অন্যরকম ভালোবাসা পর্বঃ ১১(শেষ পর্ব)

0
3980

অন্যরকম ভালোবাসা পর্বঃ ১১(শেষ পর্ব)
© আবির খান

আবিরের মাঃ কি মায়া মা তুমি কি এই বিয়েতে রাজি??
মায়াঃ জ্বি নাহ…আমি রাজি না…আমি পারবো না এই বিয়ে করতে..

উপস্থিত সবাই মায়ার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায়…সবচেয়ে বেশি শকড হয় আবির..আবির ভাবে যাকে এতো ভালোবাসি,যাকে ছাড়া হয়তো আর জীবন চলবে না তাকে সারাজীবনের জন্য আজ আমার করতে আসলাম..আর সে এখন বলছে কি…

মায়ার মাঃ কি বলছিস মায়া??তোর মাথা ঠিক আছে???
মায়াঃ বিয়ে আমিও করতে চাই মা… তবে উনার কাছ থেকে আগে আমার কিছু জানার আছে…
আবিরের মাঃ মায়া মা তোর যা ইচ্ছা তুই জান…কিন্তু আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিসনে..
মায়াঃ জ্বি মা…আমি আপনার সাথে একান্তে একটু কথা বলতে চাই…আবিরকে উদ্দেশ্য করে..

আবিরকে নিয়ে মায়া উপরে ছাদে চলে যায়..
আবিরঃ মায়া তুমি কি করছো কিছু বুঝতে পারছো???
মায়াঃ আমি সবই বুঝে করছি..
আবিরঃ তাহলে এগুলো কি??রাগী হয়ে…
মায়াঃ আপনি আমাকে ভালোবাসেন???
আবিরঃ কোন সন্দেহ আছে???
মায়াঃ না নেই..আচ্ছা আমাকে কি সত্যিই বিয়ে করতে চান??
আবিরঃ অবশ্যই না হলে কি মাকে এখানে নিয়ে আসি…
মায়াঃ যদি সত্যিই আমাকে নিজের করে সারাজীবনের জন্য পেতে চান তাহলে আমাকে আপনার আসল পরিচয় দিন…
আবিরঃ দেখ মায়া…তুমি যেটা চাচ্ছো সেটা সম্ভব না…আমি পারবো না বলতে…
মায়াঃ আপনি নিশ্চয়ই কোন খারাপ কাজ করেন তাই আমাদেরকে কাউকে বলতে চাচ্ছেন নাহ..
আবিরঃ না আমি কোন খারাপ কাজ করিনা…
মায়াঃ তাহলে বলতে সমস্যা কি??যদি আমাকে চান তাহলে আজ আমাকে বলতেই হবে…আর না বললে আমাকে ভুলে যান..সারাজীবনের জন্য…
আবিরঃ মায়া তুমি আমাকে এ কেমন সংকটে ফেলে দিলে??আমি তোমাকেও অনেক ভালোবাসি আর আমার কাজকেও অনেক ভালোবাসি…আমি এখন কি করবো??
মায়া আবিরকে জরিয়ে ধরে… খুব শক্ত করে…আর বলে…
মায়াঃ দেখেনতো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে..কি দেখতে পাচ্ছেন বলেনতো??
আবিরঃ আমার জন্য অনেক ভালোবাসা…
মায়াঃ আমাকে বিশ্বাস করেন না??
আবিরঃ সবচেয়ে বেশি করি..
মায়াঃ তাহলে বলে ফেলুন… আমি আজ পর্যন্ত কারো বিশ্বাস ভাঙিনি…আপনারটাতো আরো আলাদা কোনদিনও ভাঙবো না..
আবিরঃ আগে তুমি আমাকে ছুয়ে প্রমিজ করো…আমার এ পরিচয় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাউকে কোনদিন বলবে না…
মায়া খুব চিন্তায় পরে গেলো… তারপরও মনকে শক্ত করে বলল..
মায়াঃ প্রমিজ
আবিরঃ যদি এই প্রমিজ ভাঙ্গো তাহলে আমার মৃত্যু অনিবার্য…
মায়াঃ আমি মরে যাবো তাও আপনার এই প্রমিজ ভাঙ্গবে না..
আবিরঃ আচ্ছা শুনো তাহলে…

আজ থেকে ৩ বছর আগে আমি ১ম বর্ষে পড়া অবস্থায় একদিন রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম.. হঠাৎ আমি দেখলাম কমপক্ষে হলে ১০জন গুন্ডা মিলে একজন মধ্যে বয়সী লোককে মারছে…আমি একাই সব গুলোকে মেরে আধ মরা করে ফেলি…লোকটা খুব অবাক হয়ে যায়…তাই আমাকে একদিন তার সাথে একটা যায়গায় দেখা করতে বলে…আমি রাজি হই..আমি দেখা করতে যাই..তারা তাদের সম্পর্কে আমাকে অনেক কিছু বলে..যা আমিও তোমাকে বলতে পারবো না…আমি তাদের প্রোপোজালে রাজি হয়ে যাই…আমাকে বিভিন্নভানে টানা ১ বছর ট্রেনিং দেওয়া হয়..আজ আমি আমার এ কাজের সেরা… আমি কি জানতে চাও??
মায়াঃ জ্বি??গভীর আগ্রহে…
আবিরঃ আমি এদেশের একজন সিক্রেট এজেন্ট…আমার কাজ হলো এদেশকে সব ধরনের শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করা..দেশের মানুষকে সবধরনের খারাপ বিপদ থেকে রক্ষা করা…দেশকে বাচিয়ে রাখা..

আমি-
আবির খান-দি সেভেনস্টার সিক্রেট এজেন্ট অফ বিডি

মায়া আবিরের কথা শুনে ওখানে পাথরের মতো দাড়িয়ে থাকে…সে এতো বড় একটা মানুষের প্রেমে পরেছে. ভাবতেই মায়ার শরীর হিম হয়ে যাচ্ছে..
আবির ব্যাপারটা বুঝতে পারে…তাই মায়াকে কাছে গিয়ে খুব শক্ত করে বুকের মাঝে জরিয়ে ধরে…আর বলে..
আবিরঃ আমি জানি আমার এ কাজটা খুবই বিপদজনক..কিন্তু জানো আমার এই ২ বছর কাজে আমি আজ পর্যন্ত কোন মিশনে ফেল হইনি…কিন্তু ওইদিন তোমাকে হারানোর ভয়ে আমি কোন ভাবেই মিশনে মন দিতে পারিনি. তাই আমার এ অবস্থা হয়..এখন তুমি বলো..তুমি যদি আমার না হও তাহলে নেক্সট মিশনে তো আমি মার….
মায়া আবিরের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে..আর বলে..
আমার গৌরব হচ্ছে আপনাকে পেয়ে…আপনি কোটি কোটি মানুষের নিশ্চিন্তে ঘুমের কারণ…আপনার কারনেই আমাদের এই দেশ শত্রু মুক্ত… সত্যিই আমি ধন্য আপনাকে পেয়ে…হ্যা আমি মায়া আপনাকে ভালোবেসে এক্টুও ভুল করিনি…আর আমার মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই তিনি আপনাকে আমার স্বামী হিসেবে করে দেওয়া জন্য…
আবিরঃ কি তার মানে তুমি রাজি??
মায়াঃ জানি না…লজ্জা পেয়ে..
আবিরঃ মায়া সত্যিই তুমি না আমিই ধন্য তোমাকে পেয়ে…আর আমিও ওই মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই তোমাকে আমার স্ত্রী করে দেওয়ার জন্য…

মায়া আবিরকে জরিয়ে ধরে কেদে দেয়…
আবিরঃ আরে বোকা মেয়ে কেদোনা…বিয়ের দিন কেদো..হাহা
মায়াঃ দুষ্ট একটা..ভালোবাসি অনেক অনেক ভালোবাসি…
আবিরঃ কিন্তু আমিতো বাসি না..
মায়াঃ কি?????
আবিরঃ তোমার নাকে ঘি….হাহা..
এবার মায়াও হেসে দেয়…আর আবির তার মায়াবতীর সেই মায়াময় হাসি দেখতে থাকে…

নিচে সবার কাছে এসে…
আবিরঃ মা মায়া রাজি এই বিয়েতে..
মায়ার বাবাঃ কি মা রাজি??
মায়া মাথা নারিয়ে উত্তর দেয়…
মায়ার বাবাঃ যাক মাশাল্লাহ..
আবিরের মাঃ মাশাল্লাহ…নেন বেয়াই আর বেয়াইনসাব মিষ্টি খান…

এরপর খুব ধুমধামে আবির আর মায়ার বিয়ে হয়ে যায়…মায়া তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে কাদতে কাদতে বিদায় নিচ্ছে…আবির মায়ার হাতটা শক্ত করে ধরে গাড়িতে বসে আছে আর সবাইকে বিদায় দেয়ে চলে যাচ্ছে…

আবিরঃ রামু যেখানে বলছিলাম সেখানে নিয়া যাও…
মায়াঃ এই রাতে কোথায় নিয়ে যাবে??আর কেন??একটু আশ্চর্য হয়ে..
আবিরঃ তোমাকে শাস্তি দিতে…আমাকে বিয়ে করতে না চাওয়া হুম…
মায়াঃ আচ্ছা দিয়েন শাস্তি আপনার যা মন চায়..
আবিরঃ এটা কি হলো ও ভয় পেলো না কেনো??মনে মনে…
মায়াঃ আমি এখন আপনার বউ…ভয় পাবো কেন…এখনতে ভয় পাবেন শুধু আপনি..হাহা
আবিরঃ তুমি আমার মনের কথা বুঝলা কি ভাবে???
মায়াঃ আপনি যেভাবে বুঝেন সেভাবে…

এরপর মায়া আবিরের কাধে মাথা রেখে বসে আছে…প্রায় ২ ঘন্টা পর হঠাৎ গাড়িটা থেমে যায়…
রামুঃ স্যার এসে পরেছি…
আবিরঃ আচ্ছা…দেখি মায়া..বলে মায়ার চোখটা সুন্দর করে একটা কাপড় দিয়ে বেধে দেয়…চলো…

আবির মায়াকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে কিছু দূর হেটে মায়াকে দাড় করিয়ে দেয়…
আবিরঃ মায়া চোখের বাধন খুলো..

মায়া আস্তে করে চোখের বাধন খুলল..মায়া দেখতে পায় সে এক বিশাল নদীর সামনে দাড়িয়ে আছে…নদীর পাড়টা ছোট ছোট বিভিন্ন কালারের বাতি দিয়ে সাজানো…সবগুলো কেমন জ্বলজ্বল করছে.. মায়ার চোখ ধাদিয়ে যাচ্ছে এই আলোর মেলায়..নদীর পানিতেও মনে হচ্ছে আলো জ্বলজ্বল করছে…হঠাৎ মায়া দেখে পাড়ের একপাশে ঠিক নদীর ধারেই একটি সুইট সাজানো… সেখানেও আলোর মেলা..খুব সুন্দর লাগছে এসব দেখতে…নদী থেকে ভেসে আসা মিষ্টি ঘ্রাণসহ বাতাস এসে মায়ার মুখে লাগছে..মায়া চোখ বন্ধ করে বাতাসের ঘ্রাণ নিচ্ছে আর অনুভব করছে…হঠাৎ আবির এসে মায়াকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে… আর তার ঘারে আস্তে করে একটা চুমু দেয়..মায়া আবিরের স্পর্শ অনুভব করছে…আবির এবার মায়াকে তার দিকে ফেরায়…

একদম তাজা সুবাসযুক্ত লাল টুকটুকে কয়েকগুচ্ছ গোলাপ ফুল মায়ার সামনে ধরে হাটু গিরে বসে পরে…
আবিরঃ সেই প্রথম যেদিন তোমাকে ভারসিটিতে দেখেছিলাম..তুমি আমাকে বকছিলে..সেদিন তোমার ওই মায়া ভরা চোখের প্রেমে পরে যাই..মিষ্টি ওই ঠোট দুটোর প্রেমে পরে যাই…মায়াবী ওই মুখের হাসির প্রেমে পরে যাই…তোমার মিষ্টি কথার প্রেমে পরে যাই..তোমায় এক নজর না দেখলে রাতে ঘুম আসে না…আজ থেকে তোমায় নিয়ে এ জীবন শুরু আর তোমায় নিয়েই শেষ…আমার এই মায়াবতীকে অনেক ভালোবাসি নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসি…
আমায় ভালোবাসবে কি??

মায়া আবিরের হাত থেকে গোলাপ ফুল গুলো নিয়ে কাদতে কাদতে আবিরকে জরিয়ে ধরে…
মায়াঃ আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি নিজের থেকেও অনেক বেশি..
আবিরঃ উহুম…আপনি না আজ থেকে শুধু তুমি…
মায়াঃ তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি…কাদতে কাদতে..

আবির মায়ার দু গালে হাত দেয় আর মায়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হঠাৎ আবির মায়ার অশ্রু গুলো চোখে চুমু দিয়ে শুষে নেয়… আবির মায়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে… মায়া দেখলো আবির তার ঠোটের দিকে তাকিয়ে আছে… মায়া আস্তে করে চোখদুটো বন্ধ করে ফেলল…আবির মায়ার সম্মতি পেলে মায়ার রসালো ঠোটে আবিরে ঠোটগুলো ডুবিয়ে দেয়…মায়া শুধু আবিরের স্পর্শগুলো অনুভব করছে আর মনের অজান্তেই চোখ থেকে দুএক ফোটা খুশিতে অশ্রু ফেলছে…এ অনুভবে আছে আবিরের অবিরাম ভালোবাসা..এ অনুভবে আছে মায়াকে সারাজীবন তার করে রাখার
প্রতিশ্রুতি….
এরপর আবির আর মায়া তাদের অফুরন্ত ভালোবাসা নিয়ে মেতে উঠে আদিম খেলায় আর সেই সাথে পূর্ণতা পায় তাদের অন্যরকম ভালোবাসা….
>>>>>সমাপ্ত<<<<<

তাহলে গল্পতো শেষ… কেমন লেগেছে এই অন্যরকম ভালোবাসা আপনাদের কাছে??জানাবেন কিন্তু….

?ধন্যবাদ সবাইকে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে