#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা
৮.
রাস্তায় চলতে চলতেই ইশার আজান পড়ে গেল। মেঘালয়ার মনে অদ্ভুত কিছু চলছে। যা সে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। চারদিকের এই চলমান আধো-অন্ধকার রাতের পরিবেশ মনে দোলা দেয় ওর।
বাজারের মাঝ দিয়ে অতিক্রম করার সময়, আকষ্মিক মেঘালয়া চিৎকার করে ওঠে,
‘থামুন, থামুন ইরাজ ভাই। থামুন!’
ইরাজ বিরক্ত হয়ে তড়িঘড়ি বাইকের ব্রেক কষে ধরল। মেঘালয়া নেমে দাঁড়ায়। ইরাজ কপাল কুঞ্চিত করে তাকাল, ‘কি সমস্যা তোর?’
এবার সংকোচে পড়ে যায় মেঘালয়া। উত্তেজনায় ইরাজকে থামিয়েছে তো। এবার? দ্বিধা-সংকোচ কাটিয়ে হাতের বামদিকে আঙুল দ্বারা ইশারা করল। ইরাজ তাকায় সেদিকে। মুখ-চোখ জড়িয়ে চেয়ে রইল। সামনে ফুসকার স্টল। ফিরে তাকাল মেঘালয়ার দিকে। মেঘালয়া মাথাটা নত করে নিলো। আবার চোখ উঠিয়ে ইরাজের দিকে তাকিয়ে দ্রুত বলল,
‘ফুসকা খাব।’
‘তো খা গিয়ে। নিষেধ কে করেছে?’
‘আর আপনি?’
‘তোর আর আমার রুচিবোধ গুলিয়ে ফেলছিস নাকি? ওসব থার্ডক্লাস, ফালতু জিনিস আমার পোষায় না।’
মেঘালয়া এবার ক্ষেপে ওঠে, ‘ফুসকাকে নিয়ে আর একটাও বাজে কথা বলবেন না। আপনার রুচিতে সমস্যা আছে। নয়ত ফুসকা অপছন্দ হতো না। আপনার মতো লোকের ভালো কিছু ভালো নাই লাগতে পারে। তাই বলে, সে জিনিস খারাপ না। আর এসব আপনার পোষাবে কেন, আপনার তো পোষায়— ঢকঢক করে যা গিললে টাল হয়ে পড়ে থাকা যায়।’
ইরাজ ভ্রু উঁচিয়ে তাকাল। বলল, ‘আমার হাতে লাস্ট থাপ্পড় কবে খেয়েছিস!’
মেঘালয়ার মনে পড়ে, ছোটবেলায় বহুত থাপ্পড় খেয়েছে নিজের উল্টো-পাল্টা কাজ কর্মের জন্য। মুখ শক্ত করে বলল, ‘টাকা দিন। আমি নিজেই গিয়ে খেয়ে আসছি।’
ইরাজ বলল, ‘খাবি তুই, টাকা আমি কেন দেব, আজব! আর খেয়ে কোথায় আসছিস? তোর মনে হয়, আমি তোর খাওয়া শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করব?’
এবার মেঘালয়া খানিকটা দমে যায়, ভেতরে অদ্ভুত এক অভিমান চেপে গেল। সেই অভিমান নিয়েই বলল,
‘তো নিতে এসেছেন কেন?’
‘দায়িত্ববোধ।’
মেঘালয়া প্রশ্ন করে, ‘শুধুই দায়িতববোধ?’
‘হু। তোর বাপের তুলে দেওয়া আমার ঘাঁড়ে শুধুই এক দায়িত্ব আজ তুই।’
মেঘালয়া হুট করে প্রশ্ন করে ওঠে, ‘আজ। আর আগে কি ছিলাম, ইরাজ ভাই।’
ইরাজ সামনের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে। সে ভুলেও মেঘালয়ার দিকে তাকায় না সচরাচর। এখনও ওইসামনের দিকে তাকিয়েই, গম্ভীর ভারী আওয়াজে বলল,
‘দু সেকেন্ডের মধ্যে বাইকে উঠবি, নয়ত তোকে ফেলে রেখে চলে যাওয়া অসম্ভব না আমার জন্য, তুই জানিস।’
মেঘালয়া দীর্ঘ এক প্রলম্বিত শ্বাস টেনে নিলো। ইরাজ ওর কাছে দিন-দিন আরও দুর্বোধ্য আর জটিল হয়ে উঠছে। যাকে ধরা যায় না, বোঝা যায় না, না ছোঁয়া যায়, আর না যায় বিশ্লেষণ করা।
_
বাড়িতে প্রবেশ করেই মেঘালয়া আগে আগে ভেতরে যায়। থমথমে মুখে সম্মুখে এসে দাঁড়াল আনতারা খানম। ভারী মুখটা দেখে মেঘালয়ার বুকটা কিঞ্চিত কেঁপে ওঠে। তখন পেছনে এসে দাঁড়াল ইরাজ। মেঘালয়াকে উদ্দেশ্য করে আনতারা খানম বেজায় অসন্তুষ্ট চিত্তে কঠিন স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘তা কোথায় গিয়েছিলে আবার কার সাথে? আমার ছেলেকে তোমার বাবা রক্ষাকর্তা নিযুক্ত করেছে নাকি? তুমি যা অকাম-কুকাম করবে, যখন ইচ্ছে, যার সাথে ইচ্ছে চলে যাবে, ইরাজ গিয়ে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে আনবে!’
মেঘালয়া মাথাটা সামান্য নত করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আনতারা খানম এবার চিৎকার উঠে উঠলেন,
‘কি হলো কথা বলছ না কেন? তুমি কোথায় কি করে আসবে, তার দায় আমার ছেলে এবং আমরা নেব? লজ্জা করল না তোমার বাবা আর তোমার? এরকম একটা বিষয় লুকিয়ে মেয়েকে আমার ছেলের ঘরে তুলে দিলো?’
মেঘালয়া মৃদূ প্রতিবাদের স্বরে বলল,
‘বাবাই ও ইরাজ ভাই জানত।’
‘বাহ। উত্তরও আছে দেখছি তোমার কাছে? আমার থেকে কেন লুকিয়েছে তোমার বাবা? বিয়ে হতে দিতাম না বলে? মেয়েকে বিদায় করতে এমন নিঁচু আয়োজন যার বাবার, তার মেয়ে এমন কিছু করবে, এটা অসম্ভব কিছুনা।’
এবার আর মেঘালয়ার সইল না। ভেতর পুড়ে উঠল এমন কথায়। তবুও শক্ত হয়ে, কঠিন চিত্তে দাঁড়িয়ে রইল। ইরাজও গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে পাশেই। আনতারা খানম আকষ্মিক দরজার দিকে আঙ্গুল ইশারা করে মেঘালয়ার উদ্দেশ্যে বললেন,
‘বেরিয়ে যাও। তুমি অন্তত ততদিন আমার সম্মুখে আসবে না, যতদিন না এর কোন বিহিত হয়। বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।’ শেষের কথাটুকু জোর দিয়ে বললেন।
মেঘালয়া ধীর পায়ে দরজার দিকে পা বাড়ায়। আচমকা খপ করে ওর হাত চেপে ধরল ইরাজ। আজ প্রথমবার ইরাজ ইচ্ছাকৃত মেঘালয়াকে স্পর্শ করল। মেঘালয়া ফিরে চায়না। হাত মোচড়া-মুচড়ি করে ছাড়া পেতে। ইরাজ আরও শক্ত করে চেপে ধরে একটানে সামনে এনে দাঁড় করালো। মেঘালয়া চোখ লাল হয়ে উঠেছে। চোখে পানি টলমল। তবে গড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে না মেয়েটা। ইরাজ হুংকার ছেড়ে আদেশ করে,
‘ওপরে যা।’
মেঘালয়া আগের মতোই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ইরাজ অপর হাত দ্বারা এবার ওর মুখটা উঁচিয়ে ধরল। চোখাচোখি হতেই এক ফোঁটা পানি চোখ ছাপিয়ে বেয়ে গড়িয়ে পড়ল, উত্তেজনায় লাল হয়ে উঠা মেঘালয়ার গাল বেঁয়ে। ইরাজ শীতল স্বরে ভারী আওয়াজে আবারও বলে ওঠে,
‘ওপরে যেতে বলেছি, মেঘ। আমি আমার স্টাইলে কিছু করলে তা খারাপ হবে তুই জানিস। যা বলছি কর।’
মেঘালয়া এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিড়ির দিকে চলে গেল। আর পেছনে ফিরে চায় না।
ইরাজ ঠোঁট গোল করে গাঢ় শ্বাস ফেলল। অতঃপর ভাবলেশহীন ভঙ্গিমায় বসার রুম অবধি হেঁটে যায়। আনতারা খানম চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছেন। ইরাজ হেঁটে গিয়ে ফ্রিজ খুলে একটা পানির পট বের করল। এসে সোফায় বসল। আনতারা খানম গম্ভীর পায়ে হেঁটে এসে দাঁড়ালেন ছেলের সম্মুখে। ইরাজ ঢক-ঢক করে পানি গিলছে। আনতারা খানম যথাসম্ভব শান্ত করে নিলেন নিজেকে। ইরাজের সঙ্গে বাঁকা কথা বলে লাভ নেই। ধপ করে বসলেন, ইরাজের সামনের সোফাটির ওপর। ইরাজ পানির খাওয়া শেষ করে ওয়াটার পট টি-টেবিলের ওপর রাখে।
‘বড়ো মায়া জেগেছে ওই অন্য ছেলের সাথে ভেগে যাওয়া বউয়ের জন্য!’ মায়ের কণ্ঠে অভিমান স্পষ্ট।
ইরাজ তা দেখেও দেখল না। অবাক হওয়ার ভান করে বলল, ‘আম্মা! আমার সাথে বিয়ে হওয়ার আগে ভেগেছিল, মেঘ। অর্থাৎ তখন ও আমার বউ ছিল না।’
আনতারা ছেলের দিকে তাকালেন, ‘তোর সবকিছু মজা লাগছে, রাজ?’
‘না।’
‘লজ্জা করেনি? ওই চরিত্রহীন মেয়েকে বিয়ে করতে, জেনে শুনে? তোর বাপ তো বন্ধুত্বে অন্ধ। আমি জানতাম আমার ছেলের আত্মমর্যাদাবোধ প্রবল।’
ইরাজ মায়ের দিকে তাকাল। শান্ত স্বরে বলল, ‘হেলাল আঙ্কেল খুব নার্ভাস হয়ে পড়েছিল।’
‘মেয়ের কুকর্ম ঢাকতে এরকম বহু নাটকে করে মানুষ।’
‘হুম, বুঝলাম।’ ইরাজের স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর। যেন কিছুই হয়নি।
‘ওই মেয়ে এ বাড়িতে থাকবেনা।’
‘নির্বিকার জবাব দেয় ইরাজ, ‘ ও আচ্ছা! কোথায় রাখতে চাইছ ওকে?’
‘জাহান্নামে।’ চিৎকার করে ওঠেন আনতারা খানম।
ইরাজ মুখ চেপে ধরল হাত দ্বারা।
‘আম্মা! তুমি মেঘাকে খুন করার পরিকল্পনা করছ নাকি?’ না মরলে তো কেউ জাহান্নামে যায় বলে জানা নেই আমার।’
ইরাজের এমন নির্লিপ্ত জবাব শুনে আনতারা খানম ক্রোধে ফেটে পড়েন যেন।
‘পারলে আমি তুই আর তোর বাপকে খুন করে ফেলতাম। লোকে আমাকে রাস্তায় ধরে অপমান করে? এই সুযোগটা তোরা দুজনে করে দিয়েছিস। এ বাড়িতে তোদের সামনে থাকতেও ঘৃনা হচ্ছে আমার।’
ইরাজ মাথা দুলায়, ‘হুমমম, বুঝলাম। তারপর?’
আনতারা খানম ইরাজের কাছে এর চেয়ে বেশি আশাও রাখেন না। তার ছেলে যে কত বড়ো ছন্নছাড়া তা তার অজানা নয়। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ চেয়ে রইলেন ইরাজের মুখের দিকে। ইরাজ ফোনে ব্যস্ত। খানিকটা শান্ত স্বরে ডাকলেন,
‘রাজ!’
ইরাজ একটু পর চোখ তুলে মায়ের দিকে চাইল। মাথাটা একবার উপর-নিচ দুলিয়ে বলল, ‘জি!’
তুই মেঘাকে ছেড়ে দে। ওই মেয়ে যতদিন এ বাড়িতে তোর পরিচয়ে থাকবে, শুদুই বদনামী আর সম্মানহানীর কারন হবে, এ বাড়ি, তোর বাবা, তোর। ওকে বিদায় কর জলদি।’
‘হেলাল আঙ্কেলের স্ট্রোক হয়ে যাবে।’
‘হেলাল ভাইজানের চিন্তা করছিস নাকি নিজের? কারন তুই যে নিজের বাপের চিন্তাও করিস না, তাও সকলের জানা।’
ইরাজ এড়িয়ে গেল কথাখানা। বুঝানোর মতো করে বলল, ‘আম্মা! তুমি এত রাগ করছ কেন জানো? কারন তোমাকে আগে জানানো হয় নি। নয়ত আমার আম্মা এত নিষ্ঠুর না। আর কোন আক্রোশ নেই তোমার মেঘ এর প্রতি।’
ইরাজের কথাটা খোশামদের মতো লাগে। নতুন লাগল ইরাজকে। এ ইরাজকে অপরিচিত লাগে কেমন জানি। কারন ইরাজ মাত্রাতিরিক্ত বেপরোয়া। অথচ আজ কেমন অদ্ভুত লাগছে ওর আচরণ। আনতারা খানম সন্দিগ্ধ দৃষ্টি মেলে তাকালেন ছেলের দিকে। বললেন,
‘রাজ! তুই মেঘালয়ার প্রতি দুর্বল! তুই রাখতে চাইছিস ওকে? লজ্জা করছে না তোর?’
‘অন্তত লজ্জা আমার নেই।’
বলেই উঠে দাঁড়াল। আনতারা খানম বলে ওঠেন, ‘প্রশ্ন এটা ছাড়াও আরও দুটো করেছি।’
ইরাজ হেঁটে দরজার দিকে অগ্রসর হতে হতে পেছন না ফিরেই জবাব দিলো, ‘হুম, শুনেছি।’
বলেই দরজা দিয়ে বের হয়ে বাইরে চলে গেল। আনতারা খানম চোখ-মুখ কুঞ্চিত করে, অতিষ্ঠ ভঙ্গিতে বসে রইলেন সোফায়।
_
মেঘালয়া ঘন্টাখানেক বালিশে মুখ গুঁজে পাগলের মতো কেঁদেছে। চিৎকার করে কেঁদেছে, তবে মুখ চেপে। যা গোঙানির মতো শুনতে লাগে। ঘন্টাখানেক পর উঠে বসল। কিছুক্ষন উদ্ভ্রান্তের মতো বসে থেকে, ওয়াশরুমে চলে যায়।চোখ-মুখ ফুলে উঠেছে। মুখ লাল, চোখের ভেতরের শিরা-উপশিরা রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে। চোখে-মুখে পানি দিলো। অতঃপর আস্তে করে হেঁটে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়াল। এই ছোট্ট জীবনে কয়েকদিনের বিক্ষিপ্ততা ওকে অনেক অভিজ্ঞ করে তুলেছে। আকাশের দিকে চেয়ে রইল উদাস চোখে।
রাত এগারোটার দিকে ইরাজ বাড়ি ফেরে আবার। ওকে দেখেও আনতারা খানম আর কোন কথা বললেন না। ইরাজও নিরব পায়ে নিজের রুমে এলো। হাতে থলের মতো কিছু একটা। সেটা রাখল সোফার পাশে। মেঘালয়াকে রুমে না দেখে গম্ভীর সুরে ডাকে,
‘মেঘ! মেঘ! রুমে আয়, দ্রুত!’
মেঘালয়ার আসতে ইচ্ছে করে না। কিছুই ভালো লাগছে না। ইরাজ আবার ডেকে ওঠে, এবার স্বরটা আরও ভারী শোনায়। না চাইতেও রুমে এসে দাড়ায় মেঘালয়া।
ইরাজ শার্টের বাটন খুলতে খুলতে বলল, ‘চোখে কি মৌমাছির চাক বসেছিল নাকি?’
মেঘালয়া উত্তর দেয় না। ইরাজ তাকাল ওর দিকে।
‘বোবায় ধরেছে নাকি তোকে?’ ধমকে উঠল ইরাজ।
মেঘালয়া কণ্ঠ বসে গেছে অতিরিক্ত কাঁদার ফলে। ওভাবেই বলল, ‘বিশেষ কোন কাজ আছে? কেন ডাকছেন?’
কঠিন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল ইরাজ। সোফার পাশে টেবিলে রাখা প্যাকেটের দিকে ইশারা করে বলল, ‘ওটা খোল।’
বলেই তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়, হাত-মুখ ধোঁয়ার উদ্দেশ্যে।
মেঘালয়ার কিছুক্ষন চুপচাপ দাড়িয়ে, তাকিয়ে রইল প্যাকেটটির দিকে। কৌতুহল জাগে, কি আছে ওটাতে?
সোফায় গিয়ে বসে প্যাকেটটি হাতে নিলো। খুলে ফেলল। অবাক হয়ে বাথরুমের দরজার দিকে তাকায়। প্যাকেটে অনেকটা ফুসকা। যা মেঘালয়ার পক্ষে খেয়ে শেষ করা হয়ত সম্ভব না। প্যাকেটটি হাতে নিয়ে বাথরুমের বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে রইল কেবল অদ্ভুত চোখে!
চলবে।