অন্যরকম ভালোবাসা পর্বঃ ০৫
– আবির খান
মায়া খুশি তে ক্লাস থেকে তারাতাড়ি বের হতে গিয়ে আবারও কারো সাথে ধাক্কা খেতে গিয়ে পরে যেতে নিলো..কিন্তু নিচে পরার আগেই আবির তাকে ধরে ফেলে…
আবির মুগ্ধ হয়ে ওই অবস্থায় মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে.. মায়াও আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে…আবির যেনো নিজেকে হারিয়ে ফেলছে ওই চোখ গুলোতে….আবিরের চোখ গুলো এবার মায়ার ঠোটে পরলো..আহ কি সুন্দর কারুকার্য..ঠোট জোরা একদম গোলাপি রঙের..কি মিষ্টি লাগছে দেখতে…আবির আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না…আশেপাশের সব কিছু কেমন থমকে দাঁড়িয়েছে.. আবির আস্তে আস্তে মায়ার ঠোটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে…মায়া কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না..
হঠাৎই অনু জোরে কাশি দিয়ে উঠলো..সাথে সাথে আবিরের ঘোর ভাংলো…আবির আস্তে করে মায়াকে তার বাহু থেকে তুলে দাড় করে দিলো..আর বলল..
আবিরঃ দেখে শুনে হাটাচলা করবে..সবসময় কিন্তু আমি থাকবো না..বলেই সেই মন মুগ্ধকর একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো…
আবির ভাবছে সে কি করতে যাচ্ছিলো… অনু না আসলেতো কি যে হয়ে যেতো… মায়ার সামনে নিজেকে হারিয়ে ফেলি..নাহ এভাবে হবেনা..কিছু একটা করতে হবে…ওর ভাবনায় শুধু আমাকেই থাকতে হবে..
অনুঃ মায়া কি হচ্ছিলো এসব??
মায়াঃ আমি কি জানি?? লজ্জা পেয়ে..
অনুঃ আমি না আসলে কি হতে জানতিস??
মায়াঃ কি হতো?? আড় চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো..
অনুঃ এহ কি সখ আবার শুনতে চায়…
মায়াঃ ধুহ..আচ্ছা ওনি এমন কেন??আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে থাকে… আমারও কেমন জানি লাগে দোস্ত…
অনুঃ হুম ডাল ম্যা কুচ কালা হ্যায়…হাহাহা..
মায়াঃ এই তুইকি রান্না টান্না শিখছিস নাকি??খালি ডাল নিয়াই আছিস..
অনুঃ হাহা..কি যে বলিস না..দেখিস তুই..কি ডাল নিয়া আমি আছি…
মায়াঃ ওকে..এখন চল ফুসকা খেতে যাই…
অনুঃ আচ্ছা চল…
অনু আর মায়া ফুসকা খেয়ে যে যার বাসায় চলে গেলো…
মায়া বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তার মায়ের রুমে গেলো..
মায়ার মাঃ এসেছিস মা আয় ভিতরে আয়??
মায়াঃ হুম..মা মাথায় একটু তেল লাগিয়ে দেওনা..
মাঃ আচ্ছা আয় মামনি লাগিয়ে দিচ্ছি..
মায়ার মা মায়াকে তেল লাগিয়ে দিচ্ছে মাথায় আর বলছে..
মাঃ তা মা ভারসিটিতে পড়াশোনা কেমন হচ্ছে..
মায়াঃ হুম ভালোই মা..
মাঃ তা সেই রাগী, ডেঞ্জারাস আবার ভালো ছেলেটা খবর কি??মুচকি হাসতে হাসতে বলল..
মায়াঃ লোকটা কেমন জানি… আমাকে কেমন করে জানি দেখে..
মাঃ কেন খারাপ ভাবে তাকায়??
মায়াঃ আরে নাহ মা…উনি অনেক ভালো..তার চোখ গুলো জেন কি বলতে চায় কিন্তু আমি বুঝি না মা..
মাঃ ওহ বুঝতে পারছি..শুন তোর বাবাও কিন্তু আমাকে এমন ভাবে তাকিয়ে দেখতেন যে আমি কিছুই বলতে বা বুঝতে পারতাম না..তার সেই তাকানিতে আমার খুব লজ্জা লাগত..কিন্তু ধীরে ধীরে সেই তাকানোর প্রেমে পরে যাই…
মায়াঃ তোমাদের লাভ ম্যারেজ ছিল মা??
মাঃ হুম…সেই ভারসিটি থেকে আমাদের প্রেম…
মায়াঃ তাইতো বলি বাবা আমার থেকেও তোমাকে কেন এতো ভালোবাসে..মুচকি হেসে বলল..
মাঃ যাহ দুষ্ট.. তোর বাবা তোকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে..আমি জানি..
মায়াঃ না না তোমাকেই..
মাঃ আচ্ছা মা তুই কাউকে ভালো বাসিস??
মায়াঃ নাহ…তেমন কাউকে পাইনি এখনো..
মাঃ কেন রাগী ছেলেটা??
মায়াঃ ধুহ কি যে বলো না…উনি যে রাগী আর ডেঞ্জারাস… আমারতো ভয়ই লাগে…
মাঃ হাহা..একদিন দেখা করাস..
মায়াঃ দেখি…মা আজকে তোমার কাছে ঘুমাই??
মাঃ আচ্ছা ঘুমা..
মায়াঃ আজকে বাবা হল রুমে ঘুমাক..হিহি..
মাঃ হুম ভালোই হবে..হাহা..আয় তোকে ঘুম পরিয়ে দি…
এরপর মায়া তার মায়ের আদরে ঘুমিয়ে যায় ঘুমের দেশে…
এরপরের দিন..
রানাঃ কি খবর দোস্ত তোর??
আবিরঃ হুম ভালোই..কই ছিলি তোরা সবাই..কখন থেকে বসে আছি..
কনকঃ আরে বলিস না..স্যার আটকায়া রাখছে..আমরাতো আর আপনার মতো এতো ভালো ছাত্র না..তাই স্যারে এক্সট্রা লেসন দিলো..
আবিরঃ আচ্ছা বল কি খাবি??
রানাঃ খাওয়া তোর যা ইচ্ছা..
হঠাৎ আবিরের এস্মার্ট ওয়াচটা ভাইব্রেটর করে উঠলো… একটা মেসেজ এসেছে..আবির মেসেজটা পড়েই..
আবিরঃ আচ্ছা দোস্ত তোরা যা ইচ্ছা খা..আমি বলে যাচ্ছি..আমার একটু যেতে হবে একটা কাজ আছে..
কনকঃ আচ্ছা যা..
আসলে আবিরের মায়ের মেসেজ আসছে.. ওকে অফিসে ডাকছে..
আবির বাইক নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হতে নিতেই দেখে তার মায়া দাড়িয়ে আছে..
আবিরঃ একা দাঁড়িয়ে আছো কেন??অনু কই??আর বাসায় যাওনি কেন??
মায়াঃ বাসের জন্য দাড়িয়ে আছি..অনুর মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরায় ও চলে গেসে আগেই..
আবিরঃ ওহ..আচ্ছা..উঠো..
মায়াঃ সরি বুঝলাম নাহ..
আবিরঃ বাইকে উঠো..আমি দিয়ে আসি..
মায়াঃ না ভাইয়া আমি একা যেতে পারবোনো..
আবিরঃ এদিকে আসো..
মায়া একটু সামনে এগিয়ে গেল.. আর আবির বলল..
আবিরঃ এই পুরো ভারসিটিতে আমি সবার ভাইয়া হতে পারি..তারা আমাকে ভাইয়া ডাকতে পারে..কিন্তু তুমি আর কখনো আমাকে ভাইয়া ডাকবা না..রাগী কন্ঠে বলল..
মায়াঃ তাহলে কি বলব??..মায়া আস্তে বলল..
আবিরঃ তোমার যা ইচ্ছা..এখন তারাতাড়ি বাইকে উঠো..
মায়াঃ না আমি যেতে পারবো…
আবিরঃ চুপ একদম চুপ..
মায়া ভয় পেয়ে যায়…আবির ইশারা করে মায়াকে কাছে আসতে বলে..মায়া ভয়ে ভয়ে আবিরের কাছে চলে যায়..আবির নিজ হাতে মায়াকে সুন্দর করে হেলমেট পরিয়ে দিচ্ছে..মায়া তা দেখছে আর ভাবছে..
মায়াঃ এই লোকটা দেখতে কত সুন্দর কিন্তু এর ভিতরে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে…এই কত রাগী আবার মুহূর্তেই কত ভালো…
হেলমেট পরানো শেষ…কিন্তু মায়া এখনো আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে…আবির মায়াকে ডাক দিলো..তাও কাজ হচ্ছে না..তাই একটা ঝাকি দিলো..সাথে সাথেই মায়া নরমাল হয়ে গেলো আর লজ্জাও পেলো..আবির ব্যপারটা বুঝতে পেরে বলল..
আবিরঃ উঠো…
মায়া আর দেরি না করে আবিরের বাইকে উঠে পরলো কিন্তু…
চলবে…?