অবুঝ_বউ পার্ট: ১৯

1
4387

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

রাতের আধার কেটে যখন একটু একটু আলো ফুটতে শুরু করেছিল তখন বাসা থেকে বেরিয়ে ছিলাম এখন অনেক বেলা হয়েছে, মুমু এর মধ্যে অনেক বার ফোন দিয়েছে রিসিভ করিনি বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু যেতে তো হবেই আম্মু চিন্তা করছেন

বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই মুমু দরজা খুলে দিল হয়তো আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল
–ভাইয়া কোথায় গিয়েছিলি
–কোথাও না
–সকালে উঠে দেখি তুই বাসায় নেই কতোবার ফোন দিয়েছি রিসিভ করিসনি কেন আম্মু চিন্তা করছে
–আম্মুকে গিয়ে বল বাসায় এসেছি চিন্তা করতে হবে না
–রুমে যাচ্ছিস কেন নাশতা করবি না
–না
–কেন
মুমুর আর কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রুমে চলে আসলাম, রুমে ঢুকতেই সোহাগীর হাসি শুনতে পেলাম ফোনে কথা বলছে আর হাসছে, আচ্ছা ভালোবাসার নিয়ম গুলো এমন অদ্ভুত কেন একজন হাসে অন্যজন কাঁদে….?
–নাহিল এসেছ তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম
–কেন
–ডিভোর্স পেপারে সাইন করেছ তো আমি আজ এখান থেকে চলে যাবো
–জিসানের কাছে যাবে তাই তো
–হ্যাঁ আমরা আগামীকাল বিয়ে করবো (খুব রাগ হচ্ছে এই মেয়ে কথা গুলো এতো সহজে বলে কিভাবে, ওর আগে আমাকে এ বাসা থেকে যেতে হবে ওর চলে যাওয়া আমি সহ্য করতে পারবো না, আজকের ফ্লাইটেই আমি চলে যাবো, মুমুকে ডাক দিলাম সবকিছু গুছিয়ে দেওয়ার জন্য)
সোহাগী: আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি তুমি মুমু মুমু বলে চেঁচাচ্ছ কেন
আমি: তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই
সোহাগী: এভাবে কথা বলছ কেন
আমি: এখন তো অনেক বুঝদার হয়ে গিয়েছ প্রশ্নটা আমাকে না করে নিজেকেই কর
মুমু: ভাইয়া ডাকছিলি
আমি: হ্যাঁ আমার সবকিছু গুছিয়ে দে
মুমু: ফ্লাইট তো রাত আটটায় বাজে মাত্র সকাল দশটা এখনি….
আমি: যা করতে বলেছি কর
মুমু: এতো রেগে আছিস কেন কি হয়েছে
আমি: (নিশ্চুপ)
মুমু: ঠিক আছে আমি গুছিয়ে দিচ্ছি, ভাবি তোমার কি কি গুছাতে হবে দাও
সোহাগী: মানে কি গুছাব আর কেন গুছাব
মুমু: ভাইয়া ভাবিকে বলিসনি
আমি: না ও যাবেনা
সোহাগী: কি হচ্ছে বলতো
মুমু: ভাইয়া তো বলেছিল আজ রাত আটটার ফ্লাইটে তোমাকে নিয়ে আমেরিকা চলে যাবে
সোহাগী: এসবের মানে কি নাহিল তারমানে তুমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করনি
মুমু: ডিভোর্স কিসের ডিভোর্স ভাবি তুমি কি পাগল হয়ে গেছ
সোহাগী: পাগল হইনি যা করছি বুঝে শুনেই করছি
মুমু: দাঁড়াও আমি আম্মুকে ডেকে আনছি

মুমু চলে গেলো ডিভোর্স এর কথা শুনে আম্মু যে কি করবে ভেবে পাচ্ছি না শেষ পর্যন্ত আম্মুর কথা গুলোই সত্যি হল
আম্মু: নাহিল এসব কি শুনছি
আমি: (নিশ্চুপ)
মুমু: ভাইয়ার কি দোষ সব তো করছে ভাবি
আম্মু: আমি আগেই বলেছিলাম তখন আমার কথা শুনিসনি
আমি: আম্মু কান্নাকাটি করো না বাদ দাও
আম্মু: বাদ দিতে বললেই কি দেওয়া যায় এই মেয়েটা তো তোর জীবনটা নষ্ট করে দিল
সোহাগী: আমি আপনার ছেলের জীবন নষ্ট করবো কেন
আম্মু: এই মেয়ে একদম চুপ আর একটা কথাও বলবা না আগেই বলেছিলাম এই অবুঝ মেয়েকে বিয়ে করিস না পরে পস্তাতে হবে
আমি: আম্মু ওকে বকছ কেন ও যদি জিসানের সাথে ভালো থাকে তাহলে থাকতে দাও
মুমু: জিসান আমার দেবর আমি ওকে ভালো করে ছিনি এই বদমাশ ছেলের সাথে আবার ভালো থাকবে
আমি: আম্মু প্লিজ কান্নাকাটি করো না একটু পর চলে যাবো শান্তিতে যেতে দাও
আম্মু: একটু পর যাবি মানে ফ্লাইট তো আটটায়
আমি: এই বাসায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে
আম্মু: কি বলছিস এসব
আমি: উফফফ কান্নাকাটি করো না তো
আম্মু: আমার সাথে চল আর মুমু তুই ওর সবকিছু গুছিয়ে দে

আম্মু আমার হাত ধরে টেনে আম্মুর রুমে নিয়ে আসলো, আম্মু খুব কাঁদছে আমারো তো কান্না পাচ্ছে কি করব
আম্মু: তুই রাতে ঘুমাসনি চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে এখন আমার কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমু তো (আর কিছু বলতে পারলাম না খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে আম্মুর কোলে শুয়ে পড়লাম)

সাজিদের ডাকে ঘুম ভাঙলো মনে তো হচ্ছে বিকেল হয়ে গিয়েছে
–কিরে তুই কখন আসলি
–কিছুক্ষণ আগে
–কয়টা বাজে
–চারটা
–ওহ
–নাহিল তুই না গেলে হয় না
–এখানে থাকলে এসব কষ্ট সহ্য করতে পারবো না
–দূরে গেলেই কি ভুলতে পারবি
–দূরে গেলেই কি ভালোবাসার মানুষকে ভুলা যায়
–তাহলে যাচ্ছিস কেন
–হয়তো দূরে গেলে কষ্টটা একটু কম হবে
–হুম
–তুই ড্রয়িংরুমে যা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি
–ওকে

রুমে ঢুকতে ভয় করছে বিকেল হয়ে গিয়েছে সোহাগী হয়তো চলে গেছে, ও এই রুমে না থাকলে রুমটাই যে ফাঁকাফাঁকা লাগবে, নাহ যায়নি কাপড়চোপড় গুছাচ্ছে এখন আর ওকে জ্বালাই না থাকুকু নিজের মতো করে, ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম যতো তাড়াতাড়ি বের হবো ততোই যন্ত্রণা কম হবে
–নাহিল তুমি আমেরিকা চলে যাচ্ছ (সোহাগীর এমন প্রশ্নে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম)

মুমু: ভাইয়া এখনি চলে যাবি নাকি আরো তো তিন ঘন্টা বাকি
আম্মু: খেয়ে যাবি না
আমি: না খিদে নেই
সাজিদ: আমি তোর সাথে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আসি
আমি: কি দরকার অযতা….
সাজিদ: প্লিজ
আমি: ওকে চল
আম্মু: তোর আব্বুর সাথে দেখা করে যাবি না
আমি: হুম যাওয়ার পথে অফিসে গিয়ে দেখা করে যাবো

আম্মু আর মুমু কাঁদছে পিছন ফিরে আর তাকালাম না তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে চলে আসলাম
–নাহিল আমি ড্রাইভ করছি
–হুম
–এভাবে মন খারাপ করে থাকিস না
–আগে যদি যানতাম সোহাগী অন্য কারো হয়ে যাবে তাহলে সেদিন আর দেশে ফিরতাম না
–আমার মনে হয় তোর হাতে এখনো সময় আছে ভাবিকে বুঝা বুঝবে
–নারে ও বুঝবে না ও তো জিসানের জন্য অন্ধ হয়ে গেছে বাদ দে
–নাহিল সামনে মৌরি হাত নেড়ে গাড়ি থামাতে বলছে
–ওর হয়তো আমাকে আরো কিছু কষ্ট দেওয়ার বাকি রয়ে গেছে
–থামাবো
–হুম

গাড়ি থেকে নেমে মৌরির সামনে এসে দাঁড়ালাম ওকে দেখে মনে হচ্ছে খুব আনন্দে আছে
সাজিদ: মৌরি কিছু বলার থাকলে বল আমাদের যেতে হবে
মৌরি: যাবি তো ফ্লাইটের তো আরো প্রায় তিন ঘন্টা বাকি
আমি: তুমি জানলে কিভাবে
মৌরি: তুমি যাচ্ছ আর আমি জানবো না
সাজিদ: অযতা কথা বাদ দিয়ে বল কিসের জন্য গাড়ি দাড় করিয়েছিস
মৌরি: প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য
সাজিদ: কিসের প্রতিশোধ
মৌরি: সেদিনের থাপ্পড়ের (বলেই আমার গালে থাপ্পড় মেরে দিল)
সাজিদ: মৌরি
মৌরি: প্রতিশোধ নিলাম
আমি: সাজিদ ছেড়ে দে ভিতরে যা ঝর বইছে এই আঘাত তো কিছুই না
সাজিদ: মৌরি আমি চাইলে তোকে এখন অনেক গুলো থাপ্পড় দিতে পারতাম
আমি: সাজিদ চল তো
সাজিদের হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলাম এসব নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না, এইটা তো সামান্য একটা থাপ্পড় ভিতরে যে কেমন ঝর বইছে সেটা তো আর কেউ জানেনা

অফিসে গিয়ে আব্বুর সাথে দেখা করে সোজা এয়ারপোর্ট চলে আসলাম
–নাহিল আরো দুঘণ্টা সময় আছে ভাবিকে বুঝা
–উহু ও বুঝবে না ও জিসানকে ভালোবাসে
–এমনো তো হতে পারে জিসান পুরোটাই অভিনয় করছে আর ভাবি বুঝতে না পেরে….
–অভিনয় হলে তো বিয়ের প্ল্যান করতো না বাদ দে না এসব ভাবতে ভালো লাগছে না
–হুম
–তুই বাসায় চলে যা
–এখানে দুঘণ্টা একা বসে থাকবি আমি থাকি প্লেনে উঠার আগে পর্যন্ত
–না আমি একটু একা থাকতে চাই প্লিজ
–ওকে সাবধানে যাস আসি
–হুম
সাজিদকে বিদায় করলাম আমার চোখ যে আর বাধ মানছে না ওর সামনে কাঁদলে তো সাজিদও কাঁদবে আমি আর কাউকে কাঁদাতে চাই না আমার কষ্ট আমি একাই সহ্য করি, খুব কষ্ট হচ্ছে চোখের সামনে সব স্মৃতি গুলো ভাসছে, সোহাগীকে সেই প্রথম কালো শাড়িতে দেখা, ওর খিলখিল করে হাসি, ভয় পেয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে ওর ঘুমানো সবকিছু আজ চোখের সামনে ভাসছে, চোখ থেকে পানি ঝরছে বুকে প্রচুর যন্ত্রণা হচ্ছে তাই চোখ দুটু বন্ধ করে ফেললাম….

চলবে?

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে