#অপেক্ষা
#Mariam_akter_juthi
#পর্বঃ11 [হলুদ অনুষ্ঠান]
[অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ]
রিহান— আজকে তো ভাইয়ের গায়ে হলুদ,তাও আবার তোর প্রিয় বান্ধবীর সাথে, সেখানে তো নিশ্চয়ই ঢ্যাং ঢ্যাং করতে করতে যাবি??
সামিরা— ,,,, —-
রিহান— চল আমার সাথে, রিহানের সব বন্ধুদের চলে যেত বলে সামিরার হাত ধরে কিছুটা হেঁটে ওর গাড়িতে উঠে একটা গয়নার শপে গিয়ে গাড়ি থামায়।
সামিরা এতক্ষণ রিহানের সাথে ওর সব বন্ধুরা ছিল বলে মুখ থেকে একটা কথা পর্যন্ত বের করেনি, হঠাৎ এখন গয়না শপে আসতে দেখে কিছুটা সাহস নিয়ে জিজ্ঞেস করল।
সামিরা— আপনি আমাকে এখনে কেন নিয়ে এসেছেন??
রিহান— আরে বউ, বিয়ে হয়েছে তোর, তোকে দেখে যদি বিবাহিতা মহিলাদের মতো না লাগে তাহলে তোর কিসের বিয়ে হলো,
~~ এখন ভিতরে চল আমার সাথে।
সামিরা— কিন্তু আমি তো বিবাহিত মহিলাদের মতো হতে চাই না, মিন মিন করে
রিহান— তুই তো আমার বউ, তোকে তো বিবাহিত দের মত হতে হবে,আর সেটা আমি নিজে করবো।
“নাম করা H.N Gold shop, যেখানে রেড করা সব পন্য, একের পর এক গোল্ডের চুরি দেখছে,’রিহান’ কিন্তু ডিজাইন তেমন কোনোটার পছন্দ হচ্ছে না,রিহানের তামসা মুখটা গম্ভীর করে বসে দেখছে সামিরা,না পারছে এখান থেকে যেতে, আর না পারছে রিহান কে কিছু বলতে। চুপচাপ দাঁত কি’ড়’মি’ড় করে সহ্য করছে,”
“রিহান কিছুক্ষণ পর সুন্দর ডিজাইনের মোটা মোটা দুটো রুলি এনে সামিরার হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে সুন্দর মত পরিয়ে দেয়, ‘ফুটোনো’ নাকে ছোট নাকফুল টা খুলে মাঝারি সাইজের নাকফুল পরিয়ে দেয়। সাথে বেশ বড়সড় সাইজের একটা অনামিকা আঙ্গুলে আংটি পরিয়ে দেয়, সামিরা জেন রক্তে গড়া জলজেন্ত একটা শোপিজ , তাই রিহান তখন থেকে একের পর এক আনছে আর পুতুলের মত সামিরা কে পরিয়ে যাচ্ছে, সামিরা ও পুতুলের মত স্তব্ধ হয়ে বসে আছে, এছাড়া যেন এই মুহূর্তে তার নড়াচড়া নিষিদ্ধ, নড়াচড়া করলে তার জন্য মহা শাস্তি অপেক্ষা করছে,
“রিহান সামিরা কে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভালো ভাবে দেখে ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো”
~~ হুম এবার কিছু টা হলেও বউ টাইপের লাগছে,
“সামিরার এতক্ষণ পর্যন্ত রিহানের এমন আচরণে চুপ থাকলেও এখন যেন সহ্যের সিমার বাহিরে চলে যাচ্ছে, তাই এবার রিহান কে ভয় না পেয়ে, দাঁড়িয়ে রাগী মুড নিয়ে ঝাঁজালো কন্ঠে বললো”
সামিরা— তখন থেকে দেখছি আমার কাছে কিছু না জিজ্ঞেস করেই নিজের মর্জি মত যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছেন, প্রথমে বিয়ে এখন আবার অলংকার কি শুরু করেছেন এগুলো?? বলে যেই হাত থেকে রুলি গুলো খুলতে যাবে তখনই রিহান দাঁত কি’ড়’মি’ড় করে সামিরার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে শাসিয়ে বলল।
রিহান— তুই আমায় জ্ঞান দিবি? আমি তোর কথা শুনবো? তোকে জিজ্ঞেস করব? তোর অনুমতি চাইবো? নো ওয়ে, আমার জিনিস আমি যখন যেভাবে চাইবো সেভাবেই হবে,আর তুই আমার ছিলি, এখন সম্পূর্ণ অধিকারের সাথে আমার হয়ে গেছিস, তাই আমি যে ভাবে চাইবো তুই ঠিক সেভাবেই চলবি, আর যদি আমর কথা অমান্য করার চেষ্টা করিস তো তুই ভালো করেই জানিস এই রিহান অরণ্য কি করতে পারে,
“সামিরা রিহান কে এমনেই ভিশন ভয় পেত, এখন এভাবে কথা বলায় ভয়ে ওখানেই চুপচাপ বসে যায়,ওর ভাবতেই গা শিউরে ওঠেছে এই রিহান ওর স্বামী, তার সাথে ওকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকতে হবে,ও এই লোকটার সাথে মোটেই থাকতে চায় না, কিন্তু এই লোক যখন একবার মুখ থেকে বের করছে সামিরা ওর, তো সামিরা কোন ভাবেই এই লোকটার কাছ থেকে মুক্তি পাবেনা, সামিরা শুধু এই লোকটার কবল থেকে একবার ছাড়া পাক তারপর এই লোকটার সামনে একবারের জন্যও আসবে না।”
~~ তোমার গলায় একটা চেন দেখেছিলাম, ওটা খুলে আমার কাছে দেও, আর এটা গলায় পরে নেও,’রিহান’
“সামিরা বেশ আশ্চর্য হলো রিহানের মুখে তুমি শুনে, এই প্রথম রিহান সামিরা কে তুমি বলো।”
রিহান—কি হল কথা কানে যায় নি??
সামিরা— কিন্তু ওটা তো আমার ভাইয়া আমাকে গিফট করেছিল, আমি কেন ওটা আপনাকে দিতে যাবো??
‘রিহান বিরক্তিকর ভাব প্রকাশ করে সামিরা কে বললো’
রিহান— আমকে দিতে কে বলেছে, ওটা খুলে আমার টা পরতে বলেছি,
সামিরা— কিন্তু ও,,
“সামিরা রিহানের রাগী ফেস টা দেখে ভয়ে চুপসে যায়, তাই চুপচাপ হিজাবের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে গলা থেকে ভাইয়ের দেওয়া চেন টা খুলে রিহানের দেওয়া চেন টা পড়ে নেয়,”
“ব্যাস এবার তোকে আমার বউ বউ লাগছে, আর একটা কথা, আমি যেন এক মুহূর্তের জন্য ও দেখি না, আমার দেওয়া চিহ্ন একবারের জন্যও তোর শরীর থেকে আলাদা করেছিস,আর যদি এমনটা হয় তো প্রলয় নিয়ে আসবো তোর জীবনে, তুই ভাল করেই জানিস আমার রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না, বাকি টা তোর উপর, আর হ্যাঁ ভালো করে শুনে রাখ কোন ছেলের আশে পাশে ঘিসপি না, পরিমাণ তোর জন্য ভালো হবে না”
সামিরা তো মহা চিন্তায় পড়ে গেছে,এই সব পরে যদি বাসায় ঢুকে,তো মা নিশ্চিত এমন যেরা শুরু করবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সত্যি টা যানতে পারবে, ততক্ষণে পর্যন্ত ছারবে না,আর যদি একবার ওর ভাইয়ের চোখে পরে তো শেষ, আর এদিকে মহাশয় কে মেনে নিতে না পারলেও তার কথা অমান্য করলে লয়’প্রলয় পাকিয়ে ছারবে,কি করবে কিছুই বুঝতে না পেরে রিহান কে রাগী রাগী ভাবটা আনার চেষ্টা করে বলল।
সামিরা— আমি এই বিয়েটা মানি না, আর না আপনার দেওয়া গহোনা আমি পারবো। তাই এটাই ভালো হবে আপনার জিনিস আপনি নিয়ে যা,
~~ ব্যাস অনেক বলেছিস,’সামু’ তুই এমন কোন কিছু করিস না যাতে আমি কন্ট্রোল হারিয়ে তোর সাথে খারাপ কিছু করি,আর বাকী রইল বিয়ে মানা বা না মানা, আমার যখন মনে চাইবে তোকে আমার সাথে রাখবো তোর ইচ্ছে থাকুক বা না থাকুক তোকে আমার কাছেই থাকবে হবে, এতে তুই বিয়ে মানিস বা না মানিস।
*********************************************
“পুরো বাড়ি রং বেরঙের বাতি জ্বলছে,আলো সাজসজ্জায় সজ্জিত চৌধুরী বাড়িটা পুরো ঝকঝক করছে, কিছুক্ষণ পরেই শুরু হবে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান, খাওয়া দাওয়া,তারপরে রাত ১২ সঙ্গীত অনুষ্ঠান, আনন্দের জেন শেষ নেই, সামিরা তো দিব্বি ভুলে বসে আছে, তখন কার রিহান আর ওর বিয়েটা, তখন বাসায় এসে বিয়ে টা কেউ বুঝে না যায় তাই দরজার সামনে এসেই রিহানের দেওয়া সব গহনা খুলে বাসায় ঢুকছে, তারপর থেকে এমন মুড নিয়ে চলেছে যেন ওর সাথে আজকে কোন কিছুই হয়নি, প্রতিদিনের মত আজও ও স্বাধীন, তাইতো ভাইয়ের হলুদে হলুদ শাড়ি পড়ে হলুদ গহোনা পরে পরী পরী সেজে বসে আছে, ভাইয়ের হলুদ লাগানোর শেষ হলে সেই হলুদ অরু কে লাগাতে যাবে, আনন্দে যেন তর সইছে না, সামিরার অরু তার ভাবি হতে চলেছে,অহহ ভাবলেই খুশি খুশি লাগে,”
“কিছুক্ষণ হলো শাহরিয়া কে, হলুদ লাগানো শেষ সাবাই শাহারিয়া কে গোসলের জন্য নিয়ে গেছে, অনেকের প্রায় খাবার খাওয়া শেষ, মাত্র কিছু নির্দিষ্ট লোক খাইনি কারন, এখন কন্যা পক্ষের বাড়ি সবাই হলুদ তত্ত্ব নিয়ে যাবে,আর যারা যাবে সবাই সেখানেই খাওয়া দাওয়া করে আসবে, সামিরা সেই দলেরি একজন, তত্ত্ব নিয়ে দারিয়া আছে, কখন বড়রা যেতে বলবে, কিছু সময় পরেই সেই মূহুর্ত টা চলে এলো,সামিরা কে আর পায় কে, কেউ বলার আগেই গাড়িতে বসে পরেছে, সামিরার এমন কান্ডে ওখানে থাকা প্রায় সকলে হাসতে হাসতে শেষ,”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
“ওনারা বেরিয়ে পরেছে, তোমারা অরু কে তারাতাড়ি রেডি করে নিয়ে মঞ্চে বসাও”, ‘আলেয়া’
বিষন্ন আঁধারে ডেকে আছে এক অষ্টদাসীর মন, মনে হাজারও সংকোচ কিভাবে মেনে নিবে ও, ও তো আরেকজন কে ভালোবাসে, তাকে না পেলে এই ব্যর্থ জীবনের কোন মূল্য নেই, কেউ কেন বুঝতে পারছে না,সে এই বিয়েটা করতে চায় না,সে এই বিয়ে করে কখনো সুখী হবে না। সে জীবনে দ্বিতীয় বার একজনকে ভালোবেসেছে, সেই ভালোবাসা সে তৃতীয় কাউকে দিতে পারবে না,আর না সে দিতে চায়,আর শাহারিয়া? সে হয়তো জানেনও না,তার সাথে আরু বেইমানি করছে, যদি জানতে পারে তাখন কি হবে? শাহরিয়া কি অরুপিতা কে ক্ষমা করতে পারবে? নাকি অরু ওনাকে ঠকিয়েছে শুনে সারাজীবন ঘৃণা করবেন?
” সামিরা অরু কে দেখা মাএ ছুটে গিয়ে বুকের সাথে জরিয়ে ন্যায়, অস্থির কন্ঠে বলতে লাগলো।
~~ অবশেষে তুই আমার মিষ্টি ভাবী হতে চলেছিস, আমার যে কি খুশি লাগছে না তোকে বলে বোঝাতে পারবো না,
“অরু সামিরা কে দেখে মনে মনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো,তাই সামিরা কে নিজের থেকে সরিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো”
অরু— তোর তো মনের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে, এখন আমর সামনে থেকে যা, তুই নামক ব্যক্তি আমার সামনে কখনো আসবি না, ‘কিছুটা চেঁচিয়ে’
তার অরু হঠাৎ তার সাথে এমন আচরণ করছে কেন সামিরা বুঝে উঠতে পারলো না, তাই কিছু টা কৌতুহল হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
সামিরা— কি হয়েছে তোর অরু , হঠাৎ এমন কথা বলছিস কেন?
অরু— তোর মতো মানুষ আমার বন্ধু হতে পারে না, তোরা সবাই খারাপ, নিজেদের টা খুব ভালো করে বুঝিস, অন্য কারো মনের দিক টা বুঝিস না,
চলবে,,