Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"অমানিশায় সেই তুমিইঅমানিশায় সেই তুমিই পর্ব-১২+১৩

অমানিশায় সেই তুমিই পর্ব-১২+১৩

#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা

১২.

অপেক্ষা করতে করতে মেঘালয়ার একসময় অভিমান জাগল। গাল ফুলিয়ে আব্বুর কোলে মাথা রাখে। সেই পুরনো দিনের মতো আজও হেলাল সাহেব মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। এতদিন পর এই আদরমাখা ভালোবাসার স্পর্শে মেঘালয়া সব ভুলে যায়। আজ আর চিন্তা ভাবনার মাঝেও রাত জাগা গেল না। ঘুমিয়ে পড়ল ওভাবেই।

সকাল ন’টার দিকে ঘুম ভাঙল মেঘালয়ার। ঘুম ভেঙে দেখল আব্বু ওকে বিছানায় ঘুমোতে দিয়ে নিজে রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়েছে। আজও বেলা হয়ে গেছে ঘুম থেকে জাগ্রত হতে। মেঘালয়ার রাতের ঘটনা মনে পড়ে যায়। আবারও মনটা গুমোট হয়ে উঠল। তবে সিদ্ধান্ত নিলো আবারও একবার কল দেবে। আব্বুর ফোন থেকে ইরাজের কাছে কল করে। প্রথম দুবার বাজল তবে ওপাশ থেকে রিসিভ হলো না। তৃতীয়বার কল যেতেই লাইন কেটে দিল ওপাশ থেকে। মেঘালয়া অবাক হয়। কাল তো শেষবার যখন দেখা হয়েছিল এমন প্রায় ঠিকই ছিল সবটা। ফোনটা হাত থেকে নামিয়ে রেখে এক দীর্ঘশ্বাস টেনে নিল। কিছুক্ষন ওভাবে বসে থেকে ঘুমন্ত আব্বুর মুখের দিকে তাকাল। অজানা এক প্রশান্তিতে বুক ভরে ওঠার সাথে সাথে আবার এক শঙ্কায় ভিতরটা আন্দোলিত হয়ে উঠল। ওই বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছেটুকু কোথাও খুঁজে পেল না। তবে আবার মনে পড়ল, কাল থেকে মেঘালয়ার অভিযোগ গুলো শোনার পর থেকে হেলাল সাহেব মেয়ের সামনে হাসছেন তো ঠিকই, তবে ভেতর ভেতরে তিনি কতটা অস্থির তা মেঘালয়ার দৃষ্টি এড়ায় নি। সে আর চাইল না আব্বুর অস্থিরতা বাড়াতে।

নিজেকে বুঝাল, যে আব্বুকে খুশি করতে সে এই বিষ পান করেছে, সেই আব্বুর খুশির জন্য নাহয় তা হজমও করে ফেলবে! এ মানুষটিকে আর কষ্ট দেবার সাধ্যি নেই মেঘালয়ার। মুখের অভিব্যাক্তি পরিবর্তন করে নিজের স্বভাবসুলভ চঞ্চলতায় ফিরতে সচেষ্ট হলো। সে কাল উত্তেজনায় যা বলেছে, যে ভাবনায় ফেলেছে আব্বুকে তা আজকের হাসিমুখের ঝলকে মিটিয়ে দিয়ে বিদায় নিতে চায়। আবারও তৈরী হয়ে নিলো। আব্বুকে ডাকল। হেলাল সাহেব চোখ মেলে দেখলেন, মেয়ে প্রায় তৈরী। হন্তদন্ত উঠে বসলেন। বললেন,

‘কিরে মা! রাজ এসেছে?’

মেঘালয়া যেন মিথ্যেটা জিহ্বার ডগায় সাজিয়ে রেখেছিল, তা উৎফুল্লতা হিসেবে ফুটিয়ে তুলল আব্বুর সম্মুখে,

‘উহু, তবে কল করেছিল। কাল বৃষ্টির জন্য আটকে গিয়েছিল। সকাল হতেই কল করেছে, সেই কলেই তো আমার ঘুম ভেঙেছে, আব্বু।’

এই সাবলীল মিথ্যাচারের পেছনের বাস্তবতাটুকু গোপন হয়ে গেল বাবার কাছে। হেলাল সাহেব চাইছেন মেয়ে থাক আর কিছু সময় তার কাছে। তবে পরিস্থিতির প্রতিকূলতায় তিনিও হাসিমুখে মেয়েকে বিদায় জানাতে তৎপর। বললেন,

‘যা খেতে বস। আমি হাত-মুখ ধুয়ে আসছি।’

মেঘালয়া চলে যায়। মনটা সামান্য হলেও হালকা লাগল। ওই মা হারা পাগলিটা যে তার বেঁচে থাকার অবলম্বন। ওই পাগলির একটু ভালো থাকা হেলান সাহেবের গোটা ভালো থাকার চাবিকাঠি।

_

আসতে চাইলেও যেন আসা হয় না। আব্বুর থেকে বিদায় নিয়ে আসতে আসতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার একটু আগে বের হলো মেঘালয়া। হেলাল সাহেবের গাড়িটি কিছুদিন যাবত নষ্ট হয়ে থাকায় তিনি পরিচিত এক গাড়ি রিজার্ভ করে মেঘালয়াকে তুলে দিয়েছেন। গাড়ি এসে নামিয়ে দিল ইমতিয়াজ সাহেবের বাড়ির সামনে। বইয়ে বোঝাই করা প্রকাণ্ড ব্যাগটি নিয়ে মেঘালয়া নেমে দাঁড়াল। এ বাড়ির ভেতরটা তার আতঙ্ক, বাড়ির মানুষগুলো তার আতঙ্ক, তবে তাকে এই সবটা মানিয়ে নিয়ে এ বাড়িতেই বসবাস করতে হবে। আব্বুর খুশির জন্য হলেও তাকে ভালো থাকার চেষ্টা করতে হবে।

বাড়ির ভেতরে এমনিতেও সদস্য সংখ্যা কম। তবে আজ যেন আরও গম্ভীর লাগছে বাড়ির ভেতরটা। আনতারা খানমকে নিচে পেল না মেঘালয়া। ওপরে উঠে গেল। নিজের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ঢুকতে একটু ইতস্তত হচ্ছে। হয়ত ইরাজের ওপর জমায়িত ক্ষোভই এর কারন। দরজা চাপিয়ে রাখা আছে। তা ঠেলে ভেতরে ঢূকেই সর্বপ্রথম নজর গেল রুমের কেন্দ্রে বিছানার দিকে। নজর ওদিকেই আটকে যায় মেঘালয়ার।

ইরাজ বেহুশের মতো পড়ে আছে। মাথার শিথানে বসে তার মাথায় জলপট্রি লাগাচ্ছেন আনতারা খানম। তার উপস্থিতি টের পেয়ে একবার তাকালেন ফিরে। মেঘালয়াকে দেখে প্রচণ্ড অনীহার সঙ্গে নজর ঘুরিয়ে নিজের কাজে মনোনিবেশ করলেন আবার। মেঘালয়া অবাক হয়। কি হয়েছে ইরাজের এই এক রাতের মাঝে? সে ব্যাগটা একপাশে রেখে দ্রুত রুমের ভেতরে প্রবেশ করল। খানিক দুরত্ব বজায় রেখে বিছানার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। শক্তপোক্ত ক্ষ্যাপা ইরাজ কেমন মিইয়ে গেছে। ঠোঁটের চামড়া শুকনো খড়খড়ে। তীর্যক চোখদুটো বসে গেছে, শরীরটা বিছানার সাথে মিশে আছে যেন। শরীরে লাল ছোপ ছোপ দাগ। মাথার চুল উশকো-খুশকো। ওভাবেই চোখ দুটো অর্ধবোজা অবস্থায় টান হয়ে শুয়ে আছে ইরাজ।

মেঘালয়া এসেছে, তা কি টের পেয়েছে ইরাজ? পেলেও বা কি? সে তো আর মেঘালয়ার ভুক্তভোগী নয়! এটুকু ভেবে সেখান থেকে সরে আসতে চায় মেঘালয়া। অথচ কিসের টানে যেন আটকে দাঁড়িয়ে রইল। পা উঠল না তার। রুমের নিস্তব্ধতা ভেঙে আনতারা খানম শক্ত স্বরে বললেন,

‘কোথায় নিয়ে গিয়েছিলে রাজ কে? কোথাও বের হতে তোমারও যে কারও প্রয়োজন হয় তা জানা ছিল না। তুমি তো একাই চলে যাও বাড়ি থেকে। তবে এবার আমার ছেলেটাকে নিয়ে গিয়ে বৃষ্টিতে ভেজানোর কি দরকার ছিল?’

এই সকল কটুক্তি! মেঘালয়ার সয়ে যাওয়ার কথা। তবুও চেনা মানুষগুলোর অচেনা রূপে সে আজও নিত্য-নতুন ভাবে কষ্ট পায় এই তিরস্কার গুলোতে। আজও পেল, তবে তা লুকিয়ে গেল। এবং কোন জবাবও দিল না। সে তো কিছুই জানে না এসবের, তা নিয়েও যদি কথা শুনতে হয়, সেখানে বলার থাকে না কিছু।

‘রাজের এলার্জি আছে জানো তুমি?’

আনতারার ধমকে কিঞ্চিত কেঁপে উঠল মেঘালয়া। আনতারা আবারও বলে ওঠেন, ‘বৃষ্টি রাজের সহ্য হয় না জানতে না তুমি? কি করে ভিজল রাতভর বৃষ্টিতে? বায়না ধরেছিলে তুমি নিশ্চয়ই? এবার তবে সেবা করো।’

আরও কিছু বলতে চেয়েও চুপ করে গেলেন যেন! সবটা গিলে ফেলে রুম থেকে বেড়িয়ে যান তিনি। মেঘালয়া যেন কিছু লক্ষ্য করল– আনতারার চোখ চিকচিক করছিল, কণ্ঠস্বর কেঁপে উঠছিল। তবে কি তিনি কাঁদছিলেন!

ইরাজের দিকে তাকিয়ে, ক্ষোভে দুঃখে ইরাজের এই অবস্থার ওপর খুশি হওয়ার কথা থাকলেও মেঘালয়ার তেমন লাগল না। মিশ্র অনুভূতি নিয়ে চেয়ে রইল ইরাজের পাংশুটে চেহারার দিকে। তখনই ইরাজ ঘাঁড় ঘুরিয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে। মেঘালয়া নিজের অজান্তেই দ্রুত ইরাজকে ধরল। ইরাজ মেঘালয়া গলগল করে বমি করে দেয়। তা মেঘালয়ার শরীরেও লেগেছে। মেঘালয়ার ছিটকে সরে পড়ার কথা, তবে এমন কিছু করল না সে বরং আরও আঁকড়ে ধরল ইরাজকে। ইরাজ নিভু নিভু চোখে তাকায় মেঘালয়ার পানে। মেঘালয়ার ব্যাথিত কণ্ঠে বলে ওঠে,

‘খুব খারাপ লাগছে আপনার? এভাবে উল্টো হয়ে থাকলে আবারও বমি হতে পারে। আপনি সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন তো। নিন..

অপর হাতে বালিশটা ঠিকঠাক করে ইরাজকে ধরে শুইয়ে দিল। ইরাজ শরীর কেঁপে উঠল আদ্ভুত ভাবে। অস্পষ্ট স্বরে কিছু বলতে চায় ইরাজ। মেঘালয়া ইরাজের হাত চেপে ধরল। মুখটা মুছিয়ে দিল সযত্নে। আচমকা খেয়াল করল ইরাজের হাত বেশ ঠাণ্ডা। সে দ্রুত আশপাশে তাকায়। পাশেই টি-টেবিলের ওপর সরিষার তেলের কৌটা। বুঝল, তার অনুপস্থিতিতেও এমন হয়েছিল, তেল মালিশ করা হয়েছিল। সে খানিকটা তেল হাতে মেখে ইরাজের হাত এবং পায়ে অনবরত নাড়তে থাকল। দ্রুত উঠে গিয়ে আলমারি থেকে পাতলা একটি কম্বল বের করে এনে ইরাজের গায়ে দিল। মেঘালয়ার এই ছুটাছুটি ইরাজ নিমজ্জিত চোখে নিরবে কেবল দেখে যাচ্ছে।

কিছুসময় বাদে মেঘালয়ার মনে পড়ে, ইরাজ বমি করেছে। তাতে নিশ্চয়ই ঔষধও বেরিয়ে গেছে! তবে কি আবার ঔষধ খাইয়ে দেবে! ইরাজের দিকে তাকাল সে। কিছুক্ষন আগে খুব ছটফট করলেও এখন তুলনামূলক শান্ত সে। মেঘালয়া চিন্তিত মুখে বসে রইল পাশেই। আরও খানিকটা সময় পার হলে দেখল, ইরাজ চোখ বুজে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। মেঘালয়া ধীর কণ্ঠে শুধায়,

‘কেমন লাগছে আপনার? মামনি কে ডাকব?’

ইরাজ চোখ খুলে তাকাল। অর্ধবোজা চোখের দৃষ্টি। আস্তে করে ঘাঁড় নেড়ে না বোঝাল। পাশেই রাখা অনেকগুলো ঔষধ। মেঘালয়া ভাবল, একদিনে এত ঔষধ কোথা থেকে এলো? নাকি এমনটা আগেও হয়েছে ইরাজের? তখনই মনে পড়ল সেদিন বাবাই বলেছিল, ইরাজের এলার্জি আছে। আজ মামনিও তাই বলেছে। তবে তা জেনেশুনে ইরাজ বৃষ্টিতে ভিজল কেন? এলার্জি থাকলে তা থেকে অ্যাজমার সৃষ্টি হয়। আর এ কারনেই বৃষ্টির পানি ইরাজের সহ্য হয়নি, ঠাণ্ডা লেগে গিয়েছে। পুরো শরীর দাগ ত্বকের ওপর। মেঘালয়া শান্ত পরিশ্রান্ত চোখে কেবল অসুস্থ ইরাজের পানে চেয়ে রইল। এই মানুষটি কত তর্জন-গর্জন করে বেড়ায়। আশেপাশে থাকলেই মেঘালয়ার আতঙ্কের শেষ থাকে না। আজ কেমন স্তব্ধ, দুর্বল শরীরে পড়ে রয়েছে!

এক পর্যায়ে ইরাজের শরীর প্রচুর ঘামতে শুরু করে। ইরাজ ছটছট করতে শুরু করল কেমন। ক্ষীণ স্বরে বলল,

‘এসি অন কর, গরম লাগছে।’

মেঘালয়া আপত্তি জানায়, ‘ঘামলে শরীর থেকে জ্বর বেড়িয়ে যাবে। শুয়ে থাকুন এভাবেই।’

প্রত্যুত্তরে ইরাজ নিরব রইল। ঘাঁড় ঘুরিয়ে চারদিকে কিছু খুঁজল। মেঘালয়া বোঝে, ইরাজ কী খুঁজছে। আক্ষেপের স্বরে বলল, ‘সবকিছুতেই জিদ দেখিয়ে জিতে যাওয়া যায় না। এসির ঠাণ্ডা হাওয়ায় অসুখ বাড়লে ভোগান্তিটা কার হবে?’

ইরাজ কিছুক্ষন নিরবে ছাদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। নিরবতা ভেঙে গম্ভীর স্বরে বলল,

‘এখানে বসে থাকার প্রয়োজন দেখছি না তোর। উঠে যা।’

মেঘালয়া নিরস মুখে তাকাল ইরাজের দিকে। তার দৃষ্টি উপরের দিকে। আস্তে করে উঠে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়াল। ইরাজ এবার তাকাল সেখানে, যেখানে মেঘালয়া বসেছিল এতক্ষন। বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে, চোখদুটো বুজে নিল। মুখে মলিনতার ছাপ স্পষ্ট।

রাত প্রায় আটটা। মেঘালয়া সোফার ওপরে বসে অগোছালো কাপড় ভাজ করতে বসেছে। মাঝেমধ্যে আড়চোখে খেয়াল করছে অসুস্থ জেদি মানুষটিকে। ইরাজ ক্ষীণ আওয়াজে ডেকে ওঠে, ‘মেঘ!’

তৎক্ষনাৎ মেঘালয়া তাকাল সেদিকে। চোখের ইশারায় জানাল, ‘কী?’

উঠে গিয়ে কাছে দাঁড়াল। ইরাজের অভিব্যাক্তি শান্ত, ‘দুটো ডিম সিদ্ধ করে নিয়ে আয়। পারিস তো?’

মেঘালয়া কপাল কুঁচকে তাকাল। এটা কে পারে না? সবসময় খুঁত ধরার ছুতো না খুঁজলে হয় না? মুখে কিছু বলল না তবুও, কেবল মৃদূ মাথা ঝাঁকাল।

রান্নাঘরে যাওয়ার পথে ড্রইং রুমের সোফাতে আনতারা খানমের সঙ্গে দেখা হলো। মেঘালয়া মাথাটা ঝুঁকিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে যায়। আনতারাকে দেখতে বড়োই বিষন্ন আর অস্থির লাগছে। মেঘালয়াকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখে কলিজার ভিতরে পুড়ে উঠল যেন! ইরাজের ভয়ানক এলার্জি আছে বৃষ্টির পানিতে। আগে কিছুসময় এমনও হয়েছে, ইরাজ এলার্জিজনিত ঠাণ্ডায় শ্বাস আটকে পড়ে থেকেছে। গ্যাস দেওয়ার মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট রোধ করা হয়েছে। এবার ঠাণ্ডার সঙ্গে ব্লাড প্রেসার লো। এমন হলে আনতারা খানম ছেলেকে সিদ্ধ ডিম, গরম দুধসহ আমিষ জাতীয় খাবার বানিয়ে বাচ্ছা ছেলের মতো পেছনে ঘুরে ঘুরে খাওয়াতেন। ইরাজ বরাবরই দুধ খেতে চায়না। এত বড়ো হওয়ার পরেও দুধ নিয়ে ইরাজের পেছনে দৌড়েছেন তিনি।

সেসব ভেবে, চোখ ভিজে উঠল যেন! মেঘালয়া যাওয়ার পানে চেয়ে রইলেন। ছেলে কি সত্যিই পর হয়ে গেল! আজ মায়ের প্রয়োজনীয়তা কি তবে ফুরিয়েছে? দেখাশুনা করার নতুন কেউ এসেছে তার পুত্ররত্নের জীবনে!

চলবে..

[রিচেইক করিনি। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন❤️]

#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা

১৩.

মাঝরাত। রুমে মৃদূ লাল আলো জ্বলছে। বাইরে খুব বেশি নয় তবে হালকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে মাঝেমধ্যে। আর তাতে খোলা জানালার পর্দাগুলো নড়েচড়ে উঠছে বারবার।
মেঘালয়া সোফার ওপর চিত হয়ে শুয়ে ঘাঁড় কাঁত করে উদাসীন চোখে তা দেখতে নিমগ্ন। চোখে ঘুম নেই। সে ঘুমানোর চেষ্টা করছেও না। বরং হাওয়ায় দুলতে থাকা ওই চঞ্চল পর্দার মাঝে কিছু খোঁজার চেষ্টায় রত সে।

ইরাজকে রাত এগারোটার দিকে ওষুধ খাইয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। অসুস্থ শরীর, সে নিশ্চয়ই ঘুমে আচ্ছন্ন! একদমই নয়। বরং সে মেঘালয়ার ঘুমিয়ে পড়া নিয়ে ভাবছে। ঘড়ির কাঁটা যখন রাত দেড়টা পার করতে অগ্রসর হয়, ইরাজ খেয়াল করে, অনেকক্ষণ যাবৎ সবকিছু শান্ত একদম। নিশ্চয়ই মেঘালয়া শুয়ে পড়েছে! সে শোয়া থেকে আস্তে করে উঠে বসল। না চাইতেও কেশে উঠল দুবার, সাথে সর্দি টেনে নিলো। আধো-অন্ধকার রুমে ধীর গতিতে চোখ ঘুরাল, মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে ওঠে এবার।
মেঘালয়া ইরাজের কাশির শব্দে দ্রুত ঘাঁড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকায়। তড়িঘড়ি উঠে বসল। উঠে দাঁড়িয়ে আন্দাজ করে হেঁটে গিয়ে রুমের আলো জ্বালিয়ে দিল। দ্রুত পায়ে বিছানায় গিয়ে ইরাজের পাশে বসে উত্তেজিত কণ্ঠে শুধায়,

‘খারাপ লাগছে আপনার? কেমন লাগছে? উঠে বসেছেন কেন! কিছু লাগবে..

ইরাজ হাত উঁচিয়ে ধরল। মেঘালয়া থেমে যায়। ধীর-স্থীর স্বরে নিশ্চিন্ত করে, ‘বিশেষ কিছু হয়নি, তুই ঘুমাস নি?’

মেঘালয়া কেবল চেয়ে রয় ইরাজের ঘুরিয়ে রাখা শুকনো মুখের দিকে। করুণ চোখে অনিমেষ চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। অতঃপর অদ্ভুত কণ্ঠে, আবেশি গলায় প্রশ্ন করল,

‘আপনার নিরবতা প্রতি মুহূর্তে পুড়িয়ে ফেলছে আমায়। অভিযোগ গুলো চেপে কেন রেখেছেন? কিসের এই নিষ্ঠুর নিরবতা?’

মেঘালয়ার এই উত্তেজনায় ইরাজ ঠোঁট এলিয়ে মলিন হাসল। ইশারা করল বালিশটা পিঠের পেছনে দিতে। অতঃপর তাতে পিঠ ঠেকিয়ে আধশোয়া হয়ে বসল। সামনের দেয়ালে দৃষ্টি স্থির রেখে শান্ত স্বরে বলল,

‘মানুষ নিরব হয়ে যায় কখন জানিস? ভাষাগুলো যখন আর্তনাদে পরিণত হয়। আর আর্তনাদ তো বুকের
র ক্তক্ষরণ! যা নিতান্তই ভেতর চিরে বয়ে যায় ভেতরেই। তা লোক-সম্মুখে প্রকাশ করার নয়, মেঘ!’

মেঘালয়া সজল চোখে চেয়ে আছে এই নতুন ইরাজের দিকে। যে ইরাজকে সে এই মুহুর্তে আবিষ্কার করেছে, যাকে আগে কখনও দেখেনি। ইরাজের বলা কথাগুলোর গভিরতা কি মেঘালয়ার বোধগম্য হলো! কে জানে! তবে মেঘালয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে সামান্য হাসল। সে হাসিতে কি বিষাদ ঝরে পড়ল না!

‘অভিমান জমেছে?’

‘নেই।’ ইরাজের এই সংক্ষিপ্ত জবাবে মেঘালয়া যেন ছটফটিয়ে ওঠে। মুখটা নত করে বিষন্ন হাসল একটু, হাসিমুখেই জিজ্ঞেস বলল, ‘তা ভালো।’ একটু থামল, আবার জিজ্ঞেস করল,

‘কখনও ভালোবেসেছেন?’

দেয়ালের দিকে নজর থামিয়ে ভরাট গলায় জবাব দেয় ইরাজ, ‘না।’

‘ঘৃনা করেছেন?’

‘করতে চেয়েছি, চাচ্ছি, তবে পারছি কতটুকু তা অজানা।’

মেঘালয়া চোখ তুলে তাকাল। চোখের পলক ঝাপটে তা সন্তর্পণে নামিয়ে নিল নিচে। কিছুসময় চুপ রইল। ইরাজ চোখ বুঁজে নেয়। হেলান দিয়ে শুয়ে রয় ওভাবেই। মেঘালয়া আবারও চোখ তুলে তাকায় ইরাজের দিকে। সে ইরাজকে বুঝেও যেন বুঝে উঠছে না! সে যা ভাবতে চায়, ইরাজের আচরণ তার উল্টোটা বলে সর্বদা। আজ অবধি কখনোই ইরাজকে তার দিকে অনুরাগের নজরে তাকাতে দেখে নি মেঘালয়া। দীর্ঘশ্বাস ফেলল আস্তে করে। জিজ্ঞেস করল,

‘কাল বৃষ্টিতে ভিজেছিলেন কেন?’

‘মেঘ ভিজিয়েছে।’

‘মেঘ আপনাকে কতটা ভিজিয়েছে?’

‘যতটা ভিজলে বুকের হাহাকার আরও বেড়ে যায়।’

মেঘালয়া অবাক চোখে তাকায়। এই ইরাজকে সে আসলেই গুলিয়ে ফেলছে। ইরাজের সঙ্গে মিলছে না মোটেই। তবে তার বোঝায় ভুল হয়েছে বলে মনে হয় না। সে সঠিক বুঝেছে, সে জানতে পেরেছে ইরাজের ভেতরে লুকায়িত আরেক ইরাজকে। অজান্তেই খানিকটা পুলকিত বোধ করল। সে অবাক হয় নিজের ভাবনার ওপর। চরম অপছন্দের মানুষটি তার সম্মুখে, যে– মেঘালয়ার সঙ্গে কখনও ভালো আচরণ করেনি, মিষ্টি করে কথা বলেনি, সর্বদা কড়া শাসন, কড়া আর খোঁচা দেওয়া কথা। নিদারুন অপছন্দের পুরুষ। অথচ আজ সেই পুরুষের ভেতরের লুকায়িত ক্ষোভকে খানিকটা জানতে পেরে এত খুশি কেন লাগছে!

‘মেঘকে ক্ষমা করবেন না?’

‘এ প্রশ্ন কেন উঠছে?’

‘ওঠা উচিত নয়?’

ইরাজ তাকাল মেঘালয়ার দিকে। মেঘালয়া চোখ সরায় না, সাহস করে চেয়ে রইল ইরাজের চোখের দিকে। ইরাজ নিজেই নজর ঘুরিয়ে নেয়। অসুস্থ শরীরেই তাচ্ছিল্য করে হেসে উঠল, দেখতে অদ্ভুত লাগে সেই হাসি।

‘বিজ্ঞের মতো কথা বলছিস দেখছি।’

‘জটিল মানুষগুলোর সাথে এত কাছাকাছি বাস করলে কতদিন সরল আর নির্বোধ থাকা যায়?’

মেঘালয়ার কথায় ইরাজ এক ভ্রু উঁচিয়ে তাকায়। বাহ-বা দেওয়ার মতো করে ঠোঁট বাঁকাল সামান্য। তারপরেই মুখটা কুঁচকে ডানহাতে বুক চেপে ধরল। হাঁ করে জোরে টেনে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে। মেঘালয়া ব্যাস্ত হয়ে ওঠে, উত্তেজিত হয়ে কিছু বলতে উদ্যেত হয়। ইরাজ থামিয়ে দিল,

‘উমম! এভাবে নয়, এসব পোষায় না আমার।’
অতঃপর বুকের বামপাশে আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করল, ‘এখানে ব্যাথা লাগে। দুরেই ঠিক আছিস।’

মেঘালয়া অসহায়ের মতো নির্বাক চোখে চেয়ে রইল এই কঠিন, নির্দয় পুরুষটির দিকে। সে তার জবাব পেয়ে গেল যেন ইরাজের এই অভিব্যাক্তির মাঝে– মেঘকে ক্ষমা করা যায় না। একদমই না।

মেঘালয়া সোফায় এসে বসল। ইরাজ বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। নেমে দাঁড়াল, মাথা টলমল করছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে জ্বলে যাচ্ছে, চুলকানোর ফলে। গলাসহ ঠোঁটটা কেমন শুকনো লাগল। ওভাবেই পা ফেলল সামনে। কয়েক কদম এগোতেই মাথাটা চক্কর কেটে উঠল। পা ফসকে যায় ইরাজের, নিয়ন্ত্রন হারায় দেহের। পড়ে যেতে নিয়ে হাতের জোর দিয়ে খাটের একপাশ চেপে ধরল। প্রায় বসে পড়ে ইরাজ। চোখ অন্ধকার হয়ে আসে। ওভাবেই নিচু হয়ে বসে রইল চোখ বন্ধ করে।
ততক্ষনে মেঘালয়া এসে বাহু চেপে ধরল তার। ইরাজ মেঝের ওপর বসে পড়ল এবার। মেঘালয়া ঘাবরে যায়। কিছুসময় পর ইরাজ আস্তে করে মাথা তুলে তাকাল। মেঘালয়া ইরাজের হাতের ভেতরে নিজের হাত ঢুকিয়ে ইরাজের ভরটুকু নিলো। ইরাজ কিছু না বলে উঠে দাঁড়াল মেঘালয়াকে অবলম্বন করে। মেঘালয়ার অতিরিক্ত ভার অনুভূত হয়, ইরাজের অত বড়ো শরীরের পুরো ভরটাই তার ওপর পড়েছে। তবুও ছাড়ল না।

বুকটা হঠাৎ-ই কেমন যেন করে ওঠে। আজ প্রথমবার মেঘালয়া ইরাজের এত কাছে এসেছে। হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে অনেকটা। ইরাজকে বাথরুমের দরজার সামনে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিল। ইরাজ দেয়াল ধরে ধীরপায়ে হেঁটে ভেতরে যায়। মেঘালয়া সঙ্গে সঙ্গে বুকটা চেপে ধরল হাত দিয়ে। কিছু একটা অনুভূত হচ্ছে গাঢ়ভাবে। ওভাবেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষারত রইল ইরাজের বের হওয়ার।

_

দু’দিন কেটে গেছে এর মাঝে। ইরাজ এখন প্রায় সুস্থ তবে ইমতিয়াজ সাহেব কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, অন্তত সপ্তাহখানেক ইরাজ বাইরে বের হবে না। ইরাজকে এভাবে বললে, সে বাইরে বের হওয়ার পর যা হয় তাই করত অবশ্য। খ্যাতিমান ঘাঁড় ত্যাড়া বলে কথা। ইমতিয়াজ সাহেব ছেলের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে, আদুরে গলায় স্নেহ জানিয়ে গেছেন। ইরাজ বাবার ওপর বড়োই দুর্বল কিনা!
অগত্যা মুখটা ভোঁতা করে বিছানার ওপর বালিশে হেলান দিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। মেঘালয়া সোফায় বসে বই নাড়াচাড়া করছে। একসময় পদার্থবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র খুলে কিছু অঙ্ক কষায় মনোযোগ দিল।

ইরাজ ল্যাপটপে কোন জরুরী কাজ করছে তা নয়। সে মুভি ডাউনলোড করতে বসেছে। আচমকা মেঘালয়া এসে ধীর পায়ে দাঁড়াল পাশে। টের পেয়েও সেদিকে তাকাল না ইরাজ। সে এক পা গুটিয়ে অপর পা লম্বা করে মেলে বসে আছে। যেখানে মেঘালয়ার বসার জায়গাটা অবশিষ্ট নেই। মেঘালয়া দাঁড়িয়ে রইল, তবুও ইরাজ পা সরাল না। মেঘালয়া কঠিন কিছু বলতে যায়, আবার থেমে গেল। ডাকল, ‘শুনুন!’

ইরাজ তাকাল না, কিছুক্ষন পর জবাব দিল, ‘শুনছি।’

‘পা’টা সরিয়ে বসুন, আমি বসব।’

‘তাতে আমার কী?’

মেঘালয়া জবাব না দিয়ে ইরাজের পা’টা সরিয়ে দিল। তবে মনে হলো, ইরাজ নিজেই জেনো সরিয়ে নিয়িছে, নয়ত মেঘালয়ার ক্ষমতা ছিল না ইরাজের পা সরিয়ে দেয়। হাতে তার বই, খাতা, কলম। ইরাজ একবার তাকিয়ে দেখল তা, অতঃপর প্রতিক্রিয়াহীন আবারও ল্যাপটপে মনোযোগ দিল। মেঘালয়া বই, খাতা মেলে বসল ইরাজের সামনে। কিছু বলার প্রস্তুতি নিয়েও বলতে না পেরে বসে রয় ওভাবেই। একসময় ইরাজ বিরক্ত হয়ে তাকাল,

‘কি সমস্যা?’

মেঘালয়া জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র না?’

‘পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র হই অথবা অপদার্থবিজ্ঞানের। তোর ফাটছে কেন তাতে?’

মেঘালয়ার যেন সহ্য হলো না এবার। মাড়িতে মাড়ি চেপে চোখ বুঁজে নিলো। ভারী একটা শ্বাস ফেলে মুখটা বিকৃত করে জিজ্ঞেস করল, ‘জিলাপির দোকানে কাজ করতেন?’

‘করব সামনে।’

মেঘালয়ার তাচ্ছিল্য করে উৎসাহের সঙ্গে বলে ওঠে, ‘খুব ভালো জিলাপি বানাবেন আপনি, আশা করি। কারন, আপনার মগজটা তো স্বাভাবিক নয় বরং জিলাপির আকৃতিরই।’

ইরাজ কপাল কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ঘাঁড় বাঁকায়। মেঘালয়া শক্ত কণ্ঠে বলল, ‘একটা সোজা কথাকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে মশার কয়েল বানিয়ে ফেলেন। এরকম জঘন্য মেধা আমদানী করেন কোথা থেকে?’

ইরাজ শান্ত চোখে চেয়ে শীতল জবাব দিল, ‘শুধু ভালো জিলাপি বানানোই না, উন্নতমানের থাপ্পড়ও মারতে পারি আমি।’

মেঘালয়া সায় দেয়, ‘হু হু নিশ্চয়ই। তা অন্তত আমার অজানা নয়।’

ইরাজ এবার বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ফ্যাচফ্যাচ না করে, কাজের কথা থাকলে বল নয়ত বিদায় হ।’

মেঘালয়া কপাল জড়িয়ে ফেলল। একটু সুস্থ হয়েছে কি-না, নিজস্ব রূপে ফিরে এসেছে, হাহ! বইয়ের নির্দিষ্ট পৃষ্ঠার মাঝে আঙুল দিয়ে রেখেছিল। তা খুলে মেলে ধরল বিছানার ওপর। ইরাজ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখছে কেবল। মেঘালয়া বইয়ের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে জিহ্বা চালিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।

‘এই সূত্রটা বুঝিয়ে দিন।’

ইরাজের জড়িয়ে থাকা ভ্রু আরও খানিকটা কুঁচকে গেল।

‘আমাকে তুই বিনামূল্যে একের ভিতর সব সমস্যার সমাধান পেয়েছিস?’

‘জি না।’

আর কিছু বলতে দিল না ইরাজ, নিজেই বলে উঠল, ‘একাডেমিকে কি করেছিস? এডমিশনে এসে যদি সূত্র পড়াতে হয়।’ একটু থেমে কিছু মনে করার ভঙ্গিতে বলল,

‘ওহহো! তুই তো প্রেমসূত্র মুখস্থে সময় ব্যায় করে ফেলেছিস সব।’

মেঘালয়া প্রতিবাদ করে ওঠে, ‘তাতে আপনার কী?’

ইরাজ নিরব হয়ে গেল হঠাৎ-ই। মেঘালয়ার হাত থেকে বইটা নিলো। জিজ্ঞেস করল,

‘আগে পড়েছিস অধ্যায়টা?’

‘পড়েছিলাম।’

‘মনে আছে কিছু?’

‘কিছুটা।’

‘কিছুটাতে কাজ নেই। আগে ব্যাসিক জানতে হবে।’

মেঘালয়া বাধ্যর মতো ঘাঁড় নাড়ল। ইরাজ বুঝাতে শুরু করল। মেঘালয়ার পড়ার চেয়ে ইরাজে মনোযোগ বেশি। দিন দিন সে নিত্য-নতুন ইরাজকে আবিষ্কার করছে। বারবার গুলিয়ে যায় ইরাজের এত এত জটিল রূপগুলো। কটু কথা শুনিয়ে আবার সেই কাজ যত্নসহকারে করে দেওয়া সমীকরণটা মেঘালয়া মেলাতে পারে না। অদ্ভুত মানুষ ইরাজ– এই ধারণাতেই আটকে যায় বারবার।

ইরাজ খাতা এগিয়ে নিয়ে কলম চাইল। মেঘালয়া কলম এগিয়ে দেয়। ইরাজ সূত্রগুলো আরও ভালোভাবে বুঝানোর উদ্দেশ্যে তা লিখতে শুরু করল। লিখতে লিখতে জিজ্ঞেস করল,

‘রেজাল্ট কবে বেরোবে?’

‘দু সপ্তাহখানেক পর।’

ইরাজ আর কিছু বলল না। মেঘালয়া নিজেই চিন্তিত কণ্ঠে বলতে থাকে,
‘আচ্ছা যদি ফেইল করি আমি, তাহলে কি হবে?’

ইরাজ ভাবলেশহীন জবাব দিল, ‘কি আর হবে? তোর বাপ কোন অটোরিক্সা ওয়ালার সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দেবে।’

চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল মেঘালয়া, ‘হ্যাহ!’
কথাটা বুঝে নিজের অজান্তেই মুচকি হেসে ফেলল। বলল, বাপ আমায় বিয়ে তো দিয়ে দিয়েছে, তবে যার সাথে দিয়েছে সে আমি ফেইল করলে রিক্সা চালানো শুরু করলেই হয়।’

ইরাজ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল খানিকক্ষণ, এরপরই মাথাটা নিঁচু করে মৃদূ হেসে উঠল যেন! মেঘালয়া বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে দেখল সেই হাসি। হঠাৎ-ই মনটা বেশ হালকা লাগল। আচমকা বলে উঠল,

‘আপনি হাসতেও জানেন নাকি আবার?’

চলবে..

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ