ছিলো না প্রিয়তার! আজকাল অদ্ভুত ভালোলাগায় মনটা ভরে থাকে। এই মনের ভালোলাগার চক্করেই কিনা কে জানে তার পড়ালেখার গতিও যেন বেড়ে গেছে। রেজাল্ট ও ভালো হচ্ছে খুব। হবে নাই বা কেন? ওর পরীক্ষার দিনগুলোতে প্রিতিকে যে তানভীর ই সামলায় এখন। যে জীবনটাকে একসময় বাবার দেয়া অভিশাপ মনে হতো সেটাকেই আজ আশির্বাদ মনে হচ্ছে। আজকাল ফড়িঙের মতো উরে বেড়ায় প্রিয়তা। মনেহয়, ইশ! জীবন টা এতো সুন্দর কেন?

তানভীরও আজকাল নিজের মধ্যকার পরিবর্তন টা বেশ টের পায়। প্রিয়তার সাথে অভিনয় করতে করতে কখন যে ওকে নিজের মনে জায়গা দিয়ে ফেলেছে নিজেই জানে না তানভীর। আজকাল
অফিস থেকে বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে, মেয়েটার জন্য অদ্ভুত টান অনুভব করে আবার বউটার জন্যও বেশ একটা অন্যরকম অনুভুতি জন্মেছে মনে। ওর এখন নিজেকেই কেমন অচেনা মনে হয়। মনেহয় ও আর আগের তানভীর নেই, নতুন জন্ম হয়েছে তার। সেদিন যদি প্রিয়তার বাবা ওসব না বলতো তাহলে এই সুন্দর ব্যাপারগুলো জানা হতো না তানভীরের। হ্যা, ইচ্ছা করলে কথাগুলো ও নেগেটিভ ভাবেও নিতে পারতো! নেগেটিভ ভাবে নিলে কেউ কিছু করতে পারতো বলে মনে হয় না। যদি ও প্রিয়কে ডিভোর্স ও দিতো তবুও। কিন্তু কেন জানেনা সে ব্যাপারটাকে একটা এক্সাম হিসেবে নিয়ে নিলো। মনে হলো সারাজীবন তো একভাবে জীবন কাটালাম এবার একটু শশুর বাবার কথা শুনে দেখি।
তানভীর সারাজীবন নিজের মর্জি মতোই চলেছে। বাড়ির সবচেয়ে ছোট ছেলে। যথেষ্ট আমোদ ফুর্তি করেই জীবন কাটিয়েছে। পড়ালেখা, ইচ্ছা মতো ঘুরে বেড়ানো, মেয়ে বান্ধবী কোন কিছুর কমতি হয়নি জীবনে। তারপর হঠাৎ করে একদিন বাবা মারা গেল, বড় ভাইয়েরা সবাই যার যার বিজনেস, সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো তখন ওর হয়ে গেল বিপদ! বাবার রেখে যাওয়া একমাত্র গার্মেন্টস এর বিজনেসটা দিন দিন লসে যাচ্ছিলো। মায়ের অনুরোধে ও সেটার হাল ধরলো। তারপর সেই বিজনেস এক্সপান্ড করে নিজে আরো নতুন দুটো বিজনেস শুরু করে দাঁড় করিয়েও ফেললো। বয়স হয়ে যাচ্ছিলো তখন প্রিয়র সাথে প্রস্তাব আনে বড় ভাবি। দেখে ভালোই লাগে, মনে হয় ঘরে মাকে দেখে রাখবে, এইরকম মেয়ে হলেই ভালো। ওর তো বাইরের জগৎ আছেই। সে ভাবেই এতদিন চলেছে। সেদিন প্রিয়র বাবা যেন ওর চোখ খুলে দিলো। ও নিজেও মনেহয় হাঁপিয়ে গেছিলো ঔ জীবনে। এখন ঠিক রাস্তায় ফিরে এসে জীবনটা বেশ মজায় কাটছে। মনে হচ্ছে একেবারে কলেজ লাইফের প্রেম। প্রিয় বেশ রোমান্টিক মেয়ে। একেবারে অন্যরকম, কোনোরকম বাড়াবাড়ি নেই ওর মধ্যে, নেই কোন বাহুল্যতা। এতোদিন অবহেলা করেছে সেই জন্য বরং বারংবার আফসোস হয় তানভীরের। চারটা বছর নষ্ট করেছে মনেহয়। তবুও ভালো সবকিছু শেষ হওয়ার আগেই ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে! মনে মনে শশুর কে ধন্যবাদ জানায় তানভীর। গাড়িতে বসে ভাবতে ভাবতেই ফোন আসে প্রিয়র।
“এই কোথায় তুমি? আজ এখনো এলে না যে?”
“এই তো গাড়িতে আছি। চলে এসেছি প্রায়। কেন গো, আমাকে মিস করছিলে বুঝি?”
“তোমার মেয়ে খুজছে তোমাকে?”
“আর তুমি?”
“ঠিক আছে, রাখলাম এসো তাড়াতাড়ি। ”
লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিলো প্রিয়। আর ওদিকে তানভীর হাসছে মিটিমিটি।

“এই শোনোনা, ভাইয়া আসবে কাল। বাবা মা যেতে বলছিলো। যাবো?”
“হ্যা, অবশ্যই যাবে!এবার বাবা মাও তো এলেন অনেকদিন পর তো যাবে না? আমিও যাবো।”
“সত্যি? খুব মজা হবে।”
” এই ভাইয়া ভাবীর মধ্যে সব ঠিক আছে তো? নতুন বউ ফেলে এতদিন কেউ এভাবে বাহিরে থাকে?”
“সেই কতদিন আগে দেখা! তখন তো সব ঠিকই মনে হচ্ছিল। ”
“আচ্ছা শোনোনা, সামনে তো আমাদের ম্যারেজ ডে, এবার ভাবছিলাম সবাই মিলে দশদিনের একটা ট্যুর দিবো। কেমন হবে বলোতো?”
“খুব ভালো হবে? বিয়ের পর তো কোথাও যাওয়া হয়নি সেরকম। ভাইয়া ভাবীর ও এই চান্সে সেকেন্ড হানিমুন হয়ে যাবে।”
প্রিয় বলে।
“আচ্ছা, ভাইয়া আসুক। কয়েকদিন যাক, তারপর ভাইয়ার সাথে কথা বলে সব ফাইনাল করবো। এখন এসোতো কাছে?”
“কেন? কি করবে?”
“না আসলে কিভাবে বলবো?”
প্রিয় তানভীরের কাছে যেতেই তানভীর ওকে জরিয়ে ধরলো দু হাত দিয়ে-
“এখন বউটাকে আদর করবো তো।”
তানভীর ফিসফিস করে বললো।
“ছি! কি বলো? লজ্জা সরম নাই কিছু?”
“অনেক আছে? এই যে বাতি বন্ধ করলাম, আসো।”
তানভীর প্রিয়কে কাছে টানে আর প্রিয় ভীষন ভালোবাসায় তানভীরের বুকে মুখ লুকায়।

৩৩.

ফুয়াদের ফ্লাইট ল্যান্ড করলো সকাল দশটায়। সব প্রসেসিং শেষ করে এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে হতে বারোটা বেজে গেলো। ফুয়াদ ভেবেছিলো আজও সাঁচি ওকে নিতে আসবে। বের হয়ে দেখলো বাবা আর তানভীর এসেছে। বাবাকে সালাম করে লাগেজ গুলো গাড়িতে তুলে বসলো ফুয়াদ। পাশে বাবা বসেছে, তানভীর সামনে।
“ইস! কতদিন পর মনে হলো প্রান খুলে শ্বাস নিচ্ছি। ”
“হুম, নিজের দেশের থেকে শান্তি আর কোথাও নাই, ভাইয়া। আপনার কাজ কেমন কাটলো?”
“ভালো।”
কথা বার্তা বলতে বলতেই বাসায় চলে আসলো ওরা। বাড়িতে ঢুকে মাকে সালাম করে প্রিতিকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ আদর দিলো। অথচ তার চোখ খুজে বেরাচ্ছে কাউকে।
“কাকে খুঁজছো, ভাইয়া? ”
দুষ্টুমি করলো প্রিয়তা।
“ভাবি কে?”
“হু। কোথায় ও?”
“আজ তো ভাবি তোমার সব ফেবরিট আইটেম রান্না করেছে। গোসলে ঢুকেছিল। হয়েও গেছে মনেহয় এতোক্ষণে। তুমি যাও না ফ্রেশ হয়ে নাও। দুপুরে খাব একসাথে। ”
“হুম।”
নিজের রুমে ঢুকলো ফুয়াদ। সাঁচি আয়নায় দাঁড়িয়ে চুল আওরাচ্ছিলো। ফুয়াদকে দেখে থেমে গেল-
“ওহ!চলে এসেছেন? আমি ভাবলাম আরো লেট হবে মনে হয়?”
ফুয়াদ সাঁচিকে দেখছিলো অপলক। সাঁচি শুকিয়ে গেছে অনেক। চোখের নিচে কালি, চেহারা যেন উজ্জ্বলতা হারিয়েছে। আগের সেই হাসিখুশি সাঁচি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে!
“তোমার কি অসুখ করেছে? কই ফোনে তো কিছু বললে না?”
“নাতো! অসুখ করবে কেন? এই তো একদম ফিট আছি। ”
“তবে এতো শুকিয়ে গেছো কেন? চোখের নিচে কালি?”
“আরে লাষ্ট সেমিস্টার ছিলো তো! পড়ালেখার অনেক চাপ ছিলো।”
“সত্যি বলছো?”
“জ্বী, জনাব। এবার আপনি দয়া করে ফ্রেশ হয়ে নিন। খেয়ে দেয়ে একটু ঘুমাবেন তো নাকি? তা না হলে শরীর আবার খারাপ লাগবে।”
একটু শুকনো হাসি দিলো সাঁচি।
“আপনার কাপড় সব জায়গা মতো রাখা আছে। আপনি গোসল করুন আমি ততক্ষণে খাবার রেডি করি।”
ফুয়াদ সাঁচির দিকেই তাকিয়ে ছিলো এতোক্ষণ। সাঁচির অসস্তি হচ্ছিল। তাই তাড়াহুড়ো করে সামনে থেকে সরে এলো।

খাওয়া দাওয়া সেরে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে ফুয়াদ। কেমন একটা অসস্তি ফিল হচ্ছে? সাঁচিকে কেমন অচেনা অচেনা লাগছে! মেয়েটার মনে কি কিছু চলছে? কিছুক্ষণ পর সাঁচি আসলো। বিছানার এক কোনো শুয়ে পরলো। ফুয়াদ সাঁচির গায়ে হাতটা রাখতেই সাঁচি ধরমর করে উঠে বসলো-
“আপনি ঘুমাননি এখনো?”
“নাহ, ঘুম আসছে না! কি হয়েছে এভাবে চমকে উঠলে যে? তোমারিতো বর।”
“আমি ভেবেছি আপনি ঘুমিয়ে গেছেন?”
“ও, তাই তুমি এতে লেট করে আসলে? কি হয়েছে সাঁচি? কোনো সমস্যা?”
“নাহ,কি হবে? ঘুমিয়ে পরুন প্লিজ।”
সাঁচি উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে পরলো। ফুয়াদও কিছুটা মন খারাপ ভাব নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। ঘুম আসছে না। এতোদিন পর সাঁচি ওকে দেখলো অথচ ওর মধ্যে কোনো খুশি বা আনন্দ নেই। একটু ঠিক মতো কথাও বললো না! ওর কি সাঁচিকে কাছে টানা উচিত? খুব ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটাকে একটু আদর করতে। এতোগুলা দিন ওর থেকে দূরে, ভীষণ মিস করেছে ফুয়াদ সাঁচিকে। অনেকটা দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে মাঝের বালিশটা সরিয়ে নিজের দূরত্ব কমাতে পারলো না ফুয়াদ।

ঠিক তার দুদিন পর সাঁচি ফুয়াদকে বললো-
” আজ কি আপনি বিজি আছেন?”
“কেন বলতো?” অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল ফুয়াদ।
” বিকেলে একটু সময় দিতে হব।”
ফুয়াদ হাতে ঘড়ি পরতে পরতে থেমে গেলো-
“কাকে? তোমাকে?”
“নাহ! কেউ একজন আপনার সাথে দেখা করতে চায়। আজ বিকেলে, রেড চিলিস এ চলে আসবেন।”
“কে? কে দেখা করবে?”
” আগে আসুন তো? তারপর দেখবেন?”
ফুয়াদ ঘার হেলিয়ে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর সাঁচি শাশুড়ী মাকে জরুরি কাজের কথা বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো। আজ সারাদিন ঘুরবে ও একা একা। আজ যে সাঁচির মনটা ভীষন খারাপ! সাহস করে কত্তো বড় একটা কাজ করে ফেললো সাঁচি। ফুয়াদের জন্য খুব জরুরী ছিলো কাজটা। রিকশায় উঠে ভীষন কান্না পেলো সাঁচির। চোখ যেন আজ কোনো বাঁধা মানছে না….ঝর্নাধারার মতো জল গড়িয়ে পরছে চোখ থেকে। বিয়ের পর থেকে নিজেকে কতটা ছোট করেছে ফুয়াদের কাছে! তাই বুঝি আজও ফুয়াদ ওকে ওর প্রাপ্য সন্মানটুকু দিলো না। এই যে বিদেশ থেকে ঘুরে এলো, কত কিছু নিয়ে এলো ওর জন্য। ওতো এসব চায়নি ফুয়াদের কাছে। এর চাইতে যদি একবার বলতো, তোমায় অনেক মিস করেছি সাঁচি, কিছু ভালো লাগতো না, শুধু তোমায় মনে পড়তো। তাহলেই খুশি হয়ে যেত সাঁচি। কিন্তু বললো না, কিছুই বললো না। ফুয়াদ কি বোঝে না! সম্পর্কে মনের কথা প্রকাশ করাটা কতটা জরুরী? সবকিছু বুঝে নিতে হবে বললে কি দায় মিটে যায়? যায় না? তাই সাঁচি আজ চলে যাচ্ছে! যেদিন ফুয়াদ ওকে ওর প্রাপ্য সন্মান দিয়ে ওকে নিয়ে আসবে, সেদিনই ও ফেরত আসবে! তার আগে নয়। দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদেই যাচ্ছে সাঁচি। কাঁদুক মেয়েটা। কেঁদে নিজেকে হালকা করুক। হয়তো এই কান্নাই ওর জীবনে ভালো কিছু বয়ে আনবে?!

রিসিপশনে জিজ্ঞেস করতেই কোনার দিকের একটা টেবিল দেখিয়ে দিলো ফুয়াদকে। ফুয়াদ দূর থেকে দেখলো ওখানে একটা মেয়ে বসে আছে। গোলগাল,ফর্সা সুন্দর মতো মুখশ্রী। চেনা চেনা লাগছিলো, বাট মেমোরি ঠিকঠাক ক্যাঁচ করতে পারছিলো না। কাছে যেতেই মুখ আয়বরটা স্পষ্ট হলো। ফুয়াদ যেন জায়গার ফ্রিজ হয়ে গেলো। রেহনুমা! কিভাবে সম্ভব! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না! রেহনুমা এখানে কেন আসবে? কিভাবে? তাহলে কি সাঁচি ওর সাথেই মিট করার কথা বলছিলো? সাঁচি কিভাবে ওকে খুজে পেলো? ফুয়াদের হাঁটার গতি স্লো হয়ে গেছে। রেহনুমা মনেহয় ততক্ষণে ওকে দেখতে পেয়েছে! ওর দিকে হাতের ইশারা করলো। ফুয়াদ ধীরে ধীরে ওর কাছে যেয়ে সামনাসামনি চেয়ার টেনে বসলো। রেহনুমা হাসলো একটু ওকে দেখে-
“তুমি তো দেখছি আগের মতোই সুন্দর আর হ্যান্ডসাম আছো? ওহ, সরি! তোমাকে তুমি বলে ফেললাম। ”
” ইটস ওকে। তুমি!তুমি কেমন আছো রেহনুমা? আর এখানে কিভাবে?”
“কেন তোমার বউ বলেনি বুঝি? আজ তো আমার সাথে তোমার এই মিটিং ওই ঠিক করেছে?”
“বলেছিল, বাট তোমার সাথে এটা বলেনি?”
“বেশ ভালোই। তা কেমন আছো? এতো সাকসেসফুল হয়ে কেমন লাগছে?”
“তোমার খবর বলো। তুমি কি ভালো আছো? তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা? রেহনুমা, তোমায় আমি অনেক খুঁজেছিলাম।”
“কেন খুঁজেছিলে? ”
হাসলো রেহনুমা।
“সরি বলার জন্য। আমার সেদিন মাথা একদম ঠিক ছিলো না। তুমি ছিলে না, জীবনে তখন এতোকিছু হচ্ছিল যে আমি আমার মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনি। তারপর যখন আমার হুশ আসে আমি বুঝতে পারি, কতোবড় ভুল করে ফেলেছি আমি। তোমার মোবাইলে যে কত হাজার বার ফোন করেছি আমি নিজেই জানি না। বাট তোমার ফোন বন্ধ পেয়েছি। ”
একদমে কথাগুলো বলে থামে ফুয়াদ। রেহনুমার ঠোঁটে মুচকি হাসি।
“আমি তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি, ফুয়াদ। সেদিন ই ক্ষমা করে দিয়েছি যেদিন আমি আনিসকে পেয়েছি।”
“আনিস?”
“আমার হাজবেন্ড”
“তোমার হাজবেন্ড? ওনার নাম না….”
“আমার সেকেন্ড হাজবেন্ড। তোমায় সব বলবো বলেই তো এলাম এখানে! সেদিন যখন তোমার কাছে ফোন দিলাম,আমি পুরোপুরি বিদ্ধস্ত ছিলাম। বাবা বিয়ে দিলেন, আমি তোমাকে ভুলে সব ভুলে মেনে নিয়ে সংসার করতে চাইলাম। কিন্তু ঐ যে বলে না, অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায়- কথাটা যেন আমার জন্যই তৈরি। আমার স্বামীটা আমাকে ভীষন ব্রুটালি মারতো মাঝে মাঝে জানো? মদ খাওয়ার অভ্যাস ছিলো, মেয়ে মানুষের নেশা ছিলো মোটামুটি সব ধরনের খারাপ অভ্যাস তার মধ্যে ছিলো। তো সে যেদিন যেদিন মদ খেতো আমায় মারতো ভীষন আর আর….ফিজিক্যাল টর্চার তো ছিলোই। তখন আমার শুধু মনে হতো, এরচেয়ে তো তোমাকে বিয়ে করলেই ভালো হতো। গাছ তলায় সংসার করতাম, তবুও এই জীবন থেকে ভালো হতো! একবার ভাবলাম, তুমি নিশ্চয়ই আমাকে অভিশাপ দিয়েছো তাই আমার এই হাল। শুধু মনে হতো তোমার কাছে ফেরত যাই। একবছরে এতোটাই অসহ্য হয়ে গেছিলাম যে পালিয়ে যেতে মন চাইতো। আমার একটা ভাই হলো, বাবা আগে যাও বা খোঁজ নিতো তারপর যেন আকাশের চাঁদ, এতোটাই দূরে সরে গেলো। না পারতে তোমায় ফোন দিলাম, শেষ আশ্রয় মনে করে। আমার বিশ্বাস ছিলো, তুমি আমায় ফিরিয়ে দেবে না। তুমি যখন সেসব কথা বলছিলে তখন মনে হলো, দুনিয়ায় বেঁচে থেকে আর কি হবে? কেউ তো আমাকে চায় না? আমি না থাকলে কারো কিছু আসে যাবে না। জীবনের মায়া না করে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলাম। মরতে চেয়েছিলাম গাড়ির নিচে পরে। সেই সব দিন! উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম, তখন আনিস আমায় বাঁচায়, আশ্রয় দেয়? ও হয়তো আমাকে দেখে কিছু বুঝতে পেরেছিলো, অনেকক্ষণ নাকি আমায় ফলো করেছিলো। ও এতিম কিনা…তাই হয়তো আমায় বুঝেছিলো। মোটামোটি ধরনের একটা চাকরি করতো আনিস। আগে পিছে কেউ নাই। আমাকে ওর বাসায় নিয়ে গেলো। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত আমাকে অনেক যত্ন করে সুস্থ করেছিলো। তারপর একদিন আমি আমার জীবনের সব কথা তাকে বললাম। সব শুনে সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলো। সাথে এটাও বললো, সব বিয়ের সম্পর্কে ভালোবাসা থাকতেই হবে এমন কোন কথা নেই। আমাদের টা না হয় এভাবেই শুরু হোক, মায়া থাক, শ্রদ্ধা থাক, একসাথে থাকলে ভালোবাসা আপনাতেই হবে।
ওর কথাগুলো ভীষন ভালো লেগেছিলো আমার। আমি রাজি হয়ে গেলাম। আগের স্বামীকে ডিভোর্স দিলাম,তারপর শুরু করলাম নতুন জীবন। আলহামদুলিল্লাহ, আজ আমি অনেক সুখী। অনেক পরে আমি বুঝেছিলাম, তুমি আমার জীবনে পারফেক্ট মানুষ ছিলে না… আমি তোমায় ত্যাগ করে কোনো ভুল ডিসিশান নেইনি। আমার জীবনের এঞ্জেল আনিস ছিলো তাই ও যে কোন ভাবেই হোক আমার জীবনে এসেছে… একটু দেরিতে এসেছে এই যা। তবে আমি আফসোস করি না…এখন এতো সুখে আছি… আমার সব আফসোস দূর হয়ে গেছে।”
ফুয়াদ চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে…নিজেকে কেমন যেন ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে।
” কি হলো, এতো চুপ যে? কিছু বলো? তুমি কি জানো ফুয়াদ, তুমি অনেক লাকি?”
প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় ফুয়াদ।
” কি? বুঝলে নাতো? এই যে তোমার জীবনের নারী চরিত্র গুলে সবাই তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসে, জানো? তোমার বউ, সাঁচি তোমাকে কি পরিমান ভালো যে বাসে তুৃমি ধারনাও করতে পারবে না? এক সময় যে রকম টা আমি তোমায় বাসতাম। তা না হলে কেউ কি স্বামীর প্রাক্তনকে খুজে বে করে এতো কষ্ট করো। তারপর তাকে স্বামীর সাথে মিট করায়? তুমি হলে করতে? বউয়ের প্রাক্তনের সাথে এরকম করতে পারতে? জানি, পারতে না! তাই বলছি, মেয়েটাকে ভুলেও কষ্ট দিয়ো না ফুয়াদ। তাহলে সত্যি সত্যি তোমার পাপ লাগবে কিন্তু? ”
আজ যেনো ফুয়াদের শুনে যাওয়ার দিন! কিছুই বলতে পারে না ফুয়াদ। এইজন্যই বুঝি সাঁচি এতো চুপচাপ ছিলো এই কয়দিন! রেহনুমার কষ্টের ভার থেকে ওকে মুক্তি দিতে চাইছিলো। ইশ! কত না জানি কত কষ্ট সহ্য করেছে মেয়েটা? আচমকা সাচির জন্য বুকের ভিতর একরাশ ভালোবাসা ফোয়ারার মতো ছুটলো যেন।রেহনুমার ডাকে ঘোর ভাঙলো –
” আমাকে একটু উঠতে হেল্প করবে?”
ফুয়াদ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে উঠে দাঁড়িয়ে রেহনুমার হাতটা ধরলো। রেহনুমা লজ্জিত ভঙ্গিতে অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ালো। তখন ফুয়াদ টের পেলো রেহনুমা প্রেগনেন্ট।
” শেষের দিকে তো তাই একটু বেশিই কষ্ট হচ্ছে। ”
রেহনুমা লজ্জা পায়। ফুয়াদ খেয়াল করলো একটা মাতৃত্ব সুলভ সৌন্দর্য রেহনুমার চোখেমুখে খেলা করছে।
“তোমায় পৌছে দেবো? যেতে কষ্ট হবে তো?”
” আনিস এসেছে তো, কোনো কষ্ট হবে না। ও আমাকে একমুহূর্ত একা ছাড়ে না জানো? আমি দোয়া করবো সাঁচিও যেন খুব শিগগিরই তোমাকেও এই সুসংবাদ দেয়। বাবা মা হওয়ার ব্যাপারটা একদম অন্যরকম ফিলিংস।”
ফুয়াদ এবার লজ্জা পেলো একটু। এতোকিছু তো কখনও ও ভাবেই নি! সাঁচি নিশ্চয়ই ভেবেছে? সব মেয়েদেরই তো মা হওয়ার একটা স্বপ্ন থাকে!
রেহনুমাকে এগিয়ে দিয়ে ফুয়াদ গাড়ি নিয়ে যখন বাসার দিকে ছুটছিলো তখন ওর শুধু তীব্রভাবে একবার সাঁচিকে কাছে পেতে ইচ্ছা হচ্ছিল……

চলবে—-
©‌‌‌‌Farhana_Yesmin

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ