অবুঝ_বউ
পার্ট: ১৮
সকালে সোহাগীর চেঁচামেচিতেই ঘুম ভাঙলো, রাতে তো ভেবেই ঘুমিয়ে ছিলাম সকালে যে ওর রাগি মুখটা দেখতে হবে তাই আর অভাক হলাম না উল্টো ওর রাগি মুখের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম, ওর মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছে এখনি আমাকে খুন করে ফেলবে
–তুমি আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়েছ কোন সাহসে
–তুমি আমার বউ তাই
–কিসের বউ আমি জিসানকে ভালোবাসি (নামটা শুনেই মাথা নষ্ট হয়ে গেলো ইচ্ছে হচ্ছে ওকে কষিয়ে দুইটা থাপ্পড় দেই)
ওই শুনো আমি তোমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাইনি তুমি ইচ্ছে করে আমার বুকে মাথা রেখেছিলে
–মিথ্যে কথা
–এখন তো বলবেই মিথ্যে কথা রাতে যখন জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছিল কই তোমার জিসান তো আসেনি সেবা করতে আমাকেই তো সারা রাত জেগে সেবা করতে হয়েছে
–কেন করেছ আমি মরলে তোমার কি
–যদি সত্যিকারের ভালোবাসা কি সেটা বুঝতে তাহলে বোকার মতো এই প্রশ্নটা করতে না (রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম, এই মেয়ের সাথে কথা বলে লাভ নেই ও জিসানের জন্য অন্ধ হয়ে গেছে আমাদের মাঝখান থেকে জিসানকে সরাতে হবে)
নিচে এসে দেখি সবাই নাশতা করে নিচ্ছে আমাকে কেউ ডাকও দিল না
আমি: মুমু আমাকে ডাক দিলি না
মুমু: তুই ঘুমুচ্ছিলি তাই আর ডাকিনি
আমি: আব্বু আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি
আব্বু: কি সিদ্ধান্ত
আমি: আমি সোহাগীকে এখানে রাখবো না ওকে নিয়ে বাহিরে কোথাও চলে যাব
আম্মু: কেন
আমি: জিসানের থেকে দূরে থাকলেই ওর এসব পাগলামি বন্ধ হয়ে যাবে
আব্বু: আইডিয়াটা খারাপ না তুই বরং বউমা কে নিয়ে আমেরিকা চলে যা ওখানের ব্যবসাও দেখতে পারবি
মুমু: আরে ভাবি তুমি নাশতা না করে কোথায় যাচ্ছ (মুমুর কথা শুনে পিছনে তাকালাম সোহাগী কোথায় যেন যাচ্ছে)
আমি: অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছ সোহাগী
সোহাগী: তোমাকে বলে যেতে হবে নাকি
আম্মু: বউমা একটু বুঝেশুনে কথা বল (সোহাগী কোনো জবাব না দিয়ে বেরিয়ে গেলো, আর নাশতা করতে ইচ্ছে হচ্ছে না যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে আমেরিকা যাওয়ার ব্যবস্থা খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে)
মুমু: ভাইয়া নাশতা না করে কোথায় যাচ্ছিস
আমি: আমেরিকা যাওয়ার ব্যবস্থা করতে
তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম, সাজিদের বাসার সামনে গিয়ে ওকে ফোন দিয়ে নিচে আসতে বললাম
–কিরে এভাবে হুট করে বাসার সামনে এসে ফোন দিলি
–গাড়িতে উঠ
–কোথায় যাবি
–আগে উঠবি তো গাড়ি স্টার্ট দেই তারপর কথা বলি
–হুম
–আমি সোহাগীকে নিয়ে আমেরিকা চলে যাব
–কেন
–কেন মানে কি এখানে থেকে ওকে হারাবো নাকি
–সোহাগী যাবে তো
–জোর করে নিয়ে যাব
–কাজটা কি ঠিক হবে
–ঠিক ভুল জানিনা শুধু জানি পিচ্ছি বউ কে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না
–যা ভালো মনে হয় কর
–হুম
আমেরিকা যাওয়ার সবকিছু ঠিকঠাক করে অনেক রাতে বাসায় ফিরলাম, কলিংবেল টিপতেই মুমু এসে দরজা খুলে দিল
–কিরে রাত তো অনেক হলো ঘুমাসনি
–না
–কেন
–একসাথে খাবো তাই সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম
–ওকে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি
–হুম
রুমে এসে সোহাগীকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি সোহাগী ফোনে গেমস খেলছে আমি যে রুমে আছি ও যেন চোখে দেখছে না
–সোহাগী খেয়েছ
–হুম
–ওহ ওকে
আজকাল সবার আগেই ও খেয়ে নেয় ভালো তো সব ভূত চলে যাবে ওর মাথা থেকে একবার আমেরিকা নিয়ে যাই জিসানের ছায়াও আর সোহাগী দেখতে পারবে না
মুমু: ভাইয়া কি বিড়বিড় করছিস তাড়াতাড়ি আয়
আমি: হুম
আব্বু: যে কাজে গিয়েছিলি তা হয়েছে
আমি: হ্যাঁ আব্বু আগামীকাল রাত আটটায় ফ্লাইট
আম্মু: মানে কি কালকেই চলে যাবি
আমি: হুম
মুমু: এতো তাড়াতাড়ি যাবি ভাবি জানে
আমি: না সকালে জানিয়ে দিব
আব্বু: আসলে কি বলব বুঝতে পারছি না
আমি: আব্বু আর যাই বল যেতে নিষেধ করোনা
আব্বু: হুম
রুমে এসে চারদিকে চোখ বোলালাম সোহাগী কোথাও নেই বুঝতে বাকি রইলো না মহারাণী যে বারান্দায় আছেন, দেয়াল ঘড়ির দিকে চোখ পড়ল রাত প্রায় একটা বাজে ভাবছি ওকে এখন বলব নাকি সকালে, আচ্ছা আমি যে সবকিছু ঠিক করে নিলাম আগামীকাল ফ্লাইট সোহাগী কি আদৌ যাবে আমার সাথে, যদি যেতে রাজি নাহয় জোর করে নেওয়া কি ঠিক হবে
–নাহিল (হঠাৎ সোহাগীর ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পরলো, বারান্দা থেকে ডাকছে কেন)
–হুম কিছু বলবে
–হ্যাঁ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে বারান্দায় এসো
বারান্দায় এসে সোহাগীর পাশে দাঁড়ালাম জানিনা কি বলবে মনের ভিতর কেমন যেন এক অজানা ভয় কাজ করছে
–দেখ নাহিল যা হবার তো হয়েই গেছে এখন তোমার মেনে নিতে কষ্ট হলেও এটাই সত্যি যে আমি জিসানকে ভালোবাসি (কতো সহজ ভাবে কথাটা বলে দিল ও কিন্তু আমার মনের ভিতর কেমন ঝর বইছে সেটা তো আর পিচ্ছিটা জানেনা, চোখ দুইটা ঝাপসা হয়ে আসছে চারদিকে চোখ বোলালাম আজ মনে হয় অমাবস্যা তাই চারদিক এতো অন্ধকার, এই অমাবস্যার রাতে আমার জীবনেও বুঝি….)
–কি হল নাহিল কথা বলছ না কেন
–কিছু বলার নেই
–আমি জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমার দিকটা ভাবো আমি জিসানকে ছাড়া থাকতে পারবো না
–কথা গুলো বলতে কি তোমার একটু কষ্টও হচ্ছে না
–কেন কষ্ট হবে আমি তো জিসানকে ভালো….
–অনেক হয়েছে এই কথাটা আর শুনতে চাই না তারচেয়ে বরং তুমি কি চাইছ সেটা বলে দাও
–এক মিনিট অপেক্ষা কর আসছি
জানিনা কেন ও রুমে গেলো আসলে ও কি চাইছে বুঝতে পারছি না ও তো বলছে জিসানকে ভালোবাসে তাহলে কি আমাকে ছেড়ে….
–নাহিল
–এইটা কি কিসের কাগজ আমাকে কেন দিচ্ছ
–এইটা ডিভোর্স পেপার
–কি
–হ্যাঁ আমি সাইন করে দিয়েছি তুমিও….
–সোহাগী তুমি না আগে ডিভোর্স এর মানে বুঝতে না আর এখন কিনা…
–এখন আমি সব বুঝি
–ওহ আগে তো অবুঝ ছিলে আর এখন অনেক বুঝদার হয়ে গিয়েছ
–এতো কথা শুনতে চাই না আমি সাইন করে দিয়েছি তুমি করে দিও
–ডিভোর্স পেপারে সাইন করার আগে তোমার আমার কথা মনে পড়েনি হাত কাঁপেনি সাইন করতে
–না সাইন করার সময় আমার জিসানের কথা মনে পড়েছে কবে আমাদের বিয়ে হবে সেটাই ভেবেছি
–শুধু জিসান জিসান ও কি তোমা…
–চিৎকার করছ কেন আমি তোমার চিৎকার শুনতে চাই না পেপারটা নাও সাইন করে দিও
–(নিশ্চুপ)
–কি হল ধরো (কি করবো আমি আর কি করার আছে কাঁপাকাঁপা হাতে ডিভোর্স পেপারটা নিলাম, পেপারটা হাতে নিতেই চারদিক কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আসলো দফ করে বসে পড়লাম ফ্লোরে, সোহাগী আমার দিকে একবার তাকিয়ে রুমে চলে গেলো)
দূর থেকে আযানের শব্দ ভেসে আসছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট খেয়েই রাতটা কাটিয়ে দিলাম, বার বার ডিভোর্স পেপারটার দিকে চোখ পড়ছে ইচ্ছে হচ্ছে কাগজটা পুড়িয়ে দেই কিন্তু সোহাগীর জন্য পারবো না, আচ্ছা আমার এখন কি করা উচিত সাইন করে দিব…? এইটা তো আমার পক্ষে সম্ভব না তাহলে কি করবো….
অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম সাইন করবো না কিন্তু আমি সোহাগীর থেকে দূরে চলে যাবো এটাই একমাত্র রাস্তা তাতে সোহাগী জিসানের সাথে ভালো থাকবে আর সোহাগী ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকবো, আমি তো ওকে ভালোবাসি তাহলে ও যেভাবে সুখে থাকতে চায় সেভাবে থাকতে দিচ্ছি না কেন, ভালোবাসা মানে তো এই না যে ও শুধু আমার সাথেই ভালো থাকবে, সোহাগী যদি ওর ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখে থাকতে পারে তাহলে আমি ওর সুখ দেখে ভালো থাকতে পারবো না কেন…?
ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে রুমে ঢুকলাম সোহাগী ঘুমাচ্ছে ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে একদম পরীর মতো লাগছে, ডিভোর্স পেপারটা টেবিলের উপর রেখে ছোট্র একটা চিরকুট লিখলাম তারপর চিরকুট আর ডিভোর্স পেপার ড্রয়ারে রেখে দিলাম, সোহাগীর দিকে বার বার চোখ পড়ছে ইচ্ছে হচ্ছে ওর মুখে এলোমেলো হয়ে থাকা চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে দেই কিন্তু সাহস হলো না ওর ঘুমন্ত মুখটা কিছুক্ষণ দেখে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম…..
চলবে?