অভিশপ্ত ব্রিজ (হরর)
লেখাঃ Jannatul Mishty
অন্ধকার ঘুটঘুটে কালো রাত
ঘড়িতে দুইটা বেজে ৩০ মিনিট চারদিকে পরিবেশ ভিষণ নিরবতা পালন করছে।
মনে হচ্ছে এই পুরো গ্রাম জনমানবশূন্য কোথাও কোনো জনমানবের উৎস নেই।
অথচ দিনের বেলা এই গ্রামটাই জনমানবে ভরপুর একটা অপূর্ব সুন্দর গ্রামে পরিনত হয়,
শুধু রাত হলেই সব কিছু বদলে যায়,
গ্রামের মানুষের মনে কি কি ভূতুরে ভয় বিরাজ করে বসে আছে।
গ্রামে আসার সময় গাড়ির ড্রাইভার ও কি সব গল্প বলছিলো,
একটা পুরোনো ব্রিজের কথা সেখানে নাকি প্রতি মাসে একটা লাশ পাওয়া যায় তবে সেটা কোনো বিবাহিত পুরুষ বা মহিলা নয়।
অবিবাহিত কিশোর অথবা কিশোরী হয়,
বলা হয় সেখানে নাকি পিশাচরা থাকে তারা কিশোর কিশোরীদের মেরে তাদের রক্ত পান করে আরো শক্তিশালী হয়।
এছাড়াও আরো বলেছিলো….
এই গ্রামে নাকি অনেক ভৌতিক ঘটনা ঘটে থাকে তাই রাত ১০ টার পর কেউ ঘর থেকে বের হয়না।
কিন্তু আয়ান শহরে থেকে বড় হয়েছে এসবে কোনো বিশ্বাস নেই ভূত,প্রেত,পিশাচ বলতে কিছুই নেই এমনটাই আয়ানের ধারণা।
আয়ানের মনের মধ্যে অশান্তি অনুভব হচ্ছে তাই চোখে ঘুমের ছিটেফোটা ও নেই।
বাড়িতে সবাই ঘুমে তলিয়ে গেছে যেটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়,
কিন্তু আয়ানের কোনো কিছুতেই মন বসছেনা ভালো লাগছেনা তাই ভাবলো একটু বাইরে হাটাহাটি করে আসলে হয়তো ভালো লাগবে।
যেই ভাবা সেই কাজ, ঘরে ঢুকে সুয়েটার আর মোবাইল হাতে নিয়ে রওনা হলো বাইরে হাটার উদ্দেশ্যে,
মন্তব্য কোনো এক নির্জন জায়গা যেখান থেকে স্পষ্ট চাঁদের সাথে আলাপন করা যাবে।
এক মাত্র চাঁদই তো সেই যার সাথে মনের সব কথা শেয়ার করা যায়।
হেটে হেটে তেমন একটা জায়গা পেয়ে ও গেলো আয়ান
একটা পুরনো ব্রিজ,
যার এক পাশে বড় বড় কিছু বাঁশঝার আর অন্য পাশে লম্বা লম্বা শুপারি গাছ,
সামনের দিকে সোজা আকাশে চাঁদ, এমনটাই তো চেয়েছিলো আয়ান।
যাক এখানে বসে হয়তো কিছুটা ভালো সময় কাটানো যাবে।
ব্রিজের উপর একা একা বসে আছে আয়ান,
মিষ্টির সাথে ঝগড়া করে মন ভালো নেই,
আফসোস হচ্ছে ভিষণ কেন যে ঝগড়া করতে গেলো,
ঝগড়া না করে মেয়েটার কথা মেনে নিলেই হতো।
পকেট থেকে মোবাইল বের করে বারবার ভাবছে মিষ্টিকে কল দিবে কি না,
আর কল দিলেই যে মিষ্টি কল রিসিভ করবে তা ওতো নয় মেয়েটা বড্ড জেদি রাগ করলে সহজে রাগ ভাঙেনা।
থাক আগামী পরশু সামনাসামনি গিয়ে রাগ ভাঙানো যাবে এখন হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে মিষ্টি।
মোবাইলে টুং করে শব্দ হলো সম্ভবত মেসেজের রিংটন
মোবাইলে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে মিষ্টির মেসেজ আসছে।
(মেসেজ)
“আয়ান আই এম স্যরি আমার ওভাবে রিয়েক্ট করা ঠিক হয়নি ক্ষমা করে দাও আমায় ”
মেসেজ পড়ে আয়ান অবাক হয়ে যায়,
৫ বছরের সম্পর্কে এই পর্যন্ত মিষ্টি কখনোই রাগ করে নিজে থেকে কথা বলেনি ক্ষমা চাওয়া তো অনেক দূরের কথা।
ভাবনার ঘোর কাটে আবার মেসেজের রিংটনে
(মেসেজ)
কি হলো কিছু তো বলো তুমি কি আমায় ক্ষমা করোনি? ”
এবার আয়ান রিপ্লাই দিলো
“আরে তুমি ক্ষমা চাইছো কেন?
ক্ষমা তো আমার চাওয়ার কথা,
আমি ও তো অভার রিয়েক্ট করে ফেলেছি ”
“আচ্ছা বাদ দাও,
তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে ”
“কিসের সারপ্রাইজ? ”
“ব্রিজ থেকে নেমে নিচে বালুর চড় আছে চড়ে চলে আসো ”
“এই তুমি কি করে জানো আমি ব্রিজের উপর বসে আছি তুমি কি এখানে আছো ?”
” আমি তোমার সব কিছুই জানি, এবার নিচে চলে আসো ”
আয়ান মিষ্টির কথামত ব্রিজের নিচে বালুর চড়ের দিকে এগিয়ে গেলো।
চোখ পড়লো সামনে আগুন জ্বলছে,
এবং আগুনের পাশে কোনো মেয়ে বসে আছে দূর থেকে চেহারার স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছেনা।
এতো রাতে এই নির্জন চড়ে কে বসে আছে?
তাও আবার মেয়ে মানুষ,
মনের মধ্যে কি ভয় ডর নেই নাকি?
আয়ান মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলো,
খোলা চুল বাতাসের সাথে এলোমেলো হয়ে উড়ছে,
উল্টো দিকে ফিরে বসে আগুনে হাত পোহাচ্ছে মেয়েটা।
হঠাৎ করে কেমন যেন শীত শীত অনুভব হচ্ছে আয়ানের,
একটু আগেই তো তাপমাত্রা ঠিক ছিলো এক মুহুর্তে এতো বদলে গেলো কি করে প্রচন্ড শীতে কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে আয়ান।
“এখানে এসে বসো ”
(মেয়েটি বললো)
আয়ান শীতে কাঁপতে কাঁপতে আগুনের সামনে গিয়ে বসলো,
তখন আগুনের আলোয় মেয়েটার মুখ দেখে আয়ান স্তব্ধ হয়ে যায়,
এটা তো মিষ্টি…….
মিষ্টি এখানে আসলো কি করে?
“মিষ্টি তুমি এখানে কি করে? কখন? কি ভাবে এলে?”
মিষ্টি কিছু বলছেনা সে মাটিতে নিচে তাকিয়ে আছে
আয়ান আবার বলে উঠলো মিষ্টি কি হলো বললে না তো তুমি এখানে কিভাবে কখন আসলে?
এখানে তো আমার ফুফুর বাড়ি।
মিষ্টি আয়ানের দিকে ওর হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো
“আমার হাতটা একটু ধরবে কি আয়ান??
আয়ান কিছু না বলে মিষ্টির হাত ধরলো,
তখন মনে হলো মিষ্টির হাতে কেমন লম্বা লম্বা লোমশের মতো মনে হচ্ছে।
আয়ান হাতের দিকে তাকাবে তখনই পাশে জলন্ত আগুনটা নিভে গেলো।
” মিষ্টি তোমার হাত এমন লাগছে কেনো?”
“কেমন লাগছে আয়ান? লোমশে ভরা মনে হচ্ছে?
নাকি হাতে আঙ্গুল গুলো পাঁচটার বদলে তিনটা মনে হচ্ছে? “”
মিষ্টির কথা শুনে আয়ান কেমন যেন ভয়ে শিউরে উঠলো,
“মিষ্টি এসব কেমন কথা ” (কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো আয়ান)
অন্ধকার সরাতে পকেট থেকে মোবাইল বের করে টর্চ অন করে আয়ান,
সেই সাথে মিষ্টির হাতের দিকে টর্চের আলো ফেলতেই দেখে,
মিষ্টি ঠিকই বলেছিলো পুরো হাত লোমশে ঢাকা
দেখে কোনো জানোয়ারের হাতের মতই লাগছে আর আঙ্গুল ও পাঁচটার বদলে তিনটে।
আয়ান এক ঝটকায় নিজের হাত সরিয়ে নিলো মিষ্টির মুখে টর্চের আলো ঢেলে দিলো তখন মিষ্টির চেহারা দেখে ভয়ে আয়ানের গলা শুকিয়ে হার্টবিট ক্রমশ বাড়তে লাগলো।
মিষ্টির চোখ দুটো রক্তাক্ত লাল হয়ে আছে ঠোঁটের দুপাশে লম্বা লম্বা দুটো দাঁত বেড় হয়ে আছে,
হাতের মতো সারা মুখে ও লোমশ ভরা,
আয়ান চিৎকার করে উঠলো কিন্তু তার চিৎকারে কোনো সারা শব্দ হলোনা,
বুঝতে পারে আয়ান তার কথা বলার শক্তি নেই এখন গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বেড় হচ্ছেনা।
তৎক্ষনাৎ উঠে দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করে আয়ান কিন্তু তাতে ও কোনো লাভ হয়নি,
তার কন্ঠের সাথে শরীর ও অবস হয়ে আছে,
নড়াচড়া ও করতে পারছেনা।
সামনে মিষ্টির রুপ ধারণকারি সেই ভয়ানক ছায়াটা তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে আয়ানের দিকে,
আয়ানের গলা চেপে ধরে সে,
আয়ান নিজেকে বাঁচাতে অনেক জোড়াজোড়ি করে কিন্তু তাতে কোনো সফলতা পায়নি ক্রমশ আয়ানের গলায় চাপ দিচ্ছে সে,
এক পর্যায়ে সেই বড় বড় দাঁত এগিয়ে আনে আয়ানের ঘাড়ের কাছে ভয়ে জ্ঞান হারায় আয়ান।
জ্ঞান ফিরে নিজেকে ঘরে বিছানায় দেখতে পায়,
বাইরে সূর্যের আলো দেখে বুঝতে পারে আয়ান সকাল হয়ে গেছে।
তারপর গতরাতের কথা মনে পরে আয়ানের তখন ফুফু এসে জিজ্ঞেস করেন
“তোকে না বারণ করেছিলাম রাতে বাইরে না যেতে তাহলে তুই ওই ব্রিজের কাছে কিভাবে গেলি?
ভাগ্যিস সকাল সকাল রিতুর কলেজ ছিলো (আয়ানের ফুফাতো বোন রিতু)
তাই যাওয়ার সময় তোকে ব্রিজের উপর অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পায়,
পরে আমি তোর ফুফা গিয়ে তোকে নিয়ে আসলাম”
তখনই রিতু দৌড়ে এসে বললো ব্রিজের নিচে একটা মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে,
পোশাক দেখে মনে হচ্ছে শহর থেকে এসেছে খুব মায়াবী দেখতে,
আহারে বেচারি অকালে এভাবে পিশাচদের হাতে মারা গেলো বলে মিতু ফ্রেশ হতে রুমে চলে গেলো।
আয়ানের ফোনে কল আসে
“হ্যালো পার্থ বল ” (মিষ্টি এবং আয়ানের বন্ধু পার্থ)
“কি রে কেমন সারপ্রাইজ দিলো মিষ্টি তোকো?
Any way happy birthday Dear”
আয়ানের মনে হলো আজকে তো ওর বার্থডে
“আরে আজকের তারিখের কথা তো আমি ভুলেই গেছিলাম থ্যাংক ইউ পার্থ ”
“হুম জনাব আপনি ভুলে গেছিলেন তাইতো মিষ্টি আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে ওখানে গিয়েছে,
কোথায় মিষ্টি ওর কাছে ফোনটা দে তো ওর নাম্বার অফ”
“পার্থ তুই কি মজা করছিস আমার সাথে?
মিষ্টি এখানে কোথায় থেকে আসবে?”
“আরে মজা করবো কেন সত্যি বলছি আমি নিজে মিষ্টিকে গাড়ি তুলে দিয়ে আসছি তুই যাওয়ার ঘন্টা খানিক পরে মিষ্টি ও তোদের গ্রামে গেছে।
কেন বলতো তোর কি ওর সাথে দেখা হয়নি?
তাহলে মিষ্টি গেলো কোথায়?
ফোনও তো অফ”
“আমি জানিনা রে ”
“আয়ান ফোনটা রাখ এক মিনিট পর কল ব্যাক করছি মিষ্টির মা কল করছে ”
আয়ান হুম বলে ফোন রেখে দিলো
মিতু ফ্রেশ হয়ে এসে আয়ানের সাথে গল্প করতে আসে
মিতু ওর মা’কে ডেকে বলে,
মা আয়ান ভাইয়া ও কিশোর এবং অবিবাহিত তাহলে গতরাতে আয়ান ভাইয়া কিভাবে বেঁচে গেলো ওখান থেকে তো কেউ এভাবে জীবিত ফিরে আসেনা।
মিতুর মা বললো না আয়ান অবিবাহিত নয় আয়ানের ছোটবেলায় বিয়ে হয়েছিলো,
আয়ানের বাবার বন্ধুর মেয়ের সাথে পরে সেই বন্ধু মারা যায় এবং উনার স্ত্রী তার মেয়ের সেই ছোটবেলার বিয়ে অস্বীকার করেন।
এসবের কারণে আয়ানের বাবা ও আর সেই বিয়ের কথা মনে রাখতে চাননি,
আর এই কারনেই আয়ান হয়তো গতরাত বেঁচে ফিরেছে আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া তিনি আমার আয়ানকে রক্ষা করেছেন।
আয়ানের ফোনে আবার কল আসলো পার্থের
“হ্যালো পার্থ বল মিষ্টির কোনো খোঁজ পেলি? আর আন্টি কেন ফোন করেছিলেন?”
“আয়ান তুই যে গ্রামে আছিস সেখানের লোকাল থানা থেকে কল আসছিলো মিষ্টির বাসায়,
মিষ্টির মৃত লাশ পাওয়া গেছে ওই গ্রামে কোনো এক ব্রিজের নিচে”
আয়ান চিৎকার দিয়ে উঠে দৌড়ে সেই ব্রিজের কাছে যায়।
ব্রিজের পাশে অনেক লোকজন দাঁড়িয়ে আছে আয়ানের সাহস হচ্ছেনা ওখানে এগিয়ে গিয়ে দেখার যদি সত্যি মিষ্টির লাশ হয়?
তবুও কোনোরকম সাহস করে লোকজনের ভেতরে গিয়ে লাশটাকে দেখে,
মাটিতে লুটিয়ে পরে আয়ান
হ্যাঁ এটাই তার মিষ্টির লাশ
যার সাথে সে গতকালই ঝগড়া করে আসছে..।
মিষ্টির লাশ দেখে লোকজন বলাবলি করছে
আহারে মেয়েটা কতো সুন্দর ছিলো,
না জানি পিশাচেরা ওর সাথে কি করেছে,
দেখেই মনে হচ্ছে শরীরের সব রক্ত চুষে নিয়েছে কিরকম পুরো শরীর সাদা ফেকাসে হয়ে গেছে।
পুলিশ এসে মিষ্টির লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য নিয়ে গেলো।
আয়ানের ফুফা এসে আয়ানকে বাড়ি নিয়ে গেলেন,
মিতু বললো
আয়ান ভাইয়া তো বেঁচে গিয়েছিলো বিবাহিত হওয়ার কারণে,
কিন্তু ওই মিষ্টি মেয়েটা বাঁচতে পারেনি।
(সমাপ্ত)
( গল্পটি সম্পূর্ন কাল্পনিক)