অবুঝ_বউ
পার্ট: ১৭
আমি: সোহাগী (আমার ডাকে দুজনেই চমকে উঠে আলাদা হয়ে গেলো)
সোহাগী: নাহিল তুমি
আমি: কেন ডিস্টার্ব করলাম
জিসান: ভাইয়া আমার ক….
আমি: আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমি কথা বলছি এর মধ্যে তুমি কথা না বললেই খুশি হব
সোহাগী: নাহিল আমি….
আমি: জানি জিসানকে ভালোবাস তাই তো
সোহাগী: (নিশ্চুপ)
আমি: এটাই তো নিয়ম তাই না ভালোবাসা শিখাবে একজন আর ভালোবাসবে অন্য কাউকে
সোহাগী: নাহিল শু…
আমি: আরো কিছু শুনানোর বাকি রয়েছে নাকি পিচ্ছি বউ, ওহ সরি তোমাকে তো এখন আর পিচ্ছি বলা যাবে না তুমি তো এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছ
সোহাগী: নাহিল অনেক বলেছ এবার চুপ কর ভালো করে শুনে রাখ আমি তোমাকে কখনোই ভালোবাসিনি আমি জিসানকে ভালোবাসি
সোহাগীর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি কি বললো ও নাকি আমাকে কখনোই ভালোবাসেনি তাহলে প্রতি রাতে আমাকে জরিয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে ঘুমানোটা কি ছিল, অভিনয় নাকি ভয়, পিচ্ছি ছিলো তো তাই হয়তো ভয়ে বুকে ঘুমাতো আর আমি ভাবতাম ভালোবাসে আমিও না….
–নাহিল একা একা দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস (সাজিদের কথায় সামনে তাকালাম সোহাগী জিসান কেউ নেই, ওরা কখন চলে গেছে বুঝতেই পারিনি)
–এই নাহিল
–হুম
–চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি
–না ভালো লাগছে না
–চল ঘুরে আসলে ভালো লাগবে
–ভালো লাগার মানুষটা অন্য কারো হয়ে গেছে এখন আর কোনো কিছুই ভালো লাগবে না
–অন্য কারো হবে কেন দেখিস সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে চল
সাজিদ আমার হাত ধরে টেনে বাসার বাইরে নিয়ে আসলো
পার্কের মধ্যে একমনে হাটছি পাশে সাজিদ বকবক করছে, ওর কথা কোনো কিছুই শুনছি না শুধু মনে পড়ছে সোহাগী এমন করলো কিভাবে
–হ্যালো পিচ্ছির জামাই (হঠাৎ কারো মুখে এই কথা শুনে চমকে গিয়ে সামনে তাকালাম)
আমি: মৌরি তুমি
মৌরি: হ্যাঁ আমি, কেন আমি কি পার্কে আসতে পারিনা
সাজিদ: ও কি সেটা বলেছে সবসময় এতো কথা প্যাঁচাস কেন
মৌরি: সাজিদ তোর এতো গায়ে লাগছে কেন
আমি: মৌরি এমনি মন ভালো নেই তুমি আবার জামেলা করো না তো
মৌরি: মন খারাপ কেন পিচ্ছির জামাই তোমার পিচ্ছি বউ কি তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে নাকি….
সাজিদ: নাহিল এখান থেকে চল তো ওর সাথে কথা বললে মেজাজ আরো খারাপ হবে
মৌরি: যাও যাও আমি আগেই বুঝেছিলাম এই মেয়ে থাকবে না একদিন না একদিন ঠিকি নাহিলকে ছেড়ে চলে যাবে
মৌরির কথা আর না শুনে পার্ক থেকে বেরিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো হাতে নিয়ে দেখি সোহাগীর দুলাভাই সব যন্ত্রণা কি আল্লাহ্ একসাথে দিচ্ছেন নাকি
–হ্যালো
–কি জামাইবাবু টাকার কথা ভুলে গিয়েছ নাকি
–না
–তাহলে তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও
–টাকা পেলে সোহাগীর পিছু ছেড়ে দিবেন তো
–এখন আমি সোহাগীর পিছু ছাড়লেই কি আর না ছাড়লেই কি সোহাগী তো আর তোমার নেই হাহাহাহা
–এইটা ভেবে থাকলে টাকাও পাবেন না
–আরে না না টাকা থাকলে এমন সোহাগী কতোজন আসবে, কথা দিচ্ছি টাকা পেয়ে গেলে সোহাগীকে আর জ্বালাবো না
–ঠিক আছে আপনার একাউন্টে টাকা চলে যাবে
–ওকে
ফোন রাখতেই সাজিদ আমার হাত ধরে দাঁড় করালো
–সত্যি করে বলতো কিসের টাকা
–কিছুনা
–বলবি কিনা
–সোহাগীর…
–যে তোকে ছেড়ে চলে গেছে তার জন্য এত্তোগুলো টাকা নষ্ট করবি
–টাকা নষ্ট করবো কোথায় এই টাকায় তো সোহাগী ভালো থাকবে
–তুই কি পাগল হয়ে গেছিস
–না তুই বুঝার চেষ্টা কর….
–কি বুঝব হ্যাঁ
–আমি সোহাগীকে ভালোবাসি আর ও সুখে থাকলে আমি ওর সুখ দেখেই ভালো থাকতে পারবো
–তোকে আমি বুঝাতে পারবো না
–হুম চল
–কোথায়
–টাকা দিতে হবে তো
–সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে বাসায় চল টাকা সকালে দিবি
–না জামেলা যতো তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় ততোই ভালো
–হুম
টাকা দিয়ে অনেক রাতে বাসায় ফিরলাম, আব্বু আম্মু মুমু সবাই চিন্তিত হয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছে
আমি: কি হয়েছে তোমাদের এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন
আম্মু: সোহাগী এখনো বাসায় ফিরেনি
আমি: মানে
সাজিদ: বাইরে কখন গেল
মুমু: তোমরা যাওয়ার একটু পর জিসানের সাথে….
আমি: আম্মু তুমি ওকে যেতে দিলে
আব্বু: এই মেয়ে কারো কথা শুনে নাকি
আমি: এতো রাতে আমি ওকে কোথায় খুঁজব
সাজিদ: নাহিল শান্ত হ আর একটু অপেক্ষা করে দেখি না আসলে নাহয় খুঁজতে যাবো
সবাই সোহাগীর অপেক্ষায় বসে আছি হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো ভেবেছিলাম সোহাগী এসেছে তাই আমি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিলাম কিন্তু দরজা খুলে দেখি সোহাগীর বোন, এতো রাতে আপু কোথায় থেকে আসলো
–আপু আপ….
–তুমি ওই বদমাইশটাকে টাকা দিয়েছ
–আগে ভিতরে আসুন সব বলছি
–আমাকে একবার জিজ্ঞেস করে টাকা দিবে না
–আসলে আপু
–থাক আমি তোমার টাকা ফেরত দিতে এসেছি আর বদমাইশটার ব্যবস্থাও করেছি
–মানে
–ওকে আমি পুলিশে দিয়েছি
–আপু…
–এইটা নিয়ে আর কথা বলতে চাই না সোহাগী কোথায়
–ভিতরে এসে বসুন
–হুম
–আপু সোহাগী এখনো বাসায় ফিরেনি
–সেটা সবার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে
সবাই সোহাগীর অপেক্ষায় বসে আছি আমার তো কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে, হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো আপু নিজে গিয়ে দরজা খুলে দিল, সোহাগী কারো দিকে না তাকিয়ে রুমে চলে গেলো পিছন পিছন আপু গেলেন আমি আর কি করবো আমিও গেলাম, দরজার পাশে যেতেই শুনতে পেলাম
আপু: এতোক্ষণ জিসানের সাথে ছিলি তাই না
সোহাগী: হুম
আপু: লজ্জা করে না নাহিলকে এভাবে ঠকিয়ে জিসানকে ভালোবাসতে এজন্যই কি তোকে আগলে রেখে বড় করে নাহিলের হাতে তুলে দিয়েছিলাম
সোহাগী: এসব নিয়ে আমি কারো সাথে কথা বলতে চাই না আর কোনো কিছুর কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিতে বাধ্য নই
(ঠাস ঠাস করে দুইটা শব্দ শুনলাম আপু যে সোহাগীকে থাপ্পড় মেরেছেন বুঝতে বাকি রইলো না)
আপু: তোর সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই যা খুশি কর (আপু রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আমি রুমে ঢুকলাম সোহাগী রুমে নেই বারান্দা থেকে কান্নার শব্দ আসছে, আস্তে আস্তে বারান্দায় গিয়ে সোহাগীর পাশে দাড়ালাম কি বলব বুঝতে পারছি না)
–সোহাগী
–একদম চুপ তুমি আমার সাথে কথা বলবে না তোমার জন্য আজ আপু আমাকে থাপ্পড় মেরেছে
–আমার জন্য মানে আমি কি তোমাকে বলে দিয়েছিলাম এতো রাত পর্যন্ত জিসানের কাছে থাকতে
আর কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে গেলো আমি কি করবো বুঝতে পারছি না সোহাগী যেমন জিসানকে ভালোবাসে আমিও তো সোহাগীকে ভালোবাসি না পারছি ওকে ভুলে যেতে না পারছি আমার কাছে রাখতে
অনেক রাত হয়ে গিয়েছে এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি সোহাগীর কান্নার শব্দ আর শুনা যাচ্ছে না হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে, আমিও রুমে এসে সোফায় শুয়ে পড়লাম, হঠাৎ সোহাগীর দিকে চোখ পড়লো লাল টুকটুকে গালে আঙ্গুলের দাগ বসে আছে ইচ্ছে হচ্ছে গালে হাত বুলিয়ে দেই কিন্তু ভয়ও হচ্ছে, ভয়ে ভয়ে ওর পাশে এসে বসলাম ওর গালে আলতো করে হাত রাখতেই চমকে উঠলাম জ্বরে তো ওর শরীর পুড়ে যাচ্ছে এতো রাতে কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না, আম্মুকে এখন ডাকা ঠিক হবে না তাই নিজেই ওর কপালে জলপট্রি দিতে শুরু করলাম
একটু পর সকাল হয়ে যাবে জলপট্টি দেওয়াতে সোহাগীর জ্বর অনেক কমেছে, খুব ক্লান্ত লাগছে একটু ঘুমাতে হবে কিন্তু ওকে এখানে একা রেখে সোফায় গিয়ে ঘুমানো ঠিক হবে না তাই সোহাগীর একপাশে আস্তে করে শুয়ে পড়লাম, আমি শুয়ে পরতেই পাগলীটা আমাকে জরিয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো, খুব হাসি পাচ্ছে এমনিতে তো আমাকে এখন শুধু বকাবকি করে আর এখন ঘুমের মধ্যে আমাকে জরিয়ে ধরেছে পাগলী একটা, আস্তে আস্তে ওর মাথায় হাত রাখলাম চোখ দুইটা বাধ মানছে না এই পাগলীকে নাকি আমার ভুলে যেতে হবে ও নাকি আমাকে ছেড়ে জিসানের হয়ে যাবে, এই পিচ্ছিকে আমি ভুলতে পারবো না কিছু একটা করতে হবে,
জানি সকালে উঠে অনেক রাগ দেখাবে তাও ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম…..
চলবে?
Ami akta real love story bolte chai amar life er