Monday, October 6, 2025







“আকাশী”পর্ব ২৮.

“আকাশী”পর্ব ২৮.

প্রতিবেশীরা আর আগের মতো নেই। যে চলে গেছে, তার কথা মনে আর আনে না। খামখেয়ালি হয়ে যাওয়ায় তাদের সাথে অতিরিক্ত সময় কাটানো যায় না। সত্য এই, সে তাদের নিতান্তই পর। আগে বয়স কম থাকায় শরীরে অতিরিক্ত চঞ্চল একটা ভাব ছিল। বয়স একটু বাড়ায়, জীবনে নির্মম কিছু পরিস্থিতির শিকার হওয়ায় তা অনেকগুণে কমেছে। এর দরুনই প্রতিবেশীরা অনেকদিন পর দেখলে আর বাসায় যেতে অনুরোধ করে না। কেবল বাহির থেকে বাহিরেই কুশলাদি বিনিময় হয়। এদের মাঝের অনেকেই তার ওপর গর্ববোধ করে। সে এই বাড়ির প্রথম মেয়ে, যে কিনা অনার্সের দুটো বছরের গণ্ডি পার করেছে। আর অনেকেই তাকে আড়চোখে দেখে। মেয়েটার বয়স একুশ পেরিয়ে যাচ্ছে, অথচ বিয়ে দিচ্ছে না। আপাতত এই গ্রামে তার বয়সী অবিবাহিতা নেই। তাই কথাগুলোর গুঞ্জন অনেকটাই প্রবল।
আকাশী যখন শহর থেকে ফেরে, ঘরের বাইরে থাকা প্রতিবেশীরা অবাক চোখে দেখে। আজ পর্যন্ত তারা দেখে এসেছে, মেয়েরা বিয়ের পরই অত্যধিক সুন্দর হয়। কিন্তু আকাশীর চেহারায় অন্যরকম উজ্জ্বলতা আছে, যা অনেক মেয়েরই বিয়ের আগে কিংবা পরে দেখা যায় না। তার মুখে বিরাজ করা প্রশান্তি দেখে অনেকের চোখ ছোট হয়। অনেকের বড়। যাদের বড় হয়, তারা সম্ভবত ভাবে, সে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছে। সবধরনের চেহারা দেখা শেষে বাড়িতে এসে সে ঢুকে। আশ্চর্য রকমের নিস্তব্ধতা এখানে বিরাজ করছে। মানুষের সংখ্যার খেয়াল মাথায় না থাকলে এই শূন্যতা সম্ভবত অনুভূত হতো না। মন যেহেতু আগে থেকেই জানে, এখানে কেবল দুটো লোক আছে, তাই এতোবড় বাসাকে শূন্য লাগছে। সবাই পৃথিবীতে এসেছে চলে যাওয়ার জন্যই। আগে কতবড় একটা পরিবার ছিল। ছোট থাকতেই বড় আপার বিয়ে হয়ে যায়। এখন তার এক ছেলে এক মেয়েও আছে। এরপর মেজ আপা চলে যায়। সে এক ছেলের জননী। বিভার সাথে অনেকদিন খুনসুটি চলেছিল। এককালে সেও চলে গিয়েছে স্বামীর সংসার কাঁধে নিতে। বলতে গেলে তার বৈবাহিক জীবন বাকি আপাদের তুলনায় ভালোই আছে। শাশুড়ি প্রচলিত কঠিন চরিত্রের নয়। দেখলেই মা মা একটি ভাব উদয় হয়। ইনি থাকেন পালা করে একেক বউয়ের সাথে। চার বউয়ের চতুর্থতম বউ সে। আদর-ঈর্ষার মাঝামাঝি স্থানে নিজেকে রেখে সে সংসার চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাকি আপাদের ছয়মাস অন্তরেই বাপের বাড়ি আসার সৌভাগ্য জুটে। তারা আপন হয়েও একপ্রকার দূরের মানুষ। উপলক্ষ ছাড়া তাদের দেখা পাওয়া যায় না। সেই কবে নানুর মৃত্যুতে সে সবাইকে কাঁদতে দেখেছিল। সপ্তাহ খানেক পর যে যার-যার বর্তমান আলয়ে চলে যায়। অবশ্য আকাশী দশদিন মতো ছিল মাকে দেখার জন্য। পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তার একটা সমস্যা, সে কারো দুঃখের সময়ে নিজেকে তার স্থলে ভেবে দেখে। মায়ের স্থলে সেদিন নিজেকে একবার অজান্তে ভেবে ফেলায় ভয়ানক একটা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কথা ভেবে ক্রন্দনরতা মাকে জড়িয়ে ফেলেছিল। একমাত্র তিনি ব্যতীত আর কেই বা তার জীবনে অবশিষ্ট রয়ে গেছে?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

সময় পরিবর্তিত হতেও সময় লাগে না। বছর দেড়েক আগে সে ভয়াবহ একটা পরিস্থিতির মোকাবেলা করছিল। একদিকে অপূর্ব ভাইকে দেওয়া চিঠি ফেরত পাওয়ার বেদনা, অপরদিকে নানুর শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ার চিন্তা সবকিছুই মিশে একাকার হয়ে তার মনের ওপর ঝড় তুলেছিল। এই সূত্রে সালমার কথাও মনে পড়ে যায়। জীবনে কঠিন কিছু শিক্ষা না পেলে নয়। শিক্ষা পেলেই ভুলের সংখ্যা কমে। সে শিক্ষা অবশ্য পেয়েছে। সেরাত নানু ছটফট করছিল। বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় পুরোপুরিই সোজা হয়ে গিয়েছিলেন। চোখগুলোও বন্ধ ছিল। কেবল তাঁর কম্পিত ঠোঁটজোড়া কিছুক্ষণ পর পর ফাঁকা হচ্ছিল। মায়ের আদেশে তড়িঘড়ি করে সে একগ্লাস পানি নিয়ে এসে নানুকে চামচে করে বারেবারে খাওয়াতে থাকে। মা একদিকে কাঁপছিলেন আর তার চোখে পানি এসেছিল। সে ওদিকে না থাকিয়ে নানুকে পানি খাওয়াতে থাকে। ভয়ানক এই পরিস্থিতি যথাশীঘ্র কেটে যাওয়ার কথা সে ভাবছিল। এমন সময় মা বারবার মুখে আওড়াতে থাকেন, ‘মা লা ইলাহা পড়ুন মা।’ বলতে বলতে তিনি ‘লা ইলাহা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ বলে মুখে ফেনা তুলতে লাগলেন। সে তাকিয়ে দেখে নানুর ঠোঁটও ওই বুলি অনুসারে নড়ছে। মাঝে মাঝে একদম নড়ছেই না। একসময় মা তকে মামাকে ফোন করতে বললেন। তার নিজের মোবাইলে ব্যালেন্স ছিল না। অনেকক্ষণ পর মায়ের মোবাইল খুঁজে পেয়ে সে মামাকে চলে আসতে বলে তড়িঘড়ি করে আবার নানুর কাছে চলে আসে। ততক্ষণে মা একটু জিরিয়েছিলেন। তার আগমনও তিনি টের পাননি। যখন পেলেন, তখন জিজ্ঞেস করলেন, মামাকে বলেছিস, মা আর নেই?
আকাশী হতভম্ব হয়ে মাথা নাড়াল। ভাবতেই অবাক লাগছে, সে যাওয়ার আগেই নানু শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। অথচ সে বুঝতেই পারেনি। জীবনে এই প্রথম সে কোনো মানুষকে স্বচক্ষে মারা যেতে দেখেছে। পরিস্থিতি তখন যদিও স্বাভাবিক ছিল না, পরবর্তী সময়ে এই ঘটনার কথা ভাবলে মনে পড়ে, সালমাকে সে জায়গায় আর দেখেনি। অন্তত নানুর মৃত্যুর আগে থেকে সে চোখে আর পড়েনি। নানু হয়তো তার আপন কেউ নয়, কিন্তু প্রতিটি মানুষের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, পীড়িত ব্যক্তির পাশে কিছুক্ষণ থাকা। মানবতা বোধ যার মাঝে নেই, তাকে নিয়ে আকাশীর মনে কোনো জায়গাও নেই। আজ ওই মেয়ের কথা ভাবলেই একরাশ আফসোস হয়, যে মেয়েটির সাথে এখন কোনো যোগাযোগও নেই, সে মেয়েটিকে কিনা একসময় মনের সকল কথা অকপটে বলেছিল।
আকাশী ভেতরে গিয়ে দেখে মা একটা সেলাই মেশিনের সামনে বসে কিছু ছোট ছোট কাপড় সেলাই করছেন। আকাশী পেছন থেকে সালাম করায় তিনি চমকে ফিরলেন। মাকে দেখে আকাশীর মনে মনে দারুণ খুশি হচ্ছে। এই এক বছরে মায়ের মুখের বিমর্ষতা একদম কমে গিয়েছে। তাঁর চেহারা আগে থেকে খানিকটা উজ্জ্বল হয়েছে। আর এই প্রথম তিনি আকাশীকে পা ছুঁতে দেখে তার মাথায় হাত রেখেছেন। মা উঠে দাঁড়িয়ে নম্রকণ্ঠে বললেন, ‘কেমন আছিস?’
‘মোটামুটি। আপনারা কেমন আছেন?’
‘আছি ভালো।’
‘এই মেশিনটা কোত্থেকে? নতুন লাগছে।’
‘বিভার জামাই বিদেশে যাওয়ার আগে কিনে দিয়ে গেল।’
‘বাহ্!’
‘আমার বিরক্তিকর সময়গুলো কেটে যায়।’
‘বিভা কোথায়?’
‘আছে তোদের পড়ার রুমে।’
আকাশী রুমে এসে টেবিলে নিঃশব্দে ব্যাগ রেখে দিয়ে ডাকল, ‘সেজ আপা..’
বিভা একটি উপন্যাস পড়ছিল। মুখ তুলে বলল, ‘আকাশী যে, কবে এলি?’
‘এইমাত্র।’ আকাশী রীতিমতোই তাকে জড়িয়ে ধরল।
আজ এমন কেন হচ্ছে জানা নেই। প্রতিবারই সে সবাইকে জড়িয়ে ধরে এসেছে। কিন্তু আজকের মতো স্নেহমাখা আলিঙ্গন সে কবে উপভোগ করেছিল ভুলেই গেছে।
সে বিভার উঁচু পেটে হাত রেখে বলল, ‘বাহ্! ভাগিনা বড় হয়েছে দেখি।’
‘ভাগিনা কেমনে বুঝলি?’
‘কেন যেন মন বলছে। তাছাড়া বড় আপা, মেজ আপার প্রথম সন্তান তো ছেলেই। ওদিক থেকেও আন্দাজ করা।’
‘তাহলে তোরও প্রথম সন্তান কি ছেলে হবে?’
আকাশী কেন যেন শিউরে উঠল। কখনও সে বিয়ের পরের অবস্থার কথা কল্পনা করেনি। নিজেকে বউ হিসেবে কখনও ভাবেনি। তাই মা হিসেবে ভাবার চিন্তা কখনও মাথায় উদয় হয়নি। মা হওয়ার কথা ভাবতেই সে সঙ্কোচ করে। এটাও সম্ভব, একদিন বিভার স্থলে সেও হবে? স্থল পরিবর্তনের খেয়াল মাথায় আসার আগেই চটপট সে প্রসঙ্গ পাল্টাল।
‘হ্যাঁরে, দুলাভাইয়ের বিদেশে থাকার প্রথমবারের মতো অভিজ্ঞতা কেমন হচ্ছে?’ প্রশ্নটা করে নিজেই অবাক হয়। আজ সে সত্যিই সমবয়সী বোনের মতো আচরণ করছে।
‘ভালোই। তবে আমাকে সাথে রাখতে পারলে নাকি তার আরও ভালো লাগত।’
আকাশী দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বিভাকে চেয়ে দেখে তাকে যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান দেখাচ্ছে। গর্ভবতী হওয়ায় তার বয়স যেন এই স্বাস্থ্যের নিচেই ঢাকা পড়েছে। সেই আগের মোটামুটি চিকন একুশ বছরের মেয়েটা বিভা এখন আর নয়। মাত্র বাইশ বছরের হয়ে তার শরীরে মহিলা টাইপ একটা ভাব এসেছে। বোনটার কপাল শুরুতে মন্দ লেগেছিল। এখন অনেককিছুই ঠিক হয়ে গেছে। নানুর মৃত্যুর পর আকাশী চলে গেলে মা কিছুদিন একা ছিলেন। কিছু মাস পর দুলাভাইয়ের পাসপোর্ট তৈরি হয়ে যায়। শাশুড়ির পালা নেই, গর্ভধারণও করেছে বিধায় বিভা এখানে এসে থাকতে শুরু করে। একপ্রকার মায়ের একাকীত্বও গুছেছে। এতদিন পর নিস্তব্ধ হলেও এই পরিবেশে শান্তির এক আবহাওয়া বিরাজ করছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে উঠতে গেলে বিভা আচমকা একটা প্রশ্ন করে ফেলে। আকাশী থমকে না দাঁড়িয়ে পারল না।
‘বিয়ের কিছু চিন্তাভাবনা আছে? করবি? নাকি কারো সাথে সেটিং করে তাকেই পরে বিয়ে করে নিবি?’
জবাব দিতে সে বসে পড়ল, ধীরে ধীরে বলল, ‘আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন একট ভাবি না। তাই কারো জোরাজুরি কিংবা প্রয়োজন আমাকে ঘেরাও না করায় এ নিয়ে আমি ভাবি না। আর সেটিং এর বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। ওটা এমন একটা কাজ, যেটার প্রয়োজন হবে বলে লাগছে না। মানে আমার জীবনে এমন নির্দিষ্ট কেউ নেই, যার সাথে একসময় প্ল্যান করে বিয়ে করতে পারব।’
বিভা অবাক হলো না। ভেবেছিল সে একটা হিল্লে করেই ফেলেছে। সে এখনও কারো প্রতি ঝুঁকেনি, এটাও বেমানান নয়। তবে সে ভেবেছিল, আকাশীর মাঝে রসকষ আছে। অন্তত যতটা স্বাধীন হয়ে এতদিন সে ছিল, ততটা স্বাধীনতা নিয়েই বর সিলেক্ট করবে। এই মুহূর্তে আকাশীকে তার খুবই বিরক্তিকর লাগছে। আকাশীর স্থলে সে হলে কখন একটি ছেলেকে নিয়ে কাউকে না জানিয়ে দূর কোথাও স্যাটল হয়ে যেত। তবে ভালোই হলো, ভালোয় ভালোয় অনার্সটা কম্পলিট করে ফেললে কিছু একটা হতে পারবে।
আকাশী জানে, তার মন জানে, সে ওরকম স্যাটল হতে পারবে না। সে যাকে ভালোবাসে, তার সাথে অন্তত লাভ ম্যারিজ এক্সপেক্ট করা যায় না। দুইপক্ষে ভালোবাসা না থাকলে তো কখনও লাভ ম্যারিজ হয় না। কে জানে, অপূর্ব ভাইয়ের মনের অবস্থা। এখনও তাকে ভালোবাসেও কিনা।

রাতে কারো কাজ না থাকায় তাড়াতাড়িই খাওয়ার পর্ব চুকে যায়। পরপর বিভাও বেঘোর ঘুমে তলিয়ে পড়ে। এতো তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস আকাশীর নেই। অন্তত বারোটার আগে ঘুম আসেই না। মাও হয়তো ঘুমাননি। ভাবতেই মা তাদের রুমে আসেন। আকাশীকে কাপড় গুছাতে দেখে তিনি ইতস্তত করলেন। হয়তো তিনি অভ্যাসের বশেই কাপড় গুছাতে আসছিলেন, আর আকাশীর থাকার কথাও মাথায় ছিল না। তবু এভাবে এসে তো বিনা কারণে চলে যাওয়া যায় না! রোকসানা সৌজন্যের খাতিরেই চেয়ার টেনে বসলেন। তাও বেখাপ্পা লাগছে। অবশেষে তিনি অহেতুক হলেও একটা প্রসঙ্গ তুললেন।
‘তোর ডিপিএস-এ কত টাকা আছে?’
‘সতেরো হাজার মতো।’ মায়ের মুখের ভাব দেখে সে বুঝেছিল, এই কথা জানার মধ্যে তাঁর ইন্টারেস্ট নেই।
‘ও.., তা ফাইনাল ইয়ারের টাকা পাবি কোথায়?’
‘বেসরকারি হওয়ায় প্রতিবছর পনেরো হাজার লেগেই যায়। বাকি কয়েক হাজার বই আর টুকটাক কিনতে চলে গেছে। এরপর আলাহ্ জানেন। অবশ্য আপনার জন্য টিউশনির কিছু টাকা পাঠিয়ে যা বাঁচে, তা একটা অ্যাকাউন্ট খুলে জমা রাখছি। আশা করা যায়, ফাইনাল ইয়ারের জন্য পর্যাপ্ত টাকা জমা হয়ে যাবে।’
রোকসানা কিছুক্ষণ নীরব রইলেন। মেয়ের পড়াশোনার গতিবিধি শুনে মোটামুটি খারাপও লাগেনি। পড়ায় সম্ভবত সে অনেক মগ্ন। বিয়ে করবে কিনা কে জানে। কিন্তু বলে তো একবার দেখা যায়। হাজার হোক, নিজেরই রক্ত তার মাঝে। একসময় প্রাণপ্রিয় স্বামীর দু’চোখের আশা ছিল এই মেয়েটি। তার বিয়ের জন্য ভালো কিছু ভাবা তাঁর কাছে অত্যাবশ্যক কাজের মধ্যে একটি
তিনি সরাসরি এই প্রসঙ্গে এলেন,
‘বিয়ে কখন করবি?’
‘কিছু ভাবিনি। ভেবেছিলাম, ভালো একটা চাকরি করব। আমার স্বাধীনতা মেনে নেবে এমন পরিবারেই সম্ভব হলে যাব।’ তার মনে পড়ে যায়, অপূর্ব তার জন্য সবদিক দিয়ে পারফেক্ট ছিল। বিয়ে হলেও সে ইচ্ছে রেখেছিল একটি ছোট পরিবারে যেন হয়। অপূর্ব মা-বাবার একটিমাত্র সন্তান। তাছাড়া সেই মা-বাবাও সুগন্ধার বাসায় কম, ফরাইন কান্ট্রিতেই ছোটচাচুর কাজের তাগিদে বেশি থাকে। একদিক থেকে সে তার সাথে সুখের একটি জীবন শুরু করতে পারত। পরক্ষণে অপূর্বের কথা মাথা থেকে সরায়। এই লোকটির সাথে বিয়ের কথা মাথায় আসে না। তবে সে অন্য কাউকে বিয়েও করবে না। তার মন একপ্রকার উদাস হয়ে গেল। আর কিছু শোনার মোড নেই।
মা বলে যাচ্ছেন, ‘সালমাকে তো চিনিস। বড্ড শয়তান। আমরা তাকে একগুঁয়ে ভাবতাম। কিন্তু সে বড় পাকনা। তোর ছোটচাচির সুগন্ধার বাসায় মাঝে মাঝেই যায়। কিন্তু অপূর্বের সাথে তার জমে না। অপূর্ব নাকি কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। ভাবী ভেবেছিলেন, এই মেয়ে হয়তো অপূর্বকে সামলাতে পারবে। কিন্তু অপূর্ব তাকে পাত্তাই দেয় না। ভাবী জোরাজুরি করতে চেয়েছিলেন। হয়তো অপূর্ব তাকে বিয়ে করার জন্য রাজিও হয়ে যেত। কিন্তু ভাবী অচিরেই দেখলেন, অপূর্বের কাছে ব্যর্থ হয়ে সালমা জয়নালকে ধরেছে। তিনি একদম মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এইদিন তিনি এখানে এসেছেন। এই কয়দিন এসব কথাই শুনছি। আমাকে সবশেষে বললেন, বড়লোকের শহুরে মেয়ে যদি এমন গায়েপড়া হয়, তবে সেই থেকে আমাদের গ্রাম্য মেয়ে ঢের ভালো। ওর ব্যাপারটা যদিও বাহ্যিক, জয়নালের জন্যেই মেয়ে দেখা হচ্ছে। তুই কি বিয়ে করবি?’
আকাশীর তৎক্ষণাৎ মাথায় আসেনি, মা তাদের দু’জনের একজনকে বিয়ে করার কথা বলছিলেন। সম্ভবত জয়কেই। জয়ভাই তাকে কত পছন্দই না করেন। হয়তো তার কথাই ছোটচাচি মাকে বলেছেন। সে এতক্ষণ অন্যমনস্ক থাকায় স্বাভাবিকভাবেই বলল, ‘কাকে?’
‘অপূর্বকে।’
আকাশী চমকে ফিরে তাকাল।
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ