অপেক্ষা পর্ব-১৩

0
8

#অপেক্ষা
#Mariam_akter_juthi
#পর্বঃ13 [তোমাকে পাওয়া]

[অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ]

“ফুল সজ্জিত বিছানায় গুটি’শুটি হয়ে বসে আছে অরুপিতা, বসে আছে বললে ভুল হবে, একপ্রকার তেজি বাঘিনী মরিচ হয়ে বসে আছে, কখন ওর স্বামী আসবে আর ও ওর কঠিন মূল্যবান বাণী শুনাবে, কিছু সময় অতিবাহিত হতেই অরুপিতার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তার গুনধর স্বামী রুমে প্রবেশ করলো,অরুপিতা ও আঁটশাট বেঁধে নিজেকে তৈরি করলো।”

“অনেক সময় হওয়ার পরও যখন আরুপিতা রিহানের কোন সারা শব্দ পেল না, তখন কিছুটা কৌতুহল নিয়ে মুখের ঘোমটা একটু টেনে দেখার চেষ্টা করলো, তার সাধ্য হওয়া স্বামী কথায় উধাও হয়ে গেল? হঠাৎ রুমের বেলকনি থেকে মুধু কন্ঠে শুনতে পেল,

~~ চাঁদের চেয়েও সুন্দর, নক্ষত্রের চেয়েও দামি,হিরার থেকেও মূল্যবান,এক মায়াবী পরী কে আমি পেয়ে গেছি, এ জীবনে আমার আর কিছুর প্রয়োজন নেই।

“হঠাৎ বলায় কন্ঠ টা ঠিক ধরতে পারলো না অরুপিতা, তবে বেশ আশ্চর্য হয়েছে,রিহানো ঠিক শাহারিয়ার মতো কথা বললো,অরুপিতার চোখ জুরে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো,খাট থেকে নেমে বেলকনির সামনে দাঁড়িয়ে উল্টো দিকে ঘুরে কন্ঠে তেজি ভাবটা এনে বললো।

অরু— আমি আপনার সাথে এক রুমে থাকতে পারবো না, বিয়েটা আমাদের ঠিকি হয়েছে তবে এই বিয়ের কোনো মূল্যে নেই আমার কাছে,না আছে আপনার, আমি এই বিয়েটা শুধু মা’বাবার জন্য করতে বাধ্য হয়ে হয়েছি, বিশেষ করে আপনারা দুই ভাই-বোন আমাকে বাধ্য করেছেন, তবে শুনে রাখুন আমি আপনাকে ভালোবাসি না,আর না বাসবো। আর আপনাকে আমি আর একটা কথা জানিয়ে রাখছি আমি একজন কে ভালোবাসি, ভিশন ভালোবাসি, বুঝতে পেরেছেন? বলে সামনে থাকা লোকটার দিকে ঘুরে তাকায়, তাকিয়ে মূহুর্তে যেন স্তব্ধ বণে যায়, চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়, মুখটা হা হয়ে গেল,অরুপিতা এ কি দেখছে,ও ভুল দেখছে না তো, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা আসলেই এখানে আছে?

~~ কি কি যেন বলছিলে, আমি ভালো করে বুঝতে পারিনি, আবার রিপিট করো, কানে আঙ্গুল দিয়ে লারাতে লারাতে, ‘শাহারিয়া’

অরু— আপনি সত্যিই এখানে এসেছেন?? ‘হাসি হাসি দিয়ে’

শাহারিয়া— আমার ঘর আমার বউ, আমার ফুলসোজ্জা আর আমি আসবো না? হেঁয়ালি করে

অরু— মানে,

শাহরিয়া— কিছু না এদিকে আসো,

” অরুপিতাকে কে এই কথাটা বলতে দেরী হলো কিন্তু দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরতে দেরী হলোনা’

~~ আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি শাহারিয়া, আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না,আর না অন্য কেউ কে মেনে নিতে, আপনি যখন এসেছেন আমাকে আপনার সাথে নিয়ে যান, না হয় আমি দম বন্ধ হয়ে এখানে মারা যাবো, ‘কান্না করে’

শাহারিয়া বেশ আশ্চর্য হয় আরুপিতার কোথায়, তাই কিছুটা অস্বাভাবিকভাবেই বললো,

শাহরিয়া— তুমি অন্য কাউকে গ্রহণ করতে যাবে কেন? আমাকে ছাড়া থাকতে বা তোমাকে কে বলেছে? আর এখান থেকে তোমাকে নিয়ে বা যাবো কেন?

অরু— কারন আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আর এই বিয়েটা আমি মানি না।

শাহারিয়া— কিন্তু আমি তো মানি,

অরু— শাহরিয়া এটা মজা করার সময় নয়, আমাকে নিয়ে চলুন এখান থেকে আমরা পালিয়ে যাই। নয়তো আপনাকে এভাবে দেখলে কুরুক্ষেত্র বেজে যাবে।

শাহারিয়া— আজব কে কুরুক্ষেত্র বাজাবে? আমার ঘর আমার বউ আমি ফুলশয্যা করতে এসেছি, এতে কুরুক্ষেত্র কে বাজাবে? কার এত বড় সাহস যে আমাকে ফুলশয্যা করতে ডিস্টার্ব করবে, কত কষ্ট করে ঝামেলা শেষ করে বউটার কাছে এসেছি আর এখন বউটাই কি’সব উল্টোপাল্টা কথা বলছে।

অরু— কি সব আবোল তাবোল বলছেন আপনার ফুলশয্যা হতে যাবে কেন?

শাহারিয়া— তো বিয়ে টা তোমাকে কে করছে? আমি করেছি, তো ফুলশয্যা তো তোমার আমারি সাথে হবে, তাই না,

অরুপিতা কিছুক্ষণ ‘হা’ করে শাহারিয়ার দিকে চেয়ে থাকলো, সব যেন তার মাথায় উপর দিয়ে গেল, কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার। ওর বিয়ে রিহানের সাথে হয়নি,ওর ভালোবাসার মানুষ টার সাথেই হয়েছে? কিন্তু রিহান তো সামিরার ভাই, তাহলে কি করে শাহরিয়ার সাথে, ‘না’ অতঃপর বোকার মত প্রশ্ন করলো।

অরু— তাহলে আপনি ও কি সামিরার ভাই?

শাহারিয়া— হ্যাঁ আমি সামিরার ভাই,আর তোমার বিয়ে আমার সাথে হয়েছে,

অরু— তাহলে ওই রিহান??

শাহরিয়া এতক্ষণ পর বুঝতে পারে তার অরু এই কথা গুলো কেন বলছিল। তাই সুন্দর করে তাঁর মায়াবতী কে বোঝানোর চেষ্টা করে বললো।

শাহারিয়া— আমি জানি না তুমি এ সব কথা কেন বলছো। তবে আমি তোমার অবগতির জন্য বলেছি।

~~ আমার ‘আব্বুরা’ দুই ভাই, বোন নেই, চাচ্চু বড় , আমার আব্বু ছোট্ট, চাচ্চুর এক ছেলে , আর আব্বুর আমারা দুজন, সামিরা আর আমি, আর রিহান আমার আর সমিরা, বড়ো চাঁচার একমাত্র ছেলে, রিহানের আর কোন ভাই বোন নেই।ও একা,আর সেদিন বাবা’মা যখন তোমাকে দেখতে গেছিল, তখন আমার জরুরি একটা ছিল তাই তাদের সাথে যেতে পারিনি,আর বাবা’মাকে তো আর একা পাঠানো যায় না, আর সামিরা ও সেদিন ভার্সিটিতে ছিল, তাই সেদিন রিহান তাদের সাথে তোমাদের বাসায় গিয়েছিল, আর সেখানেই তোমার হয়তো কোনো ভুল ধারণা হয়েছে,

অরুপিতা শাহারিয়ার কথা শুনে স্তব্ধ বণে যায়,ও কি শুনছে, রিহান নয় শাহারিয়া সামিরার আপন ভাই,আর ও কিনা ভুল বুঝে সামিরা কে কত কিছু বলে কষ্ট দিয়ে ফেললো, এখন কিভাবে অরু সামিরার কাছে ক্ষমা চাইবে? সেই মুখ কি তার আছে? না একদম নেই, কিন্তু ক্ষমা তো চাইতে হবে, সেটা যে করে হোক। সামিরার কাছে ওর জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল, কিন্তু সেদিন ঋতু, মায়া যেভাবে বলেছিল, অরু তো আপন ভাই ভেবে নিয়েছিল, ভুল তো তার সামিরার না, তার ভালোবাসার মানুষটির নাম তো একবার ও উচ্চারণ করেনি, শুধু বলে গেছে,সে তার ভাই কে নয় অন্য একজন কে ভালোবাসে, যদি নাম টা বলে দিত, তাহলে তো ভুল বোঝাবুঝি টা হতো না, অরুপিতার এখন নিজের উপর ভিশন রাগ হচ্ছে,যে করেই হোক সামিরার সাথে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিবে।

শাহরিয়ার— যা হাওয়া হয়েছে,যা বোঝার বুঝেছো, এখন তার জন্য আমি আমার বাসোর রাতটা নষ্ট করতে চাই না,মাই চাঁদকুমারী তাই কাম , হাত দিয়ে অরু কে ইশারা করে।

অরু শাহারিয়ার ঠোঁট কাটা কথায় বেশ লজ্জা পায়,তাই স্থির অবস্থায় এখানেই দাঁড়িয়ে রয়,অরু কে লজ্জা পেতে দেখে শাহারিয়া আবার বললো।

~~ আমার কিন্তু টুইন বেবি চাই, তাই এখন থেকেই কাজ চালিয়ে যেতে হবে, তাই দেরি না করে আমার কাছে আসো তো,যতো দেরি করবে তোমারি লচ, কারণ আমার কিন্তু বেবির চাহিদা বাড়বে কোয়ই কমবে না, টুইন এর জায়গায় তৃপল, হয়ে যেত পারে,

“অরুর এমন কথায় কান থেকে ধোঁয়া বের হয়ে যায়, শরীরের মধু মধু কাঁপন শুরু হয়,তাই এমন কথা সহ্য করতে না পেরে আবারো শাহরিয়া কে জরিয়ে ধরে বললো।”

~~ চুপ করুন আপনি, আমি সহ্য করতে পারছি না,

“শাহরিয়া ও আর কিছু না বলে হুট করে অরুকে কোলে তুলে নেয়, আস্তে আস্তে অরুকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,অরুর গায়ের গহনা খুলতে থাকে, কিছুক্ষণ পর চোখ যায় অরুর লিপিস্টিক লাগানো ঠোঁটের দিকে, ব্যাস অরুর ঠোঁট টা সাথে সাথে নিজের দখলে নিয়ে নেয়।অরু ও শাহরিয়া কে কোন রুপ বাঁধা দেয় না, অরুর বাধা না পেয়ে শাহারিয়া পুরোপুরি অরুতে মত্ত হয়, তাঁরা দুজন চলে যায় এক নতুন ভালোবাসার সূচনায়, দুজন একে অপরের সাথে মিশে যায় এক গভীর ভালোবাসায়।

গভীর রাত, অরু শরীরে শুধু একটা চাদর পেঁচিয়ে শাহারিয়ার বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে, এখানেই যেন অরুর ভিশন শান্তির স্থান, শাহরিয়া ও অরুকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে,অরু শাহারিয়ার বুকে মাথা রাখা অবস্থায় বললো,

~~ আপনি আমাকে কোনদিন ছেড়ে যাবেন না তো?? এভাবেই নিজের কাছে আগলে রাখবেন তো?? ‘অরু’

“শাহরিয়া অরুর কাপালে গভীর একটা চুমু একে দিয়ে বললো”

~~ দেহে যদি রুহ টাই না থাকে তখন মানুষ টাকে মৃত্যু বলে, ঠিক তেমনি শাহারিয়া নামে মানুষ টার জিবনে অরুপিতা নামে মেয়েটা না থাকে তো পুরো জীবন টাই বৃথা যাবে,

কলমে~মরিয়ম জুথি

[জীবনে হয়তো কোনো ভালো কাজ করেছিলাম তাই তো তোমাকে পাওয়া] ‘শাহারিয়া’

********************************************

“কালকে রাত থেকে সামিরা কে কোথাও দেখছি না, রুমে খুঁজলাম, সাড়া বাড়ি খুঁজলাম কোথাও পেলাম না, গেল কোথায় মেয়েটা? ‘সায়লা’

মুক্তা— ছোট্ট এখন ওনাদের তো বিষয় টা জানানো উচিত, মেয়েটা কিছু আবার হলো না তো? রিহান কেও কালকে থেকে দেখতে পারছিনা, ‘রিহানের মা’

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে সামিরা, সামনে হিংস্র হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিহান, কি অসম্ভব রাগে সাপের মত ফোঁস ফোঁস করছে, সামিরার তো রিহানের এমন ভয়ংকর রাগ দেখে সমস্ত শরীর শিওরে উঠেছে, একটু পর পর কেপে উঠছে ছোট্ট শরীর টা,কাপালে যে তার শনি আছে বুঝতে একটুও অসোবিধা হলো না, মুখ দিয়ে কিছু বলতে ও পারছে না, মুখটা ও টেপকশ লাগানো, সামিরা কে ছোটাছুটি করতে দেখে রিহান বললো।

~~ আমার দেওয়া গহোনা তোর শরীর থেকে খুলতে নিষেধ করেছিম না? কিন্তু না তুই সব তোর শরীর থেকে খুলে ফেললি, তুই আমার অবাধ্য হলি, এই রিহান অরণ্যর অবাধ্য হলি, এমন কি অন্য ছেলেদের সাথে গা গেসাগিসী,করলি। যেটা আমি আমি একদমই সহ্য
করতে পারিনা, এখন তো এর শাস্তি তোকে পেতে হবে, বলে সামিরার হাতে পায়ের বাঁধন খুলে টেনে উঠিয়ে,

~~ ঠাসসসসসসসসস

চলবে 😒😁

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে