অন্যরকম ভালোবাসা পর্বঃ ০৮
– আবির খান
আবিরঃ মিথ্যা বলছি…করি নাই মাফ..তোমাকে শাস্তি দিবো..এখন তোমার কি হবে মায়া…
মায়ার ভয়ে অবস্থা খুব খারাপ… হঠাৎ আবির মায়ার চোখগুলো একটা কাপড় দিয়ে বেধে ফেলে..
মায়াঃ একি করছেন আমার চোখ কেনো বেধেছেন..কাদতে কাদতে বলল..
আবিরঃ কথা কম আসো আমার সাথে..তোমাকে এখন তোমার শাস্তি দিব…
মায়াঃ প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন… আমি আর কোনদিন আপনার সামনেই আসবো না…প্লিজ আমাকে যেতে দিন..কান্না কান্না করতে করতে..
আবিরঃ মায়া…চলতে বলছি..গম্ভীর কন্ঠে
মায়া আর কোন উপায় না পেয়ে হাটতে থাকে…
কিছুদূর হাটার পর আবির মায়াকে থামায়..আবির আস্তে মায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়..আবিরের গরম নিশ্বাসগুলো মায়ার মুখের উপর পরছে..আর মায়া তা অনুভব করছে…
আবিরঃ চোখ বন্ধ রাখবে..আমি না বলা পর্যন্ত চোখ খুলবে না..খুললে কিন্তু শাস্তি বারিয়ে দিব..
আবির আস্তে আস্তে মায়ার চোখের বাধনটা খুলতে লাগলো…মায়া চোখ বন্ধ করে আছে…আবির মায়াকে দেখছে…কি নিস্পাপই না লাগছে মায়াকে…মেয়েটা কেদে কেদে চোখ গুলো ফুলিয়ে ফেলেছে…
আবিরঃ মায়া চোখ খুলো..
মায়া চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আবির ওর অনেক কাছে দাড়িয়ে আছে…তাদের মাঝের দুরত্বটা হবে ৪ আঙুলের…মায়া দেখে আবির তার দিকে তাকিয়ে হাসছে…মায়া আর নিতে না পেরে জোরে কান্না শুরু করে…আবির ভেবাচেকা খেয়ে যায় মায়ার এরকম কান্না দেখে..তাই
আবিরঃ চুপ একদম চুপ… এরকম কেউ কাদে..আমার কানটা মনে হয় শেষ..
মায়া ভয়ে চুপ হয়ে যায়.. এরপর আবির মায়ার সামনে থেকে সরে যায় আর মায়াকে কিছু দেখায়…
আবির সরে যেতেই মায়া দেখে একটা ফুচকার দোকান… কিন্তু মায়া ভেবে পাচ্ছেনা এই জনমানবহীন এলাকায় এই ফুচকাওয়ালা আসলো কোথা থেকে…
আবির আবার মায়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়…আবির তার দু হাত মায়ার দুগালে রাখে..মায়া কেপে উঠে..মায়া ভাবে উনি কি করতে যাচ্ছে..আবির মায়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর আঙুল দিয়ে মায়ার চোখের পানি গুলো মুছে দিচ্ছে…আর চুল গুলো ঠিক করে দেয়…মায়া অবাক হয়ে আবির কি করছে তা দেখছে…
আবিরঃ তোমার শাস্তি হলো এখন এখানে বসে যত খুশি ততো ফুচকা খাবা..বলেই আবির মায়াকে ছেড়ে হাসতে থাকে জোরে জোরে…
মায়া তাকিয়ে তাকিয়ে আবিরকে দেখছে..আর ভাবছে উনি আমার সাথে এরকম মজা করলো..উনার সাথে আর কথাই নাই..
আবির হাসতে হাসতে খেয়াল করলো মায়া রাগ করে অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে.. তাই আবির আবার মায়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়…আবার ওর দু গালে হাত দেয় আর বলে..
(আবির অনুভব করতে পারছে সে কোন গালে হাত দেয়নি যেনো তুলো ধরে আছে)
আবিরঃ বোকা মেয়ে…তুমি আমাকে এতো ভয় পাও কেন হুম??তোমারনা ফুচকা অনেক পছন্দ তাই একটু মজা করে এই সারপ্রাইজটা দিলাম…আর এত্তো কেউ কাদে..চোখ গুলো কেমন লাল করে ফেলেছো..
মায়া আবিরের কথা শুনছে আর তার এই স্পর্শ টা ফিল করছে…আবিরের যায়গায় অন্য কেউ যদি তার গালে হাত দিতো তাহলে ওর এতোক্ষনে ১২ টা বাজায় দিতো..কিন্তু আবিরের এই স্পর্শে মায়ার খারাপ লাগছে না বরং অনেক ভালো লাগছে…
আবির কথা বলতে বলতে মায়ার ঠোটের দিকে নজর যায়…কথা বন্ধ হয়ে যায়…আবির শুধু মায়ার ঠোটটাই দেখছে..কি সুন্দর গোলাপি ঠোঁট.. আবিরের মন চাচ্ছে এখনই নিয়ে নেই এর মিষ্টি স্বাদটা..
মায়া খেয়াল করলো আবির তার ঠোটে হারিয়ে গিয়েছে… কিছু একটা যে কোন সময়ই করে ফেলতে পারে তাই..মায়া দুষ্ট করে বলল..
মায়াঃ ফুচকা খাওয়াবেন না??
আবির যেন মায়ার কথার বোকা হয়ে গেলো.. ওকে ছেড়ে দিয়ে কোন রকম নিজেকে সামলে নিয়ে বলল….
আবিরঃ আসো..মুচকি হেসে…
আবির মায়া নিয়ে বসিয়ে দেয়…এক প্লেট ফুচকা নেয়..মায়াকে দেয় কিন্তু মায়া খাচ্ছে না..
মায়া ভাবছে এই লোকের কোন বিশ্বাস নাই…ফুচকায় আবার কিছু মিশায় দিছে কিনা আল্লাহই জানে…
আবির মায়ার মনের কথাটা বুঝতে পারে তাই মায়াকে বলে..
আবিরঃ আচ্ছা মায়া প্রথমে তুমি আমাকে একটা খাইয়ে দেও…
মায়াতো অবাক হয়ে যায় আবিরের কথা শুনে… উনি বলে কি..
আবিরঃ কি হলো দেও..
মায়া একটা নিয়ে আবিরকে খাওয়াতে গেলে লজ্জায় মাথা নিচু করে খাইয়ে দেয়…মায়াতো লজ্জায় যায় যায় অবস্থা… আর আবির পরম শান্তিতে মায়ার হাত থেকে ফুচকা খায়..
মায়াঃ ইস কি আরাম করে খাচ্ছে..লোকটার এরকম কেন..হুহ
এবার একটা ফুচকা নিয়ে আবির মায়ার সামনে ধরে..মায়া আর কিছু না মনে করে আবিরের হাসি মুখটা দেখতে দেখতে ফুচকাটা মুখে নেয়…মায়াতো ফুচকা খেয়ে পুরো পাগল…ও ওর লাইফে এর চেয়ে ভালো আর মজার ফুচকা কখনো খায়নি…তাই গুনে গুনে ১০ প্লেট ফুচকা খেলো মায়া…আর আবির শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে মায়ার ফুচকা খাওয়া দেখছে…একদম বাচ্চাদের মতো ফুচকা খাচ্ছে মায়া..
হঠাৎ মায়া ফুচকা খেতে খেতে আবিরের দিকে তাকিয়ে অনেক লজ্জা পায়..তাই সে এবার খাওয়া বন্ধ করে দেয় আর বলে..
মায়াঃ আসলে আমার লাইফে এর চেয়ে ভালো ফুচকা আমি আগে কখনো খায়নিতো…তাই লোভ সামলাতে পারিনি…
আবিরঃ এই পুরো গাড়িই তোমার জন্য…
মায়াঃ কি যে বলে আমি এতো খাই নাকি..
আবিরঃ এখন থেকে খাবা…
তাহলে আর তোমাকে কেউ আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না..মনে মনে বলল..
মায়াঃ একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি??রাগ করবেন নাতো??
আবিরঃ করবো না বলো..
মায়াঃ আপনি আমার বাসা কিভাবে চিনেন??আমার যে ফুচকা পছন্দ তা কিভাবে জানলেন??আমার নম্বর পেলেন কই??
আবিরঃ সব কথা জানতে হয়না…তুমি ফুচকা খাও..গম্ভীর কন্ঠে বলল…
তাই মায়া আর কিছু বলল না…
হঠাৎই আবিরের ফোনটা বেজে উঠলো.. মায়া খেয়াল করলো আবিরের রিংটোনটা অন্য সব রিংটোনের মতো না অন্যরকম…
আবির তারাতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে মায়ার থেকে একটু দূরে গেলো…
আবিরঃ আমি বলছি না আমি কয়েকদিন বিজি থাকবো..তাহলে ফোন দিয়েছেন কেন??
লোকঃ স্যার এদিকের অবস্থা অনেক খারাপ… আপনাকে লাগবেই…নাহলে আমাদের অনেকেই আজ শেষ হয়ে যাবে…স্যার আপনি প্লিজ তারাতাড়ি চলে আসুন..সাথে আপনার আর্মস নিয়ে এসে পরুন…আমি এড্রেস মেসেজ করে দিচ্ছি..
আবিরঃ আচ্ছা আপনারা একটা সেইফ জোনে যান আমি আসছি…
আবির অনেক টেনশনে পরে গেলো…আজ ও ওর সবসহ মায়াকেও হারাতে পারে..আবির তারাতাড়ি মায়ার কাছে ছুটে যায়..
মায়া দেখে আবিরকে কেমন জানি দেখাচ্ছে..একটু আগের আবির আর এখনের আবির সম্পুর্ন আলাদা..আবিরকে খুব টেনশনে মনে হচ্ছে..
আবিরঃ মায়া উঠো আমাদের এখনই যেতে হবে..
মায়াঃ কি হয়েছে আপনার?? এমন অস্থির অস্থির করছেন কেন??
আবিরঃ কিছু হইনি..
আবির কাউকে ফোন দিলো… ৫ মিনিটের মধ্যেই একটা ব্লাক গাড়ি এসে আবিরের সামনে থামলো…
আবির মায়ার কাছে গিয়ে দাড়ালো… মায়া দেখলো..আবিরকে খুব অন্যরকম লাগছে…কাউকে হারানো কষ্ট আবিরের মুখে ভেসে উঠেছে…
হঠাৎ আবির মায়াকে জরিয়ে ধরলো… কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিলো…মায়া কিছুই বুঝতে পারছেনা কি হয়েছে আবিরের..
আবিরঃ মায়া গাড়িতে উঠো..
মায়াঃ আপনি???
আবিরঃ তুমি যাও আমি পরে আসবো..
কথাটা বলতে আবিরের খুব কষ্ট হচ্ছে..কারণ এ দেখাই শেষ দেখা হতে পারে..
মায়া আর কিছু না বলে গাড়িতে গিয়ে বসে..আবির কেমন জানি অসহায় ভাবে মায়াকে কতক্ষণ দেখলো..,তারপর ড্রাইভারকে বলল..
আবিরঃ ওকে ঠিক মতো বাসায় পৌছে দিয়ে আসবে..এর জেনো বিন্দুমাত্র কোন ক্ষতি না হয়..
ড্রাইভারঃ ওকে স্যার…
মায়া কিছুই বুঝছেনা..শুধু তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে..কি হয়েছে ওনার…কে ফোন দিয়েছে ওনাকে??উনি এমন করছে কেন??এসব ভাবতে ভাবতেই গাড়িটা ছেড়ে দিচ্ছে..মায়া তারাতাড়ি জানালা দিয়ে পিছে আবিরের দিকে তাকায়..আবির দাড়িয়ে আছে মায়ার দিকে তাকিয়ে..হঠাৎ মায়ারও খুব খারাপ লাগছে..মনে হচ্ছে কি যেন হারিয়ে যাচ্ছে…একটু আগেওতো সব ভালোই ছিলো…আর এখন কি হয়ে গেলো…কে এমন ফোন দিলো যে উনি এমন হয়ে গেলো…
মায়া চলে যায়…
চলবে…?