#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#তেজস্মিতা_মর্তুজা
৭.
সন্ধ্যার আকশে বাঁকা চাঁদের পাশে শুকতারা জ্বল জ্বল করছে। চারদিকটা বেশ নিরব প্রায়। মেঘালয়া পুরো শরীর ঘামছে। খুব অস্থির লাগছে। সামনে দাঁড়ানো ছেলে দুটো ওকে আপাদমস্তক পরখ করে দেখছে বারবার নির্লজ্জের মতো। ছেলেগুলোর মাঝে একজন বলে উঠল,
‘একা বইসা আছো ক্যান? কোথাও যাইবা নাকি?’
মেঘালয়া ঘাঁড় নাড়ল। ভেতরে ভয় কাজ করলেও, বাহ্যিকভাবে নিজেকে যথাসম্ভব দমন করে সামলে রেখেছে। ছেলে দুটো মিটিমিটি হাসছে। পাশে বসে থাকাগুলো নিজেদের মাঝেই কি আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত। এদিকেই তাকিয়ে মাঝে মধ্যে হেসে উঠছে। ছেলেটি আবারও জিজ্ঞেস করল,
‘কোথাও গেলে চলো, আমরা নিয়ে যাই। সহি-সালামতে পৌঁছায়া দিতাম।’
পেছন থেকে আচমকা হাস্যজ্জল কণ্ঠস্বর ভেসে আসল, ‘অথচ সে সহি-সালামত ফিরতে চায়না।’
ছেলেদুটোর মাঝে একজন বলে ওঠে, ‘তুই কে রে? যা এখান থেকে। আমাদের মামলা আমরা বুঝে নেব।’
ইরাজ আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দু’হাত ওপরে তুলে মাথা নত করে বলল, ‘সরি, সরি ভাইজান। তবে এটা মামলা চলছে? উমমম, দেখে তো আদালত মনে হচ্ছে না?’
অতঃপর হাত নিচে নামিয়ে, তীর্যক দৃষ্টি মেলে তাকাল মেঘালয়ার দিকে। ছেলে দুটো সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেঘালয়ার। ইরাজ বেঞ্চের পেছনের দিকটায় দাঁড়ানো। ও চাইলেও ওদের পার করে ইরাজের কাছে আসতে পারবে না। ইরাজ কঠিন স্বরে ধমকে উঠল, ‘ওঠ! উঠে পড় ওখান থেকে, নয়ত আজীবনের মতো পঙ্গু করে দেব।’
মেঘালয়া অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। ইরাজ এবার এগিয়ে গেল হাসিমুখে। ছেলেদুটোকে মৃদূ ধাক্কা দিয়ে, সরিয়ে মেঘালয়ার হাতটা চেপে ধরল। মেঘালয়া ইরাজকে অবলম্বন করে উঠে দাঁড়ায়। ইরাজ ওকে নিজের পাশে দাঁড় করাল। এসব এতক্ষনে পাশে বসে থাকা বখাটেগুলো দেখছিল। এবার উঠে এলো। এসেই পকেট থেকে মাঝারি এক ছুরি বের করল। ইরাজ দেখছে সবটা শান্ত চোখে। এসেই ছুরি নাচিয়ে ইরাজকে উদ্দেশ্য করে বলল,
কে রে তুই? মাইয়ারডার প্রতি দরদ দেখাইতাছস বড়ো?
ইরাজ হেসে উঠল। হাসিমুখেই বলল, ‘আমার বুকিংয়ে আছে রে। যা এডভান্স দিয়েছি, তা উসুল করে ছেড়ে দেব। তখন চান্স নিস না হয়। এখন যা।’
এরকম একটা বিশ্রী ইঙ্গিতের কথায়, মেঘালয়া মুখ বিকৃত করল। ইরাজ এতক্ষনেও হাতটা ধরেই দাঁড়িয়ে আছে। মনে হলো হাতটা ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে নিতে। কিন্ত কিসের এক জড়তায়, কেন জানি ছাড়তে ইচ্ছে করল না।
ইরাজের বলা কথায় পরে আসা ছেলেগুলোর মাঝে একজনের কেমন কণ্ঠটা পরিচিত ঠেকল। সে ফোনের ফ্লাশ করে ইরাজের মুখ বরাবর ধরল। ইরাজ চোখ বুঁজে, মুখ কুঁচকে বকে ওঠে, ‘শা লা, মুখ আলো দিচ্ছিস?’
ইরাজকে দেখে ছেলেটা থমকে গেল। দ্রুত বলে ওঠে, ‘ইরাজ ভাই!’
ইরাজ শান্ত নজরে তাকাল। খানিকটা এগিয়ে গেল। আচমকা ঠাস করে থাপ্পড় বসাল ছেলেটির গালে। ছিটকে পড়তে নেয় ছেলেটি। তবে সামলে নিলো নিজেকে।
_
ফিরে যাওয়া নিয়ে বিপত্তি বাঁধল। মেঘালয়া বাড়ি ফিরবে না। ইরাজ মুখ বেঁকিয়ে বলল,
‘তো তখনই বলতি, ওদের সাথে যাওয়ার ছিল। আমি আর ওদের ভাগিয়ে দিতাম না। ন্যাকা! বাল, যাবি কিনা বল। আমি বাড়ি ফিরব। তোর পেছনে ফালতু সময় নষ্ট করার ইচ্ছে নেই।’
মেঘালয়া অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাল ইরাজের দিকে। অসন্তুষ্ট চিত্তে বলল, ‘আমি বলেছি যাব ওদের সাথে?’
ইরাজ আর কথা বলল না। চুপচাপ ধীর পায়ে হেঁটে এসে মেঘালয়ার পাশে বসল। কিছুক্ষন কেউ কোন কথা বলল না। চারপাশে ঝিঝি পোকার ডাকে রাতের পরিবেশটা আজব রূপে সেজেছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ধীর-স্থির কম্পমান স্বরে মেঘালয়া প্রশ্ন করে,
‘আপনি ঘৃনা করেন আমায়?’
‘দেরী হচ্ছে, যাবি তো চল।’
‘আমি বাড়ি না গেলেও, আপনি ফিরে যাবেন?’
ইরাজ সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে, বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আর কতক্ষণ বসে থাকবি এখানে?’
‘আপনি সোজা জবাব দিতে পারেন না?’
‘আমি গোটাটাই বাঁকা, উত্তর সোজা হবে কোন দুঃখে?’
মেঘালয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অতঃপর আবার জিজ্ঞেস করল,
‘কি করে জানলেন আমি এখানে?’
‘মোল্লার দৌড় মসজিদ অবধি।’
মেঘালয়া তাকাল ইরাজের দিকে। ইরাজ পকেট থেকে সিগারেট বের করে তাতে আগুন জ্বালালো। নাক-মুখ ভরে ধোঁয়া ছাড়ল। মেঘালয়া বেশ কিছুটা সময় নিয়ে আড়ষ্টতার সাথে প্রশ্ন করে,
‘আপনি কেন ঘৃনা করেন আমায়?’
‘তাবিরের কাছে ফিরতে চাস?’
মেঘালয়া বিষ্মিত নয়নে চেয়ে রইল। কারন ইরাজের জানার কথা নয়, সে কার সঙ্গে পালিয়েছিল। তাবির চলে যাওয়ার পর ইরাজ সেখানে পৌঁছেছিল। বলল,
‘আপনি চেনেন ওকে?’
সিগারেটে বড়ো একটা টান দিয়ে ধোঁয়াটুকু গিলে নিয়ে উত্তর দিলো, ‘তাবিরের তোর সঙ্গে সম্পর্কে যাওয়া একটা চ্যালেঞ্জ ছিল।’
মেঘালয়া বিষ্মিত চোখ জোড়ায় এবার কৌতুহল ছেয়ে যায়। জিজ্ঞেস করল,
‘কিসের চ্যালেঞ্জ?’
_
মেঘালয়া ইরাজের বাবার বন্ধুর মেয়ে। সেই সুবাদে ছোটবেলা থেকেই পরিচয় ছিল দুজনের। তবে ইরাজ একটু ঘাঁড় ত্যাড়া আর বাজে স্বভাবের। তার মুখে সোজা বা মিষ্টি কথা বিরল। মেঘালয়াকে সর্বদা চোখে চোখে রেখেছে। সবকিছুতে হেলাল সাহেবের চেয়ে বেশি কড়া শাসনে রাখত ইরাজ। এমনকি স্কুলের পড়া শেষে, মেঘালয়াকে নিজের প্রাক্তন কলেজে ভর্তি করিয়েছিল। মেঘালয়ার যখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে। প্রায় দিনই ইরাজ যেত মেঘালয়ার কলেজে ওকে দেখতে।
একদিন যখন কলেজের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ একটা ছেলের দল এসে দাঁড়াল সামনে। তাতে ইরাজের কোন যায়-আসে না। সে দাঁড়িয়ে ফোনে ব্যস্ত। অথট হঠাৎ-ই চোখে পড়ল, একটি মেয়ে ওদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়, ছেলেগুলোর মাঝে একজন হাত চেপে ধরল। মেয়েটির মুখে চোখে সংকোচ। ইরাজ ভ্রু কুঁচকে দেখছে সবটা। ছেলেটি এবার জোর করে একটা কাগজের টুকরো ও ফুল ধরিয়ে দিলো। মেয়েটি তা ফেলে দেয়। আচমকা ওদের মাঝ থেকে একটা ছেলে সকলের সামনে মেয়েটিকে কষে থাপ্পড় লাগাল। কর্কশ স্বরে বলে ওঠে,
‘অতিরিক্ত সাহস দেখাতে নেই। সিনিয়রদের সামনে তো মোটেই না।’
ইরাজ এগিয়ে গিয়ে দ্বিগুন জোরে থাপ্পড় লাগায় ছেলেটির গালে। এবং সেই একই ভঙ্গিতে বলল,
‘অতিরিক্ত সাহস দেখাতে নেই। সিনিয়রদের সামনে তো মোটেই নয়।’
অতঃপর গালের দুপাশ চেপে ধরে জিজ্ঞেস করল, ‘তা সিনিয়র, নাম কি তোর?’
ছেলেটি চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে কেবল ইরাজের দিকে। ইরাজ আরও জোরে চেপে ধরল গালটা। ধমকে উঠল, ‘বল!’
ছেলেটি ওভাবেই জবাব দিলো, ‘তাবির।’
‘কোন ইয়ার?’
‘অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।’
‘তো সিনিয়র হলে, মেয়েদের এভাবে ট্রিট করবি?’
বলে গালটা ছেড়ে দিলো। তাবির দমল না যেন। বলে উঠল, ‘ভাই, আপনি কেন দাঁড়িয়ে থাকেন প্রায় দিন এখানে?’
ইরাজ ভ্রু উচিয়ে বলে, ‘তোকে জবাব দিতে বাধ্য নাকি রে আমি?’
‘আপনি তো প্রতিদিন ফার্স্ট ইয়ারের একটা মেয়ের জন্য আসেন এখানে।’
ইরাজ শান্ত দৃষ্টিতে তাকাল তাবিরের দিকে। বলল, ‘তোর মতো রাস্তাঘাটে থাপড়াচ্ছি নাকি তাকে?’
তাবির বলে, ‘ঠিক আছে, আমিও আর থাপড়াব না। এবার আপনার মতোই সুপুষের মতো প্রেম করব তার সাথে।’
ইরাজ সিংহর মতো গর্জন করে ওঠে। তাবিরের কলার চেপে ধরে বলল, ‘মেঘার দিকে তাকালে তোর চোখ দুটো
এ সি ড দিয়ে ঝলসে দেব। ওর ব্যাপারে কোন কথা বলবি তো জ্বিব টেনে ছিঁড়ে ফেলব।’ বিশ্রী ভাষায় বকে উঠল ইরাজ।
তাবির হেসে উঠল। বলল, ‘ভাই, মাইয়াই যদি দিওয়ানা হয়ে যায় আমার প্রেমে, তো?’
ইরাজ ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মতো ছটফটিয়ে এবার। ওর গলা চেপে ধরে অশ্রাব্য ভাষায় বকে ওঠে। দাঁতে দাঁত পিষে বলল, ‘মেঘা ওরকম মেয়ে নয়, বুঝেছিস তুই! ওর ধারে কাছে দেখলেও তোকে জীবন্ত পুঁতে রেখে দেব।’
কয়েকজন এসে ছাড়াল তাবিরকে ইরাজের থাবা থেকে। তাবির অনবরত কাশতে থাকে। ইরাজকে থামানো যায় না। তাবির কিছুক্ষন কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে ওভাবেই বলল,
‘বুঝলাম, আপনার মনে মেয়েটার জন্য বহুত মায়া। মেয়েটার আছে তো আবার এত মায়া আপনার প্রতি?’
জলন্ত ইরাজ যেন ধপ করে নিভে যায় এবার। শীতল নজরে তাকাল তাবিরের দিকে। তাবির ভ্রু নাচায়। ইরাজ ভাবল, আসলেই তো! মেঘালয়ার কাছে তো সে কোনদিন নিজের ভেতরে লুকায়িত নরম অনুভূতি প্রকাশ করেনি। আর মেঘালয়ার মাঝেও ইরাজের জন্য তেমন অনুরাগ পরিলক্ষিত হয় নি। তাবির তো ঠিকই বলেছে। তবুও ওর বিশ্বাস ছিল, মেঘালয়া কখনোই তাবিরকে গ্রহন করবে না।
এখানেই একটা ডিল অথবা চ্যালেঞ্জ তৈরী হয়ে গেল, তাবির মেঘালয়াকে নিজের প্রেমে মজিয়ে, পাগল করে ছাড়বে। এবং শেষ অবধি ইরাজ হেরে গেল। জিতে গেল, জেদি তাবির।
এ পর্যন্ত শুনে মেঘালয়া যেন প্রানহীন পাথর হয়ে গিয়েছে। প্রান স্পন্দনহীন জড়ো বস্তর ন্যায় বসে রইল বেঞ্চের ওপর। ইশার আজান পড়ছে চারদিকে। মেঘালয়া বেশ কিছুক্ষণ পর একবার ঘুরে তাকায় ইরাজের দিকে। ইরাজের দৃষ্টি আকাশের পানে। দ্বিধা-সংকোচে একাকার হয়ে প্রশ্ন করল,
‘আমায় নিয়ে পালিয়ে যাওয়াটাও চ্যালেঞ্জ ছিল?’
ইরাজ উত্তর দিলো না। তবে মেঘালয়া এতটাও অবুঝ নয়। নিজের প্রতি আজ নিজেরই বিবেক ঘৃনার বিষাক্ত বান ছুঁড়ছে। কত বোকা আর নির্বোধ মেঘালয়া! তাবিরের প্রতি তার যে অনুভূতিগুলো এই আবেগী বয়সে জন্মেছিল, তা শুধুই কারও অন্যায় জিদকে জিতিয়েছে। ভাবতেই, চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নিলো। নিজেকে ঘৃনা হচ্ছে, বিরক্ত লাগছে নিজের বোকামিগুলো মনে করে নিজেকে। ভাবল, সে নিজেই যখন সহ্য করতে পারছে না নিজেকে, তাহলে আব্বুর রাগটুকু তো ভালোবাসা। ওর একটা ভালো ভবিষ্যতের আশায় আব্বু কি না করেছে! অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে ভেতর চিরচির করে পুড়তে থাকে মেঘালয়ার। আপন মনেই নিঃশব্দে ডুকরে কেঁদে ওঠে, আব্বুর কথা মনে করে। মানুষটাকে কতখানি কষ্ট দিয়েছে, তার সবটুকু যেন আজ মেঘালয়ার বুকে ভারী পাথর রূপে চেপে বসেছে।
আচমকা কিছু একটা মনে পড়ায়, হুট করে ইরাজের দিকে চোখ ফিরিয়ে তাকাল।
‘আপনি কেন যেতেন রোজ আমার কলেজের সম্মুখে?’
ইরাজ উঠে দাঁড়াল। সোজা হাঁটতে হাঁটতে কঠিন স্বরে বলল,
‘গেলে আয়, নয়ত তোর ফালতু প্যানপ্যানানি শোনার মতো খারাপ দিন আসে নি আমার।’
মেঘালয়া ভেবে কূল হারায় যেন। এই মানুষটিকে বোঝা যায় না কেন! কিছু একটা ভেবে কেন জানি আনমনেই হেসে উঠল মুচকি। অতঃপর ইরাজের পেছনে এসে দাঁড়াল।
ইরাজ বাইক স্টার্ট করতে করতে, বিরক্তির স্বরে নাক-মুখ কুঁচকে বলল,
‘হাঁ করে মশা গিলছিস? ওঠ!’
‘পারলে আপনাকে গিলে ফেলতাম।’
মেঘালয়ার নিম্নস্বরে বলা কথাটাও ইরাজের কান অবধি পৌঁছায়। মেঘালয়ার দিকে ফিরে, ওর পা থেকে মাথা অবধি চোখ বুলিয়ে দেখল। অতঃপর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘নিজের এই ঝালকাঠির মতো বডিটা আয়নায় দেখিস একবার। আমার রুমের আয়না ঝকঝকে। সামনে দাঁড়ালেই দেখতে পাবি— তোর ওই চিরকুট মার্কা শরীরের
চড়ুই পাখির পেটে আমি আঁটব না।’
মেঘালয়া কপাল জড়িয়ে বলল, ‘ঝালকাঠি? ঝালকাঠির মতো শরীর আবার কি, ইরাজ ভাই?’
‘বোন আমার! তোর শরীর কাঠির মতো, অথচ তুই ঝাল। মিলিয়ে নে, ঝালকাঠি হবে।’
বাইকে উঠে বসল মেঘালয়া। বলল, ‘আমি আপনার সম্পর্কের বোন লাগি, ইরাজ ভাই?’
ইরাজ কিছুক্ষন পর জবাব দিলো, ‘কোন সম্পর্কের না, তুই ইরাজ ভাইয়ের বোন লাগিস।’
নিজের কথায় ফেঁসে যায় মেঘালয়া। অভ্যাস হয়ে গিয়েছে ‘ভাই’ ডাকতে ডাকতে। অভ্যাস পরিবর্তন করার ইচ্ছেও ছিল না। তবে আজ কেন জানি, ইরাজের মুখে বোন ডাকটা ভালো লাগে নি।
বাইক চলতে শুরু করলেই, ধাক্কায় মেঘালয়া চোখ খিঁচে ইরাজকে খামচে ধরল। ইরাজ তাৎক্ষনিক কিছু না বললেও, ভালো রাস্তা পেলে কর্কশ কণ্ঠে বলে ওঠে,
‘ছেড়ে বস আমাকে। এখন আর পড়ার চান্স নেই, থাকলেও পেছনে ধরার মতো কিছু আছে, তা ধরে বস।’
মেঘালয়ার জিদ হলো ভেতরে। একটু ইগোতেও লাগল। জিদ ধরে বলল,
‘ছাড়ব না। আপনি বাইকে তুলেছেন কেন? আর চালাচ্ছেন তো হাওয়াই জাহাজের মতো। আমার বাইকে চড়ে অভ্যাস নেই।’
‘কেন তোর আশীক কোনদিন ঘুরতে নিয়ে বের হয় নি তোকে?’
ইরাজের কথায় ঠাট্রা। মেঘালয়া চুপ করে গেল হঠাৎ-ই।
চলবে..