অন্যরকম ভালোবাসা পর্বঃ ০৪

0
3315

অন্যরকম ভালোবাসা পর্বঃ ০৪
– আবির খান

মায়ার নাম্বারটা অলরেডি পেয়েগেছে আবির…তাই মায়াকে ফোন দিলো আবির..

মায়াঃ হ্যালো…
আবিরঃ….
মায়াঃ কে বলছেন??কথা বলুন…
আবিরঃ…
মায়াঃ আরে কথা বলছেন না কেন…ধুহ..
মায়া ফোনটা রেখে দিলো…

আসলে আবির শুধু মায়ার মিষ্টি কন্ঠটা শুনার জন্যই ফোন দিয়েছিল…

মায়াঃ ফোন টা কে দিলো..কথা বলল না…যাজ্ঞে যে দেওয়ার দিছে আমার কি…
মায়া আবার ভাবছে…
মায়াঃ আচ্ছা ওনি এভাবে রেগে কই গেলেন??লোকটা আমাকে আবার কিছু করবে নাতো?? কি কারণে যে ওনাকে বকা দিতে গেলাম..নাহ আর ভালোই লাগছে না…মায়া এসব ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়…

আবির আকাশে চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে… এতো দিন চাঁদটাকে ভালোই লাগতো… আজ কেন যেনো ভালো লাগছে না…চাঁদের মাঝে শুধু মায়ার মায়াবী মুখটাই ভেসে উঠছে..আবিরও একসময় তার রুমে এসে ঘুমিয়ে পরে…

সকাল ৮টা…
আবিরের ফোন বাজছে…আবির ফোনটা দেখেই তারাতাড়ি রিসিভ করলো…
লোকঃ স্যার কাজ শেষ… আপনাকে ম্যাম এর সব ইনফরমেশন মেইল করে দিয়েছি…
আবিরঃ সব ঠিক আছে তো??
লোকঃ জ্বি স্যার ১০০% সিউর..
আবিরঃ আচ্ছা..আর আমেরিকা থেকে যেটা আনতে বলে ছিলাম সেটা কি আনা হয়েছে???
লোকঃ জ্বি স্যার… কাল রাতে হাতে পেয়েছি..
আবিরঃ চেক করেছেন??
লোকঃ জ্বি স্যার… ২০০ থেকে ৩০০ ফিট দূর থেকেও সট মিছ হবেনা…30 রাউন্ড ইন 15 সেকেন্ড.. ফুল মেনুয়াল..
আবিরঃ আচ্ছা… তুমি আমাকে আজ রাতে দিয়ে যেও…আর শুনো কয়েকদিন আমি ব্যাস্ত থাকবো..আমি যেন কোন ফোন না পাই..
লোকঃ ওকে…
আবির ফোনটা কেটে দিলো..এখন আবিরের টার্গেট শুধু মায়া..মানে তার মন জয় করা…

আবির ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসে আছে..
আবিরঃ মা অবনি কই??
মাঃ ঘুমাচ্ছে বাবা…
আবিরঃ ও আচ্ছা ঘুমাক..কাল ওর সাথে আর দেখাই হয়নি..
মাঃ তা তুই আজ এতো সকালে ঘুম থেকে উঠলি??
আবিরঃ না মানে…একটা কাজ আছে তাই…
অবনিঃ আরে এ দেখি মাই ডিয়ার ভাইয়া..এত্তো আরলি হাউ??
আবিরঃ এদিকে আয় দুষ্ট..
অবনি আবিরের পিছে গিয়ে ওর গলা জরিয়ে ধরে বলল..
অবনিঃ বল ভাইয়া..
আবির একটা ব্যাগ অবনি কে দিলো..অবনি আবিরের পাশে বসে ব্যাগের ভিতরে দেখলো..
অবনিঃ ওএমজি..আইফোন এক্স ম্যাক্স…থ্যাংকস ভাইয়া…বাট হঠাৎ কেন দিলি??
আবিরঃ ভালো রেজাল্ট করেছিস তাই এটা দিলাম..রেজাল্ট খারাপ হলে কিন্তু একদম বিয়ে দিয়ে দিবো..
অবনিঃ মা দেখছো ভাইয়া কি বলে..
মাঃ ঠিকই ত বলছে..
আবির আর মা হাসছে…
অবনিঃ তোমারাও না…
আবিরঃ হইছে আর রাগ করতে হবেনা…মা নাস্তা দেও তারাতাড়ি..
মাঃ হ্যা দিচ্ছি…
অবনিঃ আচ্ছা ভাইয়া একটা প্রশ্ন করি??
আবিরঃ একটা কেন দুটো কর..
অবনিঃ আচ্ছা ভাইয়া আমাদের ধানমন্ডিতে এতো বড় একটা বাড়ি থাকতে তুমি আমাদের নিয়ে এখানে কেন থাকো??
আবিরঃ আরেক দিন বলবো…গম্ভীর কন্ঠে..
সাথে সাথে অবনি খেয়াল করলো আবিরের মুখটা কেমন যেনো হয়ে গেসে..ভয় হচ্ছে আবিরকে দেখে…
এরপর নাস্তা শেষ করে অবনিকে নিয়ে আবির ভারসিটিতে চলে যায়..

আবিরঃ অবনি তুই যা আমি বাইকটা পার্ক করে আসছি..
অবনিঃ আচ্ছা ভাইয়া…
আবির বাইক পার্ক করে ভিতরে আসতেই দেখে তার মায়াবতী দাড়িয়ে আছে…ফোনে কি যেন করছে..আবির আস্তে করে মায়ার কাছে গেলো.. মায়া খেয়াল করে নি…
আবিরঃ মায়া…
মায়া তার ডাক শুনে যেই তাকিয়েছে…তার পুরো শরীর ভয়ে কাপতে শুরু করেছে..
মায়া দেখে আবির তার সামনে দাড়িয়ে আছে..কিরকম ভাবে যেনো তার দিকে তাকিয়ে আছে..

আবির মায়াকে নয়ন ভরে দেখছে..যতই দেখছে ততই ভালো লাগছে.. আজকে মায়া লাল জামা, লাল লিপিস্টিক দিয়ে এসেছে..একদম লাল পরী লাগছে…আবিরের মনে চাচ্ছে ওকে বাহুডোরে জরিয়ে ধরি..হঠাৎ আবির খেয়াল করলো মায়া চোখ বন্ধ করে কাপছে..তাই আবির মায়াকে ডাক দিলো..
আবিরঃ মায়া… মায়াহ..
এবার মায়া আস্তে করে প্রথমে একটা চোখ খুলল..মায়া দেখলো আবির ভ্রুকুচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে…মায়া আর কিছু না ভেবেই বলতে শুরু করল..
মায়াঃ প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন…আমি আর কোনদিন আপনাকে কিছুই বলব না…এইযে কান ধরছি…
আবির একটু হেসে…মায়ার হাত দুটো কান থেকে নামিয়ে দিলো..আবির অনুভব করতে পারছে মায়ার হাত দুটো কি নরম..যেনো তুলো…আবির মায়ার হাত দুটো ধরে রেখেই বলতে লাগলো..
আবিরঃ আচ্ছা তোমাকে মাফ করে দিলাম…(একটু হেসে বলল)..তোমার কোন সমস্যা হলে আমাকে বলো..
মায়া আবিরের স্পর্শ টা ফিল করতে পারছে..কিন্তু ওর কেন যেনো অসয্য আর ভয় লাগছে…কিন্তু আবিরের কিলার হাসিটাও আবার মায়াকে সাহস দিচ্ছে…লোকটা দেখতে কত সুন্দর কিন্তু অনেক ডেঞ্জারাস… নাহ মায়া এখানে আর থাকা যাবে না..
মায়াঃ আচ্ছা আপনাকে জানাবো..আমি এখন যাই??
আবিরঃ আচ্ছা যাও..
মায়াঃ নিচে ইশারা করে…কিভাবে যাবো??

আবির নিচে তাকিয়ে দেখে সে এখনো মায়ার হাতটা ধরে আছে..ছাড়তে তো ইচ্ছা করছেই না…মনে চাচ্ছে এ হাতটা সারাজীবন যদি ধরে রাখতে পারতো.. তাও ওর দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে হাতটা ছেড়ে দিলো..আর আবিরও চলে গেলো…

মায়া দাড়িয়ে ভাবছে কি হচ্ছে এসব…অনু যেভাবে ওনার বর্ণনা দিলো ওনাকে সামনা সামনি ওমন লাগে না…এটা কি শুধু আমার বেলায়ই নাকি??কালকেতো কত রাগ দেখলাম..এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অনু এসে পরলো..
অনুঃ কিরে ভীতু বান্ধপী এখানে দাড়িয়ে কি করছিস??
মায়াঃ ওনার সাথে দেখা হয়েছিল…
অনুঃ তা ওনিটা কে??
মায়াঃ কে আবার তোদের আবির ভাইয়া…
অনুঃ কি বলিস??তোকে কিছু বলেছে??
মায়াঃ সব কি রাস্তায় দাঁড়ায় শুনবি নাকি ক্লাসেও যাবি??
অনুঃ আচ্ছা চল বাবা..কিন্তু বাকিটা বলিস…
মায়াঃ আগে ক্লাসে চল..যেতে যেতে বলছি..
মায়া অনুকে সব বলল…
অনুঃ কি বলিস…ভাইয়াকে তো কখনো এমন দেখেনি তুই আসার আগে…ডাল মে কুচতো কালা হ্যায়..হাহা..
মায়াঃ কি কালা হ্যায়??
অনুঃ বলব না…সময় হলেই বুঝবি..
মায়াঃ হুম দেখা যাক…
মায়া আর অনু ক্লাস করতে চলে গেলো..
আবির তার প্রজেক্টটা নিয়ে বন্ধুদের সাথে বসে আছে ক্যাম্পাসে..
রানাঃ দোস্তরা খেয়াল করেছিস আমাদের বসের ফেইসে কেমন এক গ্লেস মারছে..
বাকি বন্ধুরাঃ হ্যারে আসলেইতো…ব্যাপার কি বস??
আবিরঃ আমি তোদের বস না??আচ্ছা আমি ত তোদের বন্ধু না বস তাইতো..তাহলে কেনো বলবো তোদের!!!
ইমনঃ আরে কে বলছে তুই আমাদের বন্ধু না..তুইতো বন্ধুর থেকেও বেশি মানে আমাদের সবার ভাই..
আবিরঃ হইছে আর পাম দিও না..
কনকঃ আচ্ছা বন্ধু এখন তো বল..
আবিরঃ আচ্ছা বলছি..একটা মেয়েকে অনেক পছন্দ হয়েছে..
রানাঃ ওইযে যে মেয়েটা তোকে সবার সামনে বকে ছিলো??
আবিরঃ হুম..
রানাঃ জানিস তোরা.. আমি ওইদিনই বুঝে গিয়েছিলাম যখন আবির মেয়েটিকে কিছু না বলে বরং সরি বলেছিলো..
আবিরঃ দোস্ত মেয়েটা কে দেখলেই কেমন যেনো এক মায়ায় আটকে যাই..নিজেকে হারিয়ে ফেলি..ভালো লাগে ওকে দেখতে..
কনকঃ হুম মায়াতো লাগবেই মায়া নাম যে ওর..হাহা..সবাই এক সাথে হেসে দিলো…

মায়াঃ অনু ক্লাসতো শেষ চল আজকে ফুচকা খাবো..অনেক দিন হইছে খাইনা..
অনুঃ দোস্ত আজকে ভালো লাগছে না অন্য আরেক দিন.. প্লিজ…
মায়াঃ না না প্রিয় বান্ধবী আমার আজকেই প্লিজ..খুব খেতে ইচ্ছা করছে…প্লিজ প্লিজ না করিস না..
অনুঃ আচ্ছা আচ্ছা বাবা..চল..
মায়া খুশি তে ক্লাস থেকে তারাতাড়ি বের হতে গিয়ে আবারও কারো সাথে ধাক্কা খেতে গিয়ে পরে যেতে নিলো..কিন্তু নিচে পরার আগেই…
চলবে…?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে