Monday, October 6, 2025







অমানিশায় সেই তুমিই পর্ব-২৮

#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা

২৮.

মেঘালয়াকে ওটিতে শিফ্ট করা হয়েছে বেলা ন’টার দিকে। শারমিন আরা নিজে এসেছিলেন না-দাবী দলিলে সিগনেচার নিতে। ইরাজকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে বারান্দায় বেঞ্চের ওপর বসানো হয়েছে। তখন থেকে জড় পদার্থের মতো পড়ে আছে। মেঘালয়াকে ওটিতে নেওয়ার সময় কেবল চেয়ে ছিল মেঘালয়ার বেডের নিচের র ক্তে লাল হয়ে ওঠা বেডশিটের দিকে। এ অবস্থায় ইরাজের কাছে এমন কিছু নিয়ে যাওয়া মোটেই সমাচীন মনে করলেন না শারমিন আরা। তাই গেলেন হেলাল সাহেবের কাছে। হেলাল সাহেব কাগজটির দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে মাথাটা এলিয়ে দেয় পেছনের দেয়ালের সাথে। বাবার হাতে এরা মেয়ের জীবনের না-দাবী সই করাতে এসেছে! আচ্ছা ডাক্তাররা এমন পাষাণ নাকি প্রকৃতি বর্বর! যে মেয়েকে নিজের জান-মাল দিয়ে একটু একটু করে পালন করে তুলেছেন, সেই মেয়ের নাকি জানের দাবী ছাড়তে হবে বাবার! ওহ! প্রকৃতি সঙ্গে মিলেমিশে তকদীরের নির্দয়তা!একদৃষ্টে কয়েক মুহূর্ত দলিলের দিকে চেয়ে থেকে নিভু চোখে ইরাজের দিকে ইশারা করে পরিশ্রান্ত কণ্ঠে বললেন, “ওই পাগলের কাছে যান। ওই পাগল আমার মেঘার জীবনের দাবী ছাড়লে তবে তা জায়েজ হবে।ʼʼ

আসলেই তো! যে ছেলে কিছুদিন বাঁচার দাবী নিয়ে ওই মেয়েকে চেয়েছে, তার মানে ও মেয়ের দাবী, চাহিদা তো ইগজগতে সম্পূর্ন ওই পাগলার। হেলাল সাহেবের এতসবের মাঝে বুকে প্রশান্তি লাগে, তার অবর্তমানে তার মা-হারা পাগলি মেয়েটা খারাপ থাকবে না এই পাগলার কাছে।

শারমিন আরার বুক কাঁপছে দুরু-দুরু। এ অবশ্য আশ্চর্যজনক বটে! ডাক্তারদের আবার বুক কাঁপে নাকি! কাঁপে। এই-যে আজ কাঁপছে। ইরাজ চোখ তুলে তাকাল ওই কাগজটার দিকে। সবটুকু ঘৃনা তার গিয়ে ওই কাগজের ওপর পতিত হলো। এই কাগজ হলো সেই বাঁধা, মেঘকে হারালে কোন প্রতিশোধ নিতে না পারার বাঁধা! মেঘকে ত্যাগের দলিল। বুকে কলিজা-ছিদ্রক সূঁচাল ব্যথা! নড়বড়ে হাতে কাগজটা নেয়, তা নিজের জড়িয়ে বসা হাঁটুতে রেখে চেয়ে রইল কয়েক মুহূর্ত খানিক। কাগজটার ওপর বৃষ্টির ফোঁটার মতো এক দানা পানি ঠাস করে পড়ে তা কাগজের শোষনে একটু ছড়িয়ে যায় কাগজটার ওপর। কাগজটার অভিশাপ ধুয়ে যাক– বুক চিরে বের হওয়া এই একফোঁটা তরলের সঃস্পর্শে। কাগজে উল্লেখিত কেঁড়ে নেওয়ার বয়ানে জড়িয়ে থাকা পাপগুলো কলঙ্ক ঝরিয়ে নিক না-হয়! কলমটা নিয়ে সই করে দেয়। সইটা খুব দ্রুত এবরো-থেবরোভাবে করে ইরাজ। সই করতে যত দেরী হবে, মেঘালয়ার সার্জারীর সময় পেছাবে।

শারমিন আরা নার্সের হাত থেকে ওটির ড্রেসটা নিয়ে তা পড়তে পড়তে ঢুকে গেলেন ওটিরুমে। ইরাজ নির্বিকার চেয়ে রইল কেবল সেদিকে। ওটির দরজাটা বন্ধ হয়ে দরজার ওপরে লাল লাইটটি জ্বলে ওঠে। ইরাজ চোখটা নামিয়ে নেয়। ওই মেয়েটাকে নাকি ইরাজ ত্যাগ করেছিল। হেসে উঠল ইরাজ ভাবতেই। যে মেয়েটাকে ছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাসে চাপ সৃষ্টি হয়, সেই মেয়েটাকে নাকি ত্যাগ করেছিল ইরাজ! আচ্ছা! ইরাজ তো এমন ছিল না। এতকিছুর পরেও ইরাজের ভেঙে পড়া কেউ দেখেনি। কেউ দেখেনি, ইরাজকে কাঁদতে, ইরাজের ছটফটানি। অথচ আজ ইরাজ কিছুই মানছে না। সবকিছুকে এড়িয়ে সে এমনভাবে কেন ওই মেয়েটার জন্য তড়পাচ্ছে! এ মায়া জন্মেছিল ইরাজের ভেতরে সেই কত বছর আগে। অথচ কোনদিন তা বাইরে আসেনি, অথচ এ-ক’দিনে এমন হলো কী! ইরাজ এত জাহির হয়ে উঠল কবে? পুনরায় কবে এভাবে থেমে গেছে মেঘালয়ার মাঝে? ইরাজ চিরদিন মেঘালয়ার কাছে নিজেকে লুকিয়েছে, সবশেষে মেঘালয়ার ভুলের পর তো ইরাজ শপথ করেছিল, ত্যাগ করেছিল ওই মেয়েকে। এ ভালোবাসার অনুভূতি বড্ড বেলেহাজ! কিছুই মানে না যে! কিছুই মনে রাখে না! এই-তো ক’দিন আগে ইরাজ মেঘালয়ার থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে, তাকিয়ে দেখেনি, ঠিকমতো কথা বলেনি, মেনে নিতে অস্বীকার করেছে। অথচ তারপরের ক’দিনে আস্তে আস্তে হলোটা কী! আবার জড়িয়ে পড়েছে ইরাজ!

তবে এবার কেন জানি ইরাজের মনে হয়, এ জড়িয়ে পড়াটা সম্পূর্ণ নতুন ধাঁচের! যে জড়িয়ে পড়ায় ইরাজের নিজস্ব সত্তা গুম হয়ে গেছে। নিজের চারিত্রিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, এ জড়িয়ে পড়ায় লুকোনো যায়নি আর অনুভূতি। বরং বহিঃপ্রকাশ ঘটে গেছে ইরাজ না চাইতেও। আগে মেঘালয়া ইরাজের আকাঙ্ক্ষা ছিল, মায়া ছিল। আজ যে মেঘালয়া ইরাজের অর্ধাঙ্গিনী! এই হালাল সম্পর্কের সুতোর টানে ইরাজের চাপা স্বভাবের আল-বিদা হয়ে গেছে।

ইরাজ আবার হাসে মৃদূ! দৃষ্টি তার আটকানো ওটি রুমের দরজায়। মুখ নাড়িয়ে বিরবির করে ওঠে, “মেঘ! যাসনা কেমন! আমি আর কিছুদিন ভিজতে চাই তোর ঝরানো বৃষ্টিতে। শোন, শোন আমার কথা, তোকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটব, কিছুদিন আগে শখ জেগেছিল। তখন বলিনি, তবে কাল রাতে বললাম, তুই যাওয়ার মতো অবস্থায় ছিলি না। সুস্থ হ, নিয়ে বের হবো। তুই চাইলে ফুসকাও কিনে দেব। তবে সেটা আমার আড়ালে দাঁড়িয়ে অন্যদিকে মুখ করে খাবি। রাস্তার ছেলেদের কার কেমন নজর কে জানে! মেয়েদের একটু ঢেকে-ঢুকে চলা ভালো। যশোরে মেলা বসছে সপ্তাহখানেক পর, ওখানেও নিয়ে যাব তুই চাইলে। তুই যাসনা, মেঘ! একা একা তো আজীবন ঘুরলাম। বহুত হয়েছে। আজকাল ভাল্লাগেনা একা। তুই চলে গেলে, একা আর আমার যাওয়া হবে না। ভাবলাম, তুই ভার্সিটিতে ভর্তি হবি, তারপর আমার কাছে রাতে পড়তে বসবি। ধমকে ধমকে পড়াব। সে তুই যা-ই বল, আমার ওসব মিনমিনে প্রমবাণী আসে না। আমি ধমকেই পড়াব। আসলে, অভ্যাস তো! তোর সাথে ধমকে কথা বলার অভ্যাসটাই যখন বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে, সেটাকে ভালোবাসা বলেছি আমি। চিরদিন ওভাবে ধমকাতে তোকে আমার খাচায় আটকাতে চেয়েছি। চাইলেও অন্যরকম করে বলতে পারিনা। বলতে গেলে মনে হয়, তোর সাথে কথা বলছিনা। ভাবলাম, প্রতিদিন তোকে বাইকে করে নামিয়ে দিয়ে আসব, ভার্সিটিতে। আগে তো প্যানপ্যান বহুত করেছিস, তোর বাপ ধরত আমায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসার জন্য। তোর বাপ কিন্তু সেই শুরুর থেকেই আমার প্রেমেই পড়েছে, তুই না পড়লেও। হেলাল আকবরের জামাই আমি সেই বহুকাল আগ থেকে। তখন বের হতে চাইলে ধমকে ঘরে পাঠিয়েছি। এখন না-হয় ভার্সিটি যাওয়ার বদৌলতে বাইকের পেছনে ঘুরতে পারতি! সব-ই তোর চাহিদা। দেখ কী করবি! তুই থেকে গেলে এসবের সাথে আরও বহুত কিছু পাবি। আর চলে গেলে আর কী! ইরাজ একা আর কী-ই বা করবে! যাসনা মেঘ! কেমন! চল কিছুদিন একসাথে রাস্তায় হাঁটি।

মেঘালয়া কী শুনল কথাগুলো! পাগল ইরাজের পাগলাটে প্রলাপ শুনল না বোধহয় মেয়েটা! না পাওয়া যন্ত্রণা তো সময়ে আবর্তনের সাথে সাথে উপশম হয়ে যায়। তখন হারিয়ে যাওয়া বস্তুটাকে নিজের অনুভূতির বন্ধন থেকে মুক্ত করে দেয় মানুষ একটা সময়! সময় ধৈর্য্য দেয়, যা আমার ছিলই না, তা নিয়ে আর কতদিন আহাজারী, আকাঙ্ক্ষা সব পুরো হওয়ার নয়। অথচ আকাঙ্ক্ষা থেকে যে জিনিস নিজের প্রাপ্তিতে এসে কিছুদিন বিচরণ করে, পেয়ে যাওয়ার খুশিতে ডুবিয়ে তারপর শূন্যে মিলিয়ে যায়, সেখানে মন-মস্তিষ্কের চাপটা যে অসহ্য লাগে বড়োই! যে চাপটা ইরাজকে ক্ষণে-ক্ষণে বিষাক্ত তীরের আঘাতের ন্যায় খোঁচাচ্ছে। রক্তাক্ত করে তুলছে ভেতরটাকে।


প্রায় দেড় ঘন্টা পর শারমিন আরা সহ তার সহকারী ডাক্তারটি বেরিয়ে এলো ওটি রুম থেকে। ইরাজ কেবল নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকাল একবার শারমিন আরার দিকে। কোনরকম নড়চড় দেখা গেল না তার মাঝে। দৌঁড়ে গেলেন হেলাল সাহেব, পেছনে ইমতিয়াজ সাহেব ও আনতারা খানম। অথচ শারমিন আরার দৃষ্টি আটকে আছে, নিষ্প্রভ, নিস্তেজ ইরাজের দিকে। তিনি ওটির পোশাকটি খুলে কনুইতে রেখে হেলাল সাহেবের দিকে তাকালেন। তার মুখটা করুণ, বড়ো অসহায় লাগল, আজ এক মেয়ের বাবার দিকে তাকিয়ে শারমিন আরার। তিনি মুখে কিছু না বলে বরং সকলকে উপেক্ষা করে এসে বসলেন ইরাজের পাশটায়। গ্লাভসটা এখনও হাতেই রয়েছে তার। তখনই একটি নার্স বেরিয়ে এলো ছোটো-খাটো এক ট্রলি ঠেলে। ইরাজ তাকায় না সেদিকে। শারমিন আরা ইরাজের পাশে মাথাটা ইরাজের মতোই ঝুঁকিয়ে বসে রইলেন। আস্তে করে নিরুত্তেজ গলায় বললেন, “রাজ! মেঘার মিসক্যারেজ হয়েছে।ʼʼ

ইরাজ মোটেই অবাক হলো না। কোন কথাও বলল না। যেন তার খুব ভালো করে জানা কোন বিষয় তাকে আবার জানানো হলো। বুক ফুলিয়ে শ্বাস নেয় ইরাজ, মনে হলো, হঠাৎ-ই রোধ হয়ে যাওয়া শ্বাসটুকু ইরাজ ভারী বুক থেকে আস্তে করে মুক্ত করে দিল।

ট্রলিতে অপরিপক্ক ছোট্ট এক নিথর-দেহ পড়ে আছে। শরীরে এখনও সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিকমতো সেজে ওঠেনি। তবে মানুষের আকৃতি এসেছে। দেখে মনে হচ্ছে, সদ্য জন্মানো শিশু, মাখনের ন্যায় ক্রিম সদৃশ এক আস্তরণে ঢেকে আছে শরীরের ত্বক। চোখের পাতা ও ভ্রু গজিয়েছে হালকা করে।

আনতারা খানম হাউমাউ করে চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন। হেলাল সাহেব পুরুষ মানুষ তো! তার চোখে পানি থাকতে আছে, তবে চিৎকার করে বুকের আর্তনাদগুলোকে বোধহয় প্রকাশটুকু করতে নেই তার। ইমতিয়াজ সাহেব সরে আসলেন সেখান থেকে। ঘুরে দাঁড়িয়ে চোখটা মুছে নিলেন। আনতারা খানম বেসামাল হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে। মেঘালয়ার যে কাঁদার মতো নিজের মা নেই, তাই বোধহয় সেই আহাজারীটুকু মিলিয়ে আনতারা আজ ওই মা হারা অনাথ মেয়েটার জন্য নিজে কেঁদে ভাসাচ্ছেন। ইমতিয়াজ সাহেব গিয়ে ধরলেন আনতরাকে। তাকে সরানো যায় না।
ধরতে যায় বাচ্চাকে, তখনই ইমতিয়াজ সাহেব জোর করে ধরে দূরে নিয়ে এলেন আনতারাকে। তিনি বুঝলেন, আনতারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ মুহুর্তে। একটা নয়, সে যে এভাবে চারটা সন্তানের নিথর দেহ দেখেছে। আজ তার জন্য ছেলের সন্তানের সেই একই অবস্থা দেখা মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি করল খুব খারাপ ভাবে। মেঘালয়ার কথা ভেবে আনতারা আরও পাগল হয়ে ওঠেন। দৌঁড়ে যেতে চান ওটি রুমের দিকে। তিনিও এভাবেই পড়ে থেকেছেন হাসপাতালের বেডে, তার সন্তানকে চিরদিনের মতো নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার বুক থেকে। আজ মেঘালয়াও কী দেখবে না সন্তানের মুখ?
ইমতিয়াজ সাহেব আনতারাকে দেখে নিজেও বড্ড ভেঙে পড়লেন। আনতারাকে নিয়ে ইরাজের পাশে বসে পড়লেন। শারমিন আরা উঠে যায় ফ্রেস হতে।

হেলাল সাহেব বসে পড়ে ওভাবেই মেঝেতে। লোকসমাগম বেড়েছে চারদিকে। সকলে তাকিয়ে দেখছে একটা মেয়ের দরদী কয়েকজন মানব-মানবীর বিদ্ধস্ত দৃশ্য। হেলাল সাহেবের চোখের সম্মুখে ভেসে উঠল, প্রায় ষোল বছর আগের সেই অভিশপ্ত দিনের কথা। এভাবেই তার ছোট্ট ছেলেকে এনে তার সম্মুখে রাখা হয়েছিল, কিছুক্ষণ বাদে তার স্ত্রীকেও। সেদিন মেঘালয়া কাঁদেনি। কেবল আনতারার হাতটা ধরে পিছেপিছে ঘুরেছিল চারদিকে। বুকটা পুড়ছে হেলাল সাহেবের। সর্বহারার মতো পড়ে রইলেন তিনি ধুলোমাখা মেঝেতে।

কারও অবস্থাই স্বাভাবিক নয়। শারমিন আরা যেন আজ আর ডিউটিতে নয়, ব্যক্তিগত কোন শোকে জড়িয়ে রয়েছেন। কোনমতো ফ্রেস হয়ে এসে ইরাজকে ধরে উঠালেন। আস্তে আস্তে করে নিয়ে গেলেন ট্রলির কাছে। ইরাজের শরীরটা বেজায় ভারী লাগল শারমিন আরার। ইরাজ শারিরীকভাবে নিজের ভার ছেড়ে দিয়ে প্রাণহীনের মতো হাঁটছে।

নাকের পাটা ফুলিয়ে, চোয়াল মাড়িতে চেপে শক্ত করে চোখের পাতা বুজে নেয় ইরাজ। টুপ করে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল দাঁড়ি-গোফের গাল বেয়ে। ছেলে সন্তান হয়েছে মেঘালয়ার। মেঘালয়ার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। ইরাজ হাসার চেষ্টা করে। এই-তো মেঘালয়ার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে, ইরাজ হেরে গেছে—মেয়ে হয়নি। ইরাজ বরাবর ওই পুচকি মেয়ের কাছে হারবেই! জিতবে ওই মেয়ে। পাগলাটে হাসিতে ইরাজকে উন্মাদের মতো লাগে। শারমিন আরা ইরাজের বাহু চেপে ধরে তাকিয়ে রয় ইরাজের বুক চিরে বেরিয়ে আসা পাগলা হাসির দিকে।

বাবার সামনে সন্তানের প্রাণহীন, শ্বাসহীন, নিশ্চল দেহ! হায়! ইরাজের ভেতরে জান নেই; হঠাৎ-ই এমন মনে হলো শারমিন আরার। ইরাজের শরীর আরও ভারী হয়ে ওঠে। এই ছেলে কী পাথরের তৈরী! ভেতরে যে ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে, সবটা মাড়ি আটকে ভেতরে চেপে নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে আছে। ইরাজের ভেতরের এই অগ্নিকাণ্ড হয়ত শারমিন আরাও টের পেতেন না, যদি-না ইরাজকে ধরে দাঁড়াতেন। এ ছেলের উদ্দীপনা গুলো বড়োই চাপা, একটু বেশিই চাপা। ছোটো-ছোটো বিষয়ে কেমন উত্তেজিত হয়ে ওঠে। অথচ যখন কলিজা ছিন্নভিন্ন করা ব্যথা তাকে ক্ষয় করছে, তখন কেমন অলৌলিক ক্ষমতার জোরে যেন লুকিয়ে রেখেছে নিজের যন্ত্রণাগুলো।
ইরাজ যে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে, অথচ তার মুখে হাসি, সে একদম বরফ-শীতল শান্ত। এখন অবধি একটা কথাও বলেনি ইরাজ। শারমিন আরা দ্রুত ইরাজকে সরিয়ে এনে বসালেন বেঞ্চিতে। ইরাজের মেনটাল-কন্ডিশন যে হেভি-প্রেশার ইফেক্টেড হয়ে পড়ছে তা বুঝে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন শারমিন আরা।

ইরাজ বেঞ্চিতে বসে আবার মাথাটা এলিয়ে দেয় দেয়ালের সঙ্গে।

চলবে..

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ